বিষাক্ত প্রেম পর্ব ১৩

#বিষাক্ত প্রেম ২

Urme prema (sajiana monir)

পার্ট: ১৩

আরহাম এক পা এক পা করে সেহেরের দিকে এগিয়ে আসছে সেহের ভয়ে ভয়ে পিছাচ্ছে ।আরহামের তার দিকে এভাবে এগিয়ে আসা দেখে সেহের চেচিঁয়ে বললো

-“দে…দে দেখেন আর এক পা যদি আমার দিকে বাড়ান তা..তাহলে আমি এই যে এই ফুলদানী আপনার উপর ছুড়েঁ মারবো ।”

আরহাম সেহেরের কথা কানে না নিয়ে আগের মত তার দিকে এগিয়ে আসছে ।সেহের ভয়ে ভয়ে দেয়ালের সাথে মিশে যায় ।আরহাম তার কাছে এসে শান্ত স্বরে বলে

-“নিচে এসব আবল তাবল কি বলছিলে ?”

সেহের বড় নিশ্বাস নিয়ে কিছুটা সাহস জুগিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে একদমে বলে

-“কেন আপনি কি কানে কম শুনতে পান ?
নাকি শুনে না বুঝার ভান করছেন ?
আমি নিচে যা বলেছি তা প্রত্যেকটা কথা সত্যি ছিলো !আমি ইয়াশ কে ভালোবাসি আর আমি তাকেই বিয়ে করবো !”

এত সময় নিজের রাগের উপর কন্ট্রোল করতে পারলেও এবার আর পারলোনা ,সেহেরের এমন তেড়া তেড়া কথা আরহামের রাগকে আরো হাজার গুন বাড়িয়ে দিয়েছে । সে সেহেরের গাল চেপে ধরে চেচিঁয়ে বললো

-“ডোন্ট ট্রায় টু বি স্মার্ট সেহের !
২ দিন আগে আমার বুকে মাথা রেখে সারারাত কাটিয়েছো ।
এখন বলছো তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে !
আমার চেহারায় কি বড় বড় অক্ষরে স্টুপিড লিখা আছে যে তুমি আমাকে যা বুঝ দিবে আমি তা বিশ্বাস করে নিবো ।,”

সেহের শান্ত স্বরে বলে

-“আপনি আমার সাথে ফ্লাট করছিলেন তাই আমিও আপনার সাথে ফ্লাট করছিলাম জাস্ট এতটুকুই ।
এখানে এতোটা সিরিয়াসলি নেওয়ার মত কিছু নেই !”

আরহাম এবার আরো রেগে গর্জন করে উঠে ।সেহেরের গাল আরো জোরে চেপে ধরে ।সেহেরের মাথা দেয়ালের সাথে বেশ জোরে লাগে সেহের ব্যথায় চোখ বন্ধ করে ফেলে ।আরহাম চেচিঁয়ে বলে

-“আমি তোমাকে খুব ভালো করে চিনি !
তোমাকে নতুন করে চিনাতে হবেনা ।
তুমি শুধু এতটুকু বলো ,তুমি কেন এমন করছো ?
কি কারনে নিজেকে এতটা নিচে নামাচ্ছো ?”

সেহের কান্না জরিত কন্ঠে বলে

-“আমার লাগছে !”

আরহাম চেচিঁয়ে উত্তর দেয়

-“তো লাগুক !
এর চেয়ে হাজার গুন বেশি আমার লাগছে ।
প্রতিটা সেকেন্ড হাজার হাজার ছুড়ি আমার বুক ছিন্ন বিন্ন করে দিচ্ছে ।”

এবার সেহের কান্না করতে করতে বলে

-“আরহাম সত্যি আমার খুব বেশি লাগছে ।
আমি আর সয্য করতে পারছি না !”

