বৃত্তের বাইরে পর্ব ৬

#বৃত্তের_বাইরে (পর্বঃ ৬)
লিখাঃ #Sifat_Arnab_Rehan
.
শ্বাশুরি আম্মা দরজা খুলতেই দেখতে পাওয়া গেল তিন-চারজন পুলিশকে!
আতঙ্কিত চোখে তাকালাম ৷ এ সময় পুলিশের আগমণ কিসের জন্য? কিছুই তো বুঝছিনা ৷ এক সিনিয়র পুলিশ অর্ণবের দিকে এগিয়ে এসে শক্তকন্ঠে বলল,
-আমি এসআই জাবেদ আলী ৷ আপনার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে, আপনাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে ৷
.

এসআই এর কথায় বুকটা ঝাঁকি মেরে উঠলো অস্বাভাবিকভাবে ৷ বড়সর আঘাত পেলাম ৷ এটা কি শুনছি আমি? অর্ণব আঁতকে ওঠা চোখে এসআই’এর দিকে তাকিয়ে আছে ৷ আমার শ্বাশুরিও স্তম্ভিত হয়ে চোখ গোলগোল বানিয়ে তাকিয়ে রইলো ৷ অর্ণব অপরাধীর ন্যায় অভিব্যক্তি নিয়ে পুলিশ অফিসারকে জিজ্ঞেসা করলো,
-আমার কি অপরাধ? কিসের জন্য গ্রেফতার করতে আসছেন? আমি তো কিছুই করিনি!
.
জাবেদ আলী জোরালো কন্ঠে জবাব দিলো,
-আপনি ১১ দিন পূর্বে রাত ৮ টার দিকে একটি মেয়েকে প্রথমে ধর্ষণ এরপর হত্যা করেছেন ৷ আজ ১১দিনের মাথায় এর বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ ও সাক্ষ্যি পেয়ে আপনাকে ধরতে এসেছি ৷
.
এটা শুনে আমার বুকের মাঝে তৈরি হওয়া ভোঁতা ব্যথাটা বেড়ে গেল ৷ অর্ণব এরকম জঘন্য কাজ কিভাবে করতে পারে? তবে কি এতদিন তাকে ভুল চিনে এসেছি? নাকি আমি মানুষ চিনতে ভুল করি বারবার? বাকা চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম ৷ সে রেগে আগুন ৷ অগ্নিমূর্তি ধারণ করে ফোঁসফোঁস করছে এবং ঘণঘণ নিশ্বাস ফেলছে ৷ অর্ণব রাগকে দমন করতে না পেরে তীর্যককন্ঠে বলল,
-কি যা তা বলছেন? আমি কোনো অপরিচিত নারীর দিকে ভুলক্রমেও তাকাই না, সেখানে ধর্ষণের মত নিকৃষ্ট কাজ করবো কেমনে ভাবেন? মাথা কি গেছে আপনার?
এসআই বলল,
-দেখুন যা বলার আদালতে বলবেন ৷ আপনাতত আপনাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে ৷ জেলে চালান করে দেওয়া হবে, কারণ আমাদের হাতে শক্ত প্রমাণ রয়েছে! যে মেয়েটাকে ধর্ষণ অতঃপর খুন করেছেন, সে আপনার পরিচিত জন; অপরিচিত কেউ নয় ৷
-কে হয় সে আমার? নামটা কি?
-তার নাম মৌমিতা ৷ আপনার কলিগ সে!
.
এসআই জাবেদ আলী কথা থামিয়ে ফের কনোস্টেবলকে বললেন তাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে নিয়ে চলো ৷ অর্ণব নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো, কিছুই বললোনা ৷ তার ভাবভঙ্গি দেখে বুঝতে পারা যাচ্ছে সে সত্যিই অপরাধ করেছে ৷ আমরা পুলিশকে কিছু বলবো কিন্তু মুখে কথা নেই ৷ কথা বের হচ্ছেনা ৷ গলা আটকে আছে ৷ আসলে এমন অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটবে কেউ ভাবিই নি ৷ পুলিশ অর্ণবকে নিয়ে যেতে লাগলে শ্বাশুরি আম্মা অকস্মাৎ কান্না জুরে দিলেন ৷ তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে অর্ণবের হাত ধরার চেষ্টা করলেন এবং বলতে লাগলেন,
-অর্ণব তুই এমনটা করতে পারিস না ৷ পুলিশ কেন তোকে ধরে নিয়ে যাবে ৷ তুই তো আমাদের নিকট নিষ্পাপ শিশুর মত ৷ এমন কাজ তুই করতে পারিস না ৷
তুই পুলিশের সঙ্গে যাবিনা বলছি!
