ভালোবাসার ভেজা সন্ধ্যে পর্ব ৩

#ভালোবাসায়_ভেজা_সন্ধ্যে
#রোকসানা_রাহমান

#পর্ব (৩)

অনুভবের নিশ্বাসের ছোয়া বাজছে রিপ্তির কানে। ভয়ে তার ভেতর ধুরুম ধুরুম বাদ্যযন্ত্র বাজছে। এক ঝলক চোখ মেলাতে রুমের কুটকুটে কালো অন্ধকার দেখে বুঝতে পেরেছে এখনো সকাল হয়নি। তারমানে গভীর রাত। হয় তো রাতের শেষপ্রহর। সময়টা দেখার মতো সাহস জুগিয়ে উঠতে পারছেনা রিপ্তি। তার বালিশের নিচেই ফোনটা রাখা। এদিকে অনুভবের নিশ্বাসধ্বনি আরো ঘন হয়ে আসছে রিপ্তির কানে। কি হচ্ছে? কি হতে চলেছে? নানিই বা কোথায়? মনের ভেতর খচখচ অনুভূতিকে আর প্রশ্রয় দিতে পারছেনা রিপ্তি। গলা ছেড়ে চিৎকার করে উঠলো,,,

“” নানি, কই তুমি? আমাকে একলা রেখে কোথায় চলে গেলে? লাল ব্যাঙ আমাকে খেয়ে ফেলতে এসেছে? ও মা গো, ও বাবা গো,ও নানি গো!””

রিপ্তির চিৎকারের বিপরীতে তীর্যক কন্ঠ ভেসে উঠলো,,

“” ঐ ছেরি বাচ্চাগো লাহান কান্দস ক্যান? তুই কি আমারে শান্তি দিবিনা? টয়লেটে বইসা এতো অশান্তি আমি কেমনে সহ্য করুম? আর একবার চিল্লালে চড় দিয়া দাঁত ফালাইয়া দিমু!””

রুমের ভেতর লাগোয়া শৌচালয় থেকে নানির কন্ঠ পেয়ে রিপ্তি উঠে বসেছে। রুমভর্তি নীল আলোয় রিপ্তির মনে খটকা। তাহলে কি সে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো?? তারমানে সবই মনের ভুল? মাথার উপরে পাখাটাও তো ঘুরছে। রিপ্তি গভীর মনোনিবেশ বিছানায় ফেলতেই মিহি সুর কানে এলো,,,

এখন অনেক রাত
তোমার কাধে আমার নিশ্বাস,,
আমি বেঁচে আছি তোমার ভালোবাসায়
ছুয়ে দিলে হাত……(গান)

সুরটা মন্থরগতিতে দুরে চলে যাওয়ায় রিপ্তি আর কিছু শুনতে পাচ্ছেনা। তবে গানের প্রথম দুটো লাইন কান ছেড়ে মগজে পৌছে গিয়েছে। তাহলে কি সব বাস্তব ছিলো?? বাস্তব আর অ-বাস্তবের মাঝে পড়ে রিপ্তি রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। পায়ের গতি বাড়িয়ে কিছুদুর এগুতেই অনুভবকে দেখতে পেয়ে থমকে দাড়িয়েছে। এতো রাতে এই ছেলে বাড়ির মধ্যে হাঁটাচলা করছে কেন? মাথার ভেতর কি ফন্দি আঁটছে?? রিপ্তি আর থমকে দাড়াতে পারলোনা। অনুভব নিজের রুমে ঢুকতে যাবে ঠিক তখনি রিপ্তি দরজা আটকে দাড়ালো। সময় খরচ না করে সোজা প্রশ্ন,,,

“” আপনি আমার রুমে এসেছিলেন তাইনা?””

