বৈবাহিক চুক্তি পর্ব ২৩+২৪

#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ ২৩

ইনায়া বুঝতে পারছেনা এই মুহুর্তে ওর অনুভুতিতা কিরুপ, কেমন যেনো সব দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। নিজেকে অনুভুতি শুন্য মনে হচ্ছে! যাকে বিয়ে করতেই চায়নি তার সাথে বিয়ে না হওয়াতে খুশি হবে নাকি বাবার কথা না রাখতে পারায় কষ্ট পাবে? রোয়েনকে অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু ভেতর থেকে কোন কথা বেরুচ্ছে না, মাথাটা কেমন জানি ঝিম ঝিম করছে তাই খাটে থাকা বালিশের উপর মাথা এলিয়ে দিলো নিঃশব্দে, এখন ওর কিছুটা শান্ত হওয়া দরকার।

রাগের মাথায় যাই বলুক না কেনো কাজে দিবে না তাই নিজের কথাগুলো এই মুহুর্তে নষ্ট করতে চায়না। তাই চুপ থেকে নিজেকে শান্ত রাখা শ্রেয় আর সারাদিনের ধকলে ও খুব টায়ার্ড তাই এখন ঘুমের প্রয়োজন। চোখ বন্ধ করে চুপচাপ ইনায়াকে শুয়ে থাকতে দেখে রোয়েন কিছুটা অবাক হলো, ও ভেবেছিলো কয়েকটা ঝাড়ি তো খাবেই তারউপর ঝগরা তো মাস্ট হবে কিন্তু ইনায়ার হঠাৎ চুপ মেরে যাওয়া মেনে নিতে পারছেনা তাই উঠে গিয়ে ইনায়ার দিকে হাত বাড়াতে গিয়েও থেমে গেলো।
প্রচুর ধকল গেছে ইনায়ার উপর তাই হয়তো ক্লান্ত হয়ে গেছে, রোয়েন ওকে বিরক্ত করতে চাইলো না বরং টাউজার আর গেঞ্জি নিয়ে ওয়াশরুমের চলে গেলে।

দরজা আটকে যাওয়ার শব্দতে ইনায়া চোখ মেলে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে থাকলো তারপর অন্যদিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে ফেললো। ভারী মেকাপ আর গয়নায় প্রচুর অস্বস্তি হলেও উঠে খুলার ইচ্ছে আর শক্তি কোনটিই নেই। পুনরায় চোখবন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো ইনায়া।

প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর রোয়েন ইনায়ার দিকে এগিয়ে আসলো, এতোক্ষন পানিতে ভিজার কারণে চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। চুল দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে যাতে বেশ মোহনীয় লাগছে ওকে। ও একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ইনায়ার দিকে এগিয়ে গেলো তারপর এক এক করে গয়না গুলো খুলে মেকাপ মুছে দিলো। তারপর কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে নিচে নেমে আসলো কিছু বানানোর জন্য কারণ এখন প্রায় দুপুর দুইটা আর ইনায়া প্রায় অনেকক্ষণ ধরে না খাওয়া তাই ও উঠলে যাতে খেতে পারে। এটা রোয়েনের আরেকটা বাসা যেটা ইনায়ার বাসার কাছাকাছি যাতে ইনায়া চাইলে এখানে চলে আসতে পারে আর ও ইনায়ার কাছে যেতে পারে। এখানে কোন সার্ভেন্টদের রাখা হয়নি তাই নিজেই কিছু বানানোর ট্রাই করলো।

লন্ডনে এখন প্রায় সাড়ে পাঁচটা বাজে, সুর্য পশ্চিম আকাশে প্রায় হেলে পড়ে কিছুক্ষণ পর গোধুলি শেষে সাঁঝবেলা নেমে আসবে, চারদিকে আলো কিছুটা কমে এসেছে। ইনায়া মাথা চেপে ধরে উঠে বসলো, মাথা ব্যাথা আগের থেকে কমেছে তবে পুরোপুরি যায়নি। চোখ মেলতেই নিজেকে কিছুটা হাল্কা অনুভুত হলো আর আগের মতো অস্বস্তি কাজ করছে না দেখে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো গয়না কিংবা মেকাপ কিছুই নেই ওর গায়ে। বুঝতে পারলে কে খুলেছে, ওর এখনো বিঃশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে মানুষটি ওর এতোটা খেয়াল রাখে সে কি করে অন্যের কষ্টের কারণ হতে পারে?? কিন্তু চোখের দেখাকে তো অবিশ্বাস করা যায়না!

