Part 25+26
#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ ২৫
“প্রেমে পড়েছি, প্রেমে পড়েছি
যখন আমি তোকে দেখেছি
Oh God, forgive me
Oh God, forgive me
Lil’ mamas tatted up that’s unordinary
বন্ধুরে কাছে আসো
বন্ধুরে ভালোবাসো
Don’t be scared
আমি আছি
I’m gonna play that
প্রেমের বাঁশি”
আজকে আকাশটা বড্ড রোদেলা, প্রকৃতিতে শীতের আগমন ঘটেছে তবুও দিনটা খুব উজ্জ্বল ঠিক ইনায়ার মনের মতো। চোখে কাজল দিতে দিতে গুন গুন করে গান গাইছে ইনায়া সাথে তাল মিলিয়ে ডান্স করে যাচ্ছে যদিও ঘরে মিউজিকের ছিটে ফোটাও নেই। কিন্তু তাতে কি? মনের ভিতর গিটার, তবলা, পিয়ানো, বাঁশি সকলকিছু এক সাথে বাজছে। আজকে অনেক খুশি লাগছে ওর, এই অনুভুতি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর অনুভুতি যা আগে কখনো ফিল করে নি।বয়স কিছুদিন পূর্বেই বিশ পেরিয়েছে কিন্তু আজ টিনেজারদের মতাও আচরণ করতে ইচ্ছে করছে।
লাভ ইজ লাইক মেজিক! একমুহুর্তে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ মনে হয় সাথে অসম্ভব উত্তেজনা কাজ করে। ও জানেনা এইটা কি আদোও ভালোবাসা বলা যায় কিনা তবে এতোটুকু জানে ও রোয়েনের সাথে থাকতে, ওর সাথে সময় কাটাতে সবেচেয়ে বেশি ভালোলাগে। আর ও এই মুহুর্তগুলো উপভোগ করতে চায়, খুব করে চায়!
সুন্দর করে রেডি হয়ে ও বেরিয়ে পড়লো বাসা থেকে, এক্সাইটমেন্টে খেতেও ইচ্ছে করছে না, টেকনিকালি আজকে ওর ফার্স ডেট! সময়ের পুর্বেই বেরিয়ে পড়েছে, রোয়েন এখনো ফোন দেয়নি ওকে। তাই ও পাশের গলিতে গিয়ে রোয়েনের জন্য ওয়েট করবে তারপর রোয়েন আসলে বকা দিবে আর বলবে
“প্রথম দিনেই লেট করে এসেছেন?যদিও ভেবেছিলাম কিছু একটা জবাব দিবো কিন্তু এখন দেখছি আমাকে আবার ভাবতে হবে”
কথাটা ভেবেই ইনায়া হেসে দিলো, রোয়েনকে ঝাড়ার পর ওর চেহারা দেখে খুব মজা লাগবে ওর। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে গলির মোড়ে আসতেই টাশকি খেয়ে গেলো। ব্লাক শার্ট আর হোয়াইট প্যান্ট পরে একটা ছেলে গাড়িতে হেলান দিয়ে বসে আছে আর ফোন হাতে কিছু একটা করছে। এই প্রথম রোয়েনকে ফর্মাল ড্রেসাপ ছাড়া দেখে ও ছোট খাটো ক্রাশ খেলো। এই ভাবে আগের তুলনায় অনেক ইয়াং লাগছে। ইনায়া এগিয়ে এসে রোয়েনের সামনে ভ্রু কুচকে দাঁড়ালো, ওর আনন্দের দফারফা করে দিলো। ব্যাটা খচ্চর!
