ভালোবাসি তাই ২ পর্ব -২২

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ২২
#তানিশা সুলতানা

একটা ছেলের সিগারেট খাওয়ার দৃশ্য এতো সুন্দর হতে পারে? না কি যাকে ভালো লাগে তার সব কিছুই ভালো লাগে? বুঝে উঠতে পারছে না তানহা বা বুঝতে চাইছে না?
অভি এক মনে সিগারেট টেনে যাচ্ছে। তানহা পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। খুব ভালো লাগছে। এতোটাই ভালো লাগছে যে পলক ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে না মনে হচ্ছে পলক ফেললেই যদি একটু খানি মিস করে ফেলে।
”এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
অভি তানহার দিকে না তাকিয়েই বলে।
তানহা কিছুটা নরেচরে বসে। বার কয়েক চোখের পলক ফেলে।
“আপনি তো মন প্রাণ দিয়ে সিগারেট খাচ্ছেন তো বুঝলেন কি করে আমি আপনার দিকে তাকিয়ে আছি?
গালে হাত দিয়ে বসে বলে তানহা।
অভি মৃদু হাসে।
” এটাই তো আমার স্পেশালিটি।
সিগারেটের ধোঁয়া আকাশে উড়িয়ে দিয়ে বলে অভি।
তানহা মোরা টেনে অভির সামনা সামনি বসে।
“সিগারেট কেনো খান আপনি?
” ভালো লাগে
“আমিও খাবো
অভি ফট করে তানহার মুখের দিকে তাকায়। তানহা গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে অভির দিকে।
” এইসব সবাই খেতে পারে না।
দুই ঠোঁটের ভাজে সিগারেট নিয়ে বলে অভি।
“আপনি পারলে আমিও পারবো।
“যাও তো এখান থেকে।
তানহা অভির ঠোঁটের ভাজ থেকে সিগারেটটা টেনে নেয়।
অভি চোখ মুখ শক্ত করে তানহার দিকে তাকায় অভি।
” খাবো বলছি তো খাবোই
বলেই মুখে পুরতে যায়। অভি হাত ধরে আটকে দেয়।
“বললাম না খাবো
অভির হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে তানহা।
অভি তানহার দুই হাত শক্ত করে ধরে।
” আমি বললাম না তুমি খাবে না।
তানহার হাত থেকে সিগারেটটা নিতে নিতে বলে অভি।
তানহা চোখ পাকিয়ে তাকায়। কিছু বলে না।
অভির হাতের বাঁধন হালকা হতেই সুযোগ বুঝে সিগারেটটা হাতে নিয়েই মুখে পুরে নেয়।
টান দিতেই নাক মুখ দিয়ে ধোঁয়া উঠে যায়। সাথে সাথে ফেলে দেয় তানহা। কাশতে থাকে।
অভি তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। চোখে মুখে রাগ ফুটে উঠেছে।
“একটা কথাও আমার শুনো না তুমি।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে অভি।
তানহা বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নিচ্ছে।
” এসব মানুষ খায়? ঠোঁট পুরিয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে কি শান্তি পান?
চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলে।
অভি কিছু বলে না।
“শুনুন আর সিগারেট খাবেন না আমায়। আর যদি সিগারট খান তো
থেমে যায় তানহা।
” তো কি?
উৎসাহিত হয়ে জিজ্ঞেস করে অভি।
“এখন বলবো না। পরে বলবো।
মিষ্টি হেসে বলে তানহা।
” এখন কেনো বলবে না?
বুকে হাত গুঁজে জিজ্ঞেস করে অভি।
“যখন আমাকে ভালোবাসবেন তখন বলবো।
লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিমায় বলে তানহা।
“আসো কাছে আসো ভালোবাসি। চলবে? না কি আর অন্য কোনো ওয়ে আছে ভালোবাসার?
তানহাকে টান দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে বলে অভি।
এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না তানহা। দুই ঠোঁটটা আলাদা হয়ে যায়। চোখ দুটোও বড় বড় হয়ে যায়।
পরে যাওয়ার ভয়ে অভির হাতটা শক্ত করে খামচে ধরে।
তানহার চুল গুলো খোপা করা ছিলো। অভি খুলে দেয়। তানহার শেম্পু করার চুলে নাক ডুবায়।
তানহা শিউরে ওঠে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে কোমর থেকে অভির হাত ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পরে।
” এএএভাবে ভালোবাসে না কি?
রিনরিনিয়ে থেমে বলে তানহা।
“তাহলে কিভাবে ভালোবাসে? মুখে শখানেক ভালোবাসি বললেই কি ভালোবাসা হয়ে যায় না কি? আমি কথায় না কাজে বিশ্বাসী। তো ভালোবাসি না বলে কাজে করে দেখাচ্ছি।
ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে অভি।
” আর জীবনেও ভালোবাসতে বলবো না। পাক্কা প্রমিজ
তানহা ঢোক গিলে বলে।
অভি তানহার ঘাড় থেকে মুখ তোলে।
তানহা অভির হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে চলে যায়। বুকের ভেতর ধক ধক করছে। হাত পা কাঁপছে এখনো।
এতোদিন জোর করে অভিকে স্পর্শ করেছে। এই প্রথমবার অভি নিজে থেকে স্পর্শ করলো। এ কেমন অনুভূতি? মন চায় স্পর্শটা পেতে কিন্তু বিবেক বলে পালা।
কেনো এমন হয়?
ভয় হয় না তবুও হাত পা কাঁপছে। মুচকি হাসে তানহা। হাতটা আপনাআপনি ঘাড়ে চলে যায়।
“এই টুকুতেই এই অবস্থা। উনি যদি আরও একটু গভীর স্পর্শ করে না জানি কি হবে আমার। আমি তো পাগল হয়ে যাবো।
তানহা বিরবির করে বলে।