.
শ্বাশুরি আম্মা থেমে গিয়ে এসআই এর হাত ধরে ক্রন্দণরত অবস্থাতেই বললেন,
-ওকে ছেড়ে দেন পুলিশ স্যার, ছেড়ে দেন ৷ আমার ছেলে এমন কাজ করতে পারেনা ৷ কিছুতেই এমন কাজ করবেনা সে!
.

এসআই শুধু সরি শব্দটি উচ্চারণ করলো বারবার ৷ শ্বাশুরি আম্মা কেঁদে চললেন ৷ অর্ণব আমার দিকে ঘুরে একনজর তাকানোর পর কাতরকন্ঠে বলল,
-তোর থেকে যে টাকা নিয়েছিলাম সেটা কাজে লাগাতে পারলাম না ৷ পারলে তুই নাবিদ মেমোরিয়াল হাসপাতালে গিয়ে ৩৩ নং বেডের পেশেন্ট সামান্তার নামে টাকাগুলো ডাক্তারের হাতে জমা দিস!
.
আমি হ্যাঁ, না কিছুই বললাম না অর্ণবকে, শুধু আহত পাখির ন্যায় করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ৷ অর্ণব তার প্যান্টের পকেট থেকে টাকাগুলো বের করে আমার দিকে ছুঁড়ে মারলো ৷ এইআই টাকাগুলো দেখে চোখ গোলগোল বানিয়ে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকালো ৷ অতঃপর, হালকাভাবে কেঁশে তোতলাতে তোতলাতে বলল,
-ইয়ে মানে, মিঃ অর্ণব আমি একটা অফার দিবো আপনাকে ৷ এটার জন্য একটা শর্ত রয়েছে ৷ যদি সম্ভব হয় তাহলে অফারটি গ্রহণ করে শর্তটি মেনে নিন এবং বেঁচে যান!
.
অর্ণব অতি উৎসাহী হয়ে তোরজোর করে জোরালো কন্ঠে বলল,
-কি অফার, এবং শর্তটাই বা কি? বলুন; আমি সব শর্ত মানতে রাজি!
-আপনি যদি ঐ টাকার বান্ডেলটা আমাকে দিতে পারেন তবে আপনি আমার হাত থেকে ছাড়া পাবেন এবং আপনি আত্মগোপন করে থাকলে বেঁচে যাবেন ৷ অন্যথায় জেলে গেলেই আপনাকে মরতে হবে ৷ ফাঁসি ছাড়া উপায় নেই ৷ কারণ, মেয়েটির বাবা এক পুলিশ অফিসারের বন্ধু! রেহায় পাবেন না, মোটেও ৷ আমাকে যদি খুশি করতে পারেন তাহলে ধর্ষণের কেসটাকে ঘুরিয়ে দিতে পারবো, এমনকি খুনের যে সাক্ষ্যি প্রমাণ রয়েছে, সেসবও ভ্যানিশ করে দিতে পারবো!
-দুঃখিত! প্রথমত, আমি অপরাধ করিনি ৷ এরপরও আমাকে আসামী বানানো হচ্ছে ৷ এটাকে মেনে নিচ্ছি এজন্যই যে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচার কোনো পথ নেই ৷ আপনার সাহায্য পেয়ে মুক্তি পাবো এই আশায় শর্ত শুনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম ৷ কিন্তু আমি শর্তটা পূরণ করতে রাজি নই ৷ কারণ, টাকাগুলো আমার চেয়ে সামান্তার খুব বেশি দরকার ৷ টাকা না হলে তার জরুরি অপারেশনটা বন্ধ হয়ে যাবে ৷ কিডনি অপারেশন হবে ৷ আগে ৩ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছি, আরো ১লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে ৷ যে টাকা এখন আমার হাতে!

