ভালোবাসতে_বারণ পর্ব ৯

#গল্পঃ_ভালোবাসতে_বারণ💔
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💔
#পর্বঃ__৯

সকাল ঘনিয়ে এলো। ভোরের পাখিটা গান গেয়ে উঠছে। সূর্যের পূর্বাভাস দেখা দিয়েছে পূর্ব দিগন্তে। ধিরে ধিরে চার দিকে আলো ছড়িয়ে পরছে তার। হাল্কা ঠান্ডায় শরিরটা কেমন ঝাকুনি দিয়ে উঠে বার বার।
বারান্দায় দাড়িয়ে আছে শুভ্রতা। ঘুম যেনো চোখের আড়াল হয়ে গেছে তার। এপাস ওপাস ছটপট করেই কেটে গেছে সারা রাত। নতুন জয়গায় নতুন জীবন নিয়ে এয়েকদিন কেটে গেলেও, সে যেনো প্রতি নিয়তই হারিয়ে আছে তার বিশাক্ত অতিতে।
মানুষ বদলায়, মানুষ বেঈমান হয়, মানুষ ধোকা দেয়, তাই বলে এতটুকু? নিজের সন্তানের জন্যও কি একটু মায়া হয়নি তার?
বাসার পরিস্থিতিই বা কেমন? দুশ্চিন্তার ভার যেনো বন্ধি করে রেখেছে তাকে কনো এক ভিন্ন জগতে।

বেশ কিছুক্ষন পর,
চাচি এসে ডাক দিলো তাকে। নাস্তা করতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কেনো জানি সব কিছুতেই অরুচি অনুভব করছে সে।
নাস্তা শেষে রিদের ফোনটা কিছুক্ষনের জন্য চেয়ে নেয় শুভ্রতা। বাড়িতে কথা বলতে হবে।
বাবা, মা, বৃষ্টি, পরিবারের চেনা চেনা মুখ গুলোও কয়েকদিন ধরে তার দৃষ্টির আড়ালে।
আচ্ছা, তারা আমায় ভুল বুঝলো না তো আবার?
বৃষ্টিকেই ফোন দিয়ে দেখা যাক।

নাস্তা শেষে সব কিছু ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে ছাদে হাটা হাটি করছে বৃষ্টি। ফোনের স্কিনে ভেষে উঠলো অচেনা একটা নাম্বার।
রিসিভ করে, লম্বা একটা সালাম দিলো বৃষ্টি, পরিচয় জানতে চাইলে কিছুক্ষন চুপ করে থাকে শুভ্রতা।

— হ্যালো কথা বলছেন না কেনো? কে বলছেন?

— কেমন আছিস বৃষ্টি?

— জ্বি ভালো। কিন্তু আপনার পরিচয়?

— আমি শুভ্রতা তোর বোন,,,,

— সরি চিনতে পারিনি। আর আমার কোনো বোন নেই।

— বৃষ্টি তুই মনে হয় আমায় ভুল বুঝছিস,,,,,,,

— সরি রং নাম্বার।

শুভ্রতা দ্বিতীয়বার ফোন দিতেই দেখে ফোন বন্ধ।
কি ব্যাপার বৃষ্টি তো আমার সাথে কখনো এমন বিহেব করেনা তাহলে আজ কি হলো তার?

ফোন বন্ধ করে দোলনায় বসে বড় একটা নিশ্বাস নেয় বৃষ্টি।
আমার ঘুরাঘুরি করে আনন্দ করার সমন আমার। তোর কারনে সংসারের হাল ধরতে হলো। এখন কি না কাটা গায়ে লবনের ছিটকা মারতে এলি তুই?
,
,
,
শীত প্রায় চলে গেছে বললেই চলে। রাতে হালকা শীত হলেও দিনের বেলায় প্রকান্ড সূর্যের তাপ।
দুপুর বেলায় সূর্যের তার তাপ দেখানোর সঠিক সময়। বৃষ্টি পোনটা বের করে সাগরকে ফোন দেয়। কাজের ফাকে ফোন আসতেই রিসিভ করে সাগর,,,
— হ্যালো,,,

— খেয়েছেন?

— নাহ্ এখন খাবো।

— আচ্ছা খেয়ে নিন, আপনার সব পছন্দের খাবার রান্না করা আছে।

— আচ্ছা রাখি এখন।

— আর শুনুন।

— কি খেয়ে ফোন দিবেন কিন্তু।

কিছু না বলেই ফোন কেটে দেয় সাগর।
,
,
,
বিকেল থেকে আকাশেরন বদলে গেছে পুরুপুরি। উত্তপ্ত আকাশ মুহুর্তেই যেনো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। রুমে বসে বি পরছে আসিফ স্যার। একাকিত্ত যেনো বরণ করে নিয়েছে তাদের। এক মেয়েকে হারিয়ে কস্টটা যত ছিলোনা বৃষ্টিকে বিয়ে দিয়ে তা দিগুন ধারন করলো। যে যাই হোক মেয়ে বিয়ে দেওয়ার পর বাবা মায়ের মনে একটা শুন্যতা গরে উঠে, আর তা হলো মেয়ের মুখের আব্বু আম্মু ডাকটা।

মেঘের অবস্থা দেখে ছাদ থেকে শুকনো কাপর নিয়ে এসে তা ঘুচাতে থাকে শুভ্রতার মা। আসিফ সাহেব বলে উঠে,
— বুঝলে শুভির মা, এটা কাল বৈশাখি ঝড়ের পূর্বভাস। আজ বৃষ্টি হলে প্রচন্ড শীত পরবে রাতে।

— যাই হোক, সবই উপর ওয়ালার ইচ্ছে। আমার চিন্তা হচ্ছে অন্য কিছু নিয়ে।

আসিফ স্যার ভ্রু কুচকে জবাব দেয়,
— কি?

