ভালোবাসি তাই ২ পর্ব -০১

বাসর ঘরে ঢোকার আগে নিজের রুমের সামনে দরজা আটকে কাজিনদের দাঁড়িয়ে থাকতে না দেখে ভারি অবাক হয় রাফিন। সবাই কি ভুলে গেলো না কি টাকা আদায়ের কথা। না কি কোনো ফন্দি আটছে।
মনে মনে ভাবে রাফিন। অবশ্য ভালোই হলো টাকা দিতে হলো না।
খুশি মনে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে রাফিন। গাঁধা আর গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো খাটের মাঝখানে এক হাত ঘোমটা টেনে বসে আছে রাফি নের লাল টুকটুকে বউ। হালকা হেসে দরজাটা বন্ধ করে দেয় রাফিন।
তিন বছর রিলেশন করার পরে আজকে পূর্ণতা পেয়েছে তাদের ভালোবাসার। দুই পরিবারের সম্মতিতেই ধুমধাম করে বিয়ে হয়েছে ওদের।
বুকে হাত দিয়ে লম্বা শ্বাস নিয়ে খাটের দিকে এগিয়ে যায় রাফিন। কেনো জানি আজ লজ্জা লজ্জা লাগছে। তবুও বুক ফুলিয়ে এগিয়ে যায়। গলা ঝেড়ে খাটের
এক পাশে বসে।
“জান জানো কতো অপেক্ষা করেছি এই দিনটার জন্য। আমি আজ কতোটা খুশি তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না।
খুশিতে গদগদ হয়ে বলে রাফিন।
” আজকে তোমাকে আমি আমার ভালোবাসার সমুদ্রে ডুবিয়ে দেবো। তুমি আর অতল খুঁজে পাবে না জান। ভীষণ ভালোবাসি তোমায়।
খয়েরী রঙের পানজাবিটা খুলে বলে রাফিন।
“আমি তোর ছোট ভাই। প্লিজ তোর ভালোবাসার সমুদ্রে আমাকে ডুবিয়ে দিস না। আমি সাঁতার পারি না।
ঘোমটা খুলে অসহায় ফেস করে বলে রাব্বি।
রাফিন এক লাফে খাট থেকে নেমে যায়। এটা কি হলো? বউয়ের জায়গায় ছোট ভাই?

