ভালোবাসি তোমায় বেশ পর্ব -০৭

#ভালোবাসি_তোমায়_বেশ
#পর্ব_৭
#লেখক_দিগন্ত
মাহিন ও বিদিশা চলে আসে বিদিশাদের বাড়িতে। মিরাও তাদের সাথে এসেছে। বিদিশা বাড়িতে ঢুকেই বাবা, বাবা বলে চিৎকার করতে থাকে। মিরা এসব দেখে বলে,
-“এত ঢং। এত বড় মেয়ে হয়েছে তার অবস্থা দেখো।”

মাহিনের চোখ রাঙানিতে চুপ হয়ে যায় মিরা। বিশাল হোসেন নিজের রুম থেকে বাইরে চলে এসে বিদিশাকে দেখে তার কাছে চলে আসে। বিদিশাকে নিজের বুকে টেনে নেন। একে অপরকে জড়িয়ে পাগলের মতো কাঁদতে থাকে।

মিরা বিদিশার বাড়িটা ভালো করে ঘুরে দেখতে থাকে। বলতে থাকে,
-“ভালোই তো বড়লোক মনে হচ্ছে। বাড়িটা তো বেশ বড়।”

বিশাল হোসেন মিরাকে দেখে বলে,
-“এই মেয়েটা কে?”

-“ও আমার বোন।”(মাহিন)

-“ও আচ্ছা। তোমরা যাও গিয়ে রেস্ট নাও। বিদিশা ওদেরকে ভেতরে নিয়ে যা।”

বিদিশা মাহিন ও মিরাকে নিয়ে যায়।
__________
দুপুরে খাওয়ার পর মাহিন বিদিশাকে নিয়ে সোনারগাঁও যায়। সাথে ছিল মিরাও। যদিও মাহিন তাকে নিয়ে আসতে চায়নি কিন্তু মিরার জেদের কাছে হার মানতে হয়।

ঘুরতে ঘুরতে বিদিশা মাহিনকে বলে,
-“চলো তো একটু ঐদিকে যাই।”

মাহিন বিদিশাকে নিয়ে সেদিকে গেলে মিরা সাগরকে ম্যাসেজ করে বলে,
-“আমরা সোনারগাঁও ঘুরতে এসেছি। তুমি কোথায়?”

-“আমিও আশেপাশে আছি। তুমি কোব চিন্তা করো না সবকিছু আমাদের প্ল্যানমাফিক হবে।”

মিরা মুচকি হাসে। সাগর দোকান একটি মাস্ক কিনে নেয়। বিদিশা ও মাহিন ঘুরছিল আশেপাশে। সাগর এসে বিদিশাকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। বিদিশা পড়ে যায়। মাহিন তাকে তোলে। বিদিশা পড়ে গিয়ে কিছুটা ব্যাথা পায়। মাহিন বলে,
-“তুমি ঠিক আছো তো বিদি? হেউ ইউ দেখে চলতে পারো না?”

সাগর পিছনে ফিরে “সরি” বলে চলে যায়। বিদিশার কন্ঠস্বরটা খুব চেনা লাগে। সে মাহিনকে বলে,
-“কন্ঠটা কি তোমার চেনা লাগল?”

-“হ্যাঁ আমারও একটু চেনা চেনা লেগেছে।”

বিদিশা কিছু ভেবে বলে,
-“আমাদের এখানে আর বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না। চলো এখান থেকে।”

মাহিন বলে,
-“‘হুম ঠিক বলেছ।”

-“মিরা কোথায়? ওকে তো আশেপাশে কোথাও দেখছি না।”

-“ঐদিকে আছে মনে হয়। চলো তো দেখি।”

মাহিন ও বিদিশা আশেপাশে মিরাকে অনেক খোঁজে কিন্তু তাকে খুঁজে পায়না। মাহিন অস্থির হয়ে যায়। মিরাকে ফোন করেও কোন হদিশ পাওয়া যাচ্ছেনা। ফোন নট রিচেবেল বলছে। মাহিনের খুব টেনশন হতে থাকে। সে বলে,
-“আমার বোনের কোন ক্ষতি হয়ে যাবে না-তো বিদি?”

-“তুমি কোন টেনশন করিও না। কিছু হবে না মিরার।”

কয়েক ঘন্টা খোঁজার পর মাহিন বলে,
-“আমাদের থানায় যেতে হবে। পুলিশে ডায়েরি করতে হবে।”

-“আমাদের ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে হবে সবকিছু। তাড়াহুড়ো করে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।”

-“কি বলছ তুমি বিদি? আমার বোনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আর তুমি বলছ শান্ত থাকতে। এইজন্য আমি ওকে নিয়ে আসতে চাইনি। এখন যদি কোন বিপদ হয়ে যায় আমি মা-বাবাকে কি জবাব দেব?”

-“আমি বুঝতে পারছি তোমার চিন্তাটা। কিন্তু দেখো এইরকম সময়ে মাথা ঠান্ডা রাখা দরকার।”

বিদিশা তার বাবাকে ফোন করে।
-“হ্যালো বাবা। আমার ননদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তুমি কিছু করতে পারবে?”

