ভালোবাসি প্রিয় পর্ব ১৮+১৯

#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_১৮
#সুলতানা_সিমা

কলিং বেলের উচ্চ শব্দে ঘুম ভেঙে গেল শান্তি নীড়ের সব সদস্যের। একেরপর এক কলিং বেজে চলছে এক সেকেন্ডের জন্যেও থামছে না। ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে সময় 4:30am একটু পরে অবশ্য সবাই ঘুম থেকে উঠত ফজরের নামাজ পড়তে কিন্তু এভাবে উঠত না শান্তি মত উঠত। এখন তো সবাই এক রাশ বিরক্তি নিয়ে উঠেছে।

দিহানের বড় মা বড় চাচ্চু রুমে থেকে বের হলেন উনারা বের হয়ে দেখলেন অলরেডি অনেকেই বের হয়ে গেছে। বের না হয়ে ওতো উপায় নেই। সবাই কানে হাত দিয়ে নিচে নামতে লাগলো। যে অসভ্যটা এমন করছে তাকে দু একটা লাত্তি দিয়ে রাগ মেটাবে সবাই। দিহানের বড় মা চেঁচিয়ে বললেন” ওই কোন হারামি একবার তো থাম।” উনার চেঁচিয়ে বলা কথাটা কারও কানে কিঞ্চিৎ পরিমাণও আসেনি কলিংয়ের তীক্ষ্ণ শব্দ ছাড়া কিছুই কানে ঢুকছে না।

সবাই একসাথে নিচে নামল। ইশি এক হাত কানে চেপে এক হাত দিয়ে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলতেই অরিনকে দেখে ইশি রাগান্বিত স্বরে বলল”

_অরিন তুমি? তুমি এতোক্ষণ ধরে অমানুষের মতো কলিং বাজাচ্ছিলে?

ইশির মুখে অরিন নামটা শুনে সবাই চমকে গেল। এই সময় অরিন তাদের বাসায়? সবাই একটু এগিয়ে আসলো। অরিন বোধহয় কোথাও গিয়েছিল হাতে একটা লাগেজ। অরিনের পড়নে একটা সুতির থ্রিপিস,চুলগুলা এলোমেলো, ঠোঁটের এককোণে রক্ত জমে আছে মনে হচ্ছে কেউ তাকে খুব উপদ্রব করেছে। লুপার মা এগিয়ে এসে অরিনের সামনে দাঁড়িয়ে অরিনের ঠোঁটের কাটা যায়গায় হাত দিলেন অরিন ব্যথায় আহহহ বলে আর্তনাদ করে ওঠে। লুপার মা ব্যথিত গলায় বললেন ”

_রক্ত জমে আছে। কেউ কি তোমাকে মেরেছে?

লুপার মায়ের কথায় অরিন ছলছল চোখে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিল। চোখ নামাতেই তার চোখ থেকে টুপ করে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পরল। সবাই অবাক হয়ে অরিনের দিকে তাকিয়ে আছে দিহানের বড় চাচ্চু একটু রেগে গিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লেন”

_এই মেয়ে এই সময় তুমি আমাদের বাড়ি কেন?

অরিন কোনো জবাব দিল না চারিদিকে তাকিয়ে কাউকে খুঁজল। দিহানের মা বললেন”
_লুপা ওর রুমে ঘুমাচ্ছে তোমার কোনো সমস্যা থাকলে আমাদের বলতে পার। এই সময়ে তুমি এখানে কেনো?
_এই মেয়ে চুপ হয়ে আছ কেন? বল কি হইছে আর তুমি এই সময়ে কই থেকে এসেছ?[বড়মা]

অরিন কারো কথার কোনো জবাব দেয়নি শুধু কেঁদেই গেলো। দিহানের বাবা ও তার চাচ্চুরা প্রচন্ড বিরক্ত হলেন। লুপার মা অরিনকে ধরে এনে সোফায় বসালেন তারপর বললেন কি হইছে সেটা যেন তাদের বলে। অরিন আগের মতোই চুপ থাকল। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি ওঠে গেল তবুও কান্না থামাল না।