ইনায়াকে দেখে রোয়েন মুচকি হাসি দিলো যাতে ইনায়া কুচকে থাকা কপাল ধীরেধীরে স্বাভাবিক হয়ে গেলো। এর পুর্বে রোয়েনের হাসি সেইভাবে খেয়াল করা হয়নি, লোকটির হাসি অনেক সুন্দর কিন্তু সবসময় গম্ভীর মুখ করে রাখে যেন হাসলেও ট্যাক্স দিতে হবে। রোয়েনের কপালে পড়ে থাকা সিল্কি চুলগুলো উড়ছে যাতে ওকে আরো সুন্দর লাগছে। এই ছেলেটি অতিরিক্ত ফর্সা যাকে বলে পুরা ইংরেজ। ছেলেরা এতো ফর্সা হবে কেনো? এতো ঘোর অন্যায়, তাছাড়া এতো সুন্দরই বা হবে কেনো যার থেকে নজর সরানো দুষ্কর। প্রকৃতি এই অন্যায় কি করে মেনে নিবে? যেখানে রোয়েনের তাকানোর কথা ছিলো সেখানে ও রোয়েনের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে? হাউ শেমফুল!
রোয়েন হাল্কা গলা খাঁকারি দিয়ে উঠলো যাতে ইনায়া বাস্তবে ফিরে আসলো। রোয়েন মুখে টেডি স্মাইল ঝুলিয়ে বললো
“অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে আজকে, আর দেখেছো আমাদের ড্রেস কিন্তু ম্যাচ হয়ে গেছে।যে কেউ হঠাৎ দেখে আমাদের কাপল বলবে”
আসলেই তো ইনায়া খেয়ালী করেনি ও আজকে ব্লাক আর হোয়াইট পরেছে, রোয়েন কি তাহলে ভাবছে যে ইচ্ছে করে পরেছে কারণ সেতো বেশিরভাগই ব্লাক পরে। ইনায়ার কিছুটা অস্বস্তি হলো তাই কথা ঘুরানোর জন্য বললো
“আপনি এতো তাড়াতাড়ি এসেছেন যে?তার উপর ফোনও দেননি!”
“আমি জানতাম তুমি এতো তাড়াতাড়ি আসবে তাই আর ফোন দেয়নি। দেখো তুমি কিন্তু এসেছো”
এই আবার কি লজিক! আমি আসবো সে জানতো? যদি না আসতাম? ধুররর এরপর থেকে লেট করে আসবো তখন দেখবো কি করে বলে “আমি জানতাম তুমি আসবে”
রোয়েন ইনায়ার সাইডের দরজা খুলে ইনায়াকে বসালো যাকে বলে পুরো জেন্টলম্যান, তারউপর ইনায়ার সিট বেল্টও বেধে দিয়েছে। হাউ কিউট!
“ইনু কিছু বলবে না?”
“কি বলবো ” ইনায়া জেনেও না জানার ভান করে বললো যাতে রোয়েন ওর দিকে গভীর ভাবে তাকালো তারপর বললো
“চেইনটা পরোনি?পরলে খুশি হতাম ”
ইনায়া একটু হেসে গলায় পরে থাকা চেইনটা বের করে দেখালো তারপর বললো
“আমি উপহারের অমর্যাদা করিনা, সেগুলা যত্ন সহকারে ব্যাবহার করি”
“আর আমার জবাব?”
