ভালোবাসার ভেজা সন্ধ্যে পর্ব ৭

#ভালোবাসায়_ভেজা_সন্ধ্যে
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (৭)

রিপ্তি বেশ জোর প্রয়োগে দরজা খুলে ফেললো। বিস্ময় নিয়ে চেয়ে আছে লাল চাদরে মোড়ানো,আধশোয়া অনুভবের দিকে!

গভীর মনোযোগে ফোনে চোখ বুলোচ্ছে অনুভব। চোখের পাতা পড়ছেনা। কপালে ভাজ পড়ে আছে। পাতলা লাল চাদরটা দিয়ে বুক অব্দী ঢাকা। কিন্তু পায়ের পাতা দেখা যাচ্ছে। ঠোঁটের গুনগুনের সাথে দুপায়ের বৃদ্ধাআঙুলে চলছে নাচুনি নৃত্য!

রিপ্তি চড়া মেজাজ নিয়ে অনুভবের সামনে দাড়ালো,গলা উচিয়ে বললো,,,

“” সমস্যা কি আপনার? আপনি এখানে কি করে এলেন? আমি যেখানে যাবো আপনাকে সেখানেই যেতে হবে?? কেন এসেছেন এখানে?? আমাকে জ্বালাতে না পেরে পেট খারাপ হয়েছে?? আমাদের বাড়ীতে টয়লেট নেই?? এক বাড়ীর পেট খারাপ আরেকবাড়ীতে সারতে চলে এসেছেন?? আল্লাহ কি আপনার চোখে লজ্জার পাতা দেয়নি?? আপনার মধ্যে লজ্জানামক সামান্য অনুভূতির খোলসটুকু নেই?””

রিপ্তির চড়াগলার প্রশ্নসুঁচ বাকা হয়ে ফেরত আসছে। অনুভবের দিকে স্বল্প জাগরণের ক্ষতটুকুও সৃষ্টি করতে পারেনি। তার পাশে যে কেউ আছে,কেউ কিছু বলছে সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। সে তার মতো আপনমনে ফোন টিপছে। গানের সুরের টান বজায় রাখতে গলা কাঁপিয়ে টান দিলো,,,

“” কাল তো ছিলাম ভালো,,
আজ আমার কি হলো??

অনুভবের গানের মাঝেই রিপ্তি ওর ফোন কেড়ে নিলো। মেঝেতে আছাড় মেরে বললো,,

“” এতোদিন তো বোবা ছিলেন,এখন কি কালাও হয়ে গেলেন?? আমার কথা আপনার কানে ঢুকছেনা? ঢুকিয়ে দিবো??””

রিপ্তির গরম চাহনিতে খুব একটা প্রভাব পড়ছেনা অনুভবের। সবার মায়া চোখে চোখ আটকালেও অনুভবের এই গরম চোখে আটকাতেই ভালো লাগে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো রিপ্তির চোখের কোটরে ভাসছে। নাকের ডগার লালরাগটুকু ভ্রুযুগলের মাঝে রাখতে ইচ্ছে করে! যার নাম দিবে রাগটিপ!!

রিপ্তি আরেকটু কাছে এসে দাড়ালো। অনুভবের দিকে ঝুকে এসে বললো,,

“” এগুলো গান? গানকে অপমান করছেন?? আপনার কি মনে হয় ভুলভাল গান বললেই সবাই আপনার পা ধুয়ে পানি খাবে?? আপনার পা বাতাসা?? কোন দুনিয়াই হারিয়ে এসব গান খুজে আনেন? আনেন তো আনেন আবার মেয়েলি গান। বুকের আঁচলের জায়গায় বলছেন শাড়ীর আঁচল! শাড়ী পড়তে শখ হয়েছে নাকি যে গান গাইতে গাইতে শাড়ী পড়ে ফেলেছেন?””