হাসতে হাসতে বেলকনি খাটের নিচ আর আলমারির পেছন থেকে বের হয় বাকি কাজিনরা।
রাফিনের আর বুঝতে বাকি নেই ঘটনাটা।
বউকে সরিয়ে বউয়ের শাড়ি পড়িয়ে রাব্বিকে খাটে বসিয়ে রেখেছিলো বাঁদররা।
সবাই হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।
রাব্বি শাড়ি খুলতে ব্যস্ত।
রাফিন কোমরে হাত দিয়ে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাঁদর গুলোর দিকে।
” সিরিয়াসলি ব্রো
তুই রাব্বি ভাইয়াকে ভালোবাসার সাগরে ডুবিয়ে দিবি?
হাসতে হাসতে বলে তানহা।
“সব বুদ্ধি তোর আমি বুঝতে পেরেছি। তোকে তো আমি
রাফিন মারতে যায় তানহাকে।
” আমাকেও প্লিজ ভালোবাসার সাগরে ডুবাস না। আমিও সাঁতার পারি না।
তানহা স্মৃতির পেছনে লুকিয়ে বলে।
রাফিন থেমে যায়। ভারি লজ্জায় পরে গেলো। সবার দিকে এক নজর তাকায়। সবার মুখেই দুষ্টু হাসি। এদের বিশ্বাস নেই। বিশেষ করে তানহা আর জিসানকে। এরা দুইজন এই কথাটা বলবে না এমন কোনো লোক নেই। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া অচেনা মানুষদেরও ডেকে ডেকে বলবে।
“তোদের কি চাই?
হার মেনে শান্ত গলায় বলে রাফিন। এদের সাথে রাগ দেখিয়ে লাভ নাই। এরা তো বাঁদর।
” পঞ্চাশ হাজার টাকা অনলি
জিসান খাটে বসে বলে।
রাফিন মাথায় হাত দেয়। বাকি সবাই জিসানের কথায় সায় দেয়।
“পঞ্চাশ হাজার তাও আবার অনলি?
কখনো গুনে দেখেছিস? বড় বাঁদরের চামচা ছোট বাঁদর।
রাফিন রাগের মাএা কমাতে পারে না। এমনিতেই দুটো বেজে গেছে এখনো বউকে দেখতেই পারলো না। বাসর শেষ হয়ে যাচ্ছে তো।
” তুমি দিলেই গুনবো। আগে দাও তো
হালিজা দাঁত কেলিয়ে বলে।
“ব্রো তারাতাড়ি দাও। এমনিতেই দুটো বেজে গেছে আর মাএ কিছুখন আছে বাসর রাত। বাসর শেষ হয়ে যাচ্ছে। একটু রোমান্টিক রোমান্টিক কথা বলার ইচ্ছে আছে তো বউয়ের সাথে না কি?
তানহা কোমরে হাত দিয়ে বলে।
রাফিন দাঁত কটমট করে তাকায় তানহার দিকে।
” অতো টাকা নেই আমার কাছে।
অসহায়,ফেস করে বলে রাফিন।
“তাহলে বউকেও আজ পাচ্ছো না।
চল সবাই। আজকে তো আমিই ঘুমাবো ভাবির সাথে।
স্মৃতি হাঁটা শুরু করে ভাব দেখিয়ে বলে।
“অভি ভাইয়াকে বলে দেবো।
ভয় দেখিয়ে বলে রাফিন।
“তো?
কে ভয় পায়,ওই করলার জুস কে?
তেঁতো নিম পাতার কথা বলবে আর আমরা ভয় পেয়ে যাবো?
একদমই না। টাকা না দিলে বউ আজ আমাদের।
তানহা চুল ঠিক করে বলে।
সবাই তানহার কথায় সায় দেয়।
রাফি নের এবার কান্না পাচ্ছে।
” প্রেম করেছি আমি। বিয়ে করেছি আমি। ফুলসজ্জাটাও আমারই করার কথা। মাঝখান থেকে তোরা কেনো কাবাবের হাড্ডি হচ্ছিস।
খুন খুন করে পা ছড়িয়ে বসে বলে রাফিন।
“আহারে বেচারি। খুব বেশি টাকা না ব্রে। দিয়ে দে। প্রমিজ করছি একটা পাখি কেও বলবো না।
তানহা রাফিনের সামনে হাঁটু মুরে বসে রাফি নের চুল ঠিক করে দিয়ে বলে।
” টাকা নাই বিশ্বাস কর। এই তোর মাথা ছুঁয়ে বললাম
রাফিন তানহার মাথায় হাত দিতে যায়। তানহা এক লাফে উঠে দাঁড়ায়।

