ভালোবাসি তাই ২ পর্ব -১০

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ১০
#তানিশা সুলতানা

মুর্তির মতো বসে আছে অভি। চোখের পাপড়িও নরছে না। ভাঙা হাতটা বালিশের ওপরে রাখা। দুইদিনেই ফর্সা মুখটা কালো হয়ে গেছে। ঠোঁটের কোনে কেটে যাওয়া জায়গাটা কালো দাগ হয়ে আছে আর ফুলে আছে। ঠোঁট শুকিয়ে কাচুমাচু হয়ে গেছে।
“একটু বেশিই খারাপ আমি তাই না তানহা?
গম্ভীর কন্ঠে বলে অভি। এখন পর্যন্ত তানহার দিকে তাকায় নি। তানহা এই রুমে এসে অভির সাথে ধাক্কা খায়। তখনও অভি এভাবেই বসে ছিলো। বাল্প জ্বালিয়ে দেয়।
তখনই দৃশ্যমান হয়ে অভির শুকনো মুখটা।
তানহা অভির পাশে বসে।
” জানো আমি জানতাম তুমি আসবে। কি করে জানতাম জানি না। কিন্তু জানতাম। কেনো আসলে?
অভি এবার তানহার দিকে তাকায়।
“ভালোবাসি তাই।
তানহার সোজাসাপ্টা উওর।
অভি তাচ্ছিল্য হাসে। কিছু বলে না। অভির মুখের দিকে তাকালে তানহার বুক ফেটে আসছে। মনে মনে প্রতিঙ্গা করে বসে “যে ওনার এই হাল করেছে তাকে ছাড়বে না তানহা। কিছুতেই ছাড়বে না।
” ভালোবাসা আমাকে কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে দেখেছো তুমি? কি ছিলাম আর কি হয়ে গেলাম। কতোটা নিচে নেমে গেলাম। তো এসব বাদ দাও।
আমি রাফিদ কে বলে দিচ্ছি। ও তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবে।
ভালোবাসা বলে কিছু নেই। এটা জাস্ট কিছুদিনের আবেগ। বুঝলে তুমি?
অভি এক হাতে চুল টেনে বলে।
“আচ্ছা ভুলে গেলাম আমি আপনাকে ভালোবাসি। ভালোবাসা বাসি বাদ। আমি আপনার ফ্রেন্ড। তো ফ্রেন্ড হয়ে তো থাকতে পারি কিছু সময় আপনার সাথে। আচ্ছা ফ্রেন্ডও না। আমি আপনার বোন। তো বোন হয়ে থাকতে পারি তো?
তানহা তারাহুরো করে বলে।
অভি ঘাড় বেঁকিয়ে তাকায় তানহার দিকে। মেয়েটার চোখ ভর্তি পানি। এতো পানি আসে কোথা থেকে? কই অভি তো কাঁদতে পারছে না। আজকে তো সে সম্মানও হারিয়ে ফেলেছে। তো চোখে তো পানি আসছে না। কিন্তু এই মেয়েটা? ওর তো কাঁদার মতো কিছুই হয় নি তবুও কেনো কাঁদছে।
বুঝতে পারে না অভি।
” থাকতে পারি তো?
তানহা আবারও জিজ্ঞেস করে।
অভি মাথা নারায়।
“বিয়ে কবে করছো? অভি জিজ্ঞেস করে।
“যেদিন হবে জানতেই পারবেন।
তানহা বিরক্ত হয়ে বলে।
“আপনি ইনোসেন্ট তাই না? কেউ মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়েছে আপনাকে। শুধুমাত্র আপনার বদনাম করার জন্য। বলুন
তানহা বলে।
” কালকে শহর ছাড়ছি। আর কখনো দেখা হবে না। ফেসবুকে এড থাকতে পারো। মাঝেমাঝে খবর নিও।
অভি বলে।
তানহা চোখ বন্ধ করে।
“তাই বুঝি দয়া করে একটু বসতে দিলেন?
ধরে আসা গলায় বলে তানহা।
“ধরে নাও তাই।
তোমার একটা জিনিস রয়ে গেছে আমার কাছে। ওই যে রাফিদের বাসর থেকে টেনে এনেছিলাম তখন তোমার ব্যাছটা পরে গিছিলো। তুলে রেখেছিলাম। দেবো দেবো করে আর দেওয়া হয় নি।
বলে উঠে দাঁড়ায় অভি। আলমারি খুলে তার ভেতরের লকার থেকে একটা শার্ট বেট করে। সেই শার্টে মধ্যে মুরিয়ে রেখেছে ব্যাছটা।

