ভালোবাসি তোমায় বেশ পর্ব -০১

“এই মোটা মেয়েটাকে আমি কিছুতেই বিয়ে করবোনা বাবা। আগে যদি জানতাম তুমি এভাবে আমাকে বোকা বানাবে তাহলে কখনো বিয়ে করতে আসতাম না।”

বিয়ের আসরে সাগরের কথাটা শুনে বিদিশার এতবছরের জমানো সব স্বপ্ন যেন মুহুর্তেই ভেঙে গেল। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল নোনাজল।

সাগর বলতে থাকে,
-“আমাকে ধোকা দেওয়া হয়েছে। তুমি তো আমাকে অন্য একটা মেয়ের ছবি দেখিয়েছিলে, তাহলে এখন এই মেয়েকে বিয়ে করতে বলছ কেন? আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিল। বিয়ের আগে মেয়ের সাথে দেখা করতে দিলে না, নিশ্চয়ই কোন সমস্যা আছে। এই মেয়েটার বাবার সম্পত্তির লোভে তুমি এমন করেছ তাইনা বাবা?”

সাগরের কথাটা শুনে বিদিশা অবাক হয়। কি বলছে এসব সাগর? তার বাবার সম্পত্তির লোভে। বিদিশা তার বাবার দিকে তাকায়। মেয়ের দিকে করুণ চোখেই তাকিয়ে ছিলেন বিশাল হোসেন।

বিদিশা বুঝতে পারে পুরো ব্যাপারটা। তার বাবা তার ইচ্ছেটা পূরণ করার জন্য নিশ্চয়ই সাগরের বাবাকে টাকার লোভ দেখিয়েছিল। বিদিশা যে সেই ছোটবেলা থেকে এই একজনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে, সাগর আহমেদ, বিদিশার খালাতো ভাই।

বিদিশার বাবা তার সব ইচ্ছে পূরণ করে, একমাত্র আদরের মেয়ে বলে কথা। তাইতো নিজের বাবার কাছে আবদার করেছিল সাগরের সাথে যেন তার বিয়ে দেয়। কিন্তু পরিণাম এমন কিছু হবে জানলে কখনো এমন অন্যায় আবদার করতো না সে।

সাগরের বাবা সোহেল আহমেদ এতক্ষণে মুখ খোলেন। বিশাল হোসেনের দিকে আঙুল তুলে বলেন,
-“আমার কোন দোষ নেই সাগর। সব দোষ এই লোকটার। উনি আমাকে এইসব বুদ্ধি দিয়েছেন। আমার কাছে প্রথমে যখন বিদিশার সাথে তোর বিয়ের প্রস্তাব দিল তখন আমি না করে দিলাম। পরে আমাকে বলল বিয়েটা হলে সব সম্পত্তি তোর নামে লিখে দেবে। তখনও যখন রাজি হলাম না তখন তোর ক্ষতি করার হুমকি দিল।”

সোহেল আহমেদের কথা শুনে হতবাক হয়ে যান বিশাল হোসেন। এটা ঠিক যে তিনি সোহেল আহমেদকে বলেছিলেন, বিয়েটা হলে তার সব সম্পত্তি সাগর পাবে। কিন্তু তিনি মোটেই সাগরের ক্ষতি করার কথা বলেন নি। নাতো তিনি সাগরের ঠকাতে চেয়েছিলেন। তিনি তো ভেবেছিলেন সাগর এই বিয়েতে রাজি।

বিশাল হোসেন কিছু বলতে যাবে তার আগেই আশেপাশের লোকের কানাঘুষো শুনতে পেল,
-“দেখছিস আজকাল ক্ষমতার জোর খাটিয়ে মানুষ কত কি করে?”

