ভালোবাসি তোমায় বেশ পর্ব -০৪

#ভালোবাসি_তোমায়_বেশ
#পর্ব_৪
#লেখক_দিগন্ত
মাহিনের মা মিতালি এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে তার ছেলে বিয়ে খেতে গিয়ে এভাবে বিয়ে করে আসবে। মাহিন বুঝতে পারে হাওয়া গরম। মিরাজও মাহিনকে ইশারা করে বুঝিয়ে দেয় খুব বড় ঝামেলা হতে চলেছে।

কিন্তু মিতালি কোন রিয়্যাক্ট না করে বলেন,
-“এই মেয়ে তোমার নাম কি?”

বিদিশা কাপা কাপা গলায় বলে,
-“আমার নাম জান্নাতুল বিনতে বিদিশা। বাবার নাম বিশাল হোসেন। মায়ের নাম…”

-“থাক থাক আর বলতে হবে না। বিয়েটা কিভাবে হলো?”

-“কাজি কবুল বলতে বলল। আমি আর আপনার ছেলে কবুল বলে দিল ব্যস বিয়েটা হয়ে গেল।”

মিতালির মুখটা ভাড় হয়ে যায়। মিতালি বলল,
-“ধুর আমি ভাবলাম সিরিয়ালের মতো কোন কাহিনি হয়েছে। সিরিয়ালে যেমন হয় লগ্নভ্রষ্টা হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে।”

-“ইসলামে লগ্নভ্রষ্টা নেই আম্মু।”

মাহিনের কথাটা শুনে মিতালি বলেন,
-“হ্যাঁ জানি জানি আমাকে জ্ঞান দিতে হবে না। তোর বিয়ে নিয়ে কত আশায় ছিলাম যে, আত্মীয় স্বজন ডেকে, বড় অনুষ্ঠানে করে তোর বিয়ে দেব। আমার বড় ছেলেটা তো দেবদাস হয়ে আছে, তুই আমার একমাত্র আশা। এখন তুইও আমায় ছ্যাকা দিয়ে দিলি। এখন তো দেখছি তোর আব্বুকে বলে আরেকটা ছেলের ব্যবস্থা করতে হবে।”

-“আম্মু…”

মিতালি বলেন,
-“আচ্ছা বিয়ে যখন হয়ে গেছে তখন আর কি বলব। আয় বউ নিয়ে ভেতরে আয়।”

ততক্ষনে মাহিনের বাবা আব্দুল্লাহ চৌধুরী ও বোন মিরা সেখানে চলে আসে। মিতালি চৌধুরী বেশ সাদা মনের মানুষ হলেও আব্দুল্লাহ চৌধুরী ঠিক তার বিপরীত। ছেলে না জানিয়ে বিয়ে করে এনেছে জেনে রাগে তার মাথা গরম হয়ে গেছে। মিরা সেই আগুনে ঘি ঢালার কাজ করে চলেছে। বারবার বলছে,
-“না জানি কোন গরীব ঘরের মেয়েকে আমার ভাইয়ার ঘাড়ে ঝুলিয়ে দিয়েছে। তুমি কিন্তু এই বিয়েটা মেনে নিবা না।”

আব্দুল্লাহ চৌধুরীও বলেন,
-“না কখনো না। আমি এই বিয়ে মানব না।”

মাহিন বিদিশাকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। বিদিশাকে দেখে মিরা মাথায় হাত দেয়। বলে,
-“হায় হায়! এ তো একটা জলহস্তি।”

বিদিশার কানে আসে কথাটা। খুব কষ্ট হয় তার মনে। মিরা চিৎকার করে বলতে থাকে,
-“এই মেয়েটাকে তুই কিভাবে বিয়ে করলি ভাইয়া? তোর পাশে কি এই মেয়েটাকে মানায়। কি মোটা মেয়েটা।”

