ভালোবাসতে_বারণ পর্ব ১০

#গল্পঃ_ভালোবাসতে_বারণ💔
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💔
#পর্বঃ__১০

বৃষ্টির ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকি আছে সাগর। অদ্ভুদ একটা মায়া কাজ করছে তার মাঝে। মেয়েটা সত্যি এখনো খুব পিচ্চি। অবহেলার ত্বীর একটাও তার মনকে আঘাত করেনা? সত্যিই কি আঘাত করেনা? নাকি মুখ চেপে সব সহ্য করে নেয় সে। আর আমিই বা তার উপর রাগ দেখাচ্ছি কেনো? দোষ তো তার বিন্দুমাত্রও নেই।
কোনটা ভালোবাসা? ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাওকে বাধ্য করে বিয়ের আসরে বসানো ওইটা নাকি এতো কিছু সহ্য করেও যে আমায় ভালোবাসতে চায় ওটা?
কোনটা চাই আমি?
আর আমি ওকে নিয়েই এতো ভাবছি কেনো? সে তো আমায় চায় না। অতিথ ভুলে গিয়ে হয়তো এটাই আমার নতুন জীবন শুরু করার সময়।
কিন্তু এই মেয়েকে যতই লাই দিবে ততোই মাথায় চড়ে বসবে। আগে ধিরে ধিরে সব বুঝে উঠতে হবে তাকে। কারণ, এই বয়সে অল্পতেই ন্যাকামি শুরু করাটাই স্বাভাবিক।

— এই তোর সাহস তো কম না, একদিন কেয়ার করেছি বলেই কি মাথায় চড়ে বসলি?

আমতা আমতা করে বৃষ্টি বলে উঠে,
— তুমি জেগে গেছো? আমিতো ভাবলাম,,,,

— কিচ্ছু ভাবতে হবে না তোর। যা নিজের জায়গায় যা।

— ভয় লাগছে তো, তাইতো এখানে চলে এলাম বকবে জেনেও।

— এই ঘরে কি ভুত আছে নাকি?

চুপ করে আছে বৃষ্টি,

— আচ্ছা ঘুমা এখানে, কিন্তু একধম গা ঘেসার চেস্টা করবি না।

মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক সম্মতি জানায় বৃষ্টি। মনে মনে জেগে উঠছে হাজারও অভিজোগ। ভাইয়া কি আমায় এতোটাই ঘৃনা করে। আমাকে সব সময় দুরে দুরে রাখতে চায় কেনো? তাহলে গত কালই বা কাছে টানলো কেনো?
,
,
,
পরদিন,
এই সাগর জেদ দেখাচ্ছিস কেনো যা হওয়ার হয়ে গেছে। ওইটা এতো দিন ছিলো তোর মামার বাড়ি আর এখন তোর আরো একটা পরিচয় ওই বাড়িতে।

— হয়ে গেছে বললেই সব শেষ হয়ে যায়না মা। মা প্লিজ তুমি তো জানোই আমি এক কথা দুইবার বলতে পছন্দ করি না। ওই বাড়িতে যাওয়ার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই, আমায় যেতে বলো না প্লিজ।

— আচ্ছা তুই যাবিনা কি আর করার। বৃষ্টিকে আপাততো দিয়ে আয়। কয়দিন বাড়ি থেকে ঘুরে আসলে মনও হালকা হবে তার। এতে আর নিশ্চই কোনো আপত্বি নেই তোর তাই না?
,
,
,
ছাদে ফুল গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছে রিদ। তার পাশে এসে দাড়ায় শুভ্রতা।
— ওহ্ আপনি?

— হুম, আপনাকে দেখে এলাম, সারদিন বিজি থাকেন আপনার সাথে তো কথাই হয়না। আচ্ছা ভাইয়া কিসে কাজ করেন আপনি?

— আছি একটা কিছুতে, ভালোই চলে যায়।

— ধন্যবাদ আপনাকে।

— হটাৎ,,,??

— আমার বিপদের সময় আপনি যেভাবে পাসে এসে দাড়ালেন, আপনার এই ঋন আমি কোনো দিনই ভুলতে পারবো না। আপনার জন্যই আমি ফিরে পেলাম একটা নতুন জীবন।

— ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই। আমাকে নিজের ভাই ভাবতে পারেন।

রিদের ফোনটা বেজে উঠতেই, ফোনটা কানে তুলে নেয় রিদ। তারপর তারাহুরু করে বাইরে বেরিয়ে যায় রিদ।
,
,
বিকেলে বৃষ্টিকে বাড়ি পৌছে দেয় সাগর। ব্যাগ নিয়ে ভেতরে চলে যায় বৃষ্টি। বৃষ্টিকে দেখে উঠে হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসে আসিফ স্যার,,,
— আরে মা, তুই এসেছিস। খুব মিস করেছিরে তোকে মা। খুব মিস করেছি। তো সাগর কোথায়?

