ভালোবাসি তাই ২ পর্ব -০৪

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ৪
#তানিশা সুলতানা

আজ চার দিন হয়ে গেছে তানহা বাসায় চলে আসছে। এই চারদিনে অভির সাথে দেখা কথা কোনোটাই হয় নাই। ফেসবুকে মেসেজ দিতে দিতে অস্থির হয়ে গেছে কিন্তু অভি এক্সেপ্ট ই করে না। স্মৃতির কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে কল ও করেছিলো। কিন্তু ফোন বন্ধ।
বেশ বিরক্ত তানহা। সামনে পেলে সাংঘাতিক কিছু করে ফেলবে। নিশ্চয় ওই ডাইনি টার সাথে ঢলাঢলি করছে।

কালকে কলেজে অনুষ্ঠান আছে। কলেজের নতুন একটা ভবন উদ্বোধন হবে। অনুষ্ঠানের সব দায়িত্ব তানহা আর জিসানের ঘাড়ে। অন্য সময়,হলে তানহা তার দায়িত্ব পালনে খুব আগ্রহ দেখাতো কিন্তু অভিহীন থাকায় তেমন এনার্জি পাচ্ছে না
সকাল সকাল কলেজে যাচ্ছে তানহা। জিসান আরও আগে চলে গেছে।
তানহা রাস্তার এক পাশ ঢেসে গাছের পাতা ছিঁড়তে ছিঁড়তে হাঁটছে। রিক্সা নেই রাস্তায়। হেঁটে গেলে চল্লিশ মিনিট লাগে।
হঠাৎ করে কাঁদায় পা পিছলে যায়। জুতো ছিঁড়ে পা কাঁদায় মাখা মাখি হয়ে যায়। সুযোগ বুঝে সালোয়ার উঁচু করাতে সালোয়ারে কাঁদা লাগে নি।
এবার আশেপাশে চোখ বুলায় পানির খোঁজে।

একটু খানি দুরে সুন্দর ঘাট বাধানো একটা পুকুর দেখতে পায় তানহা। খুশি মনে পুকুরের পাড়ে চলে যায়। সিঁড়িতে আবার টাইলস বাঁধানো পুকুর। সাথে দুই তালা একটা বাড়ি।
“জুতো খুলে প্রবেশ করুন ” পুকুরের পাশে সাইন বোর্ড টাঙানো।
মুখ বাঁকায় তানহা।
একটু দুরেই সুন্দর একটা ফুলের বাগান। বাগানের বাইরের লেখা “এই বাগানে প্রবেশ নিষেধ”

তানহা এক গাল হাসে। ছেঁড়া জুতোটা পুকুরের ওপরে রেখে নেমে পড়ে।
বা ধুয়ে উঠতে যাবে তখনই বাঁজখাই গলায় শুনতে পায়।
“হু আর ইউ?
তানহা পেছনে ঘুরে। থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়া খালি গায়ে কানের হেডফোন গলায় ঝুলিয়ে মুখটাকে বাঘের মতো করে গর্জে তাকিয়ে আছে।
তানহা মিষ্টি করে হেসে উপরে উঠে আসে।
” আমি?
আমার নাম তানহা ইসলাম। ইন্টার ফাস্ট ইয়ার পড়ি। খুব ভালো স্টুডেন্ট। খুব ভালো একটা মেয়ে আমি। আমার বাবা
আর কিছু বলার আগেই আবার আরেকটা ধমক পড়ে।
“জাস্ট সাট আপ
এখানে ইন্টারফিউ নিতে আসি নি আমি। এখানে কি চাই?
বেশ কর্কশ গলায় বলে ছেলেটা।
” একটু খানি পানি ব্যবহার করতে এসেছিলাম৷ বিশ্বাস করুন একটু পানিও চুরি করি নি।
ইনোসেন্ট ফেস করে আঙুল তুলে একটু খানি দেখিয়ে বলে।
“ইডিয়েট
চোখে দেখো না? কালা না কি?
এখানে স্পষ্ট লেখা আছে এখানে জুতো পড়ে ঢোকা নিষেধ।
সাইনবোর্ড দেখিয়ে বলে ছেলেটা।
” আমি তো জুতো পড়ে ঢুকি নি।
“তাহলে কাদা লাগলো কি করে?
বুকে হাত গুঁজে বলে ছেলেটা।
” এখানে তো লেখা ছিলো না যে কাদা পায়ে এখানে ঢোকা যাবে না। লেখা থাকলে অবশ্যই ঢুকতাম না।
দাঁত কেলিয়ে বলে তানহা।
ছেলেটা অদ্ভুত চাহনিতে তাকায় তানহার দিকে।
তানহা জুতো হাতে নেয়।
“নেক্সট টাইম ফুলের বাগান থেকে ফুল চুরি করবো। কিন্তু বাগানে ঢুকবো না।
বলেই ভো দৌড় দেয় তানহা।
ছেলেটা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে।
” অদ্ভুত এমনি তো।
ফাস্ট দেখায় বুকের ভেতর ধুকবুক শুরু করে দিছে।
বুকে হাত দিয়ে বলে ছেলেটা।

