বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি পর্ব ১৪+১৫+১৬

বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি

উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর)

পর্ব :১৪

সন্ধ্যার পর বাড়ীতে হৈচৈ পড়ল ,সেহের বাড়ী থেকে পালিয়েছে।আকাশ চুম্বী রাগ নিয়ে আরহাম মিনিট দশেকের ভেতর বাড়ী ফিরে ।সেহেরকে খুঁজতে পুরো শহরে গার্ড বিছিয়ে দিয়েছে ।তন্ন তন্ন করে খোঁজা হচ্ছে।উপরের রুম থেকে ভাঙচুরে বিকট শব্দে দেয়াল গুলো থর থর কাঁপছে ।বাড়ী সবাই জড়সড় ভাবে নিচতলায় দাড়িয়ে। আরহামের রাগ সম্পর্কে সবার ধারণা আছে ।এই মুহূর্তে আরহামের সামনে দাড়ান মানে নিজের পায়ে কুড়াল মারা ।
কে চায় যেচে যেয়ে ভয়ংকর রাগের সম্মখীন হতে?
দিশা ভীতু চোখে বারবার উপরের দিকে তাকাচ্ছে,ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে।সেহের কি করে বাড়ী ছেড়ে যেতে পারে? একবারো কি মায়ের কথা ভাবল না! আর এখান থেকে কি করে বের হলো? এই কড়া পাহারার চোখ ফাঁকি দেওয়া তো চারটে খানিক কথা না । কারো সাহায্য ছাড়া তো একদম অসম্ভব! তবে সেহেরের পালানোর পেছনে কি বাড়ীর কারো হাত আছে? দিশা সন্দিহান চোখে হল ঘরটায় চোখ বুলায়। সেহেরকে পালাতে কে সাহায্য করবে? লিয়া!
এমন সময়ই উপরের রুম থেকে ভারী কাঁচের কিছু ভাঙার বিকট শব্দ দিশার ধ্যান ভাঙল । ভয়ে কেঁপে উঠে ,নিশ্চিত রুমের টি- টেবিলটা ভেঙেছে।আরহামের সামনে যেতে সাহস হচ্ছে না। যা বেপরোয়া মেজাজের।
অনেকটা সময় কেটে গেছে।উপর ঘর থেকে কোন সাড়াশব্দ মিলছে না।আরহাম হয়তো কিছুটা ক্ষান্ত হয়েছে।দিশা ভীতু ভীতু পায়ে সিড়ির দিকে যায়।দোতলার শেষ সিড়িতে পা রেখে আতকে উঠে। এই কি হাল ? পুরো দোতলা চূর্ণবিচূর্ণ জিনিশপত্র ভরতি।কোন কিছু ঠিকঠাক অবশিষ্ট আছে কি না সন্দেহ।আরহামের রুমের দিকে পা বাড়াতে রাগে ফোঁসফোঁস শব্দ শুনতে পায়।জড়সড় ভাবে দরজার সামনে দাড়িয়ে দিশা ধীর স্বরে বলল,”আমি সত্যি কিছু জানিনা । সেহের বাড়ী থেকে পালাবে জানলে কোনদিন তাকে একা ছাড়তাম না।মেয়েটা কোথায় আছে…কি করছে কে জানে…আমার খুব চিন্তা …”
আরহামের রক্তিম চোখের চাহনি দেখে দিশা থেমে গেল। পুরো কথা শেষ করার আর সাহস হল না।আরহাম দাঁতে দাঁত চেপে বলে,”আপনি আপনার মেয়েকে নিয়ে কতটা চিন্তিত তা আমার জানা আছে।অন্তত আমার সামনে মমতাময়ী মা হবার অভিনয় করবেন না।নিউজ পেপারে ছবি থেকে শুরু করে ইন্টারনেটে ভিডিও ভাইরাল অবধি সবটার পেছনে যে আপনি আছেন ।আমি জানিনা?
শুধু সেহেরের কথা ভেবে ক্ষান্ত ছিলাম। তাছাড়া সেহেরকে আমার চাই ,একান্ত নিজের করে চাই।বিয়ের পর আপনাদের কারো সাথে সেহেরের কোনপ্রকার সম্পর্ক থাকবে না।….ফাস্ট এন্ড লাস্ট ওয়ার্নিং আমার সেহের থেকে দূরে থাকবেন ।”
আরহামের কথায় দিশা মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে গেল।এই ছেলে কি চায়? সেহের তার মেয়ে ।মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে? দিশা ভুল করেনি । সে যা করেছে সেহেরের সোনালি ভবিষ্যৎ- এর কথা ভেবে করেছে।