আব্দুল্লাহ চৌধুরী বলে ওঠেন,
-“এভাবে কারো রূপ নিয়ে খোটা দিতে তোমায় আমরা শেখাই নি মিরা। প্রত্যেক মানুষই আল্লাহর সৃষ্টি। তার সৃষ্টিকে এভাবে অপমান করার অধিকার মানুষের নেই।”

বাবার কথায় দমে যায় মিরা। পরক্ষণেই আব্দুল্লাহ চৌধুরী বলে ওঠেন,
-“কিন্তু তারমানে এই নয় যে এই বিয়েটা আমি মেনে নেব। আমার ছেলে আমাকে না বলে বিয়ে করেছে এটা আমি জাস্ট মেনে নিতে পারছি না। ছেলে বড় হলে কি খুব লায়েক হয়ে যায়? বিয়ের সময় মা-বাবার অনুমতি নেওয়ার কি কোন প্রয়োজন নেই?”

মাহিন বলে,
-“আব্বু আমার কথাটা শোন। পরিস্থিতি…”

-” কোন অযুহাত আমি চাইনি। পরিস্থিতি যেমনই হোক আমাদের একবার জানানো তোমার দায়িত্ব ছিল। সেসব না করে তুমি যা করলে সেটা কখনো একজন আদর্শ ছেলের মতো কাজ নয়।”

মাহিন মাথা নিচু করে থাকে। মিতালিও সায় দিয়ে বলে,
-“এটা একদম ঠিক বলেছ। আমাদের না জানিয়ে এই বিয়েটা করা ওর ঠিক হয়নি। এখন ওকে কি শাস্তি দেওয়া যায় বলো তো?”

বিদিশা বলে ওঠে,
-“ওনার কোন দোষ নেই। ওনাকে কোন শাস্তি দেবেন না।”

বিদিশা পুরো ঘটনাটা শর্টকার্টে সবাইকে জানিয়ে দেয়। সব শুনে আব্দুল্লাহ চৌধুরী বলে,
-“বিয়েটা করেছ ঠিক আছে কিন্তু আমার একটাই কথা কেন আমাদের জানালে না।”

বিদিশা তার বাবাকে ফোন করে। বিশাল হোসেন ফোন রিসিভ করতেই ফোনে সব পরিস্থিতির কথা বলে। সব শুনে তিনি বলেন,
-“আসলেই এই ব্যাপারটা আমার মাথায় আসে নি। ওনাদের ছেলের বিয়ের ব্যাপারে ওনাদের মতামত নেওয়া জরুরি ছিল। তুই ফোনটা ওনাকে দে। আমি কথা বলছি।”

বিদিশা আব্দুল্লাহ চৌধুরীকে ফোনটা দেয়। তিনি কথা বলে নেন। কথা বলা শেষ করে বলেন,
-“আমি ওনার সাথে কথা বললাম। যাইহোক বিয়েটা যখন হয়ে গেছে এখন আর বলার কিছু নেই। তোমরা ঘরে যাও। এরপর আমরা আবার বড় অনুষ্ঠান করে নাহয় বিয়েটা দিয়ে দেব।”
_______
মিরা তার বাবার কথা শুনে রেগে যায়। বলে,
-“তুমি কিভাবে এই বিয়েটা মেনে নিতে পারো বাবা? মেয়েটার দিকে তাকাও একবার। এই মেয়েটা কিভাবে আমার ভাইয়ের বউ হয়?”

-“আমি এই ব্যাপারে আর কিছু বলতে চাইনা। আমার ছেলে যখন বিয়েটা মেনে নিয়েছে তখন আমি আর কি বলব। সংসার ওরা করবে ওরা বুঝে নিক।”

আব্দুল্লাহ চৌধুরী গটগট করে চলে যান। মিতালিও তার পেছন পেছন চলে যায়। মাহিন বুঝতে পারে তার বাবা প্রচণ্ড রেগে আছে। অবশ্য রেগে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। পাশ থেকে মিরাজ বলে,
-“চিন্তা করিস না ভাই সব ঠিক হয়ে যাবে। দেখিস তুই সুখী হবি। আমি প্রাপ্তিকে পাইনি বলে সুখী হইনি। তাই বাবা-মা এখন বুঝতে পেরেছে সন্তানদের চাওয়া-পাওয়া কতটা জরুরি। একই ভুল নিশ্চয়ই তারা দ্বিতীয় বার করবে না।”