রিপ্তির প্রশ্নে অনুভবের চোখ স্বাভাবিকের তুলনায় হালকা বড় হয়েছে। তবে তা কয়েক সেকেন্ডের জন্য। বুকটা টানটান করে হাতদুটো বুকে বাধলো। মাথাটা ডানদিকে সামান্য কাত করলো। সবসময়ের মতো সেই ঝলমলে হাঁসি ঠোঁটে এনে একটা ছোট্ট নিশ্বাস ছাড়লো। যার মানে এবার তুমি তোমার কথার গাড়ী স্টার্ট দিতে পারো!

অনুভবের খুটিনাটি সবকিছুই রিপ্তির চোখে পড়লো। এতো সুক্ষ বিষয়গুলোও রিপ্তির চোখে বিরক্ত জায়গা করে নিচ্ছে। নিজের প্রশ্নের উত্তর না পাওয়াতে রাগে ফুসছে। এতো বড় কান্ড করে এমন ভাবসাব? অনুভবের দাড়ানোর ভঙ্গিটা ও একদম সহ্য করতে পারছেনা। চোখ,মুখ খিচে অনুভবের হাতদুটো টানছে। বারংবার শক্তি প্রয়োগে যখন ব্যর্থ রিপ্তি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,

“” আপনি জানেন আপনি কতটা বিরক্তকর মানুষ? শুধু বিরক্তকর না অসহ্য৷ আমার ইচ্ছে করছে আপনার চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে। উফ! আপনার আচরনে আমার আলুথালু অবস্থা।””

রিপ্তির অপ্রসন্ন বাক্য শেষ হতেই অনুভব নিজের মাথা নিচু করে আনলো। রিপ্তির মুখের সামনে মাথাটা এমনভাবে নুয়েছে যে তার চেহারা দেখা যাচ্ছেনা। কালো ঝলমলে চুলের বনের ঢেউয়ের দিকে বিস্ময়দৃষ্টি রেখে রিপ্তির প্রশ্ন,,,

“” আপনি চাচ্ছেন আমি সত্যি আপনার চুল টেনে দেই?””

রিপ্তির প্রশ্নে অনুভব মাথা উচু করে হেঁসে উঠলো। উচ্চহাসি,চোখের পাতা বন্ধ তবে কাঁপছে। রাতের অন্ধকার আলোয় অনুভবের ডান চোখের পাতায় ছোট্ট লাল তিল স্পষ্ট দেখতে পারছে রিপ্তি। রিপ্তির মনোকন্ঠে অবিশ্বাস্য প্রশ্ন! এখানেও বুঝি তিল হয়?? মানুষটা এমন চোখ বন্ধ করে হাঁসছে কেন? তিল দেখানোর জন্য? এটা এমন কি আহামরি?

“” এতো হাঁসির কি হলো? আমি কি জোকস শুনিয়েছি? নাকি আমাকে দেখে আপনার জোকার মনে হয়? আমার কথাতে কি সংয়ের রঙ মেশানো থাকে যে আপনি শুধু হাঁসেন? আপনার ভেতরে কিসের প্যাচ পাকাচ্ছেন বলুনতো। আমার সহজ সরজ বাবার সব লুট করতে আসেননি তো? ঠিক ঠিক বলুন নাহলে কিন্তু!””

রিপ্তির কন্ঠের স্বর ধীরে ধীরে জোর পাচ্ছে সাথে চোখটাও পাকিয়েছে। হুমকি দিচ্ছে নাকি ভয় দেখাচ্ছে? রিপ্তি কিন্তুতে থেমে যাওয়াতে অনুভবের হাঁসিও থেমেছে। তবে ঠোঁটদুটো এখনো দু’দিকে প্রসারিত। শব্দহীন হাঁসি রেখে রিপ্তির বড় হয়ে আসা চোখে চোখ রাখলো। কিছু সময় পার করে ছোট্ট করে বললো,,

“” মায়াক্ষী!””

রিপ্তির চটপট উত্তর,,

“” মানে?””

