ভালোবাসি তাই ২ পর্ব -০৭+৮

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ৭
#তানিশা সুলতানা

তানহা চোখ খুললো তখন দেখলো চারপাশে পিনপিন নিরবতা। কোথাও কোনো সারাশব্দ নেই। হাসপাতালের সাদা বেডে শুয়ে আছে। আশেপাশে কোনো মানুষ জনের সারা শব্দ নেই। ঘাড় উঁচু করে আশেপাশে তাকায় তানহা। তানহার থেকে বেশ খানিকটা দুরে আরও একটা বেড সেই বেডে অভি শুয়ে আছে৷ হাত পা মাথা আর বুকে শুভ কাপরের ব্যান্ডেজ। এক হাতে স্যালাইন চলছে আর আরেক হাতে রক্ত দেওয়া হচ্ছে। মুখটা মলিন হয়ে গেছে। চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। ঠোঁট ফেলে গেছে। সেখানে কালো রক্ত জমে আছে। চুল গুলো উসকোখুসকো হয়ে আছে।
বুকের ভেতর ধক করে ওঠে তানহার। বেড থেকে নামতে যেতেই হাতে টান পরে। বুঝতে পারে ওর হাতেও স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।
অগত্য অভির দিকে পেছন ফিরে শুয়ে পড়ে তানহা। অভির দিকে তাকানোর সাহস নেই তানহার।
বাড়ির সবাই কোথায় গেছে এটাই ভেবে পাচ্ছে না তানহা। হয়ত সবাই খুব ক্লান্ত তাই চলে গেছে।

“মহি ভাই তোমাকে আমি একটা কথা বলতে চাই। ধরতে পারেন একটা আবদার করতে চাই আপনার কাছে।
আনিকা বেগম চোখের পানি মুছে মহিউদ্দিনের সামনে দাঁড়িয়ে বলে।
তানহার পরিবারের সবাই চলে এসেছে। পরিবার বলতে বাবা মা। সন্তানের অসুস্থতার খবর পেয়ে কোনো বাবা মাই বাড়িতে বসে থাকতে পারে না।
এখানে দুই পরিবারের সবাই উপস্থিত আছে।
” এতো ফর্মালিটি করছে কেনো? বলুন না।
মহিউদ্দিন শুকনো হেসে বলে।
“আপনার মেয়েটাকে আমার চাই।
আনিকা বেগমের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকায়,ওনার দিকে। মহিউদ্দিন চোখ বন্ধ করে তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ে।
” কেনো বলেন তো? আমার মেয়েটাকেই কেনো বেঁছে নিলেন? অনেক আদর যত্নে বড় করেছি আমাদের মেয়েকে। কখনো এতটুকু ফুলের টোকাও লাগতে দেয় নি। কখনো কাঁদতে দেই নি।
পৃথিবীতে অনেক মেয়ে আছে। তাদের দেখুন। আমার মেয়েকে রেহায় দাও।

