ভালোবাসবে_তুমিও পর্ব ৭+৮

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__০৭
#অদ্রিতা_জান্নাত

কোনো রকমে রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম ৷ বাহিরে যেতেই সামনে অরূপকে দেখতে পেলাম ৷ ওনার কাছে এগিয়ে গেলে উনি আমাকে এক পলক দেখে আমার সামনে তার হাত ধরে হাতের ঘড়ির দিকে ইশারা করে বললেন,,,,,,

“১০ মিনিট?”

“আরে আপনি হুট করে এসে বলবেন আর আমি চুপচাপ চলে আসবো? আমি কি রেডি হয়ে বসে ছিলাম আপনার জন্য?”

উনি কিছু না বলে গাড়ির বিপরীত পাশে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পরলেন ৷ আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ির দরজা খুলে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,

“তাড়াতাড়ি উঠো ওভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে ৷”

আমি চুপচাপ গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম ৷ উনি গাড়ি স্টার্ট দিলে আমি বলে উঠলাম,,,,,,,,

“কোথায় যাচ্ছি?”

“গেলেই দেখতে পাবে ৷”

আমি আর কিছু না বলে চুপ করে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলাম ৷ কিছুক্ষন পর অরূপের ফোন বেজে উঠলো ৷ উনি গাড়ি থামিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে দিলেন ৷ ওপাশের কোনো কথাই শুনতে পারলাম না আমি ৷ কিন্তু ওপাশের মানুষের কথাটা হয়তো অরূপের ভালো লাগলো না ৷ তার চোখ মুখ দেখে এটাই বোঝা যাচ্ছে ৷ কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলেন ৷ আমাকে একবার দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,,,,,,,,

“আমি আসছি এক্ষুনি!”

বলেই ফোনটা কেটে গাড়ি থেকে নেমে গেলেন উনি ৷ আমার পাশে এসে আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“তুমি বাসায় চলে যাও ৷”

“কি? কিন্তু কেন? আপনি কোথায় না নিয়ে যাবেন আমাকে ৷”

“অন্য একদিন নিয়ে যাবো ৷ আজ কাজ পরে গেছে একটা ৷ আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে ৷ তুমি সোজা বাসায় চলে যাও ৷”

বলেই উনি আশেপাশে কিছু একটা খুঁজতে লাগলেন ৷ আমি ওনার সামনে গিয়ে বললাম,,,,,,,,,,

“যখন যা বলবেন তা মেনে নিব আমি? আমার কোনো মতামত নেই? আপনি কোথায় যাবেন? সঙ্গে আমিও যাবো ৷ নিয়ে চলুন আমাকে ৷”

আমার হাত ধরে টেনে তার সামনে থেকে সরিয়ে দিলেন ৷ তারপর হাত বাড়িয়ে একটা অটোকে ডেকে আমাকে সেখানে ইশারা করে উঠতে বললেন ৷ আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,,,,,,,,,,

“আমি অটোতে কেন যাবো? আপনি নিয়ে এসেছেন ৷ আপনি দিয়ে আসবেন ৷ আমি একা একা কোত্থাও যাবো না ৷ আপনার সঙ্গে যাবো আমি ৷”

বলেই ঘুরে চলে যেতে নিলে অরূপ আচমকা আমাকে কোলে তুলে নিলেন ৷ তারপর অটোর ভিতরে বসিয়ে দিয়ে ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বললেন,,,,,,,,

“চাচা ওকে সোজা ওর বাসায় পৌঁছে দিবেন ৷ আর তুমি ওনাকে বাড়ির রাস্তা বলে দিবা ৷ আমি ফোন করে জেনে নিব পৌঁছিয়েছো কিনা ৷”

আমি নামতে গেলে উনি হাত ধরে আটকে দিয়ে বললেন,,,,,,,,,

“থাপ্পর খেতে না চাইলে চুপচাপ বাসায় যাও ৷”

আমি ঠোঁট উল্টে বসে রইলাম ৷ অরূপ আমাকে দিকে একবার দেখে আবার বললেন,,,,,,,,,,

“এখান থেকে সোজা বাসায় যাবা ৷ আশেপাশে ঘোরাঘুরি করলে খবর আছে ৷”