দিহান হাই তুলতে তুলতে নিচে নেমে এলো। একটু আগে কলিং বেলের তীক্ষ্ণ টোনে তার ঘুম ভেঙে যায়। অলসতার জন্য উঠতে মন চায়নি। কিন্তু মনটা আঁকুপাঁকু করছে কে এসেছে এই সময়ে সেটা দেখার জন্য তাই আর বিছানায় থাকতে পারল না।

নিচে এসে অরিনকে দেখে দিহান ৪৪০ ভোল্টের শকড খেল। চোখ বড় বড় করে হা হয়ে তাকিয়ে তাকলো সোফায় বসা অরিনের দিকে। তার নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছেনা চোখ কচলিয়ে আবার তাকাল এখনও সে অরিনকে দেখল। মনের মধ্যে অজানা ভয় নাড়া দিল। আঁধার কেটে গেলে তার এনগেজমেন্ট এর আয়োজন শুরু হবে আর এখন অরিন তার বাসায়? তাও এই সময়ে? দিহানের ভয় হচ্ছে তার পরিবারকে যদি অরিন বলে দেয় তাদের বিয়ের কথা তাহলে তো তার বাবা তাকে ত্যাজ্যপুত্র করে দিবে। শুধু কী তাই তার স্বর্গের মত পরিবার থেকে সে চিরতরে বঞ্চিত হয়ে যাবে।

দিহান নিচে এসেছে দেখে তার মা তাকে বললেন”
_দিহান যা তো লুপাকে ডেকে নিয়ে আয়।

দিহান নামটা কানে যেতেই অরিন চোখ তুলে তাকাল। সিড়ির সামনে দিহানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দৌড়ে গিয়ে দিহানের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। অকস্মাৎ এমন ঘটনায় উপস্থিত সবাই অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়। অরিন হাউমাউ করে কান্না করছে। এদিকে ভয়ে দিহানের গলা শুকিয়ে কাট। যদি সবাই বিষয়টা জানে তাহলে কী হবে?

দিহান অরিনকে কিঞ্চিৎ স্বরে কাঁপা গলায় বলল”
_অ অ অরিন ছা ছা ছাড় স সবাই দে দেখছে।
অরিন ছাড়লো না। দিহানে বড় চাচ্চু রেগে দাঁতে দাঁত কিড়মিড় করে দিহানের বাবাকে চেঁচিয়ে বললেন”

_কী হচ্ছে এখানে এসব? লাজ লজ্জা মান সম্মান কি ধুয়ে খেয়েছে সবাই?
দিহান এক ঢোক গিলে অরিনকে একটু জোর করেই নিজের থেকে ছাড়াল। দিহানের বাবা অরিনের সামনে এসে বললেন”
_এই মেয়ে বের হও। বের হও এখান থেকে।
_বাবা,,,,দিহান কিছু বলতে চায় তার বাবা হাত সামনে হাত তুলে তাকে থামিয়ে দিলেন। তারপর আবার অরিনের দিকে তাকিয়ে বললেন”

_বেরিয়ে যেতে বলছি তোমায় কানে যায়নি?
দিশা বলল” বাবা ও লুপার ফ্রেন্ড” দিহানের বাবা বললেন”
_যে কারই ফ্রেন্ড হোক বেরিয়ে যাবে মানে সে এক্ষুনি বেরিয়ে যাবে।
লুপার মা এগিয়ে এসে অরিনের চোখের পানিটা মুছে দিয়ে বললেন
_এই সময়ে তুমি এখানে কেন এলে অরিন। নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে আমি তো তোমার মায়ের মতো বল আমায় কি হয়েছে?