— জানিনা আমার মেয়েটা কোথায় আছে কেমন আছে কার সাথে আছে। মেয়ের উপর অভিমান করে তাকে খোজারও চেস্টা করছো না তুমি। এই অভিমান কি সারাজীবন টিকে থাকবে বলো?

— ওর নাম আমি শুনতেও চাই না শুভির মা।

— শুনতে চাওনা কিন্তু তোমার মুখে প্রতিনিয়ত নার নামই শুনতে পাই আমি। শুভির প্রতি হাজারও অভিমান থাকলেও, দিন শেষে তুমি আমাকে শুভির মা ই ডাকো কিন্তু।

আর কিছু না বলে চুপচাপ উঠে চলে যায় আসিফ স্যার। সন্ধা পার হয়ে এলো। জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে সে। চুপচাপ বৃস্টি হচ্ছে বাইরে। কানে আসছে বৃষ্টির ঝুম ঝুম শব্দ।
,
,
,
ছোট বেলা থেকেই বৃষ্টিতে ভেজার একটা কঠিন নেশা আছে বৃষ্টির। রাত হোক দিন হোক নেশাতো নেশাই। তার উপর আবার কতো মাস পর এই বৃষ্টির দেখা। ছাদে গিয়ে হাত মেলে নাচানাচি করছে বৃষ্টি। বেশ কিছুক্ষন বৃষ্টিতে ভিজে একেবারে কাকভেজা হয়ে গেলো সে। ঠান্ডাও লাগছে কিছু। সিড়ি দিয়ে নিচে নামতেই বুকটা ধুক করে উঠে বৃষ্টির। কারন সাগর রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
কি ব্যাপার ভাইয়া এমন রেগে আছে কেনো? কোনো কাজ বাকি ছিলো কি? না কাজতো সবই করে এলাম। তাহলে? নাকি বৃষ্টিতে ভিজার অভিজোগ? আর অভিজোগ থাকবেই বা কেনো তার মনে? সে তো আর ভালোবাসেনা আমায়। ধুর কি সব আবোল তাবোল ভাবছি আমি? আমায় ভালোবাসতে যাবে কেনো সে? আচ্ছা আমি কি তাকে ভালোবেসে ফেলছি ধিরে ধিরে? নো, সম্ভব না এটা।

সাগরের সমনে দিয়ে মাথা নিচু করে দৌড় দিলো বৃষ্টি। কোমরে দুই হাত দিয়ে ঠাই দাড়িয়ে থেকে বৃষ্টি কান্ড দেখে যাচ্ছে সে।

রাতে খাবার খেয়ে সুয়ে আছে সাগর। সব কিছু ঘুচিয়ে রুমে এসে শুয়ে পরলো বৃষ্টিও। খাটে বসে বসে মুভি দেখছে সাগর। আর সোফায় গভির ঘুমে তলিয়ে গেলো বৃষ্টি।
মুভি দেখতে দেখতে প্রায় গভির রাত হয়ে এলো। সাগরের চোখ পরলো বৃষ্টির দিকে। কেমন কাপছে সে। নির্ঘাত জ্বর উঠেছে মেয়েটার। কোনো প্রয়োজন ছিলো সন্ধায় হটাৎ বৃষ্টিতে গিয়ে ভেজার।

কাছে গিয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখে তার আন্দাজই সত্যি। খুব জ্বর তার গায়ে। কোলে করে বিছানায় নিয়ে সোয়ায় সাগর। এতো জ্বরের মাঝে সোফায় ফেলে আসা উচিৎ হবে না তার।
,
,
,
সকালে জানালা ভেদ করে মিঠি মিঠি সূর্যের আলো চোখে পরতেই ঘুম ভাঙে বৃষ্টির। সূর্যের সাথে বাইরে গাছের পাতা গুলোও চিক চিক করছে। নিজেকে সাগরের বুকে সুয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হয় শুভ্রতা। এখানে কিভাবে এলাম আমি? ভাইয়াই কি নিয়ে এসেছে এখানে?
তাহলে প্রতিদিন সোফায় ফেলে রাখে কেনো? উঠতেই অনুভব করে শরিরটা কেমন দুর্বল লাগছে তার মাথাটাও বেথা করছে প্রচন্ড। ওভাবেই শুয়ে থাকলো বৃষ্টি।