পাশের টেবিলে নিজের ফোন পড়ে থাকতে দেখে সেটা তুলে ওপেন করলো ও, ভাবছে সায়রাকে ফোন দিয়ে ওইখানের পরিস্থিতি জানবে। আর যাইহোক এখান থেকে এই মুহুর্তে বেরুনো সম্ভব নয় তাছাড়া অলরেডি অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে তাই চাইলেও কিছু করা সম্ভব নয়। ফোন ওপেন করতেই অনেক গুলো মেসেজের নোটিফিকেশন আসতে দেখে হচকিয়ে গেলো সবগুলোই হোয়াটস অ্যাপ থেকে। সায়রা কাঁপা হাতে ফোনটা তুললো আর যা দেখলো তাতে ওর আত্মা কেঁপে উঠলো, ও ঠিক যে ভয়টা পেয়েছে সেটাই হয়েছে কিন্তু এমনটা তো ও চায়নি! ওর চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে।

ঠিক তখনি রোয়েন খাবারের ট্রে নিয়ে রুমে ঢুকলো, ইনায়াকে এভাবে কাঁদতে দেখে রোয়েন খাবার পাশে রেখে এগিয়ে এলো আর ইনায়াকে জড়িয়ে ধরে বললো

“ইনু কাঁদছো কেনো তুমি? কি হয়েছে হঠাৎ? খারাপ স্বপ্ন দেখেছো!”

রোয়েনের কথায় ইনায়ার কান্নার বেগ বেড়ে গেলো, শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ও রোয়েনকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো। তারপর জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠে বললো

“আপনি আমার জীবনে আছেন এর থেকে বড় দুঃস্বপ্ন আর কি হতে পারে? আপনি বুঝতে পারছেন কেনো যে আমি আপনাকে আমার জীবনে চাইনা। প্লিজ চলে যান আমার জীবন থেকে”

ইনায়া ধাক্কা দেয়াতে রোয়েন কিছু মনে না করলেও পরের কথাগুলো সহ্য হলো না, তাই ইনায়ার বাহু চেপে ধরে বললো

“তুমি চাও বা না চাও তুমি আমার ছিলে আর আমারই থাকবে।তাই তুমি বললেই আমি চলে যাবো কেনো?তোমার আমার সাথেই থাকতে হবে সারাজীবন ”

“ভালোবাসা শুধুমাত্র বাহানা আপনার, আমি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু আপনার জেদ ছিলাম যাকে আপনি হাসিল করতে চেয়েছেন আর পেয়েও গিয়েছেন। কিন্তু মনে রাখবেন এতে আমার মনে জন্য যে শ্রদ্ধাটুকু অবশিষ্ট ছিলো সেটাও শেষ হয়ে গিয়েছে। জোর করে আর যাইহোক ভালোবাসা হয়না”

ইনায়ার কথাগুলো রোয়েনের মনে তীরের মতো গিয়ে বিঁধলো, ওর ভালোবাসাকে শেষে জেদ ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি ওর?এতোদিনেও ওর মন বুঝতে পারলো না? মুহুর্তেই হাতের বাঁধনি আলগা হয়ে গেলো। ইনায়াকে ছেড়ে শান্ত গলায় বললো

“তুমি আমার জেদ, ভালোবাসা, নেশা আর মোহ যাই হওনা কেন তুমি শুধু আমার। আমার থেকে তোমাকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না, তুমি নিজেও না। তাই জেদ ছেড়ে দাও কারণ আমার থেকে তুমি মুক্তি পাবে না ”

“আপনি আমাকে এতোটাও অসহায় করে তুলবেন যাতে আমি এমব স্টেপ নিতে বাধ্য হই যা কারোই কাম্য নয়। প্লিজ আমাকে একা ছেড়ে দিন, চলে যান এখান থেকে”

“ভুলেও কিছু করার চিন্তা মাথায়ও আনবেনা তাহলে এর ফল তোমার পরিবার ভোগ করবে মনে রেখো। আমি এমন কিছু করতে চাইনা তাই বাধ্য করোনা”

“আপনি কি চান আমি মরে যাই? শেষ করে দেই নিজেকে? যদি না চান তাহলে এই রুম থেকে বেরিয়ে যান এক্ষুনি”