আরহাম মাথা চেপে ধপ করে এলোমেলো বিছানায় বসে পরে ।সেহের কোথায় যেতে পারে? কার কাছে? কারো সাহায্য ছাড়া গার্ডদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সম্ভব বের হওয়া সম্ভব না।কে সাহায্য করেছে? কে?
উফফ! অসহ্য মাথা যন্ত্রণা করছে।সবকিছু কেমন জানো গুলিয়ে যাচ্ছে। মাথাটা ভার ভার হয়ে যাচ্ছে।শরীর থেকে যেন সে আলাদা হয়ে যাচ্ছে।আরহাম নিচের দিকে ঝুকে মাথা চেপে বসে থাকে।

মালিহা খানম ভয়ে ছটফট করছে।সারারুম জুরে পায়চারি চলছে।মেয়েটাকে বাড়ী থেকে তো বের করল ,কিন্তু মেয়েটা কোথায় ,কিভাবে আছে ,কে জানে? ঠিকঠাক ট্রেনে উঠে সিলেটে পৌঁছাতে পারবে তো!
নানা চিন্তায় মাথা ভার হয়ে আছে। মালিহা খানম বোনের বাড়ীর ঠিকানা দিয়েছে।বোনকে ফোন করে আগেই জানিয়েছে ।স্টেশন থেকে রিসিভ করে বাড়ী অবধি নিয়ে যাবে । সেখানে মেয়েটার যত্নআত্তির কোন কমতি হবে না!
মায়ার জালে আটকে মেয়েটাকে বাড়ী থেকে তো বের করেছে। এখন বাড়ীতে কি করে সামাল দিবে? আরহামকে কি করে সামলাবে? সামান্য টের পেলেই পুরো বাড়ী তোলপাড় করে ফেলবে ।চিন্তামগ্ন হয়ে বিছানায় বসে পরে।আচমকা দরজা খোলার বিকট শব্দ হয়।মালিহা খানম ছিটকে দরজার দিকে তাকায়।এলোমেলো বেশভূষায় আরহাম দাড়িয়ে।কঠিন মুখখানায় হিংস্রতার চাপ ।বাদামী চোখের মণিটা রক্তিম হয়ে আছে।অগোছালো চুল গুলো চোখ ছুঁই ছুঁই।মালিহার বুঝতে বাকি রইল না আরহামের মাঝে অন্য স্বত্বাটা জেগে উঠেছে ।এটা আরহাম না অন্য কেউ।হিংস্রতা কঠোরতা যার পরিচয়।মালিহা ছোট ঢোক গিলল।নিজের ভয়কে সংযত রাখার চেষ্টা করল।আরহাম রক্তিম ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ,বলল “সেহের কে কোথায় লুকিয়ে রেখেছ? ”
মালিহা জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে।হাসার চেষ্টা করে বলল ,”কি বলছ? আমি কেন লুকাতে যাবো? ”
“তো সত্যিটা বলবে না? ”
মালিহা চুপ।আরহাম জেকেটের ভেতর থেকে গান বের করে মালিহার দিকে তাক করল।মালিহা ভয় পেল কিন্তু মুখে প্রকাশ করল না ।তাচ্ছল্য স্বরে বলল ,”এখন তুমি আমাকে মারবে? তোমার দাদীজান কে ? ”
” তুমি আরহামের দাদীজান ,আমার না! তাছাড়া আমি তোমাকে মারবো না।জানি তোমার মৃত্যু ভয় নেই।তোমার কলিজার খন্ড আরহামকে মারবো ।”
বলেই আরহাম নিজের মাথায় গান পয়েন্ট করে। মালিহা আর্তনাদ ভারী চিৎকার দিয়ে বলে,”নাহ! তুমি এমন করতে পারো না।আরহামকে মারলে ,তার সাথে তোমার অস্তিত্বও বিলীন হবে।”
আরহাম আনন্দহীন বাঁকা হাসল,”এমনিতেও সেহেরকে ছাড়া আমি অস্তিত্বহীন।আমি আমার সেহেরকে চাই! সেহের বিহীন আমার কিছু চাই না।”
মালিহা আকুতি ভরা স্বরে বলল,”নিষ্পাপ মেয়েটাকে যেতে দেও! ”
আরহাম শব্দ করে ভয়ানক ভাবে হাসল।কয়েক সেকেন্ড পর হাসি হুট করে থেমে গেল।মুখে কঠিন ভাব ফুটিয়ে বলল,”তুমি বলবে? নাকি আরহামকে শুট করবো? ”
“না না এমন করবে না ,প্লিজ “মালিহা আকুতি ভরা স্বরে কেঁদে উঠে।কান্নার সুর টেনে বলে,”সেহের রেলস্টেশনে ,সিলেটের উদ্দেশ্য রওনা দিবে! ”
মুহূর্তেই আরহামের মুখে অদ্ভুত এক হিংস্র হাসি ফুটে উঠে।চেহারায় কেমন জানো আতংক ভারী চমক।অদ্ভুত পাগলামো।আরহাম মুখে সেই অদ্ভুত হাসি নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যায়। যেন সে মহা খুশি!
মালিহা আরহামের যাওয়ার দিকে ভীতু চোখে তাকিয়ে থাকে না জানি মেয়েটার সাথে কি হবে! আর কত বছর এসব চলবে? আরহাম কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে? কবে? না এভাবে হাতে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। মালিহা চোখ মুখ মুছে ডক্টর রেজাকে ফোন করল।

