ভালোবাসি তাই ২ পর্ব -০৯

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ৯
#তানিশা সুলতানা

ভার্সিটির লেকচারাল ছিলো অভি। আজকে অভিকে ভার্সিটি থেকে বহিষ্কার করা হলো। কেনো করা হলো কারণ জানানো হয় নি। টিভির চ্যানালে সারাক্ষণ এই নিউজটাই দেখানো হচ্ছে। ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম টিকটক সব খানেই একই নিউজ। ছেলেমেয়েরা রীতিমতো বিদ্রূপ করে যাচ্ছে অভিকে। হাজার হাজার পোষ্ট অভিকে টল করে। অনেক বাজে বাজে পোষ্ট কমেন্ট দিয়ে ফেসবুক ভর্তি।
বাড়ির সবাই দুপুরের খাবার খাচ্ছে আর টিভি দেখছিলো। ব্রেকিং নিউজ দেখে তানহার হাত পা কাঁপতে থাকে। চোখ থেকে পানি গড়াতে থাকে। মহিউদ্দিন খুব আপসেট হয়ে পড়েছে। অভি তো ছেলে খুব ভালো। তাহলে এমনটা কেনো হলো?

“আমি তো জানতাম এমনটাই হবে। এই ছেলেকে আমি হারে হারে চিনি। খারাপ ছেলে একটা। আর তুই এই ছেলেকে পছন্দ করতিস? ছি ছি ছি
কি বাজে রুচি তোর। আবিরের সাথে এর তুলনাই হয় না। বেয়াদব ছেলে একটা।
তমা বেগম মুখে ভাত পুরে চিবতে চিবতে বলে।
তাহা উঠে দাঁড়ায়।
” পছন্দ করতাম না। ভালোবাসতাম। আর এখনো বাসি। আর কখনো অভিকে কারো সাথে তুলনা করবে না। আমার অভির মতো কেউ হতে পারে না।
চোখের পানি টুপ করে গাল বেয়ে গড়িয়ে পরে। চিৎকার করে বলে তানহা।
“তমা থামবে তুমি?
চোখ রাঙিয়ে বলে মহিউদ্দিন।
” মা অভি ভাইয়া খুব ভালো।
তাজ ভাত মাখাতে মাখাতে বলে।
“থাম তুই
তাজকে ধমক দেয়।
আর তোর মুখে যেনো এক বারও অভি নামটা না শুনি। একদম মেরে মুখ ভেঙে দেবো।
হাত দিয়ে থাপ্পড় দেখিয়ে বলেন।
তানহা দৌড়ে রুমে চলে যায়। দরজা বন্ধ করে ফ্লোরে হাঁটু মুরে বসে পড়ে। বারবার অভির অসহায় মুখটা ফেসে উঠছে।
মানুষটা এমনিতেই অসুস্থ এই নিউজ শোনার পরে যদি আরও অসুস্থ হয়ে যায়। তখন?
ভয়ে সিঁটিয়ে যায় তানহা। যদি আবারও নিজের হ্মতি করে বসে?
না তানহাকে যেতে হবে।
উঠে দাঁড়িয়ে চোখের পানি মুছে নেয় তানহা। ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই দরজায় টোকা পরে। দাঁড়িয়ে যায় তানহা।
” তানহা দরজা খোলে।
আবিরের কন্ঠ ভেসে আসছে।
তানহা বিরক্তিতে মাথার চুল খামচে ধরে। নিজের কপালে দুটো চর মারে।
“তানহা শুনতে পাচ্ছ?
তানহা ঝিম ধরে কিছুখন দাঁড়িয়ে থাকে। ভেবেছিলো সারা না দিলে চলে যাবে। কিন্তু নাহহহ।
এ যাওয়ার জন্য আসে নি।
” তানহা দরজা খুলছিস না কেনো?
ছেলেটা কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে।
মা ডাকছে।
তানহা একবার আয়নায় নিজেকে দেখে নিয়ে দরজা খুলে দেয়।
“এতোখন লাগলো কেনো?
মা রাগী কন্ঠে বলে চোখ পাকিয়ে।
” আহহ আন্টি বকবেন না প্লিজ। হয়ত ঘুমচ্ছিলো।
মিষ্টি হেসে বলে আবির।
আবিরের হাসিটা চরম বিরক্ত লাগছে তানহার। নখ নিয়ে হাতে খামচি দিচ্ছে মাথা নিচু করে।
“তানহা চট করে রেডি হয়ে নাও। ঘুরতে যাবো আমরা। বলে গেছিলাম তো। তবুও রেডি হও নি?
আবির আবার বলে।
“পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে চলে আয়।
তুমি এসো। অল্প কিছু হলেও খেতে হবে। কোনো না শুনবো না আমি।
আবিরকে জামাই আদর করার জন্য নিয়ে যায় তমা বেগম।
তাহা আবার কেঁদে ওঠে। এই লোকটার সাথে যেতে একদম মন চাইছে না তানহার। বিরক্ত লাগছে। কিন্তু কি করবে? কি করে বোঝাবে বাবা মাকে তানহার অভিকেই লাগবে?