অরিন ঠোঁট কামড়ে কেঁদে উঠে। ইশি বলে”
_দেখ অরিন এবার কিন্তু আমিও রেগে যাচ্ছি। তুমি কেন এই সময়ে এখানে বল?
_তুমি এভাবে কাঁদলে কী আমরা বুঝে যাব কী হইছে বল? এই সময়ে তুমি কই থেকে এসেছ বল? [দিহানের মা]
_তুমি কী কোথাও গিয়েছিলে? এই অবস্থায় কোথায় থেকে এসেছ? [বড়মা]

সবাই একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে অরিন কারও কথার কোনো জবাব দিচ্ছে না। দিহানের বড় চাচ্চু রেগে গিয়ে টি টেবিলের উপর থেকে একটা গ্লাস নিয়ে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারলেন। অরিন কিঞ্চিৎ কেঁপে ওঠে। গ্লাস ভাঙার ঝনঝন শব্দে পুরো ঘর স্তব্ধ হয়ে গেলো। উনি গর্জে ওঠে বললেন”

_এটা ভদ্রলোকের বাড়ি। এভাবে শেষ রাতে এসে এলোপাতাড়ি কলিং বাজানো এসে ন্যাকা কান্না করা এসব কোন ধরনের ফাজলামো শুরু করেছ?

অরিন উনার রাগ দেখে ভয় পেয়ে যায়। চুপচাপ লাগেজ থেকে একটা কাগজ বের করে। কাগজ বের করেছে দেখে দিহানের বুকটা ধুক করে ওঠে। এটা তো তাদের বিয়ের কাগজ অরিন তো বলেছিল কখনো অধিকার চাইতে আসবে না। তাহলে? ভয়ে দিহানের নিঃশ্বাস ভারি হয়ে গেছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এই ঠান্ডার সময়েও সে ঘেমে একাকার। অরিন কাগজটা দিহানের বাবার দিকে এগিয়ে দেয়। দিহানের বাবা হাত বারিয়ে দিলেন কাগজের দিকে। উনার হাত যত এগিয়ে যাচ্ছে দিহানের দম ততই আঁটকে আসছে। গলা শুকিয়ে চৌচির একের পর এক শুকনো ঢোক গিলতে আছে। দিহানের বাবা কাগজ হাতে নিয়ে সেটা দেখতে লাগলেন। কাগজটা দেখে উনার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। দিহানের বড় চাচ্চু কাগজটা নিলেন। উনারও একই অবস্থা। একে একে সবাই কাগজটা দেখল।

দিহানের বাবা দিহানকে জিজ্ঞেস করলেন”
_দিহান তুই বিয়ে করেছিস?
দিহান কিছু বলতে পারল না অরিনের এই কাজে সে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। লুপা মা এগিয়ে এসে অরিনকে বললেন”
_তোমাদের বিয়ের কথাটা কি লুপা জানে?” অরিন না সূচক মাথা নাড়াল। লুপার মা আবার বললেন”
_তুমি এখানে কেন এসেছ?
_আমি আমার অধিকার চাই। [দিহানের দিকে তাকিয়ে] আমার স্বামী চাই।”

অরিনের কথায় দিহানের মাথায় বাজ পড়লো। অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকল অরিনের দিকে। অরিন এমন কিছু করবে বলে সে কল্পনাই করতে পারেনি। যদি অরিন তাকে বলতো সে তার অধিকার চায় তাহলে দিহান বিনা দ্বিধায় সেটা দিয়ে দিত কিন্তু এভাবে তার পরিবারের সামনে এসে তাও তার এনগেজমেন্ট এর দিন? দিহানের কানে বাজল অরিন বলেছিল “শুধু একটা কাবিননামার দরকার ছিল সেটা পেয়ে গেছি এখন আপনি আসতে পারেন” দিহান অরিনের দিকে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইল। লুপার মা দিহানকে বললেন”