এর উত্তর ইনায়ার জানা নেই, কারণ রোয়েন কতোটা সিরিয়াস তা আগে ওকে জানতে হবে। সম্পর্কের গভীরত্ব জেনে তবেই নিজের অনুভুতির কথা বলবে। রোয়েন ইনায়াকে চুপ থাকতে দেখে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো,,
“তোমাকে তাড়াহুড়ো করতে হবে ভেবে চিন্তেই জবাব দিও। যেহেতু না করোনি তবে ধরে নিবো কিছুটা সম্মতি রয়েছে। তবে মনে রেখো সময় থাকতে মনের জানান দিতে হয় নাহয় যার জন্য অনুভুতির পাহাড় গড়বে সে যদি বেচে থাকতেই তা জানতে না পারে তবে খুব আফসোস করবে”
ইনায়ার আত্মা কিছুটা কেঁপে উঠলো, ওকি তবে বেশি দেরি করে ফেলছে!রোয়েন ইনায়ার মাথায় টোকা দিয়ে বললো
“ইনু এতো ভেবোনা, আমি তোমার জবাবের অপেক্ষা আজীবন করবো। তবে দিনশেষে জবাবটা যাতে হ্যা হয়”
ওইদিন সারাদিন ওরা ঘুরে বেড়িয়েছে লস এঞ্জেলসের বিভিন্ন জায়াগায়। দুজন কপোত কপোতী যেন ডানা মেলে ঘুরে বেড়াচ্ছিল প্রেমের আকাশে। কারো মনে তখন ফুটছিলো ভালোবাসার শুভ্র গোলাপ আর কারো মনে হিংসার তীব্র আগুন যাতে সবকিছু ঝলসে যায়।
সেদিনের পর কেটে যায় প্রায় সাত মাস সাথে রোয়েন-ইনুর সম্পর্কেরও। প্রথমে ইনু ভালোবাসার কথা স্বিকার না করলেও রোয়েনের কেয়ার, ভালোবাসায় ও স্বিকার করতে বাধ্য হয়। ওদের সম্পর্ক খুব ভালোই কাটছিলো, ইনায়া তার পড়াশুনার জন্য লন্ডনে ফিরে যায়।অনেক ব্যস্ততার মাঝেও রোয়েন ওর খবর নিতে ভুলতো না আর ওর সাথে সময় কাটাতে ভুলতো। এই সাতটি মাস রোয়েনের সাথে ওর স্বপ্নের কেটেছে,অন্য বয়ফ্রেন্ডদের মতো রোয়েনের কোন আবদার ছিলো না, সবসময় ওর থেকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখতো যাতে রোয়েনের প্রতি সম্মান অনেকগুন বেড়ে যায় যায়। সবকিছু ভালোই চলছিলো কিন্তু হঠাৎ অজানা ঝড় এসে সব এলোমেলো করে দেয়।
তখন হলিডে ছিলো তাই ইনায়া ক্যালিফোর্নিয়ায় ফিরে আসে,তবে রোয়েনের সাথে নিয়মিত কথা বলা মিস হয়নি। সেদিন ছিলো ওর বার্থডে। ঠিক রাত বারোটার দিকে রোয়েন ওর সাথে দেখা করতে আসে তারপর দুজন লুকিয়ে বেরিয়ে পড়ে বাইরে ঘুরতে, প্রায় একঘণ্টার মতো ওরা ঘুরে। রোয়েন ওর জন্য কেক নিয়ে এসেছিলো সাথে গিফটও। রাত প্রায় একটা দশে বাড়ি ফিরে আসে ও কিন্তু দৃশ্য কেউ একজন খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। তার চোখে মুখে অসম্ভব রাগ থাকলেও ঠোঁটের কোনে ছিলো অদ্ভুত এক প্রশান্তির হাসি!যেনো সে খুব রেগে আছে এবং একি সময়ে খুব খুশি।
#পর্বঃ২৬
আজকের ভোরটা মেঘে ঢাকা, সূর্য মহাদয় নিজ গৃহে লুকোচুরি খেলছে। আকাশ জুড়ে বিশাল নিস্তব্ধতা তবে মেঘে ঢাকা ভোর খুব শুভ্র এবং মোহনীয়। বারান্দায় বসে সেই মোহনীয় দৃশ্য উপভোগ করছে ইনায়া, চারপাশে মৃদু বাতাসের সাঁইসাঁই শব্দ। সেই বাতাসের তালে তালে খেলে যাচ্ছে ইনায়ার কোমর অবধি থাকা চুলগুলো। কাল রাতের সেই একটি ঘন্টা স্বপ্নের মতো কেটেছে, কখনো নিজেকে এতোটা স্পেশাল মনে হয়নি। রোয়েন ওকে সবসময় আগলে রাখে যা ওর সব থেকে বেশি ভালোলাগে। ডান হাতের অনামিকা আঙুলের রিংটার দিকে তাকিয়ে আছে ও। কাল রাতে এই রিংটি বাম হাতে ছিলো কিন্তু সকালে উঠেই ডান হাতে পরে নিয়েছে। প্রায় অনেক্ষন বারান্দার মন কাড়া দৃশ্য উপভোগ করার পর উঠে দাঁড়াল ও। নিচে নামতেই বাবা-মাকে বসে থাকলে দেখলো। ও ব্যাগ নিয়ে বের হতে যাবে তখনি বাবার গম্ভীর কন্ঠস্বরে থমকে দাঁড়ায়
“ইনায়া কোথায় যাচ্ছো?”
