ভালোবাসি তোমায় বেশ পর্ব -০৮

#ভালোবাসি_তোমায়_বেশ
#পর্ব_৮(ধামাকাদার পর্ব)
#লেখক_দিগন্ত
বিদিশা বাড়ি থেকে চলে যেতে ধরলে মাহিন তার পথ আটকে দাঁড়ায়। বিদিশা মাহিনের উপর রাগ দেখিয়ে বলে,
-“আমাকে আটকাচ্ছো কেন? এতকিছুর পরেও কি তোমার শান্তি হয়নি? আর কি চাও আমার কাছে তুমি?”

মাহিন ক্রুর হেসে বলে,
-“তুমি কি ভেবেছ? আমার বোনের এত ক্ষতি করার পর আমি এত সহজে তোমায় ক্ষমা করে দেব? এত সহজে তোমায় চলে যেতে দেব? যদি এমনটা ভেবে থাকো তাহলে তুমি সম্পূর্ণ ভুল ভেবেছ। আমি এত সহজে তোমায় যেতে দেবোনা। তোমার এই অন্যায়ের জন্য তোমাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।”

মিরা খুব খুশি হয় কথাটা শুনে। তবে উপরে উপরে নাটক দেখিয়ে বলে,
-“যা হওয়ার হয়ে গেছে ভাইয়া। এখন আর এসবকিছু ভেবে কি হবে? আমি এখন সবকিছু ভুলে যেতে চাই। ও যখন যেতে চাইছে তখন ওকে যেতে দাও।”

মাহিন বাঁকা হেসে বলে,
-“তুই যাই বল আমি ওকে যেতে দেবোনা। চলো আমার সাথে। আমার বোনের ক্ষতি করার চেষ্টা তাইনা? এবার তুমি বুঝবে কত বড় ভুল করেছ।”

মাহিন বিদিশাকে টেনে টেনে রুমের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। সেটা দেখে মিরা তো খুব খুশি হয়। বলতে থাকে,
-“একদম ঠিক হয়েছে। সাগরের আইডিয়াটা একদম ঠিকঠাক কাজ করেছে। ঐ বিদিশাকে এখন সবাই ভুল বুঝছে। এটাই তো আমি চেয়েছিলাম।”
___________
সাগর হঠাৎ করে বিশাল হোসেনের বাড়িতে যায়। বিশাল হোসেন সাগরকে দেখে বিরক্ত হন। জিজ্ঞাসা করেন,
-“তুমি এখানে কেন এসেছ?”

-“আমি ইচ্ছে করে এখানে আসিনি খালু। আপনার ভালোর জন্যই এসেছি।”

-“তুমি যে আমার কত ভালো চাও সেটা আমার জানা হয়ে গেছে। তা শুনি কি ভালো করতে এসেছ।”

-“খালু আপনি আমাকে ভুল বুঝতে পারেন। হ্যাঁ এটা ঠিক সেদিন বিয়ের আসরে আমি যা করেছিলাম সেটা অন্যায়। আপনাকে আর বিদিশাকে ওভাবে অপমান করা ঠিক হয়নি। কিন্তু আপনি আমার পরিস্থিতিটাও বোঝার চেষ্টা করুন। বাবা মিথ্যা বলে আমায় বিয়ে করতে এনেছিল।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে। আমি কি তোমার কাছে কোন কৈফিয়ত চেয়েছি না-কি? কি বলতে এসেছ সেটা বলো।”

সাগর নাটক করে বলা শুরু করে,
-“আপনি তো মাহিনের উপর অনেক ভরসা করে বিদিশাকে ওর সাথে বিয়ে দিয়ে দিলেন। কিন্তু মাহিন সেই বিশ্বাস ভরসার মর্যাদা রাখতে পারেনি।”

-“এসব কি বলছ তুমি?”

-“হ্যাঁ, ঠিকই বলছি। খালু জানেন মাহিনের পরিবারের সবাই বিদিশার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছে। ওকে অপমান করেছে এমনকি পুলিশে দিতে চেয়েছে।”

-“কি বলছ কি? ওরা এরকম কেন করছে? কি অন্যায় করেছে আমার মেয়ে?”

