বৈধ সম্পর্ক সিজন ২ পর্ব ১০

#বৈধ_সম্পর্ক
#সিজন_২
#পর্ব_১০
#Saji_Afroz
.
.
.
ব্লু জিন্স, ব্লু টি-শার্ট, চোখে সানগ্লাস দেয়া আরাফকে দেখে তাসু বিড়বিড় বলে উঠলো-
হায়… এই ছেলে আর কতো ক্রাশ খাওয়াবে আমাকে!
.
তাসুর পাশেই মেহেনুবা থাকাতে তার কথাটি বুঝতে কষ্ট হলোনা মেহেনুবার।
দাঁতে দাঁত চেপে সে বললো-
ভুলে যাস না তাসু, তুই কিন্তু মেয়ে। ছেলের মতো আচরণ করবিনা একদম।
.
তৃতীয়বারের মতো মেহেনুবা ও তাসু দেশে এসেছে। তাও মেহেনুবার বিয়ে উপলক্ষে।
তাসুর সাথে মাঝেমাঝে ইমু বা মেসেজ্ঞারে আরাফের কথা হলেও মেহেনুবার সাথে খুব কমই হয়।
আমেরিকা থাকলেও মেহেনুবার মাঝে বাঙালী মেয়ের সব স্বভাব রয়েছে। দেখতে সুন্দরী, মায়াবী, চুল ঘন কালো লম্বা তার। পোশাক-আশাক, আচার-আচরণ সবই বাঙালী মেয়েদের মতোই।
এদিকে তাসু সুন্দরী হলেও চঞ্চল একটা মেয়ে। সুন্দর কালো চুল গুলো কালার করে রেখেছে। পোশাক ও তার বিদেশীদের মতো। তবে অন্তরের দিক থেকে খাঁটি বাঙালি।
.
.
আরাফের সাথে কথা বলার পরে তাদের নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতেই তাসু বলে উঠলো-
আম্মু, আব্বু, আপু তোমরা পেছনে বসো।
আমি কিন্তু সামনের সিটে বসবো।
.
আরাফ মুচকি হেসে বললো-
হু আসো।
.
তাসুকে দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছে মেহেনুবা। কি এমন দেখেছে এই ছেলের মাঝে যে তার ওভার স্মার্ট বোন তার জন্য পাগল!
.
.
.
-বড় খালা, ছোট খালা তোমরা কোথায়?
.
রুমানা…
পাশের বাসার সীমা আক্তারের নাতনী।
আফরান তাকে নিজের ছোট বোনের মতোই দেখে.
আর সায়নী ও মুনিরা দেখে নিজের মেয়ের মতো। তাদের কোনো মেয়ে নেই কিনা।
.
রুমানার ডাকে সায়নী ও মুনিরা ড্রয়িং রুমে এগিয়ে আসলো।
.
সায়নী তার উদ্দেশ্যে বললো-
সকাল সকাল চেঁচাচ্ছিস কেনো?
-তোমাদের গুণধর ছেলেকে ডাক দাও। খুশির খবর আছে।
-সে তো বাসায় নেই।
-কোথায়?
-এয়ারপোর্টে।
-ওহ!
.
মুনিরা হেসে বললো-
খুশির খবর আমরা কি শুনতে পারিনা?
-কেনো নয়! রাকিবের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে আমার।
.
রাকিব হলো এই এলাকারই ছেলে। ছোট থেকে রুমানাকে সে পছন্দ করে। রুমানা তাকে পছন্দ না করলেও নিজের জন্য রাকিবের পাগলামি দেখে সেও তার প্রেমে পড়ে যায়।
কিন্তু সৌদী আরবের ভিসা হয়ে যায় রাকিবের। আর সে বিদেশ যাবার আগেই রুমানার সাথে আকদ করে যেতে চায়।
রাকিব তার বাসায় সবটা জানালে তার পরিবার রুমানাদের বাসায় প্রস্তাব পাঠায়।
রুমানার পরিবারও এই প্রস্তাবে সম্মতি জানায়।
.
রুমানার মুখে রাকিবকে তার পরিবার মেনে নিয়েছে শুনে বেশ খুশিই হলো সায়নী ও মুনিরা।
কিন্তু রুমানা মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো-
চেয়েছিলাম আরাফ বলদ টাকে আগে খবর টা দিবো।
.
মুহুর্তেই ফ্যাকাসে মুখটার বদলে হাসিমুখে সে আবার বললো-
তার আগে আমিই আমার ভালোবাসার কথা বাসায় আগে জানাতে পেরেছি, ইয়েস!
.
রুমানার কথা শুনে সায়নী ও মুনিরা একইসাথে বলে উঠলো-
কি! আরাফের ভালোবাসা?
.
-এই রে কি বলে ফেললাম এইটা!
.
নিজের মনে কথাটি বলে রুমানা আমতাআমতা করে তাদের উদ্দেশ্যে বললো-
এইরকম কিছু আমি বলিনি।
.
