বৃত্তের বাইরে পর্ব ৩

#বৃত্তের_বাইরে (পর্বঃ ৩)
লিখাঃ #Sifat_Arnab_Rehan.
.
অর্ণব দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে মৃদ্যুস্বরে বলল,
-আমার সঙ্গে চৈতির আর কোনো সম্পর্ক নেই ৷ তুই জানিস ৩ মাস হলো প্রেম আমাদের ৷ কিন্তু না, ২ মাস আগেই ব্রেকআপ হয়েছে তার সাথে ৷ সে এখন আমার এক্স-গার্লফ্রেন্ড, এর বেশি কিছু নয়!
.
অর্ণবের কথায় আকাশ থেকে পড়লাম যেন ৷ নিস্তব্ধতার চাদের জড়িয়ে গেলাম ৷ চোখ কপালে তুলে হতভম্বের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে ৷ মনে মনে বললাম সে কি পাগল হয়ে গেল? হঠাৎ পাগল হয়ে যাবার কি কারণ থাকতে পারে? আমাকে এমন আবেদনময়ী রূপে দেখে কি মাথার সবগুলো তাঁর ঢিলা হয়ে গেল? চৈতির সঙ্গে ব্রেকআপ হয়েছে অথচ আমিই জানতে পারলাম না ৷ কই চৈতি তো এ ব্যাপারে কিছু বললোনা? নিশ্চয় অর্ণবের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে ৷ মনের সাথে কথা বলা সমাপ্তি ঘটিয়ে অর্ণবকে শক্তকন্ঠে বললাম,
-তুমি তো পুরো সপ্তাহ জুড়ে বাসাতেই ছিলে ৷ আজকে রাতেও বাসাতে ছিলে ৷ কিন্তু তোমার কথাবার্তায় তো মনে হচ্ছেনা তুমি সুস্থ্য! কখন পাগলাগারদ থেকে পালিয়ে এলে? সেখানে ট্রিটমেন্ট কি ভাল চলছিলনা?, তার জন্য চলে আসছো?
কাজটা কিন্তু ভাল করোনি!
.
অর্ণব বাকা চোখে তাকিয়ে জোরালো কন্ঠে বলল,
-সোনু, একটু বেশি বলছিস না? আমি কেন মিথ্যা বলতে যাবো তোর নিকট? সত্যিই চৈতির সঙ্গে অার কিছুই নাই ৷ আমি তো অন্য একজনকে ভালবেসে ফেলছি!
এবং তাকেই এখন ভালবাসি ৷ এই মনটা শুধু সারাক্ষণ তার নামই জপে ৷ তাকে যে কতটা ভালবাসি সেটা এই হ্নদয়ও ঠিকভাবে বলতে পারেনা!
.
কপালে ভাঁজ ফেলে ভ্রু নাড়িয়ে বললাম,
-তো, সেই মানুষটা কে একটু শুনি?
অর্ণব গলা ঝেড়ে মৃদ্যুস্বরে বলল,
-আছে একজন ৷ সময় হলে জানতে পারবি ৷ এখন রুমে যা!
তোকে এভাবে শাড়ি ছাড়া দেখতে কেমন যেন লাগছে ৷ তার উপর খুবই আপত্তিকর ব্লাউজ ৷ আমার চোখ সহ্য করতে পারছেনা!
-আমি সেই মানুষটার নাম না শুনে তো যাচ্ছিনা, স্যার ৷ ভাল করেই জানো তুমি কতটা একরোখা আমি ৷ কোনোকিছু জানার কৌতূহল জাগলে সেটা না জানা পর্যন্ত শান্ত হইনা আমি ৷ সো, তার নামটা বলো, তবেই প্রস্থান গ্রহণ করবো!
-তাহলে তুই ছাদেই থাক ৷ আমার সঙ্গে গল্প কর আর তোকে লোলুপ চোখে তাকিয়ে দেখি ৷ তোর দেহের ভাঁজে হারিয়ে যাই ৷ বিয়ের আগে তো দেখার সৌভাগ্য হয়নি, আজকে মাগনা মাগনা দেখে নিই ৷ এখন বাসর ঘরে যাবার কোনো দরকার নেই ৷ একা একা বাসর ঘরে কাটিয়ে কি করবি? এখন রাত আড়াইটা বাজে, আর কয়টা ঘন্টা, এই কয় ঘন্টা প্রাণভরে উপভোগ করি দুজনে প্রকৃতির মাঝে বিলিন হয়ে ৷ এই পূর্নিমা রাতে ছাদের এককোণে দাঁড়িয়ে চাঁদের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কাটিয়ে দিলে তোর ভেতরের কষ্টটা যেমন দূর হবে, আমারও হবে!