-ঠিকআছে, তাহলে আমার সঙ্গে থানায় চলুন!

.
এসআইকে থামিয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বললাম,
-ওয়েট, তাকে নিয়ে যাবেন না ৷ আপনার কত টাকা লাগবে বলুন ৷ টাকা পেলে তাকে ছাড়বেন তো?
.
এসআই এর মুখে হাসি ফুটে উঠলো ৷ সে হাস্যজ্জ্বল চেহারায় আমার দিকে তাকালো ৷ কিন্তু ক্ষণিক পর হাসির রেখা চেহারা থেকে বিলিন করে দিয়ে তীক্ষ্ণকন্ঠে বলল,
-অর্ণব প্রথমবারে শর্তে রাজি হলে আমিও মাত্র ১লাখে রাজি হতাম ৷ কিন্তু এখন সেটা পারবোনা ৷ আমারে হয়রাণী করেছে সে ৷ এখন ৩লক্ষ টাকা দিতে হবে ৷ তিনজন কনোস্টেবল রয়েছে, তাদেরও ভাগ রয়েছে ৷ যদি ৩লাখে রাজি হন তাহলে তাকে ছেড়ে দিবো!
-আমি রাজি, কিন্তু টাকাটা ক্যাশে পাবেন না, চেকে পাবেন ৷ কি রাজি আছেন?
.
-হলেই হয় ৷
.
.
আমি ফোনটা আনতে রুমে গেলাম ৷ রুম থেকে ফোন এনে আব্বুকে ফোন দিলাম ৷ জোর দিয়ে বললাম,
-আব্বু, এই মুহূর্তে পাবেলের কাছে ৩লাখের একটি টাকার চেক পাঠিয়ে দাও ৷ কি কারণে এত টাকা লাগবে সেটা তোমাকে পরে জানাবো ৷ প্লিজ বাবা, পাঠিয়ে দাও চেকটা!
.
আব্বু ঈষৎ গম্ভীর কন্ঠস্বরে বলল,
-চেকটা পাঠিয়ে তো দিবোই, কিন্তু কি দরকারে লাগবে এত টাকা, সেটা তো বলবি!
-বলবো বাবা বলবো ৷ তুমি দয়া করে টাকার চেকটা পাঠিয়ে দাও!
-আচ্ছা, আমি নিজে তোর বাসায় যাচ্ছি!
.
.
১৫ মিনিট পরই আব্বু আমাদের বাসায় চলে এলো ৷ আব্বু আসবে বলে পুলিশকে গেস্টুরুমে পাঠিয়ে দিয়েছি ৷ আব্বু পুলিশ দেখলেই সমস্যা হবে, তার নানান জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে তখন ৷ এজন্যই পুলিশকে গেস্টরুমে আটকে রাখা হয়েছে ৷ আমি ড্রয়িংরুমের সোফায় বসা ৷ আব্বুকে দেখে সোফা থেকে দাঁড়ালাম ৷ সে আমার নিকট এসে হাতে টাকার চেকটা দিয়ে তীব্র আকাঙ্খিত কন্ঠে বলল,
-এত টাকা লাগবে কেন, বল?
মিষ্টি হেসে জবাব দিলাম,
-তোমার জামাইকে নিয়ে কাল হানিমুনে যাবো; টাকা লাগবে না?
.
আব্বুর মুখভর্তি হাসি এসে জরো হলো ৷ খিলখিল করে হাসতে হাসতে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
-আচ্ছা, এই ব্যাপার ৷ এর জন্য এত জরুরি ভিত্তিতে টাকা চাইবি নাকি! ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম আমি ৷ যাহোক, ভাল থাক ৷ আমি এখন বাসায় যাবো, বাসাতে অবস্থান করেই বাইয়ারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করবো!
.
.
কথাটি বলেই আব্বু চলে গেল ৷ সে চলে যেতেই গেস্টুরুম গেলাম ৷ এবং এসআই এর হাতে টাকার চেক ধরিয়ে দিলাম ৷ সে টাকা পেয়ে বেজায় খুশি হলো ৷ অর্ণবকে ছেড়ে দিলো এবং জোর গলায় বলল,
-এই বাসা থেকে আপাতত কয়টা দিন দূরে গিয়ে থাকেন ৷ যেদিন আমি জানাবো সেদিনই বাসায় ফিরে আসবেন ৷ এর মধ্যে আপনার মামলাটা খারিজ করে দিতে পারবো বলে মনে করি!