রোয়েন এগিয়ে আসতে নিয়েও পিছিয়ে নিলো, ইনায়া এই মুহুর্তে বেশি হাইপার হলে সেন্সলেস হয়ে যাবে তাই এখন এই রুম ত্যাগ করাই বেটার। তাই একটা ছোট্ট দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
ইনায়া সেই যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো কান্নায় জড়ানো কন্ঠে বললো

“আমাকে হাসিল করতে গিয়ে আপনি নিজের কাছের মানুষেরই ক্ষতি করে ফেললেন রোয়েন। কিন্তু যা আমাকে দিয়ে শুরু হয়েছে তার শেষ আমাকেই করতে হবে। আর তার যা করার দরকার আমি তাই করবো ”

🌸🌸🌸

বারান্দার আবছায় আলোয় বসে আছে সায়রা, গভীর দৃষ্টিতে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে সায়রা, ঠিক হাতের দিকে নয় হাতে থাকা অনামিকা আঙুলে জ্বলজ্বল করতে থাকা ডায়মন্ডের রিং এর দিকে তাকিয়ে নিজের জীবন নামক অংকের হিসাব মিলোনোর চেষ্টা করছে ও। মাত্র একদিন আগেও যে স্বাধীন কপোতীর ন্যায় এদিক ওদিক দাপড়ে বেড়াতো সে আজ অন্যকারো আমানত, কারো হবু স্ত্রী। মুহুর্তেই যেনো অনেকগুলো শিকল ওর পায়ে বাধা হয়ে গিয়েছে, যাতে না নড়তে পারছে না ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতে পারছে। সাইলেন্ট থাকা ফোনটাতে কতক্ষণ পর পরই আলো জ্বেলে উঠছে কিন্তু পাশের থাকা মানবী তার দিকে শুন্য দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো তারপর ফোনটা সুইচড অফ করে পাশে থাকা টেবিলে ছুড়ে মারলো। বড্ড অভিমান হচ্ছে ওর কিন্তু কেনো তা জানেনা। ও জানে যে ফোন করছে তার এতে কোন দোষ নেই তবুও কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কারো সাথেই না, ব্যাস একা থাকতে চায় কিছুক্ষণ, এইমুহুর্তে কারো কথা ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছেনা ওর। জীবন এতো নিষ্ঠুর কেনো! মুহুর্তে এমন পরিস্থিতে দাঁড় করিয়ে দেয় যাতে না একুলে যেতে পারে না ওইকুল। শুধু মাঝখানে ঝুলতে থাকে কিছু আবেগ, অনুভুতি আর সম্পর্ক!

#চলবে

(কেমন হয়েছে জানাবেন আর গঠনমূলক কমেন্ট করলে খুশি হবো)#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ ২৪

উষ্কখুষ্ক চুলে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল ইনায়া,পেটের ভিতরে তিন মাইল বেগে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। কাল সারাদিন পেটে কিছু পড়েনি কিন্তু এখন আর না খেয়ে থাকা সম্ভব নয় তাই দ্রুত উঠে কাবার্ডের দিকে এগিয়ে গেলো, ফ্রেশ না হয়ে কিছু মুখে তুলা সম্ভব নয়। কাবার্ডের নির্দিষ্ট সাইডের দরজা খুলতেই মেয়েদের সকল সরঞ্জাম সাজানো অবস্থায় দেখতে পেলো ও। এখানের প্রত্যকটা জিনিস রোয়েনের পছন্দ করে কিনা তাও ওর জন্য। যেদিন প্রথম রোয়েন কাবার্ড খুলে দেখিয়েছিলো খুব অবাক হয়েছিলো ও সাথে প্রশ্নও করেছিলো এগুলো কেন কিনেছে তখন রোয়েন মুচকি হেসে বলেছিলো

“যখন এখানে পার্মানেন্ট চলে আসবা তখন যাতে কষ্ট করে শপিং করতে না হয়। এখানে সবকিছুই আছে প্রয়োজনীয় শুধু তোমার আসার দেরি”