-আমার এখন তোমাকে আচ্ছামত কয়েকটা ঘুষি মারতে মন চাচ্ছে ৷ কি মারবো ঘুষি?
-কেন?
-তুমি মেয়েটার নাম বলবে? নাকি গায়ের সবকিছু খুলে ফেলবো?তখন কিন্তু নিজেকে শামলাতে পারবেনা ৷ যতই মহাপুরুষ হও!
-ছিঃ! কি পাগলামী মার্কা কথা বলিস?
-তাহলে নামটা বলো ৷
-নাম বললে তুই খুশি হবি?
-হয়তো ৷
-বলবো, তবে একটা শর্তে!
-কি শর্ত?
-কাল, আঙ্কেলের থেকে ১লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে দিতে হবে ৷
.
আশ্চর্য হয়ে বিস্ময়ের কন্ঠে বললাম,
-এতো টাকা কেন?
কি দরকার?
অর্ণব লম্বা একটা শ্বাস ফেলে থেমে থেমে বলল,
-যে মানুষটাকে ভালবাসি তার অপারেশনের জন্য লাগবে টাকাগুলো, খুব দরকার ৷ এবং কালকেই লাগবে!
-ওহ, ঠিকআছে টাকা পেয়ে যাবে ৷ আর হ্যাঁ, তার নামটা বলতে হবেনা তোমাকে ৷ আমি বুঝে গেছ ৷ গেলাম, তুমি থাকো!
.
বিবর্ণ ও বিষাদময় চেহারা নিয়ে ছলছল চোখে ছাদ থেকে চলে আসলাম ৷ আমি ভেবেছিলাম অর্ণব বুঝি আমাকে ভালবেসে ফেলেছে ৷ এবং আমার নামটাই উল্লেখ্য করবে ৷ কিন্তু আমি ভুল ছিলাম ৷ আমি ভেবেছিলাম অর্ণব চৈতির প্রতি ভালবাসা হারিয়ে ফেলেছিল আমার কারণে, কারণ মজা করে তাকে বলতাম সময় এখনো আছে আমাকে প্রোপজ করো, একবাক্যে মেনে নিবো, যদিও এটা নিছক মজা ছিল ৷ কিন্তু একটু আগে মনে হচ্ছিল সে এটার কারণে আমাকে ভালবেসে ফেলেছে ৷ একটু আগে ভেবেছিলাম, অর্ণব তো চৈতি বাদে কোনো মেয়ের সঙ্গে কথাবার্তা বলেনা ৷ নিশ্চয় তার নতুন মনের মানুষটা আমিই, কিন্তু এই ভাবনাটা নিতান্তই ভুল হিসেবে প্রমাণিত হলো ৷ সত্যটা প্রকাশিত হবার পর নিজেকে খুব বোকা মনে হচ্ছে ৷ এতটা অবাস্তবিক আশা মনে তে জেগেছিল যে এখন নিজেকে গর্ধভ বৈ-কিছু মনে হচ্ছেনা ৷ আসলে একজন মেয়ে বিয়ের ঠিক ১০ মিনিট পূর্বে একরকম ভাবে, বিয়ের পর আরেক রকম ৷ যে মানুষটার সঙ্গে তেমন কোনো কথাবার্তা পরিচয় নেই, তবুও মানুষটাকে বিয়ের পর খুব আপন করে নিতে হয়, এমনকি চির আপন হয়ে যায়, তখন তাকে ছাড়া বেঁচে থাকার আশা যেন বিলিন হয়ে যায় ৷ আবার কারো সঙ্গে বছরের পর বছর সম্পর্ক থাকলে তাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করার পূর্ব মুহূর্তে মনে হয় হবু স্বামীকে কখনোই মেনে নেওয়া সম্ভবনা; কিন্তু বিয়ে করে নিলে সেই স্বামীকে ঠিকই হ্নদয়ে স্থান দিতে হয় ৷ এটা প্রকৃতগতভাবে হয়ে যায় ৷ যে নারীর হ্নদয়ে তার স্বামীর নামটা স্থান পায়না সে নারী অভিশপ্ত, যতই সে অন্য একজনকে পূর্ব থেকে অন্তরের অন্তর্স্থল থেকে ভালবাসুক! আমিও অর্ণবকে হ্নদয়ের বা-পাশে স্থান দিয়েছি মনের মানুষ হিসেবে ৷ তিন তিনবার কবুল বলে তাকে অন্তরে ধারণ করেছি প্রিয়জন হিসেবে ৷ আমি মনে করি এটাই প্রকৃত ভালবাসা ৷ কিন্ত মানুষটাকে তো ধরে রাখতে পারছিনা ৷ আমার বুক থেকে সে চলে যাচ্ছে অন্য কারো বুকে ৷ আচ্ছা, সেই মেয়েটা কি অর্ণবকে আমার চেয়ে বেশি ভালবাসে? মনে তো হয়না!