হঠাৎ ইনায়া ডাকাতে ও কিছুটা অবাক হলো, বাবা সবসময় ইনু বা প্রিন্সসেস বলে ডাকে।আজ হঠাৎ এতোটা গম্ভীর কেনো বাবা! ও কিছুটা ইতস্তত বোধ করলো তারপর বললো
“মামাকে দেখতে যাচ্ছি, সায়রু বাইরে অপেক্ষা করছে”
ইনায়ার কথা যে ওর বাবার খুব একটা বিশ্বাস হলোনা তা ঢের বুঝতে পেলো ও, কিন্তু হঠাৎ বাবার এই পরিবর্তন কেন জানি মেনে নিতে পারছে না। বাবা কি কোন কিছু নিয়ে ওর উপর রেগে আছে?
এরই মাঝে সায়রা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে ইনুকে আসার জন্য তাড়া দিলো, ও একবার নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে তারপর সায়রার সাথে বেরিয়ে পড়লো। পুরো রাস্তায় এসব ভাবতে ভাবতেই আসলো। মামার বাসায় ঢুকতেই মামাকে সোফায় বসে থাকতে দেখলো আর মামি স্ন্যাকস রেডি করছে রান্নাঘরে। মামাকে অন্য সময়ের তুলনায় খুব হাসিখুশি দেখাচ্ছে, সে সাদরে ওকে ওয়েলকাম করলো তারপর মামিকে উদ্দেশ্য করে বললো
“রুশি দেখো আমাদের প্রিন্সসেস এসে গেছে, তুমি তাড়াতাড়ি এখানে আসো”
ইনায়া অবাক হয়ে মামার দিকে তাকিয়ে আছে, মামিকে এভাবে সরাসরি সম্মধোন করতে কখনো দেখেনি ও। এতোটা পরিবর্তন দেখে খুব অবাক হলেও পরে ভাবলো ভালোই হয়েছে, পরিবারটাকে এখন অনেকটা সম্পুর্ণ লাগছে। ব্যস এভাবে সবাই সুখে থাকুক, ওর মামার চোখগুলোতে ও খুশির আভাস পাচ্ছলো। মাঝেমাঝে মামা আর রোয়েনের মধ্যে খুব মিল পায় ও, বিশেষ করে ওই বাদামি চোখগুলো খুব মিলে যায় দুজনের। মাঝেমাঝে মনে হয় রোয়েন মামার ছেলে হলে খুব ভালো হতো তাইনা! দুজন দুজনের অস্তিত্ব সম্পর্কেও জানেনা অথচ কতো মিল?
