বৃত্তের বাইরে পর্ব ৪

#বৃত্তের_বাইরে (পর্বঃ ৪)
লিখাঃ #Sifat_Arnab_Rehan.
.
অতঃপর অর্ণব এত জোরে তার হাত দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করলো যে আক করে উঠলাম এবং আমার চোখদ্বয় বন্ধ হয়ে গেল!
.
বিকট আওয়াজে চিৎকার করে উঠলাম ৷ ভেঙ্গে গেল ঘুম ৷ মনে হচ্ছিল এতক্ষণ কেউ আমার দেহের উপরে বৃহদাকার পাথর ছুড়ে মেরে চ্যাপ্টা করে দিয়েছে এবং আমার অবস্থা আহত পাখির ন্যায় ৷ ঘুম ভেঙ্গে গেল ঠিকই কিন্তু ঘণঘণ শ্বাস ফেলা কমছিলনা, অস্থির ভাবটাও যাচ্ছিলনা ৷ কপাল ঘেমে জবজব করছে ৷ পুরো শরীর দুর্বল লাগছে ৷ ব্যথা অনুভূত হচ্ছে গায়ে ৷ চোখের পাতা খুলে আলোকিত রুমের ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছি ৷ অনবরত ফ্যান ঘুরছে, এরপরও গরম কাটছেনা ৷ তৃষ্ণায় গলা শুকে কাঠ হয়ে গেছে ৷ পানি খেতে পারলে ভাল হতো ৷ কিন্তু রুম থেকে বের হতে ভয় করছে ৷ যদি অর্ণব আমাকে আক্রমণ করে বসে? সে নিশ্চয় আমাকে হত্যা করতে চাই ৷ এবং এতে সে মনের মানুষের নিকট সহজেই চলে যেতে পারবে ৷ এমনটাই করবে সে ৷ তা নাহলে এরকম ভয়ংকর স্বপ্ন দেখতাম না ৷ ফ্যানের দিক থেকে চেহারা ঘুরিয়ে আমার ডানপাশে নজর দিলাম ৷ নজর দিয়েই আঁতকে উঠলাম ৷ অর্ণব আমার পাশে শোয়া ৷ তার চেহারাটা আমার খুবই নিকটে ৷ কয়েক ইঞ্চি এগোলেই তার চেহারার সাথে আমার চেহারা লেগে যাবে ৷ সে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে ৷ যেন সে নিষ্পাপ শিশু! অথচ, স্বপ্নে আমার সঙ্গে ভিলেনগিরি করতে পেরেছে খুব ভালভাবে ৷ অর্ণবের নিশ্বাস আমার চেহারায় এসে লাগছে ৷ এতে ভালও যেমন লাগছে তেমনি ভয়ও হচ্ছে ৷৷ আচমকা, দরজায় কড়া নাড়লো কে যেন? বেশ কয়েকবার দরজায় কড়া নাড়াবার পর ননদের চেঁচানো কন্ঠস্বর ভেসে আসলো আমার কানে ৷ সে বলতে লাগলো, “ভাবী ওঠো, সকাল হয়েছে সেই কখন, ৯টা বাজতে চললো ৷ আম্মু বকাবকি করছে!”