ব্যস্ত রেলস্টেশনের খালি বেঞ্চটার এক কোণায় চোখ মুখ ডেকে মোটা কালো চাদরে জড়িয়ে সেহের গুটিসুটি মেরে বসে।চারপাশে শতশত মানুষ । যে যার যার মত ব্যস্ত।চায়ের দোকানের টিভির শব্দের সাথে লোকজনের কোলাহল মিশে বিশ্রী শব্দ হচ্ছে। প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করছে।শরীরটাও ভীষণ দুর্বল।তার উপর এই গাঁ জ্বালা গরম।ট্রেন ছাড়তে এখনো আরো অনেক সময়।ভীষণ খিদে পেয়েছে । সেই দুপুর থেকে কিছু মুখে তুলেনি।মনে হচ্ছে এখনি বুঝি দেহ থেকে প্রাণ বেরিয়ে যাবে।সেহের একবার ছোট ছোট পা ফেলে সামনে হোটেলের দিকে এগিয়ে যায়,পরক্ষণেই আবার পিছুপা হয়ে যায় । যদি কেউ চিনে ফেলে?
বেঞ্চে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বেশকিছু ক্ষণ বসে থাকে।হুট করে কেউ গায়ের চাদরটা টেনে নেয়।সেহের বিস্মিত চোখে সামনে তাকাতে থতমত খেয়ে যায়।ভয়ে গাঁ থরথর কাঁপতে লাগে….
বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি

উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর)

