ভালোবাসি তাই ২ পর্ব -১১

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ১১
#তানিশা সুলতানা

মুখোমুখি বসে আছে আবির তানহা আর স্মৃতি। স্মৃতির চোখ দিয়ে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়ছে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে অযথা মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। আবিরের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে বিরক্তি। পায়ের ওপর পা তুলে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বসে আছে ও।
তানহা আবিরকে খুব মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। দুই চারটা স্মার্ট ছেলের থেকে একটু বেশিই স্মার্ট। ধবধবে ফর্সা। একদম বিদেশিদের মতো।
“এই মেয়েটা এখানে কেনো তানহা? ও বাড়ির সাথে আমাদের আর কোনো সম্পর্ক নেই এই মেয়েটা এখানে কেনো এসেছে? নিশ্চয় আমার সুন্দর জামাইয়ের দিকে নজর দিয়েছে?
কর্কশ গলায় কথা গুলো বলতে বলতে তানহার রুমে ঢোকে তমা বেগম।
চোখের পানি খুব দ্রুতই গড়াই স্মৃতির। নিজের মামির এমন কথা শুনে কেমন রিয়েক্ট করা উচিৎ ভুলে গেছে স্মৃতি। এভাবে বলতে পারলো?
তমা বেগমকে দেখে আবির স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
” আন্টি আসুন না। বসুন
তমা বেগমের হাত ধরে বসিয়ে দেয় আবির নিজের পাশে।
“তো এখানে কি করছো তুমি? আর এই বাড়িতে ঢোকার সাহস কোথায় পেলে তুমি?
চোখ মুখ শক্ত করে বলে তমা বেগম।
” মামিমা আমি এখানে আসতে পারি না?
কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে স্মৃতি।
“না পারো না। আমার মেয়ের বিয়েটা হয়ে যাক তারপর আসবে। তার আগে আর যেনো না দেখি তোমাকে।
স্পষ্ট ভাবে বলে দেয় উনি।
আবির মিটমিট করে হাসে।
” কেনো মা তোমার জামাইয়ের কি নজর খারাপ না কি? মেয়ে দেখলেই নিকনিক করতে ইচ্ছে হয় না কি যে স্মৃতি এখানে আসলে স্মৃতিকে দেখলে নিকনিক করতে ইচ্ছে হবে?
তানহাও সোজাসাপ্টা বলে দেয়।
আবির কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তমা বেগম অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় তানহার দিকে।
“আমি তোমাকে সাফ সাফ বলে দিচ্ছি এই লোকটাকে আমি বিয়ে করবো না। এতো সুন্দর মানুষ আমি হজম করতে পারবো না। এজ এ ক্লিয়ার?
তানহা উঠে দাঁড়িয়ে বলে।
” আবির বিয়ের ডেট এগিয়ে আনো। বিদেশ যাওয়া কেন্সেল। বিয়ের পরেই যাবে।
তমা বেগম বলে।
তানহা হা করে মায়ের দিকে তাকায়৷ এটা কি ওর ই মা?
স্মৃতি তাচ্ছিল্য হাসে। দুই হাতে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে যেতে নেয়।
“এক মিনিট মিস
আবির বলে ওঠে। স্মৃতি দাঁড়িয়ে যায়। আবির স্মৃতির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
” আমার শাশুড়ী মায়ের কথাটা মাথায় রাইখেন। আর যেনো এখানে না দেখি আপনাকে। ঠিক আছে?
বাঁকা হেসে বলে আবির।
“অবশ্যই।
পাপ বাপ কেও ছাড়ে না। কথাটা মাথায় রেখো।
আবিরের চোখে চোখ রেখে বলে স্মৃতি।
” এই মেয়ে
দাঁত কটমট করে আঙুল তুলে বলে আবির।
“আঙুল তুলে কথা বলা আমার পছন্দ না। তানহা বলে ওঠে। আবির আঙুল নামিয়ে নেয়। মুখ দিয়ে ” চ” শব্দটা বেরিয়ে আসে।
স্মৃতি চলে যায়। তানহা নির্বাক হয়ে বসে পুরোটা খেয়াল করছিলো। এখানেও কোনো ঘাপলা আছে। এই আবিরের সাথে স্মৃতির খুব ঘনিষ্ঠ কোনো অতীত জড়িয়ে আছে। যেটা আবিরকে বিয়ে করলে সারাজীবন তানহাকে। ভোগ করতে হবে। আবির সুবিধের নয়। “বেশি ভালো ভালো না”

