ভালোবাসি প্রিয় ৩ পর্ব -০১

#ভালোবাসি_প্রিয়‌ (০১)

#সিজন_৩

#লেখিকা_নূন_মাহবুব (অপরাজিতা রহমান)

-” মাইশাতুল দোয়া কে স্টেজে ডাকা হলো। দোয়া স্টেজে যেতেই সবাই ভুত দেখার মত চমকে উঠলো। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই অধির আগ্রহে দোয়ার দিকে তাকিয়ে আছে দোয়া নাচবে না গাইবে এটা দেখার জন্য। অনেকেই বলাবলি করছে এই মেয়ে নিশ্চয় ধামাকা ড্যান্স করবে‌ । নাচতে নাচতে বোরকা খুলে সবাই কে চমকে দিবে। দোয়া কে একেক জন একেক রকম কথা বলে যাচ্ছে। হঠাৎ করে দোয়ার কানের কাছে কেউ একজন ফিসফিসিয়ে বললো ভয় পাচ্ছো কেন? তুমি হেরে যাওয়ার মেয়ে ন‌ও দোয়া। আমি জানি তুমি পারবে। আমি সবসময় তোমার পাশে আছি এবং থাকব। তোমার জন্য আমার মনের দরজা, ঘরের দরজা সারাজীবন খোলা থাকবে। সবশেষে একটা কথায় বলবো #ভালোবাসি_প্রিয়।বড্ড বেশি ভালোবাসি । তোমার ভালোবাসায় আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দেওয়ার জন্য, আমার রাতের ঘুম হারাম করে দেওয়ার জন্য তুমি কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি পাবে মিস, ভালোবাসাময় শাস্তি।বি রেডি ফর গেট দিস।”

-“দোয়ার কানে শুধু একটা কথায় বাজতে লাগলো #ভালোবাসি_প্রিয়‌। কথাটা কে বললো দেখার জন্য দোয়া পেছনে ফিরতেই দেখে বৃত্ত বড় বড় চোখ করে দোয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে ‌।এর আগেও ভালোবাসার কথা বলে দোয়া কে অনেক মেসেজ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই নাম্বারে ফোন দিলে ফোন বন্ধ বলেছে। দোয়া আজ ও সেই লোকের সন্ধান পাই নি।তাহলে কি সেই মেসেজ দেওয়া ব্যক্তি আর আজকের ভালোবাসি প্রিয় কথা বলা ব্যাক্তি টা বৃত্ত? দোয়ার ভাবনার মাঝেই বৃত্ত এসে দোয়ার সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো,কি হলো মিস দেড় ফুট? তোমার তেজ ক‌ই গেলো ? খুব তো বড়ো বড়ো কথা বলেছিলে , তুমি এই ভার্সিটি ছাড়ছো না, তুমি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে, তাহলে এখন নাচ গান না করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছো কেন? তাহলে কি আমি ধরে নিবো তুমি হেরে গিয়েছো? তুমি স্বেচ্ছায় এই ভার্সিটি ছেড়ে দিচ্ছো? অবশ্য তোমার মতো থার্ড ক্লাস মেয়ের কোন যোগ্যতা নেই এমন একটা ভার্সিটি তে পড়াশোনা করার। তোমার জন্য গ্ৰামের রংচটা, ভাঙাচোরা কলেজ‌ই বেস্ট।হেই মিস দেড় ফুট জবান বন্ধ হয়ে গেল নাকি? সেই কখন থেকে জোকারের মতো দাঁড়িয়ে আছো। লোকজন হাসাহাসি করছে তোমাকে দেখে। তাছাড়া অনেকক্ষণ ‌যাবত তোমার অনেক নাটক সহ্য করেছি।ইউর টাইম ইজ ওভার নাও।সো গেট আউট ফ্রম স্টেজ।আদার‌ওয়াইজ তোমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হবে।”

___________________________________

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সামিউল আবরার কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি দেশের বাইরে থাকায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেন নি। ঝর্না আবরার আর জামিলা এসেছে ।জামিলা এসেই টিকটক ভিডিও করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। হঠাৎ স্টেজে দোয়ার দিকে চোখ পড়তেই চিৎকার দিয়ে ঝর্না আবরার কে বললো, খালাম্মা ঐ দেহেন সেই মাইয়া ডা যে মাইয়া বৃত্ত ভাইজানের চোপড়ার মধ্যে থা”প্প”ড় দিছিলো।সব মাইয়ারা কত্তো সুন্দর সাজগোজে আইছে কিন্তু ঐ মাইয়া ডা বোরকা পিন্দে আছে ক্যা খালাম্মা?”