.
কথাগুলো বলেই এসআই কনোস্টেবলদের সঙ্গে নিয়ে চলে গেল ৷ তবে অর্ণবও তাদের সঙ্গে কিছুদূর গেল ৷ অর্ণব ফিরে এসে আমার থেকে সেই ১লক্ষ টাকা নিয়ে নিলো এবং মৃদ্যুস্বরে বলল,
-অনেক উপকার করলি রে ৷ এত উপকারের কথা ভুলবোনা ৷ এখন আমি এই টাকাগুলো নিয়ে সামান্তার কাছে যাবো ৷ ওর অপারেশনটা হয়ে গেলে বাঁচি ৷ হাসপাতাল থেকে সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরবো ৷ ফিরে এসে তোকে নিয়ে কক্সবাজারের দিকে রওনা দিবো!
.
.
অর্ণব আমার মাথায় হাত বলিয়ে দিয়ে আমাদের বেডরুমের দিকে গেলো ৷ বেশকিছুক্ষণ পর নতুন একটা টিশার্ট পরে ড্রয়িংরুমে ফিরে এলো ৷ এবং আমাকে দেখে বলল,
-কেমন লাগছে রে?
জবাব দিলাম,
-ভাল লাগছে ৷ আচ্ছা, একটা কথা বলার ছিল বলবো?
-বল!
– তুমি বলেছিলে পনের দিন বাইরে থাকবে, কিন্তু হঠাৎ করে বলছো আমাকে নিয়ে কক্সবাজার যাবে, রহস্যটা কি?
-পনের দিন সামান্তার সঙ্গে থাকতাম কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্ত পাল্টিয়েছি ৷ ভেবে দেখলাম, বিয়ে করা বউকে কষ্ট দিয়ে বাইরে থাকা ঠিক হবেনা ৷ যতই সামান্তা আমার প্রেমিকা হোক, সবচেয়ে বড় হক্বের দাবিদার তো তুই! আর তাছাড়া, সামান্তার সঙ্গে ওর বাবা, মা ও ভাইয়েরা আছে ৷ ভালই থাকবে সে!
-বাহ, এত তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেললে, ভাল তো! কিন্তু রবিনের বোনের কি হবে? তাকে কবে কখন সময় দিবে?
.
কথাটি শুনে অর্ণবের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল ৷ কপট রাগস্বরে বলল,
-মেজাজ গরম করিস না! তোকে কি বলেছি রবিনের বোনকে বিয়ে করেছি?
নিচুস্বরে বললাম,
-বলো নি,কিন্তু..
-কিন্তু তোর পুরাণ প্রেমিক বলেছে বলে বিষয়টা বিশ্বাস করে নিলি, তাইতো?
-না ৷ আসলে..
-হয়েছে ৷ এবার চুপ কর! আমি ভেবেছিলাম তোকে নিয়ে কক্সবাজারে কিছু মধুর সময় পার করবো, কিন্তু সেটা হচ্ছেনা ৷
-প্লিজ, রাগ করোনা ৷ আমি মুখ ফসকে বলে ফেলেছি ৷
.
অর্ণব আমার কথা না শুনে শ্বাশুরি আম্মাকে ডাকতে ডাকতে ওনার রুমের দিকে ছুটলো ৷ কিছুক্ষণ পর শ্বাশুরিকে সঙ্গে নিয়ে আমার নিকট এলো ৷ অতঃপর আমার দিকে তাকিয়ে অর্ণব তার মাকে বলল,
-সোনুকে আজ এখনই তার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিবে মা ৷ আমি বাসা থেকে চলে যাচ্ছি ৷ পুলিশের হুকুম বাসায় থাকা যাবেনা ৷ এজন্য আত্মগোপন করে রইবো!
.