ননদের কথামত বিছানা থেকে নামতে যাচ্ছিলাম তখনই অর্ণব আচমকা আমার হাতটা শক্ত করে ধরলো ৷ তার দিকে ফিরে তাকাতেই দেখি সে মিটমিট করে হাসছে ৷ চোখ মেরে ভ্রু কুঞ্চিয়ে তাকালো ৷ আমি তার থেকে আমার হাতটা সরানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছিলাম ৷ কিন্তু অর্ণব এমনভাবে হাতটা চেপে ধরে আছে যে কিছুতেই বেড থেকে চলে যেতে পারলাম না ৷ সে আমাকে চাপাকন্ঠে বলল,
-কই যাস, যেতে পারবিনা ৷
কৃত্তিম ব্যথা পাবার ভান করে বললাম,
-আম্মা কি বলবে? সকাল অনেক হয়েছে ৷ তুমি ঘুমাতে চাইলে ঘুমাও, আমি গেলাম!
-বেশি কথা বলিস কেন? যা বলছি তাই কর ৷ তোর পাশে শুয়ে থাকতে দারুণ লাগছে ৷ যদি আগে বুঝতে পারতাম বিষয়টা, তাহলে রাতের শুরুতেই তোকে নিয়ে ঘুমের অতল তলে ডুবে যেতাম ৷
-এখন আমি শুয়ে থাকতে পারবোনা ৷ তোমার জন্য তো আম্মার কথা শুনতে পারবোনা ৷
-ইশ! ঠিকআছে যা ৷ কাল থেকে তোকে যেন আমার রুমে না দেখি ৷ দূর হ আমার সামনে থেকে!
-ও, এখন প্রেম উতলে উঠছে তোমার? বউকে বাসর ঘরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখলে তখন প্রেম জাগলোনা, দরদ হলোনা আমার প্রতি, শেষ রাত্রে আর সকালের সময়টুকুতে তোমার দরদ তৈরি হয়ে গেছে?
-তুই আমার সামনে থেকে যাবি নাকি গলাধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করবো?
-যাচ্ছি, হাতটা ছেড়ে দাও!
.
অর্ণব হাতটা প্রচন্ড জোরে চেপে ধরে ব্যথা দি়য়ে ছেড়ে দিলো ৷ সে রাগে গজগজ করছিল ৷ আমাকে মারবে এমন অবস্থা ৷ কষ্ট পেলাম তার কথায় ও আচরণে ৷ মন খারাপ করে বিছানা ছাড়লাম ৷ দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম!

পুরুষ মানুষের মন জয় করে চলতে হয় সবসময় ৷ অন্যথায় তারা নারীদের প্রতি হিংস্রতার পরিচয় দেয় ৷ কিন্তু আমি পুরুষদের মন জয় করে চলি তখন, যখন আমার মন চাই ৷ জগতের প্রতিটা স্বামী তাদের স্ত্রীদের থেকে শুধু অধিকার খাটানোর চেষ্টা করে, স্বামীর প্রতি স্ত্রীর যে অধিকার রয়েছে সেই অধিকারের কথা মনে রাখেনা, এবং এ ব্যাপারে তারা উদাসীন থাকে ৷ এবং সবসময় স্ত্রীদের অবহেলা করে চলে ৷ দায়িত্ব কর্তব্যের কথাও ভুলে যায় ৷ কথাগুলো অর্ণবের ক্ষেত্রে অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে!

