ভালোবাসি তাই ২ পর্ব -০৩

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ৩
#তানিশা সুলতানা

“ভালোবাসার মানেটা জানেন আপনি?
প্রতিদিন এতো এতো দামি দামি গিফট দিয়ে ভালোবাসি শুনতে হলে সেটা ভালোবাসা না। ভালোবাসার জন্য কোনো রিজনের প্রয়োজন হয় না। ভালোবাসা হয় মন থেকে। আপনাকে যে ভালোবাসবে সে আপনাকে সব সময়ই ভালোবাসবে। কারণে অকারণে ভালোবাসি বলবে। দামি গিফট পেয়ে ভালোবাসি বলে গলা জড়িয়ে ধরে চুমু খাবে না। বরং জিজ্ঞেস করবে এতো টাকা তুমি কোথায় পেলে? আমাকে তোমার এতো দামি গিফট দিতে হবে না। জাস্ট পাঁচ টাকার গোলাপ কিনে আমার খোঁপায় গুঁজে দিও তাতেই হবে আমার”
একদমে কথা গুলো বলে একটু দম নেয় তানহা।
মুচকি হেসে অভির দিকে দুপা এগিয়ে যায়। অভির বুকের পা পাশটায় মাথা রাখে। অভি চমকে ওঠে। পিছিয়ে যেতে নেয়। তানহা দুই হাতে শক্ত করে পিঠ আকড়ে ধরে।
চোখ বন্ধ করে অভির হৃদপিণ্ডের ধুকবুকানি শোনে। ঠোঁটে কোণে ভেসে ওঠে মিষ্টি হাসি।
” এভাবে জড়িয়ে ধরার নাম ভালোবাসা। আর গলা জড়িয়ে ধরার নাম টাইম পাস। আপনার বুকের ধুকবুকানির মানেটা যে বুঝতে পারবে সেই আপনাকে ভালোবাসবে। আপনার মুখের দিকে তাকালে যার সব কষ্ট দুর হয়ে যাবে সেই আপনাকে ভালোবাসে।
বলেই সরে আসে তানহা।
বুকের ধুকবুকানি বেরে গেছে অভির।
অভি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তানহার দিকে। এই মেয়েটা নিশ্চয় ম্যাজিক জানে। কতো নির্বিঘ্নে ভালোবাসার মানেটা বুঝিয়ে দিলো।
“আগে ভালোবাসার মানেটা বুঝুন মিস্টার হবু বর। তারপর নাহয় আমি প্যাক্টিকেল এ ভালোবাসা বুঝিয়ে দেবো।
চোখ টিপ দিয়ে বলে তানহা।
অভি হকচকিয়ে যায়। শুকনো একটা ঢোক গিলে। সাংঘাতিক মেয়ে।
তানহা চলে যাওয়ার পরে মোহনা অভির কাছে এসে দাঁড়ায়। তানহার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে।
” কি বলে গেলো? কিছুই তো বুঝলাম না।
ভাবুক ভঙ্গিতে বলে মোহনা।
অভি তানহার থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। এদিক সেদিক তাকিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে নেয়। অতঃপর জোরে দম নিয়ে মাথার চুল গুলো এলোমেলো করে দেয়।
“বুঝবা না।
” কেনো বুঝবো না? ওর থেকে আমি অনেক বড়। অনেক বুদ্ধি আমার।
কপাল কুচকে অভির দিকে তাকিয়ে বলে মোহনা।
অভি উওরে কিছু বলে না।
“যাক গে
আমি হাতটা ধুয়ে আসি। খাবো তো
অভি মাথা নারায়। মোহনা চলে যায়।

(তানহার ফুপাতো ভাই রাফিদ। তার বিয়েতে এসেছে। অভি রাফিদের চাচাতো ভাই। স্মৃতি হালিজা রাফিদের বোন। জিসান অভির ভাই)

