বৃষ্টিস্নাত সাঁঝ পর্ব -০২

এই ঝড়বাদলার সন্ধ্যায় জনমানবহীন পথে একটা মেয়েকে আনমনে হাঁটতে দেখে অবাক হলো প্রহর। প্রহরকে আরেকটু অবাক করে দিয়ে মেয়েটি হুট করে এসে গাড়ির সামনে দাঁড়াল। তড়িৎগতিতে ব্রেক কষলো প্রহর। ভাগ্যিস স্পিড একদমই কম ছিল। নাহলে এই পিচ্ছিল রাস্তায় একটা অঘটন ঘটে যেত!গাড়িটি স্থির হতেই মেয়েটি এসে গাড়ির জানালার কাঁচে টোকা দিল। এবারে অবাকের বদলে বিরক্ত হলো প্রহর। তবে জানালার কাঁচ নামাতেই বিরক্তির বদল একরাশ মুগ্ধতা ঘিরে ধরলো ওকে।সোডিয়াম লাইটের মৃদু আলোতে বৃষ্টিস্নাত মেয়েটিকে কোনো অপ্সরীর থেকে কম লাগছে না। কোনো মানুষ এত সুন্দর হয়! একদৃষ্টিতে সামনের মেয়েটির দিকে চেয়ে রইল, প্রহর।

–“এই যে মিস্টার শুনছেন?”

মেয়েটির শান্ত কিন্তু দৃঢ় কন্ঠের কথায় আর বৃষ্টির ঝাপটায় প্রহরের ঘোর কাটলো। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,

–“জ্ জ্ জ্বী, বলুন।”

প্রহরকে এভাবে তোতলাতে দেখে মেয়েটির কপাল কুঁচকে এলো। তবে শান্ত কণ্ঠে বললো,

–“একটা হেল্প করবেন, প্লিজ?”

–“আমার সাধ্যের মধ্যে হলে অবশ্যই করবো।”

–“আমি আসলে এখানে কাজিনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছি। ফ্লেক্সিলোড করার জন্যে শেষ বিকেলে বেরিয়ে ছিলাম কিন্তু ফ্লেক্সিলোড তো করতে পারলামই না, উল্টে বৃষ্টিতে ফেঁসে গেলাম। তো আপনি যদি একটু লিফট দিতেন তাহলে উপকার হতো।”

শেষের কথাটি বেশ অনুনয়ের স্বরেই বললো মেয়েটি। প্রহর মেয়েটিকে একনজর পরখ করে আবার শুধালো-

–“আপনি একা বেরিয়েছিলেন কেন?”

কথাটি বলার পর প্রহরের হঠাৎ খেয়াল হলো যে, মেয়েটি বেশ খানিকক্ষণ ধরেই বৃষ্টিতে ভিজছে। আবার এখনও সে মেয়েটাকে ভেজাচ্ছে! প্রহরের ভাবনার মাঝেই মেয়েটি উত্তর দিল-

–“বাসায় তখন আমি, আপু আর আপুর শাশুড়ী ছিলাম। আপু আর আপুর শাশুড়ী কিছুটা অসুস্থ, তাই একাই এসেছি।”

গাড়ির দরজা খুলে মেয়েটিকে বসতে বললো প্রহর। মেয়েটি হয়তো এটার জন্যেই অপেক্ষা করছিল। হঠাৎ প্রহরের খেয়াল হলো মেয়েটা গাড়িতে বসলে গাড়ি, সিট সব ভিজে যাবে। কিন্তু এই মুহূর্তে ওর এসব ভাবতে মন চাচ্ছে না। তাই এই চিন্তা বাদ দিলো।
___________

বৃষ্টির তে’জ কমে এলেও ঝ’ড়ের তী’ব্রতা বাড়ছে। ক্ষনে ক্ষনেই বা’জ পড়ছে। পরিস্থিতি যে ভয়’ঙ্ক’র হচ্ছে তা প্রহর বুঝতে পারছে। তবে ওর এ’মুহুর্তে গাড়ির ভেতরের পরিস্থিতি নিয়ে বেশি অস্বস্তি হচ্ছে। এর কারণ না বুঝতে পারায় অস্বস্তির সাথে বিরক্তিও যুক্ত হচ্ছে। সামনে চোখ রেখেই প্রহর বুঝতে পারছে যে মেয়েটা ওর দিকে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। প্রহর প্রথমে ভেবেছিলো যে, মেয়েটা বোকাসোকা। কারণ, একটা অপরিচিত লোকের কাছে লিফট চাওয়া কোনও বুদ্ধিমান এর কাজ নয়। আর এমনিতেও সুন্দরী মেয়েরা মাথামোটা-ই হয়! তবে এই মেয়েটা যে সেই পর্যায়ের নয় তা সে এই কয়েক মুহূর্তে বুঝে ফেলেছে। গলির রাস্তা ছেড়ে গাড়ি বড় রাস্তায় উঠতেই প্রহর জিগ্যেস করলো-

“আপনার কী আমাকে সর্বজ্ঞ মনে হচ্ছে? ঠিকানা না বললে আপনাকে পৌঁছে দেবো কীভাবে?”