আমার কষ্ট হচ্ছিল এই ভেবে যে কি ভেবে এমন একজনকে বিয়ে করতে রাজি হলাম, যে স্ত্রীর মন বোঝেনা ৷ যার মধ্যে শুধু জটিলতা ও প্যাচ ৷৷ বিয়ের আগের দিনও তাকে কত বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবতাম অথচ বিয়ে করার পর কত কঠিন মনের লাগছে তাকে ৷ অল্পতেই রেগে যায় ৷ একের পর এক নানা অপকর্মের সংবাদ পাচ্ছি তার বিরুদ্ধে ৷ কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা বুঝে উঠতে পারছিনা ৷ তার গার্লফ্রেন্ড চৈতির সঙ্গে সত্যি সত্যি ব্রেকআপ হয়েছে কিনা জানিনা ৷ চৈতি আমার বান্ধবী, এ সত্বেও তাকে ফোন দিয়ে পাইনি গত ৫ দিন হলো ৷ তার ফোন বন্ধ ৷ তাই আজকে ফোন দিয়ে জেনে নিতে পারছিনা যে সত্যিই অর্ণবের সঙ্গে তার সম্পর্কচ্ছেদ হয়েছে কিনা!
বুঝতে পারছিনা অর্ণব রবিনের বোনকে বিয়ে করেছে নাকি করেনি ৷ এটাও বুঝে আসছেনা অর্ণব খুনী, ধর্ষক নাকি নির্দোষ ৷ তার বিরুদ্ধে এত এত অপরাধের কথা বিশ্বাস হয়েও হচ্ছেনা!
.
.
অর্ণব বাসা থেকে চলে গেলো!
সে চলে যাবার পর শ্বাশুরি আম্মা আমাকে বললো,
-বউমা, তুমি কি তোমাদের বাসায় যেতে চাও, নাকি এখানেই থাকবে?

ছলছল চোখে তাকিয়ে শ্বাশুরিকে বললাম,
-আম্মা, বিয়ের আগে তো প্রায় দিনই এই বাসায় এসে থাকতাম ৷ আপনি কি জানেন না অর্ণব শুধু আমার কাজিনই ছিলনা ছিল অনেক ভাল একজন বন্ধু ৷ বয়সে তফাৎ থাকলেও অর্ণবকে ঘণিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম ৷ এজন্য এ বাসাটা আমার নিকট সবচেয়ে আনন্দমহল ছিল ৷ আর আপনি তো আমার আরেক মায়ের মত ছিলেন, এখনো তেমনি আছেন ৷ তাহলে, কিসের জন্য এই বাসা ছেড়ে যাবো মাত্র কয়টা দিনের জন্য? আর আপনার ছেলে আমার উপর রাগ করে বলেছে বাইরে থাকবে ৷ আমার বিশ্বাস রাগ কেটে গেলে সে সন্ধ্যা পরই বাসায় চলে আসবে ৷ এবং আমাকে নিয়ে কক্সবাজার যাবে!

-অর্ণব তোমার উপর রেগে আছে নাকি? কিন্তু কেন?
-এইযে এতসব ঝামেলা, এসব ব্যাপারে তার থেকে কৈফিয়ত চেয়েছি, এজন্য রেগে গেছে ৷
-তো, তুমি কি ভাবো- অর্ণব এসমস্ত কাজ করেছে?
-না আম্মা, সেটা না ৷ আমার কষ্ট হচ্ছে অর্ণবের বিরুদ্ধে এতসব বাজে বিষয় শুনছি বলে ৷ মনকে হালকা করতে তাকে কিছু প্রশ্ন করেছিলাম মাত্র!
-হুম, হয়েছে ৷ আর বলতে হবেনা ৷ তোমাকে স্পষ্ট করে বলে দিই, অর্ণব কখনোই নারীঘটিত কোনো কাজ করবেনা; সে ওরকম ছেলেই নয় ৷ আর খুন খারাপী সেটা তো আরো না ৷ ওর পিছে অনেক শত্রু লেগেছে, তারাই এসব করেছে ওকে ফাঁসানোর জন্য!
-বুঝতে পেরেছি আম্মা!
.

