ভালো তোকে বাসতেই হবে পর্ব ৪+৫

পর্ব ৪+৫
#ভালো তোকে বাসতেই হবে
#পরিধি রহমান বিথি
#পর্ব-৪

কার না ভালো লাগে এই মধু রাত??

মনের সঙ্গপনে কোথাও না কোথাও এই লোকটি জায়গা করে নিচ্ছে প্রতি নিয়ত,, তাহলে কি আমি ও দুর্বল হয়ে পরছি? ওনার তো ভালোবাসার মানুষ রয়েছে তাহলে আমি নিছকই ওনার ওয়েটিং লিস্টের পাত্রী হতে নারাজ। কিন্তু এনার মায়া জাল থেকে কেউ কি কখনো দুরে থাকতে পারে??এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম নিজেও জানি না।

আমি বেঘোরে ঘুমাচ্ছি,,, কিন্তু প্রতিটা পরশ আমার মস্তিষ্কে সারা প্রদান করছে।তাই গভীর ঘুমে থাকা সত্ত্বেও আমি স্পষ্ট অনুভব করতে পারছি কেউ বারবার আমার ঠোঁটে ,, কপালে,, গালে,, চোখে অজস্রবার তার ঠান্ডা ঠোট ছুঁইয়ে যাচ্ছে। এই রহস্যের পর্দা তোলা ইচ্ছা থাকলেও ঘুম কন্যা আজ আমায় আস্টে-পিস্টে জরিয়ে রেখেছে,,তাই আর চোখ মেলে চাওয়া হলো না অজানা পথে। একটা সময় সব থেমে গেল,, শুধু এটুকু অনুভব হলো আমার গালে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ছে।

টিপ টিপ করে চোখ দুটো মেলতেই দেখি সকাল হয়ে গেছে,, হাত পা টান টান করতেই মনে পরল কাল রাতের কথা,, তাড়াতাড়ি চারিদিকে চোখ বুলিয়ে ও লাভ হলো না,,কারণ রাত ভাইয়া ছিল না রুমে,, আবার ও একটা কথায় আমার টনক নড়ল ,, কথাটা ঠিক এমন ছিল: আমি বেশিক্ষণ থাকব না,,একটু ঘুমিয়েই চলে যাব।তাই হয়তো চলে গেছে,, উঠে বারান্দার পর্দা ধরে দাঁড়ালাম,, পাখির কলকাকলিতে কোলাহল সকাল। আকাশের পানে চাইতেই দেখি সূয্যি মামা ও তার প্রকট তেজ‌ দেখাচ্ছে,,এটা নিছকই তেজ নয় এটা আমাকে জানান দিচ্ছে বেশ বেলা হয়েছে,,, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৮.০৫ বাজে।

আমার তো চোখ কপালে কারণ আমার তো ভার্সিটিতে যেতে হবে।,, তড়িঘড়ি করে রেডি হয়ে নিলাম,,নাকে মুখে কিছু গ
খাবার ও গিলে নিলাম নয়তো আম্মুর FM রেডিও চালু হয়ে যাবে।আর সেই রিক্স কোনো ভাবেই নিতে সম্মতি প্রকাশ করছি না। বেশি দেরি না করে বেরিয়ে পরলাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে,,।

” অপেক্ষা” শব্দটি বড্ড বিরক্তিকর,, আর তার থেকে ও বিরক্তিকর এই অপেক্ষার প্রহর কাটানো,, কিন্তু আমার অপেক্ষা একটু অন্যরকম,,আমি অপেক্ষা করছি রিকশার জন্য,, জীবনের চার ভাগের এক ভাগ সময় এই রিকশাওয়ালার জন্য দারিয়ে থেকে কাটিয়ে দিলাম,, অন্যদিকে আমার প্রাণ প্রিয় বান্ধবী একটু থেমে থেমে কল করেই চলেছে। কিন্তু এই বিরক্তিকর সময়ে ওই বিরক্তিকরের ফোন তোলার স্বাদ বুকের মধ্যে দমিয়ে রাখলাম।

হঠাৎ আমার বিরক্তির রাজ্যে হাজির হলেন বিরক্তির রাজা। মনে মনে ঠিক করেছি এই অন্যের আমানতের দিকে তাকাবো না,,,তার কি আর জো আছে??