অনুভব কিছু শুনেনি এমন ভাব ধরলো। রিপ্তির দু’কাধ চেপে ধরে পাশে সরিয়ে দিলো। রিপ্তিকে কিছু বুঝার সময়টুকু না দিয়ে নিজের রুমের দরজায় খিল টেনেছে।

~~~

আজ বিয়ে। একটুপর বরপক্ষরা রওনা হবে। রিপ্তি সকাল থেকেই সাজে ব্যস্ত। ভাইয়ের বিয়েতে ভারী গহনা আর ভারী কাজের লাল লেহেঙ্গা পড়বে এটা তার পুরোনো ইচ্ছে। কিন্তু লেহেঙ্গা গায়ে জড়াতেই তার মনে হলো আয়নার সামনে কোনো লাল ব্যাঙানী দাড়িয়ে। তাই সে লাল লেগেঙ্গা ফেলে গোলাপী আর কমলা রঙের মিশ্রণের লেহেঙ্গা পড়েছে। ঠোঁটে গাঢ় গোলাপী লিপস্টিক,চোখটানা কাজল,মাঝ সিথিতে পুতির টিকলি পড়লো। চুলে চিড়নে পড়তেই বাবার তাড়া কন্ঠ।

ভাইয়ের সাথে বসবে বলে রিপ্তি বরের গাড়ীর দিকে এগুলো। দরজা খুলতেই অনুভবের চোখে চোখ। ভাইয়ার অপর পাশে অনুভব বসে। কালো পাজামার সাথে লাল পান্জাবী পড়া। চোখে বিরক্তের আভাস ফুটলেও সাথে সাথে তা ভ্যানিশ,ভাগ্যিস লাল লেহেঙ্গা পড়িনি তাহলে মনে হতো,লাল ব্যাঙ আর ব্যাঙানি শ্যাওলা পুকুরে লাফাচ্ছে!

রিপ্তির ভাই অনুভবের দিকে চেপে রিপ্তির বসার জায়গা করে দিয়েছে। কিন্তু সে সেখানে বসবেনা। এই অসভ্য লাল ব্যাঙটাকে কিছুতেই ভাইয়ার সাথে বসতে দিবেনা কিছুতেইনা!

“” আমি মাঝে বসবো। ভাইয়া এদিকে সরে এসো।””

বোনের এমন অদ্ভুত আবদারে রাসেল অবাক। দুটো ছেলের মাঝখানে বসবে এটা কেমন দেখাবে? রাসেল কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিপ্তির কঠিন গলা,,

“” তুমি এদিকে আসবে নাকি তোমার কোলে বসে পড়বো?””

রাসেল অনুভবের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে সরে এসেছে। রিপ্তিও জায়গা পেয়ে চট করে বসে পড়লো। চুল ঠিক করা বাহানায় অনুভবের মুখে চুলের বারি দিলো,জামা ঠিক করতে গিয়ে কনুই দিয়ে পেটে গুতো দিলো। অবশেষে নিজের উচু হিল অনুভবের পায়ের উপর শক্ত করে চেপে রেখে বললো,,

“” আহ! শান্তি। ভাইয়া এসিটা অন করতে বলো তো।!””

~~~

গাড়ী দৌড়াচ্ছে নাকি উড়ছে বোধগম্য হচ্ছেনা রিপ্তির। মাঝখানে বসে থেকে সে আরাম পাচ্ছেনা। দুরের জার্নি হবে। বিয়েটা পাশের গ্রামের হলেও গাড়ীপথ অনেক ঘুরে যেতে হবে। গায়ের আঁকাবাঁকা পথ,সবুজ,সোনালী ফসলির ঢেউ না দেখলে কি মন শান্তি হয়? রিপ্তির মন উশখুশ করছে। বারবার জানালায় উকি দিচ্ছে কিন্তু কিছুই দেখতে পারছেনা৷ এদিকে ভাইয়ার পাশে লাল ব্যাঙকে বসতে দিতেও মন নারাজ। রিপ্তি অসহায়ভঙ্গিতে বরসাজের ভাইয়ার মুখে তাকালো,,

“” এসি অন করা,আমি ভারী মেকাপেও শীতল অনুভব করছি আর তুমি ঘামছো? ভাইয়া তোমার কি শরীর খারাপ করেছে?””
“” আরে না। কঠিন যুদ্ধে যাচ্ছি তো তাই ঘাম ঝরছে।””
“” যুদ্ধ? যুদ্ধ কই পাইলা? তুমি তো বিয়ে করতে যাচ্ছো!””
“” বিয়ে আর যুদ্ধ একি ব্যাপার!””