— আসলে বাবা ভাইয়ার নাকি কিছু জরুরি কাজ আছে তাই আসতে পারেনি।

বৃষ্টির মা এগিয়ে আসতে আসতে বলে,
— তুই কি ওখানেও সাগরকে ভাইয়া বলিস?

জ্বিভে ছোট্ট করে একটা কামড় দেয় বৃষ্টি। তার সাথে কিছু লজ্জা লজ্জা ভাব।

আসিফ সাহেব হেসে বলে উঠে,
— আয় মা,

নিজের বাড়িতে এসেও বৃষ্টি পরে আছে অন্য চিন্তায়। তার একটাই উদ্দেশ্য, বাবাকে শুভ্রতার কথা সব খুলে বলার। বাবাকে বুঝাতে হবে যে শুভ্রতা নির্দোষ।
,
,
,
দিন দিন আদিত্যের এতো অবহেলা যেনো অতিষ্ট করেছে তৃষ্নাকে। আমরা সকলেই জানি প্রিয় মানুষের অবহেলা গুলো, পৃথীবির অন্যতম একটা বিশাক্ত আঘাত। যা প্রতিনিয়তই মানুষকে কুড়ে কুড়ে খায়।
কিন্তু জোর করে কি ভালোবাসা পাওয়া সম্ভব? হয়তো প্রাপ্তিটা সম্ভব হয়। কিন্তু থাকে কি ওই প্রাপ্তিতে ভালোবাসা?

আদিত্যের সাথে অনেকটা দিন কাটালেও সেখাছিলোনা কেনো আনন্দ, হাসি খুশি। একজনের ছিলো কাছে আসার প্রবন ইচ্ছে, আরে আরেকজন চেয়েছে বার বার দুরে ঠেলে রাখার।
আজ সন্ধায় রওনা দিবে তারা, এখানে আর থাকার ইচ্ছে নেই তৃষ্নার। আর আদিত্যের তো সেই প্রথম থেকেই ছিলো না।
,
,
,
রাতে বাসায় ফিরে আসে রিদ। তার জন্য শুভ্রতা আর চাচি বসেছিলো অনেক্ষন একসাথে খাবে বলে। ঘরে ঢুকতেই দেখে রিদের গায়ে রক্তে ভেজা শার্ট। পুরু শার্টে লেগে ছিলো রক্ত।
— কি হয়েছে আপনার, গায়ে রক্ত কেনো? কোনো সমস্যা হয়নি তো?

মুহুর্তে চাচিও এগিয়ে এসে বলে,
— কি হয়েছে বাবা? এমন কি করে হলো? কে করেছে এমন?

— আমার কিছুই হয়নি।

— কিছুতো একটা হয়েছে।

— ওই যে, মুকবুল চাচার বাড়িতে একটা দারোয়ান রফিক চাচা। তার একটা মেয়ে আছে কলেজে পরে। রফিক চাচা তাদের বাড়িতে গার্ড এর কাজ করে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালায়, মেয়েকে অনেক বড় করতে চেয়েছিলো সে।

— তো তার সাথে এই রক্তের কি সম্পর্ক?

— রফিক চাচার ওই মেয়েকে তার বাড়ির মালিক মানে মুকবুল চাচার ছেলে রেপ করে। রফিক চাচা পুলিশে কমপ্লিন করলে ছেলেটাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। তার পর দিনই মুকবুল চাচা ক্ষমতার জোরে ছারিয়ে নিয়ে আসে তার ছেলেকে। আজ সকালে নাকি ওই মেয়েটা অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে। আর তুমি তো জানোই চাচি আমি অন্যায় একধম পশ্রয় দিই না। ছেলেটাকে তুলে নিয়ে যাই আমরা। আজ সন্ধায় রফিক চাচাকে গাড়ি চাপা দেয় মুকবুল চাচা। রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পরে থাকতে দেকে তাকে হসপিটাকলে ভর্তি করে দিয়ে আসি।

— ওরা জদি আবার হসপিটালে মেরে ফেলার চেস্টা করে?

— আমার সাথের ছেলে গুলো ওখানেই আছে। তার মানে ওনি এখন সেইপ। আর এই শহরে এমন কোনো মানুষের ক্ষমতা নেই আমার উপর তুলে ওকে নিয়ে যাবে।

রিদ দ্রুত পায়ে চলে যায় নিজের ঘরে। শুভ্রতা কিছুটা অবাক হয়ে চাচির দিকে তাকায়,,,
— চাচি ওনি কি,,,,,

— হ্যা রে মা, এই শহরের সকলে রিদকে এক নামেই চিনে।

— কিন্তু ওকে দেখে তো বুঝাই যায় না যে ও,,,,,

— ও এমন ই,,, যেখানে অসহায় মানুষগুলো হেরে যায়, সেখানেই তাদের পাসে দাড়ানোটাই ওর কাজ। সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে লরে সে।

