ভালোবাসি প্রিয় ৩ পর্ব -০২

#ভালোবাসি_প্রিয় (০২)

#সিজন_৩

#লেখিকা_নূন_মাহবুব

-“দোয়া ভাবছে অটো থেকে নেমে যাবে কি না? দোয়ার ভাবনার মাঝেই অটোওয়ালা দোয়া কে অবাক করে দিয়ে একটা নির্জন রাস্তায় অটো নিয়ে যায়। যা দেখে দোয়ার আ”ত”ঙ্ক বাড়তে থাকে। দোয়া ভীত কণ্ঠে অটোওয়ালা কে জিজ্ঞেস করলো, আঙ্কেল আপনি এই নির্জন রাস্তায় অটো আনলেন কেন?এইটা তো আমার গন্তব্যে ফেরার রাস্তা নয়। তাছাড়া আপনার মতিগতি একদম ভালো লাগছে না আমার। ভুলে যাবেন না আপনি ও কিন্তু কোন মেয়ের বাবা।আর আমি ও আপনার মেয়ের মতো। আমি যাবো না আপনার অটোতে । আপনি মেহেরবানী করে আমাকে নামিয়ে দিন আঙ্কেল। প্লিজ আঙ্কেল নামিয়ে দিন। আল্লাহ কে ভয় করুন।”

-” নামার এতো তাড়া কিসের মামনি? তোমার ভালোর জন্যই তো এই রাস্তায় নিয়ে এলাম।এইটা শর্টকাট রাস্তা। তুমি শুধু দেখ‌ মামনি কিভাবে অল্প সময়ে তোমাকে তোমার নিজ গন্তব্যে পৌঁছে দিবো বলেই বিশ্রী ভাবে হাসতে হাসতে লোকটা কোথায় যেন ফোন করে বললো,পক্ষীকে একদম খাঁচায় বন্দী করে ফেলেছি।সদ্য ডানা গজিয়েছে পক্ষীটার। কিন্তু বড্ড ছটফট করছে খাঁচা থেকে বের হওয়ার জন্য।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডানা দুটো ছেটে দিতে হবে।হাতে সময় খুব কম। জলদি চলে আয়।”

-“দোয়া যথেষ্ট সাহসী মেয়ে। কিন্তু এই মুহূর্তে ভয়ে একদম কুঁকড়ে গিয়েছে। দর্শনেন্দ্রিয় আজ কোন বাধ মানছে না। নিজের এই অবস্থার জন্য নিজেকেই দায়ী মনে হচ্ছে তার। দোয়া ভাবছে আজ যদি ইংলিশ আপার কথা না শুনতাম তাহলে এমন বাজে একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। দোয়া কাঁদতে কাঁদতে বারবার আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে বলছে,ইয়া আল্লাহ কোন পরীক্ষা নিচ্ছো তুমি আমার?আমাকে সাহায্য করো মাবুদ। তুমি ছাড়া এই নির্জন জায়গায় সাহায্য করার মতো কেউ নেই আমার। তুমি ছাড়া আজ আমি বড়ো অসহায়। দোয়া বুঝতে পারছে না এই মুহূর্তে তার কি করা উচিত? কিভাবে সে এই মানুষরুপি পশুদের হাত থেকে রক্ষা পাবে? পরক্ষণেই দোয়া কিছু একটা ভেবে নিজেকে বাঁচানোর জন্য চলন্ত অটো থেকে পিচঢালা রাস্তায় ঝাঁপিয়ে পড়ে।যার ফলস্বরূপ পায়ে বেশ আঘাত লাগে। অনেকখানি হাত ছিলে র”ক্ত বেরিয়ে আসে।দোয়ার সেদিকে কোন খেয়াল নেই।তার মুল উদ্দেশ্য নিজেকে রক্ষা করা। কিন্তু পায়ের ব্যাথায় চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে দোয়ার। তবু ও পায়ের ব্যাথা কে প্রাধান্য না দিয়ে প্রানপনে দৌড়াতে থাকে দোয়া। দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ কিছু একটার সাথে হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে যায় । নিজেকে সামলে উঠতে যাবে তার আগেই দেখে অটোওয়ালাসহ আরো দুইটা লোক দোয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বিশ্রী ভাবে হাসছে । দোয়ার এই অবস্থা দেখে অটোওয়ালা বললো,