.
রুমে এসে বেড থেকে শাড়িটা নিয়ে পরে নিলাম ৷ বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বুকফাঁটা কষ্ট ও একরাশ বিষন্নতা নিয়ে ঘুমের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম!
.

.

ঘুম ভাঙলো আমার ৷ মনে হলো মাত্রই ঘুমিয়েছিলাম, কয়েক মিনিটে ঘুমের দেশ থেকে ঘুরে আসছি ৷ চোখে এখনো ঘুমের ভাব রয়েছে ৷ চোখ জ্বলছে ৷ চোখদ্বয় কচলিয়ে নিলাম ৷ চোখ তুলে তাকালাম পুরো রুমটা জুরে ৷ কিন্তু যখন অনুভব করলাম আমাকে কে যেন আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে, তখন লক্ষ্য করলাম আমি অর্ণবের বুকের মাঝে লুকানো ৷ মুহূর্তের মধ্যে এ মনে সুখের ঝর্ণাধারা বয়ে গেল ৷ বুকটা ভরে উঠলো অকল্পনীয় সুখে ৷ তার বুকের মাঝে আমার বসবাস ভাবতেই প্রতি মুহূর্তে সীমাহীন সুখ লুটিয়ে নিচ্ছি ৷ মানুষটাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে মন চাচ্ছে, কিন্তু অজানা এক ভয়ে সেটা করতে সঙ্কোচবোধ করছি ৷ অকস্মাৎ, অর্ণব নিজে থেকেই বলল,
-কি আরো শক্ত করে ধরবো? ব্যথা পাবে নাতো?ব্যথাটা সুখময় হবার কথা ৷ তুমি অনুমতি দিলে ধরতে পারি!
.
অর্ণবের কথায় লজ্জায় লাউয়ের ডগার মত নুয়ে পরলাম ৷ লাজরঙ্গা চেহারায় রাজ্যের যাবতীয় লজ্জা এসে ভিড় জমালো ৷ মনে হলো অর্ণব আমাকে স্পর্শকাতর অঙ্গে আলতোভাবে ছুঁয়ে দিয়ে চুপসে দিয়েছে ৷ এবং আমার অবস্থা যেন লজ্জবতীর মত হয়েছে ৷ আমি এখন ঠিক লজ্জাবতী ৷ অর্ণব আমার প্রতিত্তরের পূর্বেই আরো শক্তভাবে জড়িয়ে নিলো তার বুকমাঝারে ৷ মনে হলো তার মাঝে হারিয়ে গেছি ৷ তার দেহের অঙ্গ আমি ৷ কিংবা, দুজনে একই সাগরের পানি, কেউ যেন আলাদা করতে পারবেনা আমাদের ৷ চিনি পানির সংমিশ্রণ হয়ে মিশে রবো আজীবন ৷ অর্ণব আমাকে জড়িয়ে ধরাবস্থায় দুলছিল, দুলতে দুলতে ভালবাসার স্বরে হিমশীতল কন্ঠে বলল,
-প্রিয়তমা, আজকে তোমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবো, যাবে?
আমি মৃদ্যুস্বরে বললাম,
-তুমি বললে অবশ্যই যাবো, প্রিয়!
-তাহলে চলো ৷
-এখনই যাবো?