সাগর মনে মনে বলে,
-“এই তো কাজ হয়েছে। এবার ওনাকে আরেকটু রাগিয়ে দিতে পারলেই আমার উদ্দ্যেশ্য সফল।”

সাগর বিশাল হোসেনের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“আপনি তো জানেন বিদিশার ননদ মিরাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আজ ও বাড়িতে ফিরে এসেছে। বাড়িতে এসে বিদিশার নামে মিথ্যা এলিগেশন দিয়েছে যে বিদিশা নাকি ওর বন্ধুকে দিয়ে এই কাজ করিয়ে নিয়েছে। যার কারণে এখন সবাই ওকে অপমান করছে।”

-“আমার মেয়ে এরকম কোন কাজ করতেই পারে না। এক মিনিট…এক মিনিট তুমি এত সব কথা জানলে কি করে?”

সাগর আমতা আমতা করে বলে,
-“না মানে…আমি আর মাহিন তো ভালো বন্ধু। সেই কারণেই মাহিনের ভাই মিরাজের সাথেও আমার কথাবার্তা হয়। মিরাজ ভাইয়ার থেকেই সবকিছু জানলাম”

-“ও আমি দেখছি। আমার মেয়ের প্রতি কোন অন্যায়ই আমি মেনে নেব না।”
__________
বিদিশাকে টেনে টেনে রুমে নিয়ে এসে দরজাটা বন্ধ করে দেয় মাহিন। বিদিশা রেগে গিয়ে প্রশ্ন করে,
-“আমাকে এভাবে আটকাচ্ছ কেন? আমি তো বলছি আমি এখানে থাকতে চাইনা। সবাই যদি আমাকে অবিশ্বাস করে তাহলে আমি এখানে থাকতে চাই না।”

-“তুমি সবসময় একটু বেশিই বোঝো তাইনা?”

-“এখানে বেশি বোঝার তো কিছু নেই। আমি যা বুঝেছি একদম ঠিক বুঝেছি। মিরা যা বলেছে ঠিকই বলেছে। আমি সত্যিই করেছি।”

-“ভালো। এই গবেট মাথায় এর থেকে বেশি কিছু আশাও করা যায়না।”

-“তুমি কিন্তু আমায় অপমান করছ।”

-“যা করেছি ঠিক করেছি। তোমার এই একটা বাজে স্বভাব বিদি। সবসময় নিজে যা ভালো মনে করো তাই করো। কারো কথা শুনতেই চাওনা। সবসময় এরকম ঘাড়ত্যাড়ামি না করে সামনের জনের কথাটাও শোনার চেষ্টা করবে।”

-“আচ্ছা কি বলবে বলো।”

-“এই তো সোজা পথে এসেছ। তোমার কি মনে হয়? মিরার কথা বাকি আর সবার মতো আমিও বিশ্বাস করেছি? শোন মিরা আমার বোন, সেই ছোটবেলা থেকে ওকে আমি দেখছি। ও কেমন আর তুমি কেমন সবকিছু সম্পর্কে আমি জানি। তাই খুব সহজেই বুঝে গেছি ও মিথ্যা বলছে।”

-“তাহলে সবার সামনে থেকে এভাবে আমায় টেনে আনলে কেন?”

-“আগে আমার পুরো কথাটা তো শুনবে। মিরা যে মিথ্যা বলছে সেটা আমি মানলেও বাড়ির বাকি সবাই তো আর সেটা মানবেনা। তারা তো প্রমাণ চাইবে। আমি চাইছি যে, মিরা নিজের মুখে সবকথা স্বীকার করুক।”

-“সেটা কিভাবে সম্ভব?”

