ভালোবাসি তোমায় বেশ পর্ব -১০

#ভালোবাসি_তোমায়_বেশ
#পর্ব_১০
#লেখক_দিগন্ত
বিদিশা ও মাহিন একসাথে খাওয়া দাওয়া শেষ করে টিভি দেখতে বসেছে। টিভিতে হঠাৎ করে একটি রোম্যান্টিক দৃশ্য চলে আসে। বিদিশা লজ্জা পেয়ে উঠে যেতে চাইলে মাহিন তাকে আটকায়। বিদিশা বলে,
-“আসলে আমার কিছু কাজ আছে তাই…”

-“এসব মিথ্যা বলে লাভ নেই। আমি মনে হয় কিছু বুঝিনা।”

-“কি বোঝো তুমি?”

-“এই রোম্যান্টিক সিন দেখে উঠে যাচ্ছ। এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে? আমরা তো এখন হাজবেন্ড ওয়াইফ। হ্যাঁ আমাদের রোম্যান্স এখনো বাকি আছে তবে সেটা হয়ে যাবে৷”

-“তোমার মুখে কিছু আটকায় না? যাইহোক আমার এখন এসব দেখার টাইম নাই। আজ অব্দি আই লাভ ইউ বলল না। সে আবার রোম্যান্স করবে।”

মাহিন বিদিশাকে টেনে নিজের কাছে আনে। তারপর বলে,
-“ও এই ব্যাপার। ঠিক আছে তোমাকে ঘুরতে নিয়ে গেলে আমি অবশ্যই এই ইচ্ছেটা পূরণ করব। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও।”

-“আমি আগেও বলেছি পাহাড়ে যেতে পারবো না। আমার উঁচু যায়গায় খুব ভয় লাগে।”

-“আচ্ছা আমরা কুয়কাটাতেই যাবো৷ ওখানে গিয়ে তোমার সাথে একসাথে মিলে সূর্যদয় আর সূর্যাস্ত দেখব। আমার এখন থেকেই কিরকম রোম্যান্টিক রোম্যান্টিক ফিল হচ্ছে। তোমার কেমন লাগছে?”

-“আমার কিছু লাগছে না। আমি এখন যাচ্ছি।”

-“আমিও দেখব আর কতক্ষণ পালিয়ে বেড়াও।”
___________
নতুন টিচার ক্লাসে সবার সাথে পরিচয় হয়ে নেয়। নিজের পরিচয় দিয়ে বলে,
-“আমার নাম নিহান হোসাইন। আমি তোমাদের নিউ টিচার। আজ যেহেতু আমার প্রথম ক্লাস তাই তোমাদের সবার সাথে পরিচয় হয়ে নেই।”

সবাই একে একে নিজের পরিচয় দেয়। মিরার পালা আসলে সে বলে,
-“আমার নাম মিরা চৌধুরী। আমি এই ভার্সিটির সবথেকে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। আর কিছু?”

-“না তুমি বসো।”

মিরা বসে। লাবণী বলে,
-“তুই এভাবে বলছিস কেন? স্যারের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে? নম্রতা-ভদ্রতা সব ভুলে গেছিস।”

-“আমাকে বেশি জ্ঞান দেওয়ার প্রয়োজন নাই। তুই তোর নিজের চরকায় তেল দে।”

এরমধ্যে নিহান বলে,
-“তো আজ এখানেই। কাল থেকে পুরোদমে ক্লাস শুরু করব।”

ক্লাস শেষ হয়ে গেলে সবাই ক্লাস থেকে বের হয়ে আসে। বাইরে এসে মিরা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ইশ এখন যদি আকাশ থেকে টাকার বৃষ্টি হতো।”

নিজের ব্যাগ থেকে ১০ হাজার টাকা বের করে বলে,
-“এত কম টাকা দিয়ে কি করব আমি? এটা তো কিছুই না।”

লাবণী এরমধ্যে এসে মিরাকে বলে ,
-“এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? চল ক্যান্টিনে যাই।”

মিরার ইচ্ছে তো করছিল কিন্তু সে বলে,
-“আমি সকালে খেয়ে এসেছি। এখন আর খাবো না। তুই যা।”

-“তুই তো সবসময় ক্যান্টিনেই খাওয়া দাওয়া করিস।”

মিরা মনে মনে বলে,
-“সেতো সবসময় দামি দামি খাবার খেতাম। প্রতিদিন ক্যান্টিনে কমপক্ষে ৫০০ টাকার খাবার খেতাম। এখন তো আমার এত টাকা খরচ করলে চলবে না। আর যদি কম করে খাই তাহলে আমার স্ট্যাটাসের কি হবে? না না দরকার নেই। তার থেকে খালি পেটে থাকাই ভালো।”

মিরা এসবই ভাবছিল। তখন এলিনা আসে। এলিনা এই ভার্সিটিতে মিরার এক নম্বর শত্রু। এলিনাকে দেখে মিরা বলতে শুরু করে,
-“এরো এখনই আসার ছিল। জানি না এখন কি বলবে।”

এলিনা মিরার সামনে এসে বলে,
-“এই দেখ মিরা এটা লেটেস্ট মডেলের লিপস্টিক। আমার ড্যাডি প্যারিস থেকে এনেছে। এটা কিন্তু লিমিটেড এডিশন।”

-“তো কি হয়েছে? এসব তো আমাদের বাড়ির কাজের লোকও ইউজ করে না।”

-“আচ্ছা। তা তোমরা কি ইউজ করো? দেখাও।”