মুনিরা ভ্রু জোড়া কুচকে বললো-
আমি না হয় ভুল শুনেছি। তবে সায়নী আপুও কি ভুল শুনলো!
.
মুনিরার কথায় তাল মিলিয়ে সায়নী বললো-
হু আমি নাহয় বুড়ি হয়ে গেলাম। চোখে কম দেখি, কানেও না হয় কম শুনলাম। কিন্তু মুনিরার তো এমন হওয়ার কথা না। সে ভুল শুনবেনা।
.
রুমানা সায়নীর পাশে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো-
কে বলেছে সুন্দরী খালাটা বুড়ি হয়ে গিয়েছে।
.
রুমানার কান টেনে সায়নী বললো-
ওরে কথা ঘুরাস না। আরাফ কার সাথে ইটিস পিটিস করছে বল?
-আহ আমার লাগছে তো, আগে ছাড়ো।
.
সায়নী তাকে ছেড়ে দিতেই সে দৌড়ে সদর দরজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো-
তোমরা দুজনি কানে কম শুনো।
.
.
রুমানা বেরুতেই মুনিরা সায়নীর উদ্দেশ্যে বললো-
আমার কিন্তু মনে হচ্ছেনা আপু, কানে কম শুনেছি আমি।
-আমারো মনে হচ্ছেনা।
-তার মানে আমাদের আরাফ প্রেম করছে আর আমরাই জানিনা!
.
মুচকি হেসে সায়নী বললো-
প্রেম কি বাসায় জানিয়ে করে বোকা?
-ওহ তাই তো! আমি আরো তাসুকে বউ বানাবো ভেবেছি।
-তাই তো বলেছি আরাফের সাথে আগে কথা বলতে।
-আমাকে কিছু বলবে বলে মনেহয় না। তুমিই জিজ্ঞাসা করিও।
-দুজনি করবো।
.
চিন্তিত স্বরে মুনিরা বললো-
মেয়ে যদি ভালো না হয়?
-এতো ভাবিস না। ভালো হবে সব।
.
.
.
সকাল পার হয়ে দুপুর এসে গেলো।
মিশিকারা আরাফকে নিয়ে নিজেদের বাসায় পৌছালো বেশ কিছুক্ষণ হলো।
যদিও সায়নী অনেকবার বলেছে তাদের বাসায় যেতে কিন্তু পাবেলের একটাই কথা, দেশে এসে প্রথমে নিজের বাসায় পা রাখায় শান্তি।
সায়নীর কাছে তাদের বাসার চাবি থাকায় সে ঘরটা আগেই গুছিয়ে রেখেছে।
পাশের হোটেলে খাবারের অর্ডার করে রেখেছে।
আরাফ খাবার গুলো এনে মিশিকার হাতে দিয়ে বললো-
এবার আমি আসি আন্টি।
-মার খাবি? খেয়ে যাবি আমাদের সাথে।
-কিন্তু…
-কোনো কিন্তু না। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। একটু অপেক্ষা কর।
.
আশেপাশে কাউকে দেখা যাচ্ছেনা। তার মানে সকলে ব্যস্ত ফ্রেশ হতে।
এতোক্ষণ যাবৎ উপমা অনেকবার ফোন দিলেও সকলের সামনে রিসিভ করতে পারেনি আরাফ।
কেননা উপমার সাথে কথা বলার সময় আদুরী ভাষায় ন্যাকা প্রেমিকের মতো কথা না বললে দোষ খুঁজে এই মেয়ে। আঙ্কেল, আন্টির সামনে কিভাবে এসব বলা যায়! তার চেয়ে সব গালি এখুনি খাওয়া যাক।
এসব ভেবে ড্রয়িং রুমের বারান্দায় এসে উপমার মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলো আরাফ।
একবার রিং হতেই রিসিভ করে কটমট স্বরে উপমা বললো-
ঘেষাঘেষি এতোই চলছে যে আমার ফোন রিসিভ করার সময় টুকু পাচ্ছো না।
-কি যে বলোনা! হেহে…
-কিসের হেহে! এসব মুখে উচ্চারণ করা নকল হাসি আমাকে শোনাবে না।
-আহ বাবুটা! রাগ করছো কেনো বলোতো? আঙ্কেল বা আন্টির সামনে আমি কিভাবে ফোন রিসিভ করবো তুমিই বলো? তাছাড়া আমি ড্রাইভ করছিলাম। ড্রাইভ করার সময় কি কথা বলা ভালো ফোনে?
.
শেষের কথাটি শুনে শান্ত গলায় উপমা বললো-
না ভালোনা। এখন কোথায়?
-মাত্রই বাসায় আসলাম আন্টিদের।
-অনেক ক্লান্ত লাগছে তাইনা?
-কিছুটা। তুমি কোথায়?
-বাসায় রওনা দিবো। ক্লাস শেষ।
-ওহ।
-ওকে রিলাক্স হয়ে বসে আরাম করো তুমি। বাসায় গিয়ে ফোন দিবো।
-ঠিক আছে।
.
