ভালোবাসি তোমায় বেশ পর্ব -১২

#ভালোবাসি_তোমায়_বেশ
#পর্ব_১২
#লেখক_দিগন্ত
মাহিনের কথা শুনে বিদিশা অনেক অবাক হয়। মাহিন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল রাস্তার বিপরীত দিকে। বিদিশা মাহিনের হাতে স্পর্শ করে হাত ঝাকিয়ে বলে,
-“এই তুমি কাকে এভাবে ভাবি বলছ? এখানে কে তোমার ভাবি?”

বিদিশার কথা শুনে মাহিন অপ্রস্তুত হয়ে যায়। রাস্তার দিকে আরেকবার ভালো করে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে বলে,
-“না কিছু না। মনে হয়েছিল চেনা কাউকে দেখেছি। হয়তো আমার দেখার ভুল। আচ্ছা তুমি চলো এখন। এই টাইমে এখানে থাকা নিরাপদ না।”

বিদিশা আর কিছু বলল না। যদিও অনেক কিছুই বলতে চেয়েছিল। তবুও নিজের বলার সব ইচ্ছে দমিয়ে রেখে মাহিনের সাথে যেতে লাগল। মাহিন এখনো ভাবছে সে যেটা দেখল সেটা কি ঠিক? তার কেন জানি বারবার মনে হচ্ছে সে ঠিকই দেখেছে। কিন্তু এটা আদৌ কি সম্ভব? যেই মানুষটাকে সে দেখল তার তো এখানে থাকার কথা না। সে এখানে কিভাবে থাকতে পারে? মাহিন বারবার এই বিষয়টা নিয়েই ভাবছিল। তার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে বিদিশা বলে,
-“কি ভাবছ এত? তোমার ব্যবহার আমার ঠিক লাগছে না। একটু আগে কাকে দেখলে বলো তো? এক্স গার্লফ্রেন্ডকে দেখেছ নাকি?”

-“তোমার মাথা ঠিক আছে তো বিদি? আমার গার্লফ্রেন্ড আবার কোথা থেকে আসবে?”

-“মজা করছিলাম। আমি তো জানি আমি ছাড়া আর কেউ তোমাকে পাত্তা দেয়নি।”

-“কি বললে তুমি?”

-“কই কিছু বলিনি তো। চলো এখন।”
__________
মিরা লাবণীর সাথে ভার্সিটিতে আসে। মিরার খুব ভালো লাগছিল। কারণ আজ সে ঠিক করে নিয়েছে সাগরকে দেখিয়ে দেবে যে তাকে ছাড়াও সে ভালো থাকতে পারে। সাগরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য অনেক ভালো প্ল্যানও করে রেখেছে মিরা। নিজের প্ল্যানটা ভেবে নিজের বুদ্ধিকেই বাহবা দিয়ে বলে,
-“এবার সাগর বুঝবে মিরা তাকে ছাড়াও ভালো আছে।”

যেই ভাবা সেই কাজ। মিরা ভার্সিটির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল। এলিনার সাথে দেখা করার উদ্দ্যেশ্যে সাগর যখন ভার্সিটিতে আসে মিরা দূর থেকে সেটা দেখে নেয়। এই জন্যই তো মিরা এতক্ষণ অপেক্ষা করছিল। সাগর কাছে আসতেই মিরা তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে লাবণীকে বলে,
-“জানিস দোস্ত আমার না অনেক হ্যান্ডসাম একটা ছেলের সাথে রিলেশন হয়েছে। ছেলেটা এত হ্যান্ডসাম যে কি বলব। একবার যে দেখবে সেই ক্রাশ খেয়ে যাবে। ছেলেটার রূপের আ*গুনে আমি নিজেও দগ্ধ হয়েছি। ছেলেটার ব্যাপারে যতোই বলি কম হয়ে যাবে। ৬ ফিট লম্বা, ধপধপে ফর্সা গায়ের রং, সিক্স প্যাক করা বডি। এরকম ছেলেকে দেখে যে কেউ ক্রাশ খেতে বাধ্য। তুই দেখলে মনে হয় আর সিঙ্গেল থাকতে চাইবি না।”

লাবণী তো এটাই বুঝতে পারছিল না যে এই মিরা হঠাৎ করে এরকম কথা কেন বলছে। লাবণীর ব্যাপারটা বুঝতে বেশ বেগ পেতে হয়।

মিরা চোখের ইশারা করার পর লাবণ্য বুঝতে পারে। মিরার তালে তাল মিলিয়ে বলে ,
-“তাই নাকি দোস্ত? বাহ তোর ভাগ্যের প্রশংসা করতেই হচ্ছে। সব হ্যান্ডসাম ছেলেরা তোর উপরেই ক্রাশ খায়। আর এদিকে আমাকে দেখ। আমাকে কেউ পাত্তাই দেয়না। আমিও তো অনেক সুন্দরী”

-“চিন্তা করিসনা দোস্ত৷ দেখবি তোরও হয়ে যাবে।” আই মিন রিলেশন।

-“দেখি কি হয়।”

মিরা লাবণীর কথাগুলো শুনে সাগর বাইরে থেকে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকে। কিন্তু ভেতর ভেতর সে ঠিকই জ্ব*লে পু*ড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিল।

