ভালোবাসি তোমায় বেশ পর্ব -০২

#ভালোবাসি_তোমায়_বেশ
#পর্ব_২
#লেখক_দিগন্ত
মাহিন বলে ওঠে,
-“এখন তো আমার এই মেয়েটাকেই করতে ইচ্ছে করছে। তোকে দেখিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে যে মানুষের সুখী হওয়ার জন্য সুন্দরী বউ থাকাই যথেষ্ট না।”

মাহিনের কথাটা শুনে বিদিশার মনে অন্যরকম অনুভূতি খেলা করে যায়। কিন্তু বিদিশা নিজের মনকে বোঝায় এভাবে কারো করুণার তার দরকার নেই। তাই সে সেখান থেকে চলে যেতে যাচ্ছিল তখনই বিশাল হোসেন তাকে বলে,
-“বিদিশা থাম মা। আমি আজই তোর বিয়ে দেব আর এই ছেলেটার সাথেই বিয়ে দেব।”

মাহিনকে দেখিয়ে কথাটা বলে বিশাল হোসেন। বিদিশা ভীষণ অবাক হয়ে যায় তার বাবার কথায়। তার ভেতর থেকে প্রতিবাদী সুর নাড়া দিয়ে ওঠে। বিদিশা বলে,
-“বাবা প্লিজ! তুমি তো বললে আজীবন আমি কুমারী থাকব তাও ঠিক আছে। এখন তাহলে এরকম কথা বলছ কেন?”

-“কারণ আমি দেখিয়ে দিতে চাই যে, আমার মেয়ে অযোগ্য নয়। তাকে নিয়েও কেউ সুখী হতে পারবে, আমার সম্পত্তির লোভে নয়, আমার মেয়েটাকে কেউ মন থেকে ভালোবাসবে।”

বিদিশা মুচকি হেসে করে বলে,
-“আমাকে সত্যি ভালোবাসা যায়না বাবা। তুমি আমার বাবা জন্য আমায় ভালোবাসো। কিন্তু অন্য ছেলেদের ভালোবাসা কেবল সুন্দরী মেয়েদের জন্য বরাদ্দ। আমার মতো আলুর বস্তাকে কোন ছেলে কখনো ভালবাসতে পারবে না।”

মাহিন এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার মুখ খোলে। বিদিশাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
-“অন্যের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আগে নিজেকে নিজে ভালোবাসতে হয়। তুমি যদি নিজেকে নিয়ে নিজে খুশি না হন তাহলে অন্য কেউ তোমাকে কিভাবে ভালোবাসবে বিদি?”

মাহিনের কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় বিদিশা। ‘বিদি’ এই নামে তো একজনই তাকে ডাকত। কিন্তু এই ছেলেটা কিভাবে সে হতে পারে! বিদিশা কিছুতেই কিছু ভেবে পায়না।

মাহিন বিশাল হোসেনের সামনে এসে বলে,
-“আমায় চিনতে পারেন নি আঙ্কেল? আমি মাহিন চৌধুরী। বিদির ছোটবেলার বন্ধু।”

বিদিশা এবার ভীষণ অবাক হয় সাথে খুশিও। এই তাহলে মাহিন! বিদিশার ছোটবেলার বন্ধু। মাহিনের সাথে স্কুলে ক্লাস ৫ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিল বিদিশা। ছোটবেলায় মাহিনও বিদিশার মতো মোটাতাজা ছিল। এখন আর তাকে দেখে চেনার উপায় নেই যে এই সেই মাহিন।

মাহিন এবার বিদিশার দিকে তাকায়। বিদিশা মাহিনের দিকেই তাকিয়ে ছিল। মাহিন হালকা হেসে বলে,
-“তুমি আমাকে চিনতে না পারলেও আমি কিন্তু প্রথম দেখাতেই তোমাকে চিনে ফেলেছি বিদি। তুমি তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে কিভাবে ভুলে যেতে পারলে?”