উপমার সাথে কথা বলার পরেই আরাফ কল দিলো সায়নীর নাম্বারে-
হ্যালো বড় আম্মু বাসায় এসেছি।
-খাবার গুলো নিয়েছিস?
-হ্যাঁ নিয়েছি।
-কই সবাই?
-ফ্রেশ হচ্ছে। শুনো আমি এখান থেকে খেয়েই রওনা দিবো। আমার জন্য অপেক্ষা করোনা।
-আচ্ছা।
-ছোট আম্মু কি পাশে আছে?
-নামাজের সময় এখন, হয়তো উপরে।
-ওহ। আচ্ছা আমি ফোন দিচ্ছি। নাহলে তিনিও চিন্তায় থাকবেন আমার জন্য।
-ঠিক আছে।
.
সায়নীর সাথে কথা বলার পরেই আরাফ ডায়েল করলো মুনিরার নাম্বারে।
আড়াল থেকে এই দৃশ্যটি দেখে মনটা ভরে গেলো মেহেনুবার। প্রথমে বড় আম্মুর সাথে কথা তারপর ছোট আম্মু।
দুইটা মাকেই এই ছেলে কতোটা সম্মান করে। অথচ অনেক ছেলেরা একটা মা নিয়েই কতোটা বিরক্তি। ঠিকমতো আচরণ করেনা, খবর নেইনা, যথার্থ সম্মানও দেয়না। আসলেই এদিক থেকে আরাফ খাঁটি।
.
মুচকি হেসে মেহেনুবা চলে গেলে উপস্থিত হলো তাসু।
আরাফ ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে ভেতরে আসতেই
তার দিকে তাকিয়ে তাসু বললো-
কার সাথে কথা বলছিলে?
-আম্মুদের সাথে।
.
শর্ট জিন্স ও টি-শার্ট পরিহিতা তাসুকে একেবারে আমেরিকান মেয়ের মতোই লাগছে। তবে তাসুকে এভাবে দেখে কেমন যেনো অস্বস্থি লাগছে আরাফের। সে তাসুর উদ্দেশ্যে বললো-
তোমাকে দেখতে ভালো লাগছে কিন্তু বাংলাদেশে এসব আসলে… না মানে লম্বা জিন্স পরলে ভালো হতো আর কি।
-ওহ হো! আব্বুও আমাকে বারণ করেছিলো এসব না পরতে। আমি এখুনি চেইঞ্জ করে আসছি।
.
.
তাসুকে লং জিন্স পরতে দেখে মেহেনুবা বললো-
কিরে? এতো উন্নতি হঠাৎ?
-আরাফ ভাইয়ার জন্য।
.
মেহেনুবা কিছু বলতে যাবে তখনি মোবাইল হাতে হাজির হলো মিশিকা।
-আতিকের ফোন। নে কথা বল।
.
আতিক…
এর সাথেই বিয়ে ঠিক হয়েছে মেহেনুবার।
আতিক পেশায় ডাক্তার, দেখতে হ্যান্ডসাম, ভালো ফ্যামিলির ছেলে। তাই তাকে অপছন্দ হবার কারণই নেই।
এদিকে মেহেনুবা মাশআল্লাহ সবদিক দিয়েই সেরা। তাই আতিকও তার সম্পর্কে জেনে ও ছবি দেখে পছন্দ করে তাকে।
পরিবারের সম্মতিতেই দুজনের মাঝে কথা বলতে দেয়া হয়।
তবে মাঝেমাঝেই হয় কথা। কেননা মেহেনুবার বিয়ের আগেই ক্লোজ হবার ইচ্ছে নেই এতো।
-হ্যালো? তোমার বাংলাদেশের কোনো নাম্বার নেই বলে এতক্ষণ খবর নিতে পারিনি। আন্টির ফোন না আসলে আরো অস্থির হয়ে যেতাম। যাই হোক ওয়েলকাম টু বাংলাদেশ।
-ধন্যবাদ।
-এবার আমাদের দেখা করার ব্যবস্থা করো। আচ্ছা আমিই বলবো আন্টিকে।
-জ্বী।
.
মেহেনুবা জ্বী, হ্যাঁ, আচ্ছা ছাড়া আতিকের সাথে আর কোনো কথা বলেছে কিনা মনে করতে পারবেনা আতিক। তবে এই কথাগুলোও যেনো তার মুখে হাজার বছর শুনতে পারবে সে।
.
.
.
সন্ধ্যে হতেই ঘরে প্রবেশ করলো আরাফ।
সায়নী ও মুনিরাকে বসে থাকতে দেখে সে বললো-
হাই আম্মুগণ।
.
সায়নী ও মুনিরা একইসাথে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলো-
তুই প্রেম করিস আমাদের জানালি না কেনো?
.
এই কি শুনছে আরাফ! মায়েরা এসব জানলো কিভাবে! এখন কি করবে সে!
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here