রাসেল রিপ্তির মুখ দেখে ওর দিকে ঘুরে বসলো। মাথার পাগড়ীটা খুলে বললো,,

“” আচ্ছা বল,বিয়ে কার?””
“” তোমার!””
“” তাহলে তোরা যাচ্ছিস কেন?””
“” তোমার বিয়েতে আমরা যাবোনা?””
“” কেন যাবি? যাওয়ার কি দরকার? কনের বাড়ী গিয়ে কবুল বলে তাকে নিয়ে চলে আসবো। সিম্পল কাজ! অথচ এই সামান্য কাজেও আমার সাথে এতো পাকবাহিনী মানে আত্মীয়স্বজনের ভরপুর। তারমানে এটা কোনো সামান্য না অসামান্য কাজ। পৃথিবীর ছেলেদের জন্য এই একটা অসামান্য কাজেই বাড়ীর ভেতরের বাইরের,এমন কি দেশের বাইরের মানুষেরও সঙ্গ পাওয়া যায়। আর তারা স্ব ইচ্ছে সাজগোজসহ,হাতে রঙবেরঙের গিফট নিয়ে হাজির। কাউকে ডাক না দিলে মুখ কালো। তাহলে বুঝ এটা কত বড় কঠিন কাজ। আর এমন কঠিন কাজের জন্য একটু ঘামা তো স্বাভাবিক। বরংচ না ঘামলে অস্বাভাবিক লাগবে।””

ভাইয়ের অসামান্য কাজের ব্যাখ্যা শুনে রিপ্তির কপালও ঘেমে উঠেছে। ভাইয়ার দিক থেকে একটু সরে এসে সিটে হেলান দিতেই অনুভবের গুনগুনানি,,,

তুমি আমি আছি
এইতো পাশাপাশি
আরেকটু কাছাকাছি
ধরবো হাত
ছুবো ঠোঁট
হবে মাখামাখি!!(রোকসানা)

রিপ্তি তাৎক্ষনিক বা’পাশ ফিরলো। অনুভবও সিটে হেলান দিয়ে আছে। তার চোখ বন্ধ। তবে ঠোঁটে বাঁকাহাসি। রিপ্তি দ্রুত সোজা হয়ে বসলো। নিজের হাতদুটো ওড়নার নিচে ঘুটিয়ে নিলো। পাশ থেকে রিপ্তির ভাইয়া রাসেল বললো,,

“” অনুভব, গানটা বেশ। দেখি আবার শুনা তো। রাতে তোর ভাবীকে শোনাবো।””

দুপাশে দু’পুরুষের কর্মকান্ডে রিপ্তির সিটের সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। একটা বাইরের ছেলে বোনের সামনে অসভ্য গান গাচ্ছে আর তার ভাই,মায়ের পেটের ভাই বলছে আবার গাইতে!

অনুভব রিপ্তির অবস্থা আন্দাজে এনে মিটিমিটি হাঁসছে। রাসেলের অনুরোধ রাখতে গলা ছাড়বে ঠিক তখনি পায়ে ভিষম চাপ অনুভব করলো। জ্বলনের তেজ আসতে আসতে বাড়ছে। পায়ের দিকে চোখ পড়তেই রিপ্তি নিচু গলায় বললো,,

অসভ্য লাল কালা ব্যাঙ,,
বেশি বাড়লে,পিষে দিবো ঠ্যাং!(রোকসানা)

পাশ থেকে রাসেল আবার গলা হাঁকিয়ে উঠতেই রিপ্তি চিৎকার করে উঠলো,,

“” আমার ঘুম পাচ্ছে,ভাইয়া!””
“” ঘুম পেলে ঘুমা এমন মাইক বাজাচ্ছিস কেন?””