“তোকে আমি শেষ বার বলছি তুই আবিরকেই বিয়ে করবি। নাহলে বাড়ির দরজা খোলা আছে যেদিকে ইচ্ছে চলে যেতে পারিস।
তমা বেগম বলে।
” সেই চলেই যাবো। তোমার বাড়িতে থাকার ইচ্ছে আমারও নেই। কথার পিঠে তানহা বলে। আবির দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।
“তো যা না। এতোদিন যাস নি কেনো? আমিও দেখবো কোথায় যাস তুই?
দাঁতে দাঁত চিপে বলে তানহা।
” অভি তোমাকে জাস্ট একদিন তাও ভালোভাবে বুঝিয়ে বলেছিলো। “তানহা পড়ালেখা বাদ দিয়ে আমার পেছনে ঘুরছে। এতে ওর পড়াশোনার হ্মতি হচ্ছে। আপনি প্লিজ তানহার পড়াশোনার দিকে নজর রাখবেন। আর আমাকে ডিস্টার্ব করতে না করবেন। ভয় পায় তো আপনাকে”
সেই কথাটাকে তুমি টেনে হিঁচড়ে এতো লম্বা করে বাবার কান ঝালাপালা করেছো। সাথে আমাকে তো উঠতে বসতে খোটা দাও। আজকে স্মৃতির সাথেও খারাপ বিহেব করলে।
চিৎকার করে বলে তানহা।
“ও এমন বিহেব ডিজার্ভ করে।
আবির মাথা চুলকে বলে।
” আমিও সাফ সাফ বলে দিলাম এই ছেলেকে আমি বিয়ে করবো না।
বলে তানহা চলে যায়।

আবির তমা বেগমের পায়ের কাছে বসে।
“আন্টি টেনশন নিয়েন না।
তমা বেগম আবিরের দিকে তাকিয়ে ভরসাময় হাসি দেয়।

ভার্সিটিতে যাবে তানহা। নীল থ্রি পিছ পরে মুখে মাক্স পরে নেয়। রাগ এখন আকাশ ছোঁয়া। বাবার পকেট থেকে হাত দিয়ে তিন হাজার টাকা নিয়েছে। ব্যাগে বই না ঢুকিয়ে তিনটে ড্রেস ঢুকায়। স্মৃতি আর আবিরের মধ্যে কি সম্পর্ক ছিলো সেটা খুঁজে বের করে তবেই বাড়ি ফিরবে। আর তারপরই ভেবে দেখবে আবিরকে বিয়ে করা যায় কি না?

না খেয়ে মাকে না বলেই বেরিয়ে যায় তানহা। যাওয়ার আগে তাজকে একটু আদর করে যায়।

“মানিকগঞ্জ টু ঢাকা” লেখা বাসাতে উঠে পরে। মুখটা খুব ভালো করে মাক্স দিয়ে ঢেকে নেয়। কারণ অনেক মানুষই চেনে তানহাকে।
কানে হেডফোন গুঁজে বাইরের পরিবেশ দেখায় মন দেয় তানহা। কোথায় যাচ্ছে? সেখানে গিয়ে কি করবে? কিছুই ভাবতে ইচ্ছে করছে না। ভাবলে ডিপ্রেশন বারে আর ডিপ্রেশন খুব খারাপ একটা রোগ। তো যা হবার তা হবে এটা ভেবে চিল করলে সবটাই ঠিক হয়ে যায়।

সাড়ে তিন ঘন্টা জার্নির পরে তানহা। ঢাকার শহরে এসে পৌছায়। বাসের বসাই নেমে গেছে। এখন শুধু তানহাই বসে আছে।
“এ আপা নামবেন না? বনানী বলে চইলা আইছি।
কন্টাকটর তানহাকে ডেকে বলে।
তানহা মাক্স ঠিক করে ব্যাগ হাতে নিয়ে বলে।
” বনানী কি?
“জায়গার নাম।
কন্ডাকটর বলেন।
বাস থেকে নেমে একটা চিকন সরু রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকে তানহা। দুপুর গড়িয়ে গেছে। সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পরেছে অনেকটা। এখন খুব টেনশন হচ্ছে তানহার।
” চলে তো আসলাম। এখন যাবো কই?
এই টেনশন টাই এই মধ্যে ঘামছে তানহা।

হাঁটছে তো হাঁটছেই। হঠাৎ একটা প্যাকেট এসে পরে তানহার মাথায়।
কপাল কুচকে তাকায় তানহা।
দুই তালার ওপর থেকে কেউ জানালা দিয়ে ফেলেছে এটা। এমনিতেই রেগে আছে তানহা তারওপর আবার ইনসাল্ট।
আশেপাশে খুঁজে একটা ইটের টুকরো পায় তানহা। সেটা ছুঁড়ে মারে। একদম জানালার কাঁচে গিয়ে পরে। সাথে সাথে মটমট শব্দে ভেঙে যায় জানালার কাঁচ। বিশ্ব জয়ের হাসি দেয় তানহা।
“দেখ কেমন লাগে”
হাত ঝেড়ে ব্যাগটা ঠিকঠাক ভাবে কাঁধে ঝুলিয়ে হাঁটতে যাবে
এই স্টুপিট মেয়ে তুমি আমার জানালার কাঁচ ভাঙলে কেনো?
একটা পুরুষের কন্ঠ ভেসে আসছে। আর কন্ঠটা খুব চেনা চেনা লাগছে। যাহহহ বাবা এতো দুর এসেও ধরা পরে গেলাম না কি? ধরা পরে গেলে কোন দিক দিয়ে দৌড় দেবো? দৌড়াতে গিয়ে যদি হচট খাই? যদি পা ভেঙে যায়? কি করবো এখন? কোথায় লুকবো?
তানহা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে এসব ভাবছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here