-“আরে কি বলব। দেখছিস না মেয়েটাকে। এমন আলুর বস্তাকে কোন ছেলে বিয়ে করতে চাইবে। তাই তো এভাবে জোর খাটিয়ে বিয়ে দিতে হচ্ছে।”

বিশাল হোসেন থমকে যান এসব কথা শুনে। নিজের মেয়ের ব্যাপারে এমন কথা কোন বাবাই বা সহ্য করতে পারে।

এরমধ্যে সাগর এগিয়ে আসে। বিশাল হোসেনকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
-“আপনার থেকে এটা আশা করি না খালু। আপনাকে আমি ভালো মানুষ বলেই জানতাম। শুনে রাখুন আপনার এই মোটা মেয়েকে আমি বিয়ে করছি না। আমাকে দেখুন আমি কত হ্যান্ডসাম, কত ভালো জব করি। আমার পাশে কি এই আলুর বস্তাকে মানায় না-কি?”

বিশাল হোসেন ঠা*স করে থা*প্পড় বসিয়ে দেয় সাগরের গালে। সাগর চোখ বড় বড় করে তাকায়। বিশাল হোসেন সাগরকে শাসিয়ে বলে,
-“খবরদার আমার মেয়ের ব্যাপারে এরকম কথা বলবে না। আমারই ভুল হয়েছিল মেয়ের কথা শুনে তোমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম তোমাদের মতো থার্ড ক্লাস লোকেদের চিন্তাভাবনাও থার্ড ক্লাস। কি নেই আমার মেয়ের? আমার পরে এই সব সম্পত্তির একমাত্র মালকিন আমার মেয়ে। আর যদি সৌন্দর্যের কথা বলো তাহলে মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য কিছু না, মনের সৌন্দর্যই আসল। আমার মেয়ে দেখতে যেমনই হোক ওর মন পবিত্র, সুন্দর। আর তুমি বাইরে থেকে দেখতে যতই ভালো হও, তোমার মনটা একেবারেই কুৎসিত।”

সাগর বলে ওঠে,
-“তাহলে আমার মতো কুৎসিত মেয়ের সাথে আপনার মেয়েকে বিয়ে দিতে এত নোংরা খেলা খেললেন কেন?”

-“আমি কোন নোংরা খেলা খেলি নি। তোমার বাবা মিথ্যা বলছে। আমি তোমার ক্ষতি করার কথা তাকে বলিনি, আর না তো আমি জানতাম উনি তোমাকে মিথ্যা বলে, অন্য একটা মেয়ের ছবি দেখিয়ে বিয়ে করতে এনেছে।”

-“খুব ভালো নাটক করতে পারেন আপনি। আমার বাবাকে মিথ্যাবাদী বানাতে চাইছেন। আপনি কি ভেবেছিলেন আমি এখানে এসে আপনার সম্পত্তির লোভে নাচতে নাচতে বিয়েটা করে নেব?”

বিশাল হোসেন কিছু বলতে যাবে তখনই বিদিশা এগিয়ে এসে বলল,
-“না সাগর ভাইয়া আপনাকে এই বিয়েটা করতে হবে না। আপনি ঠিকই বলেছেন আমি আপনার যোগ্য নই। দোষ আপনার বা আমার বাবার নয় এখানে সব দোষ আমার। আমিই বাবার কাছে আবদার করেছিলাম যেন আপনার সাথে আমাকে বিয়ে দেয়। আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমার মতো আলুর বস্তার স্বপ্ন দেখতে নেই। আমি আপনার মতো এত সুন্দর ছেলের পাশে একেবারেই বেমানান। এতদিন আমার চোখে রঙিন চশমা লাগানো ছিল। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি, বাস্তবতা কখনো রঙিন হয় না। প্লিজ আপনি আর আমার বাবাকে কোন কথা শোনাবেন না। সব দোষ আমার।”

সাগর বলে,
-“তোমার কথা আর কি বলব? তোমার তো লজ্জা বলতেই কিছু নেই। কি ভাবে ভাবলে আমার মতো একটা ছেলে তোমাকে বিয়ে করবে? নিজেকে একবার আয়নায় দেখেছ? যাও দেখে এসো। বাদরের গলায় মুক্তোর মালা মানায় না। দেখ আমাকে কত স্লিম আর ফিট আমি। আর নিজেকে দেখো, তোমাকে দেখে বাচ্চা হাতির বাচ্চা মনে হয়।”