.
শ্বাশুরি আম্মার নিকট গেলে তিনি বললেন ফ্রেশ হয়ে আসতে ৷ ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে গায়ে কোনমতে টাওয়াল জড়িয়ে নিলাম ৷ অতঃপর, রুম থেকে বের হতে যাবো, তখনই অর্ণব দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো ৷ সে দরজাটা ধরে রাখলো ৷ এবং আমার দিকে রক্তিম চোখে তাকালো ৷ বেশকিছুক্ষণ নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো ৷ তার চাহনীতে ছিল কামনার ছাঁপ ৷ কিন্তু চেহারায় ছিল রাগের অাভা ৷ এতে আমার লজ্জাও লাগছিল আবার ভয়ও করছিল ৷ দেরি হচ্ছে দেখে তাকে তীক্ষ্ণকন্ঠে বললাম,
-সরো, আমাকে যেতে দাও ৷
.
কপট রাগ দেখিয়ে দাঁত কটমটিয়ে সে বলল,
-পারলে যা, না করে কে?
-পাগলামী করোনা প্লিজ, আমাকে যেতে দাও!
-তোকে কে আটকালো?
-দরজাটা ধরে আছে কে?
-সেটা আমি কি জানি?
-ও, আচ্ছা; তোমাকে ঘায়েল কেমনে করতে হয় দেখাচ্ছি ৷
-দেখা দেখি!
.
গা থেকে টাওয়ালটা ফেলে দিলাম এবং অনাবৃত্ত হয়ে গেলাম ৷ অর্ণব হতভম্ব হয়ে গেল আমাকে এমনরূপে দেখে ৷ তার চোখ ছানাবড়া ৷ হা করে তাকিয়ে দেখছে আমার পুরো শরীর ৷ তাকে নিথর নিষ্প্রাণ লাগছিল ভেবে দরজার সামনে থেকে মৃদ্যুভাবে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম ৷ এবং রুম থেকে বেরিয়ে সোজা আমার রুমে ঢুকে গেলাম ৷ কেন যেন খুব খুশি খুশি লাগছিল নিজেকে ৷ পুলকিত মনটা খুশিতে নেচে উঠছিল ৷ শব্দ করে হাসতে হাসতে ব্যাগ থেকে থ্রি পিস বের করলাম ৷ ততক্ষণাত অর্ণব হতবিহব্বলের মত আমার রুমের ভেতর ঢুকলো ধীর পায়ে ৷ আমার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিচুস্বরে বলল,
-শাড়ি পর ৷ থ্রি-পিস পছন্দ না আমার!
.
অভিমানের স্বরে বললাম,
-পারবোনা ৷ আমি থ্রি-পিসই পরবো ৷ শাড়ি পরে কমফোর্টেবল ফিল করিনা আমি ৷
-কেন?
-কুচি ঠিক হয়না ৷ তাই এলোমেলো করে পরতে হয় ৷ আর এভাবে শাড়ি পরলে সবাই নিন্দাতে থাকবে ৷ কারো সমালোচনা আমার সহ্য হয়না ৷
-শাড়ি আমি পরিয়ে দিবো, চিন্তা করিস না!
-আপনার কষ্ট করতে হবে না ৷
-কষ্ট আমিই তো করবো ৷ হাজার হলেও চাচাতো বোন হস তুই ৷
-শুধু চাচাতো বোন হই?
-হুম,তো?
-তো কিছুনা ৷ আপনি যান, রুম থেকে বের হন ৷ কাপড় পরতে দেন ৷
-তুমি থেকে আপনি তে কেন রে?
-ইচ্ছা তাই ৷
-শাড়ি পরবি নাকি থাপ্পর খাবি?
-পরবোনা ৷
.
ওমনি অর্ণব গালে ঠাস করে থাপ্পর লাগিয়ে দিলো ৷ ব্যথা পেলাম তবুও কিছু বললাম না ৷ গাল লাল টুকটুকে হয়ে গেলো এবং নিজেকে আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম ৷ চোখ ছলছল করছিল আমার ৷ তবুও নিজেকে শামলে নিয়ে রাগস্বরে বললাম,
-আমি শাড়ি পরবোনা, যা করার করো ৷
অর্ণব উল্টো রাগ দেখিয়ে বলল,
-আরেকটা খাবি?
-শাড়ি পরবো একটা শর্তে ৷
-কি শর্ত? বল!
-আমাকে তুমিই শাড়ি পরিয়ে দিবে, তবে আমার গায়ে হাত দিতে পারবেনা ৷ আমি কুচি তৈরি করে সেটা স্থাপন করার পুর্ব পর্যন্ত শাড়ি পরে নেবো, এরপর থেকে তুমি বাকিটা পরিয়ে দিবে ৷
-ঠিকআছে, আমি রাজি!
.
.
ব্যাগ থেকে পেটিকোট শাড়ি বের করলাম ৷ পেটিকোট পরার পর শাড়ির একাংশ কোমড়ে গুজে নিলাম ৷ এরপর কুচি করলাম ৷ অতঃপর অর্ণবকে বললাম, তুমি করো এবার ৷ তবে হাত লাগানো যাবেনা ৷ অর্ণব চিন্তায় পরে গেল ৷ মাথা চুলকাচ্ছিল ৷ ক্ষণিকপর সে দুষ্টু হাসি হেসে আমার গাল টিপে দিলো ৷ এরপর, সে হাঁটু গেড়ে বসে শাড়ির কুচির উপরাংশ কামড়ে ধরলো ৷ এরপর সে আমাকে অবাক করে দিয়ে শাড়িতে ঢাকা নাভির মাঝে কুচির অংশ ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টা করতে লাগলো ৷ তার ঠোঁটের উপরাংশের ছোঁয়া আমার দেহে লাগা মাত্রই শিহরণের আবেশে কেঁপে উঠলাম বিষদভাবে ৷ ভাললাগার আবেশ বুকের মাঝে এসে ভিড় জমালো ৷ এ যেন এক অভূতপূর্ব অনুভূতি ৷ কাঁপা দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম স্থির হয়ে ৷ অর্ণব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কুচিটা ঠিকভাবে স্থাপন করে রাখতে ৷ তার পরশে প্রতিটি মুহূর্তে অমৃত সুধা পান করে যাচ্ছিলাম ৷ শেষপর্যন্ত অর্ণব সফল হলো কুচিটা শাড়িতে ঢাকা নাভির নিম্নাংশে স্থাপন করে রাখতে ৷ এই সময়ে নিজেকে স্বর্গীয় সুখের অধিকারী হিসেবে ভেবে নিলাম ৷ এতটাই সুখপ্রাপ্ত হলাম যে মনে হলো ভাললাগা আমাকে ক্রয় করে নিয়েছে সুখদানের জন্য ৷ ভাললাগার দরিয়ায় দুলছিলাম আর অর্ণবকে অপলকে দেখছিলাম ৷ সে শাড়ির আঁচল কামড়ে ধরে বুকটা ঢেকে দিতে আমার পিছন দিক ঘুরে শরীরটা আবৃত্ত করে দিলো! ব্যাস শাড়ি পরানো সমাপ্ত হলো!