-“ঠিক আছে আমি দেখছি কি করা যায়। তোর এসপি আঙ্কেলের সাথে যোগাযোগ করছি। দেখি কিছু করা যায় কিনা। তুই লোকেশনটা পাঠিয়ে দে।”

বিদিশা লোকেশন পাঠিয়ে দেয়।
__________
একদিন পেরিয়ে গেছে। এখনো মিরার কোন খোঁজ খবর নাই। মিতালি চৌধুরী, আব্দুল্লাহ চৌধুরী সবাই খুব ভেঙে পড়েছে। মিরাজ ও মাহিন অনেক খোঁজ করছে। কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না।

মাহিন খুব টেনশনে ছিল। রুমে বসে ছিল। বিদিশা এসে বলে,
-“এভাবে বসে আছ কেন? কিছু খাবে না। কাল থেকে কিছু খাও নি।”

-“আমার ভালো লাগছে না কিছু।”

-“এভাবে বললে তো চলবে না। তোমার শরীর খারাপ করবে।”

-“আহ বিরক্ত কেন করছ? বললাম তো খাবো না। আমার বোনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা আর আমি পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে খাবো।”

মাহিনের ধমকে বিদিশার মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিদিশা মাহিনের পরিস্থিতিটা বুঝতে পারে। তাই আর কিছু বলে না।

মিরাজ এসে বলে,
-“কিরে মাহিন কোন খোঁজ পেলি?”

মাহিন মাথা নিচু করে বলে,
-“আমি তো চেষ্টা করছি। কিন্তু…”

মিতালির চিৎকারের শব্দ ভেসে আসে সবার কানে। তিনি চিৎকার করে বলছিলেন,
-“তোমার কে কোথায় আছ? এসে দেখে যাও মিরা ফিরে এসেছে।”

মিরার ফিরে আসার খবর শুনে সবাই খুব খুশি হয়। মাহিন, মিরাজ, বিদিশা সবাই দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। নিচে নেমে দেখতে পায় মিরা ফিরে এসেছে। মিরাকে দেখে সবাই যেন নিশ্চিত হয়।

মিরাকে দেখে খুব বিশ্বস্ত লাগছিল। মিতালি গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করে,
-“তুই কোথায় গিয়েছিলি মিরা? তোর এই অবস্থা কেন?”

-“সেটা আমাকে জিজ্ঞাসা না করে তোমার ছেলের বউকে জিজ্ঞাসা করো।”

মিরার কথা শুনে বিদিশা ভীষণই অবাক হয়। জিজ্ঞাসা করে,
-“আমি কি করলাম?”

-“তুমি এসব নাটক করছো কিভাবে? তুমি নিজের বন্ধুকে দিয়ে আমায় তুলে নিয়ে যাওনি?”

মাহিন অবাক হয়ে বিদিশার দিকে তাকায়। মিরা বলতে থাকে,
-“কাল এই মেয়েটা ওর বন্ধুকে বলে আমায় তুলে নিয়ে গিয়েছিল। ওর বন্ধু আমায় হুমকি ধমকি দিয়েছে যে আমি নাকি ওর সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করি। এইজন্য আমাকে নিয়ে এসেছে।”

-“এসব কিছু মিথ্যা। আমি কিছু জনিনা।”

মাহিন বুঝতে পারছিল না তার কাকে বিশ্বাস করা উচিৎ। সে খুব দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। বাড়ির সবাই ইতিমধ্যে বিদিশাকে ভুল বুঝেছে।

মিতালি বিদিশার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“তোমাকে আমি ভালো মেয়ে ভেবেছিলাম। আর তুমি এরকম কাজ করলে ছি! ঘৃণা হচ্ছে তোমার উপর। আমার ছোট মেয়েটার সাথে এরকম করার আগে দুবার ভাবোনি?”

-“আপনি বিশ্বাস করুন মিরা আমায় ভুল বুঝছে। হয়তো আমাকে ফাসানোর জন্য এরকম করেছে। আমি সত্যি কিছু করিনি।”

-“এসব নাটক করে কি লাভ? আমি নিজের কানে শুনেছি তুমি ছেলেটাকে ফোনে বলছিলে আমায় যেন উপযুক্ত জবাব দেয়। এখন এসব বলে কি হবে?”(মিরা)

বিদিশা কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না। সবাই অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। বিদিশার শেষ ভরসা এখন মাহিন। মাহিনও কিছু বলে না।

আব্দুল্লাহ চৌধুরী বলে,
-“বিদিশা তুমি আমার মেয়ের সাথে যা করেছ তা অন্যায়। এক্ষুনি ক্ষমা চাও ওর কাছে। আমার উচিৎ ছিল পুলিশের কাছে তোমার নামে মামলা করা। কিন্তু এতে আমাদের পরিবারের মান-সম্মান জড়িয়ে তাই কিছু বলছি না।”

বিদিশা বলে,
-“আমি সত্যি কিছু করিনি। কিন্তু তবুও যদি আপনারা চান আমি ক্ষমা চাইবো তাহলে ঠিক আছে আমি ক্ষমা চাইছি। মিরা আমাকে ক্ষমা করে দাও।।হয়েছে আপনাদের শান্তি? আমি আর থাকবো না এখানে।”

বিদিশা বাড়ি থেকে বের হতে উদ্যত হয়।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here