পর্ব :১৫

আরহামকে সামনে দেখে সেহের থরথর করে কাঁপছে।রক্তিম চোখ কঠোর মুখ চেহারায় কেমন জানো হিংস্রতার চমক ।দু’কদম সামনে এগিয়ে আরহাম ধপ করে সেহেরের হাত চাপল।চাপা ভারী স্বরে বলল,”অনেক হয়েছে ,এবার বাড়ী চলো ”
সেহের চাতক পাখির মত ছটফট করছে।হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে ভাঙ্গা স্বরে বলে,যাবো না।ছাড়ুন আমাকে ,আমি এই বিয়ে করবো না। ”
সেহেরের কথার তোয়াক্কা না করে আগের মত শক্ত ভাবে হাত চেপে রেখেছে।ভাষাহীন দৃষ্টি অপলকহীন ভাবে সেহেরের দিকে।হাত ছাড়ানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সেহের রাগে কান্না করে দেয়।চাপা কান্না করছে। আরহামের মুখের হাবভাব কোনটাই পরিবর্তন হলো না।তখনো আগের মত একই দৃষ্টিতে তাকিয়ে ।সেহের অন্যহাতে নিজের মুখ চেপে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে।মিনিট দুএকের ভেতর কান্না থামল।ক্রুদ্ধ স্বরে বলল,”আপনি হাত ছাড়বেন ,নাকি লোক জড় করবো? আপনি কেন বুঝেন না আমি আপনাকে ঘৃণা করি ,ঘৃনা! ”
কথা গুলো শুনে আরহামের মাথা বিগড়ে যায়।সেহেরকে চট করে ছেড়ে দেয়।সেহের ধাক্কা সামলাতে না পেরে মাটিতে পরে।আরহাম রাগে ফোঁসফোঁস করছে।এদিকে ওদিকে দু তিনবার হাঁটা চলা করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে।কিন্তু কিছুতেই হচ্ছে না।রাগে গরগর করতে করতে সেহেরের ঠিক সামনে এসে দাড়ায়।নিচু হয়ে সেহেরের গাল টিপে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,”ঘৃণা করো তাই না? ঘৃণা? আমাকে দেখলে ঘৃণা হয়? …..বিয়ে করবে না? ”
ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে রাগে গজগজ করে সামনে লোহার বেঞ্চটায় উপর অনবরত কয়েকটা লাথি মারে।বেশ শব্দ হয়। আশেপাশের মানুষ বিস্ময় চোখে দেখছে। ছোট খাটো ভিড় জমে গেছে।আরহাম চিৎকার করে বলে,”তামাশা হচ্ছে?এখানে কি? ”
আরহামের ধমকে ভিড় ছুটে।মানুষজন আনাগোনা করতে করতে যার যার কাজে চলে যায়।আরহাম ধপ করে বেঞ্চটার উপর বসে।রাগে দু হাত ঘোষছে।শরীর এখনো কাঁপছে।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে কোণাকোণি ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে সেহেরের দিকে তাকায়।সেহের অশ্রুসিক্ত থমথমে চোখে সবটা দেখছে ।হাতের কনুই ছিঁড়ে রক্ত ঝোরছে। চোখে জলে গাল ভিজে।মুহূর্তেই আরহামের সব অগোছালো হয়ে যায়।বুকে মোচড় দিয়ে উঠে। মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা হয়।মনে হচ্ছে মাথার সব তার কেউ টেনে ছিঁড়ে ফেলছে।আরহাম নিচু হয়ে মাথা চেপে ধরে।চুল গুলো শক্ত করে ধরে পিছনের দিকে টানছে।চাপা স্বরে আর্তনাদ করছে।অসহ্য যন্ত্রণা! মাথার পিড়া সইতে না পেরে, বামহাতে বেঞ্চের উপর অনবরত ঘুষি দিতে লাগে।ভিতু বিস্মিত চোখে সেহের প্রত্যেকটা কাজ নিখুঁত ভাবে লক্ষ করে।ভয়ংকর হিংস্রতায় ভরা মুখ।রাগী ক্রুদ্ধ রক্তিম চোখ । নিশ্বাস ভারী গর্জনের আওয়াজ।এই বুঝি কারো দেহ থেকে প্রাণ কেড়ে নিবে। এ যেন আরহাম না অন্য কেউ।আরহামের মাঝে অন্যকোন স্বত্বার ঝলক ।ভাবতেই ,ভয়ে সেহেরের শরীর কাঁটা দিয়ে উঠে।এসব কি হচ্ছে? আরহাম এমন করছে কেন? কিসের যন্ত্রণায় এভাবে কাতর হচ্ছে?
একসময় আরহামের হাত ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে।তবুও সে থামছে না। একের পর এক হাতের আঘাত করেই যাচ্ছে। আরহামের এসব কাজে সেহেরের মনে অদ্ভুত ভয় কাজ করছে। মুখ চেপে কেঁদে উঠে ,ভয়ে তড়াক করে উঠে দাড়িয়ে অন্ধকার রেললাইনের রাস্তা ছুটে যায়।স্টেশন ছেড়ে অনেকটাই এগিয়ে গেছে । ডিমলাইটের হলদে ছোট ছোট আলো দেখা যাচ্ছে ।বড় বড় শ্বাস ছেড়ে সেহের উদ্দেশ্যহীন ভাবে ছুটছে ।কিন্তু ভাগ্যে বেশিদূর সহায় হলো না ।আরহামমের কাছে ধরা পরে গেল । পেছন থেকে তড়িৎ গতিতে আটকে নেয়।সেহের চিৎকার করতে লাগে ,কিন্তু কোলাহলহীন অন্ধকার রেললাইনের নির্জন রাস্তায় সেহেরের বুকফাটা কান্না কারো কান অবধি পৌঁছায় না।অসহায় সেহের হার না মেনে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে। চোখের পানিতে গাল ভেসে ।আরহামের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানো আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে।পাগলের মত হাত পা ছোঁড়াছুঁড়ি করছে।আচমকা আরহামের চওড়া গলার বিকট আওয়াজে সেহের থেমে যায়।ভীতু থমথমে চোখে আরহামের দিকে তাকায়। আরহাম শক্ত ভাবে গাল চেপে নিজের মুখোমুখি আনল সেহেরের চোখে চোখ রেখে দাঁত চিবিয়ে বলল,”এই ভুল দ্বিতীয়বার করার চেষ্টা করো না।ফল ভয়ংকর হবে! …তুমি আমার মানে আমার! তোমার মন প্রাণ সব কিছুর উপর শুধু মাত্র আমার অধিকার । ক্লিয়ার?”
সেহের পলকহীন থমথমে চোখে আরহামের চোখের দিকে তাকিয়ে।উত্তর না পেয়ে আরহাম ঝাঁকুনি দিয়ে উচ্চস্বরে বলল,”ক্লিয়ার? ”
সেহের এবারো চুপ। মাথাটা ঝিমঝিম করছে।চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসছে।শরীরটাও ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।চারপাশ কালো অন্ধকারে ঢেকে যায়। সেহের আরহামের বুকে ঢুলে পড়ে।