বলেই আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলেন ৷ তারপর গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলেন ৷ অটো স্টার্ট দিতে গেলে আমি একপ্রকার চেঁচিয়ে বলে উঠলাম,,,,,,,

“না না ৷ প্লিজ চালাবেন না ৷”

লোকটা আমার দিকে কপাল কুচকে তাকালো ৷ আমি হালকা হেসে কিছু একটা ভেবে বললাম,,,,,,,,,,,

“ওই যে গাড়িটা আছে না? ওই গাড়িটাকে ফলো করেন প্লিজ ৷ আমি আপনাকে দ্বি- গুন ভাড়া দিব প্লিজ গাড়িটার পিছে পিছে চলেন ৷”

“কিন্তু ছেলেটা যে কইলো আপনারে বাসায় পৌঁছায় দিতে ৷”

“আরে এতো কথা বলতে হবে নাকি আপনাকে? আচ্ছা আমি আরো বেশি ভাড়া দিব ৷ প্লিজ ওই গাড়িটার পিছে পিছে যান ৷ নাহলে হারিয়ে ফেলবো যে ৷”

লোকটা আর কিছু না বলে অরূপের গাড়িকে ফলো করতে লাগলো ৷ অরূপ কি লুকাচ্ছে আমার থেকে সেটা জানতে হবে ৷ এভাবে চলতে পারে না ৷ কিছুক্ষন পর অরূপের গাড়ি একটা গলির সামনে থামলো সেটা দেখে আমিও অটো ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললাম ৷ অরূপ গাড়ি থেকে নেমে গলির ভিতরে চলে গেলেন ৷ আমি তাড়াতাড়ি করে ভাড়া মিটিয়ে অরূপের পিছন পিছন যেতে লাগলাম ৷ এইখানে ওনার কি কাজই বা থাকতে পারে? জায়গাটা বেশ নির্জন ৷ আশেপাশে কোনো মানুষ নেই ৷ একটা গলি শেষ হতেই তার দুই পাশে আবার সামনে ঠিক সেইম গলি ৷ একদম চৌরাস্তার মতো ৷ পথ হারিয়ে ফেললে এখান থেকে বের হওয়া কোনো ভাবেই সম্ভব নাহ ৷ তবুও মনে সাহস নিয়ে অরূপের পিছনে পিছনে যাচ্ছি আমি ৷ জানিনা উনি জানলে কি করবেন আমার ৷ একটু পর একটা বড় রাস্তার মধ্যে ঢুকে পরলাম আমরা ৷ এতো ছোট ছোট গলি পেরিয়ে এতো বড় রাস্তা তাও এখানে? বেশ অবাক হলাম ৷ কিন্তু অরূপ যাচ্ছেটা কোথায়? কি করতে চাইছে সে? আমি আরেকটু তাড়াতাড়ি হেঁটে সামনে এগিয়ে গেলাম ৷

হঠাৎ পিছন থেকে কেউ আমার হাত টেনে ধরলো ৷ কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম আমি ৷ একেই হয়তো বলে চুরি করতে গিয়ে ধরা পরে যাওয়া ৷ আরো একটু টেনে আমাকে তার দিকে ঘুরালো ৷ কিন্তু সামনের ব্যাক্তিকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম আমি ৷ আমার হাত ধরে সে ঝাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,

“শ্রেয়া? তুমি কি করছো এখানে?”

আমি কিছু না বলে পিছনে তাকালাম ৷ অরূপ অনেকটা দূরে চলে গেছেন ৷ এখন না গেলে হারিয়ে ফেলবো আমি ওনাকে ৷ তুহিনের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,

“হাত ছাড়ুন প্লিজ ৷ আপনার সঙ্গে পরে কথা বলবো ৷ এখন হাত ছাড়ুন নয়তো হারিয়ে ফেলবো আমি ৷ তুহিন হাতটা ছাড়ুন ৷”

“শ্রেয়া? কি হয়েছে তোমার? কি হারিয়ে ফেলবে? তুমি…?”