_দিহান বাবা আমি হয়তো এই পরিবারের ছোট বউ কিন্তু তোমার গুরুজন তাই কিছু কথা বলব। বিয়ের ডেট দেখে মনে হচ্ছে তন্দ্রা মায়ের সম্পর্ক মেনে নেওয়ার ঠিক দুদিন পরে বিয়েটা হয়েছে। বিয়ে যদি হয়েই গেলো তাহলে তন্দ্রা মাকে কেন জুলিয়ে রাখলে? আর এতদূর পর্যন্ত কেনই বা আসলে? কয়েক ঘন্টা পরে তোমার এনগেজমেন্ট এর জন্য মানুষ আসবে এত এত মানুষকে ইনভাইট করা হয়েছে কাকে রেখে কাকে না বলা হবে? আর তন্দ্রা মা? ওদের কি বলবেন বড় ভাইয়া? উনি যে ওদের কথা দিছেন উনি কিভাবে মুখ দেখাবেন উনাদের? আর মানুষজন যখন এসে শুনবে এসব তখন কি হবে? কোথায় যাবে এই পরিবারের মান সম্মান?
_হ্যাঁ ভাইয়া তুমি কেন এমন করলে? জিহান ভাইয়ার মতো তুমি কেন আমাদের জানালে না তবে অন্তত আমাদের এই দিনটা আসতো না। এখন কি বলে এসব আটকাবে? [দিশা]

দিহানের মা বললেন”
_চুপ করো সবাই। আমি আগে দিহানের মুখে সব শুনবো।” দিহানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কাঁপা গলায় বললেন”
_দিহান এসব কী সত্যি? সত্যিই তুই বিয়ে করেছিস?” মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল দিহান। মায়ের প্রশ্নে ছলছল চোখে তাকাল মায়ের দিকে। উনি আবার বললেন”
_এ এ এই কা কাগজ টা আ আসল?” দিহান ঠোঁট কামড়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। দিহানের মা দু কদম পিছিয়ে গিয়ে ধপ করে সোফায় বসে পড়লেন। সবাই এমন একটা ধাক্কা খেয়েছে যে তাদের জবান বন্ধ হয়ে গেছে তাদের জবান দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। চারিদিকে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে।

দিহান তার বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বলল”
_বাবা আসলে,,,দিহানের বাবা হাত বারিয়ে দিহানকে থামিয়ে দিলেন। তারপর বললেন”
_না আমি তোমার বাবা না তুমি আমার ছেলে। আমার মাত্র দুটো মেয়ে আছে। আর যেটা ছেলে ছিল সেটা মরে গেছে।” দিহান কান্নাজড়িত গলায় বলল”
_বাবা আমার কথাটা শুনো।” হানিফ চৌধুরী সেখান থেকে চলে গেলেন উপরে দিহান পিছন থেকে বার বার বলল “বাবা প্লিজ আমার কথাটা শুনো যেওনা বাবা প্লিজ।” থামলেন না উনি চলে গেলেন উপরে।

দিহান তার মায়ের পায়ের কাছে বসে হাত জোর করে মিনতির স্বরে বলল”
_আম্মু তুমি তো আমাকে বুঝো প্লিজ আগে পুরোটা শুনো তারপর ভুল বুঝও।” দিহানের মা কাটা গলায় বললেন”
_তুই আমার ছেলে নয়। আমার ছেলে আমাকে ছোট করার কথা ভাবতেই পারেনা” চোখের পানিটা মুছে উনিও উপরের দিকে পা বাড়ালেন। দিহান তার মাকে বার বার পিছন থেকে ডাক দিল উনি থামলেন না। একে একে সবাই চলে গেলো। দিহানের চোখ থেকে টুপ করে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। যে ভয়টা সে এতদিন পেয়েছিল সেটাই হলো। তার বাবা মা তার পুরো পরিবার তাকে ভুল বুঝল। দিহান বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে অরিনের সামনে গেল। অরিন দিহানের দিকে অপরাধী চোখে তাকাল। দিহান গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে টাস টাস করে পর পর তিন চারটে থাপ্পড় দিল অরিনের দুগালে। অরিন গিয়ে ছিটকে পড়লো ফ্লোরে কাটা ঠোঁট আবারও কেটে যায়। গলগল করে রক্ত বের হয় সেখান থেকে। ফ্লোরে রাখা অরিনের হাতটা দিহান পা দিয়ে চেপে ধরলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল”