কিছু একটা ভেবে তাহা চোখ মুখে মুচকি হাসে। তারপর রেডি হতে যায়।

পড়ন্ত বিকেলে পাশা পাশি হাঁটছে আবির আর তানহা। আবির তানহার দিকে তাকিয়ে আর তানহা অন্য মনষ্ক হয়ে।
আবির হঠাৎ তানহার হাত ধরে। তানহা চমকে ওঠে। জ
হাতের দিকে তাকিয়ে ছিটকে কিছুটা দুরে সরে যায়।
” কি হলো?
আবির ভ্রু কুচকে বলে।
তানহার বুক টিপটিপ করছে। আশেপাশে তাকায় একবার।
“অনেক লোকজন আছে এখানে।
রিনরিনিয়ে বলে তানহা।
” কাম অন তানহা।
এটা পার্ক। এখানে যারা যারা এসেছে দেখো সবাই হাত ধরেই হাঁটছে। এটা কমন বেপার।
“আমার পছন্দ না।
চোখ মুখ শক্ত করে বলে তানহা।
” ওকে

একটা ব্রেঞ্চে বসে ওরা। আবিরের থেকে বেশ খানিকটা দুরত্ব বজায় রেখে বসে তানহা
আবির এক গাল হাসে।
“আমার ভার্সিটি বা যেকোনো জায়গায়ই মেয়েরা আমার ছোয়া পাওয়ার জন্য পাগল। জানো প্রতিদিন কতো লাভ লেটার পাই আমি?
আর তুমি আমার হবু বউ হয়ে পালাই পালাই করছো? হুয়ান?
” যে জিনিসটা আমার তা শুধু আমারই। আমি আমার জিনিসের দিকে কারো নজর দিতে দেই না। বাই এনি চান্স যদি নজর পরে যায় তাই আমি সব সময় সাধারণ জিনিস পছন্দ করি।
এই যে বললেন সবাই আপনার জন্য পাগল তাই আমি পাগল না। যার জন্য পাগল হওয়ার মতো কেউ নেই আমি তার জন্যই পাগল।
মুচকি হেসে বলে তানহা।
আবির একটু অপমানিত বোধ করে। কিন্তু হেসে উড়িয়ে দেয়।
“আমি মানুষকে তার ব্যবহার, কথা বলার ধরণ আর মন দেখে বিচার করি। চেহারা দেখে নয়।
সৌন্দর্য কয়েকদিনের। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনার সৌন্দর্য বিলিন হয়ে যাবে। কিন্তু আপনার বিহেবার মন এগুলোর কখনো কোনো পরিবর্তন হবে না।
তো চেহারা দেখিয়ে নয় মন দেখিয়ে পাগল বানানোর চেষ্টা করুন মিস্টার আবির।
আবিরের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে তানহা।
আবিরও মুচকি হাসে।
” এই জন্যই এতো মেয়ে থাকতে আমি তোমাকে বেছে নিয়েছি।
তানহা র গালে হাত দিয়ে বলে আবির।
তানহা হাতটা সরিয়ে দেয়।
“বিয়ের পর তো ঠিকি
আবির কথা শেষ করার আগে তানহা বলে ওঠে
” ঝালমুড়ি খাবো।
আবির ভ্রু কুচকে তাকায়।
“উয় যে ঝালমুড়ি খাবো আমি। নিয়ে আসুন
আবির দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ঝালমুড়ি আনতে চলে যায়।
এই ফাঁকে তানহাও দৌড়ে চলে যায়।
মেইন রোডে আসতেই বাস পেয়ে যায়। উঠে পরে। আর রওনা হয়ে যায় অভির বাড়ির দিকে।

সন্ধা গড়িয়ে রাত নেমে আসে। আটটার সময় বাস এসে থামে টাউনে। ভারা মিটিয়ে নেমে পড়ে তানহা।
ঘুটঘুটে অন্ধকার। এই অন্ধকারের মধ্যেই প্রাণপণ দৌড়াচ্ছে তানহা। অন্ধকারের খুব ভয় পায়।
অভিদের বাড়িটা খুব বেশি দুরে না হওয়াতে খুব তারাতাড়িই চলে আসে।
দরজা খোলাই ছিলো।

পুরো বাড়িটা আর নিরবতায় ছেয়ে আছে। কোথাও কারো শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কি বাড়িতে নেই?
এখন তানহার খুব ভয় করছে।
এখন যদি বাড়িতে কেউ না থাকে তাহলে ও করবে কি? কোথায় যাবে? আবারও নিশ্চয় খুঁজছে। মা জানলে তো এখান থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাবে।
কেঁদে ফেলে তানহা।
” ফুপি
স্মৃতি, অভি ভাইয়া
চিৎকার করে ডাকতে থাকে তানহা। কিন্তু কারো কোনো সারাশব্দ নেই।
ফোন করে তানহা রাফিদকে কিন্তু ফোন রিসিভ করে না।
দ্বিতীয় বার ফোন করতে যাবে তখনই হুরমুর করে বাড়িতে ঢোকে রাফিদ মায়া স্মৃতি হালিজা রেমা বেগম আর আনিকা বেগম।
তানহাকে দেখে ওরা বেশ অবাক হয়।
তানহা শব্দ করে কেঁদে ফুপিকে জড়িয়ে ধরে।
রেশমা বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দেয় তানহাকে।
“অভি ভাইয়া কোথায়?
তানহা মাথা উঁচু করে জিজ্ঞেস করে।
” ওর রুমে। বন্ধ করে রেখেছি রুমে।
হতাশার নিশ্বাস ফেলে বলে আনিকা বেগম।
“আমি গেলাম
বলে দৌড়ে চলে যায় অভির রুমে।
ছিটকিনি দেওয়া ছিলো দরজায়। আস্তে আস্তে দরজা খুলে ভেতরে উঁকি দেয় তানহা। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। রুমে ঢুকে লাইটের সুইস খুঁজতে যেতেই কিছু একটার সাথে ধাক্কা খায় তানহা।
হাত পা কাঁপতে তানহার।
” অভি ঠিক আছে তো?

চলবে
রিচেক দেওয়া হয় নাই। বানান ভুল থাকতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here