-“ইশ্ খুব লেগেছে তাই না মামনি? তুমি শুধু শুধু অটো থেকে এইভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লে। তারপর আবার এতোটা পথ দৌড়ে দৌড়ে শরীরের এনার্জি লস করলে। কিন্তু এতে কি লাভ হলো মামনি? সেই তো আমাদেরই খাঁচায় বন্দী হতে হলো। এবার ক‌ই পালাবে মামনি?ভাবছো চিৎকার করবে? কিন্তু এই নির্জন জায়গায় তোমার চিৎকার শুনে সাহায্য করার মতো কেউ আসবে না।হা হা হা।

-“দোয়া বুঝতে পারছে তার সাথে ঠিক কি হতে চলেছে।এই মানুষ রুপি পশুদের খাদ্যে পরিনত হতে চলেছে সে।হয়তো কাল সকালে পুরো নিউজ ফিড জুড়ে তার নাম থাকবে । তবু ও নিজেকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করে বললো,আমি আপনাদের কাছে হাতজোড় করছি প্লিজ আঙ্কেল মেহেরবানী করে আমাকে যেতে দিন। আপনি যে ভাড়া দাবি করেছিলেন আমি তার ডাবল টাকা দিচ্ছি তবু ও দয়া করে আমার কোন ক্ষতি করবেন না । প্লিজ আমাকে যেতে দিন। আল্লাহ কে ভয় করুন। তিনি সব কিছু দেখছেন। আপনাদের উপর গজব নাজিল হোক এইটা কি আপনারা চান? নিজেদের ভালো চান তো এইখান থেকে চলে যান।”

-“দোয়ার কথা শুনে লোকগুলো হো হো হেসে উঠে বললো,আগে নিজেকে বাঁচাও মামনি। তারপর না হয় আমাদের চিন্তা করো বলে লোকগুলো বিশ্রী ভাবে হাসতে হাসতে দোয়ার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।”

-“ইতিমধ্যে চারিদিকে আঁধার নেমে এসেছে।দূরের মক্তব থেকে আযানের মিষ্টি মধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। দোয়া হঠাৎ খেয়াল করলো ওর পাশেই বালির স্তূপ জমা রয়েছে। দোয়া আর এক সেকেন্ড ও বিলম্ব না করে লোকগুলোর দিকে এক মুঠো বালি ছুড়ে দৌড় দিতেই কোন এক গাড়ির সামনে গিয়ে পড়ল।যার ফলস্বরূপ গাড়ির মধ্যে থাকা ব্যক্তি কিছু টা বিরক্তির স্বরে বললো,

-” এই যে মিস ম”রা”র জন্য আর কারো গাড়ি পেলেন না? আমার গাড়ির সামনে এসেই ম”র”তে হলো। শহরের রাস্তায় জ্যাম থাকে বলে এই নির্জন রাস্তা বেছে নিয়েছি একটু শান্তি করে ড্রাইভ করার জন্য। এখন দেখছি আপনাদের জ্বালায় এই নির্জন রাস্তায় এসে ও শান্তি নেই। যত্তসব ফালতু লোকজন।এই এই সরুন তো আমার গাড়ির সামনে থেকে। ম”র”তে হয় দূরে গিয়ে ম”রু”ন।”

-“গাড়ির মধ্যে থাকা পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে দোয়া যেন প্রাণ ফিরে পেল। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালো তার সাহায্যের জন্য কাউকে পাঠানো জন্য।”

___________________________________

-“আপনি দয়া করে শান্ত হন আম্মা । দোয়াপু ঠিক আছে। আপনি দেখবেন আপুর কিছু হবে না।আব্বা তো গেছে আপু কে এগিয়ে নিয়ে আসতে। আপনি এখন দয়া করে একটু শান্ত হন। আপনার প্রেশার বেড়ে যাবে। এইভাবে চিন্তা, কান্নাকাটি করলে আপনি তো অসুস্থ হয়ে যাবেন আম্মা।”

-” মায়ের মন তুই বুঝবি না। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল,এখন ও মেয়েটার কোন খবর নেই। এমনকি ফোন ও রিসিভ করছে না।এই শহরের কলেজে ভর্তি হ‌ওয়ার পর থেকেই মেয়েটার একটার পর একটা বিপদ লেগে আছে মেয়েটাকে কতো বার বললাম শহরের কলেজে পড়াশোনা করার কোন প্রয়োজন নেই।কে শোনে কার কথা? আমি তো এই সংসারের কেউ নয়।তারা বাপ বেটি যা ভালো বুঝলো তাই করলো। ”

-“আম্মা আপনি একটু বেশিই চিন্তা করছেন। আপনি কিভাবে জানলেন আপু বিপদে পড়েছে?”