হাত জোর করে এগিয়ে এসে বলে তানহার মা। চোখে তার আগুন ঝড়ছে। অভির করা অপমান গুলো আর তানহার চোখের পানি চোখের সামনে ভাসছে ওনার।
“ভাবি কি করছো তুমি?
রাফিদের মা রেশমা তমা বেগমকে টেনে একটু দুরে নিয়ে বলে।
” আমাদের অভি খুব ভালো ছেলে। তাছাড়া তানহা তো অভিকে পছন্দ করে।
অভির বাবা আহাম্মদ বলেন।
“আমি আমার মেয়েকে কিছুতেই অভির সাথে বিয়ে দেবো না। নেশাখোর একটা ছেলে। আমার তো মনে হয় ছেলেটা পাগল। নাহলে কেউ নিজে নিজেকে এতো অঘাত করতে পারে না কি?
আবার তেরে এসে সাফ সাফ বলে দেয় তমা বেগম। স্ত্রীর এমন বিহেব খুব রুষ্ঠ মহিউদ্দিন। উনি তো কথা বলছেই তারমধ্যে আবার ওনার কথা বলার কি আছে।
আনিকা বেগম আঁচলে মুখ লুকিয়ে কান্না করছে। তমা বেগমের কথায় খুব আঘাত পেয়েছেন উনি। আহাম্মদ চৌধুরী খুব রেগে যায়। পাগল বললো ওনার ছেলেকে?
“অনেক বলে ফেলেছেন আপনি।
আমার পাগল ছেলের বউ তো তানহাই হবে বলে দিলাম। আমার স্ত্রী যখন তানহাকে পছন্দ করেছে তখন তানহাকেই আমি অভির সাথে বিয়ে দেবো। বলে দিলাম।
রাগে রুষ্ঠ হয়ে গর্জে উঠে বলেন আহাম্মদ।
তমা বেগম কিছু বলার জন্য মুখ খোলে তখনই মহিউদ্দিন এক ধমক দেয়।
” এখানে আমি কথা বলছি তো। তুমি কেনো এগিয়ে আসছো?
আর একটা কথাও শুনতে চায় না তোমার মুখ থেকে।
চিৎকার করে বলেন মহিউদ্দিন।
মহিউদ্দিন কখনোই তমা বেগমকে ধমক দেয় না। খুব ধয্য শীল মানুষ। খুব ভালোবাসে তমা বেগমকে। তাই তো সারাক্ষণ বক বক করে যাওয়া তমা বেগমকে ধমক দেয় না। বরং ঠান্ডা মাথায় বোঝায়।
চোখের কোনে পানি চলে আসে তমা বেগমের।

মহিউদ্দিন এগিয়ে গিয়ে আহাম্মদ চৌধুরীর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
“মাফ করবেন। আমার স্ত্রী ভুল করে এতো গুলো কথা বলে ফেলছে। একটু বেশিই কথা বলে ও। ওর হয়ে আমি হ্মমা চেয়ে নিচ্ছি।
আমার তানহা মামনির বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি। খুব ভালো ছেলে। ভার্সিটির লেকচারাল। দেখতেও মাশাল্লাহ। দোয়া করবেন আমার পাগলি টার জন্য। ছেলে মানুষ তো।
মহিউদ্দিনের কথা শুনে সবাই আরেক দরফা চমকে ওঠে। তানহার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?
” আপনি বলতে চাইছেন আমার ছেলে দেখতে খারাপ? ভালো প্রফেশনে চাকরি করে না? অপমান করলেন আমার ছেলেকে?
আহাম্মদ গর্জে উঠে বলে।
মহিউদ্দিন হালকা হাসে।
“কখনোই না। স্কুল টিচার আমি। দশ গ্রাম জানে আমি মানুষকে কখনোই ছোট করি না। বা অপমান করি না।
আপমান করাটা আমার দ্বারা হবে না।
অভি বাবাও খুব ভালো। অনেক ভালো মোহনার মতো মেয়ে পাবে দেখবেন।
আহাম্মদ ভেজা বেড়ালের মতো চুপসে যায়। চোখ নামিয়ে নেয়। ঠান্ডা মাথায়,শান্ত গলায় বলা কথা গুলো তীরের মতো বিঁধছে।
“সকালেই আমরা চলে যাবো।
রুমটা থেকে বেরিয়ে যায় মহিউদ্দিন। পেছন পেছন যায় তমা বেগম।

মাথার চুল খামচে ধরে বসে পড়ে মহিউদ্দিন।
” বড় ভাবি তোমার ভাই এটা ঠিক করলো না। আমাকে অপমান করলো? আহাম্মদ চৌধুরীকে। তানহাকেই অভি বিয়ে করবে। বলে দিলাম আমি।
চিৎকার করে বলেন উনি।
আনিকা বেগম চোখ মুছে নেয়।
চলে যায় ছেলের কেবিনের দিকে।