বিদিশা হতভম্ব হয়ে যায় সাগরের কথা শুনে। এতবছরের জমানো ভালো লাগা ঘৃণায় রূপ নিতে থাকে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই ছেলেটাকে পছন্দ করার জন্য এখন নিজের উপরই ঘৃণা হচ্ছে। কিন্তু বিদিশা আর কিছু বলতে পারল না। কথাগুলো সব গলায় আটকে যাচ্ছে।

বিদিশা দৌড়ে নিজের রুমের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করতেই শাড়িতে পা পেঁচিয়ে পড়ে যায়।

সবাই হো হো করে হাসতে থাকে। সবার হাসির শব্দ যেন তীরের মতো বিদ্ধ হয় বিদিশার মনে। সাগর চেচিয়ে বলে,
-“এই আলুর বস্তা মেয়ে ঠিকময় হাঁটতেই পারে না আবার দৌড়ানোর চেষ্টা করছে। এইরকম মেয়েকে না-কি আমি বিয়ে করব।”

হঠাৎ কেউ একজন হাত বাড়িয়ে দেয় বিদিশার দিকে। বিদাশা হাতের অধিকারী মানুষটার দিকে তাকায়। লম্বা, ফর্সা গড়নের সুন্দর একটা ছেলে। শরীর একদম ফিট আর দেখতে সাগরের থেকেও বেশি সুন্দর।

এসব কিছু এড়িয়ে বিদিশার চোখ যায় ছেলেটির চোখের দিকে। তার চোখে অন্যদের মতো কোন উপহাস নেই বিদিশাকে নিয়ে, আর না করুণা। ছেলেটির হাতকে ভরসার স্থল মনে হয় বিদিশার কাছে।

বিদিশা সেই হাতে ভর করে উঠে দাঁড়ায়। সাগর ছেলেটির উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“মাহিন তুই ঠিক আছিস তো না মানে এই আলুর বস্তাকে তুলতে গিয়ে তোর হাত ভেঙে যায়নি তো?”

বলেই খিলখিল করে হাসতে থাকে। এদিকে বিদিশার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়তে থাকে। বিশাল হোসেন চিৎকার করে বলেন,
-“আমার মেয়েকে নিয়ে আর একটা কথা বললে তোমাকে এখানেই জিন্দা ক*বর দেবো। সিকিউরিটি বের করে দাও সবাইকে। আমার মেয়ে যেমনই হোক আমার কাছে ফেলনা নয়। আমার মেয়েকে প্রয়োজনে আজীবন কুমারী করে রাখব। তবুও আমার মেয়েকে এসব কথা শুনতে দেব না।”

সাগর বলে,
-“আপনার মেয়েকে আজীবন কুমারীই থাকতে হবে খালু। কারণ এই মেয়েকে পৃথিবীর কোন ছেলেই বিয়ে করতে রাজি হবে না। অবশ্য দেখুন আপনার তো টাকা পয়সা আছে যদি কোন লোভী ছেলেকে টাকা দিয়ে রাজি করাতে পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন এই মেয়েকে কোন ছেলেই মন থেকে ভালোবাসতে পারবে না।”

মাহিন সাগরকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
-“ছি সাগর! তোকে নিজের বন্ধু ভাবতেও আমার লজ্জা করছে। তোর মেন্টালিটি এতটা চিপ! এতগুলো মানুষের সামনে একটা মেয়েকে এভাবে ইনসাল্ট করছিস।”

-“তুই বেশি জ্ঞান দিবি না। এই মেয়ের প্রতি এত দরদ থাকলে বিয়ে করে নে। তাহলে বুঝবি কত ধানের কতো চাল।”

মাহিন বলে ওঠে,
-“এখন তো আমার সেটাই করতে ইচ্ছে করছে।”
(চলবে)
#ভালোবাসি_তোমায়_বেশ
#সূচনা_পর্ব
#লেখক_দিগন্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here