,, আমার সামনে একটা কালো গাড়ি থেকে চুল ঠিক করতে করতে বেরিয়ে এলেন রাত ভাইয়া,, প্রথমে ভেবেছিলাম তাকাবো না,,, কিন্তু এই লোকটা মেয়েদেরকে ক্রাশ খাওয়ানোর জন্য সবসময় রেডি থাকে,, হোয়াইট টি-শার্ট তার উপর স্কাই ব্লু রঙের ব্লেজার,,হাতা কনুই ওবদি কাছানো,,বাম হাতে কলো ডায়ালের ঘড়ি,, চোখে কালো সানগ্লাস,, চুল গুলো হাল্কা স্পাইক করা। এমন একটা ছেলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে নিজেকে সামলানো মুশকিল ।তাই আমি ও অন্য দিকে মুখ করে আড় চোখে চেয়ে আছি। গাড়ির দরজাটা খুলে পাশে হাত ভাঁজ করে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল:

সোনালী কলেজে যাচ্ছিস তো?? গাড়িতে ওঠ আমি তোর কলেজের দিকে যাচ্ছি। আর‌ আমাকে দেখার যদি এতই ইচ্ছে তাহলে সামনাসামনি দেখ,, চোরের মতো দেখার কি আছে??

আমি পড়ে গেলাম লজ্জায়,, লোকটার মুখে কিছু আটকায় না,, কথা বের হচ্ছিল না মুখ থেকে,,কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম;

আপনাকে দেখতে যাব কেন?আর আমি একাই যেতে পারব।কারো হেল্প লাগবে না।বলেই অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ মনে হচ্ছে আমি শূন্যে ভাসছি,, আমি ঘার ঘুরিয়ে বা দিকে তাকাতেই রাত ভাইয়ার গম্ভীর মুখটা ভেসে উঠলো,, আমার আর বুঝতে বাকি রইল না যে রাত ভাইয়া আমাকে কোলে তুলে নিয়েছে। আমি হাঁ হু কিছু বলার আগেই সোজা গিয়ে বসিয়ে দিলেন ফ্রন্ট সিটে,, আর ডোর লক করে দিলেন,, আমি হাবলার মতো চেয়ে চেয়ে দেখলাম শুধু।উনি ও গাড়ি স্কার্ট দিলেন ।আমি আমতা আমতা করে বললাম:

,,এ,এটা কি হলো?

,,ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে এক পলক চেয়ে আবার সামনের দিকে চেয়ে ড্রাইভিং-এ মন দিলেন,, আমি যে তাকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলাম সেরকম কোন ভাবান্তর দেখলাম না। উনি তার নিজের মনে ড্রাইভ করছেন।,, সারা রাস্তায় আর কোনো কথা বলেননি,, আমি ও বাইরে মুখ করে বসে রইলাম আর উনি ওনার মতো ড্রাইভিং-এ ব্যস্ত,,,

পাক্কা ৪৫ মিনিটের মাথায় ভার্সিটির গেটের সামনে থামল গাড়ি,,, বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে,, বেশি লোকজন নেই বললেই চলে,,যাও আছে তারাও সবাই ছাতাধারী। হঠাৎ চোখ পড়লো জেরিনের দিকে,,ডান হাতে ছাড়া মাথায় দারিয়ে আছে আর বাম হাত দিয়ে চশমা ঠিক করছে। আমি ও আর দেরি না করে হাতা হাতে ওর দিকে অগ্রসর হলাম।রাত ভাইয়া বোধ হয় দু একবার ডাক দিয়েছে কিন্তু আমি ও কোন সাড়া দিলাম না। কি জানি ,, হয়তো ভাবছেন আমি বয়রা হয়ে গেছি,,ভাবে ভাবুক আমার কি?? জেরিনের সামনে গিয়ে জোর পূর্বক একটা হাসি দিয়ে লোক দেখানো সরিটা বলে দিলাম:

,,সরি যে দোস্ত,,

অপেক্ষার অবসান কাটিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল:

,,থাক আপনার আর সরি বলতে হবে না,,চল এবার। ঢুকে পরলাম ভার্সিটির ভেতরে,, রোদের মতো বৃষ্টি ও বেশ প্রকট ছিল তাই ছাতা থাকতেও আমারা কাক ভেজা দিলাম,,তবে এটাকে কাক ভেজা না বলে অনায়াসে কাকের বাচ্চা ভেজা বলা যেতে পারে,, ভালোই যাচ্ছিলাম মাঝখানে বাঁধ সাধলো আর এক মগা,,, মনে মনে মগা বললেও সামনাসামনি সিনিয়র ভাইকে তো আর মগা বলা যায় না,,যতোই হোক সিনিয়র ভাই,, সামনে এসে রাস্তা আটকে দাঁড়ালেন সিহাব ভাইয়া ,, হ্যাঁ ,, এতোক্ষণ এনার কথাই বলছিলাম,, মাস্টার্সে পড়ুয়া ভার্সিটির লিডারের ছোট ভাই তাই তার উপর কেউ কথা বলতে পারে না। সিহাব ভাই ছাতা ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে তাই সাবলীল ভাবেই সে ভিজে চুপচুপে পেয়ে গেছেন। আমার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন:

,,হ্যায় সোনালী,, কেমন আছো? আমি ওনার চাহনিতে একটু ইতস্তত বোধ করে ওরনা ঠিক করতে করতে:

,,হ্যায় ভাইয়া ,, আমি ভালো আছি,, আমার ক্লাস আছে, আমি আসি(বলেই হাঁটা দিলাম, কিন্তু উনি আবার আমার পথ কি টকে দারিয়ে পরলেন।এক ঝটকায় আমার ছাতাটা নিচে ফেলে দিলেন। আমি চোখ বড় বড় করে ওনার দিকে তাকিয়ে উঁচু গলায় বলে উঠলাম:

,,,হোয়াট ইজ দিস, সিহাব ভাইয়া?? এসবের মানে কি?? আমার গায়ে হালকা গোলাপী রঙের একটা জামা ,,ছাতা ফেলে দেওয়ায় বৃষ্টির প্রতিটা ফোটা আমার শরীর ছুঁয়ে মাটিতে পরছে। আমার শরীরের প্রতিটা ভাজ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে,,।আমি লজ্জায় কথা বলতে পারছি না ক্রমশ ঢোক গিলে চলেছি। বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে চলেছে আমার চোখ। সিহাব ভাইয়া আমার দিকে লালসার নজরে চেয়ে বলে উঠলেন:

,,নাথিং বেবী,, এই মেঘলা দিনে আমাদের সাথে ও তো বৃষ্টি উপভোগ করতে পারো,,ইউ লুক সো হট,,(বলেই পৈশাচিক হাসি দিতে লাগলেন)। আমি চোখের পলক ফেলে সামনে তাকিয়ে অবাক দৃষ্টিতে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছি। কারণ সিহাব ভাইয়া মাটিতে পড়ে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে,, আর বাম পাশেই রাত ভাইয়া হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে,, চোখ দুটো লাল বর্ন ধারন করেছে ,, মনে হচ্ছে ওই দুটি চোখ দিয়ে অগ্নি নিক্ষেপ করছেন। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না যে,,রাত ভাইয়া এসে সিহাব ভাইয়ার নাকে এক ঘুসি মারে ,, আর টাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে যায় আর ব্যাথায় কুকরে ওঠে।

আমি লজ্জায় গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছি।রাত ভাইয়া তার ব্লেজারটা খুলে আমার গায়ে পড়িয়ে দেয়,, আর আলতো হাতে আমার চোখের অশ্রু মোছার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে,,সিহাব ভাইয়া মাটি থেকে উঠে রাত ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে হিংস্র চাহনি নিক্ষেপ করে বলেন:

,, তুই কে রে?আর তুই জানিস কর গায়ে হাত তুলেছিস?? আমার ভাইয়া জানলে কি হাল করবে?