আনিকা বেগম জরুরি তলবে সবাইকে একটা রুমে ডেকে ছিলো।

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। জানালার সাদা পর্দা ভেদ করে সূর্যের আলো এসে পড়ছে তানহার চোখে মুখে। চোখ মুখ কুঁচকে নেয় তানহা। স্যালাইন শেষ। একটা সাহস করে সুঁচটা খুলে ফেলে। একটু রক্ত বের হয়।
উঠে বসে তানহা। চোখ ঘুরিয়ে ডান পাশে তাকায়। অভি একই ভাবে শুয়ে আছে। তবে এখন অভির চোখটা খোলা। উপরের সাদা দেয়াল টার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের পলকও ফেলছে না।
তানহা চোখ ফিরিয়ে বেড থেকে নেমে পড়ে।

“তানহা
অভি মলিন কন্ঠে ডাকে। তানহা থমকে যায়। পেছন ঘুরে তাকায় না।
” যখন মায়া বাড়িয়ে লাভ হয় না
তখন মায়া কাটাতে শিখতে হয়”
অভির ডাকে সারা দিয়ে নিজেকে দুর্বল করবে না তানহা।। খুব স্টং হতে হবে তানহাকে।
না শোনার ভান কইরা বেড়িয়ে যেতে নেয় কেবিন থেকে।
তখনই হুরমুর করে কেবিনে ঢোকে আহাম্মদ চৌধুরী আনিকা বেগম রেশমা বেগম আর রাফিদ। রাফিদের বাবা বিদেশ থাকে।

“তানহা কথা আছে তোমার সাথে।
আহাম্মদ চৌধুরী তানহার হাত ধরে টেনে এসে সিটে বসিয়ে দেয় তানহাকে।
তানহা ভরকে যায়।
” অভিকে বিয়ে করতে হবে তোমাকে।
থমকে যায় তানহা। অভিও তার ঘুরিয়ে তাকায় তানহার দিকে।
সবাই অধিক আগ্রহে তানহার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে উওর শোনার জন্য।
“আমাকে ফিরিয়ে দেবে না তুমি মামনি। তোমার বাবা মা অবশ্যই রাজি হয়ে যাবে। শুধু তুমি হ্যাঁ বললেই হয়ে যায়।
একটু মিথ্যে বলেন তিনি। যাতে তানহা হ্যাঁ বলে দেয়।
তানহা এক পলক তাকায় অভির দিকে।
” আমি ভালোবাসি অভি ভাইয়াকে। ছোট বেলা থেকেই। যখন থেকেই বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই আমার ওনাকে ভালোলাগে। ওনার থেকে অনেক ভালো ভালো ছেলে আমাকে প্রপোজ করেছে। আমি রিজেক্ট করে দিয়েছি কারণ মন তো একটাই।
আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এখন যদি আমি বলি আমি ওনাকে বিয়ে করবো না। তাহলে সবাই ভাববে আজ অসুস্থ অভিকে দেখে আমার মন পাল্টে গেছে। অভির থেকে অনেক গুন বেটার কাউকে পেয়েছি বলে “না” করে দিচ্ছি।
আমি বিয়ে করবো অভিকে।
দরজার আড়াল থেকে ওদের কথা শুনছিলো মহিউদ্দিন। মেয়ের প্রথম কথা গুলো ভালো লাগলেও শেষের কথাটা শুনে মনটা বিষিয়ে যায়। চোখ দিয়ে টুপটাপ করে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
অভির বাড়ির সবাই খুশি হয় তানহার কথায়।
“আমি তখনই বিয়ে করবো। যখন অভি আমার বাবা মায়ের হাতে পায়ে ধরে হ্মমা চাইবে।
অভির করা ইগনোর গুলো না নিতে পেরে আমি আমার পরিবারের সাথে খারাপ বিহেব করেছি। আমি তো ভুলেই গেছিলাম আমি কষ্ট পেলে আমার বাবা মাও খুব কষ্ট পায়।
আমার বাবা যখন বলবে ” মামনি আমি তোমার বিয়েটা অভির সাথেই দেবো”
তখনই আমি বিয়ে করবো আমি।
একদমে কথা গুলো বলে তানহা।
#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ৮
#তানিশা সুলতানা