-“সন্তানের কোনো বিপদ হলে আর কেউ না জানুক ,না বুঝুক মা ঠিকই বুঝতে পারে। আজ সকাল থেকেই ভেতর টা কেমন যেন হাহাকার করছে ,মনে হচ্ছে আমার ক”লি”জা ছিঁড়ে যাচ্ছে। তুই বরং আবার ফোন করে দেখ তো কি বলে?আমি সামনের দিকটায় এগিয়ে দেখে আসি ওরা ফিরলো কি না?”

-” ঠিক আছে আম্মা। ছোঁয়া পর পর চার বার কল করলো কিন্তু রিসিভ হলো না। পঞ্চমবার কল করতেই রিসিভ হয়ে ঐ পাশ থেকে মেয়েলী কণ্ঠে সালাম শোনা গেল। ছোঁয়া বুঝতে পারলো এইটা সিমরান। ছোঁয়া সালামের উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, সিমরান আপু ! দোয়াপু কি আপনাদের বাসায়? আপুর ফোন আপনার কাছে কেন?সেই কখন থেকে কল করছি রিসিভ হচ্ছে না।আপু যে আপনাদের বাসায় যাবে এইটা তো আমাদের কে বলে নি। আম্মা খুব চিন্তা করছে।”

-“দোয়া এখনো বাসায় ফেরেনি টিয়া পাখি?”

-” না আপু।আপু কি আপনার সাথে ছিল?”

-“হ্যাঁ ছিল তো।আমরা সারাদিন এক সাথেই ছিলাম। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষ হ‌ওয়ার সাথে সাথেই আমরা বাসায় ফেরার উদ্দেশ্য র‌ওনা হয়েছিলাম। দোয়া এখনো ফেরেনি ?ওর কোন বিপদ হলো না তো?”

-” কিছু বুঝতে পারছি না আপু। আম্মা যদি জানতে পারে আপুর ফোন আপনার কাছে আর আপু নিখোঁজ, আম্মার নিশ্চিত হার্ট অ্যাটাক হবে।”

-“আসলে আমার ফোনে ব্যালেন্স ছিল না যার জন্য দোয়ার ফোন দিয়ে আমি বাসায় কল করেছিলাম, কিন্তু ভুলবশত ফোন টা আমার কাছেই রয়ে গেছে। ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরে অনেক ক্লান্ত লাগছিল ,তাই ঘুমিয়ে পড়েছিল।মাত্র‌ই দেখলাম দোয়ার ফোন আমার ব্যাগে রয়েছে। ইশ্ আমার আরো আগেই জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল । দুঃখিত টিয়া পাখি। আমার জন্যই দোয়ার আজ এই অবস্থা। ফোন টা যদি দোয়ার কাছে থাকতো ও তোমাদের জানিয়ে দিতে পারতো , কোথায় আছে? কেমন আছে? আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমরা।”

-“যা হয়েছে এতে তো আপনার কোন হাত নেই আপু । আপনি শুধু শুধু নিজেকে দোষী করছেন। আচ্ছা আপু রাখছি আমি।”

-“হ্যা রে ছোঁয়া ,কল রিসিভ হলো কি?”

-” হ্যাঁ আম্মা।”

-” কি বললো মেয়েটা? কোথায় আছে আমার দোয়া?আজ মেয়েটা বাড়ি ফিরুক ওকে আর আমি একা একা ভার্সিটি যেতে দিবো না।প্রয়োজনে আমি নিয়ে যাবো আবার নিয়ে আসবো। এখন কোথায় আছে ও? তুই আবার কল দে তো আমি একবার কথা বলি। আমি যে কিছুতেই নিজেকে স্থির রাখতে পারছি না।কি হলো ছোঁয়া?কথা কানে যাচ্ছে না তোর।কল দে দোয়ার কাছে।”

-” আসলে আম্মা দোয়াপুর ফোন সিমরান আপুর কাছে।আমি সিমরান আপুর সাথেই কথা বললাম। সিমরান আপু ও জানে না দোয়াপু কোথায় আছে।”

-“কথাটা শোনার সাথে সাথেই শাহিনা বেগম এক চিৎকার দিয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়েন।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।।

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবে।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here