#ভালোবাসি_তোমায়_বেশ
#পর্ব_৩
#লেখক_দিগন্ত
সাগর বলে,
-“যেই মেয়েটাকে আমি রিজেক্ট করলাম সেই মেয়েটাকে তুই বিয়ে করবি মাহিন! আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না।”
মাহিন সাগরকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়,
-“তুই বিদির মতো মেয়ের যোগ্য না। তাই তুই ওকে অবহেলা করতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছিস। সেদিক থেকে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। বিদিকে শেষপর্যন্ত জয় করতে পেরেছি। আমি তো এটা ভাবতেই পারিনি যে ওকে আবার ফিরে পাবো। তোকে থ্যাংকস আমাকে আমার বিদিকে ফিরে পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।”
-“তার মানে তুই সত্যি বিয়েটা করবি।”
-“বিয়ে কি কেউ মিথ্যা মিথ্যা করে?”
_____
বিশাল হোসেন আজ খুব খুশি। শেষ অব্দি তার মেয়েকে যোগ্য পাত্রের হাতে তুলে দিতে পারল। এটা ভেবেই ভালো লাগছে।
বিদিশা ও মাহিনকে পাশাপাশি বসানো হয়েছে। কাজি তাদের বিয়ে পড়াচ্ছেন। বিদিশা এই বিয়ে নিয়ে তখনও অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্বে ছিল। বিদিশার এখনো মনে হচ্ছে হয়তো সে মাহিনের পাশে বেমানান।
কাজি তখন থেকে কবুল বলতে বলছে। বিদিশা নিজের ভাবনাতেই মগ্ন৷ মাহিন বিদিশাকে বলে,
-“এভাবে চুপ করে না থেকে কবুল বলে দাও বিদি। আমি আর কতক্ষণ চুপ করে থাকবো। খুব ক্ষিধে পেয়েছে।”
মাহিনের কথা শুনে বিদিশা হেসে৷ এই অবস্থাতেও ছেলেটা খাওয়ার কথা বলছে। বিশাল হোসেন নিজের মেয়েকে এভাবে হাসতে দেখে খুব খুশি হন। আল্লাহর কাছে দোয়া করেন তার মেয়ের মুখের এই হাসি যেন চিরস্থায়ী হয়। বিদিশাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,
-“তাড়াতাড়ি কবুল বলে দে মা। ছেলেটার ক্ষিধে পেয়েছে। বুঝছিস না কেন?”
-“ক,,,কবুল।”
শেষ অব্দি বিদিশা কবুল বলে দেয়। শেষমেশ বিয়েটা হয়েই গেল!
বিয়ে হওয়ার পরই বিদিশা একবার সাগরের দিকে তাকায়। সাগরের চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল সে কতটা শকড হয়েছে এই বিয়েটায়। সাগরের চুপসে যাওয়া মুখ দেখে মাহিন হেসে ফেলে৷ উঠে গিয়ে সাগরকে বলে,
-“চল বন্ধু। এসেছিলাম তোর বিয়ে খেতে এখন দেখ তোকে আমার বিয়ে খেতে হবে। একসাথে খেতে বসি চল।”
সাগর তার বাবাকে বলে,
-“বাবা আমরা আর কতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে থাকব? চল এখন। আর মাহিন দেখি তুই কতদিন এই আলুর বস্তাকে নিয়ে সুখে সংসার করতে পারিস।”
মাহিন একটা অদ্ভুত কান্ড করে ফেলে। সাগরের গালে ঠা/স করে থা/প্পড় মা*রে। বলে,
-“বিদি এখন আমার স্ত্রী। ওকে সম্মান দিয়ে কথা বলবি। নাহলে আমি ভুলে যাব তুই আমার বন্ধু।”