“ভালোবাসা কোনো মন গড়া গল্প নয় যে যখন খুশি যাকে তাকে ভালোবাসি বলে দিলাম। আর আমিও খুব ধয্যশীল মানুষ না। একজনকে মনে রেখে আরেকজনের সাথে সংসার করা যায় না। এটা আমি বুঝি।
তিন্নি আপুকে দেখি তো কতো কষ্ট করে। লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে। দুলাভাইও তো কতো বকা দেয় আপুকে। আমি কখনোই আপুর মতো পারবো না। জীবন তো একটাই
এক জীবনে আমি আমার ইচ্ছে গুলোকে প্রধান্য দিতে চাই৷ অবশ্যই এতে বাবা মায়ের সম্মতি লাগবে।
কথা গুলো শেষ করার পরেই তমা বেগম কষিয়ে একটা থাপ্পড় মারে তানহার গালে। ছিটকে কিছুটা দুরে সরে যায় তানহা।
(তিন্নি তানহার কাকাতো বোন। জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিলো ওকে।)
সবাই অবাক হয়ে তাকায় ওনার দিকে। মহিউদ্দিন এসে তানহাকে আকড়ে ধরে। তানহা বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে চুপটি করে থাকে।
” খুব কথা শিখে গেছো তুমি তাই না?
আমি তো সাফ সাফ বলে দিয়েছি এই বেয়াদব নেশাখোর ছেলে আমার সোনার টুকরো মেয়েকে ডিজার্ভ করে না। আমার মেয়েকে আপনারা সবাই মিলে ফোর্স করছেন। একদম মেনে নেবো না আমি।

জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে নিতে বলেন তমা বেগম। রাগে হাত পা কাঁপছে। ইচ্ছে করছে এদের আরও অপমান করতে। কিন্তু স্বামীর ভয়ে পারছেন না।
“আপনার মেয়েকে আমরা ফোর্স করছি না। আর আপনার সাহস তো কম না আমার ছেলেকে বেয়াদব বলেন।
আহাম্মদ চৌধুরী তেরে এসে বলে।
তমা বেগম যেনো এটারই অপেক্ষায় ছিলো।
” বেয়াদব কে তো বেয়াদবই বলবো। আমার হবু জামাই সবার সেরা। তার হাতের নখের যোগ্যও আপনার ছেলে না। আর কখনো আমাদের আশেপাশেও যেনো আপনাদের না দেখি।
দরকার হলে তানহার বাবা তার বোনের সাথেও সম্পর্ক নষ্ট করে দেবে।
কঠিন গলায় বলে তানহার মা।
রেশমা বেগম বেথাতুর চোখে ভাইয়ের দিকে তাকায়। আগে থেকেই তানহার মা তানহার ফুপিকে দেখতে পারে না।
“আর একটা কথা বললে তোমাকে ঠাটিয়ে চর মারবো আমি।
মহিউদ্দিন চর দেখিয়ে বলে।
তমা বেগম ভয়ে গুটিয়ে যায়।
অভি সবটা দেখছিলো। বলার অনেক কিছু আছে কিন্তু বলতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু বলাটা খুব জরুরি।
” মা
অস্ফুরণ কন্ঠে ডেকে ওঠে। আনিকা বেগম পাশেই ছিলো বিধায় হুরমুর করে ছেলের একদম কাছ ঘেসে দাঁড়ায়। নিচু হয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বলে।
“বল বেটা
” আমি অবশ্যই হ্মমা চাইবো ওর বাবা মায়ের কাছে। কারণ আমি অন্যায়,করেছি। কিন্তু আমি বিয়ে করবো না। তোমারা ওকে ফোর্স কেনো করছো?
শান্ত গলায় বলে অভি।
তানহা এক পলক তাকায় অভির দিকে। সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
“নেকামো
বিরবির করে বলে তমা বেগম।
” তানহা চলো
তোমার বাবার থাকতে ইচ্ছে হলে থাক
তানহার হাত ধরে হনহনিয়ে চলে যায় তমা বেগম।
“বোন আসছি।
রেশমা বেগমের মাথায়,হাত বুলিয়ে বলে মহিউদ্দিন।
” অভি বাবা আসছি। নিজের খেয়াল রেখো। এই শরীর আল্লাহর দান। কখনো নিজের শরীরে আঘাত করতে হয় না। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করে। তুমি ভালো একটা পরিবার পেয়েছো সবাই কতো ভালোবাসে তোমায়। তোমার বোঝা উচিৎ তুমি শুধু একা কষ্ট পাও না। তোমার আঘাত গুলো তোমার থেকেও দ্বীগুন কষ্ট তোমার বাবা মাকে দেয়।
জীবনে ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড টাকা পয়সা আসতে যেতেই থাকবে। কিন্তু বাবা মা বারবার আসবে না।
সো যা করবে দশবার ভেবে করবে। তুমি এখন আর আঠারো উনিশ বছরের বালক না। পাঁচিশ ছাব্বিশ বছরের ম্যাচুরিটি একজন পুরুষ ।
তুমি এমন কিছু করো না যাতে মানুষ তোমাকে দেখলে বিদ্রুপ করে। বরং এমন কিছু করো যাতে মানুষ তোমাকে দেখে বলতে পারে “একদিন অভির মতো হবো”
আসছি
চলে যায় মহিউদ্দিন।
মহিউদ্দিনের কথা গুলো মন ছুঁয়ে যায় আহাম্মদ চৌধুরী আনিকা বেগম এবং অভিরও। এভাবে কেউ কখনো বোঝায় নি ওকে। এজন্যই বোধহয় মানুষ বলে “সৎ সঙ্গে সর্গ বাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ ”