আরহাম সেহেরের দিকে তাকিয়ে দেখে সে চোখ বন্ধ করে কান্না করছে ।বন্ধ থাকা চোখ থেকে টপটপ করে পানি ঝড়ছে ।আরহাম সেহেরের কান্না দেখে তার গাল ছেড়ে দিলো ।গালে আঙ্গুলের ছাপ বসে গেছে সেহের এখনো দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে কান্না করছে ।আরহাম সেহেরের কান্না দেখে সজোরে নিজের হাত কাচেঁর টি টেবিলের উপর আঘাত করে সাথে সাথে টি টেবিল ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় আরহামের হাত থেকে গলগল করে রক্ত ঝড়ছে সেহের তা দেখে ভয়ে কাপতেঁ লাগে সেখানেই দেয়ালের সাথে চেপে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকে ।
আরহাম দেয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখে রক্ত তারাতারি করে সেহেরের কাছে এসে তার মাথার পিছনে হাত দিতেই সেখানে ভেজা ভেজা লাগছে ।হাত সামনে আনতেই দেখে হাতে রক্ত তারাতারি করে সেহেরকে কোলে তুলে বিছানায় বসিয়ে পুরো রুমে মেডিসিন খুজঁতে লাগে ।আরহামের চেহারায় এক অস্বাভাবীক পাগলামো দেখা যাচ্ছে ।কেমন জানো ভয়ংকর হিংস্র রূপ ।নিজের হাত থেকে রক্ত ঝরে পুরো ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে কিন্তু সে দিকে তার কোন খেয়াল নেই ।সে একাই কি জানো বিরবির করছে আর মেডিসিন খুজঁছে মনে হচ্ছে সে কোন সাইকো ।সেহের আরহামের এই অস্বাভাবীক আচরনে ভয়ে কাপঁছে ।
আরহাম মেডিসিন নিয়ে সেহের সামনে বসতেই সেহের পিছনের দিকে চাপতে লাগে আরহাম তার সেই রক্তাক্ত হাত দিয়ে সেহেরের হাত আটকায় মেডিসিন সেহেরের মাথায় লাগিয়ে দিতে দিতে বললো

-“খু..খুব লাগছে তাই না জান ।
আ..আ’ম সরি আমি চাইনি তুমি আঘাত পাও ।
আম..আমি আমার সেহেরকে কষ্ট দিয়েছি এ..এর শাস্তি তো আমাকে পেতে হবে ।
হুম শাস্তি পেতেই হবে !”

বেন্ডেজ করা শেষ করে আরহাম সেখান থেকে উঠে ভাঙ্গা টি টেবিলর একটা ধারালো কাচেঁর টুকরা হাতে নিয়ে নেয় ।তারপর ‌তা দিয়ে একের পর এক নিজের হাতের উপর আঘাত করতে লাগে হাত থেকে বেয়ে বেয়ে রক্ত ঝড়ছে সেহের বেড থেকে তারাতারি করে নেমে আরহামকে আটকায় তার হাত থেকে সেই কাচেঁর টুকরাটা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয় ।জামার উড়না এনে কাটা স্থানে চেপে ধরে রাখে যাতে রক্ত পরা বন্ধ হয় ।
কি করবে ভয়ে তার মাথা কাজ করছেনা হাতপা থরথর করে কাপঁছে ।
কিন্তু আরহামের হাত থেকে এই রক্ত ঝড়াটাও সে সয্য করতে পারছেনা তার কষ্ট হচ্ছে তারাতারি করে মেডিসিন লাগিয়ে পুরো হাতে বেন্ডেজ করে দেয় ।
সেহের আরহামের দিকে মাথা তুলে তাকাতেই দেখে সে তার মাতাল চাহনিতে সেহেরকে দেখছে আর মিটমিট করে হাসছে ।
যেন কিছুই ঘটেনি সব একদম স্বাভাবীক !

সেহের আরহামের পাশ থেকে উঠে যেতে নিলে পিছন থেকে আরহাম তার হাত ধরে এক টানে আবার নিচে তার পাশে বসিয়ে দেয় ।আলতো হাতে সেহেরের শাড়ির ভাজে নিজের হাত ডুকিয়ে তার কমোড় চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় সেহের ছাড়ানোর চেষ্টা করলে আরহাম আরো শক্ত করে নিজের সাথে তাকে জরিয়ে ধরে ।
সেহের চোখ বন্ধ করে আছে তার বুক ধকধক করছে শ্বাস উঠানামা করছে ।সেহের চোখ বন্ধ থাকা ‌অবস্থায়ই বেশ বুঝতে পারছে যে আরহাম তার খুব কাছে চলে এসেছে ।
এতটা কাছে যে একে অপরের শ্বাস গুনতে পারবে ।সেহের চাইছে আরহামের থেকে দূরে যেতে কিন্তু হয়তো এবার আর সম্ভব না কারন সে যে এবার আরহামের গায়েঁ সেই মিষ্টি সুবাসে আটকিয়ে গেছে !
আস্তে আস্তে আরহাম সেহেরকে আরো কাছে টেনে নিজের সাথে জরিয়ে নিচ্ছে সেহের ধীরে ধীরে নিজের মাথা আরহামের বুকের বাপাশে হেলিয়ে দেয় ।আরহামের হাত সেহেরের কমোড়ে ।

আরহাম ফিস ফিসয়ে বললো

-“জান…
ও জানপাখি !”