মিরা নিজের ব্যাগ চেক করে দেখে তার মেকআপ বক্স নেই। মিরার মনে পড়ে যায় আসার সময় তাড়াহুড়োতে মেকআপ বক্স আনতেই ভুলে গেছে। নিজের কপাল নিজেকেই আচড়াতে ইচ্ছে করছে তার। আব্দুল্লাহ চৌধুরী তো একমাস ঐবাড়িতে যাওয়া নিষিদ্ধই করে দিয়েছে। এখন কি করবে সেটাই ভেবে পাচ্ছেনা মিরা। এদিকে এলিনাও সমানে মিরার লিপস্টিক দেখতে চাচ্ছে। মিরা বাধ্য হয়ে বলে,
-“আমি যেই লিপস্টিক ব্যবহার করি সেটা এমন ক্যামিক্যাল দিয়ে তৈরি যা খালি চোখে দেখা যায়না। এগুলো দেখার জন্য দামি সানগ্লাস ব্যবহার করতে হয়।”

কথাটা বলে মিরা আর সেখানে না দাঁড়িয়ে লাবণীকে সাথে নিয়ে চলে যায়। এলিনা দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে,
-“কি এমন ক্যামিক্যাল যা খালি চোখে দেখা যায়না? আমাকে ড্যাডির সাথে কথা বলতে হবে। এই লিপস্টিক আমাকে যে করেই হোক কিনতে হবে।”

মিরা একটু এগিয়ে গেলেই কেউ তার নাম ধরে ডাকে। মিরা পিছনে তাকিয়ে যাকে দেখে তাতে সে প্রচুর অবাক হয়। বলে ওঠে,
-“সাগর তুমি!”

সাগর বলে,
-“হ্যাঁ আমি ফিরে এসেছি। কোন পুলিশের ক্ষমতা নেই আমাকে জেলে আটকে রাখার।”

মিরা দৌড়ে সাগরের কাছে গেলে সাগর ধা*ক্কা দিয়ে মিরাকে দূরে ঠেলে দেয়। সাগরের এই ব্যবহার দেখে মিরা হতবাক হয়ে যায়। সাগর বলে,
-“আমার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করো। তোমার মতো চিপকু মেয়ে আমার একদমই সহ্য হয়না। সামান্য একটা কাজও তোমার দ্বারা হয়না। তোমাকে কত ভালো একটা প্ল্যান দিয়েছিলাম আর তুমি! তোমার বোকামির জন্য আমাকে জেলে থাকতে হয়েছে। তোমার পরিবারকে আমি ছাড়ব না। আর তোমাকে…তোমাকে তো আমি জাস্ট মে*রেই ফে*লব।”

সাগরের কথাগুলো শুনে মিরার চোখ দিয়ে জল পড়তে থাকে। লাবণী মিরার হয়ে বলে,
-“আপনার সাহস কি করে হলো আমার বান্ধবীর গায়ে হাত তোলার?”

সাগর লাবণীর কথায় কোন পাত্তা দেয়না। এরমধ্যে এলিনা “বেবি, বেবি” বলে ছুটে আসে সাগরের কাছে। সাগর এলিনাকে ফুল দিয়ে প্রপোজ করে বলে,
-“আই লাভ ইউ এলিনা। উইল ইউ ম্যারি মি?”

এলিনা খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। বলে,
-“ইয়েসে, ইয়েস!”

মিরার চোখ দিয়ে শুধু জলপ্রপাতের মতো জল ঝড়তে থাকে।
_____________
মাহিন ও বিদিশা কুয়াকাটায় ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ সব গোছগাছ প্রায় কমপ্লিট। মাহিন বিদিশার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছ তো ঠিকঠাক?”

-“হুম।”

-“আচ্ছা আজ দুপুরেই কিন্তু আমরা বেরিয়ে পড়ব। আজ তাহলে আমরা সূর্যাস্ত আর আগামীকাল সকালে সূর্যদয় দেখতে পারব।”

-“এটা কেমন হলো? সূর্যদয় আগে আর সূর্যাস্ত পরে দেখলে ভালো হয়।”

-“বোকা মেয়ে। তুমি বোঝোনা আগে সূর্যাস্ত এবং পরে সূর্যদয় দেখার মানে? দেখো সূর্যাস্ত মানে হলো পতন আর সূর্যদয় মানে হলো উত্থান। তাই আমাদের পতন থেকে কিভাবে উত্থান হয় সেটাই দেখা উচিৎ। যাতে আমরা শিখতে পারি জীবনে যতোই পতন আসুক শেষপর্যন্ত উত্থান ঘটবেই। আর যদি সূর্যদয়ের পর সূর্যাস্ত দেখি তাহলে বুঝব যে উত্থানের পর পতন হয়। তাই আমাদের সবকিছু পজিটিভ দিক দিয়ে দেখা উচিৎ।”

-“আমার মাথা ঘুরছে। আমি একজন সাইন্সের স্টুডেন্ট। আমি এসব ছন্দ বুঝতে পারব না।”

-“তা পারবে কেন? তুমি শুধু বুঝবে পৃথিবী কতদিনে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে৷ সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসতে কত সময় লাগে, কিভাবে দিন ও রাত হয়৷ তোমরা শুধু এসবই জানো। এসব সূর্য চাঁদের থেকে ইন্সপ্রিরেশন শুধু আমরা আর্টসের স্টুডেন্টরাই দিতে পারব।”

-“সুযোগ পেলে আমাকে ক্ষেপানো ছাড়া তোমার আর কোন কাজ নেই তাইনা? এবার কুয়াকাটায় গিয়ে তোমাকে পানিতে…”

-“তুমি অকালে বিধবা হতে চাও। তাহলে এত কষ্ট করার কি দরকার? আমাকে বলো আমি মরে যাই।”

-“মাহিন…”

-“সরি বিদি।”
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here