শাড়ি পরানো শেষ হতে না হতে সে আমার পিঠে আলতো করে কামড় লাগিয়ে দিয়ে তীক্ষ্ণকন্ঠে বলল,
-কি পরাতে পারলাম তো?”
.
লাজুক হাসি হেসে বললাম,
-পেরেছো ৷
-এত লজ্জা পাবার কিছু নেই ৷ শাড়ি পরানো কঠিন কোনো কাজ নয় ৷ হাত না লাগিয়ে পরানো কিছুটা কঠিন হলেও এতে অ্যাডভেঞ্চারের সুখ রয়েছে,
যেকারণে আমি উপভোগ করেছি বিষয়টা!
-অনেক বলেছো ৷ এখন যাও, ফ্রেশ হয়ে আসো!
-হুম, যাবো ৷ তুই কি ঐ কথাটা ভুলে গেলি?
-কোন কথা?
-ঐ যে ১লাখ টাকা দরকার আমার ৷ সেটার কথা!
-ও হ্যাঁ, মনে আছে ৷ তুমি পেয়ে যাবে টাকাটা!
-আজকেই লাগবে ৷ টাকা নিয়ে তার কাছে যাবো আমি ৷ আজ টাকাটা না হলে ওর অপারেশনটা হবেনা ৷৷
-চিন্তা করোনা ৷ এখনই আব্বুর থেকে টাকা নিয়ে আসবো ৷
-হুম! আর শোন; আমি পনের দিনের মত তার কাছে থাকবো ৷ বাসায় আসতে পারবোনা ৷ তুই আবার রাগ করিস না!
-আমার কোনো রাগ নেই ৷ রাগ হয়ওনা!
-এইতো লক্ষ্মী কাজিনটা!
.

.
কথাটা বলেই সে রুম থেকে বের হয়ে গেল!

.

সকালের খাবার খেয়ে আব্বুর বাসায় গেলাম ৷ এবং আব্বুর থেকে ১লাখ টাকা নিয়ে অর্ণবের বাসায় চলে এলাম ৷ সে টাকাগুলো পেয়ে অনেক খুশি হলো ৷ টাকা পেয়ে আমাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বাইক নিয়ে চললো তার গন্তব্যে!

.
অর্ণব চলে যাবার পনের মিনিট পর ডয়িংরুমে ঢুকলো আমার এক্স-বয়ফ্রেন্ড রবিন ৷ সে কিসের জন্য এই বাসায় আসলো বুঝে উঠতে পারলাম না…
.
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here