মনটা ভালো নেই তানহার। বাসায় এসেছে দুই ঘন্টা হয়ে গেছে। এসে থেকেই রুমের মধ্যে বসে আছে। তমা বেগম যখনই তানহাকে দেখছে বকা দিচ্ছে। তাই জন্যই নিজেকে ঘর বন্দি করে রেখেছে তানহা।

তাছাড়া আরও একটা কথা তানহাকে খুব ভাবাচ্ছে। কি এমন হয়েছে যার জন্য অভি নিজের ওপর নিজেই এ্যটাক করলো? কেনো নিজেকে কষ্ট দিতে দু বার ভাবলো না অভি?
মোহনা কষ্ট দিয়েছে? ব্রেকআপ করে দিয়েছে? শুধুমাত্র একটা মেয়ের জন্য কখনোই একটা ছেলের নিজের এতো বড় হ্মতি করতে পারে না। এর পেছনে নিশ্চয় কোনো বড় কারণ আছে।
কেনো জানি মনে হচ্ছে পুরো ঘটনাটাই তানহাকে কেন্দ করে। নাহলে অভি কেনো তানহাকে কথা শোনালো না? বিয়ের কথা শুনেও কেনো অভি এতো শান্ত ছিলো? কেনো তানহার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকালো?

এতো গুলো কেনো তানহার মনের মধ্যে কিন্তু একটা কেনোরও উওর জানা নেই।
চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস টানে তানহা। মাথা থেকে সব টেনশন ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে। এসব নিয়ে ভাবলে চলবে না। অভিকে মন থেকে সরাতেই হবে৷

খুব আফসোস হচ্ছে তানহার। আসার সময় স্মৃতি হালিজা রাফিদ মায়া রাব্বি কারো সাথে দেখা করে আসতে পারলো না।

“আপি ভাইয়া এসেছে। তোকে ডাকছে।
বসার ঘর থেকে তাজ গলা ফাটিয়ে ডাকছে তানহাকে। “ভাইয়া এসেছে” শব্দটা শুনেই তানহার বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। কি করে বলবে তানহা এই লোকটার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না তানহার।