,,তুই কার জিনিসে হাত দিয়েছিস তোর কোনো ধারণা আছে??যে ওর দিকে হাত বাড়াবে তার হাত আমি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে দ্বিতীয় বার ভাববো না,,যে ওর দিকে চোখ তুলে তাকাবে তার চোখ তুলে আমি মার্বেল খেলব,,গট ইট??(হিসাবের চারপাশে ঘুরে ঘুরে,,বাম হাতটা পকেটে রেখে একটা হিরো এটিটিউড নিয়ে)

,,(সিহাব আমতা আমতা করে )ত,ত,তুই জানিস না আমি কার ভাই??

,,যা আর গিয়ে তোর বাপ কে বলিস রাতের নাম,,রাত আজ বেক। আমি এতোক্ষণ যাবত অবুঝ শিশুর মতো সব শুনেই যাচ্ছি,, কিন্তু সব আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে,,রাত ভাইয়া কি বলছে এসব,,??আর কিছু বলার আগেই কয়েকজন ছেলে এসে রাত ভাইয়ার ইশারায় সিহাব ভাইয়াকে নিয়ে গেল।রাত ভাইয়া আমাকে আর জেরিনকে নিয়ে ক্যান্টিনে নিয়ে গেলেন। তারপর একটা চেয়ার টেনে বসালেন,, আমার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলছেন:

,,রিলেক্স সোনালী,, কিছু হয়নি ,, প্লিজ একটু শান্ত হো। আমার পাশে আর একটা চেয়ার টেনে বসে আমার হাতটা তার হাতে রেখে আমার চোখের দিকে চেয়ে বললেন:

,, ইটস্ ওকে,, সোনালী,,কাম ডাউন।অন্য পাশ থেকে জেরিন চশমা ঠিক করতে করতে আমার কাঁধে হাত রেখে বলছে:

হ্যাঁ সোনালী রাত ভাইয়া ঠিকই বলেছেন,,তুই শান্ত হো।

আমি ও ধীরে ধীরে শান্ত হতে লাগলাম। এতোক্ষণে বৃষ্টি থেমে গেছে। আমরাও বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম,, জেরিন ও আমাদের সাথে গড়িয়ে উঠলো,, রাস্তায় ওকে ড্রপ করে আমারা বাসায় যাচ্ছি। হঠাৎ রাত ভাইয়া বলে উঠলেন:

,,সোনালী??

,,হম

,, শোন বাসায় কেউ যেন এই ব্যাপারটা না যানে তাহলে তো পড়াশোনায় প্রবলেম হতে পারে।

আমি মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলাম,,যার অর্থ হচ্ছে,, ওকে। কারণ আমি ও জানি বাসায় আম্মু এই বেপারটায় অবগত হলে অবগত হলে হুলুস্থুল কাণ্ড বাধাবে।আর টেনশনে হয়তো আমার ভার্সিটিতে যাওয়াই বন্ধ করে দেবে।তাই আমাকে চুপ থাকতে হবে। কিন্তু কাল কিভাবে আমি ভার্সিটিতে পা রাখব ,,?? আমার যদি বড় কোন ক্ষতি করে দেয়?? মনের মধ্যে না না প্রশ্ন ডানা ঝাপটাচ্ছে। হঠাৎ রাত ভাইয়া বলে উঠলেন:

,,কাল ভার্সিটিতে যেতে ভয় পাচ্ছিস তো?? ভয় পাস না আমি দেখছি ব্যপারটা,,। তুই টেনসেন করিস না।আর কাল ভার্সিটিতে যাওয়া যেন মিস হয় না।(বলেই আলতো করে আমার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলেন। আমি এবার অবাক হইনি বরং ভরসা পাচ্ছিলাম।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ির সিটে গা এলিয়ে দিয়ে ভাবছি কি করবেন উনি?? আর কাল ভার্সিটিতে গেলেই বা কি হতে চলেছে আমার,,,বড় ভাবনা,, গভীর ভাবনায় ডুবে গেলাম..!!

