ভালোবাসি তাই ২ পর্ব -১২

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ১২
#তানিশা সুলতানা

মুখে কালো মাক্স মাথায় টুপি আর গায়ে চাদর জড়ানো অভিকে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে তানহা। অভিও তানহাকে দেখে বেশ অবাক হয়েছে। এখানে এভাবে কখনোই তানহাকে আশা করে নি অভি।
“তুমি এখানে? চাপা গলায় বলে অভি।
তানহা এখনো ভ্রম কাটিয়ে উঠতে পারছে না। নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে অভির চোখের দিকে। চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বিধায় চোখটাই নজর কারছে।
” ওই হ্যালো
তানহার মুখের সামনে তুরি বাজিয়ে বলে অভি।
তানহা নরেচরে দাঁড়ায়।
“এসেছি ঘুরতে। কখনো ঢাকার শহর দেখি নি তো তাই।
দুই হাত প্রসারিত করে আকাশের দিকে মুখ তুলে জোরে শ্বাস নিয়ে বলে তানহা।
” আজিব তো
এখানে তো তোমার কোনো রিলেটিভও নেই। তো?
অভি কপালে তিনটে ভাজ ফেলে বলে।
“আপনি কি আমার রিলেটিভ না?
তানহা পাল্টা প্রশ্ন করে।
অভি বুকে দুই হাত গুঁজে তানহার দিকে তাকায়।
” আংকেলকে কল করে দিচ্ছি নিয়ে যাবে।
স্বাভাবিক ভাবে বলে অভি।
“একদম না। বাড়ি থেকে রাগ করে এসেছি আমি। এখন চলে গেলে আমার পেসটিজ থাকবে না।
তানহা তারাহুরো করে বলে।
” তো কোথায় থাকবে?
“আপনি কোথায় থাকেন?
” মাথা খারাপ তুমি? আমি একটা ছেলে মানুষ। আমার সাথে এক বাসায় থাকবে? মানুষ দ
অভিকে কথা শেষ করতে না দিয়ে তানহা বলে ওঠে।
“আপনি ছেলে?
দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় অভি তানহার দিকে।
“” নিশ্চয় দুই তালার ওই ভাঙা জানালা ওয়ালা বাসাটা আপনার? যাচ্ছি আমি। আপনি খাবার কিনে আনুন। খুব খিধে পেয়েছে আমার।
বলেই তানহা বাসার দিকে হাঁটা শুরু করে।
অভি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে খাবার কিনতে যায়।

দরজায় তালা লাগায় নি অভি। তাই খুব সহজেই বাসায় ঢুকে পরে তানহা। পুরো বাসাটা ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে। দুইটা রুম একটা কিচেন আর একটা ড্রয়িং রুম। পুরো বাসাটায় কোনো আসবাবপত্র নেই। বসার মতো একটা চেয়ারও নেই। শুধু একটা জাজিম আর একটা কম্বল আছে। একপাশে লাগেজে এলোমেলো ভাবে অভির জামাকাপড় গুলো পরে আছে৷ আর পুরো রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সিগারেটে খালি প্যাকেট ছাড়ি বাকি আংশ আর মদের বোতল।
পানি খাওয়ার মতো একটা জগও নেই।
“লোকটা পানি খায় না না কি?
তানহা বিরক্ত হয়ে বলে।