অনুভব মিস্টি হাসলো। বেডের দেয়াল ছেড়ে সোজা হয়ে বসলো। রিপ্তির সাথে সন্ধি রেখে সেও ওরদিকে একটু ঝুকে এসেছে। ডান হাতের বৃদ্ধা আর শাহাদাৎ আঙুলসহিত রিপ্তির থুতনি চেপে ধরে বললো,,,

“” ক্রোধান্বিতা!””

রিপ্তির গরম চোখ নরম হয়ে এসেছে। গভীর আগ্রহ আর উৎসুক নয়ন। চেয়ে আছে অনুভবের অধরে। আবার কি নড়বে? বলবে কিছুবাক্য?? এই মানুষটা কেন বুঝেনা তার সামনে এলেই আমার বুকটা পিপাসায় মরিয়া হয়ে উঠে। সস্থিরচিত্ত অস্থিরচিত্ত হয়ে উঠে তার মুখের বুলি শোনার জন্য। কিন্তু কেন? কেন এতো মরিয়া? কেন এতো শুকনো তৃষ্ণা? কেন এতো উৎসুক? কিই বা শুনে মন প্রলয়ে উড়তে চায়??

রিপ্তির চোখ নরম পানিতে ছেয়ে যাচ্ছে। ছুটতে চাইছে অবাধে। কিন্তু রিপ্তি দিবেনা ছুটতে। এই মানুষটার সামনে তো নাইই। নরম পানি গরমের মাঝে মিলেমিশে একাকার হয়ে চোখের চারপাশেই বন্দী হয়ে রইলো। অনুভবের দিকে ছলছল নয়নে কোমলসুরে বললো,,

“” চলে যাননা প্লিজ!””

রিপ্তির অনুরোধের সুরটা শান্ত হলেও বড্ড বেশি জোর। অনুভবের ইচ্ছে হলো এই জোরটা ধরে রাখতে কিন্তু চাইলেই কি সব করা যায়?? তার মতিভ্রম যে এখন তার হাতে নেই। হারিয়ে গিয়েছে সে কারো মাঝে,কারো মায়ার অন্তরালে আপনমনে জায়গা করে নিচ্ছে নিজের বিস্তৃতের!

অনুভব রিপ্তির ছোয়া থেকে হাতটা দুরে সরিয়ে নিয়েছে,চোখের দৃষ্টি স্বাভাবিক। হালকা নড়ে বসলো। কিছু বলার ভঙ্গিমায় হাতটা নাড়িয়ে আবার মাঝপথেই থমকে রইলো। একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে মেঝের দিকে চোখ। ভাঙা মোবাইলের ব্যাটারী আলগা হয়ে দুরে ছিটকে আছে।

মুহুর্তেই অনুভবের সহজমুখটাতে পরিবর্তনে চলে এসেছে। রিপ্তির পুরোমুখে একবার চোখ বুলিয়ে মুচকি হাসলো। অনুভবের হাসির মানে খুজায় ব্যস্ত রিপ্তি। তারমাঝেই লাল চাদরটা টেনে অনুভব বিছানায় শুয়ে পড়লো। উল্টোঘুরে আপাদমস্তক ঢেকে গুনগুনের অস্পষ্ট সুর।

অনুভবের অকস্মাৎ কান্ডে রিপ্তি হতবাক। যদিও তার দ্বারা এমন আচরণ নতুন নয়,তবুও! মনের খুব গভীরে ছোট্ট আশা ছিলো হয়তো এবার অন্য কিছু হবে। রিপ্তি বিছানা ছেড়ে নেমে দাড়ালো,কোমড়ে দুহাতের শক্ত চাপ,তীব্র তপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো ঘনঘন। নাক ফুলিয়ে চিৎকার করে উঠলো,,

“” গায়ের জোর দেখাচ্ছেন? আপনার কি মনে হয় গায়ের জোরে সব করতে পারবেন?? দিবোনা করতে! আপনাকে ঘায়েল করতে আমি অন্যজোর দেখাবো। ভুলে যাবেননা মেয়েদের গায়ের জোর না থাকলেও অন্য জোর আছে! আর আমি সেগুলোই আপনার উপর চালান করবো,ধারালো অস্ত্রের মতো আপনার সব ক্ষত করে দিবো। হুহ!””