সেহের আগের মত মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে হালকা আওয়াজে বললো

-“হুমমমম ।”

আরহাম মুকচি হেসে বলে

-“এখনো কি বলবে তুমি আমাকে ভালোবাসোনা ?
আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো তোমার চোখে স্পষ্ট তা ফুটে উঠে ।
আমি দেখেছি কিছুক্ষন আগে যখন আমার হাত থেকে রক্ত ঝড়ছিলো তুমি কতটা ছটফট করছিলে যেমন আঘাতটা তুমি পেয়েছো ।
আমি তোমার কাছে আসাতে তুমি কিভাবে নিজের অনুভূতি লুকাতে চেষ্টা করছো ।
আর বলছো আমাকে ভালোবাসোনা ?”

সেহের আগের মত আরহামের বুকে মাথা ঠেকিয়ে ধীর আওয়াজে বললো

-“আপনি ভুল ভাবছেন ।
আমি সত্যি আপনাকে ভালোবাসিনা !”

আরহাম সেহেরের কথায় বাকাঁ হেসে বললো

-“তাই বুঝি ?
এখনো আমার বুকে মাথা রেখে আমার বাহুরে আবদ্ধ আছো আর বলছো আমাকে ভালোবাসোনা ।
হাস্যকর !”

সেহের আরহামের কথায় হুস ফিরে সাথে সাথে আরহামের বুক থেকে মাথা তুলে সরে যেতে নেয় কিন্তু আরহাম তাকে সরে যেতে না দিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে বলে

-“একদম এমন কিছু করার চেষ্টাও করো না ।
তুমি আমার ইচ্ছায় আমার বাহুডোরে এসেছো আর আমার ইচ্ছায়ই ছাড়া পাবে !”

সেহের আর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে না ।সে খুব ভালো করে জানে এখান থেকে ছাড়া পাওয়া অসম্ভব ।
সেহের রেগে নাক ফুলিয়ে বলতে লাগে

-“দেখেন আপনি যা করছেন ভালো করছেন না ।আপনি আমার উপর কোন জোর খাটাতে পারেন না আপনার সেই অধিকার নেই !
আমার যাকে ইচ্ছা আমি তাকে বিয়ে করবো আপনি আমাকে বাধাঁ দিতে পারেন না ।”

আরহাম সেহেরের কথা আবার রেগে যায় ।সে রেগে সেহেরের ঘাড়েঁর কাছে জোরে কামড় দেয় ।সেহের ব্যথায় “আহ্ “করে শব্দ করে উঠে ।
সেহের আরহামের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় তারপর নিজের ঘাড়ে হাত বুলাতে বুলাতে চেচিয়েঁ বলে

-“আপনি একটা রাক্ষস !
এভাবে কেউ কামোড় দেয় ?
মনে হয় মাংস উঠে গেছে ।”

-“নেক্সট টাইম এসব মুখে আনলে এর চেয়ে হাজার গুন জোরে কামোড় দিবো ।”

-“আরে জোরজবরদস্তি নাকি যে আপনাকে বিয়ে করতে হবে ?
আপনি একটা গুন্ডা !”

-“হ্যা তোমার বিয়ে তো আমার সাথেই হবে ।
আর হ্যা আমি গুন্ডা ,নিজের বৌ কে নিজের কাছে রাখার জন্য গুন্ডাগিরীর সব সিমানা অতিক্রম করবো ।”

-“আমি আপনাকে ভালোবাসি নাাাাাাাাাাাাা !
আমি ইয়া……”

সেহের আর কিছু বলতে পারে না তার আগেই আরহাম তার ঠোঁটজোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয় ।
তার ঠোঁটের স্বাদ নিতে ব্যস্থ হয়ে পড়ে ।সেহের রসগোল্লার মত গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে আছে এমন কিছু হবে তার কল্পনার বাহিরে ছিলো ।
আরহাম বেশ কিছুসময় পর সেহের ঠোঁট ছেড়ে বড় বড় শ্বাস নিতে থাকে ।সেহের এখনো হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে ।
আরহাম বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে বলে