শ্বাশুরি আম্মা চলে গেলেন ৷ আমি আমার রুমে গেলাম ৷ রুমে সারাটা দিন কাটিয়ে দিলাম কিন্তু শান্তি পেলাম না একটুও ৷ সন্ধ্যা পর প্রচন্ড অস্বস্তি লাগছিল ৷ মনটাকে শান্ত করতে পারছিনা মোটেও ৷ কি করলে মনটা শান্ত হবে ভেবে পাচ্ছিনা ৷ কেন যেন রবিনকে ফোন দিতে ইচ্ছা করছে ৷ ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে রবিনকে ফোন দিলাম ৷ যখন রবিন এই বাসায় এসেছিল তখন তাকে মনের ভেতর জমে থাকা প্রশ্নটি করতে পারিনি ৷ কিন্তু এখন বলবো ৷ ফোন রিসিভ হতেই বললাম,
-বেশি কথা না, মাত্র কয়েকটা কথা বলবো ৷ প্রশ্নের উত্তর পেলেই ফোন কেটে দিবো!
রবিন বলল,
-হুম, বলো ৷
-গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি পরে করছি ৷ আগে বলেন- অর্ণব কি সত্যিই আপনার বোনকে বিয়ে করেছে?
-না ৷ এটা সত্য নয় ৷
-মানে?
-মানে সোজা ৷ আমি তখন মিথ্যা বলেছিলাম অর্ণবকে ফাঁসানোর জন্য ৷
-কেন?
-কারণ, তার থেকে টাকা পাই, সে টাকা দিতে দেরি করছিল ৷
-তাই বলে এতবড় মিথ্যাচার করতে হবে ৷ আপনি কি জানতেন সে আমাকে বিয়ে করেছে গতকাল?
-জানতে পেরেই তো অর্ণবের বাসায় গিয়েছিলাম ৷
-আরেকটা প্রশ্ন, আপনি কি আমাকে ভালবাসতেন নাকি অভিনয় করেছিলেন?
-আমি কাউকে মন থেকে ভালবাসিনা ৷ তোমার মত ৪টা গার্লফ্রেন্ড আছে আমার!
-জানোয়ারদের তো ওতোগুলো গার্লফ্রেন্ড থাকবেই ৷
-মুখ শামলে কথ বল ৷
-চুপ করেন ৷ আপনি যদি আবারো অর্ণবের বাসায় আসেন তো মেরেই ফেলবো ৷
-অবশ্যই যাবো, অর্ণবের থেকে আরো ৫০ হাজার টাকা পাবো ৷ সেই টাকা তুলতে হবে তো!
-এক টাকাও পাবেন না ৷
-পাবো পাবো ৷ সকালে অর্ণবের থেকে ৫০ হাজার টাকা পেয়ে তো বাসা থেকে চলে এলাম ৷ অন্যথায় সব ফাঁস করে দিতাম ৷
-কি ফাঁস করে দিতেন?
-অর্ণবের সব নাটক ও প্ল্যানের কথা ৷ সেসব তোমাকে বলা যাবেনা ৷ বলবো সেদিন, যেদিন অর্ণব বাকি টাকা দিতে অস্বীকার করবে! ৩ লক্ষ টাকা পেতাম ৷ আরো ৫০ হাজার পাই, যদি সে একবার বলে আমাকে টাকা দিবোনা, তবে সব ফাঁস করবো!
-কি ফাঁস করবেন? আমাকে বললে কি ক্ষতি?
-বলা যাবেনা ৷
-বলবেন না? ঠিকআছে; কিন্তু এটা তো বলেন সকালে অর্ণব আপনাকে কখন টাকা দিলো?
-যখন সে শার্টের কলার ধরে আমাকে ড্রয়িংরুম থেকে বের করে দিয়েছিল, তখনই গুণেগুণে ৫০ হাজার টাকা আমার হাতে ধরিয়ে দেয়!
-সত্যিই কি অর্ণব আপনার থেকে এতো টাকা ধার নিয়েছিল?
-না বোকা, টাকাগুলোর দাবীদার মূলত এজন্যই যে সে আমার নিকট ব্লাকমেইলের শিকার ৷ তার গোপন রহস্য জানি আমি ৷ ফাঁস করে দিলেই সে শেষ! .
.
থমকে গিয়ে বললাম,
-কি রহস্য?
.
.
#চলবে?

.
( #গল্পটি_সম্পর্ক মতামত পেশ করুন ৷ Nice, Next কমেন্ট না করলে খুশি হবো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here