ভালোবাসি তাই ২ পর্ব -০২

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ২
#তানিশা সুলতানা

“লেজ ছাড়া বাঁদর একটা
অভি বিরবির করে বলে।
রাফিন দাঁত কটমট করে তাকায় তানহার দিকে। তানহার মুখে ঝুঁলে আছে শয়তানির হাসি।
” রাফিন ডিটেইলসে বল তো কিভাবে খাট ভাঙলো।
অভি রাফিদকে তারা দিয়ে বলে।
“হ্যাঁ হ্যাঁ ব্রো বলো তো!!
কিভাবে ভাঙলো?
তোমরা কি খাটের ওপর লুঙ্গি ডান্স দিচ্ছিলাম? না কি সাকি সাকি?
খানিকটা এগিয়ে এসে উৎসাহ নিয়ে বলে তানহা।
অভি বিরক্তির নিশ্বাস ছাড়ে। মানুষ এতোটা বেশি কথা কি করে বলে?
রাফিন দাঁতে ওপর দাঁত দিয়ে তানহাকে কিছু বলতে গিয়েও বলে না। হাত মুঠ করে থেমে যায়।
” তো বল?
এখানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করার সময় আমার নেই।
অভি ফস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলে।
“আমি আর ইশা আরাম করে খাটে বসি। তখন খাট “টান” করে ওঠে। আমি পাত্তা না দিয়ে ইশার দিকে এগিয়ে যায়। দুটো রোমান্টিক কথা বলে যেই না জড়িয়ে ধরেছি তখনই ঠাস করে খাট ভেঙে পড়ে যাই। আমি নিচে ইশা ওপরে। ব্যাস আমার কোমর শেষ।
ব্যাথায় উহহহ করে ওঠে শেষের কথাটা বলতে গিয়ে।
তানহা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রাফিনের পিঠে থাপ্পড় দিচ্ছে আর হাসছে।
রাফিন বিরক্তি নিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে খুঁড়িয়ে গিয়ে অভির পেছনে দাঁড়ায়। তানহা খেয়াল না করে অভির গায়ের ওপর পড়ে হাসতে হাসতে।
অভি শক্ত করে তানহার হাত ধরে। থেমে যায় তানহা। হা করেই তাকায় অভির দিকে। লাল লাল চোখ দুটোকে শক্ত করে তাকায় তানহার দিকে। হাতের জোরেই বলে দিচ্ছে কতোটা রেগে গেছে অভি।
তানহার নরম হাতটা শক্ত করে ধরায় বেশ ব্যাথা পাচ্ছে তানহা। তবুও ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে অভির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
“ইচ্ছে মতো বকে দে তো ভাই। জীবনটা ছিঁড়া কাঁথা বানিয়ে দিলো।
আশকারা দিয়ে বলে রাফিদ।
” পবলেম কি তোমার?
ছাগলের মতো হাসছো কেনো? অলওয়েজ এটাই প্রুফ করতে চাও তুমি লেজ ছাড়া বাঁদর?
তোমার বাঁদরামির জন্য দেখো রাফিদ কতোটা ব্যাথা পেয়েছে। লিসেন নেক্সট টাইম যেনো আমি এমনটা না দেখি। তাহলে হির হির করে টেনে
অভিকে কথা শেষ করতে না দিয়ে তানহা অভির ঠোঁটে আঙুল দেয়।
“লিসেন নেক্সট টাইম এমন কিছু দেখলে হিরহির করে টেনে কাজি অফিসে নিয়ে যাবো।
তাই তো বলতে চাইছিলেন মিস্টার ফিউচার জামাই।
চোখ টিপ দিয়ে বলে তানহা। ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি।
অভি ঢোক গিলে। রাফিদা চোখ বড়বড় করে অধিক আগ্রহে তাকিয়ে আছে অপেক্ষা করছে ঠাস করে তানহার গালে একটা থাপ্পড় পড়ার।
এখন রানিদের কি করা উচিৎ অভির হাত থেকে কি করে বাঁচাবে রাফিদ তানহাকে?
ভাবছে রাফিদ।
অভির কপাল বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝড়ছে। এই মেয়েকে বকা দেওয়া অভির কাম্য নয়। যখনই ঠিক করে আচ্ছা মতো বকে দেবে তখনই এক নিমিষেই অভিকে থামিয়ে দেয়। কথা বলার ভাষা খুঁজে পায় না অভি।
অভির অবস্থা দেখে তানহা মুচকি হাসে। অভির ঠোঁটের ওপর থেকে অঙুল সরিয়ে নেয়। কিছুটা পিছিয়ে আসে।
অভি এক বার তানহার মুখের দিকে তাকিয়ে হনহনিয়ে চলে আসে ওখান থেকে।
অভি যেতেই তানহা মুচকি হাসে।
” কেসটা কি বল তো? ভাইয়াকে কি তোকে ভয় পায় না কি?
রাফিদ অভির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে বলে।
“পাবেই তো। ফিউচার এমপি আমি। এখন তোর ভাই ভয় পাচ্ছে এমপি হওয়ার পরে তুই ও ভয় পাবি।
ভাব নিয়ে বলে তানহা।
রাফিদ গাট্টা মারে তানহার মাথায়। তানহা কটমট চোখে তাকায় রাফিদের দিকে।
” হাতটা ধর। ভেতরে যাবো।
রাফিদ হাতটা এগিয়ে দিয়ে বলে।
“একটু আগে গাট্টা না মারলে নিয়ে যেতাম।
তানহা মুখ বাঁকিয়ে বলে।
” জনগনের সেবা না করলে ভোট পাওয়া যায় না। আমি তো ভেবে রেখেছি এখন থেকেই সবার কাছে তোর গুনগান গাইবো। তাতে জনগন ইমপ্রেস হয়ে তোকে এমপি বানাবে। হাতটা ধরে নিয়ে গেলে আমার ভোটটা তোকে দিতাম।
তানহা হাত ধরে রাফিদের।
রাফিদ বাঁকা হাসে। ভোটেট কথা বলে তানহাকে দিয়ে সব কাজ করানো রাফিদের কাজ।

