বৃত্তের বাইরে পর্ব ৫

#বৃত্তের_বাইরে (পর্বঃ ৫)
.
লিখাঃ #Sifat_Arnab_Rehan.
.

অর্ণব চলে যাবার পনের মিনিট পর ডয়িংরুমে ঢুকলো আমার এক্স-বয়ফ্রেন্ড রবিন ৷ সে কিসের জন্য এই বাসায় আসলো বুঝে উঠতে পারলাম না ৷ রবিনের পিছু পিছু আমার ননদও এলো ৷ হয়তো দরজাটা সেই খুলে দিয়েছে ৷ সে দাঁড়িয়ে না থেকে তার রুমের দিকে চললো ৷ রবিন আমার দিকে এগিয়ে আসছে ৷ তার চেহারা দেখে পুরো গা জ্বলছে ৷ মনে হচ্ছিল কষে কয়টা থাপ্পর মারি ৷ রবিনকে রাগান্বিত চোখে দেখছি ৷ সে বলা কওয়া নেই সোফায় বসে পড়লো ৷ প্রচন্ড রাগের সৃষ্টি হলো তার এত সাহস দেখে ৷ চেঁচিয়ে উঠে বললাম,
-কিসের জন্য এই বাসায় আসছেন? লজ্জা করেনা?
.
রবিন মিহি হেসে শান্ত গলায় জবাব দিলো,
-তোমার সাথে কথা বলতে আসিনি ৷ তোমার শ্বাশুরিকে ডাকো ৷
-তাকে কেন ডাকতে হবে?
-ডাকতে বলছি, ডাকো ডাকে ৷
.
দাঁত কটমটিয়ে ড্রয়িংরুম থেকে শ্বাশুরি আম্মার রুমে গেলাম ৷ তাকে রবিনের বিষয়টা বললে তিনি আমার সঙ্গে ড্রয়িংরুমে আসলেন ৷ শ্বাশুরি আম্মা রবিনকে দেখে কৌতূহলের চোখে তাকালেন, অতঃপর শান্ত গলায় বললেন,
-বাবা, তুমি কে? তোমাকে তো চিনতে পারলাম না ৷
রবিন নরম কন্ঠে জবাব দিলো,
-আন্টি, আমাকে চিনবেন না ৷ আমি অর্ণবের বন্ধু রবিন ৷ তার কাছে এসেছি, একটা বিশেষ দরকারে ৷
-কি দরকার?
-অর্ণবের থেকে ৫ লক্ষ টাকা পাই ৷ সেই টাকাগুলো নিতেই আসছি ৷ আর গোপন একটা তথ্য রয়েছে, সেটা জানাতেও আসছি ৷
.
অর্ণব এত টাকা ঋণ করেছে শুনে আমার শ্বাশুরি থমকে দাঁড়ালেন ৷ থম মেরে তাকিয়ে রইলেন রবিনের দিকে ৷ মনে হলো তিনি আকাশ থেকে পরেছেন এমন অবস্থা ৷ তিনি আতঙ্কের স্বরে রবিনকে বললেন,
-বাবা, অর্ণব তোমার থেকে এত টাকা ধার নিয়েছিল,অথচ আমরা জানিনা এব্যাপারে ৷ বিষয়টা কেমন অদ্ভুত লাগছেনা? সে কখনই কোনো কাজ আমাদের পরামর্শ ছাড়া করেনি ৷ তবুও জানতে চাইছি, কিসের জন্য এতগুলো টাকা নিলো তোমার থেকে?
রবিন জবাব দিলো,
-সেটা তার থেকে জেনে নিবেন ৷
.
.
তাদের কথার মাঝে আমি বলে উঠলাম,