প্রহর এর কথা শুনে মেয়েটা বোধহয় লজ্জা পেলো, তবে স্বাভাবিকভাবেই ঠিকানা বললো। মিনিট পনেরো ড্রাইভ করার পরই মেয়েটার দেওয়া ঠিকানায় পৌছালো প্রহর। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে বোধহয় মিনিট পাঁচেক এর রাস্তা ছিল, এটুকু দূরত্বে কেও হারায়! মেয়েটার দেওয়া ঠিকানায় পৌছানোর পর মেয়েটা কিছুটা চিৎকার করেই বললো-

“এইতো….এইতো….চলে এসেছে। আমাকে বামে সাইড করে নামিয়ে দিন।”

“ওখানে তো একটা ছাউনি ছাড়া কিছুই নেই, ওখানে নামবেন কেন?”

“একটা মেয়ে অপরিচিত একটা ছেলের গাড়ি থেকে নামছে। এই কথাকে তিল থেকে তাল হতে কী খুব বেশি সময় লাগবে?”

প্রহর গাড়ি থামাতেই মেয়েটা ধুপধাপ করে গাড়ি থেকে নেমে গেল। দু’কদম গিয়ে আবার ফিরে এলো। জানালার খোলা কাচ এর ভেতরে মুখ ঢুকিয়ে বললো-

“ধন্যবাদ। আপনার উপকার এর কথা আমি কখনও ভুলবো না।”

প্রহর এর উত্তর এর অপেক্ষা না করেই মেয়েটা চলে যেতে উদ্যত হলে প্রহর প্রশ্ন করে-

“আপনার নাম তো বললেন না?”

প্রহর এর কথায় হালকা হাসলো মেয়েটা। বৃষ্টিতে ভেজায় ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া মুখশ্রীতে সেই হাসি আপেল এর আভার মত ছড়িয়ে পড়লো।

“সাঁঝ।”

বলেই আর একমুহূর্তও অপেক্ষা করলো না মেয়েটি। ঝ’ড়ে’র মাঝেই দৌড়ে পাশের গলিটিতে ঢুকে পড়লো। মেয়েটির যাওয়ার পানে একমনে চেয়ে রইলো প্রহর। আনমনেই বলে উঠলো-

❝বৃষ্টিস্নাত সাঁঝ!❞
______________

এসবই বছর দুয়েক আগের কথা। এই দু’বছর এ এমন কোনও দিন যায়নি যে প্রহর এর কল্পনায় সাঁঝ আসেনি। মাঝেমধ্যে প্রহর নিজের উপরই বি’রক্ত হতো, সাধারণ একটা বাঙালিকে মেয়েকে তার এমন আহামরি সুন্দরী লাগছে কেন! তবে একসময় বুঝতে পারে যে, তার মনে এই মেয়েটির জন্য কোনও অনুভূতি আছে। তখনই সে সিদ্ধান্ত নেয় যে, বিয়ে করলে সাঁঝকে-ই করবে। অন্যদের কাছে ক্ষনিকের পরিচয়ে এমন অনুভূতি তৈরি হওয়া হাস্যকর ছিল, এবং তা স্বাভাবিকই। তবে প্রহর ছিল নিজ সিদ্ধান্তে অচল। তাইতো এতগুলো দিনেও তাকে কেও বিয়ের জন্য রাজী করাতে পারেনি! কিন্তু, আজ মায়ের জোরাজোরিতে একরকম বাধ্য হয়েই মেয়ে দেখতে এসেছে। কিন্তু কে জানতো, তার ভাগ্য এতই সুপ্রসন্ন! নিজের অজান্তেই প্রহর এর হৃদয়ে প্রনয়ের ঢেউ তোলা মেয়েটিকেই তার মা বেছেছেন!

চলবে…..?

#বৃষ্টিস্নাত_সাঁঝ
|১|
#সা_জি_দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here