আমি পিছনে একবার তাকিয়ে দেখি অরূপ আরেকটা গলির ভিতর ঢুকে গিয়েছেন ৷ তুহিনের হাত ঝাটা মেরে সরিয়ে রেগে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,

“আপনার কি কোনো কাজ নেই? খালি আমার পিছেই পরে থাকেন কেন? আমাকে কেন ফলো করছেন আপনি? বলেছি না আমার থেকে দূরে দূরে থাকতে ৷ তবুও কেন শুনছেন না? কি চান আপনি? আর এভাবে রাস্তায় হাত ধরার মানে কি? প্লিজ আপনি আমার পিছু নিবেন না ৷ আপনার কাজে আপনি যান ৷ দয়া করে আমার পিছু নিবেন না ৷”

বলেই পিছনে একবার তাকিয়ে আবার তুহিনের দিকে তাকালাম ৷ তারপর দৌঁড়ে সামনে চলে গেলাম ৷ তুহিন ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো ৷

“তুমি কখনোই বুঝবে না আমাকে ৷ শত কথা শোনার পরেও তোমার কাছে ছুটে আসি আমি ৷ কিন্তু তুমিই আমাকে প্রত্যেকবার ভুল বুঝো ৷ কেন বুঝো না আমাকে? কেন আমি এরকম করি সেটা জানতে চাও না শ্রেয়া?”

ব্যথিত চোখে শ্রেয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে পিছনে ফিরে তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হাঁটতে লাগলো ৷





সামনে এসে আশেপাশে খুঁজেও কোত্থাও অরূপকে পেলাম না ৷ মূহুর্তের মধ্যেই কোথায় চলে গেলেন উনি? উফ আরেকটুর জন্য ধরতে পারলেন না ৷ কিন্তু গেলেনটা কোথায়? আশেপাশে কোনো বাড়ি ঘর দেখতে পাচ্ছি না ৷ সামনে পিছনে সব গলি দেখা যাচ্ছে ৷ এতো গুলো জায়গায় কোথায় খুঁজবো আমি তাকে? আবার আমি এখান থেকে বের হবো কি করে? কোথা থেকে কীভাবে এসেছিলাম সেটাও গুলিয়ে ফেলেছি ৷ পুরো জায়গাটা একটা গোলকধাঁধার মতো ৷ যেখানেই যাই না কেন অাবার সেই জায়গায়ই ফিরে আসি মনে হচ্ছে ৷ বের হবো কি করে আমি আবার অরূপকেও বা খুঁজবো কোথায়? উফ মাথা কাজ করছে না আমার ৷ এ কোন বিপদে পরলাম আবার ৷ আরেকটু সামনে এগিয়ে আশেপাশে খুঁজতে লাগলাম ৷

হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠলো ৷ চমকে উঠলাম আমি ৷ আশেপাশে একবার তাকিয়ে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকালাম ৷ মায়া আপু আগে যেই নাম্বার থেকে ফোন করেছিল এটা সেই নাম্বারই ৷ আপু ফোন দিয়েছে তাহলে ৷ তড়িঘড়ি করে রিসিভ করে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,

“আপু কোথায় তুই? কাল সারাদিন ফোন কেন বন্ধ ছিল? কতবার ফোন করেছি জানিস? তুই কোথায়? ঠিক আছিস তো তুই?”

“শ্রেয়া শান্ত হ আগে ৷ এভাবে এতো গুলো প্রশ্ন একসাথে করলে আমি বলবো কীভাবে? ফোনটা অফ করে রেখেছিলাম আমি ৷ কারন কোনো ফোন আসলে শব্দ হবে পরে যারা আমাকে আটকে রেখেছে তারা জানতে পেরে যাবে ৷ আর গতকাল সারাদিন ওরা আমাকে অজ্ঞান করে রেখেছিল শ্রেয়া ৷”

“কারা তোকে আটকে রেখেছে?”

“আমি জানি না শ্রেয়া ৷ তাদের চেহারা দেখতে পাই নি আমি ৷ আমি বুঝতে পারছি না কি শত্রুতা ওদের আমার সাথে ৷ শ্রেয়া আমি মিথ্যা বলছি না ৷ বিশ্বাস কর ৷ আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে এখানে ৷ বের কর আমাকে প্লিজ ৷”

“তুই কোথায় আছিস মায়া আপু? আমি তো নিজেই বুঝতেছি না কি করবো ৷ কোনো একটা উপায় তো বল ৷ জায়গাটার নামটা তো বল ৷ নাহলে খুঁজবো কি করে আমি?”