-” ঝর্না আবরার ফোনে কথা বলছিলেন জামিলার কথায় কিছু টা বিরক্ত হয়ে বললেন, আহ্ জামিলা!দেখছিস তো আমি কথা বলছি। বাসায় ভাইজান আসবে এক্ষুনি ফিরতে হবে আমার। তুই বরং এইখানে থাক। অনুষ্ঠান দেখ,ইনজয় কর বলে গেটের বাইরে পা রাখার আগেই মিষ্টি একটা কন্ঠে ভেসে ওঠলো কলরবের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মরহুম মাহফুজ আলমের বাবা কে নিয়ে গাওয়া হৃদয়স্পর্শী ইসলামী গান ” তোমার গায়ে হাত না রেখে ঘুম হতো না আমার ,তোমায় দেখে হৃদয় থেকে দূর হতো সব আঁধার(২) ।তুমি আমার প্রথম গুরু তোমার কাছে দিক্ষা শুরু , তুমি ছাড়া বুঝতো না কেউ মান অভিমান আমার। তোমার গায়ে হাত না রেখে ঘুম হতো না আমার,তোমায় দেখে হৃদয় থেকে দূর হতো সব আঁধার।আমায় নিয়ে আমার বাবার স্বপ্ন ছিল বড়ো,বলে ছিলেন জীবন টা কে ফুলের মতোন গড়ো(২)।বাবা তোমার স্পর্শ আমায় করলো মানুষ এই জামানায়,(২) এখন আমার দিন কে”টে যায় অভাব শুধু তোমার। তোমার গায়ে হাত না রেখে ঘুম হতো না আমার,তোমায় দেখে হৃদয় থেকে দূর হতো সব আঁধার।উমমম বাবা ! বাবা ! বাবা। ” ইতিমধ্যে দোয়ার ইসলামী গান শুনে সবাই মুগ্ধ হয়ে গেছে। কেউ কেউ আবার খুশি হয়ে দোয়া কে হাদিয়া দিচ্ছে। অনেকের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।হয়তো তারা স্বজন হারানোর যন্ত্রণা অনুভব করতে পারছে। দোয়া ভাবতেও পারে নি ওর গাওয়া ইসলামী গান সবার মনে এতোটা জায়গা করে নিবে।সবাই এতো পছন্দ করবে। দোয়া খুশি তে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালো। দোয়া বরাবরই ইসলামী গান খুব পছন্দ করে। বিশেষ করে কলরব শিল্পীদের গান দোয়ার খুবই পছন্দের। কলরবের অন্যতম জনপ্রিয় একজন শিল্পী আবু রায়হান।তার কন্ঠে যেন আল্লাহ তায়ালা মধু মিশিয়ে দিয়েছেন।এমন‌ই মিষ্টি তার গানের গলা ‌। একবার কেউ যদি তার গান শোনে সে বাধ্য হবে দ্বিতীয় বার এমন মিষ্টি মধুর কন্ঠ শুনতে। দোয়া প্রথম যেদিন কলরবের গান শোনে সেদিনই ঠিক করে ভবিষ্যতে তার ছেলে হোক বা মেয়ে হোক তাকে কলরবে দিবে। দোয়া গান শেষ করে স্টেজ থেকে নামতেই সিমরান এসে জরিয়ে ধরে বললো বাহ্ দোয়া একদম ফাটিয়ে দিয়েছো । তোমার গানের গলা এতো সুন্দর জানতাম না তো।আর কতো রুপ দেখানো বাকি আছে তোমার ? জানো দোয়া ইদানিং আমি তোমাকে খুব হিংসা করি।এতো সুন্দর না হলে ও পারতে তুমি।”

-” সিমরান! তুমি আবার ও শুরু করলে? আমি তোমাকে আগে ও বলেছি সবাই সব দিক থেকে পরিপূর্ণ হয় না। তবুও আল্লাহ তায়ালা আমাদের যতটুকু দিয়েছেন ততটুকু নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।আর হিংসা মানুষ কে ধ্বংস করে দেয় সিমরান।
হিংসা এমন এক ব্যাধি যা শুধু মাত্র মনেরই নয় বরং দেহের ও ক্ষতিসাধন করে। বলা হয় যে হিংসুক লোকের কোন বিশ্রাম (ঘুম) নেই ।সে বন্ধুর লেবাসে একজন শত্রু। হিংসা সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছে “নিশ্চয়ই যেভাবে আগুন কাঠকে ভক্ষণ করে [জ্বালিয়ে শেষ করে], হিংসা ও ঈমানকে ভক্ষণ করে’। — (আল কাফী, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩০৬, হাদীস নং ১)

একে অপরের সাথে হিংসা করা থেকে বিরত থাকো, কেননা হিংসা হলো কুফরের ভিত্তি স্বরূপ’।
— (আল কাফী, খণ্ড ৮, পৃ. ৮, হাদীস নং ১)