“কি হচ্ছে এখানে?
গম্ভীর কর্কশ গলায় কথা শুনে চমকে ছিটকে যে যার মতো দৌড়ে পালিয়ে যায়। রাফিন বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়।
তানহা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা অভির দিকে।
মুখে তার লাটসাহেবি ভাব। অভির পাশে গুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে নতুন বউ ইশা। বউকে দেখে রাফি নের কলিজায় পানি আসে। ভেবেছিলো আজ পাবেই না বইটাকে।
” যাও
রাফিনের বউ ইশাকে ঘরে ঢুকতে বলে অভি। নতুন বউ গুটিগুটি পায়ে ভেতরে ঢোকে।
“এই মেয়ে তুমি বেরিয়ে আসো।
তানহার দিকে তাকিয়ে বলে অভি।
রাফিন ইশারায় হাসি মুখে চলে যেতে বলে।
তানহা হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
” টাকা না নিয়ে এক পা সরছি না আমি।
ঠায় দাঁড়িয়ে বলে তানহা। মুখটা অভির দিক থেকে ঘুরিয়ে নেয়।
রাফিন অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় অভির দিকে।
অভি ফোঁস করে নিশ্বাস নেয়। চোখটা এদিক সেদিক ঘোরায় বিরক্তিতে।
গটগট পায়ে ভেতরে ঢুকে তানহার হাতটা খপ করে ধরে বেরিয়ে আসে।
তানহা মুচকি মুচকি হাসছে আর অভির দিকে তাকিয়ে আছে। যেনো চোখের পলক ফেললেই পালিয়ে যাবে।
একদম তানহার রুমের সামনে এনে হাত ছাড়ে মেঘ।
“ডিসগ্রাসটিং
কমনসেন্সের অভাব তোমার? কোথায় কি করতে হয় জানো না?
জোরে শ্বাস টেনে বলে অভি।
তানহা লজ্জা মাখা হাসি দেয়। যে হাতটা অভি ধরে ছিলো সেই হাতে চুমু খায়। হাতটা গালে ছোঁয়ায়।
অভি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।
” তুমি ছুঁয়ে দিলে হায়
আমার কি যে হয়ে যায়”
অভির গালে হাত দিয়ে একটা গাল হেসে গানটা গাইতে গাইতে রুমে ঢুকে যায়।
অভি কপালে দুই অঙুল দিয়ে মাসাজ করে।
“আই এম শিওর এই মেয়েটা পাগল। পাবনা থেকে পালিয়ে এখানে এসেছে আমাকে জ্বালাতে।
ইচ্ছে করে আচ্ছা মতো বকে দিতে। কিন্তু এমন সব উদ্ভট কাজ করে বসে যে আমি কি করবো ভেবে পায় না।
ইডিয়েট

খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছে রাফিন। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কোমর ধরে হাঁটছে আর একটু পরপরই ব্যাথায়,উহহহ আহহহ করছে। চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোমরে খুব ব্যাথা।
বাড়ির সামনে বাগানে চলে আসে হাঁটতে হাঁটতে। হাঁটলে যদি একটু ব্যাথা কমে।
অভি জীম করছিলো ওখানেই। বাড়ির কেউ ঘুম থেকে উঠে নি এখনো।
রাফিনের উহহ আহহ শুনে পেছন ঘুরে তাকায়।
রাফিনকে ওভাবে হাঁটতে দেখে কপালে তিনটা ভাজ ফেলে।
” কি হয়েছে তোর?
গলা উঁচু করে খানিকটা জোরে বলে অভি।
রাফিন অভির গলা পেয়ে পেছন ঘুরে। অভিকে দেখে কাঁদো কাঁদো ফেস করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে অভির কাছে আসে।
“আর বলিস না খাট ভেঙে গেছে। সাথে আমার কোমর টাও
কোমরে হাত বুলিয়ে গাল ফুলিয়ে বলে রাফিন।
অভি মুখটা কুচকে ফেলে। খাট ভেঙেছে মানে কি?
” কি বলছিস? খাট আবার ভাঙে না কি?
অভি মুখের সামনে মাছি তাড়ানোর মতো হাত নেরে বলে।
“সত্যি বলছি ভাই।
” কি করে ভাঙলো?
অভি অবুঝের মতো জিজ্ঞেস করে।
“আর বলিস না ভাই
বউয়ের সাথে রোমাঞ্চ করত
রাফি নের কথা শেষ হওয়ার আগেই কেউ বলে ওঠে

” ভালোবাসার সাগরে সাঁতার কাটতে গিয়ে খাট ভেঙেছে 🤣

রাফিন আর অভি দুইজনই চমকে ওঠে।

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ১
#তানিশা সুলতানা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here