-হুম
-কিন্তু এখনো তো রাত ৷ এই রাতে কই যাবো?
-আমার সঙ্গে গেলেই বুঝবে!
-ঠিকআছে চলো!
.
.

আমি এখন অর্ণবের বুকে মাথা রেখে শশীর আলো ঝরানো দেখছি ৷ পিচবোট দ্রুতগতিতে চলছে সাগরের ঢেউকে উপেক্ষা করে ৷ বিশাল সাগরের মাঝে একটি পিচবোটে আমরা দুজন মানব-মানবী ৷ ভয় হচ্ছে যদি পিচবোটটা সাগরের অতল তলে তলিয়ে যায় ৷ অর্ণব আমার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে আর আদুরে গলায় বলছে, “সোনু তুমি ভালবাসার মানে কি বুঝো?”
আমি কোনো উত্তর দিতে পারলাম না ৷ সে বলল, “ভালবাসার অর্থ অন্তহীন অপেক্ষা ৷ প্রিয় মানুষটিকে খুব আপন করে পাবার প্রতিক্ষণ ও মিষ্টি প্রতিক্ষা ৷ কেউ কেউ প্রিয় মানুষকে আপন করে পায়, এরপরও আকাঙ্খা থেকেই যায়, ফুরোয় না আকাঙ্খা; মন বলে সে যদি আরো আপন হতো; এবং আরো বেশি বেশি ভালবাসতো ৷ এই আকাঙ্খা পূরণ হবার আশায় থাকার নামই অপেক্ষা ৷ আর এই অপেক্ষাটা কেবল মনের মানুষটিকে ঘিরে ৷ মনের মানুষকে ঘিরে যে অপেক্ষার প্রহর গুণি এটাই মুলত ভালবাসা ৷ হয়তো আমার ভাবনার সঙ্গে তোমার ভাবনার মিল নাও হতে পারে!
.
অর্ণবের বুকের একপাশে চুম্বন রেখা বসিয়ে দিয়ে মিষ্টি স্বরে বললাম,
-আমারও একই ভাবনা ৷ তবে, মনের মানুষটিকে সবসময় মনে পরা, তাকে ভুলতে না পারা, তাকে কাছে পাবার আকুতিটাই ভালবাসা বলে মনে করি!
.
অর্ণব মিষ্টি হেসে বলল,
-প্রেমিকাকে কাছে পাবার মানে কি বুঝালে?
জবাব দিলাম,
-এইযে এখন আমি তোমার বুকের মাঝে ৷ এরকমভাবে কাছে পাওয়া ৷ আর আমি তো তোমাকে বিয়ের পরই পেয়েছি এভাবে ৷ এরকম চাওয়া প্রতিটা নারীর ৷ তারা পুরুষদের প্রেমে পরে এমন আশা নিয়েই ৷ এমন কোনো নারী নেই যে তারা তার প্রেমিককে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবার আশা না রাখে!
-ঠিকই বলছো ৷ তোমাকে এত সুন্দর কথা বলার জন্য একটা চুম্বন রেখা এঁকে দিলাম তোমার ফর্সা গালে!
-কতবার হলো এবার সহ?
-কতবার হবে? তুমি সংখ্যা গুণে রেখেছো নাকি?
-রাখতেই পারি!
-হা হা! সোনু, এই মুহূর্তে তুমি আমার নিকট কি চাও?
-তোমার মুখের মিষ্টি হাসি ৷ তোমার হাসিটা আমাকে মুগ্ধ করে!
-হাসি বাদে আর কিছু মুগ্ধ করেনা?
-করে তো!
-একমিনিট, ঐ দেখো; একটি নক্ষত্র! সে কিভাবে একাকী অবস্থান করছে!
-হুম, তুমি হীনা আমি ঐ নক্ষত্রের মত নিরিহ হয়ে যাবো ৷ একাকী সীমাহীন কষ্টে কাটবে প্রতিটা প্রহর!
-আমি তো অবশ্যই একদিন তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো!
-মানে?
.
অর্ণব গলার আওয়াজ উঁচু করে তীক্ষ্ণকন্ঠে বলল,
-এখন যদি তোমাকে সাগরের পানিতে চুবিয়ে মারি, তবুও তুমি কি আমাকে আগের মত ভালবাসবে?