বিদিশা অভিমান করে বলে,
-“আমি কোথায় তোমাকে ভুলে গেলাম মাহিন? তুমি তো ছোটবেলায় আমাকে ছেড়ে বিদেশে চলে গিয়েছিলে। তারপর আর আমার সাথে যোগাযোগও করো নি। এখন আমাকে দোষ দিচ্ছ।”

-“বিশ্বাস করো আমি বিদেশে গিয়ে তোমার সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। আমার মোবাইলটা হারিয়ে গিয়েছিল। যার কারণে তোমার নাম্বার ডিলিট হয়ে যায়। দুই বছর আগে দেশে ফিরে যখন তোমাদের আগের বাড়িতে যাই তখন জানতে পারি তোমরা সেখান থেকে চলে এসেছ। এরপর অনেক খুঁজেছি কিন্তু তোমরা কোথায় আছ তার খোঁজ পাইনি। আজ দেখ সৌভাগ্যবশত তোমার সাথে দেখা হয়ে গেল।”
_____
সাগর দাঁড়িয়ে এসব কথাবার্তা শুনছিল আর বিরক্ত হচ্ছিল। এবার সে মাহিনকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
-“হয়েছে তোর এইসব নাটক? এখন চল এখান থেকে।”

সাগর মাহিনের হাত ধরে নিয়ে যেতে চায় তখন মাহিন সাগরের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
-“আমি তোর সাথে আর কোন কথা বলতে চাইনা। তুই বলেছিলি না বিদিকে কেউ যদি বিয়ে করে তাহলে তার বাবার টাকার লোভে। দেন তুই তো জানিস আমার বাবা যথেষ্ট রিচ, আমার টাকা পয়সার লোভ থাকার কথা না। সো আমি যদি বিদিকে বিয়ে করি তাহলে নিশ্চয়ই বিদিকে মন থেকে মেনেই বিয়ে করব। তাইনা?”

সাগর হেসে ফেলে মাহিনের কথা শুনে।বলে,
-“তুইওনা ভালোই মজা করতে পারিস। তুই যা হ্যান্ডসাম তোকে বিয়ে করার জন্য কত মেয়ে পাগল। আর তুই কিনা এই আলুর বস্তাকে বিয়ে করবি। আমাকে এটাও বিশ্বাস করতে হবে?”

এত অপমান আর সহ্য হচ্ছিল না বিদিশার।সে বলে,
-“আমি কোন বিয়ে করব না। আমি তো বললাম আমার মতো মেয়েকে বিয়ে করা দরকার নেই। আমি করতে চাইনা বিয়ে।”

বিদিশা চলে যেতে নেয় তখন বিশাল হোসেন বলে ওঠে,
-“তুই দাঁড়া বিদিশা। তোকে আজ আমি বিয়ে দেব মাহিনের সাথে। ছেলেটাকে আমার ভরসাযোগ্য মনে হচ্ছে।”

-“বাবা বিয়েতে কি আমার কোন মত লাগবে না? আমি তো বলছি বিয়ে করবোনা। তুমি কেন এমন করছ?”

-“তুই তো দেখছি হিরা চিনতেই পারিস না মা। সাগরের মতো একটা কাঁচকে ভালোবাসলি। আমার কাছে তাকে পাওয়ার জন্য কত আবদার করলি। এখন ওর কাছে কিরকম অপমানিত হলো। এখন যখন আমি তোর জন্য হিরা খুঁজে পেয়েছি তখন তুই বিয়েতে না করে দিচ্ছিস।”

-“বাবা তুমি বোঝার চেষ্টা করো মাহিন আমার ছোটবেলার বন্ধু। আমার এই অবস্থা দেখে হয়তো ওর খারাপ লাগছে তাই বিয়েটা করতে চাইছে। কিন্তু পরে তো এই সিদ্ধান্তের জন্য ও আফসোস করতে পারে।”