সারাদিন মামার বাসায় খুব ভালো দিন কেটেছে ওর,আজ প্রথমবারের মতো মামার রুমে এসেছে ও। খুব সুন্দর গুছানো একটা রুম যাতে আভিজাত্যের ছোঁয়া রয়েছে। পুরো রুম জুড়ে মামা-মামি আর সায়রার অসংখ্য ছবি রয়েছে।ও ছবিগুলো থেকে কতোগুলো নিজের ফোনে বন্দি করেও রেখেছে। বিকাল চারটার দিকে মামার বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো, উদ্দেশ্য রোয়েনের হোটেলে যাবে। এই কয়েকমাসে এটা বুঝেছে রোয়েন ওর জন্য কতোটা ডেস্পারেট। ও যতোদিন ক্যালিফোর্নিয়া থাকে রোয়েনও তখন বেশিরভাগ সময় এখানেই থাকে। হি ইজ আ ক্রেজি। রোয়েনের রুমে নক করতেই কেউ রেসপন্স করলো, প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে থাকার পর ও কল দিলো কিন্তু ওইপাশ থেকে কেউ পিকাপ করছে না দেখে ও সিদ্ধান্ত নিলো রিসেপশনিস্ট এর কাছে যাওয়ার কিন্তু তার পুর্বেই রুমের দরজা খট করে খুলে গেলো আর রোয়েন বেরিয়ে এলো রোয়েনের গায়ে একটা কালো শার্ট ছিলো যা দেখে ইনায়া ভ্রু কুচকে তাকালো। ঘরের মধ্যে কেউ শার্ট পরে থাকে?আর কেমন যেনো ঘামছে ও। কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে প্রশ্নই করে ফেললো
“রোয়েন আর ইউ ওকে?সব ঠিক আছে? এভাবে ঘামছো কেন?আর ইউ সিক?”
“নো জাস্ট ওয়ার্ক আউট করছিলাম তাই এমন ঘেমে গেছি ”
“শার্ট পরে ওয়ার্ক আউট করছিলে! আর ঘরে শার্ট পরে আছো কেনো?”
রোয়েন কিছুটা অস্বস্তি বোধ করলো তারপর আমতাআমতা করে বললো
“আমি জাস্ট এমনিতেই প্ পরে ছিলাম, তুমি দা্ দাঁড়িয়ে আছো কেনো বসো”
বলেই ইনায়ার হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে কফি বানাচ্ছিলো, ইনায়া ভাবলো বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফি খেতে ভালো লাগবে সাথে একটা রোমান্টিক ওয়েদার সৃষ্টি হবে তাই বারান্দায় যাচ্ছিলো কিন্তু রোয়েনের আওয়াজে থমকে গেলো
“ইনু! কোথায় যাচ্ছো তুমি?”
কিছুটা স্বজোরেই বললো রোয়েন যাতে ইনায়া চমকে উঠলো, এতোটা কঠিন স্বর কখনো শুনেনি ও।
“বা্ বারান্দায় যাচ্ছিলাম, কতোক্ষণ পর সাঁঝবেলা নামবে তাই একসাথে সূর্য অস্তমিত হওয়া দেখবো”
এটা শুনে রোয়েন কিছুটা ধমকের স্বরেই বলে উঠলো
“নাহ যাওয়া লাগবে না, এখানে চুপচাপ বসে থাকো”
“তুমি এভাবে কথা বলছো কেনো? আমিতো জাস্ট বারান্দায় যাওয়ার কথাই বলেছি।এতো হাইপার হচ্ছো কেন তুমি?”
“বলছিনা বারান্দায় যাবে না মানে যাবে। সবসময় আমার বিপরীতেই কেনো কথা বলতে হবে তোমায়?”
রোয়েনের ধমকে আটকে থাকা জলগুলো গড়িয়ে পড়লো কপল বেয়ে, এতোটা অপমানবোধ ওর কখনো হয়নি।নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে ওর। ইনায়াকে কাঁদতে দেখে রোয়েন চোখ বন্ধ করে জোরেজোরে কয়েকটা শ্বাস নিলো তারপর ইনায়ার কাছে এসে ওর চোখের পানি মুছতে নিলে ইনায়া কিছুটা সরে গেলো যা দেখে রোয়েন শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বললো
“বারান্দায় জিমের বিভিন্ন কিছু রাখা, তুমি ওখানে গেলে যদি কিছু লেগে ব্যথা পাও তাই বলেছি তোমায় ওইখানে না যেতে না করেছি বাট তুমি বুঝতে চাচ্ছিলে না তাই ধমক দিতে বাধ্য হয়েছি। স্যরি ইনু”
মাথানিচু করে বললো রোয়েন যাতে ইনায়ার কান্নার বেগ বেড়ে গেলো, ও রোয়েনের কাছে এসে তার বুকে কয়েকটা কিল বসিয়ে বললো
“এটা ভালোভাবে বলতে পারলে না? ধমক দিলে কেন? তুমি জানোনা আমি ধমক সহ্য করতে পারিনা!”
