ভালোবাসি তোমায় বেশ পর্ব -০৫

#ভালোবাসি_তোমায়_বেশ
#পর্ব_৫
#লেখক_দিগন্ত
বিদিশা ঘরে বসে ছিল। মাহিন বাইরে থেকে এসে বিদিশাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে বলে,
-“এভাবে চুপচাপ বসে আসো কেন? টায়ার্ড লাগলে ঘুমিয়ে পড়ো।”

বিদিশা মাহিনের দিকে তাকায় একবার। তারপর দৃষ্টি নামিয়ে বলে,
-“দেখো মাহিন তুমি আমার খুব ভালো বন্ধু। আমিও সেটা স্বীকার করি। কিন্তু বিয়েটা যেরকমভাবে হয়েছে মানে..”

-“বুঝতে পেরেছি। তোমার কিছু সময় লাগবে সবকিছু মেনে নিতে তাইতো?”

-“হুম। তবে আমি বেশি সময় নেবো না। আসলে কি বলো সাগর ভাইয়া আমার সাথে যতই খারাপ ব্যবহার করুক। আমি সেই ছোটবেলা থেকে তাকে পছন্দ করি। এত জলদি তাকে ভুলে যেতে পারব না…আমার সময় লাগবে তার যায়গায় অন্য কাউকে বসাতে।”

বিদিশার কথাটা শুনে মাহিনের মুখ কালো হয়ে যায়। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে সে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। বিদিশা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে,
-“দেখো প্লিজ রাগ করো না। সাগরের কথা বলছি জন্য। তুমি হয়তো কাউকে ভালোবাসো নি। তাই বুঝতে পারছ না। কাউকে ভালোবাসলে এত সহজে চাইলেও ভোলা যায়না।”

মাহিন তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,
-“এত অপমানের পরেও তুমি কিভাবে ঐ ছেলেটার প্রতি নিজের ভালোবাসা এভাবে অকপট স্বীকার করছ আমি সেটাই ভাবছি। আমার এখন মনে হচ্ছে বিয়েটা করাই উচিৎ হয়নি। তুমি হাতে পায়ে ধরে ঐ সাগরকে বিয়ে করলেই ভালো করতে।”

-“এভাবে কেন বলছ? এত রিয়্যাক্ট করার মতো কিছু আমি বলিনি।”

মাহিন আর কোন কথা না বলে চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। বিদিশার এবার একটু আফসোস হতে থাকে এভাবে কথা বলার জন্য। কিন্তু বিদিশাই বা কি করবে! মন যে অনেক বড় শত্রু। সবার সাথে লড়াই করা যায় কিন্তু যখন মনই বিরুদ্ধে থাকে, মন আর মস্তিষ্কের লড়াইয়ে মনই জিতে যায় অধিকাংশ সময়। এক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে বিদিশার সাথে।
____________
মিরা নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে কেঁদে চলেছে। তার চোখের জল থামার কোন নাম নিচ্ছে না। মিরা এখনো মানতে পারছে না ঐ বিদিশা তার ভাবি। মিরা নিজেকে নিজেই বলছিল,
-“এখন আমি কিভাবে বন্ধু বান্ধবদের সামনে মুখ দেখাবো? আমি তো সবার সামনে সৌন্দর্য নিয়ে কত কথা বলি। কত বড়াই করে বলি আমাদের পরিবারের সবাই খুব সুন্দর। মাহিন ভাইয়ার কথা তো আরো বেশি করে বলি যে ওর মতো হ্যান্ডসাম ছেলে আর হয়না। তার বউ নিশ্চয়ই বিশ্বসুন্দরীই হবে। আমার বন্ধুরা যখন জানতে পারবে আমার সেই ভাই এমন একটা মুটকিকে বিয়ে করেছে তখন আমি আর কারো সামনে মুখই দেখাতে পারব না। না আমি এটা হতে দেবো না। যে করেই হোক আমি ঐ মেয়েকে আমার ভাইয়ের জীবন থেকে দূর করব।”

হঠাৎ করে মিরার ফোন বেজে ওঠে। ফোনের স্ক্রীনে চোখ জেতেই মিরার চোখে হাসি ফুটে ওঠে। মিরা ফোনটা রিসিভ করে আদুরে গলায় বলে,
-“সাগর ভাইয়া তুমি! আমাকে কল করেছ। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছেনা! ভুল করে কল করে ফেলো নি তো?”