অভি আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
” পাগলীটা।
অবশেষে পাগলিটাকে জব্দ করার রাস্তা খুঁজে পেলাম।

🥀🥀🥀🥀🥀
আবিরকে আনিকা বেগমকে ধোঁকা দিয়ে স্মৃতিকে নিয়ে চলে গেছে। চিৎকার করে কাঁদছে আনিকা বেগম। আহাম্মদ সাহেব চলে গেছে পুলিশকে কমপ্লেন করতে। রাফিদ আর হালিজা শান্তনা দিচ্ছেন আনিকা বেগমকে।

আবির স্মৃতিকে নিয়ে শহর ছেড়ে গ্রামের চলে এসেছে। শহর থেকে অনেক দুরে। স্মৃতি অনেকখন দাঁপড়াদাঁপড়ি করে এখন শান্ত হয়ে চোখের পানি ফেলছে। এছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই। এখান থেকে তো আবিরের ইচ্ছে ছাড়া মুক্তি পাবে না ও। একেতে পা ভাঙা আর ওপর আবার এখানকার কিছুই চেনে না।
আবির আরচোখে স্মৃতির দিকে তাকাচ্ছে বার বার।
আবিরের ফোন বেজে ওঠে।
ফোনের স্কিনে তাকাতেই আবিরের চোখে মুখে বিরক্তি ফুটে ওঠে।
“হ্যাঁ বল
” ভাই তুই কোথায়?
মোহনা জিজ্ঞেস করে।
“এয়ারপোর্টে এসেছি। সিঙ্গাপুর যাচ্ছি।
আবিরের কথা শুনে মোহনার মুখটা খুশিতে চকচক করে ওঠে।
” রাখছি। আর ফোন করবি না। ফোন বন্ধ থাকবে।
বলেই ফোন কেটে দেয়।
স্মৃতি কান্নার মাঝেই মুখ বাঁকায়। কতো নির্বিঘ্নে ফটফট করে মিথ্যে কথাগুলো বলে গেলো। এই মিথ্যেবাদিটাকে একদম বিশ্বাস করতে পারে না স্মৃতি। একবার মন নিয়ে খেলেছে। আবার এই সুযোগটা দেবে না স্মৃতি।