_নিজের ইচ্ছায় যখন আগুনে ঝাঁপ দিয়েছ তাহলে পুড়ে পুড়ে মরার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও। আজ থেকে দেখবে তুমি দিহানের ভয়ংকর একটা রূপ।
#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_১৯
#সুলতানা_সিমা

দিহান অরিনকে এভাবে টর্চার করবে অরিন তা স্বপ্নেও ভাবেনি। সে ভাবত দিহানই একমাত্র মানুষ যে তাকে বুঝে,কেয়ার করে। কিন্তু না বুঝেনি তাকে দিহান। দিহানের পায়ের নিচে নিজের হাতটা ছাড়াতে অন্য হাতে দিহানের পা সরাতে চাইল অরিন। দিহান আরও জোরে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল”

_স্বামী চাই অধিকার চাই তাইনা? কী মনে করেছ তুমি যা খুশি তাই করবে আর আমি সব সয্য করে নিব? উঁহু এতটা ভালো মানুষ আমি নই। [বসে অরিনের চুলের মুঠি ধরে] আজ তন্দ্রার সাথে এনগেজমেন্ট নয় বিয়ে হবে। আমার বউ হয়ে থাকবে তন্দ্রা আর তার চাকরানী হয়ে থাকবে তুমি।

দিহানের মুখে তন্দ্রা নাম শুনে অরিন চমকে ওঠে। কিঞ্চিৎ স্বরে ঠোঁট নাড়িয়ে বলে ওঠে” তন্দ্রা?”দিহান আরও জোরে চুলে মুঠি ধরে বলে”হ্যাঁ তন্দ্রা” অরিন ব্যথায় আহহহ বলে আর্তনাদ করে চোখ খিঁচে ফেলে।দিহান অরিনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে উপরের দিকে চলে যায়। তার বাবা মা কে বলবে গিয়ে কিভাবে বিয়ে হয়েছে । অরিনকে এর শাস্তি সে দিবেই দিবে। তন্দ্রাকে নিজের বউ করে এনে সেই শাস্তিটা দ্বিগুণ করে দিবে সে। চুপ থাকার সময় শেষ সে বুঝে গেছে অরিন কোনো ভালো টাইপের মেয়ে নয়। অরিন তার পরিবারের জন্য বিপদজনক তাই সবাইকে সব টা জানানো উচিৎ।

অরিনের প্রতি তার রাগ হচ্ছে ভিষণ রাগ হচ্ছে। কাল রাতে তারা সবাই মিলে নীলদের বাসায় গেছিল নীলের বাসায় তালা ঝুলানো ছিল। শাওনের বাসায় গিয়ে শাওনকে পায় কিন্তু শাওনের মা অসুস্থ বলে শাওন তার সাথে যায়নি। একাই রাত দুইটা পর্যন্ত সে নীলকে খুঁজেছে। এমন কোনো জায়গা নাই যেখানে সে ফোন দিয়ে খুঁজ নেয়নি। কিন্তু কোথায় পায়নি খুঁজে। তিনটার দিকে বিছানায় কাত হয়েছিল সাথে সাথে চোখ লেগে যায়। আর তার দেড় ঘন্টা পরেই অরিনের আগমন ঘটে। এই সময় দিহানের জায়গায় যে কেউ থাকলে তারও মেজাজ খারাপ হতো। একটার উপরে আরেকটা প্রেশার সে নিতে পারছে না।

_______________

কলিং বেল বেজে ওঠতেই লারা এসে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলতেই দেখল জিহান দাঁড়িয়ে আছে। চেহারায় চিন্তার চাপ। লারা বলল”