“আচ্ছা স্যরি আর হবে না,এবারের মতো মাফ করে দাও”
“হুমম, এরপর দিলে কিন্তু আর মাফ করবো না”
“ইনু এতো নরম মনের কেনো তুমি?তুমি জানো এই দুনিয়া নরম মানুষদের জন্য নয়। এখানে বেচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয়। সবকিছুতে হাইপার না হয়ে সিচুয়েশন সামলাতে শিখো।তোমাকে নিজের খেয়াল রাখা শিখতে হবে।”
“তুমিতো আছো সামলানোর জন্য, আমি নাহয় নরম মনেরই হলাম। বাকিটা তুমি সামলে নিও”
“আমি তো সবসময় সব জায়াগায় থাকতে পারবো না তোমার সাথে বা সবজায়গায় হয়তো পৌঁছাতেও পারবো না। তাই তোমাকে নিজেকে সামলানো শিখতে হবে। এতোটা ইমোশনাল না হয়ে প্র্যাকটিক্যাল হতে হবে”
“সে ওই সময় দেখা যাবে, আপাদত তুমি আছো তাই আমার কোন টেনশন নেই। তুমি এভাবে সমসময় সামলে নিও আমায় আর হ্যাঁ কখনো আমার হাত ছাড়বে না। আমি ছাড়তে চাইলেও না! প্রমিস করো?”
“প্রমিস, তুমি চাইলেও ছাড়বো না”
আসলেই ছাড়ে নি, তাইতো এতো কিছু বলার পরও এখনো আকড়ে ধরে আছে।তুমি তোমার প্রমিস রেখেছো রোয়েন কিন্তু আমি রাখতে পারিনি। বলেছিলাম আমি শুধু তোমার হবো কিন্তু এই নিষ্ঠুর বাস্তবতা তা হতে দিলো না। প্রায় একঘণ্টা শাওয়ারের পর ওয়াশরুম থেকে বের হলো ও। চোখদুটো লাল হয়ে আছে ওর,অতীত ভাবতে ভাবতে অনেকটা সময় চলে গিয়েছে। আচ্ছা খুব বেশি কি ক্ষতি হতো যদি এমনটা না হতো! ওদের গল্পটা অন্যরকমও তো হতে পারতো যেখানে দুজনের মিলনে পরিসমাপ্তি ঘটতো!
টেবিলের উপর রাখা খাবার দেখে ইনায়া মুচকি হাসলো, এতো কিছুর পরও প্রত্যকটা জিনিসের খেয়াল রাখে এই লোকটা, দিনদিন তার কাছে ভালোবাসার ঋণ বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু পরিশোধ করার উপায় ওর জানা নেই। আমি বড্ড অসহায় রোয়েন, বড্ড অসহায়। আমি চেয়েও তোমার হতে পারছিনা,আমার মন বড্ড কঠিন হয়ে গেছে রোয়েন তাই আজকাল আপনার কষ্টগুলো চোখে পড়ে না। হয়তো পড়ে তবে তা শেষ করার সামর্থ্য আমার নেই। আপনি যেই বিরোহ দহনে পুড়ছেন আমিও সেই দহনে ঝলসে যাচ্ছি তবে তা দেখাতে পারছিনা।
🌸🌸🌸
একটা কথা রয়েছে হাতি কাঁদায় পড়লে চামচিকেতেও লাথি মারে। ইনায়ার সাথেও ঠিক এমন হচ্ছে,সকল মাইনকার চিপায় যেনো ওকেই পড়তে হচ্ছে। জীবনটা ঘন্টার ন্যায় হয়ে গেছে, যে যেভাবে পারছে সে এসে বাজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। এই যেমন এখন ও সোফায় বসে আছে, তার ঠিক সামনে একজন লোক অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর বারবার কপালের ঘাম মুছে। লোকটি কপাল বরাবর