কলেজের সব কাজ শেষ করে সন্ধার দিকে বাসায় ফেরে তানহা। প্রচন্ড ক্লান্ত ও। ড্রেস চেঞ্জ না করেই শুয়ে পড়ে। তানহার মা বকা দিতেই আছে। শেষমেশ না পেরে কানে হেডফোন গুঁজে দরজা বন্ধ করে ঘুমায়।

প্রথমবার শাড়ি পড়েছে তানহা। নীল শাড়ি দুই হাত ভর্তি নীল চুরি কানে ঝুমকো চোখে মোটা করে কাজল ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক। লম্বা চুল গুলো খোপা করে বেলি ফুলের মালা দিয়েছে।
জিসান তানহার কাকাতো ভাই।
জিসানের সাথে চলে যায়। উদ্বোধন করতে ভার্সিটির দুইজন স্যার আরও কিছু স্বনামধন্য মানুষ আসবে। তাদের জন্য ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তানহা সহ কয়েকজন মেয়ে।
হঠাৎ করে আনাগোনা শুরু হয়ে যায় তারা চলে এসেছে।
একে একে ঢোকে সবাই। সবার শেষের জনের আগের জন সেই ছেলেটা। তানহা একটা ঢোক গিলে এই বুঝি কিছু বলে বসে। ছেলেটা তানহাকে খেয়াল করে নি।
তানহা একটু পিছিয়ে যায় ছেলেটাকে ফুল দেয় না।
ছেলেটার পেছনের জনকে দেখে তানহার মুখটা খুশিতে গদগদ করে ওঠে। সবাইকে টপকে আগে চলে আসে।
অভি তানহাকে দেখে থেমে যায়।
“এ এখানে কি করছে?
মনে মনে ভাবে অভি।
তানহা এক গাল হেসে অভির দিকে এগিয়ে যায়। সবাই অন্যদের অপ্রণয়ে ব্যস্ত৷ অভিও যে গেস্ট এটা হয়ত বুঝতে পারে নি।
তানহা অভির সমানে গিয়ে দাঁড়ায়।
” বেবি এটা আপনার জন্য?
অভি বিষম খায়।
“স্যার কি হলো?
তানহা অভির পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে।
” ইটস ওকে
অভি তানহার হাত সরিয়ে দিয়ে বলে।
“আই লাভ ইউ
আস্তে করে অভির কানে ফিসফিস করে বলে গোলাপটা এগিয়ে দেয় তানহা।
অভি দাঁত কটমট করে তাকিয়ে থাকে তানহার দিকে।
” ওয়েলকাম স্যার।
জোরে বলে তানহা। সবাই ওদের দিকে তাকায়। অগত্যা অভি একটু হাসার চেষ্টা করে গোলা পটা নেয়।