রিপ্তির উচুগলার কথাগুলো যেন হাওয়ায় ভাসছে। অনুভব তারমতো ভারী নিশ্বাস ফেলে ঘুমাচ্ছে। রিপ্তির দিকে তার বিচলিতভঙ্গি!

রিপ্তি আর সহ্য করতে পারছেনা। রাগের শেষপর্বের শেষ সীমানায় সে বিচরন করছে। অনুভবকে যে কি করতে ইচ্ছে করছে সেটাও বুঝে আনতে পারছেনা। ছোটবেলা সাদাকালো টিভিতে বাবার সাথে শক্তিমান দেখতো। তার অনেক শক্তি,আকাশে উড়তে পারে,যাকে তাকে নিয়ে উড়তে পারে। রিপ্তিরও ইচ্ছে হলো শক্তিমান হতে,অন্তত এই লাল ব্যাঙটাকে নিয়ে উড়ে গিয়ে কোনো নর্দমায় ফেলে দেওয়ার জন্য হলেও তার শক্তিমান হওয়ার ইচ্ছে!

রিপ্তি আর সময় ব্যয়ের অপেক্ষা না করে খাটের কর্ণারের টেবিলের দিকে এগিয়ে এলো। পানিভর্তি জগটা নিয়ে উল্টো করে অনুভবের গায়ে ঢেলে দিয়ে বললো,,,

“” আজ থেকে তোর নাওয়া,খাওয়া,শোয়া সব বন্ধ। আমাকে জ্বালানো? আমাকে রাগানো?? আমার সামনে নাটক করা? মঞ্চ সাজানো?? এর শেষ দেখবো আমি,হাতে ট্রফি নিয়ে। এই খেলার হার জিতে রিপ্তি জয়ী হবে! হবে! হবে!! হতেই হবে!!!””

সারারাতের পড়ে থাকা হিমবাসী পানির গোসল সেরে উঠতে বাধ্য অনুভব। চোখ তার গোল রসগোল্লা,মুখে বিশালআকারের গুহা,শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রতঙ্গে ফুটে উঠছে অবিশ্বাস্যতা। রিপ্তির করে ফেলা কান্ডে নয়,বলে ফেলা কথার ধরনে।

অনুভবের রুম ছেড়ে চটপট পা চালাচ্ছে রিপ্তি। তার মাঝেই ভাবীর গলা পেলো,,,

“” তোমাকে দিয়ে একটা কাজও হয়না,রাসেল। এতো ভোরে শখ করে বাজারে পাঠালাম। আর তুমি? বাজার ছেড়ে আরেক গ্রামে গিয়ে হারিয়ে বসে আছো। এই তোমার পড়াশুনার গতি?? এই ব্রেন নিয়ে জাবিতে কি পড়াশোনা হচ্ছে তোমার?? চিনোনা বললেই পারতে,আমি বাবাকেও তোমার সাথে দিয়ে দিতাম। আসলে ভুল তোমার না আমারি! আমার ভুলের জন্য আমার মেয়েটাকে তার পছন্দের মাছের ঝোল খাওয়াতে পারলাম না।””
“” এতো রেগে যাচ্ছো কেন? আমিতো..””
“” চুপ আর একটা কথাও বলবেনা৷ আমার সারাবেলাটা চলে গিয়েছে। মেয়েটাকে নাস্তা খাওয়ানো হলোনা৷ তারমধ্যে বাসায় আমিও নেই। নিশ্চয় কেঁদেকেটে বুক ভাসিয়ে ফেলেছে!””
“” এখানে কান্নার কি আছে?? রিপ্তি কি বাচ্চা? আর এমনিতেও ও বাসাতে বেলা করেই উঠে।””
“” তোমাকে বলেছিনা কথা বলবে না তাও কেন বলছো?? আমাদের দুজনের মাঝখানে তুমি কেন আসছো?? ভুল করেছো তা তো স্বীকার করছোইনা তার উপর আমাকে বিরক্ত করছো। এজন্যই আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাইনি। আমিতো জানতাম তুমি কেমন ছেলে,শুধু তোমার বাবাকে ফিরিয়ে দিতে মনে বাধা লাগছিলো তাই।””
“” মিনি,শোনো তো..””
“” চুও আর একটা কথাও বলবেনা৷ আজ থেকে তোমার নাওয়া,খাওয়া,শোয়া বন্ধ! দেখি আমার আড়ালে তোমাকে কে খেতে দেয়।””