সাগরের খুব বিরক্ত লাগছিল মিরার গলায়। মিরা মেয়েটাকে একেবারেই সহ্য করতে পারে না। যখন থেকে দেখা হয়েছে মেয়েটা চিনা জোকের মতো পিছনে পড়ে রয়েছে। বারবার ফোন করে বিরক্ত করতো। সাগর বুঝে গিয়েছিল মেয়েটা তার উপর ক্রাশ খেয়েছে। কিন্তু বন্ধুর বোনের সাথে প্রেম করতে চায় না, তাছাড়া মিরার উপর তার কোন ইন্টারেস্ট নেই তাই এতদিন মিরাকে ইগনোর করে গেছে। মিরা কাছে আসার চেষ্টা করলেও তাকে পাত্তা দেয়নি।

এখন সেই মিরাকেই যে এভাবে কাজে লেগে যাবে সাগর ভাবতে পারে নি। নিজের বুদ্ধির প্রশংসা নিজেই করে শয়তানী হাসি দেয় সাগর। মিরা বলে চলছিল,
-“তা বলো কি দরকারে ফোন দিলে।”

-“তোমার কথা খুব মনে পড়েছিল তাই ফোন দিলাম।”

-“হুম। কি ভেবেছ আমি কিছু জানি না। যদি আমার কথা ভাবতে তাহলে নাচতে নাচতে বিয়ে করতে চলে যেতে না।”

সাগর থতমত খেয়ে বলে,
-“আমার বিয়ের ব্যাপারে তুমি কিভাবে জানলে?”

-“ভাইয়া তো কালই আমায় বলেছিল। আমি অবশ্য ব্যাপারটাকে আমলে নেইনি। এমনিই তো আমার উপর তোমার কোন ইন্টারেস্ট নেই সেটা বুঝে গিয়েছিলাম। তাই ভাবলাম এখন আমার মুভ অন করা উচিৎ। এখন তো শুনছি তোমার হবু বউকে আমার ভাই বিয়ে করে নিয়েছে 😒 এভাবে ঐ মুটকি জলহস্তিটাকে আমার ভাইয়ের গলায় ঝুলিয়ে দিলে?”

-“আমার কথা শোন। সব ঐ বিদিশা আর ওর বাবার চক্রান্ত। আমার তো এই বিয়ে করার কোন ইচ্ছে ছিল না। জানো আমাদের কিভাবে ঠকাচ্ছিল? আমাদের অন্য একটা মেয়ের ছবি দেখিয়ে বিয়েটা দিতে চাইছিল। পরে আমি যখন সরে আসি তখন তোমার ভাইকে ভালো মানুষ পেয়ে কিভাবে ফাসিয়ে দিল ঐ বাপ-মেয়ে।”

মিরা কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
-“সেটা তো বুঝতেই পেরেছি। এখন আমি চাই যে করেই হোক ঐ মুটকিটাকে এই বাড়ি থেকে দূর করতে।”

-“আমিও তো এটাই চাও। তুমি যেমন চাওনা তোমার ভাইয়ের জীবন ধ্বংস হোক তেমন আমিও চাইনা আমার বন্ধুর জীবন নষ্ট হোক। আমরা দুজনে মিলে সব ঠিক করে দেব।”

-“হ্যাঁ দেখি কি করা যায়। আচ্ছা আমি এখন ফোনটা রাখছি কেমন?”