তখন তানহা মোহনাকে নিয়ে যাওয়ার সময় অভি পথ আটকে দাঁড়ায়। যেতে দেয় না ওদের। মোহনা তো জেদ ধরে ছিলো যাবেই তানহার সাথে। গিফট পাগল মোহনাকে শান্ত করার জন্য অভি পকেট থেকে মোহনার জন্য বিয়ে উপলক্ষে কিনে আনা সোনার আংটিটা দেয়। আর মোহনা খুশিতে লাফিয়ে উঠে অভির গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দেয়।
তানহার বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। তবুও নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না। তো বলেই ফেলে কথা গুলো।

অনুষ্ঠান শেষ। এখন একে একে সবাই সবার বাড়ি চলে যাচ্ছে। তানহার বাবা মা আর ভাইও বাড়ি চলে যাবে। কিন্তু আটকে দেয় তানহার ফুপি। রাত টুকু থেকে যাওয়ার অনুরোধ করে।
একটা হাইস্কুলের টিচার তানহার বাবা। সকালে আবার স্কুল আছে। তাই তিনি একাই চলে যায়। তানহা তো মহা খুশি আরো একটা রাত থাকতে পারবে।

অভি চলে গেছে মোহনাকে ড্রপ করে দিতে।
তানহা অভির রুমে আসে। পুরো রুমটাতে চোখ বুলায়। খুব পরিপাটি রুমটা। বেডের পাশে একটা ফটো ফ্রেম তাতে অভি মোহনা আর অভির ফ্রেন্ড’দের ছবি৷ অভি মোহনার দুই কাঁধে হাত দিয়ে আছে। মুখে লেগে আছে এক গাল হাসি। মোহনা মাথা উঁচু করে অভির দিকে তাকিয়ে আছে রাগ মিশ্রিত হাসি দিয়ে।
ছবি অনেক আগেকার সেটা ওদের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মোহনার পরনে কম দামি সুতি থ্রি পিছ।
মুচকি হাসে তানহা। অভির মুখে হাত বুলায়। মোহনার মুখের দিকে তাকায়।
“কতো নিষ্পাপ ছিলে তুমি।

অভির পুরো বিছানায় পানি ঢেলে দেয় তানহা। এটা মোহনার হাত ধরার শাস্তি। অভির পড়ার টেবিলটা এলোমেলো করে দেয়। এটা মোহনাকে গিফট দেওয়ার শাস্তি।
ময়লার ঝুড়ি থেকে ময়লা নিয়ে পুরো রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়। এটা মোহনাকে ড্রপ করে দিতে যাওয়ার শাস্তি।
সব কাজ শেষে কোমরে দুই হাত দিয়ে দাঁড়ায় তানহা।
” নিজের জিনিসকে কি করে আগলে রাখতে হয় সেটা এই তানহা খুব ভালো করেই জানে।
নাচতে নাচতে চলে যায় তানহা।

আজকেও রাফিদকে জ্বালানোর ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু খুব অসুস্থ রাফিদ। কোমরের ব্যাথায় জ্বর চলে আসছে। তাই আর জ্বালায় না। যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়ে।
ঘুম নেই শুধু তানহার চোখে। কখন অভি আসবে চিৎকার চেচামেচি করবে। আর তানহা গিয়ে বরফ থেকে দেবে। বরফের ন্যয় দুই একটা কথা বলবে আর অভি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলবে।
খিলখিল করে হাসে তানহা।
এসব ভাবতে ভাবতেই তানহা ঘুমিয়ে পড়ে।

সকাল সকাল বাড়ি যেতে হচ্ছে তানহাকে। মনটা খুব খারাপ তানহার। খুব ইচ্ছে ছিলো আর কিছুদিন এখানে থাকতে। জিসান হালিজা স্মৃতি রাফিদ সবারই মন খারাপ।
তানহার মা রেডি হতে বলে নিজে রেডি হতে গেছে।
তানহা এই সুযোগে অভির রুমে চলে যায়। কিন্তু রুমে অভি নেই। তানহা ঠিক যেভাবে রেখে গেছিলো রুমটা ঠিক তেমনই আছে।
তাহলে কি অভি আসে নি? মোহনার বাড়িতেই রাত থেকেছে?
কপালের ঘাম ছুটে যায় তানহার। এটা হতে পারে না। চোখের কোনে পানি গুলো চিকচিক করে ওঠে। অধর জোড়া কাঁপতে থাকে। মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে তানহা। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
হাঁটু মেরে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।

