ভালোবাসি তোমায় বেশ পর্ব -০৬

#ভালোবাসি_তোমায়_বেশ
#পর্ব_6
#লেখক_দিগন্ত
ডিসেম্বর মাস, নারায়ণগঞ্জ শহরে দিনের বেলা সেরকম ঠান্ডা অনুভব না হলেও রাতের বেলা আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে।

শীতের রাতে ফুরফুরে মেজাজে বেলকনিতে দাড়িয়ে কফি খাচ্ছিল বিদিশা। আজ আনন্দে তার নাচতে ইচ্ছে করছে। এর পেছনে অবশ্য একটা কারণ আছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই মাহিন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে রুমে চলে এলো। মাহিনকে এভাবে আসতে দেখে বিদিশা বেলকনি থেকে রুমে চলে আসলো। মাহিন কিছু একটা খুঁজছিল। সেটা দেখে বিদিশা প্রশ্ন করে,
-“এভাবে কি খুঁজছ?”

মাহিন এই শীতের রাতেও ঘেমে যাচ্ছিল। কপালের ঘাম মুছে বলে,
-“তুমি জানো রিমোটটা কোথায়?”

বিদিশা বালিশের নিচ থেকে রিমোট বের করে মাহিনের হাতে দিয়ে বলে,
-“তুমি এভাবে রিমোট খুঁজছিলে কেন?”

-“আরে তুমি কোন দেশে আছো? চারিদিকে চিৎকার চেচামেচি শুনছ না? আজ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ। অফিস থেকে হন্তদন্ত করে ছুটে এলাম এই ম্যাচ দেখার জন্য। রাত ১১ টা বেজে গেছে৷ খেলা তো মনে হয় শেষের দিকে।”

বিদিশা হালকা হাই তুলে বলে,
-“আরে টেনশন নেই জিতে গেছি। আমি হাফ টাইম পর্যন্ত খেলা দেখেছি। আমরা ২ গোলে এগিয়ে আছি বস।”

-“তুমি আর্জেন্টিনা সাপোর্টার?”

-“না আমি তো ব্রাজিল সাপোর্টার। কিন্তু সাথে আমি মেসির অনেক বড় ফ্যান। আমি চাই এবার ট্রফি মেসিই জিতুক।”

-“আমিও ব্রাজিল সাপোর্টার। ইশ ব্রাজিল জিততে পারে নি এখন আর্জেন্টিনা জিতে গেলে লজ্জায় বন্ধুমহলে মুখ দেখাতে পারব না। দেখি খেলার কি খবর।”

টিভিটা অন করতেই মাহিন আনন্দে নেচে উঠল। বিদিশাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
-“দেখলে খেলা জমে গেছে। ফ্রান্স একটা গোল দিয়েছে। এই…এই আরেকটা গোল ইয়ে। জিতব তো আমরাই।”

-“তুমি না বললে ব্রাজিল সাপোর্টার তাহলে ফ্রান্সের গোলে এভাবে নাচছ কেন?”

-“আরে বিদি ব্রাজিলের জয় আর আর্জেন্টিনার হার তো একজন ব্রাজিলিয়ানের কাছে একই ব্যাপার।”

বিদিশার খুব টেনশন হচ্ছিল। হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। বিদিশা মাহিনিকে বলে,
-“আচ্ছা আজ যদি আর্জেন্টিনা জেতে তাহলে তুমি আমায় কি ট্রিট দেবে বলো?”

মাহিন আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ফ্রান্সই জিতবে। তাই বলে,
-“তুমি যা বলো তাই হবে।”

-“ওয়েল…কাল তো আমাদের আমার বাড়িতে যাওয়ার কথা।আর্জেন্টিনা জিতলে কাল আমায় বাড়ি থেকে সোনারগাঁও নিয়ে যেতে হবে। আমার কতদিনের ইচ্ছে সোনারগাঁও যাব।”

-“তুমি কোনদিন সোনারগাঁও যাওনি?”

বিদিশা মন খারাপ করে বলে,
-“উহুম। আসলে আমি জন্মের পর থেকে সবসময় ঢাকাতেই ছিলাম। বাবা তো সবসময় কাজেই ব্যস্ত। বছরে দু একবার ঘুরতে নিয়ে গেলেও কক্সবাজার,রাঙামাটি,সিলেট, বিদেশের ঘুরতে গিয়েছি কয়েকবার। কিন্তু বাড়ির পাশে সোনারগাঁও আসা হয়নি। বাবা তো একা আমায় কোথাও আসতে দেয়নি।”

-“বুঝলাম। আচ্ছা ঠিক আছে আর্জেন্টিনা জিতলে আমরা সোনারগাঁও যাব। এটাই ফাইনাল।”
___________
এক্সট্রা টাইম শেষ হয়ে খেলা ট্রাই বেকারে গড়ালো। বিদিশার বুক ধুপধুপ করে কাপছে। মাহিন তো ধরেই নিয়েছে আর্জেন্টিনা হেরে যাবে। কিভাবে কি সেলিব্রেশন করবে সেটাই ভাবছে। ট্রাই বেকারে ফ্রান্স হেরে গেলো। আনন্দে নেচে উঠল বিদিশা। মেসি মেসি করে চিৎকার করতে লাগল। এদিকে মাহিন মন খারাপ করে বিড়বিড় করতে করতে ওয়াশরুমে চলে গেল।
__________
নতুন একটি দিন শুরু হলো। সূর্যের আভা জানান দিচ্ছে নতুন আগমনের। বিদিশা আজও বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। সকালে উঠে হাঁটতে বেরিয়েছে শীতের সকাল উপভোগ করতে। মাহিনও বের হয়েছে জগিং করতে।