-“আচ্ছা রাখো।”

কলটা কে’টে দিয়েই পৈশাচিক হাসিতে মেতে ওঠে সাগর। বলতে থাকে,
-“এবার তুই বুঝবি মাহিন সাগরের গায়ে হাত তোলার ফল কি হতে পারে। Just wait and watch.”
_____________
ভোরের আলো ফুটে উঠেছে চারিদিকে। পাখিদের কলরব আর সূর্যের মৃদু রশ্নি জানান দিচ্ছে নতুন দিন শুরুর বার্তা।

বিদিশা ঘুম থেকে উঠেই আজানের সুমধুর সুর শুনতে পায়। অজু করে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়তে বসে।

নামাজ পড়ার পর উঠে আবার বিছানায় শুয়ে পড়ে। মাহিনও মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে ফিরে আসছিল।

মাহিন বিদিশাকে ভালো করে পরখ করে নেয়। টানা টানা দুটো চোখ, ফর্সা গোলগাল চেহারায় ভোরের আলোতে মেয়েটাকে খুব সুন্দর লাগছে। মোটা না হলে নিঃসন্দেহে এই মেয়েটা কোন অংশেই কম সুন্দরী হতো না। কিন্তু মাহিনের চোখে এখন বিদিশাই পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর নারী। সকলের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। আর মাহিনের দৃষ্টিতে তাই তার স্ত্রীই সেরা!

ঘন্টা দুয়েক অতিবাহিত হয়। ঘড়ির কাঁটায় তখন ৮ টা ছুঁইছুঁই। মাহিন, মিরাজ, আব্দুল্লাহ চৌধুরী সবাই অফিস যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। তাদের রয়েছে নিজস্ব অফিস “চৌধুরী প্রাইভেট লিমিটেড।”

মিরারও ভার্সিটিতে যেতে হবে। একা হাতে সব দিক সামলাচ্ছেন মিতালি চৌধুরী। বাড়িতে কাজের লোক আছে, রান্নাবান্নাও তারা করে কিন্তু পরিবেশনের কাজটা বাড়ির বউরাই করে থাকে। মিতালি চৌধুরী অবশ্য এ ব্যাপারে সিরিয়াস। তার কথা রান্না যেই করুক পরিবেশন তিনিই করবেন। সবাই খেয়ে চলে যাওয়ার পর তিনি খেতে বসেন।

একে একে সবাই খেয়ে যে যার কাজে যায়। মাহিন খাওয়া শেষ করে বসে থাকে। মিতালি চৌধুরী ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলেন,
-“কাল তো তোমাদের বিয়ে হলো। হিসাব মতো আজ বৌভাত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তোমার বাবা যখন চাইছেন আরো বড় করে অনুষ্ঠান করে বিয়ে দেবেন তখন অপেক্ষা করাই শ্রেয়। তবে কাল তুমি তোমার বউকে নিয়ে ওর বাপের বাড়ি থেকে একবার ঘুরে এসো।”

মাহিন আচ্ছা বলে। তার চোখ সিঁড়ির দিকে। মিতালি মুখ টিপে হাসেন। বলেন,
-“এখনই এত বউপাগল হলে চলবে না। তুই একটু অপেক্ষা কর আমি তোর বউকে ডেকে আনছি।”

মাহিন একটু লজ্জা পেয়ে যায়। বলে,
-“না থাক ডাকতে হবে না। আমি যাচ্ছি অফিসে অনেক জরুরি কাজ আছে।”

তখনই বিদিশা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসতে থাকে। মাহিন একবার মুগ্ধদৃষ্টিতে বিদিশার দিকে তাকায়। মনে মনে বলে,
-“আজীবন তোমাকে এভাবে দেখতে চাই বিদি।”

মাহিন অফিসে চলে যায়। বিদিশা আসলে মিতালি বলে,
-“আমার ছেলে এখনই তোমাকে চোখে হারাচ্ছে। আমার ছেলেটার চোখে তোমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি। ওকে কখনো কষ্ট দিওনা। এখন এসো একসাথে খেতে বসি দুজনে। সবার খাওয়া শেষ শুধু আমরাই বাকি আছি।”
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here