#পর্ব-৫

,,কাল ভার্সিটিতে কি হতে চলেছে,,বড় ভাবনা,, গভীর ভাবনায় ডুবে গেলাম,,!!

,, হঠাৎ ই আমার ভাবনায় ব্রেক কষলেন রাত ভাইয়া। অর্থাৎ গাড়ি ব্রেক করলেন আমাদের বাসার সামনে। গায়ের জামা এখনো হালকা হালকা ভিজা,, চুল থেকে টুপটাপ দু এক ফোঁটা পানি পরছে।রাত ভাইয়া আগে নেমে আমার পাশের দরজা খুলে আমার হাতটা ধরে বললেন:

,, আমি দেখছি কি করা যায়। তোর কোন ক্ষতি করতে পারবে না কেউ। আমার উপর ভরসা রাখ।আর বাসায় গিয়ে তাড়াতাড়ি ড্রস পাল্টে নিস না হলে ঠান্ডা লেগে জ্বর আসবে। তখন কিন্তু আমি আসবো না তোর সেবা করতে(আমি মুচকি হেসে দিলাম,,এখনো কিছুটা ভয়ের মধ্যে আছি তাই উনি আমাকে হাসানোর জন্য কথাটা বললেন,,)

,,গাড়ি থেকে নেমে বাসার গেট দিয়ে ঢুকছি,,রাত ভাইয়া এখনো আমার যাওয়ার দিকে চেয়ে আছেন,, কিন্তু আমি একবার ও ফিরে তাকালাম না। সোজা গেট দিয়ে ঢুকে গেলাম বাসার ভেতরে। ভেতরে তো অবাক কান্ড চলছে,,ভাবিনি কখনো এও দেখতে হবে,, কিছুক্ষণ আগে কি হয়েছে তার ছিটেফোঁটাও আমার মাথায় নেই আমি তো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছি।

,,আসল ঘটনা হচ্ছে,, আব্বু ড্রয়িং রুমে উপুড় হয়ে ফ্লোর মুচ্ছেন,, একটা মোছা দিচ্ছে আবার সোজা হয়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে,,অন্যদিকে আম্মু বসে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছে,, এদিকে মোছো,,দেখো ও দিকে পানি‌ রয়ে গেছে ওদিকে মোছো,,এমন কান্ড দেখে কার না হাসি পায়,, এসব হচ্ছে আম্মুর পানিশমেন্টের কিছু নমুনা। তবে আসল ঘটনা কি সেটা জানার অপেক্ষায় আছি।তাই অপেক্ষার অবসান ঘটাতে হাসতে হাসতে আম্মুর কাছে গিয়ে বললাম:

,, আম্মু বেপার কি আব্বুর এই নাজেহাল অবস্থা করেছ??

আব্বু বলে উঠলো:
,,দেখ রে প্রিন্সেস আমার কি হাল,, কোথায় ভাবলাম আজ সারাদিন বাসায় বসে আরাম করব,, আর সেখানে আমাকে ঘর মুছতে হচ্ছে।

আম্মু কিচেন থেকে দৌড়ে এসে
,, তুমি আর কোনো কথাই বলো না।জানিস তোর ভাই বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বাসায় ঢুকেছে।আর‌ পুরো ফ্লোর পানি দিয়ে ভাসিয়ে দিয়েছে। আমি ওকে কিছু বলার আগেই রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিয়েছে,,বল তখন কার না রাগ ওঠে??(ভাইয়ার দরজা লাগানোর কারণ আম্মুর বকবকানি না শোনা তা আমি ভালোই আন্দাজ করতে পারছি। নাহলে আব্বুর জায়গায় ভাইয়া থাকত)

,, আচ্ছা আম্মু সেখানে আব্বু আসল কোথা থেকে?