অভি বেলকনিতে ঘুমাচ্ছিলো। অনেক রাতে বাড়ি ফিরে রুমের অবস্থা দেখে খুব সহজেই বুঝে গেছিলো তানহার কাজ এটা। কিন্তু অতো রাতে চেচামেচি করে সবার ঘুম নষ্ট করার ইচ্ছে ছিলো না বলে বেলকনিতে মাদুর পেতে ঘুমিয়েছিলো।
ফুঁপিয়ে কাঁদার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় অভির। চোখ ডলে উঠে বসে। রুম থেকে শব্দ আসছে আন্দাজ করতে পেরো হাই তুলতে তুলতে রুমে যায়।
তানহাকে ওভাবে কাঁদতে দেখে অকঙ্মিক ভাবে কপাল কুচকে নেয় অভি।
“কি হয়েছে?
অভি জিজ্ঞেস করে।
অভির কন্ঠ শুনে ধপ করে মাথা তুলে তানহা। অভিকে দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফোটে। চোখ ভর্তি পানি ঠোঁটের কোনে হাসি। বেশ লাগছে তানহাকে।
উওর না পেয়ে অভি আবারও কিছু প্রশ্ন ছুঁড়তে যায়। তার আগেই তানহা এক লাফে উঠে দৌড়ে এসে অভিকে জাপ্টে ধরে। তাক সামলাতে না পেরে অভি দু পা পিছিয়ে যায়।
অভি বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে তানহা। এটা প্রাপ্তির কান্না।
অভি বুঝতে পারছে না এখন ওর ঠিক কি করা উচিৎ।
” বলবে তো কি হয়েছে? কাঁদছো কেনো?
তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে অভি।
আশকারা পেয়ে তানহা আরও আয়েশ করো কাঁদতে থাকে।
অভি ভেবে নেয় হয়ত রুমটা এলোমেলো করেছে বলে কাঁদছে। অভি বকা দেবে তার ভয়ে।
“আরে আমি বকা দেবো না। তবুও কেঁদো না।
শান্ত করার চেষ্টা করে বলে অভি।
এই অবস্থায় কেউ দেখে ফেললে খারাপ ভাববে। তাই অভি তানহার দুই বাহু ধরে দাঁড় করায় তানহাকে।
চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।
” বললাম তো বকবো না। বাঁদরামি করার সময় মনে থাকে না?
শান্ত ভঙ্গিতে বলে অভি।
তানহা চোখের পানি মুছে নেয়। অভি তানহার বাহু ছেড়ে দেয়।
তানহার অভির হাত ধরে টানতে থাকে।
“আরে কোথায়,নিয়ে যাচ্ছো?
অভি বুঝতে না পেরে বলে।
খাটের পাশে অভিকে দাঁড় করিয়ে দেয় তানহা। তানহা খাটের ওপর দাঁড়ায়।
” করতে চাইছো কি?
মাথা উঁচু করে তানহার দিকে তাকিয়ে বলে অভি।
তানহা মিষ্টি করে হেসে অভি দুই গালে হাত দিয়ে টুপ করে অভির কপালে চুমু দেয়। অভি ছিটকে দুরে চলে আসে।
তানহা খিলখিল করে হেসে ফেলে।
অভি কপালে হাত দিয়ে বেকুব হয়ে তাকিয়ে আছে।
“যদি জেনে থাকেন তো জানেন। আর যদি না জানের তাহলে বলছি ” আপনি শুধু আমার”
আমাদের আশেপাশে কাউকে দেখলে আমি
থেমে যায় তানহা। মুখে অদ্ভুত হাসি।
অভি পরের টুকু শোনার জন্য অধিক আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
“ভালোবাসি
অভির গালে হাত দিয়ে বলে

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here