মিরাজ চলে যায়। মাহিন বিদিশাকে বলে,
-“এখানে আর এভাবে না দাঁড়িয়ে থেকে চলো। আমার খুব ঘুম পেয়েছে।”

মিরা বলতে থাকে,
-“আমি এই মেয়েটাকে ভাবি হিসেবে মানি না। আমার ভাবিকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখছিলাম। আমার ভাবি হবে খুব সুন্দরী। আর সেখানে তুই এইরকম একটা জলহস্তিকে…”

-“এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে মিরা। তুই নিজের ঘরে যা।”

মিরা মুখ বাকিয়ে নিজের ঘরের দিকে যায়। মাহিন বলে,
-“আমার বোনের কথায় কিছু মনে করো না। ও একটু এইরকমই।”

-“আমি কিছু মনে করিনি। এসব কথা শুনতে শুনতে এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি।”

-“এসব কথাকে একদম গায়ে লাগাবা না। কেউ বেশি বাড়াবাড়ি করলে প্রতিবাদ করবা।”

-“আচ্ছা।”
_________
সাগর বাড়িতে ফিরে এসেছে থেকে একটার পর একটা জিনিস ভাংচুর করে চলেছে। তার বাবা-মা হাজার চেষ্টা করেও তাকে থামাতে পারছে না।

সাগর বলতে থাকে,
-“মাহিনের এত বড় সাহস আমাকে থা/প্পড় মা/রল আমাকে! ওকে উচিৎ জবাব না দেওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি নাই।”

সাগরের বাবা সোহেল আহমেদ বলেন,
-“মাথাটা ঠান্ডা কর। তোকে তো বলেছিলাম বিয়েটা করে নিতে। তুই এত নাটক করলি কেন?”

-“আরে বাবা আমি কি ভেবেছিলাম নাকি ঐ মাহিন এসে এভাবে খেলাটা ঘুরিয়ে দেবে? আমি তো ভেবেছিলাম বিদিশা আমার পায়ে ধরে বলবে আমায় বিয়ে করো, ওর বাবাও অনুরোধ করবে৷ আর এই সুযোগে আমি বলব আমাকে ১ কোটি টাকা দিন তাহলে আমি বিয়েটা করছি। কিন্তু সেসব তো কিছুই হলো না।”

-“তোকে মেয়েটাকে এত অপমান করতে কে বলেছিল? আরে গাধা বিয়েটা হয়ে গেলে এক কোটি কেন ঐ বিশাল হোসেনের সব সম্পত্তি আমাদের হাতের মুঠোয় চলে আসত। এখন দেখ আমাদের কিভাবে খালি হাতে আসতে হলো।”

সাগরের মা জাহানারা বেগম এতক্ষণ চুপ ছিল। আর চুপ না থেকে বলে,
-“তোমরা বাপ-বেটা ঝগড়া থামাও। আমার বোনের মেয়েটার দিকে নজর দিতে আগেই না করেছিলাম। তখন তো কথা শুনলা না। এবার সাগর তুই তোর ফুফুর মেয়েটাকে ফাসানোর চেষ্টা কর। তোর ফুফাও কিন্তু কম ধনী নয়।”

সোহেল আহমেদ আপত্তি জানিয়ে বলে,
-“আবার আমার বোনের মেয়েকে এর মধ্যে আনছ কেন?”

-“এখন খুব গায়ে লাগছে? আর যখন আমার বোনের মেয়ের সাথে একই কাজ করেছিলে তখন? বেশ হয়েছে বিয়েটা হয়নি। আমি খুব খুশি হয়েছি।”
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here