-বিশ্বাস করলাম অর্ণব এতসব টাকা ঋণ নিয়েছে ৷ এবার সেই গোপন তথ্যটির কথা বলুন ৷ কোন গোপন সংবাদের জন্য এই বাসায় এসছেন?
.
রবিন চাপাকন্ঠে জবাব দিলো,
-অর্ণব আমার ছোটবোনকে গোপনে বিয়ে করেছে ৷ আর এটা আমি আজকে জানতে পারলাম!
.
কথাটা শোনামাত্র আঁতকে উঠলাম ৷ শরীরের উপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেল ৷ প্রকম্পিত হয়ে মাথা চক্কর মেরে উঠলো ৷ এমন কিছু শুনতে পাবো ভাবনাতেও ছিলনা ৷ বুক ফেঁটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে যেন ৷ অর্ণবও আমার সঙ্গে ধোঁকাবাজি করলো? সে কিসের জন্য সত্যটা গোপন করলো? সত্যিই কি সে এমন কাজ করেছে? পুরোপুরিভাবে তো বিশ্বাস হচ্ছেনা ৷ নাকি রবিন মিথ্যাচার করছে? মিথ্যায় হবে, মানুষটাই মিথ্যুক, বেঈমান ৷ শ্বাশুরি আম্মার দিকে নজর দিলাম ৷ তিনি ঝিম মেরে জড় পদার্থের মত দাঁড়িয়ে আছেন ৷ তিনি বিষয়টা মেনে নিতে পারছেন না ৷ শ্বাশুরি আম্মা নির্বাক হয়ে ছিলেন ৷ কিন্তু নিস্তব্ধতা কাটিয়ে উঠে, রবিনকে চেঁচানো গলায় বললেন,
-কি উল্টাপাল্টা বলছো তুমি? আমার ছেলে এতটা খারাপ নয় যে গোপনে এমন একটা কাজ করবে!
.
রবিন মৃদ্যু হেসে বলল,
-আন্টি, বিশ্বাস করবেন না জানতাম ৷ এজন্য বিয়ের কাবিননামার কাগজপত্র নিয়ে আসছি ৷ তারচেয়ে বড় কথা, রবিনকেই ডাকুন না ৷ সে সত্যটা খুলে বলবে!
.
শ্বাশুরি আম্মার কপাল ঘামছিল ৷ তিনি রবিনকে বললেন,
-দেখাও তো কাগজটা ৷
.
রবিন কাগজ বের করে শ্বাশুরি আম্মার হাতে দিলো ৷ তিনি কাগজটা পড়ে আঁতকে উঠলেন ৷ তবুও তোতলাতে বললেন,
-এসব আমি বিশ্বাস করিনা ৷ অর্ণবের মুখ থেকে শুনবো, তারপর বিশ্বাস অবিশ্বাস!
দাঁড়াও, আমি অর্ণবকে ডাকছি!
.
শ্বাশুরি আম্মাকে জবাব দিলাম,
-আম্মা, সে তো নাই বাসায় ৷
শ্বাশুরি আম্মা বললেন,
-কই গেছে সে?
-একটু দরকারী কাজে গেছে ৷
-ওকে কেন যেতে দিলে? বিয়ের পরদিন কিসের কাজ ওর ৷
.
রবিন বিস্মিত হয়ে তীর্যককন্ঠে বলল,
-অর্ণব গতকাল বিয়ে করেছে? মানেটা কি?