সবুজ টিনের ঘরের সুন্দর একটা বাড়ির সামনে গাড়ি থামায়। বাড়িটা খুব সুন্দর।
স্মৃতি এক পলক তাকায় বাড়িটার দিকে। বাড়ির উঠোনটা গাঁধা গোলাপ ঘাস ফুল গাছ দিয়ে বোঝায়। বেতের গেইট আছে। তাতে ঘাস ফুল গাছে জড়িয়ে আছে।

আবির স্মৃতির ছিট বেল্ট খুলে দেয়।
“কেমন আমাদের ছোট্ট ঘর?
ভ্রু নাচিয়ে হাসি মুখে জিজ্ঞেস করে আবির।
স্মৃতি মুখ ঘুরিয়ে নেয়। চোখ মুখ ফুলে গেছে। পাপড়ি গুলো ভিজে গেছে।
আবির কোলে তুলে নেয় স্মৃতিকে। স্মৃতি গলা জড়িয়ে ধরে না।
লাথি দিয়ে দরজা খুলে ফেলে আবির। তারপর রুমের ভেতরে ঢোকে।
ভেতরটা আরও সুন্দর। কাঠের তৈরি ড্রেসিং টেবিল খাট আলমারি সব।
আবির খাটে বসিয়ে দেয় স্মৃতিকে। খুব যত্ন করে পা টা বালিশের ওপর রেখে দেয়।
” আজকে থেকে আমাদের নতুন জীবন শুরু। এখানে কেউ থাকবে না। শুধু আমি আর তুমি।

🥀🥀🥀🥀
তানহা চা বানাচ্ছে। অভি তানহার জামাকাপড় গুছিয়ে দিচ্ছে। কাল সকালেই তানহা কে বাসে তুলে দেবে।
“আমি যাবো না। আর গেলে আপনি আমার সঙ্গে যাবেন।
তানহা চা টা কাপে ঢেলে বলে।
” যাবে
তানহা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে অভির পাশে এসে বসে।
“সোজাসাপ্টা একটা কথা বলছি।
আপনাকে ছাড়া আমি দুই মিনিটও থাকতে পারবো না। আমি যদি যাই তো আপনি আমার সঙ্গে যাবেন। অফারটা পছন্দ হলে এক চাপুন না হলে দুই চাপুন।
দ্বিতীয় বার কাপে চুমুক দিয়ে বলে তানহা।
অভি ঠাস করে হাতে থাকা তানহার জামা ফেলে দেয়। তানহার দুই বাহু শক্ত করে ধরে।
” আমার এখানে আসার পর থেকে ভালো কিছু খাওয়াতে পারি নি। যে জামা নিয়ে এসেছো সে গুলো পুরনো হয়ে গেছে। তাই পরে আছো। কি সুখ দিতে পারছি আমি তোমাকে।
জীবনে এই রকম পুরনো জামা পেরেছো তুমি?
গলার স্বর কাঁপছে অভির।
তানহা মুচকি হাসে। অভির বুকে মাথা রাখে।
“আমার কিচ্ছু চায় না। শুধু এখানে মাথা রেখে বাকিটা জীবন কাটাতে দিলেই হবে।
অভি তানহার মাথায় হাত বুলায়।
” এভাবে বাঁচা যায় না। জীবনে টাকা না থাকলে দাম থাকে না।
“টাকা আসবে তো। মাস শেষেই গুনেনগুনে চল্লিশ হাজার টাকা পাবেন আপনি। আমাদের দিন বদলে যাবে। আস্তে আস্তে আপনার সেলারি অনেক বেরে যাবে। নিজের টাকায় রং চটা বাড়িটা রং করবেন। অনেক টাকা থাকবে। আমাকে ভালো ভালো জামা কিনে দেবেন। আমাদের ছোট ছোট বাচ্চা হবে। তাদের ভালো স্কুলে পড়াবো।

অভি চোখ বন্ধ করে নেয়।
একজন জীবন থেকে সবটা কেরে নিলো। আরেকজন জীবনটাকে গুছিয়ে দিলো। ভালোবাসা সব সময় নিশ্ব করে না। ভালোবাসা বাঁচতেও শেখায়।

চলবে

গঠন মূলক মন্তব্য করবেন প্লিজ😊😊😊
বানান ভুল থাকতে পারে। রিচেক করা হয় নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here