রাশিয়ান মডেলের গান ধরে রেখেছে যাতে লোকটি ভয়ে জড়োশড় হয়ে ক্রমাগত ওকে সাইন করতে বলছে। মানে এই লোকের জীবনের ঠেকা কি ও নিয়ে রেখেছে!। এখন একে বাচানোর এই রোয়েন নামক ছয় ফুট খচ্চরকে ওকে বিয়ে করতে হবে? নিজেকে থাপড়াতে ইচ্ছে করছে ওর, খুব তো উইশ করেছিলো লাইফে একটা ভিলেন আসতে সিদ্দার্থ মালহোত্রার মতো আর শ্রাদ্ধা কাপুর হবে কিন্তু দেখো আস্ত শাক্তি কাপুর লাইফে এন্ট্রি মেরে বসে আছে। চেয়েছিলো হিরোরুপি ভিলেন কিন্তু আস্ত ভিলেনমার্কা হিরো ওর লাইফের বারোটা বাজাচ্ছে। খুব বড় শিক্ষা হয়েছে আর জীবনেও এসব ভিলেন টিলেনের নাম নিবে না মুখে। এনা ঠিকই বলছিলো! বেশি ভিলেন ভিলেন করলে ভিলেন ঝুটবে কপালে আর ঠিক জুটে গেলো।
ইনায়া রোয়েনের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে দিলো যাতে রোয়েন মুচকি হেসে বললো
“ওয়েলকাম টু মাই লাইফ ইনুবেবি!আমি জানতাম তুমি ডাক্তার হয়ে কাউকে মরতে দিতে পারোই না। আজ থেকে তোমার বাবার থেকেও তোমার উপর আমার অধিকার বেশি। মনে রেখো রোয়েন যা চায় তা আদায় করে নেয় সেটা যেভাবেই হোকনা কেন ”
বলে বাঁকা হাসি দিয়ে লোকটিকে বিদায় করে দিলো আর ফোন বের করে রেজিস্ট্রি পেপারের ছবি তুললো। ফোনে কিছু একটা করে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বললো
“তোমার বাবাকে আমাদের বিয়ের রেজিস্ট্রির ছবি পাঠিয়ে দিয়েছি। তোমার বাবা খুব শিগ্রই আসছে তারপর তার সামনে পুরো শহরকে জানিয়ে সেলিব্রেশন করবো যাতে তোমার বাবা মানে আমার শশুড়মশাই বুঝতে পারে তুমি শুধু আমার ”
“সবকিছুতে জেদ ধরে হাসিল করে নিলেই যে আপনি জিতে গিয়েছেন তা কিন্তু নয়। আপনার আমাকে হাসিল করেছেন ঠিকই কিন্তু কখনো নিজের করে পাবেন না। আর সেটাই আপনার সবচেয়ে বড় হার ”
কথাগুলো রোয়েনের ঠিক হজম হলোনা, কেমন যেন ডেস্পারেট হয়ে ইনায়ার চোয়াল চেপে ধরলো যাতে ইনায়া খুব ভয় পেয়ে গেলো। এই রোয়েন খুব অচেনা ওর, খুব অচেনা,,,
“কে হারবে আর কে জিতবে তা সময় বলে দিবে। আপাদত তুমি আমার সেটা তোমার মনে আর মস্তিষ্কে যতো দ্রুত ঢুকাতে পারতেই ততই তোমারি মঙ্গল। মনে রেখো আমি তোমাদের মতো ভালো মানুষ নই তাই আমি কিছু করলে তা তোমাদের ভালো লাগবে না। যতক্ষণ আমি বেঁচে থাকবো ততক্ষণ তুমি আমার হয়ে থাকবে শুধু আমার”
#চলবে
(একটানা অতীত চলতে থাকলে গল্পটা কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে তাই আমার মনে হয় ধীরেধীরেই খোলা উত্তম। কমেন্টে জানান একেবারে সব বলে দিবো নাকি ধীরেধীরে খুললে ভালো হবে🤔)