কথাগুলো ভেবে অজান্তেই হেসে দিলো ইনায়া, তখন ওদের সম্পর্কের বয়স ছিলো সাড়ে তিনমাস। খুনশুটিময় সময়গুলো খুব ভালোই কাটছিলো কিন্তু ভাবতেও পারেনি আজ কাছে থেকেও এতোটা দূরে থাকবে। একটা লেডিস টাউজার আর টপ্স নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ও। শাওয়ার ছেড়ে নিচে বসে পড়লো, খুব কান্না পাচ্ছে, বুক ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছে। শুধু শীতল চোখে শরীর বেয়ে জল গড়িয়ে পড়া দেখছে। জীবনটা এখন এই বহমান পানির মত হয়ে গেছে, কোথায় যাচ্ছে তার কুল কিনারা খুজে পাওয়া দুষ্কর। শুধু এতোটুকু উপলব্ধি করা যায় যে অনেক কিছু হারিয়ে যাচ্ছে বা হয়তো হারিয়ে গিয়েছে।

ও নিচে বসে সেদিন রাতের কথা ভাবছে যেদিন ওদের সম্পর্কের শুরু হয়েছিলো,,,
ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলসে তখন অন্ধকার রাত, আকাশ জুড়ে হাজারো তারার ভীর আর অর্ধচন্দ্রের ছোয়া। চারপাশে ঝিঁঝিঁ পোকার মৃদু ডাক আর অসম্ভব মুগ্ধতা। তখনো রোয়েন ওকে নিজের বাহুডোরে জড়িয়ে ধরে ছিলো যেনো ছেড়ে দিলে কোথাও হারিয়ে যাবে। হঠাৎ রোয়েন মৃদু শব্দে কানের কাছে এসে বললো

“ইনু…”

“হুহ?”

“ইশ মাঘ ডিশ”

খুবই শান্ত আর গভীর আওয়াজে বললো রোয়েন যাতে ইনায়া কিছুটা কেঁপে উঠলো ইনায়া, রোয়েনের ভারী নিঃশ্বাস ওর কানে পরছিলো যাতে ওর সারা হাল্কা শিহরণ বয়ে গেলো।কেমন অসহ্যকর অনুভুতি যাতে ভালোলাগাও কাজ করেছিলো। ও রোয়েন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কিছুটা সরে দাঁড়াল তারপর মিনমিনিয়ে বললো

“কিসব ডিশের কথা বলেছিলেন ওইটা আবার কি?”

উত্তরে রোয়েন একটু হাসলো তারপর বললো
“যা বলেছি তা তোমার মাথায় ঢুকবে না, তুমি বরং এখন উপরে গিয়ে রেস্ট নাও। কাল সকালে তোমার বাড়ির ওইদিকের মোড়ে আমি ওয়েট করবো। কল করলে চলে এসো”

ইনায়া কথাটা শুনে খুশি হলেও প্রকাশ করলো না বরং মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বললো

“আমি কেনো যাবো আপনার সাথে?তাছাড়া পাপা জানতে পারলে বকা দিবে”

“তুমি না বললে তোমার পাপা জানবে কি করে?”

“তাহলে কি আমি চুরি করে বের হবো নাকি?”

রোয়েন ওর কথায় কিছুটা বিরক্তি হয়ে ভ্রু কুচকে ফেললো,

“চুরি করে বের হবে কেনো? বলবে ফ্রেন্ডের সাথে বেরুচ্ছি ”

“আপনার জন্য আমি মিথ্যে কেনো বলবো? পারবো না”

“তাহলে সোজা তোমার বাড়ি ঢুকে বলবো তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি আমি”

“ভয় দেখাচ্ছেন আমাকে?শুনুন ইনায়া চৌধুরী কাউকে ভয় পায়না। আপনার যা ইচ্ছা করতে পারেন”

“আচ্ছা তাহলে কাল সকালে তোমাদের বাড়িতে দেখা হচ্ছে ”

ইনায়া বেশ বুঝতে পারছে যে রোয়েন যা বলেছে তাই করবে তাই তাড়াতাড়ি বলে উঠলো

“নাহ থাক বলেন কোথায় দেখা করতে হবে?”

“বললাম তো কল দিলে চলে এসো”

“আচ্ছা এখন বিদায় হন, পাপা দেখতে পেলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে”

বলেই রোয়েনকে ওয়ালের ঠেলে পিছনে ফিরলো বাড়ির ভেতরে যাওয়ার জন্য কিন্তু রোয়েনের ডাক শুনে পিছনে ফিরে তাকালো

“ইনু…”

“কি হয়েছে ডাকছেন কেনো?”

