ভালোবাসি তোমায় বেশ পর্ব -০৯

#ভালোবাসি_তোমায়_বেশ
#পর্ব_৯
#লেখক_দিগন্ত
বিদিশা এবার বলে,
-“শুধু মিরা না সাগর ভাইয়াও রয়েছে এসবের পেছনে। আচ্ছা মাহিন তোমার মনে আছে সেদিন যে, আমি কারো সাথে ধাক্কা খেয়েছিলাম সোনারগাঁওতে। তার গলাটা আমাদের খুব পরিচিত ছিল। এন্ড গেস হোয়াট ছেলেটা কে?”

মাহিনের আর কিছু বুঝতে বাকি থাকে না। সে বলে,
-“তারমানে ওটা সাগর ছিল। ওকে তো আমি…”

বিশাল হোসেন বলে ওঠেন,
-“তোমাদের আর কিছু করতে হবে না। যা ব্যবস্থা করার আমি অলরেডি করে দিয়েছি। সাগর এখন জেলের ভাত খাচ্ছে। কাল সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে দেখা গেছে সাগর মিরাকে নিয়ে গেছে। আর সেটা দেখেই সাগরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন এই কারণে কয়েকদিন তো ওকে জেলের ভাত খেতেই হবে।”

সবাই হেসে ওঠে। মাহিন বলে,
-“একদম ঠিক হয়েছে। তবে এবার মিরাকেও শাস্তি পেতে হবে।”

-“আমি মিরার শাস্তির ব্যবস্থা করছি।”(আব্দুল্লাহ চৌধুরী)

-“আব্বু তুমি এসেছ?”

-“হ্যাঁ মাহিন। মিরাজের কাছ থেকে নিজের মেয়ের সব কীর্তি শুনে আর থাকতে পারলাম না। আমি তো ভাবতেই পারিনি আমার মেয়েটা এত নিচে নামতে পারে। সে যাইহোক অন্যায় যখন করেছে তখন ওকে তো শাস্তি পেতেই হবে। নিজের মেয়েকে তো আর জেলে পাঠাতে পারি না। তবে এই বাড়িতেও আর ওর জায়গা হবে না। মিরাকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দেব। শুধু তাই নয় আগামী এক মাস ওকে কোন হাতখরচও দেব না। দেখি এই একমাস কিভাবে চলে। আর তারপর যদিওবা হাতখরচ দেই সেটা নিদিষ্ট এমাউন্ট।”

মিরা ন্যাকাকান্না করে বলে,
-“না আব্বু এরকম করো না। আমি ক্ষমা চাইছি সবার কাছে। আমাকে এত বড় শাস্তি দিওনা। আমি কিভাবে থাকব।”

মিতালি বলেন,
-“তোর বাবা যা বলেছে তাই হবে। তোর একটা শিক্ষা পাওয়া দরকার। আদরে আদরে বাঁ*দর হয়ে গেছিস।”

মিরা সবার কাছে সাহায্য চাইলেও কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না। মাহিনও বলে,
-“আব্বু যেই ডিশিসন নিয়েছেন সেটা ১০০% সঠিক। মিরা তুই গোছগাছ শুরু কর। আমি তোকে হোস্টেলে পৌঁছে দিচ্ছি।”

বিশাল হোসেন বলেন,
-“আচ্ছা তাহলে আমি এখন আসি। আপনারা সিদ্ধান্ত নিন কি করবেন। আমার মেয়ে কোন খারাপ কাজ করবে না। এটুকু নিশ্চয়তা আমি দিতে পারি।”

-“আপনি প্রথম আমাদের বাড়িতে এলেন আর এভাবে না খেয়ে চলে যাবেন?”(মিতালি)

-“আমরা তো এখন আত্মীয়। আসা যাওয়া চলতেই থাকবে। পরে নাহয় একসময় এসে খেয়ে যাবো। আমার খুব ইমপর্টেন্ট একটা মিটিং আছে।”
_________
মিরাকে হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে এসে মাহিন বাড়িতে আসে। ঘরে ঢুকতেই বিদিশা বলে,
-“মিরাকে রেখে আসলা?”