রিপ্তি পুনরায় সিটে হেলান দিলো। চোখ বন্ধ করে বললো,,

“” বিয়েবাড়ীতে যদি,ঝামেলা পাকাতে না চাও তাহলে চুপ থাকো। তোমার যুদ্ধের সহযোদ্ধাদেরও চুপ থাকতে বলে দাও। নাহলে কিন্তু আমি বিপক্ষে চলে যাবো!””

~~~

অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে রিপ্তি চোখ বন্ধ করে আছে। ঘুম আসছেনা৷ ঘুমানোর জন্য মাথা ঠান্ডা থাকার প্রয়োজন। তার মাথা কি ঠান্ডা আছে? মোটেও না পাশে এমন লাল ব্যাঙ থাকলে কারোই মাথা ঠান্ডা থাকার কথা না। তাই তার মাথা গরম। তবে পরিবেশ বেশ ঠান্ডা। তার এক ঝাড়িতে দুপাশের বিয়েযোদ্ধাই চুপ। এখন পর্যন্ত কোনো শব্দ কানে আসেনি। তবুও রিপ্তির চোখে ঘুম নেই। পেটের ভেতর কেমন গুড়মুড় শব্দ টের পাচ্ছে। গলা শুকিয়ে আসছে। রিপ্তি মনে মনে দোয়া-দুরুদ পড়া শুরু করে দিয়েছে। তবুও আর সহ্য করতে পারলোনা। মুখভর্তি করে বমি করে দিলো। অনুভবের লাল পান্জাবীতে!

~~~

কনেবাড়ীতে পৌছেছে অনেক্ষণ। নিয়মকানুন শেষ হতে চললো অথচ অনুভবের কোনো দেখা নেই। মানুষটা কি এখনো গাড়ীতেই আটকে আছে? আটকে থাকারই কথা। রিপ্তির আকস্মিক কান্ডটা হয়তো এখনো সামলে উঠতে পারেনি। রিপ্তি বেশ কিছুক্ষণ গাড়ীটার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার মায়া হচ্ছে,এমন একটা কান্ড করে বসবে এটা ও ভাবেইনি৷ ইশ! ময়লা কাপড়ে কি করে বিয়ে বাড়ীতে ঢুকবে? রিপ্তি মনে মনে খুবই দুঃখ প্রকাশ করছে। এগিয়ে গিয়ে কি দেখবে অনুভব কি করছে? যদি কোনো সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে তো!

রিপ্তি এক কদম এগিয়ে আবার থমকে গেলো। সামনে তৃণা দাড়িয়ে। ছোটবেলার বান্ধুবী। একি সাথে উঠাবসা,খেলাধুলা,পড়াশুনা!

“” কোথায় যাচ্ছিস?””

তৃণার প্রশ্নে রিপ্তির সংবেদন হলো। গাড়ীটার দিকে আরেকবার চাইতেই মনের দুঃখভাব গায়েব। বেশ হয়েছে। এর তো এমনই হওয়া উচিত। ছি! কি নোংরা মনমানসিকতা। ঠোঁট ছোয়া,মাখামাখি কিসব গানের কথা! এমন নোংরা গান যে গাইতে পারে তার মনও নোংরা। রিপ্তি মুখভর্তি হাসি নিয়ে বললো,,

“” কোথাও না। তোকেই খুজছিলাম। চল ভাইয়ার কাছে যায়!””