-“তুমি আমার ছিলে আমার আছো আমারই থাকবে !
অন্যকারো নাম মুখে আনলেও ফল খারাপ হবে ।
আর কি নাম জানো বললে বিয়াশ না ইয়াশ যেনো ?
তাকে পেলে আমি জানে মারবো খুন করে ফেলবো ।
তার চিহ্ন তুমি খুজেঁ পাবেনা !
এখন থেকে ২৪ ঘন্টা শুধু আমার নাম জববে খুব তারাতারি তোমাকে নিতে আসবো নিজেকে প্রস্তুত কর !”

আরহাম নিজের কথা শেষ করে সেহেরের কপালে গভীর চুমু দিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায় ।আরহাম দরজার সামনে যেতেই সেহেরের আওয়াজ তার কানে ভেসে আসে সেহের কঠোর গলায় বলে

-“আপনি যদি এই বিয়েতে কোন ধরনের বাধাঁ দেন বা ইয়াশের কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করেন তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো !”

আরহাম পিছনে ফিরে সেহেরের দিকে তাকিয়ে বাকাঁ হেসে বলে

-“নিজের খেয়াল রেখ টাইম মত মেডিসিন নিও !”

বলেই দরজা খুলে বাহিরে বেরিয়ে যায় ।আরহামের এই বাকাঁ হাসি সেহেরের কাছে বেশ রহস্যজনক ।
সেহের হাটুঁ ভেঙ্গে নিচে বসে পড়ে কান্না করতে লাগে ।
কান্না করতে করতে বলে

-“যদি আপনার সাথে পরিচয়টা আরো আগে হতো !
আমি চাইলেও আপনার হতে পারবোনা আরহাম আমার যে হাত পা বাধাঁ !

আরহামকে সিড়ি দিয়ে নামতে দেখেই সবাই তার দিকে ছুটে আসে ।আরহামের মা আরহামের হাতে বেন্ডেজ দেখে তার কাছে যেয়ে উত্তেজীত হয়ে জিগাসা করে

-“আরহাম বতোমার কি হয়েছে ?
এতটুকু কাটলো কি করে আর সেহের ঠি ক আছে তো ?”

আরহাম শান্ত স্বরে উত্তর দেয়

-“মা বেশি লাগেনি
সব ঠি ক আছে ।
টেনশন করার কিছুনেই রিলেক্স !”

সেহেরের বাবা ভয়ে ভয়ে আরহামকে জিগাসা করে

-“সেহের কি বলেছে ।
ও কি বিয়েতে রাজি ?”

পাশ থেকে মনিশা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আরহামকে উদ্দেশ্য করে বলে

-“অন্যকারো জীবনের সব সুখ মুছে দিয়ে সব রং মুছে দিয়ে নিজের জীবন কোন দিন সুখের হবে না মি: আরহাম খান ।”

বলেই মনিশা সেখান থেকে রেগে চলে যায় ।আরহাম সহ সবাই মনিশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে ।আরহাম ছোট একটা শ্বাস নিয়ে সেহেরের বাবার দিকে তাকিয়ে শান্তা স্বরে বলে

-“যা আপনাদের করার ছিলো তা আপনারা করেছেন আমার স্ত্রীকে আমার থেকে ৫ বছর লুকিয়ে রেখেছেন ।
আজ যা যা হয়েছে তা আপনাদের জন্য হয়েছে ।
না সেহের আমার থেকে দূরে যেত না এসব হতো ।
যা হবার তা হয়েছে এখন যা হবে তা আমার ইচ্ছা অনুযায়ী হবে ।
আপনারা সেহেরের কথা অনুযায়ী সব করুন ।ইয়াশের সাথে তার বিয়েতে রাজি হয়ে যান ।”

আরহাম যাওয়ার আগে সবার উদ্দেশ্য বলে

-“সেহেরের মাথায় চোট লেগেছে আমি ডক্টোরকে ফোন করে দিয়েছি আসছে ।
আমার সেহেরের খেয়াল রাখবেন তার যাতে কোন ক্ষতি না হয় ।যদি আমার সেহেরের কিছু হয় আশা করি বুঝতে পারছেন আমি কি করতে পারি !”

আরহাম কথা শেষ করে সে চলে যায় সবাই তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে ।

চলবে…..❤️

Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊

ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here