“শ্রেয়া এই ঘরের মধ্যে একটাও জানালা নেই ৷ একটা আছে কিন্তু সেটা অনেক উপরে ৷ আমার নাগালের বাহিরে ৷ আর দরজা বাহির থেকে লাগানো ৷ আমি নিজেও বের হতে পারছি না কোনো চেষ্টা করেও ৷ কিছু একটা কর প্লিজ ৷”

“কি করবো আমি? আমি নিজেও জানিনা ৷ আমি নিজেও একটা জায়গায় আটকে গেছি বের হতে পারছি না ৷ জায়গাটার নামও জানিনা ৷”

“তুই কোথায়?”

“জানি নাহ আমি ৷”

কিছু ক্ষন চুপ থেকে ভাবতে লাগলাম কি করবো? হঠাৎ কিছু একটা মাথায় আসতেই বলে উঠলাম,,,,,,,,

“মায়া আপু আছিস তুই?”

“কি হয়েছে?”

“তোর ফোনের লোকেশান অন কর কুইক ৷ লোকেশান ট্র্যাক করলে পাওয়া যাবে ৷ তাড়াতাড়ি কর ৷”

“কিন্তু তুই পারবি?”

“হ্যাঁ কীভাবে করতে হয় জানি আমি ৷ তুই একটু তাড়াতাড়ি কর প্লিজ ৷”

“হ্যাঁ হ্যাঁ করেছি দেখ ৷”

“আচ্ছা ফোন কাটবি না আর লোকেশান অফ করিস না ৷ যেরকম বলবো সেরকমটা করিস প্লিজ ৷”

“আচ্ছা ৷”

কোনো রকমে বের করে দেখি আপুর লোকেশান আর আমার লোকেশান সেইম জায়গায় ৷ এটা কি করে হতে পারে? এখানে কোথাও তাহলে আপুকে আটকে রাখা হয়েছে? কিন্তু কে আটকে রেখেছে? একদিক দিয়ে আমার খোঁজাটা একটু সহজ হয়ে গেল ৷ এখন খুঁজে পেলেই হবে ৷ কিন্তু অরূপ গেল কোথায়? ওনার কথা পরে ভাবা যাবে ৷ আগে আপুকে খুঁজে এই জায়গাটা থেকে যে করেই হোক বের হতে আমাকে ৷

ফোন কেটে দিয়ে সামনে এগিয়ে খুঁজতে লাগলাম ৷ একটু সামনে যেতেই একটা গোডাউন দেখতে পেলাম ৷ কিন্তু তার সামনে বেশ কয়েকটা লোক পাহারা দিচ্ছে ৷ আমি আস্তে আস্তে পিছনের দিকে চলে গেলাম ৷ পিছনের দিকে আশেপাশে গাছপালা দিয়ে ভরা ৷ মায়া আপু যেমনটা বলেছিল এই গোডাউনের পিছনে ঠিক ওরকম একটা ছোট জানালা আছে ৷ তবে অনেক উপরে ৷ আশেপাশে তাকাতেই বেশ কয়েকটা বড় বড় ইট পেলাম ৷ সবগুলো সেই জানালার বরাবর নিচে রেখে উঁচু টুলের মতো বানালাম ৷

সাবধানে আস্তে আস্তে সেই ইটগুলোর উপর পা রেখে জানালাটা ধরে দাঁড়ালাম ৷ জানালা দিয়ে ভিতরে দেখতে যাবো ঠিক তখনি পিছন থেকে কেউ আমার মুখ চেপে ধরলো ৷ তাই চাইলেও ভিতরে কি আছে দেখতে পেলাম না ৷ ছটফট করে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম ৷ কিন্তু ছাড়াতে পারলাম না ৷ মুখের মধ্যে কিছু একটা স্প্রে করতেই চোখ বুজে আসলো ৷
#ভালেবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__০৮ (বোনাস)
#অদ্রিতা_জান্নাত