আজকে রাফিদের রিসেপশন। কোমরের ব্যাথাটা এখনও তাজা। মলম লাগিয়েছে কিন্তু একটুও কমে নি। তানহা স্মৃতি হালিজা তিনজন মিলে ইশাকে সাজিয়েছে। কিন্তু এখন ঘটিয়েছে আরেক বিপত্তি। বউকে রুমে লক করে রেখেছে ওরা। কাল খাট সাজানো আর এখন বউ সাজানোর টাকা না দিলে বউ নিয়ে কোথাও যেতে দেবে না।
তানহা স্মৃতি আর হালিজার সাথে যোগ দিয়েছে জিসান আর রাফি।
রাফিদ পড়েছে খুব ঝামেলার। এর থেকে ভালো হতো পালিয়ে বউকে নিয়ে পালিয়ে গেলে। অন্তত বউকে তো কাছে পেতো।
রাফিদ গলা উঁচু করে অভি বলে ডাকে।
অভি নাম শুনেই সবার মুখ চুপসে যায়। সুরসুর করে দরজা খুলে দেয়। রাফিদ তৃপ্তির হাসি দিয়ে বউয়ের হাত ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে যায়।
“আজকে রাতে টাকা না দিলে রাফিদ না আমার ফিউচার বরের খাট ভাঙবো।

“ছয় ফিট লম্বা ছেলে আপনার বাবু হয় কি করে?
অভি ওর ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলছিলো। মোহনা নামের মেয়েটা অভির গার্লফ্রেন্ড। তো সবার সামনেই অভির গলা জড়িয়ে বলছিলো
” বাবু কাল রাতে তুমি আমার কল কেনো রিসিভ করো নি?
অভি গলা থেকে মেয়েটার হাত ছাড়াতে থাকে। কিছু বলবে তার আগেই তানহা বলে ওঠে।
এরকম একটা কথা শুনে সবাই তাকায় তানহার দিকে। মোহনা মেয়েটাও অভির গলা ছেড়ে দেয়। তৃহ্ম দৃষ্টিতে তাকায় তানহার দিকে।
“হু ইজ সী অভি?
অভির হাতের ভাজে নিজের হাত রেখে বলে মোহনা।
অভি দাঁতে দাঁত চেপে কটমট চাহনিতে এক পলক তাকায় তানহার দিকে। তানহা চোখ টিপ দেয়। সাথে সাথে হেঁচকি তুলে অভি চোখ সরিয়ে নেয়।
” আমি?
এক গাল হেসে মোহনার হাতটা অভির হাত থেকে সরিয়ে বলে তানহা।
“উনি আমার উনি হয়। আর আমি ওনার ওগো হই।
খানিকটা লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে অভির হাতটা মুঠো করে ধরে বলে তানহা।
অভি চোখ বড়বড় করে তাকায় তানহার দিকে।
মোহনা আর অভির বাকি ফ্রেন্ড গুলো বুঝতে পারে না তানহা ঠিক কি মিন করছে। না বুঝে ভ্রু কুচকে তাকায়।
” হুয়াট
মোহনা খানিকটা জোরে বলে।
” হুয়াট হোয়াট পরে
এখন বলো তোমার এতো বড় ছেলে হলো কবে?
অভি হচ্ছে টা কি এসব?
অভি তানহার হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয়।
“ককাজিন ও আমার। মাথায় একটু পবলেম আছে।
আড়চোখে এক বার তানহার দিকে তাকিয়ে বলে অভি।
মোহনা বিশ্বাস করলো কি না বোঝা যাচ্ছে না। কারণ বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে তানহার দিকে।
অভির বাকি বন্ধুরা বিশ্বাস করেছে।
” মোহনা চলো ওদিকে যাই। আর তোরা ইনজয় কর।