-“হুম।”

-“আচ্ছা ওকে যে কিছু টাকা দিতে বলেছিলাম সেটা দিয়েছ তো?”

-“হ্যাঁ দিয়েছি। তুমি এত করে বললে যে না চাইতেও দিতে হলো। আমি শুধু এটা বুঝতে পারছি না যে মিরা তোমার সাথে এত অন্যায় করল তবুও তুমি কেন ওকে সাহায্য করলা?”

-“এটাকে কেউ সাহায্য বলে না। এটুকু ওর প্রয়োজন। খাওয়া-দাওয়া অথবা কোন দরকারে লেগে যেতে পারে। তাছাড়া খুব বেশি টাকা নিশ্চয়ই দাওনি।”

-“না। যেই টাকা দিয়েছি তাতে এত স্বচ্ছল জীবন যাপন করা সম্ভব নয়। কোনরকমে জীবন কা*টানো সম্ভব।”

-“এটা ঠিক করেছ। এখন ও যদি বুঝতে পারে টাকার মূল্য।”

-“তাহলে এখন আর কি এভাবে বসে না থেকে ঘুমিয়ে পড়ো।”

-“আচ্ছা।”
________
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মাহিন ও বিদিশা একসাথে বেরিয়ে পড়ে জগিং করতে। বিদিশা একটু দৌড়ে হাফাতে থাকে। বলে,
-“আমি আর পারব না।”

মাহিন বলে,
-“এভাবে থাকলে চলবে না। তুমি একটু ট্রাই করো। সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত শারীরিক এক্সারসাইজ করা প্রয়োজন। তাছাড়া তুমি তো প্রতিদিন নামাজ আদায় করার জন্য সকালে ঘুম থেকে ওঠোই। তারপর নাহয় আমরা বাগানে এসে এরকম ব্যায়াম করবোই।”

-“তোমার কি আমি মোটা জন্য আমাকে নিয়ে খুব অসুবিধা হয়?”

-“তুমি একটু বেশি বোঝো, বিদি। আমি কি কখনো বলেছি তোমাকে নিয়ে আমার কোন সমস্যা আছে। তুমি যেমন আমার তোমাকে সেরকমই ভালো লাগে। আমি এসব বলছি তোমার ভালোর জন্যই। তুমি যদি নিয়মিত ব্যায়াম করো, পরিমিত খাওয়া-দাওয়া করো সেটা তোমার স্বাস্থ্যের জন্যই ভালো। আর শুধু তোমার জন্যই নয় যেকোন মানুষের জন্যই ব্যায়াম আর স্বাস্থ্যসম্মত খাওয়া দাওয়া প্রয়োজন। কথায় আছে না, “স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।” আমাদের সবার তাই উচিৎ নিজেদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া।”

-“ওকে ফাইন। এত জ্ঞান দিতে হবে না মাহি।”

-“তুমি আমাকে এটা কি নামে ডাকলে? মাহি!”

-“হ্যাঁ ডাকলাম। তুমি আমাকে বিদি বলে ডাকতে পারো আর আমি তোমাকে মাহি বলব না?”

-“মাহি নামটা কেমন মেয়ে মেয়ে শোনায় না?”