-“তুমি শুধু দেখে যাও কি কি হয়। তার আগে আমি যা বলছি সেটা মন দিয়ে শোন।”

মাহিন বিদিশাকে কিছু কথা বলে। বিদিশা সবকিছু শুনে বলে,
-“আচ্ছা তুমি যেরকম বলছ আমি ঠিক তাই করব। কোন ভুল করব না।”

-“সবকিছু মনে থাকে যেন। কোন ভুল হলে চলবে না।”

-“কোন ভুল হবে না।”
_________
বিশাল হোসেন মাহিনদের বাড়িতে আসে। তিনি এসেই বিদিশাকে ডাকতে থাকে। তিনি বলেন,
-“বিদিশা কোথায় তুই? এক্ষুনি তুই চলে আয়। তোর বাবা এখনো বেঁচে আছে। তোকে এখানে আর এত অপমান সহ্য করে থাকতে হবে না।”

বিদিশার পাশাপাশি মিরা,মাহিন,মিতালি সবাই আসে। মিতালি বলে,
-“আপনি এসেছেন। ভালো করেছেন। নিজের মেয়েকে নিয়ে চলে যান। ও যা করেছে তারপর আর…”

হঠাৎ করে বাড়ির মধ্যে একটি ছেলে প্রবেশ করে। ছেলেটিকে কেউ চিনতে পারে না। ছেলেটি এসেই বলতে থাকে,
-“আমি নিহান। আমি বিদিশার বন্ধু। বিদিশার কথামতোই আমি সব কাজ করেছিলাম। আসলে আমি নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত তাই ক্ষমা চাইতে এসেছি। মিরা আমাকে ক্ষমা করে দাও।”

মিরা কিছু বুঝতে পারে না। তবে তার মনে হয় এই ছেলেটাকে হয়তো সাগর পাঠিয়েছে বিদিশাকে আরো ভালোভাবে ফাসানোর জন্য। তাই মিরা বলে,
-“আম্মু এই ছেলেটাই সেই ছেলে…ও আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল।”

মিতালি বিশাল হোসেনকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,
-“দেখেছেন তো আপনি আপনার মেয়ের কীর্তি। এরপরেও আপনার মেয়ের হয়ে গলাবাজি করবেন?”

-“আমি আমার মেয়ের সব বন্ধুদের চিনি। এই ছেলেটাকে তো আমি চিনি না। আর তাছাড়া আগে কখনো দেখিও নি।”

মাহিন বলে ওঠে,
-“আপনি ওকে চিনবেন কি করে? ও তো আজ অনেকদিন পর বিদেশ থেকে ফিরল। ও আমার বন্ধু নিহান। আজই বিদেশ থেকে দেশে এসেছে। আর আমি ওকে এই বাড়িতে ডেকে এনেছি মিরার আসল রূপটা সবার সামনে আনার জন্য। বাহ নিহান তোর প্রশংসা তো আমায় করতেই হচ্ছে। এখনো আগের মতোই ভালো অভিনয় করতে পারিস।”

-“কি যে বলিস না দোস্ত। অভিনয় তো আমার রক্তে মিশে আছে।”

-“থ্যাংক ইউ ইয়ার।”

-“ইটস ওকে।”

মাহিন মিরার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“এবার তুই কি বলবি? তোর কি আরো কিছু বলার আছে?”

মিরা মিতালির সামনে গিয়ে বলে,
-“দেখেছ আম্মু, ভাইয়া তার বউয়ের জন্য কিভাবে আমাকে বোকা বানাচ্ছে। আমি সত্যি বলছি এই ছেলেটাই..”

মিরার কথা শেষ হওয়ার আগেই মিতালি ঠা*স ঠা*স করে মিরার গালে চার-পাঁচটা থা*প্পড় বসিয়ে দেয়। বলে,
-“তুই যে এতটা নিচে নামবি আমি ভাবতেও পারিনি। তোর বাবাকে বাড়ি ফিরতে দে তারপর তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন তোর সাথে কি করা উচিৎ।”

মিতালি চৌধুরী এরপর বিশাল হোসেনের সামনে এসে হাতজোড় করে বলে,
-“আমাদের ক্ষমা করে দিন। আমরা আসলে কিছু না জেনেই…”

-“আপনাকে কিছু বলতে হবে না। আমি সবটাই বুঝতে পারছি। তবে এসব কিছুর পেছনে শুধু মিরা না আরো একজন আছে।”
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here