অভি মোহনার হাত ধরে চলে যায় ওখান থেকে।
তানহার বুকের ভেতর চিনচিন ব্যাথা করে। হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে অভির চলে যাওয়া দেখে।
“তুমি আমারই
ময়দা সুন্দরী তোমার হাত ধরেছে তো। এবার দেখো মশা থুক্কু মোহনা তোমার ময়দা মাখা হাতটা আমি কি করি।
মুখের ওপরে পরে থাকা ছোট চুল গুলো ফু দিয়ে উড়িয়ে দেয় তানহা।

” মোহ তোমাকে কতো বার বলেছি এতো মেকাপ করবা না। কিন্তু তুমি শোনোই না আমার কথা।
কিছুটা রাগী কন্ঠে বলে অভি।
“বাবু রাগ করছে কেনো? তুমি আজকে তোমার বাবা মায়ের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেবে বলে আমি পাক্কা তিন ঘন্টা যাবৎ পার্লারে সেজে এখানে এসেছি।
অভির হাত জড়িয়ে ধরে নেকা স্বরে বলে মোহনা।
অভি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” ও মা মাএ তিন ঘন্টা
অবাক হওয়ার ভান ধরে দুই গালে হাত দিয়ে বলে তানহা।
অভি চোখ বন্ধ করে কপাল চাপরায়। মোহনা মুখ ফুলায়।
“তুমি এখানে?
শক্ত গলায় বলে।
” তোমাকে কম্পমাইজ দিতে আসলাম মশা আপু থুক্কু মোহনা আপু। আসলে তোমাকে এতো সুন্দর লাগছে এতো সুন্দর লাগছে যে কি বলবো
কুকুরটাও তাকিয়ে থাকবে।
মোহনা চোখ বড় করে তাকায়।
“আরে মানুষরা তো থাকবেই। এতো কিউট কেনো তুমি বলোতো।
অভি সোনার তো মারাক্তক কপাল তোমার মতে এতো সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড পেয়েছে।
তানহার থেকে এতো প্রশংসা পেয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে যায় মোহনা।
অভি কপালে তিনটে ভাজ ফেলে তাকিয়ে আছে।
“আপু তুমি হাঁটু ওবদি ড্রেস কেনো পড়েছো?
হাঁটু থেকে আরও এক হাত না থুক্কু আধ হাত উপরে ড্রেস পড়বা। একদম রানু
না ডিপিলিকা লাগবে তোমায়।
মোহনার কাঁধে হাত দিয়ে বলে তানহা।
মোহনা দিপিলিকাকে ঠিক চিনতে পারে না।
” ডিপিলিকা টাকে?
চোখ মুখ কুঁচকে বলে মোহনা।”আরে ডিপিকা। ওই বলিউড নায়িকা।
“ওহহহ আচ্ছা
এক গলা হেসে বলে মোহনা।
” মোহনা শোনো
অভি বলে।
“পরে শুনবো আগে আমি ওর সাথে গল্প করবো। বাই দ্যা ওয়ে তোমার নাম কি?
অভি ইগনোর করে তানহার হাত ধরে বলে মোহনা।
” আমার নাম তানহা।
আপু ওই দিকে চলো। তোমার মেকাপটা লেপ্টে গেছে ঠিক করে দেবো।
মোহনা তানহার হাত ধরে চলে যায়।
তানহা অভির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।
অভি মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
“আজকে আমার ব্রেকআপটা কেউ আটকাতে পারবে না

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here