রিপ্তি উচু জুতোয় তাল ফেলে ভেতরে ঢুকলো। তারমধ্যেই তৃণা চিৎকার করে উঠলো,,

“” আরে বর আর কনে একসাথে বসেছে। চল চল ছবি তুলে আসি। পরে আর সময় পাবোনা।””

তৃণা রিপ্তির হাত ধরে টেনে স্টেজে উঠে গেলো। রিপ্তি ছবি তোলার ভঙ্গিতে ভাইয়ার গলা ধরে, সামনে তাকাতেই মুখ হা। লাল ব্যাঙ ছবিও তুলতে পারে? উনি কোনদিক দিয়ে এলো? আরে,পান্জাবীও চেন্জ? ক্যামেরা পেলো কোথায়? এমনভাবসাবে ছবি তুলছে মনে তো হচ্ছে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার!

পাশ থেকে তৃণার ডাকে রিপ্তি ভাইয়ার গলা ছেড়ে দিলো। অনুভবের দিকে কড়া চাহনি,ভেংচি কেটে হাঁটা ধরলো।যার মানে, দরকার হলে ছবি তুলবোনা। তাও আপনার ক্যামেরায় বন্দী হবোনা,হুহ!

রিপ্তির পিছপিছ তৃণা দৌড়ে এসে বললো,,

“” আরে,কোথায় যাচ্ছিস? ভাবীর সাথে তো ছবি তুলা হলোনা৷””

তৃণার কথা শোনার মাঝেই রিপ্তির চোখ আটকে আছে অনুভবের পায়ে। তার পায়ে জুতো নেই।

“” আমি তোর সাথে কথা বলছি রিপি,তুই কোথায় হারিয়ে আছিস?””

রিপ্তি দুষ্টু হাসি নিয়ে বললো,,

“” ভাইয়ার বিয়েতে,ভাইয়ার বন্ধুর জুতো হাওয়া! শুনতে কেমন লাগছে রে?””
“” মানে?””

রিপ্তি আর সময় ব্যয় করলোনা। অনুভবের দিকে এক পলক চেয়ে সোজা অন্যপাশের সিড়ির দিকে এগুলো।

রিপ্তির কান্ডে তৃণা হতভম্ব!

“” তুই ছেলেদের জুতো নিচ্ছিস কেন?””

তৃণার কথার কোনো উত্তর দিলোনা রিপ্তি। অনুভবের জুতো জোড়া চুরি করতে পেরে তার বেশ খুশি লাগছে। এই প্রথম মনে হলো,,বিয়ে মানে মজা,মজা আর মজা!

তৃণা অবুঝের মতো চেয়ে আছে রিপ্তির দিকে। তার মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। বিয়েবাড়িতে বরের জুতো চুরি করা হয় তাও কনেপক্ষেরা করে কিন্তু এখানে তো নিজেদের জুতো নিজেরাই চুরি করছে। এ কেমন বিয়ে?

তৃণাকে এমন হাবলার মতো দাড়িয়ে থাকতে দেখে রিপ্তি খিলখিল করে হেসে উঠলো। ওকে টেনে খুব সাবধানে অনুভবের পেছন দিয়ে আবারও স্টেজের অন্যাপাশে পৌছে গেলো। যেদিক দিয়ে নিজেরা এসেছিলো সেদিক দিয়ে নামবে। এক সিড়ি ছেড়ে দ্বিতীয় সিড়িতে পা পড়তেই রিপ্তি তৃণার হাত খামচে ধরে বলল,,

“” আমার জুতো কই?””

রিপ্তির প্রশ্নে তৃণা চমকিত। মেঝেতে তাকিয়ে মিনমিন করে বললো, ভাইয়ার বিয়েতে বন্ধুর সাথে সাথে ছোটবোনের জুতোও হওয়া!

রিপ্তি আর তৃণা এদিকওদিক ঘুরেফিরে কোথাও জুতো খুজে পেলোনা। দুজনেই হতাশভঙ্গিকে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। ঠিক তখনি অনুভব পাশ থেকে গান ধরলো,,

বিয়েবাড়ীর ভীরে,,
সুন্দরীর জুতো গেল হারিয়ে
সই দেখনা খুজে দেখনা
জুতোর গজালো কি পাখনা!!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here