হিংসা হল অন্য কাউকে দেয়া আল্লাহ্‌র নিয়ামতকে ঘৃণা করা।’
— ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.)
[আল মাজমু আল-ফাতাওয়া, খন্ড-১০, পৃঃ ১১।
তাছাড়া হিংসার পরিনতি সবসময় আমাদের জন্য খারাপ বয়ে নিয়ে আসে সিমরান। তোমার এই পথ থেকে সরে আসা উচিত।”

-” আমার ভুল হয়েছে দোয়া। আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করব নিজেকে সংযত রাখার। এখন চলো তো দোয়া।যারা তোমাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছিলো তারা কেমন পারফর্ম করে সেইটা যে দেখা বাকি রয়েছে।”

-“দুঃখিত সিমরান। আমি আর থাকতে পারবো না। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। বাসায় আব্বা আম্মা খুব চিন্তা করবে। আমার শহরে পড়াশোনা নিয়ে আম্মার চিন্তার শেষ নেই, আবার যদি দেরি করে বাসায় ফিরি আম্মা কান্নাকাটি শুরু করে দিবে।”

-” তাহলে আমি আর থেকে কি করবো? ভার্সিটি তে এসে তোমাকে ছাড়া আমার নিজেকে এতিম এতিম মনে হয়। তুমি না থাকলে আমি ও থাকবো না।চলো যাওয়া যাক।”

-” দোয়া হুম বলে যাওয়ার আগেই ইংলিশ আপা এসে দোয়া কে জরিয়ে ধরে বললো, কংগ্রেস দোয়া। অনেক সুন্দর গান করেছো তুমি।সবাই তোমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু তুমি অনুষ্ঠান না দেখে এখানে কেন?শরীর খারাপ লাগছে তোমার? ডক্টর কে কল করবো?”

-” ডক্টর কে কল করার মতো সেইরকম কিছু হয় নি ইংলিশ আপা ‌।আসলে আমার বাসায় ফিরতে হবে। আব্বা, আম্মা, টিয়া পাখি চিন্তা করবে আমার জন্য।”

-” এইটা কোন কথা বললে দোয়া? অনুষ্ঠান এখন ও শেষ হলো না ,আর তুমি চলে যাবে? প্লিজ দোয়া যেও না।একটা দিনের‌ই তো ব্যাপার।বোন হিসেবে না মানো অন্তত তোমার সিনিয়র মনে করে আমার এই অনুরোধ টুকু রাখো।”

-” কিন্তু ইংলিশ আপা”

-” কোন কিন্তু নয়।নো মোর ওয়ার্ড এগেইন ।”

-” অবশেষে ইংলিশ আপার জোরাজুরি তে দোয়া বাধ্য হলো অনুষ্ঠানে থাকতে। দোয়া বাড়িতে কল করে জানিয়ে দিল ফিরতে একটু দেরি হবে। কেউ যেন চিন্তা না করে।দোয়ার মা বারবার বলেছিল দোয়া কে নেওয়ার জন্য দোয়ার আব্বা কে পাঠাবে । কিন্তু দোয়া না করে দিয়েছে। দোয়া একাই ফিরতে পারবে বলে জানিয়েছে।”

“অবশেষে অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে প্রায় সন্ধ্যা লেগে গেল। অনুষ্ঠান শেষে সবাই যার যার গন্তব্যে ছুটতে শুরু করেছে ।সিমরানের থেকে বিদায় নিয়ে দোয়া অটোর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু ত্রিশ মিনিট পার হয়ে যাওয়ার পরেও কোন অটোর দেখা মিলছে না।আর যে দুই একটা অটো দেখা যাচ্ছে তাদের গন্তব্য অন্য দিকে।অটোর দেখা না পেয়ে দোয়া ভাবলো আব্বা কে কল করে এগিয়ে আসতে বলি । কিন্তু কল করার জন্য ব্যাগ হাতড়ে দেখে ফোন নেই। পরক্ষণেই মনে হলো ফোন টা হয়তো সিমরানের ব্যাগে রয়ে গেছে। প্রায় চল্লিশ মিনিট পরে একটা অটো পেলো কিন্তু তিনি ভাড়া অনেক বেশি দাবি করলেন। যেহেতু অটো পাওয়া যাচ্ছিল না তাই দোয়া বিনা বাক্যে রাজি হয়ে গেল অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু অটোতে উঠার পর দোয়া লক্ষ্য করলো অটোওয়ালা লুকিং গ্লাসে বারবার দোয়া কে কেমন চোখে দেখছে আর বিশ্রী ভাবে হাসছে ।যা দেখে দোয়ার ভ”য়ে”র পাশাপাশি অস্বস্তি লাগছে। দোয়া ভাবছে অটো থেকে নেমে যাবে কি না? দোয়ার ভাবনার মাঝেই অটোওয়ালা দোয়া কে অবাক করে দিয়ে….

চলবে ইনশাআল্লাহ।।।।।

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবে।।

[]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here