_মাত্রই তো বের হলেন চলে আসলেন যে? কিছু ফেলে গেছেন?” জিহান কোনো উত্তর দিলনা পাশ কাটিয়ে ভেতরে চলে গেল। দরজা বেজিয়ে লারাও পিছু পিছু গেল। জিহান রুমে গিয়ে আলমারি থেকে কাপড় বের করে লাগেজ গুছাতে লাগল। লারা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পাচ্ছেনা। জিহান নিজের লাগেজ গুছাতে গুছাতে বলল”

_তোমার লাগেজ গুছানো না থাকলে গুছিয়ে নাও।
_আমরা কি কোথাও যাবো?
_আমি তোমাকে যা বলছি তাই কর।” জিহানের ধমক শুনে লারা চুপ হয়ে যায়। তার লাগেজ এখনো গুছানো আছে। লাগেজটা নিয়ে এসে জিহানের সামনে দাঁড়াল। জিহান লারার দিকে তাকিয়ে বলল”

_বোরকা পইড়ো।
_আমার তো বোরকা নাই।
_থাকবে কেমনে ক্লাবে ক্লাবে অন্ত**স পড়ে ঘুরলে তো আর বোরকা লাগেনা। প্রস্টিটিউট কোথাকার।

লারা মাথা নিচু করে ফেলল। জিহানের মুখে এমন কথা শুনতে শুনতে সে অবস্তু হয়ে গেছে। তবুও তার কষ্ট হয়। তাকে এভাবে কথা বলার সাহস কারই ছিলনা। নিয়তি আজ তাকে এতকিছু সয্য করাচ্ছে। বুক ছিড়ে আসা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে লারা খাটের এককোণে বসল। জিহান যখন কাপড় গোছাচ্ছে সে আর দাঁড়িয়ে থেকে কি করবে? জিহান তো তাকে একটা কাপড় ধরতেও দিবেনা। লারাকে বসতে দেখে জিহান বলল”

_কি ব্যাপার বসেছ কেন?
_তো কি করব?
_কি ? আমি তোমাকে একটা কথা বলেছি বলে আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করছ?
_আমি তো স্বাভাবিক ভাবেই কথাটা বললাম। আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন?
_তুমি আমার সাথে তর্ক করছ?
_আমি কখন তর্ক করলাম?
_তুমি আবার তর্ক করছ?

লারা চুপ হয়ে গেল। আসলে সে কোন কথাটা বললে যে সেটা সঠিক কথা হবে সেটাই সে ভেবে পায়না। সে যেই কথা বলে বা যেই কাজ করে সেটাতেই জিহান তার ভুল ধরে। লাগেজ গুছানো শেষ হলে জিহান লারাকে আসো বলে নিজের লাগেজ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে লারাও তার পিছু পিছু বের হয়। বাইরে এসে জিহান গাড়িতে বসে কিন্তু লারা দাঁড়িয়ে থাকে। সে পিছনে বসবে নাকি সামনে বসবে সেটা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায়। কোথায় বসলে যে জিহান তাকে ঝাড়ি দিবেনা সেটা বুঝতে পারছেনা।

_কী হয়েছে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছ কেন? ওঠো এসে।
_আব,,, মানে আমি কোথায় বসব?
_আমার মাথায় বসো। গাড়িতে কি জায়গা নেই নাকি?।” লারা চুপচাপ গাড়িতে ওঠে বসে। জিহান আবারও ধমক দিয়ে বলে।
_সামনের সিটে কেন বসেছ পিছনে যাও।” লারা বের হয়ে পিছনে চলে গেল। লারা বাম দিকের সিটটায় বসল জিহান বলল”
_বামের সিটে কেন ডানের সিটে বস। “লারা ডানের সিটে বসে। জিহান গাড়ি স্টার্ট দিবে তখনই বলে ওঠল”
_এই সামনের সিটে আস।” লারার এবার মেজাজ খারাপ হয়ে যায় সে গাড়ি থেকে বের হয়ে সামনে গিয়ে বসে। টাস করে গাড়ির দরজা লাগায়। জিহান আবারও ধমক দিয়ে বলে”
_এতো জোরে গাড়ির দরজা লাগাও কেন? যদি ভেঙে যায়।
_সরি।
_সিট বেল্ট লাগাও।
_জ্বি।