ফ্রেস হয়ে বাইরে আসে রিদ,, সকলে মিলে খাবার টেবিলে বসে এক সাথে খাচ্ছে।
,
,
,
খাবার শেষে একসাথে বসে আছে বৃষ্ট ও তার বাবা মা। শুভ্রতার ব্যপারে পুরুটা খুলে বললো, বৃষ্টি। নিস্তব্দ হয়ে আছে আসিফ স্যার। শুভ্রতার প্রতি এক প্রকার বিশ্বাস উঠে গেছে তার৷ এটা কি সত্যি না কোনো বানানো গল্প তা নিয়ে যতেষ্ট সন্দেহ রয়েছে তার মনে। — হ্যা বাবা, আপু পালিয়ে যায়নি, সে সম্পূর্ন নির্দোষ। ওই আদিত্যের জীবনে যেনো আপু কোনো কাটা না হয় তার জন্যই, আপুকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো ওই আদিত্য চৌধুরি।

চোখ বড় বড় করে তাকায় বৃষ্টির মা,
— কি বলছিস তুই, যে শুভির এমন ক্ষতি করেছিলো যার কারণে শুভির জীবনে এতো অশান্তি, আর সেই আদিত্য ই কিনা শুভির শুখের মুহুর্তে তাকে মেরে ফেলার প্লেন করে এই কেমন ভালোবাসার নমুনা?
,
,
রাতে ফোন আসে রিদের ফোনে।
— রিসিভ করতেই ও পাস থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠে আওয়াজ আসে, হ্যালো আপু,,,,

— আমি রিদ বলছি, আপু নই।

— এই নাম্বার থেকে আপুর সাথে কথা হয়েছিলো আমার। আর আপনার কথা বেছে আপু আমাকে। আপু মনে হয় এখনো আপনার বাসায়ই আছে।

— ওহ্ আচ্ছা ওনি আপনার বোন হয় রাইট? আচ্ছা দিচ্ছি একটু অপেক্ষা করুন।
,
,
,
সকালে ফ্রেশ হয়ে শুভ্রতাকে ডাকতে যায় রিদ নিজেই। কিন্তু সমস্ত ঘর খুজেও শুভ্রতাকে পেলোনা সে। হটাৎ চোখ পরে টেবিলে পরে থাকা একটা কাগজ।

মায়া জিনিস টা বড়ই অদ্ভুত। যেমন এই কয়দিনে খুব মায়া বসে গিয়েছিলো আপনাদের উপর। অনেক হেল্প করেছেন আমায়। বিপদের সময় পাশে এসে দাড়িয়েছেন। নতুন করে বাচতে শিখিয়েছেন আমায়। আপনাদের মাঝে আমি একটা পরিবার খুজে পেয়েছিলাম। কিছুদিনের জন্য মনে হলো আমিও ওই পরিবারের একজন সদস্য। আপনাদের ঋন আমি কখনোই শোধ করতে পারবো না। জানেন ভাইয়া জীবনে ভুল করেছিলাম মাত্র একটা, যার প্রশ্চিত্ব আমায় এইভাবে তিলে তিলে দিতে হচ্ছে। ওইদিন মনে হয়েছিলো আমার জন্য ওইটাই শেষ রাত। এর পর আর কখনোই উদয় হবে না আমার মনের গগনের সূর্য। এই বিপদে আপনাদের মতো মহৎ মানুষকে পাশে পাবো তা আমার জীবনে খুব বড় একটা সৌভাগ্য বলতে পারেন। আমি চলে যাচ্ছি, অনেক হেল্প করেছেন আমায়, বাকি টা আমি একাই লড়তে চাই। আর একটা কথা, আপনাদের দুজনের সম্পর্কটা মা-ছেলের মতোই। তাই বলছি ওকে চাচা না মা হিসেবেই সম্বোধন করবেন। আবার কবে দেখা হবে তা জানি না, তবে এতটুকুই বলতে পারি ভালো থাকবেন।
,
,
,
বাসে করে যাচ্ছে শুভ্রতা, জানালা দিয়ে বাইরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। চোখ গড়িয়ে পরছে পানি। এমনিতেও একাকিত্তের বোজ। তার উপর এই কয়দিনের পরিচয়, এমন একটা পরিবারকে ছেরে আসায় হৃদয়ের নিস্তব্দ হাহাকার। জীবনটা পুরুই বদলে গেছে তার। শুধু একটা মানুষের কারনে। আদিত্য কখনোই বুঝেনি আমর মনে জমা কষ্ট টা। সে কি জানে তার প্লেন সাক্সেস হয় নি, আমি আজও বেচে আছি?

আদিত্য ও তৃষ্না ফিরে এলো নিজের বাড়ি। একই গাড়িতে করে যাচ্ছে। কিন্তু কারো মুখে কোনো কথা নেই। মাথাটা উপর করে চোখ বন্ধ করে আছে আদিত্য। তার মনে একটাই চিন্তা শুভ্রতা।

রাগে একটা শব্দও বের হচ্ছে না তৃষ্নার মুখ থেকে। জেদ তাকে করে তুলছে আরো নিষ্ঠুর। আদিত্যকে তার নিজের করেই ছারবে তা যে কোনো কিছুর বিনিময়ে।

to be continue,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here