সংহ্মিপ্ত বক্তব্যের নাম করে দীর্ঘ লম্বা চওড়া ভাষন দেওয়া হচ্ছে। জাস্ট বিরক্ত লাগছে তানহার।
উঠে চলে যায় ওয়াশরুমের দিকে। এখানে থেকে এদের বক্তব্য শোনার থেকে ওয়াশরুমের পাশে বসে ফোন ঘাটা অনেক ভালো। অডিটাকেও আর দেখতে পায়নি তানহা। হয়ত ভয়ে পালিয়েছে।

ওয়াশরুমে ঢোকার আগে টিচারদের রুমে। দরজার কাছে আসতেই কারো সাথে ধাক্কা খায় তানহা। শুধু ধাক্কা না একেবারে নিচে পড়ে যায়।
“কোন শা*রে? চোখে দেখিস না? না কি?
বলে সামনে তাকাতেই তানহার চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে যায়।
অভি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তানহার দিকে। পারে তো চিবিয়ে খাবে।
” আপনি?
অভি তানহার হাত ধরে টেনে তোলে। টানতে টানতে টিচারদের রুমে নিয়ে যায় তানহাকে।
“পবলেম কি তোমার? পেছনে পড়ে আছো কেনো আমার? আর এক বার আমার আশেপাশে দেখলে চাপকে সোজা করে দেবো।
এক নাগারে কথা গুলো বলে অভি।
তানহা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে অসহায় ফেস করে। অভির কথা ওর কানেই ঢোকে নি।
তানহার দৃষ্টি বুঝে অভিও তাকায়। সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে নেয় অভি। তানহার শাড়ি খুলে গেছে।
” শাড়ি পড়তে পারো না তাহলে পড়েছো কেনো? ছেলেদের ইমপ্রেস করতে?
হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে অভি।
“সেটা বড় কথা না বড় কথা হলো ছেলের আজ এমনিতেই আর পেছনে লাইন লাগিয়ে থাকবে। কাজ শাড়ি পড়তে পারি না আমি। এবার এটা ঠিক করতে না পেরে শাড়ি ওড়নার মতো পেঁচিয়ে চলে যাবো।
তানহা আচলে হাত দিয়ে বলে।
তানহার কথা শুনে অভি ফট করে তানহার দিকে তাকিয়ে তানহার হাত ধরে আটকে দেয় অভি।
” ইচ্ছে করে
দাঁত কটমট করে বলে অভি।
“টিপ করে আমার গালে একটা চুমু খেতে রাইট?
ঠোঁট বাঁকিয়ে চোখ টিপে বলে তানহা।
অভি বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে।
” ভেবেছিলো এখানে এনে ইচ্ছে মতো ঝেড়ে দেবে তানহাকে। যাতে আর ওর সাথে ফাজলামো করতে না পারে। কিন্তু এখন ও নিজেই ফেসে গেছে।

“আমি হেল্প করছি ওকে
অভির কথা শুনে তানহা একটু ভাব নিয়ে দাঁড়ায়।
“ওকে

অভি তানহার কুচি গুলো তুলে নেয়। খুব যত্ন সহকারে মনোযোগ দিয়ে কুচি করছে। তানহা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অভির দিকে।
অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে অভির। হাত কাঁপছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। চোখটা ঘুরেফিরে তানহার পেটের দিকেই যাচ্ছে।
” গগগগুঁজে নাও
এদিক সেদিক চোখ ফিরিয়ে কুঁচি গুলো এগিয়ে দিয়ে বলে অভি।
“এ্যাঁ
তানহা এক দৃষ্টিতে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থেকে অনয় মনস্ক হয়ে বলে।
আপনাআপনি অভির ভ্রু কুচকে যায়।
চোখ ছোট ছোট করে তাকায় তানহার দিকে।
” কি এ্যাঁ এ্যাঁ বলছো? শুনতে পাও না? ডাকার একটা।
বিরক্ত লাগে তোমাকে আমার। সব সময়
আর কিছু বলার আগেই তানহা অদ্ভুত একটা কাজ করে বসে। এটার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলো না অভি।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here