চোখ খুলতেই নিজেকে একটা রুমের মধ্যে পেলাম ৷ এটা অন্য কোনো রুম না ৷ আমার নিজেরই রুম ৷ কিন্তু আমি এখানে এলাম কি করে? আমি তো মায়া আপুকে খুঁজতে গিয়েছিলাম ৷ হ্যাঁ খুঁজেও পেয়েছিলাম ৷ কিন্তু তখন কে আমার মুখ চেপে ধরলো? আর কে-ই বা আমাকে এখানে আনলো? উফ মাথায় ঢুকছে না কিছু ৷ মাথা ধরে উঠে বসলাম আমি ৷ ঠিক তখনি আম্মু ঘরে আসলো ৷ আমাকে বসে থাকতে দেখে তড়িঘড়ি করে আম্মু আমার সামনে এসে বসে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“শ্রেয়া তুই ঠিক আছিস? তোর কোথাও খারাপ লাগছে না তো?”

“আম্মু কি হবে আমার?”

আম্মু একটা জুসের গ্লাস আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“জুসটা শেষ কর আগে ৷ তারপর কথা বলিস ৷ নিজের একটুও খেয়াল রাখতে পারিস না ৷”

আম্মুর কথার মানে কিছুই বুঝলাম না আমি ৷ তবুও জুসটা নিয়ে খেয়ে নিলাম ৷ পিপাসা পেয়েছিল অনেক তার উপর আমাকে না খাইয়ে ছাড়বে না সে ৷ খালি গ্লাসটা আম্মুর হাতে দিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,,

“এবার বলো আমি এখানে এলাম কি করে?”

“আচ্ছা তুই কি নিজের একটুও খেয়াল রাখতে পারিস না? তুই কি ছোট এখনো? রাস্তাঘাটে এভাবে অজ্ঞান হয়ে গেলে কি হবে বল?”

“অজ্ঞান? আমি কখন অজ্ঞান হলাম ৷ যতোটুকু মনে আছে কেউ আমাকে অজ্ঞান করে দিয়েছিল ৷”

“এসব আলতু ফালতু কথা কম বল ৷ তোকে অজ্ঞান করবে কে? পাগল হয়ে গেছিস?”

” না আম্মু.. আচ্ছা বাদ দাও ৷ এখানে এলাম কি করে আমি? কে এনেছে আমাকে এখানে?”

“আকাশ!”

আমি অবাক হয়ে বললাম,,,,,,,,,,

“কিহ?”

“এতো অবাক হবার কি হলো?”

“আকাশ ভাইয়া তো দেশের বাইরে ৷ এখানে কীভাবে আসবে?”

“ওর হয়তো কাজ শেষ তাই বিডিতে ব্যাক করেছে ৷ তাতে প্রবলেম কি তোর?”

“আমার আবার কি সমস্যা হবে? কিন্তু সে আমাকে কোথায় পেয়েছে?”

“তুই নাকি ওর গাড়ির সামনে পরে গিয়েছিলি ৷ তাই ও নিজেই বাসায় নিয়ে এসেছে তোকে ৷”

আমি আর কিছু বললাম না ৷ জানিনা কেন আকাশ ভাইয়া মিথ্যা বললো ৷ কি চান উনি? আকাশ হচ্ছে অরূপের চাচাতো ভাই ৷ বয়সে অরূপের থেকে অল্প ছোট কিন্তু দেখে সমবয়সী মনে হয় তাদের ৷ পড়াশুনা করতে দেশের বাইরে ছিল প্রায় ছয় বছর ৷ ছয় বছর পর দেশে আসলেন তিনি ৷ দেশে থাকতে প্রায়ই কথা হতো আমাদের ৷ কিন্তু তখন জানতাম না যে অরূপ ওনার ভাই ৷ নয়না মায়ের মাধ্যমেই আকাশ ভাইয়াকে চিনি আমি ৷ কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না ৷ মায়া আপু, তুহিন, অরূপ আর আকাশ ভাইয়া সেইম জায়গায় সেইম সময়ে কি করছিলেন? মায়া আপুকে আটকে রাখার মধ্যে তাদের কোনো হাত নেই তো আবার? কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না ৷ আকাশ ভাইয়াও মিথ্যা কেন বললেন? অরূপ কোথায়? বাসায় ফিরেছেন উনি?

আম্মু রুম থেকে চলে যেতে নিলেই তাকে ডেকে আমি বলে উঠলাম,,,,,,,,,,

“আম্মু? অরূপ কি বাসায় এসেছে?”