জিহান গাড়ি স্টার্ট দিল। লারার ইচ্ছে করছে একবার জিজ্ঞেস করতে কোথায় যাবে তারা কিন্তু ভয়ে আর জিজ্ঞেস করা হচ্ছেনা। গেলে দেখতে পারবে তারা কই যাচ্ছে সেটা ভেবেই চুপ করে বসে থাকল।

____________________________

অরিনের প্রতি লুপার অনেক রাগ হচ্ছে। সে বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ার সত্তেও তাকে অরিন কিছুই জানায় নি? নীলের জন্য তার মনটা এমনিতেই খারাপ তারপর তাদের পরিবারের সম্মান নিয়ে অরিনের এমন কাজ লুপার মনকে আরও বিগড়ে দিয়েছে। অরিনের নামটা মনে আসতেই বিরক্ত বিরক্ত লাগছে। বেহায়া মন চাইছে একবার গিয়ে অরিনকে দেখতে কিন্তু পরক্ষণে নিজের ইচ্ছে দমিয়ে দিচ্ছে। অরিনকে নিয়ে এমন কিছু সে কখনোই কল্পনা করেনি। বাড়ির সবাই আস্তে আস্তে রেডি হচ্ছে দিহানের বিয়ের জন্য। এখনো মেহমান আসেনি একটু পড়েই এসে যাবে। জিহানও নাকি আসছে। সবাই এনগেজমেন্ট এ এসে বিয়ে খাবে ভেবেই হাসি পাচ্ছে লুপার। সবাই আয়োজন ছোট করে করতে চাইছিল কিন্তু তার সো কল্ড আম্মু বলছেন এটা নাকি এই বাড়ির প্রথম বিয়ে তাই এটা বড় করে হওয়া চাই।

চোখ বন্ধ করে খাটে বসে আছে দিহান। কেন জানি তার ভেতরটা খুব কাঁদছে। অরিন তার সাথে এমন করেছে বলে নাকি সে অরিনের সাথে এমন করছে বলে ভেতর কাঁদছে সে বুঝতে পারছে না। বার বার চোখে ভেসে ওঠছে অরিনের কান্নারত চেহারা। কি এমন হয়েছে তার যে সে এভাবে এমনটা করল? সত্যি কি অরিন তাদের পরিবারের শত্রু নাকি অন্য কিছু? সে তন্দ্রাকে বিয়ে করে ভুল করবে না তো? দিহানের মাথা ভনভন করতে লাগল মাথায় কিছু আসছেনা তার। সার্ভেন্ট অরিনের লাগেজটা এনে দিহানের রুমে রেখে গেছিল। সেখানে চোখ পড়তেই দিহান ওঠে গিয়ে লাগেজ খুলল। লাগেজে কয়েকটা দামি দামি শাড়ি আর ড্রেস আছে । দেখে কিঞ্চিৎ কপাল কুঁচকে গেল দিহানের। অরিন এত দামি কাপড় চোপড় কই পেল? একটা শাড়ি লুপার মায়ের একটা শাড়ির মতো লাগল পরক্ষণে ভাবলো হয়তো লুপা দিয়েছে অরিনকে। বাট বাকি শাড়ি গুলা কে দিল? লাগেজটাও কেমন চেনাচেনা মনে হচ্ছে।লাগেজের ভিতর অরিনের মোবাইল রাখা। লাগেজে মোবাইল ফোন দেখে হাসি পেল দিহানের। ফোন হাতে নিয়ে স্কিনের পাওয়ার জ্বালাতেই দিহান শকড খেল। অস্পষ্ট ঠোঁটে বলে ওঠল তন্দ্রার সাথে অরিনের ছবি?

চলবে…….।

সময় মতো রহস্য খোলাসা হবে তাই প্লিজ একটু ধর্য ধরুন।❤

গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি❤
চলবে…..।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here