মাহিন বিদিশার দিকে এগিয়ে এসে বলে,
-“ছি বিদি তুমি আমার সম্পর্কে এরকম কথা ভাবতে পারলে? তোমার মনে নেই ছোটবেলায় আমি যখন মোটা ছিলাম জন্য কেউ আমার সাথে মিশত না, সবাই মটু মটু বলে ক্ষেপাতো। সেইসময় আমার খুব বেশি বন্ধু ছিল না। তুমি ছিলে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। সেসময় তুমিও তো স্লিম ছিলে। আমাকে যখন কেউ মোটা বলে ক্ষেপাতো তুমি এসে আমার হয়ে ফাইট করতে। আমি কিন্তু সেসব ভুলিনি। তখন থেকেই আমার মনে তোমার জন্য যায়গা তৈরি হয়েছিল। আমি যদি বিয়ে করি তোমাকেই করব—এটা আমি অনেক আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলাম।”

মাহিনের কথাগুলো শুনে চমকে যায় বিদিশা। মাহিনকে দেখে মনে হচ্ছে সে সব সত্যিই বলছে। কিন্তু বিদিশার কেন জানি সব মিথ্যা মনে হচ্ছে।

সবার কাছে উপহাসের পাত্র সে। মোটা হওয়ার জন্য কম কথা শুনতে হয়নি জীবনে। আসলে আমাদের সমাজটাই এমন যেখানে সবাই রূপের কদর করে। মোটা,রোগা,খাটো কিংবা কালো হলে কথা শোনানো যেন সবার স্বভাব। আর সে যদি হয় মেয়ে তাহলে তো কোন কথাই নেই। এসব করতে গিয়ে মানুষ ভুলে যায় আল্লাহ আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছে এবং তার সব সৃষ্টিই সেরা।

বিদিশা এইসব ব্যাপারকে এতদিন সেভাবে আমলে না নিলেও আজ নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছে উপহাসের পাত্র হওয়ার পর তার নিজেকে নিয়ে খুব লজ্জা হচ্ছে। তার কাছে মনে হচ্ছে সে অযোগ্য মেয়ে।

মাহিন বুঝতে পারে বিদিশার মনে কি ভাবনা চলছে। তাই সে এগিয়ে এসে বিদিশাকে ভরসা দিয়ে বলে,
-“সবাইকে একরকম ভেবো না বিদি। সবার মানসিকতা এক হয়না। মানুষের মনটাই আসল–আমি সেটাই মানি। আর আমি সেই মন থেকে তোমায় স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে প্রস্তুত। এরপরও যদি তুমি আমায় ফিরিয়ে দাও সেটা হবে আমার দূর্ভাগ্য। হয়তো আমিই তোমার যোগ্য নই।”

-“এসব তুমি কি বলছ মাহিন। তুমি আমার যোগ্য হবে না কেন? তুমি সবদিক থেকে একজন সেরা ছেলে আমিই তোমার….”

-“ব্যাস আর কোন কথা বলবে না। আমি আগেও বলেছি আবারও বলছি নিজেকে ভালোবাসতে শেখ। নিজের প্রতি নিজের এত অনীহা থাকা ঠিক না।”

বিশাল হোসেন নিজের মেয়ের উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
-“এতকিছুর পরেও এই ছেলেটাকে তুই ফিরিয়ে দিবি? দেখলি তো ছেলেটা কত ভালো। এরকম ছেলে লাখে একটা হয়। মাহিনের হাতে তোকে তুলে দিতে পারলে আমি নিশ্চিত হবো।”

বিদিশা সংশয়ের মধ্যে ছিল। হ্যাঁ বা না কিছুই বলতে পারছিল না। অবশেষে অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নেয় সে এই বিয়েটা করবে। বিদিশা বলে ওঠে,
-“ঠিক আছে বাবা আমি মাহিনকেই বিয়ে করব।”

-“আলহামদুলিল্লাহ। আমি খুব খুশি হয়েছি তোর সিদ্ধান্তে।”

সাগর পুরো ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় পুরো ঘটনায়। তার রিজেকশন করা মেয়েকে যে তার থেকেও ভালো ছেলে বিয়ে করতে যাচ্ছে এটাতে তার গায়ে ফোস্কা পড়ে। সাগর বলে…
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here