হল রুমে মাঝ বরাবর সোফাটায় মালিহা বসে।হাতে হাত কচলাচ্ছে।চিন্তায় মাথা খারাপ হওয়ার উপক্রম ।সেহের কি শহর ছেড়ে সিলেটের পথে রওনা হয়েছে? নাকি আরহামের কাছে ধরা পরে গেছে! না জানি মেয়েটার সাথে কি হচ্ছে! বারবার সদর দরজার দিকে তাকাচ্ছে।আরহাম এখনো এলো না যে? কোন বিপদ হলো কি! ভাবতে মালিহা কেঁপে উঠে।এমন সময় বাহির থেকে গাড়ীর শব্দ আসে । মালিহা ব্যস্ত ভঙ্গিতে সদর দরজার দিকে ছুটে যায়।আরহামের কোলে সেহের । বাড়ীর দিকে পা বাড়িয়েছে। সদর দরজায় প্রবেশ করতে আরহাম মালিহা খানম মুখোমুখি হয়।দুজনের চোখাচোখি হতেই আরহাম গাঢ় স্বরে বলল,”পাতালে লুকালেও খুঁজে বের আনবো ,আমার কাছ থেকে ওকে কেউ আলাদা করতে পারবে না”
প্রত্যুত্তরের আশায় না থেকে আরহাম বড়বড় পা ফেলে সিড়ির দিকে পা বাড়ায়। সেহের আরহামের বুকে ঝড়ে গৃহহারা ভেজা কবুতরি মত ল্যাপটে।মায়া মায়া ক্লান্ত চেহারা ,চোখজোড়া এখনো অশ্রু ভেজা।অন্যদিকে আরহামের ঠোঁটের কোণে হিংস্র বিষাক্ত হাসি।কয়েক ঘন্টা পূর্বে সেই অগোছালো এলোমেলো আরহাম কোথাও হারিয়ে গেছে।সামনের মানুষটা অন্যকেউ যে শুধু শর্তহীন ভালোবাসতে জানে। তবে কি আরহাম কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য সেহেরই একমাত্র সুরাহা!
এ কেমন নিয়তি? একজনের প্রেম অন্যজনের বিষাক্ত অনুভূতি! কারো জন্য অমৃত কারো জন্য বিষ।এ কেমন প্রেম?

অন্ধকার রাতের পর আলোক উজ্জ্বল দিনের সূচনা হয়। প্রত্যেকটা সকাল তার সাথে নতুন দিনের বার্তা নিয়ে আসে।নতুন কোন গল্পের সূচনা ঘটে। সারা শরীরে মচমচে ব্যথা নিয়ে সেহের আড়মোড়া ভাঙে।মাথাটায় এখনো প্রচণ্ড ব্যথা।নিভু নিভু চোখে তাকাতে নিজেকে তার রুমের বিছানায় আবিষ্কার করে।রাতের কথা মনে করতেই তড়াক করে উঠে বসে ।এলোমেলো চুল গুলো বারবার মুখে পরছে। সেহের বড় বড় শ্বাস ফেলতে ফেলতে সামনের দিকে তাকায়।সামনের ডিভানে আরহাম বসে ,গাঢ় চোখে এদিকেই তাকিয়ে।ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি।ভারী স্বরে বলল,”হ্যালো লাভ! গুড মর্নিং ”
সেহের কেঁপে উঠে।রাতের কথা মনে বিছানার মাথার সাথে গুটিসুটি মেরে চাপতে থাকে।স্বাভাবিক ভাবে আরহাম সেহেরের দিকে এগিয়ে আসছে।দূরত্ব যত কমছে সেহের তত বেশি কাঁপতে শুরু করেছে।আস্তে আস্তে দুজনের মধ্যকার দূরত্ব মিশে গেল। আরহামে সেহেরের গাঁ ঘেষে।সেহের চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।আলতো হাতে আরহাম কাছে টেনে নেয়। গালে হাত ছুঁয়ে স্বাভাবিক স্বরে বলল ,”কি হয়েছে? কাঁপছ কেন? ”
সেহের তখনো চোখ বুঝে থরথর কাঁপছে।দুহাতের তালুতে সেহের মুখ ছুঁয়ে আলতো স্বরে বলল,”তাকাও আমার দিকে …… ওপেন ইউর আইজ! ”
সেহের চোখ খুলল না আরো শক্ত ভাবে চোখ মুখ খিঁচে রইল।আরহাম আবার বলল,”চোখ খুলবে না? আমাকে অন্য কোন কৌশলে খুলতে বাধ্য করলে তোমাকেই কিন্তু ভুগতে হবে! ”
সাথে সাথে সেহের চোখ খুলে তাকায়। আরহাম এক চিলতে মুচকি হেসে সেহেরের চোখে চোখ রাখে।চোখের দিকে চেয়ে সেহের থমকে যায়।নিষ্পাপ নিবিড় চোখ জোড়ায় গত রাতের হিংস্রতা কোথাও হারিয়ে গেছে।চেহারায় কোন কঠোরতা নেই।হাস্যোউজ্জ্বল মুখ ।এ যেন অন্য কেউ। গোছালো সুস্থ এক জন ।সেহের চোখের দিকে চেয়ে আনমনে বলে,”গত রাতে আপনি….”
সেহেরের কথা কেটে আরহাম বলল,”সরি ,গত রাতের কোন কিছু মনে নেই।…তবে হ্যা তুমি বাড়ি থেকে পালিয়ে ভালো করোনি।আমার রাজত্বে থেকে আমাকেই বোকা বানানো? তোমার মনে ভয় নেই মেয়ে? ”
সেহের কুঞ্চিত ভ্রু করে কিছু জিগ্যেস করতে চাইল।কিন্তু করা হলো না।তার পূর্বেই আরহাম বলল,”সেদিনের হুমকি কে এতো হালকা ভাবে নিলে? কি ভেবেছ তুমি পালালে আমি কিছু করতে পারবো না! ধ্বংস করে রাখবো সব! সবকিছুতে আগুন লাগিয়ে দিবো , সেই আগুনে ক্ষণে ক্ষণে তোমার পরিবার পুড়বে । বুঝলে? ”
সেহের ভিতু চোখে আরহামের দিকে তাকাল। আরহাম আবার বলল,”শুনলাম তোমার বাবার নতুন প্রজেক্ট শুরু করেছে অলরেডি 1.25 কোটি ইনভেস্ট করেছে । প্রজেক্টে কমপ্লিট করতে আরো এক কোটি প্রয়োজন।ব্যাংকে লোনের জন্য এপ্লাই করেছে আমি অনুমতি দিলে পেয়েও যাবে ,কি বলো অনুমতি দিবো? নাকি রিজেক্ট করবো! ”
সেহের অসহায় চোখে আরহামের দিকে তাকায়।আরহাম সেহেরের কানের পেছনে চুল গোছাতে গোছাতে বলে,”ডোন্ট ওয়ারী লাভ! তুমি কবুল বলার সাথে সাথে অনুমতি পেয়ে যাবে ।এখন সবটা তোমার উপর বিয়েতে রাজি হবে নাকি বাবাকে পথে নামতে দেখবে। কোনটা? চয়েজ ইজ ইউর’স …..
“রাজি …আমি এই বিয়েতে রাজি! প্লিজ আপনি কিছু করবেন না । ”
আরহামের কথা কেটে সেহের থতমত গলায় বলল।আরহাম বাঁকা হাসল। সেহেরের কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বলল,”গুড দ্যাট’স মাই গার্ল! ‘
বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি

উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর)

পর্ব :১৬

কথিত আছে অটোমান সুলতানাদের কাছে লাল পবিত্রতার প্রতীক ছিল। অন্যদিকে লালকে অগ্নি বা ধ্বংসের প্রতীক বলেও অনেকে মানেন ।কিন্তু আরহামের কাছে লাল রঙ তার বিষাক্ত প্রেমের অস্তিত্ব।তার বিশাল বিস্তৃত অন্ধকার রাজ্যের অবিচ্ছিন্ন অংশ।আরহাম তার হৃদয়ের রাণীকে লাল রঙে বরণ করতে চায়।তাই বিয়ের মেইন থিম লাল সাদা রেখেছে।মন্ত্রীবাড়ি লাল সাদায় সজ্জিত।মেইন গেট থেকে শুরু করে বাড়ির ভেতরের সুশোভিতকরণ সকল কিছু লাল সাদা কম্বিনেশনে সজ্জিত।গত পরশু বেশ ঘটা করে হলুদের অনুষ্ঠান হয়েছে।বড়বড় এমপি মন্ত্রী থেকে শুরু করে নামীদামী বিজনেস ম্যানদের পরিবার উপস্থিত ছিলেন।নিউজ পেপার সোশ্যাল মিডিয়া বিয়ের তর্ক বিতর্কে ছেয়ে।হবে না- ই বা কেন? শহরের এতো বিত্তশালী পরিবারের বিয়ে বলে কথা! মন্ত্রী সাহেব আর উনার প্রাণপ্রিয় নাতীকে কে না চিনেন।শহরের মোস্ট হ্যান্ডসাম ব্যাচেলর পলিটিশিয়ানের বিয়ের খবর শুনে অনেক মেয়েরই মন ভেঙেছে।এ নিয়ে তর্ক বিতর্ক সারা শহর জুরে । আরহাম খাঁনের বউ দেখতে পুরো শহর উদ্রেক!

