ভালোবাসি তোমায় বেশ পর্ব -১১

#ভালোবাসি_তোমায়_বেশ
#পর্ব_১১
#লেখক_দিগন্ত
মাহিন ও বিদিশা বেড়াতে এসেছে সাগরকন্যা কুয়াকাটায়। কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোন তুলনা হয়না। সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগেই এসে পৌঁছাতে পেরেছে তারা। তাই আপাতত স্বস্তি পাচ্ছে। মাহিন বলে,
-“যাক! তাহলে সূর্যাস্ত দেখতে পাবো।”

মাহিনের এত উচ্ছাস দেখে মুচকি হাসে বিদিশা। বিদিশার নিজেরও খুব ভালো লাগছিল৷ কিছু দূর হেটে কুয়াকাটার তীরে এসে উপস্থিত হয় তারা। এখান থেকে সূর্যাস্ত অনেক সুন্দরভাবে দেখা যায়। মাহিন অদ্ভুত ভাবে আকৃষ্ট হয়ে সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য দেখতে থাকে। সূর্যটাকে অনেক বড় দেখাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে কমলা রঙের সূর্যটা যেন পানির মধ্যে ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে। এই দৃশ্য অবাক হয়ে দেখার মতোই। বিদিশাও মুগ্ধদৃষ্টিতে দেখতে থাকে কুয়াকাটার সূর্যাস্তের দৃশ্য।

মাহিন বিদিশার কাছে এসে দাঁড়ায়। বিদিশার দৃষ্টি তখনো সূর্যের দিকেই নিবদ্ধ। মাহিনের উপস্থিতি খেয়াল করে নি সে। মাহিন বিদিশার কানের কাছে গিয়ে বলে,
-“দেখলে তো পতনের দৃশ্য? কাল আমি এখানে তোমার হাত ধরে উত্থানের দৃশ্য দেখব। সাথে থাকছে অনেক সারপ্রাইজ।”

হঠাৎ করে মাহিন এভাবে বলায় বিদিশা ভয় পেয়ে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
-“আচ্ছা দেখা যাবে কিরকম সারপ্রাইজ দাও।”

কুয়াকাটায় সূর্যদয়ের দৃশ্য অবলোকন করার উদ্দ্যেশ্যে আরো অনেকেই এসেছে৷ তাদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের মতো দেখে যাচ্ছে। তবে গুটিকয়েক মানুষের চোখ মাহিন ও বিদিশার দিকে। একটি ছেলে তার পাশে থাকা একটি মেয়েকে বলে,
-“লুক, দেখ ঐদিকে। কি দেখতে পাচ্ছ?”

-“একটা হ্যান্ডসাম ছেলে। ইশ চশমা পড়ে কি সুন্দরই না লাগছে। আমি তো ক্রাশ খেয়ে গেলাম।”

-“আরে না ছেলেটার পাশে কে আছে সেটা দেখ।”

-“হ্যাঁ তাইতো৷ এত হ্যান্ডসাম ছেলের পাশে এই মোটা মেয়েটা কি করছে? ইশ ছেলেটার ভাগ্য কি খারাপ।”

বিদিশার কানেও কথাটা আসে। তার নিজের কাছে নিজেকেই ছোট মনে হয়। নিজের দিকে একবার তাকিয়ে তারপর মাহিনের দিকে তাকায়। বিদিশা ভাবে, সত্যিই হয়তোবা মাহিনের পাশে সে বেমানান। বিদিশার কষ্টগুলো অশ্রু হয়ে বের হওয়ার অপেক্ষা করছে। সে আর বিন্দুমাত্র সেখানে না দাঁড়িয়ে তাদের ঠিক করা হোটেলের দিকে পা বাড়ায়।

মাহিনও সব শুনতে পেয়েছিল। বিদিশা চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে মাহিন তাকে আটক করে। বিদিশা মাহিনের দিকে অসহায়ভাবে তাকায়। মাহিন বিদিশাকে বলে,
-“চলো আমার সাথে। সবসময় চুপ করে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। মাঝে মাঝে প্রতিবাদও করতে হয়।”

বিদিশা কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাহিন তাকে টেনে নিয়ে ঐ ছেলে মেয়ে দুটোর সামনে আসে। এসে বলে,
-“আপনারা কি কাপল?”