“এটা তোমার জন্য এনেছিলাম ” বলেই ছোট একটা বক্স হাতে ধরিয়ে দিয়ে দিয়ে আবার বললো
“এখানে কিছু একটা আছে, ভেবে চিন্তে জবাব দিও। তোমার জবাবের অপেক্ষায় থাকবো”

বলেই ফিরে যাওয়ার জন্য দেয়ালের দিকে ফিরে হাটা শুরু করলেও আবার ফিরে আসলো যা ইনায়া ভ্রু কুচকে বললো

“আবার কি?”

“না বলেছিলাম আরকি তোমাকে…”

“আমাকে??”

ইনায়ার দিকে কিছুটা ঝুকে কানের কাছে গিয়ে বললো “ওড়না ছাড়া খুব হট লাগছে” বলেই হাসতে শুরু করলো আর ইনায়া হাত মুঠো করে বললো

“ইউউউউউ হুলিগেন!”

রোয়েন হাসতে হাসতে ওর নাকে মধ্যমা আঙুল ছুয়ে চলে গেলো আর ইনায়া রাগে সেখান থেকে চলে গেলো। বসার রুমে এসে বাবাকে খেলা দেখতে দেখে স্বস্তি পেলো তারপর দ্রুত উপরে চলে গেলো। বক্সটা খুলতেই একটা খুব সুন্দর চেইন দেখতে পেলো যাতে ইংরেজি অক্ষরে লিখা ছিলো “Ich Mag Dich”
ইনায়া শব্দগুলোর মানে বুঝতে পারলো না তাই নেটে সার্চ দিলো আর যা দেখলো তাতে ওর চোখ বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। মানে ওকে কেউ অলরেডি প্রপোজ করে চলে গেছে আর বুঝতেই পারলো না?এইজন্য বলেছিলো ভেবে চিন্তে জবাব দিতে!যাইহোক এতোসহজে তো জবাব দেয়া যাবে না আর তাছাড়া ওকি রোয়েনকে ভালোবাসে?
ভালোবাসার অনুভুতির সাথে ওর কখনোই পরিচয় ঘটেনি তাই হয়তো জবাব দেয়া সম্ভব নয়। ও কিছু একটা ভেবে সায়রা ফোন দিলো,দুই তিনবার রিং হওয়ার পর সায়রা ফোন উঠালো, ইনায়া মহা রেগে বললো
“এই একবারে ফোন তুলতে পারিস না? এতোগুলা দেয়া লাগে কেনো”

“হ্যা আপনার মতো সবাই সারাদিন ফোন নিয়ে পড়ে থাকে তো”

“দেখ মাম্মার মতো আমার ফোনের পিছনে পড়ে থাকবি নাতো বলে দিলাম ”

“আচ্ছা হইছে, তা কি কারণে এই অধমের খোজ করিয়াছেন তাহা যদি বলিতেন! ”

“আচ্ছা সায়রু তুমি যদি কাউকে ভালোবাসো তাহলে কি করে বুঝবে?”

সায়রা মাত্রই বালিশে মাথা রেখেছিলো, ইনায়ার কথা শুনে লাফ দিয়ে উঠে বসলো তারপর উদ্বিগ্ন কন্ঠ নিয়ে বললো

“কিরে কারো প্রেমে পড়লি নাকি?ওই মাই গড কবে, কখন, কোথায়? কোন বলদরে ফাঁসাইলি বলতো”

“বইন অফ যা, তেমন কিছুই না। একটা ড্রামা দেখছিলাম যেখানে হিরো হিরোইনকে প্রপোজ করছে আর হিরোইন কি জবাব দিবে বুঝতে পারছেনা। আমি এখনো নেক্সট পার্ট দেখিনি তার আগে জিজ্ঞেস করেছি তোকে। মানুষ কি করে বুঝে যে সে অন্যকাউকে ভালোবাসে?”

“তাই বল, আমি ভাবলাম আমার কোন বলদের প্রেমে পড়লি!”

সায়রা পুনরায় বেডে হেলান দিয়ে শুলো তারপর কর্কশ ভাষায় বললো

“আমি কখনো প্রেমে পড়েছি যে জানবো প্রেমে কি করে পড়ে?আর মানুষ খুজে পেলিনা?”