নিজের ব্যাগটা জাজিমের এক পাশে রেখে বসে পরে তানহা।
অভি ততখনে খাবার নিয়ে চলে এসেছে। সাথে একটা জগ, গ্লাস দুটো প্লেট আর একটা চামচ নিয়ে এসেছে।
তানহার সামনে খাবারের প্যাকেট রেখে তানহার পাশে বসে পরে।
মুখ থেকে মাক্স খোলে চাদরটা পাশে রাখে।
” এখানে আপনি থাকেন?
তানহা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে।
“সেই জন্যই তোমাকে এখানে আনতে চায় নি।
অভি দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে।
” শুনুন ঝাড়ু কিনে আনবেন, সাথে ঝুড়ি, হাড়ি পাতিল তরকারি চাল ডাল
“এক মিনিট, তুমি কি এখানে পারমানেন্টলি থাকার প্লান করছো না কি?
অভি এক লাফে সোজা হয়ে বসে বলে।
তানহা এক গাল হাসে।
” পারমানেন্টলি না কি জানি না। তবে খুব সহজে যাচ্ছি না।
আপনি এক কাজ করেন প্লেট ধুয়ে আনুন জগে পানি ভরে আনুন তারপর খাবার সার্ভ করে আমার জন্য ওয়েট করেন।
আমি বাবার সাথে কথা বলে আসছি।
বলে তানহা উঠে চলে যায়।
অভি কপাল চাপকে বিরবির করে বলে
“এই মেয়ে এখন আমার হার মাংস জ্বালিয়ে খাবে। যখন তখন বলে ফেলতে পারে।
“আমার পা টিপে দিন”
ওরে বাবা এটা বললে তো আমি হার্ট এ্যাটার্ক করবো।

তানহা বাবাকে ফোন করে বলে দেয় স্মৃতি হালিজা সাথে ঢাকায় অভির বাসায় এসেছে। টেনশন না করতে। তারপর ইচ্ছে করেই কিছুখন দেরি করে। অভিকে অপেক্ষা করানোর জন্য।

বাসায় আসার পর থেকে রুমের দরজা বন্ধ করে কেঁদেই যাচ্ছে স্মৃতি। কান্না থামছেই না। “না পাওয়ার থেকে পেয়ে হারানোর কষ্টটা বেশি”
আবিরকে স্মৃতি অনেক দিন থেকেই পছন্দ করে। ফেসবুকে ফলো করতো তারপর হাই হ্যালো দিয়ে কথা শুরু হয়। তিনমাস এভাবে কথা বলার পরে দেখা করে। এভাবে চলতে চলতে একটা সময় রিলেশনশিপে যায় দুজনে। খুব ভালোই কাটছিলো দিন গুলো।
রিলেশনশিপের তিন মাসের মাথায় একদিন হঠাৎ করে আবির মেসেজে বলে “রিলেশনটা রাখা সম্ভব না” তারপর আর কখনো দেখা হয় নি। কথাও হয় নি। ব্লক করে দিয়েছিলো স্মৃতিকে। খুব একটা কষ্ট হয় নি তখন স্মৃতির। ভেবেছিলো দুই একদিন পরে আবির মেসেজ দিয়ে বলবে “সরি জান ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম তাই কথা বলতে পারি নি”
এই মেসেজটার আশায় পুরো দুইটা মাস কাটিয়ে দিয়েছিলো স্মৃতি কিন্তু এই মেসেজটার আসে নি। রাত হলে এখন আবিরের ছবিটা দেখে স্মৃতি। এক সাথে তোলা কতো ছবি৷ কতো স্মৃতি দুজনের। কতো মিষ্টি কাপল ছিলো ওরা।
আজ হঠাৎ তানহাদের বাড়িতে যাওয়ার পর আবিরকে দেখে কষ্ট হয়েছে। তানহার উডবি আবির এটা জানার পর থেকেই কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে স্মৃতির। কাউকে বলতেও পারছে না আর নিজেও সয্য করতে পারছে না।

“এটা হতে পারে না। আবির তো আমায় ভালোবাসতো। ও এটা করতেই পারে না। আবির আমাকে না বিয়ে করলো অন্য কাউকে বিয়ে করুক। কিন্তু তানহাকে না। সারা জীবন ওদের এক সাথে দেখে আমি কি করে সয্য করবো। না দেখে থাকতে পারবো। কিন্তু আমার বোনের সাথে দেখে আমি সয্য করতে পারবো না। মরেই যাবো আমি।
স্মৃতি কাঁদতে কাঁদতে বিরবির করে বলে।