আমি জবাব দিলাম,
-জি, গতকাল তার সাথে আমার বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে ৷
.
রবিন ক্ষিপ্তস্বরে বলল,
-ওর বিয়ে করা আমি ছাড়াবো ৷ আজই ওর নামে নারী নির্যাতন মামলা করবো ৷ আমার বোনকে রেখে আরেকজনকে বিয়ে করার মজা আমি দেখাবো ৷
-আচ্ছা, আমিও দেখবো আপনি কি করতে পারেন ৷ এখন বাসা থেকে দূর হন ৷ নইলে ঝাঁড়ু দিয়ে পিটিয়ে বের করবো!
-মুখ শামলে কথা বলো সোনু!
-আপনি বাসা থেকে চলে যান ৷
-টাকা না নিয়ে যাবোনা ৷
-একটা টাকাও পাবেন না!
.

কথার মাঝে অর্ণব রুমের ভেতর ঢুকে পড়লো ৷ তাকে দেখেই রবিন সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো ৷ অর্ণব রবিনকে দেখে কপাল কুঞ্চিয়ে তাকিয়ে রইলো ৷ অতঃপর কৌতূহলের কন্ঠে বলল,
-তুমি এখানে? কি জন্য আসছো?
.
রবিন উত্তর দেবার পূর্বে আমি তীক্ষ্ণকন্ঠে জবাব দিলাম,
-সে দাবি করছে তুমি নাকি ৫লাখ টাকা তার থেকে ধার নিয়েছো? এবং তার ছোট বোনকে গোপনে বিয়ে করে নিয়েছো অনেক আগেই?
.
কথাটি শোনামাত্র অর্ণবের চেহারার রং পাল্টে রক্তবর্ণ হয়ে গেল ৷ চোখে দিয়ে অগ্নি ঝরছিল এমন অবস্থা ৷ সে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে রবিনের নিকট ধেয়ে গেলো এবং তার শার্টের কলার চেপে ধরে দরজার নিকট নিয়ে গেলো এবং দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-কে রে তুই? তোর থেকে ৫লক্ষ টাকা ধার নিবো আমি? আর তোর বোনের যে না চেহারা, সেই আমি তোর বোনকে বিয়ে করবো? পাগলা গারদে ছিলি এতদিন, সেটাই তো ভালো ছিল ৷ এখানে এসে পাগলামী করছিস কেন? এক্ষণি বাসা থেকে বের হয়ে যা!
.
.

অর্ণব রবিনকে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজাটা আটকে দিলো ৷ অতঃপর অর্ণব আমার দিকে তেড়ে এসে চেঁচানো গলায় বলল,
-ওকে রুমের ভেতর ঢুকতে দিয়েছিলি কেন, বল? প্রেম জেগে উঠেছিল তার জন্য, তাইনা? এতই যদি প্রেম, তাহলে যা তার কাছে; চলে যা! মন চাচ্ছে তোকে মেরে তক্তা বানিয়ে দিই ৷ যা, তুইও আমার সামনে দূর হ!
.

অবাক হয়ে গেলাম অর্ণবের আচরণে ৷ জোরালো কন্ঠে বললাম,
-আশ্চর্য! আমি কি করছি এখানে? আমি কি বাসায় ঢুকতে দিয়েছি তাকে? নাকি তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম?
-তুই তাকে বসতে দিয়েছিলি কিসের জন্য?
-সে জোর করে বসেছিল ৷ আমার প্রয়োজনে সে, বাসায় আসেনি ৷ আসছে তোমার প্রয়োজনে!
-আর একটা কথা না ৷ আমার চোখের সামনে থেকে সর!
.
.
শ্বাশুরি আম্মা বলে উঠলো,
-অর্ণব, কি শুরু করেছিস? থাম তো এবার!
-মা, বলতে দাও আমাকে ৷
-চুপ! আর একটা কথা না ৷ ভালভাবে উত্তর দে, কই নাকি গিয়েছিস তুই?
.
অর্ণব জবাব দিলো,
-তোমাকে না বলে যাচ্ছিলাম, মনে হতেই ফিরে এলাম বাসায় ৷ আমি পনের দিন বাসায় থাকবোনা ৷ সোনুকে ওর বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিও!
-কিসের জন্য পনের দিন বাসায় থাকবিনা?
-দরকার আছে ৷
-কি এমন দরকার যে ঘরে নতুন বউ রেখে তোকে বাইরে থাকতে হবে?
-এতকিছু জেনে কি করবে তুমি?
-তুই বলবি? নাকি মাইর খাবি? তোর চাচা তথা শ্বশুর যদি এটা শোনে সে কি মেনে নিবে?
-তাকে বুঝানোর দায়িত্ব সোনুর ৷
.
অর্ণব থেমে গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ণকন্ঠে বলল,
-আঙ্কেলকে বুঝানোর দায়িত্ব তোর ৷ আর আমাকে আরো ২০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে দে তুই ৷ লাগবে টাকাগুলো! তোর কাছে তো থাকার কথা ৷
.
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
-টাকা থাকলেও দিবোনা ৷
.
অর্ণব উত্তপ্ত চোখে তাকিয়ে থেকে শক্তকন্ঠে বলল,
-কি বললি, আরেকবার বল তো!
.
.
আচমকা দরজায় কলিংবেল বাজলো ৷ শ্বাশুরি আম্মা দরজা খুলতেই দেখতে পাওয়া গেল তিন-চারজন পুলিশকে!
আতঙ্কিত চোখে তাকালাম ৷ এ সময় পুলিশের আগমণ কিসের জন্য?
.
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here