“না তো ৷ এখনো ফিরে নি ৷ তুই তো ওর সাথে গিয়েছিলি ৷ কোথায় গিয়েছে জানিস না?”

“না ৷ আচ্ছা আকাশ ভাইয়া কি বাসায় আছে এখন?”

“হুম ৷ ছেলেটাকে বলেছি তুই না উঠা পর্যন্ত অন্তত থাকতে ৷”

“আচ্ছা তুমি যাও ৷”

আম্মু চলে গেল ৷ আমি বিছানা থেকে নেমে অরূপের নাম্বারে ফোন দিলাম ৷ রিং হচ্ছে কিন্তু উনি ধরছেন না ৷ কয়েকবার দিলাম তবুও ধরলেন না ৷ টেনশান বেড়ে যাচ্ছে আমার ৷ অরূপ কোথায় আপনি? আমার এখন ভয় করছে অনেক ৷ ফোন রেখে নিচে চলে গেলাম ৷ নিচে গিয়ে দেখি আকাশ ভাইয়া নিচে একা একা সোফায় বসে আছেন আর মোবাইল দেখছেন ৷ আমি ওনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,,,,,,,,

“আপনি কেন মিথ্যা বললেন ভাইয়া?”

কপাল কুচকে ভাইয়া আমার দিকে তাকালেন ৷ নিজের ফোন পকেটে ঢুকিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,,,,,,,,,

“ঠিক আছো তুমি? তোমার শরীর ঠিক আছে তো?”

“আমি একদম ঠিক আছি ৷ তার আগে আপনি বলুন আপনি কেন মিথ্যা বললেন?”

“মিথ্যা কোথায় বলেছি আমি?”

“আমি নাকি আপনার গাড়ির সামনে অজ্ঞানরত অবস্থায় পরেছিলাম ৷ কথাটা কি সত্যি?”

উনি চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,

“হ..হ্যাঁ মিথ্যা কেন হবে? যা সত্যি তাই বলেছি ৷”

“তো আপনি বিডিতে ফিরেছেন কবে? আজ নাকি আরো আগে?”

“তুমি আমাকে সন্দেহ করছো শ্রেয়া?”

“সন্দেহ না করার মতো কিছুই নেই ৷ আপনাদের সবাইকে সন্দেহ হচ্ছে আমার ৷ কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ্যা নিজেই বুঝতে পারছি না আমি ৷”

“যুক্তি দিয়ে বিবেচনা করো ৷ তোমার সব প্রশ্নের উত্তর তোমার মধ্যেই আছে ৷ মমের সাথে দেখা করতে হবে ৷ আজ আসি তাহলে ৷ ভালো থেকো ৷”

বলেই চলে গেলেন তিনি ৷ আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম ৷ কিন্তু উনি বলে গেলেন কি? ‘আমার সব প্রশ্নের উত্তর আমার মধ্যেই আছে?’ কিন্তু কি করে?

___________________

সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে কিন্তু অরূপ এখনো বাসায় আসেন নি ৷ তার ফোন এখন বন্ধ ৷ ওই বাড়িতে ফোন করে জেনেছি যে উনি এখনো ওই বাড়িও যান নি ৷ চিন্তা হচ্ছে এখন ৷ কোথায় উনি? কি করছেন? কিচ্ছু জানি নাহ ৷ কিছুক্ষনপর কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে নিচে ছুঁটে চলে গেলাম ৷ দরজা খুলে অরূপকে দেখে শান্তি পেলাম ৷ কিন্তু ওনাকে অন্য রকম লাগছে আজ ৷ মাথার চুলগুলো পুরো এলোমেলো ৷ ফর্সা মুখটাও শুকিয়ে কেমন যেন হয়ে গেছে ৷ তার গায়ের সাদা রঙের শার্টে ধুলো লেগে রয়েছে ৷ আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি আমাকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে চলে গেলেন ৷ যাওয়ার সময় তার গাঁ থেকে সিগেরেটের গন্ধও পেয়েছি আমি ৷ আশ্চর্য উনি সিগেরেট খেয়েছেন? কিন্তু কেন?