ভাবীর কন্ঠের ধার ধরেই এগিয়ে যাচ্ছিলো রিপ্তি। কিন্তু পৌছোনোর আগেই পা আটকে গেলো। তার নিজেরই বলে আসা কথা তার কানে পুনরায় বাজবে এটা তার অভাবনীয় ছিলো। ভাবী ভাইয়াকে বলেছে,দুজনের মধ্যে ভালোবাসা আছে,একটা শক্ত বন্ধন আছে তারা বলতেই পারে। যার সাথে ভাব,তার সাথেই তো রাগ হবে। কিন্তু আমার কেন হয়? কেন হলো? উনার সাথে তো আমার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। তেমনভাবে আলাপও হয়নি। যা হয়েছে তা তো এক পক্ষের,শুধু আমারি। তাহলে?? আসলেই কি এক পক্ষের?? সবটাই কি অনিচ্ছাতে হয়েছে??

রিপ্তি, ভাই আর ভাবীকে দেখছে গভীর নয়নে। দুজনেই মেতে আছে ভালোবাসার খুনসুটিতে। বেশ লাগছে দুজনকে! একদম চমৎকার সই!! আচ্ছা আমি যখন লাল ব্যাঙের সাথে ঝগড়া করি তখন আমায় কেমন দেখায়?? বাজে দেখায়,খুব বাজে। আমাকে নয়,লাল ব্যাঙকে! বদমাশ একটা,জীবনটা আমার ত্যানা ত্যানা। কোথায় ভাইয়া আর কোথায় সে। আরে,আমি বারবার কেন ভাইয়া আর ভাবীর জায়গায় আমাদের কল্পনা করছি? তাহলে কি আমি মনে মনে উনাকে স্বামী!! ছি! ছি!! ছি!!! এই লাল ব্যাঙটা আমার স্বামী হতে যাবে কেন? দুনিয়াই কি ব্যাঙের থুক্কু ছেলের অভাব পড়েছে?? যদি কিছুর অভাব পড়ে থাকে তা পড়বে ছেড়াভবের! ছেড়াভবের বউয়ের অভাব হবে।