ছেলেটি উত্তর দেয়,
-“হুম আমরা কাপল।”

-“খুব ভালো। তো আমি যদি আপনাদের কাছে কিছু জানতে চাই তাহলে আপনারা কি বিরক্ত হবেন?”

-“না৷ আপনি বলতে পারেন আমরা ফ্রি আছি।”

-“ওয়েল। আপনারা কি একে অপরকে খুব ভালোবাসেন?”

দুজনেই সমস্বরে বলে ওঠে,
-“অবশ্যই।”

-“হুম বুঝতে পারছি। আপনারা দুজনই দেখতে মাশাল্লাহ। আচ্ছা ধরুন আপনাদের মধ্যে কেউ যদি দেখতে সুন্দর না হতো তাহলে বোধহয় আপনারা রিলেশনে আসতেন না তাইনা?”

এবার আর কেউ কিছু বলতে পারে না। শুধু একে অপরের দিকে তাকাতাকি করে। মাহিন মৃদু হেসে বলে,
-“জানি আপনাদের কাছে এর কোন উত্তর নেই। যাইহোক আল্লাহ না করুক যদি ভবিষ্যতে কোন দূর্ঘটনায় আপনাদের মধ্যে কারো সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায় তাহলে কি আপনারা একে অপরকে ছেড়ে যাবেন। নাকি এখনকার মতোই ভালোবাসবেন? যদি আপনারা রূপের পূজারি হন তাহলে অবশ্যই ছেড়ে যাবেন।”

মেয়েটি প্রতিবাদ করে বলে,
-“কখনো ছেড়ে যাবে না। আমি ওকে খুব ভালোবাসি।”

-“এরকম কথা সবাই বলে। বাট বাস্তব বলে ভিন্ন কথা। আমি কিন্তু আপনাদের সব কথা শুনেছি। বিদিশাকে আমার পাশে মানায় না–এমনই বলেছিলেন না আপনি? তাহলে আপনার পাশের ছেলেটার যদি কখনো কোন অসুবিধা হয় সেক্ষেত্রেও তো আপনি একই কথা বলবে যে, তাকে আমার পাশে মানাচ্ছে না।”

মেয়েটি এবার আর কিছু বলতে পারে না। সে নিজেও এবার বুঝতে পারে মাহিন যা বলছে তা একেবারেই ঠিক। মাহিন এবার নিজের মুখের হাসি আরেকটু প্রসারিত করে বলে,
-“কারো রূপের প্রেমে নয় সেই মানুষটার প্রেমে পড়তে হয়,তাকে ভালোবাসতে হয়। এই যেমন আমি বিদিকে, আমার স্ত্রীকে ভালোবাসি। আমি ওকে একজন নারী, একজন মানুষ হিসেবে ভালোবাসি। ওর রূপকে নয়। আর বিদিও আমি সুন্দর দেখতে জন্য আমায় ভালবাসে না। ও আমায় মন থেকেই ভালোবাসে। আমি যদি কখনো দেখতে খারাপ হয়ে যাই তবুও বিদি আমাকে ভালোবাসবে। এটা আমি নিশ্চিত। আমরা খুব হ্যাপি আছি একে অপরকে নিয়ে।”

ছেলেটা এবার বলে,
-“সরি ভাইয়া কিছু মনে করবেন না। আমরা কিছু না বুঝে এমন কথা বলে ফেলেছি।”

-“ইটস ওকে। বাট ভবিষ্যতে আর কাউকে প্লিজ এমনভাবে বলবেন না। আর আমরা দোয়া করি আপনারা যেন জীবনে সুখী হন”