“আর আমি আর কাকে জিজ্ঞেস করবো বল?তোর তো কতো বান্ধুবী আছে তাদের দেখেছিস না সেই এক্সপেরিয়েন্স থেকে বল”

“আরে দুররর, ওদের আর প্রেম! দেখ ভালোবাসা সম্পর্কে আমার এতো জ্ঞান নেই তবে এতোটুকু বলতে পারি মানুষটি এমন হবে যার সাথে থাকলে নিজেকে সবচেয়ে বেশি সেফ মনে হবে,যে জড়িয়ে ধরলে অস্বস্তি হবে বরং ভালোলাগা কাজ করবে, যাকে কয়েকদিন না দেখলে সবকিছু বিশাদ মনে হবে যেন তাকে থাকা চলবেই না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যাকে দেখে মনে হবে তার সাথে সারাজীবন অনায়াসে কাটানো যাবে”

সায়রা চোখ বুজে কথাগুলো বলছিলো যেন সবগুলো কথা ফিল করেছিলো তারপর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললো

“কিছু বুঝলি?”

“হুম বুঝলাম যে তুমি আরজে হলে বহুত ফেমাস হইতা, এক কাজ কর সায়রু লাভ গুরু হয়ে যা। মাই গড ভালোবাসা সম্পর্কে এতো গুরু গম্ভীর কথা!”

“তোর মাথা” বলেই খট করে ফোন কেটে দিলো সায়রা, একে বুঝানোর চেয়ে ঘাষ কাটা ভালো। কিছুতো বুঝবেই না উল্টো প্রশ্নের হাড়ি খুলে বসবে। বদ মাইয়া। কতোসুন্দর মুড নিয়ে ভালোবাসার কথা বলছিলো একমুহুর্তে এর গুষ্টিরপিণ্ডি চটকিয়ে দিলো। এর জামাইর কপালে দুঃখ আছে।

এদিকে ইনায়া ফোন হাতে নিয়ে বসে হাসছে, সায়রা উসকাতে ওর ভালোই লাগে। কিন্তু সায়রার কথাগুলো মনে পড়তেই ও চুপটি মেরে গেলো। সায়রার কথাগুলো অনেকটাই ওর সাথে মিলে যাচ্ছে। এটা সত্যি যে রোয়েনের সাথে থাকলে নিজেকে অনেক সেফ মনে যা অন্যকারো সাথে কখনো ফিল হয়নি।নাহয় এতো রাতে কোন ছেলে ওর সাথে দেখা করতে এসেছে আর ও দেখা করবে একথা ও স্বপ্নেও ভাবতে পারে না। ইভেন আজকে যখন রোয়েন জড়িয়ে ধরেছে ওর খারাপ লাগেনি বরং একরাশ ভালোলাগা কাজ করেছিলো ওর মাঝে। তবে কি ও রোয়েনকে ভালোবাসে? কিন্তু যার সাথে মাত্র পনেরদিনের পরিচয় তাকে কি করে ভালোবাসা সম্ভব! নাকি ভালোবাসাই এমন যে মুহুর্তেই হয়ে যায় কোন কিছু বুঝে উঠার পুর্বেই?

নাহ নিজে শিউর না হয়ে রোয়েনকে জবাব দেয়া যাবে না তবে এটা ঠিক রোয়েনের প্রতি একটা উইকনেস কাজ করে যা আর কারো প্রতি কাজ করেনি। কিন্তু ও আগে রোয়েনকে জানতে চায়, ও বুঝতে চায় রোয়েন কতোটা সিরিয়াস। কারণ এই শহরের মানুষগুলোর আবেগ খুব কম,ওরা সম্পর্কে যতো তাড়াতাড়ি জড়ায় শেষও ঠিক ততো তাড়াতাড়ি হয়। ও আর যাইহোক কোন সম্পর্কের গভীরে গিয়ে সেখান থেকে ফিরে আসতে পারবে না, কারণ বিচ্ছেদ জিনিসটা ওর কাছে বড্ড ভয়ের তাই কোন কিছুর মায়া পড়ার চেয়ে আগে এর ভারত্ব বুঝা খুব জরুরি। ও রোয়েনকে বুঝতে চায়, খুব করে বুঝতে চায়!কারণ হাত ধরলে ও সারাজীবনের জন্য ধরবে এমন কারো যে শুধু শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ওর হয়ে থাকবে, শুধু ওর

#চলবে

(নিন এক বছরের কাহিনী শুরু হয়ে গিয়েছে, এবার আশা করি মাথার উপর দিয়ে যাবে না)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here