রিপ্তি দু’হাতে মোনাজাত তুলে উপরে তাকিয়ে দোয়া করলো,,আল্লাহ! এই দুনিয়ার শুধু মেয়ে কেন,যত ব্যাঙানি আছে সবাইকে জলদি জলদি বিয়ের আসরে বসিয়ে দাও। এই ছেলের কপালে যেন বউ না জোটে! আর ভুলেভালে যদি প্রেম হয়ে যায় তাহলে যেন ছ্যাকা খায়। আমিন!

~~~

রিপ্তি বাসি নাস্তায় মুখ ডুবিয়েছে। টিভির সামনে বসে পায়ে পা তুলে গরুর ঝোলে রুটি ভিজাতেই অনুভবের রুমে হাউকাউ।

রিপ্তি কানখাড়া করে শোনার চেষ্টা করছে ঠোঁটে ঝুলছে ছেলেমানুষি হাঁসি! মুখে হাফ রুটি ঢুকিয়ে মাংসে কাপড় পড়েছে তারমাঝেই ভাবী ছুটে এলেন। ওর পাশেই ধপ করে বসে পড়েছে। শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুখের ঘাম মুছলো। রিপ্তির জন্য রেখে যাওয়া পানির গ্লাসটা নিজের দখলে নিয়ে ঢকঢক করে পানি খাচ্ছে। রিপ্তি তৃপ্তির হাসি ছেড়ে এক টুকরো রুটি শেষ হয়ে যাওয়া ঝোল মুছে ভাবীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,,

“” ক্ষিদে পেয়েছে ভাবী? হা করো আমি খায়িয়ে দেই।””

মিন্মি কোনোরকম বাধা না দিয়ে টুপ করে রুটিটা মুখে পুড়ে বললো,,,

“” আমাদের গায়েও চোর এসেছে? তাও কাপড় চোর? ভয়ানক ব্যাপার রিপু।””
“” তোমাদের গায়ে চোর আসা নিষেধ?””
“” তা নয়,কিন্তু আমার ২৩ বছর জীবনে চুরি হওয়ার তো দুর কিছু হারিয়ে গিয়েছে তাও শুনিনি।””

রিপ্তি রুটির শেষাংশটাতে এক টুকরো মাংস লুকিয়ে ভাবীর মুখের দিকে ধরে বললো,,

“” চব্বিশ বছর জীবনেতো শোনছো! তুমি এককাজ করতে পারো,কাঁচের ফ্রেমে এই ডেটটা বন্দী করতে পারো। তারপর দেয়ালে সাজিয়ে রাখবে।””

মিন্মি,এক সেকেন্ড চুপ থেকে বললো,,

“” বুদ্ধীটা মন্দ না।””

এর মধ্যেই মিন্মির মা হন্তদন্তে দৌড়ে এলেন,,,

“” কী ভয়ানক কান্ড রে মিন্মি,শুধু অনুভব নয়,তোর জামাই আর তোর বাবার সব কাপড়ও হাওয়া! আমার মনে হয় চোর না চুন্নি এসব করেছে..””

রিপ্তির কানে চুন্নি শব্দটা আসতেই ও ভিষম খেলো। গলায় রুটি আটকে গিয়েছে। মিন্মি চটজলদি ওর মুখে পানি ধরতেই পাশ থেকে অনুভব বললো,,,

“” ঠিক বলেছেন আন্টি,চুন্নিটা মনে হয় গরুর মাংস খুব পছন্দ করে। রুমের মধ্যে কেমন মাংসের গন্ধে ভরে আছে!””

রিপ্তির গলায় এবার পানিও আটকে গেলো। নিজের মাথায় নিজেই হাতের তালু ঠেকাতে ঠেকাতে সরু চোখে অনুভবের দিকে তাকিয়ে রইলো। লাল টাওয়াল জড়িয়ে ভেজা শরীরে দাড়িয়ে সে। চোখে সন্দেহদৃষ্টি!

মিন্মি অনুভবের দিকে তাকিয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে হতাশ গলায় বললো,,

“”মা,কিছু তো করো,অনুভব ভাইয়া আর কতক্ষণ এভাবে টাওয়াল পড়ে থাকবে?””

ভাবীর কথা টেনে নিয়ে রিপ্তি উত্তর দিলো,,

“” ভাবী,উনার শাড়ী খুব পছন্দ। আর লাল রঙ হলে তো কথাই নেই। তুমি বরঙ উনাকে তোমার বেনারশিটা এনে দাও! দেখবে আহ্লাদে বারোখানা হয়ে যাবে!””

রিপ্তির কথাতে রাসেল হো হো হো করে হেঁসে উঠলেও বাকি সবাই তাজ্জব বনে রইলো। রিপ্তি ধীরপায়ে অনুভবের পাশ কেটে যেতে যেতে বললো,,,

“” নাওয়া আর শোয়ার পালা শেষ,এবার খাওয়ার পালা!””