-“ফাইন এর রিভেঞ্জ আমি নেব।”
সাগর চলে যায়। সাগরের পেছন পেছন তার বাবাও যায়। সাগরের বাবা বিড়বিড় বলছিস,
-“ইস রে এই ঘাড়ত্যাড়া ছেলের জন্য সব সম্পত্তি আমার হাতছাড়া হয়ে গেল৷ ঐ মেয়েটাকে বাড়ির বউ করতে পারলে সব সম্পত্তি আমাদের হতো৷ এই বোকা ছেলেটার জন্য আমার একুল ওকুল সব কুল গেল। ধুর ভাল্লাগে না।”
_____
মাহিন ও বিদিশাকে একসাথে বসিয়ে খাওয়াচ্ছেন বিশাল হোসেন। মেয়েকে বিদায় দেওয়ার আগে শেষবারের মতো নিজের হাত দিয়ে খাইয়ে দিচ্ছেন। চোখের জল মুছে মাহিনকে বলছেন,
-“আমার মেয়েটার ভালো করে খেয়াল রেখো। অনেক আদরে ওকে মানুষ করেছি। জানো মেয়েটা আমি খাইয়ে না দিলে তৃপ্তি করে খেতে পারে না। না জানি তোমাদের গিয়ে কিভাবে থাকবে। মা মরা মেয়ে আমার। ওর কোন অযত্ন…”
কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন বিশাল হোসেন। বিদিশাও বাবাকে এভাবে কাঁদতে দেখে কেঁদে ফেলে। বলতে থাকে,
-“তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকব বাবা? তোমাকে ছাড়া একটা দিনও বাইরে থাকি নি। এখন তোমাকে ছাড়া এত দূরে গিয়ে কিভাবে থাকব?”
-“কাঁদিস না মা। মেয়ে হয়ে জন্ম নিলে একদিন না একদিন তো এভাবে চলে যেতেই হতো।”
মাহিন নিজের প্লেট থেকে নিয়ে নিজের হাতে বিদিশাকে খাইয়ে দেয়। বিদিশা অবাক হয়ে যায়। ভাত খেতে খেতে বলে,
-“আমাকে এভাবে খাইয়ে দিচ্ছ কেন?”
-“তোমার বাবা তো বলল যে, উনি খাইয়ে না দিলে তুমি তৃপ্তি করে খেতে পারো না। এখন নাহয় আমি তোমাকে খাইয়ে দেব আর তুমি তৃপ্তি করে খাবো।”
এই বলে আরো এক লোকমা ভাত নিয়ে খাইয়ে দেয় বিদিশাকে। বিশাল হোসেন মুগ্ধ হয়ে এই সুন্দর দৃশ্য দেখতে থাকেন। আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া আদায় করেন তার মেয়ের জীবনে এত ভালো একটা ছেলেকে বর হিসেবে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য।
বিদিশা ও মাহিনের খাওয়া শেষ হয়। মাহিন বিশাল হোসেনকে বলে,
-“এখন তো আমাদের যেতে হবে। আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন আঙ্কেল।”
-“আমার কথা ভেবো না আমি নিজের খেয়াল ঠিকই রাখতে পারব। তুমি শুধু আমার মেয়েটার খেয়াল রেখো তাহলেই হবে।”
যাওয়ার সময় বাবাকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কাঁদতে থাকে বিদিশা। এই দৃশ্য যে কারো হৃদয়ে দাগ কে/টে যাওয়ার মতো। স্ত্রীর মৃত্যুর পর একাই নিজের মেয়েকে মানুষ করেছেন বিশাল হোসেন। অনেকে দ্বিতীয় বিয়ের পরামর্শ দিলেও নিজের মেয়ের কথা ভেবে তিনি আর বিয়ে করেন নি। আজীবন মেয়েকে যত্নে রাখলেন।
এখন সেই মেয়েকে এভাবে বিদায় দিতে যে তার কত কষ্ট হচ্ছে সেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।