-“শোনালে শোনাক। আমার তাতে কি? আমাকে বিদি বললে আমিও তোমাকে মাহি বলে ডাকব।”

-“ওকে। আমি আর তোমাকে কিছু বলেই ডাকবো না। ঐ ঐ বলে ডাকব।”

-“আচ্ছা এত রাগ করতে হবে না। তুমি আমাকে বিদি বলেই ডাকো, আমি তোমাকে মাহিন বলব।”

-“গুড গার্ল।”
___________
মিরা হোস্টেলে এসে থেকে শান্তি পাচ্ছে না। এখন ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বের হচ্ছে। মিরা মাহিনের দেওয়া ১০ হাজার টাকা হাতে নিয়ে বলে,
-“এই ১০ হাজার টাকা দিয়ে আমি একমাস কিভাবে চলব? আমার তো দিনেই ১০ হাজার টাকা লাগে৷ এখন তো মনে হয় গরীবদের মতো জীবনযাপন করা লাগবে।”

মিরা আর বেশি কিছু না ভেবে ভার্সিটির উদ্দ্যেশ্যে রওনা হয়৷ ভার্সিটিতে গিয়ে সবার আগে দেখা হয় লাবণীর সাথে। লাবণী মিরার বান্ধনী। লাবণীকে গিয়ে মিরা বলে,
-“কি খবর?”

-“কিছু না তো। ও হ্যাঁ খবর একটা আছে। আমাদের ভার্সিটিতে নতুন টিচার এসেছে।”

-“নিউ টিচার? কি নাম?”

-“নাম যেন কি শুনলাম…”ন” দিয়ে কিছু একটা হবে। যাইহোক তোর খবর বল।”

মিরার ইচ্ছে করছিল লাবণ্যকে তার পরিস্থিতির ব্যাপারে সবকিছু বলতে। কিন্তু মিরার খুব ইগো। সে চায়না কেউ তাকে দয়া দেখাক। তাই বলে,
-“আমার খবর তো বিন্দাস।”

-“ও। আচ্ছা চল আমাদের ক্লাসের টাইম হয়ে গেছে।”

মিরা ও লাবণ্য একসাথে ক্লাস করতে যায়। ক্লাসে গিয়ে শুনতে পায় আজ প্রথম ক্লাস তাদের নতুন টিচারের।

কিছুক্ষণের মধ্যে নতুন টিচার এসে উপস্থিত হয়। তাকে দেখে মিরা অবাক হয়ে যায়। টিচার মিরার দিকে নজর দেয়। তিনিও যথেষ্ট অবাক হয়েছে মিরাকে দেখে। লাবণ্য বলে,
-“নতুন টিচারকে দেখেছিস? কেমন লাগল?”

-“কেমন আবার লাগবে? কালো ভূত একটা।”

-“কোথায় কালো? ওনার গায়ের রং তো শ্যামলা। দেখতে তো ভালোই।”

-“শ্যামলা আর কালোর মধ্যে আবার কিসের পার্থক্য? উনি আমাদের মতো ফর্সা তো নয়। ফর্সা ছাড়া আবার কাউকে সুন্দর লাগে?”

-“তোর দৃষ্টিভঙ্গি বদলা।”
_______
মাহিন ও বিদিশা বাইরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করছে। মাহিন বলছে,
-“আমার পাহাড় ভালো লাগে। চলো রাঙামাটি, বান্দরবান ঐদিকে যাই।”

-“আমার সমুদ্র ভালো লাগে। কক্সবাজার গিয়েছি। এবার আমি কুয়াকাটায় যাব।”

-“পাহাড়।”

-“সমুদ্র।”

-“আচ্ছা তাহলে বলো হেড না টেল।”

-“টেল।”

-“এই দেখ হেড উঠেছে। আমরা পাহাড়ে যাব এটাই ফাইনাল।”

-“আমি যাবোনা পাহাড়ে। ওতো উঁচু পাহাড়ে আমি কিভাবে উঠব? আমি অল্প একটু হাঁটতেই ক্লান্ত হয়ে যাই।”

-“ও এই ব্যাপার।”

-“তুমি আমাকে ক্ষেপাচ্ছো। যাও তুমি আমি আর ঘুরতেই যাবো না।”

-“আরে বিদিশা আমার কথা শোন। আমি তো জাস্ট মজা করছিলাম। এই….”
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here