মাহিন ও বিদিশা একসাথে কথা বলছিল। বিদিশা বলে,
-“কাল তো বাজিতে হেরে গেলে। এখন আমায় কিন্তু সোনারগাঁও নিয়ে যেতেই হবে।”

-“তুমি হেরে গেলেও আমি তোমাকে নিয়ে যেতাম। কারণ এটা তোমার অনেক দিনের পুরানো ইচ্ছে। স্বামী হিসেবে আমার কর্তব্য তোমার সব ইচ্ছে আকাঙখা পূরণ করা।”

বিদিশা মুগ্ধ নয়নে মাহিনের দিকে তাকায়। কেউ এত ভালো কিভাবে হতে পারে সেটাই ভাবছিল বিদিশা। অথচ সেদিন সাগরের কথা টেনে মাহিনকে কত কষ্ট দিল বিদিশা।

বিদিশা আলতো করে মাহিনকে বলে,
-“সরি।”

-“সরি! সরি ফর হোয়াট?”

-“ইয়ে মানে সেদিন সাগরের…”

-“আরে তুমি এখনো এগুলো নিয়ে পড়ে আছ।”

-না মানে…

-“কোন ব্যাপার না আমি কিছু মনে করি নি। এখন তাড়াতাড়ি চলো। এখান থেকে তোমাদের বাড়ি যেতে হবে। তারপর আবার সোনারগাঁও। অনেক জার্নির ব্যাপার আছে। অফিস থেকেও আজকে ছুটি নিতে হয়েছে।”

-“নিজের বাবারই তো অফিস। তার আবার ছুটি।”

বিদিশার কথা শুনে মাহিন চোখ বড় বড় করে তাকায়। বলে,
-“এসব তুমি কি বলছ বিদি? তুমি জানো আমি কাজের প্রতি কতটা সিরিয়াস?”

-“হ্যাঁ জানি জানি। এখন চলো। এতক্ষণ আমাকে তাড়া দিচ্ছিল। এখন নিজের আর কিছু খেয়াল নেই।”

বলেই বিদিশা হাঁটতে শুরু করে। মাহিন পিছন পিছন হাসছিল। মুচকি হেসে বলে,
-“পাগলী একটা। জীবনে এরকম একটা ঝগড়ার পার্টনার সবারই দরকার।”
_______
বিদিশা ও মাহিন রেডি হয়ে। তার বের হতে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ মিরা এসে তাদের পথ আটকে দাঁড়ায়। মাহিন বিরক্ত হয়ে বলে,
-“এই তোর আবার কি হলো? যাওয়ার সময় এভাবে পথ আটকাচ্ছিস কেন?”

-“কোথায় যাচ্ছিস?”

-“কোথায় আবার যাব বিদিশাদের বাড়িতে যাচ্ছি।”

-“আমিও যাব তোদের সাথে।”

-“তুই ওখানে গিয়ে করবি?”

-“আমি গেলে কি হবে? নিয়ে চলনা আমায়।”

-“না তোর ওখানে গিয়ে কাজ নেই। তুই পড়াশোনায় মন দে। সামনে না তোর ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা।”

-“ও যখন এত করে যেতে চাইছে তখন ওকে নিয়ে চলোনা।”(বিদিশা)

এরমধ্যে মিতালি এসে বলে,
-“তোমরা তৈরি করে গেছ। আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে যেও। আর মাহিন যাওয়ার সময় মিষ্টি, ফলমূল এসব নিয়ে যাস। বিয়ের পর প্রথম শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিস বলে কথা।”

-“আম্মু তুমি এসব নিয়ে টেনশন করো না।”

-“এই বাঁদরটাকেও কি নিয়ে যাচ্ছিস না-কি?”

মিতালির কথা শুনে মিরা ন্যাকামি করে বলে,
-“আম্মুউউউ…এসব কি বলছ তুমি? আমি বাঁদর হবো কেন?”

-“না তুই তো বাঁন্দরী।”

-“এবার কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে। আমি যাবোনা।”

বিদিশা বলে ওঠে,
-“না মিরা তুমিও চলো আমাদের সাথে অনেক মজা হবে।”

-“কয়দিন থেকে যা মজা পাচ্ছি। আর মজা দরকার নেই।”

বিদিশা বুঝতে পারে তাকে উদ্দ্যেশ্য করেই কথাটা বলা হয়েছে। বিদিশার চোখে জল চলে আসে। অনেক কষ্টে সেটা নিয়ন্ত্রণ করে হাসিমুখে বলে,
-“দেরি হয়ে যাচ্ছে। চলো সবাই।”

বিদিশা,মাহিন ও মিরা একসাথে বেরিয়ে যায়। মিতালির খুব টেনশন হতে থাকে। তিনি ভাবেন,
-“মিরার মতিগতি ভালো লাগছে না। মেয়েটা কোন গড়বড় না করে ফেলে। আল্লাহ তুমিই ভরসা। একটু দেখো মেয়েটা কোন সমস্যা যেন তৈরি না করে।”

মিরা বাইরে এসে একটা শয়তানী হাসি দেয়। ফোনে সাগরকে ম্যাসেজ করে বলে,
-“আমাদের প্ল্যান মোতাবেক সব হচ্ছে। আমি আসতে পেরেছি ওদের সাথে। এবার শুধু দেখো আমি করি।”

ম্যাসেজটা সিন করে অট্টহাসিতে ফে/টে পড়ে সাগর। বলে,
-“এবার মাহিন তোর নিজের বোনই তোকে…”
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here