বিদিশা কাঁদতে কাঁদতে পাগল হয়ে যাচ্ছে। বাবাকে বলছে,
-“তুমি ঠিক সময়মতো ওষুধ খাবে, প্রতিদিন সকালে ব্যায়াম করবে। আর হ্যাঁ বেশি রাত জেগে থাকবে না। যদি তুমি অসুস্থ হয়ে পড়ো তাহলে আমি কিন্তু সব ছেড়ে এখানে চলে আসবো তোমার খেয়াল রাখতে।”
-“পাগলী মেয়ে। আমি সব কথা শুনব কিন্তু তোকেও আমার কথা শুনতে হবে। ঐ বাড়ির সবাইকে আপন করে নিতে হবে। এখন থেকে ওটাই তোর পরিবার। কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করবি না, বড়দের সম্মান করবি, ছোটদের স্নেহ। শ্বশুর-শাশুড়িকে মা-বাবার মতো সম্মান দিবি। আমি যেন না শুনি আমার মেয়েকে ঠিকমতো মানুষ করতে পারি নি। আমি যে তোকে সঠিক শিক্ষা দিয়েছি নিজের ব্যবহার দিয়ে সেটা প্রমাণ করে দিবি।”
-“হ্যাঁ বাবা। আমি সব কথা মেনে চলব।”
-“গুড গার্ল।”
মাহিন বিদিশাকে নিয়ে তার গাড়িতে ওঠে। গাড়ি স্টার্ট হয়। বিদিশা কান্না থামায় না। মাহিনও তাকে কিছু বলছিল না। এভাবে নিজের বাড়ি ছেড়ে চলে আসলে কাঁদাটাই স্বাভাবিক। বিদিশা কাঁদতে কাঁদতে একসময় মাহিনের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। ঠান্ডা বাতাস আসছিল তাই মাহিন নিজের চাদর খুলে বিদিশার গায়ে জড়িয়ে দেয়।
__________
-“বিদি উঠে পড়ো আমরা এসে গেছি।”
বিদিশা চোখ মেলে তাকায়। বুঝতে পারে তাঁরা মাহিনদের বাড়িতে পৌঁছে গেছে। বিদিশা গাড়ি থেকে নামতে গেলে মাহিন নিজের হাত বাড়িয়ে দেয়। বিদিশা মাহিনের হাত ধরে গাড়ি থেকে নেমে আসে।
বিদিশার এখন খুব ভয় করছিল। না জানি মাহিনের পরিবার তাকে দেখে কি রিয়্যাক্ট করবে। হয়তো তাকে কেউ মেনে নাও নিতে পারে।
বিদিশার মনের এই ভয়টা মাহিন বুঝতে পারে। তাই বিদিশাকে আশ্বাস দেয়,
-“তুমি কোন চিন্তা করো না বিদি। দেখবে যা হবে সব ভালোই হবে।”
বিদিশা মেকি হাসার চেষ্টা করে। মাহিন বিদিশার হাত শক্ত করে ধরে। বাড়ির সামনে এসে কাউকে একটা ফোন করে।
কিছুক্ষণ পর মাহিনের বড় ভাই মিরাজ এসে দরজা খুলে দেয়। মাহিন মিরাজকে বলে,
-“ভাইয়া বাকিরা কোথায়? তোকে তো সবকিছুই বলেছি। তুই ম্যানেজ করতে পেরেছিস তো?”
মিরাজ বলে,
-“আমি সেই সুযোগটাই পাইনি। কেউ কিছু জানে না।”
এবার মাহিনেরও একটু একটু ভয় করতে শুরু করে। মাহিনের মনোভাব বুঝতে পারে বিদিশা। সে বলে,
-“আমি বরং এখান থেকে চলে যাই তাহলে ভালো হবে?”
মাহিন(রেগে গিয়ে)
-“তুমি দাঁড়িয়ে থাকো চুপ করে। আমি তোমাকে সংসার করার জন্য বিয়ে করেছি চলে দিতে যাওয়ার জন্য নয়।”
বিদিশা আর কিছু বলতে পারে না। তন্মধ্যে মাহিনের মা মিতালি চলে আসে। মাহিনের পাশে একটা মেয়েকে দেখে বলে,
-“মাহিন এই মেয়েটা কে?”
-“ও আমার স্ত্রী।”
-“হায় হায় বন্ধুর বিয়ে খেতে গিয়ে তুই বউ নিয়ে ঘরে এলি!”
(চলবে)