খাবার খাওয়া শেষে তানহা অভির বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। অভিও আসে তানহার পেছন পেছন।
” এখানে কেনো আসলেন? আপনাকে বললাম না খাট কিনে আনুন তারপর হাড়ি পাতিল। আমি ফ্লোরে ঘুমতে পানি না। আর করলা ভাজি দিয়ে দুটো রুটি খেয়ে আমার পেট ভরে নি।
অভি রেলিং ঘেসে দাঁড়ায়।
“পারবো না আমি। এমনিতেই বেকার আমি। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলি। এখন তোমার জন্য এসব আনতে গিয়ে বাবার টাকা নষ্ট করবো না।
কাঠকাঠ গলায় বলে দেয় অভি।
“আমি কিছুই জানি না। লাগবে আমার এগুলো। এনে দিবেন ব্যাছ।
আর কালকে মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাবেন আপনি।
তানহা ভাঙা জানালার দিকে তাকিয়ে বলে
” পাগল করে দেবে আমায় তুমি।
রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায় অভি।
তানহা মুচকি হাসে।
“আপনি যে ফ্লোরে ঘুমতে পারেন না জানি এটা আমি। কদিন ধরে এরকম রুটি খেয়ে আছে কে জানে? আমি এসে গেছিএখন। আপনার সব কষ্ট দুর করে দেবো। আপনাকে নিজের মনের মতো করে গড়ে তুলবো। যারা আপনাকে ভেঙে দিয়েছে তারা একদিন আপনাকে দেখে আফসোস করবে। পুরো দুনিয়া দেখবে তানহা আর অভিকে।
সামনের চুল গুলো ফু দিয়ে উড়িয়ে দেয় তানহা।

রাত দশটা বাজে। প্রতিদিন স্মৃতির পাশে হালিজা ঘুমায়৷ হালিজা নানু বাড়ি গেছে বলে এখন স্মৃতি একাই ঘুমিয়েছে। সারাদিন কান্না করার ফলে খুব তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে স্মৃতি। হঠাৎ স্মৃতির ফোন বেজে ওঠে। ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। খুব বিরক্ত হয় স্মৃতি। ঘুমের ঘোরে হাত দিয়ে বালিশের ডান সাইডে থেকে ফোন নিয়ে নাম্বার না দেখেই রিসিভ করে কানে দেয়।
ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে।
” হ্যালো কে?
ওপাশের মানুষ স্মৃতির এরকম কন্ঠ শুনে ঢোক গিলে বুকে হায় দেয়।
“আমি
কন্ঠটা কানে যেতেই ধরফরিয়ে ওঠে স্মৃতি। নিমিষেই ঘুম গায়েব হয়ে গেছে। আপনাআপনি দুই ঠোঁটের মাঝ খানে ফাঁকা হয়ে যায়।

ঠিকঠাক ভাবে খাট সেট করে অভি আর তানহা ক্লান্ত হয়ে খাটের ওপর বসে পরে। একটা বড় খাট এনেছে আর একটা ছোট চৌকি। দুটো আনতো না। খাটের সাথে চৌকি ফ্রী দিয়েছে। বাম পার অফার চলছে। অফারের মেয়াদ খুবই সীমিত। ভাগ্যিস অভি গেছিলো আজ কিনতে।
তোষকও কিনেছে ছোট চৌকিটার জন্য।
” চলুন রান্না করবো।
তানহা উঠে দাঁড়িয়ে কোমরে ওড়না বাঁধতে বাঁধতে বলে।
“কিহহহহ আমি রান্না করবো?
অভি চোখ বড়বড় করে বলে।
” অবিয়েসলি
খাবো দুজন তো রান্না একা একা করবো কেনো?
কোমরে হাত দিয়ে বলে তানহা।
“আমি খাবো না তবুও রান্না করতে পারবো না।।
বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলে অভি।
” খাবেন তো অবশ্যই। এমন রান্না করে খাওয়াবো আপনাকে সারাজীবন মনে রাখবেন।
বিরবির করতে করতে চলে যেতে নিয়ে থেমে যায় তানহা।
“ঠিক আছে রান্না করতে হবে না। রুমেটা ঝাড়ু দিন।
” তোমাকে তো আমি।বিরক্ত হয়ে উঠে বলে অভি। তানহা এক দৌড়ে বেরিয়ে যায়।

অভি দুই হাতে চুল টানতে থাকে।
“এই মেয়েটা আমাকে জ্বালিয়ে মারবে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here