এদিকে যার বিয়ে তার কোন প্রকার কৌতূহল নেই।যন্ত্রের মত কোন প্রকার হাত পা নাড়িয়ে ঠেলে ঠেলে চলছে। মানুষ নয় যেন কোন মোমের পুতুল ,যে যা বলছে তা করছে।সামনের সচ্ছ আয়নাতে লাল টুকটুকে নব বধূর প্রতিবিম্ব ভেসে আছে।গায়ে ওয়াইন রেড ডিজাইনার লেহেঙ্গা।মেঘবরণ লতানো চুল গুলো বড় খোপা করা খোপার ভাজে ভাজে ছোট ছোট আর্টিফিশিয়াল ফ্লোরাল স্টোন বসানো।ঠোঁটে রক্তলাল লিপস্টিক ভারী মেকআপ।গা ভর্তি গহনা । আয়নায় ভেসে থাকা নব বধূর প্রতিবিম্বে সেহের পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।কি সুন্দর লাগছে!
ছোট থেকে স্বপ্ন ছিল লাল টুকটুকে বউ সেজে স্বামীর ঘরে পা রাখবে। নিজের পরিবার হবে।কত আশা কত স্বপ্ন ছিল দু’চোখে ।অথচ আজ সব কিছু দুঃস্বপ্নের মত লাগছে।অসহ্য বিরক্ত লাগছে সবকিছু ছেড়ে কোথাও যদি পালানো যেত? এসব ভেবে সেহের বুক চিড়ে নিশ্বাস ছাড়ে!
একজন মেকআপ আর্টিস্টের গলার স্বরে সেহেরের ভাবনায় টোকা পড়ে।মহিলাটি সেহেরের থুতনিতে আলতো ভাবে ছুঁয়ে বলল,”বাহ ,কি মিষ্টি দেখতে।এতো সুন্দর বউ দ্বিতীয়টি দেখিনি!
অসম্ভব সুন্দর লাগছে তোমাকে । ”
সেহেরের ছলছল চোখের চাহনি সরিয়ে হাসার চেষ্টা করল।আজ কাল কৃত্রিমভাবে হাসতে হাসতে প্রকৃত হাসি কেমন হয় ভুলেই গেছে।এমন সময় দরজা ঠেলে মালিহা খানম রুমে প্রবেশ করল।দেখতে এসেছে সেহের পুরোপুরি রেডি কি না।ঐ দিকে লোকজন আসতে শুরু করেছে।মালিহা খানম কে দেখে মেকআপ আর্টিস্টরা মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়।মালিহা খানম সেহেরের দিকে মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ।এই তো আর কয়েক ঘন্টা তারপর সবকিছু পাল্টে যাবে।মেয়েটার জীবনের নতুন এক মোরে ঘুরবে ।না জানি মেয়েটার সাথে কি কি হবে?
মালিহা সেহেরের মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে বলল,”সরি ,শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হচ্ছে ,আমি তোমার সাহায্য করতে পারিনি ! ”
“আপনাকে সরি বলতে হবে না। আমার জন্য অনেক করেছে।মেন্টলি আপনার থেকে যতটা সাপোর্ট পেয়েছি ,এর শতভাগের এক ভাগও মায়ের কাছ থেকে পাইনি ।ধন্যবাদ! ”
সেহের ঠোঁটের কোণে উদাসী হাসি ফুটিয়ে কথা গুলো বলল।মালিহা সেহেরের উদাসীন ভাব লক্ষ করে বলে,”তোমার আগামী দিনের জন্য শুভকামনা রইল।……একটা কথা বলবো? ”
সেহের চোখ তুলে মালিহার দিকে তাকাল।মালিহা বলল,”আরহাম কিন্তু ততটাও হৃদয়হীন নয় যতটা তুমি তাকে ভাবো ।তোমাকে তার পছন্দ ।সামনের দিন গুলো তুমি যে ভাবে সাজাবে তোমার জীবনটাও ঠিক সেই ভাবে গড়বে ।আমি কি বলতে চাইছি তুমি হয়তো বুঝতে পারছ! …”
সেহের হ্যা সূচক মাথা নাড়াল ।