~~~

বাসী নাস্তায় পেট ভরে, রিপ্তি আলসেভঙ্গিতে বিছানায় শুয়ে ছিলো। অনুভবকে এমন জব্দ করতে পেরেছে সেই খুশিতে তার চোখ লেগে এসেছিলো। ক্লান্তঘুম ছেড়ে উঠতে উঠতে বেলা তিনটে। এতো ভালো ঘুম হয়েছে যে,মন তার ফুরফুরা। এবার শরীরটাকে ফুরফুরা করতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন ঠান্ডা পানির লম্বা গোসল। রিপ্তি কাপড় গুছিয়ে গোসলখানায় ঢুকে দেখলো সাবান নেই। কাপড় গোসলখানায় রেখেই ভাবীকে ডাক পারতে পারতে রুম ছেড়ে বেরিয়েছে।

সাবান নিয়ে গোসলখানায় ঢুকেই রিপ্তি চিৎকার করে উঠলো,,,

“” ভাবী!””

মিন্মি ননদের কন্ঠে পেয়ে দৌড়ে এসেছে। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,,

“” কিরে কি হয়েছে?””
“” আমার কাপড় কোথায় গেলো?””
“” কাপড় কোথায় গেলো মানে?””

রিপ্তি গোসলখানার দিকে আঙুল দেখিয়ে বললো,,

“” আমিতো এখানে কাপড় রেখেই তোমার কাছে সাবান আনতে গিয়েছিলাম!””
“” কি বলিস? তাহলে কি এবার বাড়ীতে চুন্নির সাথে চোরেরও আগমন ঘটলো?””

রিপ্তির চিৎকারে বাড়ীর সকলেই উপস্থিত ছিলেন। মিন্মির মা আৎকে উঠে বললেন,,

“” কী সর্বনাশের কান্ড রে মিন্মি। এবার কি বাড়ীর মেয়ে, বউদের কাপড় ও চুরি হয়ে গেলো? এ কেমন কাপড় চোর এসেছে রে আমাদের গায়ে? এরা নির্ঘাত স্বামী স্ত্রী হবে বুঝলি?””

মিন্মির মা আন্দাজীর ঢিল ছুড়ে মারতেই পেছন থেকে অনুভবের কন্ঠ,,,

“” চোরটা ইয়াং বয়সের আন্টি। তাই ইয়াং গার্লদের কাপড় চুরি করেছে। বেশ ভদ্রও তাই আপনার কোনো কাপড়ে হাত দেয়নি।””

সকলের চোখ অনুভবের দিকে। দরজার কাছে দাড়িয়ে,হাতে ভাতের প্লেট,ভাত মাখাচ্ছে। আঙুলের আবদ্ধে দলা পাকিয়ে মুখে নিতেই রিপ্তি দৌড়ে এলো। অনুভবের ভাতের হাত টেনে নিয়ে নিজের মুখে পুড়েছে। সাথে ভাতের প্লেটটাও কেড়ে নিয়ে বললো,,,

“” আপনি যে একটা খাটি নির্লজ্জ,বেহায়া,বেশরম,কুটিল বাজ তা আজ প্রমাণ করে ছাড়লেন!””

অনুভব রিপ্তির কথা গায়ে মাখলোনা। মিন্মির মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,,

“”আন্টি আপনি চাইলে আপনার শাড়ী দিয়ে উনাকে সাহায্য করতে পারেন। বেচারী কতদিন গোসল না করে থাকবে বলুন!””

অনুভব ঠোঁটে বাকা হাঁসি নিয়ে রুম ত্যাগ করবে তার আগে রিপ্তির দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে আবার বললো,,

“” শাড়ীর সাথে সুই সুতোও গিফট দিয়েন। ফিট করতে কাজে লাগবে!””

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here