গলায় ওড়না পেঁচিয়ে চুলগুলো হাত খোপা করে রুম থেকে বেড়তে নেয় তানহা। দরজা ওবদি এসেই আটকে যায়। কারণ আবির তানহার দরজা ওবদি চলে এসেছে।
“কেমন আছে আমার হবু বউটা?
এক গাল হেসে বলে আবির।
তানহা একটু হাসার চেষ্টা করে।
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?
মাথা নিচু করে বলে তানহা।
“এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো? না কি ভেতরে আসতে বলবা?
কপাল কুচকে বলে আবির।
তানহা দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। আবির হনহনিয়ে ভেতরে ঢোকে। খাটে গোল হয়ে বসে। তানহা এখনো দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে।
“আমার পাশে বসো।
আবির পাশে জায়গা দেখিয়ে বলে।
তানহা কাচুমাচু হয়ে যায়৷ ওনার পাশে বসতে দ্বিধা বোধ করছে।
” আরে এসো বলো। খুব ইমপটেন্ট কথা বলতে এসেছি।কুইক
তারা দিয়ে বলে আবির।
তাহা গুটিগুটি পায়ো এগিয়ে এসে চেয়ার টেনে বেশ খানিকটা দুরে বসে।
আবির দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“গুড
তানহা মেঝেতে তাকিয়ে আছে। লোকটার দিকে তাকালেই অভির মুখটা ভেসে ওঠে। অভির থেকে লোকটা একটু বেশি নজর কারা। লম্বা ফর্সা সব দিক থেকেই বেটার। কিন্তু তানহার মনে বেস্ট অভিই বিচরণ করে। ওর বেটার আবিরের দিকে তাকাতেই ইচ্ছে করে না। যেখানে মেয়েরা হুমরি খেয়ে তাকিয়ে থাকে আবিরের দিকে।
” কি ইমপটেন্ট কথা?
তানহা নিচু গলায় জিজ্ঞেস করে।
“দেশের বাইরে যেতে হবে কিছুদিনের জন্য। দুই সপ্তাহ পরে ফিরবো। তো আমি ভাবছিলাম আর মা বলছিলো দুই সপ্তাহ পরেই বিয়েটা হয়ে গেলে ভালো হবে।
তানহার বুকের বা পাশে মোচর দিয়ে ওঠে। মাএ দুসপ্তাহ পরে বিয়ে?
” এতো তারাতাড়ি
চট করে মাথা তুলে বলে তানহা।
“তুমি হাইপার হইয়ো না। জাস্ট বিয়েটা করে রাখবো। আমি তো দুই বছরের জন্য আবার সিঙ্গাপুর চলে যাবো। তো চলে যাওয়ার আগে বিয়েটা করে রাখবো। তো তোমার হাতে 2 Years সময় থাকবে। ততদিনে তুমি বড় হয়ে যাবে। এন্ড আই নো তুমি তোমার পাস্টও ভুলে যাবে। টেন দুই ইয়ার পরে বাড়ি ফিরে চুটিয়ে সংসার করবো।
আইডিয়াটা দারুণ না?
মুচকি হেসে বলে আবির।
তানহা চোখ দুটো টলমল করছে। কতো সুন্দর ফিউচার প্লান করে রেখেছে ছেলেটা আর তানহা তার কথা ভাবেই না।
“আর জানো প্লানটা মারিয়া আমাকে দিয়েছে।
খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলে আবির।
মারিয়া নামটা শুনে কপাল কুচকে তাকায় তানহা। কোথাও একটা এই নামটা শুনেছে ও।
” মারিয়া কে?
তানহা প্রশ্ন করে।
“আমার ছোট বোন। তোমার ননদ

চট করেই তানহার মনে পড়ে যায় কোথায় শুনেছে মারিয়া নামটা। চোখ বড়বড় করে তাকায় আবিরের দিকে। সব কেন-র উওর এই মারিয়া নামটার মধ্যেই আছে।
” তুমি চেনো মারিয়াকে? না চিনলেও পবলেম নেই আমি কাল তোমার সাথে মিট করিয়ে দেবো ওর। খুশি
তানহাকপ আলতো হেসে মাথা দোলায়।
“একটু বেশিই ভালো ছেলেটা। কিন্তু কথা আছে তো “বেশি ভালো ভালো না”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here