.
আঁতকে উঠে বললাম,
-কি বলছো এসব? আমি পানিতে ডুবে মরলে তোমাকে কেমনে বুঝাবো যে ভালবাসি? তুমি তো জানতেই পারবেনা কোন অচিন গ্রহে পারি জমিয়েছি আমি!
.
অর্ণব সহজভঙ্গিতে বলল,
-সোনু, আমি তোমাকে খুন করতে চাই ৷
থমকে গিয়ে বললাম,
-কিহ? হঠাৎ তোমার কি হলো? মাথা নষ্ট হয়ে গেল তোমার?
জোরালো কন্ঠে অর্ণব জবাব দিলো,
-তুমি বলেছো ভালবাসার অর্থ মনের মানুষটিকে সবসময় মনে পরা, তাকে ভুলতে না পারা ও তাকে কাছে পাবার আকুতি ৷ আমার মনে ঠিক এরকম অনুভূতির সৃষ্টি হয় কার প্রতি জানো?
-কার প্রতি?
-সেই মানুষটির প্রতি যাকে আমি অনেক বেশি ভালবাসি ৷ তাকে আপন করে পাবার জন্য তোমাকে আমার জীবন থেকে সরাতে হবে ৷ যেকোনো মূল্যে ৷ শুধু শুধু তোমার সঙ্গে সারাজীবন কাটানোর মানেই হয়না ৷
-কিন্তু আমি যে তোমাকে ভালবাসি ৷ তোমাকে হারাতে চাইনা ৷ এটার কি হবে?
-সেটা আমি কি জানি? এখন তোমাকে মরতে হবে ৷ এরচেয়ে কঠিন সত্য হয়না
৷ তোমাকে নৃশংসভাবে মরতে হবে ৷ আর এজন্যই তোমাকে এই সাগরে নিয়ে আসছি ৷
-সত্যিই তুমি আমাকে মেরে ফেলবে?
-মারতে বাধ্য আমি ৷
-এত নৃশংস তুমি?
.
অর্ণব আমার গলা টিপে ধরলো ৷ এত শক্ত করে ধরলো যে মনে হলো গলাটা লোহার শিকল দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে ৷ আমার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল ৷ যা অবর্ণনীয় ৷ কষ্টে পুরো শরীর নিথর হয়ে যাচ্ছিল ৷ বুক ফেঁটে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল যেন ৷ সেই রক্ত পানি হয়ে চোখ বিদীর্ণ করে অবিরাম ধারায় ঝরতে লাগলো ৷ এ তো তীব্র বেদনার অশ্রুধারা! ক্রমেই আমার নিশ্বাস বন্ধ হচ্ছিল ৷ অর্ণব এক হাত দিয়ে গলা টিপে ধরে আছে, আরেক হাত দিয়ে আমার গা থেকে টিশার্ট ছিঁড়তে চেষ্টা করছে ৷ টিশার্ট গা থেকে সরিয়ে ফেলার পর যতবার পারলো আমার বুকে অনবরত আঘাত করতে লাগলো দু হাত দিয়ে ৷ গলা ছেড়ে দিলে দম ঠিকমত নিতে পারলেও তার অত্যাচার থেকে বাঁচতে পারলাম না ৷ সীমাহীন কষ্টের আতিসাহ্যে চিৎকার করতে লাগলাম ৷ গগণবিদারী আর্তনাতে আকাশকে কাঁপিয়ে তুললাম ৷ বাতাসের প্রতিটা অনু পরমানুতে আমার চিৎকারের প্রতিধ্বনি যেন মিশে রইলো ৷ কিন্তু এসব করে কারো সাহায্য পাবার আশা করতে পারলাম না ৷ চিৎকার বেড়ে চললো, যন্ত্রণায় ব্যথায় কাৎড়াতে লাগলাম, তবুও অর্ণবের পাষন্ড মন গললোনা, আমার প্রতি বিন্দুমাত্র মায়াও হলোনা ৷ সে আমার বুকের নিম্নাংশে কামড় লাগিয়ে দিয়ে দাগ তৈরি করে দিলো ৷ অতঃপর এত জোরে তার হাত দিয়ে মাথায় আঘাত করলো যে আক করে উঠে আমার চোখদ্বয় বন্ধ হয়ে গেল!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here