কিছুক্ষন পর চোখ খুলতেই দেখে সাগর ওখানে নেই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রায় দু,ঘন্টা পেরিয়ে গেছে আরো। সেও মনে হয় অফিসে চলে গেছে এতোক্ষনে।
রাতে জ্বর থাকায় মনে হয় ভাইয়া এখানে নিয়ে এসেছিলো। তাই সকালে সকালে নাস্তা তৈরি করতেও ডাকেনি আজ।
এর মাঝেই সাগরের মা আসে রুমে।
— কি রে মা কেমন লাগছে এখন? রাতে খুব জ্বর উঠেছিলো তোর, আর ওই ফাজিলটা আমায় একটিবার ডাকেও নি। সকালে যখন ও নাস্তা তৈরি করছে তখন জানলাম তোর নাকি জ্বর রাত থেকেই। তাই ডাকে নি। একবার এসেছিলাম তোকে দেখতে তখন ঘুমুচ্ছিলি। এখন কেমন লাগছে তোর?

— জ্বি ফুফি মোটামুটু ভালো এখন। আর সাগর ভাইয়া মানে ও নাস্তা তৈরি করে খাচ্ছা আমাকে ডাকোও নি একটি বার? এখন নিশ্চই সারাদিন আমার উপর রেগে থাকবে সে।

— না রে, ছেলেটা আমার কিছুটা রাগি হলেও, ওর মনটা খুব ভালো।
,
,
,
আজ শরিরটা ভালো নেই বৃষ্টির। বাইরে একটু হাটাহাটি করে আবার রুমে এসে বসে আছে সে। কিন্তু এই খারাপ লাগার মাঝেও যেনো এক অদ্ভুদ প্রশান্তি কাজ করছে মনে।
তার মাঝে আবার ফোন এলো গতকালের নাম্বার থেকে।
কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে রিসিভ করলো সে।
— বৃষ্টি শুন তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে। প্লিজ একটু সময় দে আমায়।

— আচ্ছা বল।

— কাদু কাদু গলায় পুরু ঘটনাটা খুলে বলে শুভ্রতা।

এতে যেনো অবাকে চরম সীমানায় বৃষ্টি। বাঝতে পারছে না কাকে দোষ দিবে সে।
— এখনো আমায় ভুল বুঝছিস তুই?

— জানিস, সবাই বেবেছিলো তুই পালিয়ে গেছিস। তাই বাবার সম্মান বাচাতে আমাকেই সাগর ভাইয়ার সাথে বসতে হলো বিয়ের পিরিতে। আর তুই চিন্তা করিস না, আব্বু আম্মুকে আমি সব খুলে বলবো। জানিস ওরা কতো অভিমান করে আছে তোর উপর? আগামি কালই বাসায় জাবো আমি।
,
,
,
তৃষ্নার সাথে কাটানো এই কয়দিন যেনো দম বন্ধ হয়ে ছিলো আদিত্যের। নিজের অনিচ্ছার সত্বেও থাকতে হয়েছে তাকে। দু,একদিন পর বাড়ি পিরছে তারা। শুভ্রতার প্রতি ভালোবাসা কতটুকু ছিলো তা ভালোই বুঝতে পারছে এই কয়েকদিনের দুরুত্বতে। আমি আসছি শুভ্রতা।
,
,
,
সন্ধায় আকাশটা মেঘলা মেঘলা দেখে। অফিস থেকে তারাতারি বাড়ি ফিরি সাগর। কারন ছোট বেলা থেকেই সে বৃষ্টিকে ভালো করেই চিনে। গতকালের মতো নিশ্চই কোনো অঘটন ঘটাবে আজ।

বাড়িতে এসে দেখে ইন্ডিয়ান সিরিয়ালে ব্যস্ত সময় পার করছে বৃষ্টি। সাগরকে দেখেই তার দিকে এগিয়ে যায় বৃষ্টি।

গভির রাত, সাগর নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে আজও। অদ্ভুত তো বর্ষা আসার আগেই আজ দুদিন বৃষ্টি বর্ষন হচ্ছে। বাইরে রিমঝিম বৃষ্টি ফিনফিনে নিরবতার আওয়াজ। মনের মাঝে যেনো অদ্ভুত ভয় সৃষ্টি করে তার।
ঠান্ডার সাথে প্রচুর ভয়ও লাগছে তার। ইশ কালকের মতো জদি ঘুমুতে পারতাম তাহলে একটুও ভয় লাগতো না। কিন্তু ভািয়া তো কালকে কিছু বলেনি। হয়তো আজও বলবে না।
যেই ভাবা সেই কাজ। সাগরের পাসে গিয়ে গুটিসুটি মেরে সুয়ে পরে বৃষ্টি।

হটাৎ সাগর অনুভব করলো, তার বুকে ভারি কিছু পরে আছে। চোখ খুলতেই বৃষ্টিকে দেখে চমকে উঠে সে।
“” আরে এই মেয়ের সাহস তো কম না, কালকে একটু মানবতা দেখালাম বলে দেখছি ধিরে ধিরে মাথায় চরে বসছে।

To be continue…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here