এলিনাও ওদের সব কথোপকথন শুনে ফেলে৷ এলিনা এত সহজে সবকিছু হজম করার মেয়ে নয়। এলিনা গিয়ে মিরার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“কাল আমরা একটা পার্টির আয়োজন করছি। এই পার্টিতে অনেকেই আসবে। তুমিও তোমার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে এসো কেমন। দেখব তোমার বয়ফ্রেন্ড কতোটা হ্যান্ডসাম।”

এলিনার কথা শুনে মিরা লাবণীর দিকে অসহায়ভাবে তাকায়। লাবণী কি বলবে বুঝতে পারছিল না। মিরা অনেক ভেবে চিন্তে বলে,
-“আসলে ও অনেক বিজি মানুষ তো। তবুও আমি বলে দেখব। যদি টাইম পায় তাহলে আসবে।”

এলিনা মিরার কথা শুনে রেগে যায়। দাঁত কটমট করে বলে,
-“দেখা যাবে তোমার বয়ফ্রেন্ড কত ভালো।”

সাগরের সাথে হাটা লাগায় এলিনা। মিরা ওদের যাওয়ার পানেই তাকিয়ে থাকে। মিরাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লাবণী বলে,
-“এভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। ত্যি একটা না একটা কান্ড না করে শান্তি পাস না। এখন কি করবি বল।”

-“অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।”

-“মানে?”

-“কিছু না। চল এখন যাই আমরা। কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে।”
_________
বেশ রাত করে ঘুমানোয় বিদিশার বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে করছিল না। মাহিন বিদিশাকে টেনে ঘুম থেকে তোলে। বিদিশা চোখ কচলাতে কচলাতে বলে,
-“এখন উঠে কি করব। সূর্য তো এখন উদয় হয়নি।”

-“এখান থেকে যেতে তো সময় লাগবে তাইনা? তাছাড়া কুয়াকাটায় সূর্যদয়ের সৌন্দর্য দেখতে অনেক মানুষের ভিড় হয়। চলো এখন।”

বিদিশা আর কিছু বলতে পারে না। বললেও মাহিন হয়তো শুনবে না। তাই বিদিশা উঠে পড়ে। ফ্রেশ হয়ে একসাথে যায় সূর্যদয় দেখতে। মাহিন বলে,
-“আজ তাহলে আমরা সূর্যদয় তথা উত্থানের দৃশ্য দেখব। গতকাল পতন দেখেছিলাম। আর আজ দেখব উত্থান।”

-“ও।”

-“আর তারপর কিন্তু তোমার জন্য অনেক সুন্দর উপহার আছে?”

বিদিশা জিজ্ঞাসা করে,
-“কিসের উপহার?”

-“সেটা সময় হলে ঠিকই জানতে পারবে ”

কথা বলতে বলতে বিদিশা ও মাহিন কুয়াকাটাএ তীরে এসে উপস্থিত হয়। একটু পরেই সূর্যদয় হবে। নিজের চোখে এই সুন্দর দৃশ্য দেখতে আশেপাশে অনেক মানুষ এসে উপস্থিত হয়েছে। তাদের সকলের উদ্দ্যেশ্য একই সূর্যদয় দেখা।

মাহিন বিদিশার হাতটা শক্ত করে ধরে৷ কুয়াকাটায় সূর্য উঁকি দেয়। মনে হচ্ছে যেন কাল যেভাবে সূর্য সাগরে ডুব দিয়েছিল আজ সেভাবেই সূর্য সাগর থেকে মাথা তুলছে। এই সুন্দর দৃশ্য দেখে সবার দুচোখ জুড়িয়ে যায়। বিদিশা মাহিনের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“এইজন্যই এখানে আসতে চেয়েছিলাম। দেখেছ কত সুন্দর দৃশ্য।”

মাহিন মুচকি হেসে বলে,
-“এটা আমার দেখা সেরা দৃশ্য। তাও পছন্দের মানুষের সাথে। এই সূর্যকে সাক্ষী রেখে আজ আমি তোমায় বলছি, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি বিদি। #ভালোবাসি_তোমায়_বেশ।'”

বিদিশা যেন মুহুর্তেই ফ্রিজ হয়ে যায়। মাহিনের কথা শুনে নড়াচড়া করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে।

বিদিশার এমন অবস্থা দেখে মাহিন বলে,
-“এখনই এত অবাক হয়োনা। তোমার জন্য আরো অনেক বড় সারপ্রাইজ আছে। চলো ঐদিকে।”

মাহিন বিদিশাকে নিয়ে যায় দক্ষিণ দিকে। একটি ফুলের দোকানের সামনে এসে গোলাপের তোড়া নিয়ে বিদিশার হাতে দিয়ে বলে,
-“আমি তো তোমাকে সবার সামনে প্রপোজ করেছি। জানি তোমার সেই সাহস নেই। তুমি তো আমার লজ্জাবতী লতা। তাই এখন এখানে চুপিচুপি আমাকে নিজের মনের কথা বলো।”

বিদিশা কাপা কাপা হাতে ফুলটা নিয়ে মাহিনের দিকে বাড়িয়ে দেয়। মুচকি হেসে বলে, #ভালোবাসি_তোমায়_বেশ।
(চলবে)
[আমি খুব অসুস্থ। ১০৪° জ্বর নিয়ে অনেক কষ্টে এই পর্বটা লিখছি। জানি ছোট হয়েছে কিন্তু কেউ রাগ করবেন না প্লিজ। সুস্থ হলে পর্ব বড় করে দেব।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here