বেসলেটটা নিয়ে আবার সেভাবেই আলমারি বন্ধ করে তানহার পাশে এসে বসে।
তানহা এতোখন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো অভির দিকে। এতো যত্ন করে রেখেছে?
” এতো যত্ন করে রেখেছেন যে?
তানহা মুচকি হেসে বলে।
“স্বর্নের। খুব দামি তো তাই।
তানহার হাতটা নিয়ে পড়িয়ে দিতে দিতে বলে।
” আবির খুব ভালো ছেলে। খুব ভালো রাখবে তোমাকে। সুখে থাকবে তুমি।
তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে অভি।
“কি হবে সেই ভালো দিয়ে যে ভালোতে আপনিই থাকবেন না”
অভির হাত ধরে বলে তানহা।
“যাকে ভালোবাসো তাকে কখনো বিয়ে করতে হয় না। তুমি আমাকে ভালোবাসে এটা আমি ১০০& শিওর। তো তাই বলছি। আমাকে বিয়ে করলে তোমার আমার মধ্যে ঝগড়া হবে। আমাদের বেবি হবে। সংসার হবে। সময় চলে যাবে কিন্তু তুমি ভালোবাসাটা উপলব্ধি করতে পারবে না।
ষাট বছর বয়সে যখন আমরা বুড়োবুড়ি হয়ে যাবো তখন তুমি ভাববে দিন গুলো কিভাবে ফুরিয়ে গেলো।
আর এখন তুমি আবিরকে বিয়ে করলে কাজের ফাঁকে অবসর সময় তোমার আমার কথা মনে পারবে। চব্বিশটা ঘন্টার মধ্যে তুমি একটা ঘন্টা বেছে নেবে আমাকে ভাবার জন্য। অপেক্ষায় থাকবে কবে এক পলক দেখা হবে। দিন গুলো আস্তে আস্তে ফুরবে। পাঁচ-ছয় বছর পরে আমার সাথে দেখা হলে কোলে একটা বাচ্চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলতে পারবে ” এই মানুষটাকে আমি ভালোবাসতাম”
দিন গুলো সুন্দর হবে।
কথা গুলো বলে থামে অভি।
“লজিক কি আর মন বোঝে” তানহা মনে মনে বলে। কিন্তু মুখে কিছু বলে না। অভির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। চোখে পানি মুখে মিষ্টি হাসি।
“এবার যাও। রাফিদের সাথে বাসায় যাও।
তানহা উঠে দাঁড়ায়। দরজা ওবদি যায়। তারপর পেছন ঘুরে তাকায়।
” শেষ একটা কথা রাখবেন?
অভিও উঠে দাঁড়ায়।
“বলো
” শেষবারের মতো আমাকে একবার জড়িয়ে ধরবেন?
তানহার কান্না মিশ্রিত অদ্ভুত আবদার শুনে বুকের ভেতর ধক করে ওঠে অভির। তবুও ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে এক হাত প্রসারিত করে মাথা হারিয়ে ডাকে তানহাকে।
তাহা ছুটে এসে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে অভিকে। মুখ লুকায় অভির বুকে। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
“নিজের চোখে পানি লুকিয়ে রাখতে হয়। কাউকে দেখাতে নেই। তাহলে সবাই তোমাকে দুর্বল ভাববে। আঘাত করবে।

” আমি যদি সত্যিই আপনাকে ভালোবেসে থাকি তাহলে আপনি নিজে আসবেন আমার কাছে। আপনি আমার হবেনই। এটা আমার বিশ্বাস।

নতুন ভোর নতুন কিছুর সুচনা করে। নতুন সূয্য কারো জন নিয়ে আসে এক রাশ খুশি আবার কারো জন্য নিয়ে আসে এক পাহাড় কষ্ট। কিছু মানুষ কষ্ট লুকিয়ে পাথর হয়ে যায় আবার কিছু মানুষ কষ্টকে আলিঙ্গন করে জীবনটাকে নতুন করে উপভোগ করে।
তানহা কষ্ট লুকিয়ে হাসতে চাইছে না। না পাওয়ার কষ্ট টাকে সাদরে গ্রহণ করে যা পেয়েছে সেটা নিয়েই খুশি থাকতে চাইছে।

দাঁত ব্রাশ করতে করতে বাড়ির সামনে ছোট বাগানটাতে চলে আসে। এখানে গোলাপ গাঁধা রজনীগন্ধা রক্তজবা ফুল গাছ আছে। গোলাপ গাছে কয়েকটা গোলাপ ছিলো কিন্তু আজ তা ঝড়ে গেছে। পাপড়ি গুলোও শুকিয়ে গেছে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তানহা।
গোলাপ গাছ লাগিয়েছিলো অভিকে এই ফুল দিয়ে প্রপোজ করবে বলে। মানুষটাও নেই ফুল গুলোও নেই।

পেয়ারা গালে বড় বড় পেয়ারা হয়েছে। ওরনা আর ব্রাশ ঘাসের ওপর রেখে উঠে পড়ে গাছে পেয়ারা পাড়তে। উঁচু ডালে পেয়ারা ছিলো। তানহা উঠতে উঠতে উঁচু ডালটাতেই উঠে। পেয়ারের পেরে নিচে ফেলে দেয়। নিচ থেকে কারো আর্তনাদের আওয়াজ ভেসে আসে। তানহা নিচের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় আবির মাথায় হাত দিয়ে আর্তনাদ করছে।
তানহা দাঁত দিয়ে জীভ কাটে।
“এই সুপার হিরোর মধ্যে সাধারণ হিরো আবার সকাল সকাল এখানে কেনো? এর জন্যই আমাকে বাড়ি ঘর ছাড়তে হবে দেখতে পাচ্ছি।
বিরবির করে বলে তানহাা

” তুমি ওখানে কেনো? দাঁত ভাঙার ইচ্ছে হইছে না কি?
আবির উপর দিকে তাকিয়ে বলে।
“আইডিয়া
তানহা খুশিতে গদগদ হয়ে বলে।
” গাছের ছোট একটা ডাল ভেঙে ফেলে দেয় আবিরের ওপর। একদম মাথায় গালে। বেশ ব্যাথা পায় আবির। চোখ মুখ কুঁচকে আর্তনাদ করে আবির।
“তুমি নামো তো একবার। তোমাকে আজকে আমি আলুভর্তা বানাবো।
আবির চিৎকার করে বলে।
” তাই না কি বেবি
বলে তানহা আরও একটা পেয়ারা ফেলে আবিরের মাথায়।
“এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার? কাঁদো কাঁদো ফেস করে মাথা ডলতে ডলতে বলে আবির।
তানহা মুখ চেপে হাসে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here