মাহিন বিদিশাকে সাথে নিয়ে মাথা উঁচু করে তাদের সামনে দিয়ে চলে আসে। আজ বিদিশার মাথা গর্বে উঁচু হয়ে গেছে। অথচ একটু আগেই মাথা হেট করে চলে যাচ্ছিস সে। এজন্যই বোধহয় বলে,
-“কেউ তোমাকে সম্মান দেবে না। সম্মান তোমার নিজেকেই আদায় করে নিতে হবে।”‘
_____________
মিরা লাবণীর সাথে লাবণীর বাড়িতে এসেছে। কান্না করে করে চোখ মুখ ফুলিয়ে তুলেছে মিরা। লাবণী তখন থেকে বুঝিয়েও তাকে চুপ করাতে পারে নি। মিরা বলতেছে,
-“সাগর কিভাবে এমনটা করতে পারল? আমার সামনে ঐ এলিনাকে…আমি এটা মানতে পারছি না। সাগরকে আমি খুব ভালোবাসি।”

লাবণী এবার আর নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। মিরাকে ধমক দিয়ে বলে,
-“তোর কি এতকিছুর পরেও শিক্ষা হয়নি? তুই যখন প্রথম আমাকে সাগরের কথা বলেছিলি সেদিন থেকেই আমার মনে হয়েছিল ছেলেটা একদম ঠিক না। প্রথমদিন ছেলেটাকে দেখে আমি বুঝে গিয়েছিলাম ও বেশি সুবিধার না। কিন্তু তুই তো আমার কোন কথা শুনলি না। সবসময় বেহায়ার মতো ছেলেটার পেছনে পড়ে থাকলি। ছেলেটা কখনো তো তোকে পাত্তাই দেয়নি।”

মিরা বলে,
-“তুই কিছু জানিস না। এক সপ্তাহ আগে সাগর নিজে আমার সাথে যোগাযোগ করে।”

মিরা লাবণ্যকে সব ঘটনা খুলে বলে সাগরের সাথে মিরার বিয়ে ঠিক হওয়া তারপর মাহিনের সাথে বিয়ে, বিয়ের পরের সব ঘটনা সমস্ত কিছু। সব শুনে লাবণী মাথায় হাত দিয়ে বলে,
-“তুই আসলেই খুব বোকা মেয়ে। সাগরকে বিশ্বাস করে নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে যাওয়া তোর একদম ঠিক হয়নি। এখন দেখলি তো তোকে কেমন ভুগতে হচ্ছে।”

-“তুইও এভাবে বলছিস?”

-“বলবো না তো কি? সাগরের আসল রূপ আজকে দেখলি তো। কিভাবে সবার সামনে তোকে অপমান করল। রূপ দেখে কখনো কোন মানুষকে এইজন্যই বিচার করা উচিৎ নয়। কেউ দেখতে সুন্দর জন্য যে তার মনও সুন্দর হবে সেটা তো নয়। যাহোক বাদ দে, আমি ঘুমাতে যাই। তুই বরং আজ আমার সাথেই থাক।”

মিরা মাথা নাড়িয়ে লাবণীর পিছন পিছন যায়।
____________
রাতে খাওয়ার জন্য বিদিশাকে নিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে আসে মাহিন। খাওয়া শেষ হয়ে গেলে বাইরে এসে দোকানের বিভিন্ন জিনিস দেখতে থাকে বিদিশা।

একটি দোকানে মুক্তোর মালা দেখে খুব পছন্দ হয় বিদিশার। মাহিনকে বলে,
-“আমায় এই মালাটা কিনে দাওনা প্লিজ।”

মাহিন বলে,
-“মালাটা খুব সুন্দর। তোমাকে বেশ মানাবে। আচ্ছা নাও।”

বিদিশা একগাল হেসে মালাটা নিয়ে নেয়। মাহিন দাম মিটিয়ে দেয়। বিদিশাকে নিয়ে হোটেলের দিকে যাবে তখনই রাস্তার বিপরীত দিকে কাউকে একটা দেখে মাহিন হতবাক হয়ে যায়। অস্ফুটস্বরে বলে,
-“ভাবি…..”
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here