অগণিত লোকের মাঝে কিছু চেনা মুখ ভেসে উঠে।সেহেরের বাবা আর উনার স্ত্রী এসেছেন।বাবা কে দেখে খুশিতে সেহেরের চোখ ছলছল করে উঠে।চিটাগাং থেকে মাত্রই ঢাকা এসে পৌঁছেছে।বিয়ে শেষে রাতের ফ্লাইটে আবার ফিরে যাবেন ।সাদাত আহমেদ স্টেজে উঠে মেয়ের পাশে বসল।বাবার বুকে মাথা রেখতেই সেহেরের অবাধ্য চোখের জল গুলো গাল বেয়ে ঝরল।।বাবা ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা করল । ধীর গতিতে পিঠে হাত বুলাতে লাগল ।সেহের ভাজাভাজা স্বরে বলল,”তুমি এখন আসলে বাবা? আমি কি তোমার এতোই অপ্রিয়! ”
“তুই অপ্রিয় কেন হবি ,তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় অমূল্য সম্পদ! আমার অহংকার ।জানি আমার প্রতি তোর অনেক অভিমান অভিযোগ জমে।আমি এক খুব খারাপ বাবা! তাই না মা? ”
“না বাবা তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই।কাছে না থাকলেও ছোট থেকে তুমি অন্তত আমার পাশে ছিলে । অন্যকারো মত তুমি ছেড়ে যাও নি! !”
মেয়েটার অভিমানের কারণ যে মূলত দিশাকে কেন্দ্র করে তা সেহেরের বাবা বেশ ভালো ভাবে বুঝল।ইচ্ছে করেই তিনি দেরীতে এসেছেন ।প্রাক্তনের মুখোমুখি হতে চায়নি ।মূলত দিশার কারণেরই বিয়ে শেষ হবার পর আজ রাতেই চিটাগাং ফিরে যাবে।শুধু মেয়েটার খুশির জন্য এখানে আসা। না হয় কোন দিন এ বাড়ীতে পা রাখত না। সেহের বাবার সাথে কথা বলছে এমন সময় সেহেরের সৎমা সেহেরকে জড়িয়ে ধরে কুমির কান্না শুরু করে। আহ্লাদী স্বরে বলে,আমার মেয়েটা আজ পর হয়ে যাবে।মাকে ছেড়ে বিয়ে করে অন্যের বাড়ী চলে যাবে। বুক ফেটে কান্না আসছে। ”
সাদাত সাহেব স্ত্রীর দিকে ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। স্ত্রীর এসব অভিনয় সম্পর্কে তিনি অপরিচীত নন ।এসব দেখে ভীষণ বিরক্ত হচ্ছেন।সেহের উনার সাথে ছিল- ই কবে? সৎ মায়ের এসব অভিনয় আর আজগুবি কথায় সেহের তাচ্ছল্য হাসল।আজ এতো আদর আহ্লাদ কেন? সেহের মন্ত্রী বাড়ির বউ হচ্ছে বলে?যখন এসব আদর আহ্লাদ ভালোবাসার প্রয়োজন ছিল কই তখন তো তিনি পাশে ছিল না।দূর দূর করে তাড়িয়েছে।সরাসরি কিছু না বললেও আগেপাছে অনেক কথা শুনিয়েছে ।মানুষের এসব বহুমুখী রূপ সত্যি বেশ অকল্পনীয়।টাকা ,ক্ষমতা ঐশ্বর্যের উপর কি ভালোবাসা পাওয়া না পাওয়া নির্ভর করে?
মানব জাতির মত ভয়ংকর লোভী জাতি দ্বিতীয়টা হয় না। নিজস্বার্থ ছাড়া তারা এক তিলও বুঝে না।

আরহাম সেহের পাশাপাশি বসে।বিয়েতে আসা প্রত্যেকে তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।সবার মুখে একই কথা “রাজার পাশে রানী”
আরহাম ভারী শেরওয়ানি পরে।চুল তুলো পিছনের দিকে ব্রাশ করা। ফর্সা গালে ব্রাউন দাড়িগুলো চকচক করছে। ঠোঁটের কোণে তৃপ্ত হাসি।হাসি থাকবে নাই বা কেন? এতো বছরের প্রেম আজ স্বার্থক হবে।পূর্নতা পাবে । তার সেহের সারাজীবনের জন্য তার ভালোবাসার পিঞ্জিরাবদ্ধ হবে।আরহাম এখন অবধি ভালো করে সেহেরের দিকে তাকায়নি।তার কাছে খুব অদ্ভুত যুক্তি বিয়ের পর নিজের সামনে রেখে সারারাত মন ভরে দেখবে! এই একটু আকটুতে তার মন ভরবে না! আক্ষেপ থেকেই যাবে । সেহেরের এক হাতে চুমু খেয়ে নিজের হাতের ভাজে নিয়ে।শক্ত ভাবে চেপে আছে।এতে সেহের কোন আপত্তি করে নি । করেই বা কি লাভ? এই মানুষটার কাছে তার হ্যা না কোন কিছুর- ই দাম নেই। যদি দাম থাকত তাহলে আজ এই দিন আসত না।সেহের মোমের পুতুল সেজে চোখ মুখ শক্ত করে বসে আছে।আরহাম সেহেরের দিকে একটা ফাইল এগিয়ে দেয়।সেহের কুঞ্চিত ভ্রু করে আরহামের দিকে তাকায়।আরহামের চোখ সামনের দিকে।সেহের সন্দিহান স্বরে বলে,”এটা কি? ”
“তোমার ফার্স্ট ওয়েডিং গিফট ।”
সেহের ফাইল ওপেন করতে দেখে তার বাবার লোনের এপ্লিকেশন পেপারস ।যা আরহাম সাইন করে দিয়েছে!
বিষন্নতার মাঝে সেহের এক চিলতে হাসল ।আরহাম আড়চোখ করে সেহেরের দিকে তাকাল।আরহামের কাছে এই হাসিটার চেয়ে দামী কিছু নেই ! এই হাসির বিনিময়ে নির্দ্বিধায় হাজার কোটি টাকা খোয়াতে রাজি!

চলবে …..❣️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here