আমি দরজা লাগিয়ে রুমে চলে এলাম ৷ কিছুক্ষন পর উনি লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বের হলেন ৷ আমাকে একবার দেখে চুল মুছতে মুছতে ব্যালকনিতে চলে গেলেন ৷ আমিও তার পিছু পিছু গেলাম ৷ গিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,

“কোথায় ছিলেন আপনি সারাদিন?”

উনি কিছু বললেন না ৷ আমি আবার বললাম,,,,,,,,

“অরূপ প্লিজ বলুন ৷ কোথায় ছিলেন আপনি? কি এমন কাজ করেন সারাদিন?”

আচমকা উনি আমাকে দেয়ালে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,,,,,,,,,,,,

“আমার পিছু কেন নিয়েছিলে?”

কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,,,,,,,,,,

“কককোথায়? আআমি কেন আপনার পপপিছু নিবো ৷ ছছছাড়ুন অামাকে ৷”

“জানো? তোমাকে কত জায়গায় খুঁজেছি আমি? কিন্তু তুমি তো আকাশের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছিলে ৷”

আমি অবাক হয়ে বললাম,,,,,,,,,,,

“কিহ? আকাশ ভাইয়ার সাথে আমি কেন ঘুরবো? আমি তো আপনাকে খুঁজছিলাম ৷ কিন্তু পাই নি ৷ তাই…”

“তাই তুমি সময় কাটাতে আকাশের সাথে ঘুরে বেড়াবে?”

“আরে আজব তোহ! আমি বলছি তো আকাশ ভাইয়ার সাথে ঘুরি নি আমি ৷ আর কেনই বা ঘুরবো আমি?”

“আমি তোমাকে ভালো করেই চিনি ৷ ছেলে পাল্টানো তো তোমার স্বভাব ৷ আর স্বভাব কি সহজে বদলায় কখনো?”

“চুপ করুন প্লিজ ৷ কেন দোষ দিচ্ছেন আমাকে ৷ আমি কি কোনো প্লে গার্ল? যে ক্ষনে ক্ষনে ছেলে পাল্টাবো? আমি নিজেই বুঝতে পারছি না কার দোষ আমাকে দিচ্ছেন আপনি ৷ আর কেনই বা দিচ্ছেন? আমি কিছু করি নি কতবার বলবো আমি? আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম ভাইয়া তাই আমাকে বাড়িতে দিয়ে গেছে ৷ এর বেশি কিছুই না ৷”

“তুমি বললা আর আমি বিশ্বাস করবো? তোমার মতো মেয়েদের চিনি আমি ৷”

ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম অরূপকে ৷ রাগে চোখে পানি এসে পরেছে ৷ হাত পা কাঁপছে ৷ যার জন্য কিছু বলতেও পারছি না আমি ৷ তবুও কোনো রকমে চোখ মুছে বলে উঠলাম,,,,,,,,,,

“আপনি আদো কোনো মানুষ নাকি জানা নেই আমার ৷ নিজের উপরই ঘৃণা হচ্ছে এখন ৷ এটা ভেবে যে আমি আপনার মতো এতোটা নিচু মনের ছেলেকে ভালোবেসেছিলাম ৷ আজ থেকে আপনার আর আমার পথ আলাদা ৷ বেরিয়ে যান এই বাড়ি থেকে ৷ আর কোনো দিনও আসবেন না আমার চোখের সামনে ৷ আপনার কোনো কথা মানতে বাধ্য নই আমি ৷ এমন একদিন আসবে যেদিন আপনি আপনার কাজগুলোর জন্য আফসোস করবেন ৷ কিন্তু অতীত কখনো ফিরে আসে না তাই অতীতের ভুল গুলোও শুধরানো যায় না ৷ চলে যান আপনি এখান থেকে ৷ সময় মতো ডিভোর্স পেয়ে যাবেন!”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

(যতটুকু পেরেছি লিখেছি কেউ ছোট বলবেন না প্লিজ ৷ আর সব কিছু সঠিক সময়ে ক্লিয়ার করতে আমার কিছুটা টাইম লাগবে ৷ তাই সবাই একটু ধৈর্য্য ধরুন)
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

(আজকের পর্ব কিন্তু মোটেও ছোট হয় নি😒 তবুও রাতে আরেকটা পর্ব দেয়ার চেষ্টা করবো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here