,, আমি ডাকছিলাম অপদার্থটাকে তখন তোর আব্বু বলে ,, এইভাবে ষাঁড়ের মতো চিল্লাচিল্লি করছ কেন?একটু মুছে ফেললেই তো হয়,,তাই এনাকেই মোছার কাজে নিয়োজিত করেছি,,।এখন মোছো,,(দাঁতে দাঁত চেপে)

,,ও তাহলে এই কান্ড? হঠাৎ আম্মু আমার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে বলল:

কি রে তুই এভাবে ভিজলি কি করে??তুই তো ছাতা নিয়ে বেরিয়ে ছিলি(প্রশ্ন মাখা চোখে)

এবার?? এবার আমি কি বলবো??রাত ভাইয়া ইসট্রিক্টলি বারন আছে বাসায় কাউকে জানানো যাবে না,, এখন কি বলবো আম্মুকে??আর যদি না বলি তাহলে আম্মু মাথা খারাপ করে ফেলবে।

,,কিরে চুপ করে আছিস কেন?

আমি চোখ গুলো গোল গোল করে ঢোক গিলতে গিলতে বললাম:

,, আসলে আম্মু হয়েছে কি,,আ আমার ছায়াটা বাতাসের ধাক্কায় পরে গিয়েছিল তাই আমি ভিজে গেছি,, আর এভাবে ক্লাস করব কিভাবে তাই বাসায় চলে এসেছি। আম্মুর দিকে তাকালাম স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে উত্তরটা তার পছন্দ হয়নি,, আমার এখানে থাকাটা রিস্ক মনে হচ্ছে,,তাই ভালোয় ভালোয় কেটে পড়া ভালো।

,, আম্মু আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেই ,, নাহলে ঠান্ডা লাগবে (আমার বলতে দেরি কিন্তু দৌড় দিতে আর‌ দেরি নেই। রুমে ঢুকে টি-শার্ট আর প্লাজু নিয়ে ফ্রেশ হতে ঢুকলাম।

সাড়ে ৯টা বাজে সম্ভবত,,সবার রাতের খাবার খাওয়া শেষ ,, সবাই যে‌ যার রুমে চলে গেছে। আমি ও আমার বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরে হাত বাড়িয়ে আছি,, আকাশ আজ বড্ড বেসামাল হয়ে উঠেছে। জোৎস্না রাত কিন্তু মেঘের নিচে চাঁদ ঢাকা পড়ে একটা ধূসর রুপালি রঙে ছেয়ে আছে সারা আকাশ,, অনবরত বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে মাটিতে ঝরে পরছে মেঘ।এই ধূসর আলোয় বৃষ্টির ফোঁটাগুলো অদৃশ্য কিন্তু ঝুমঝুম আওয়াজে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে বাইরে তুমুল ঝড় বইছে,, আমি বাইরে হাত বাড়িয়ে থাকায় বৃষ্টির ফোঁটা অনুভব করতে পারছি।আজ দিনটা যেমন তেমন করে কাটিয়ে দিলাম।কাল কি হবে সেই চিন্তা এক সেকেন্ডের জন্য ও আমার মনের অগোচরে যায় নি।রাত ভাইয়া আজ যা করেছে তার পরিনতি কি হতে চলেছে?রাত ভাইয়া তো আর ভার্সিটিতে আমার সাথে থাকবে না। তখন আমার কি হবে? খুব ভয় করছে। বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলাম। নানা চিন্তা ভর করে আছে মস্তিষ্কে। কিন্তু রাত ভাইয়া মানুষটির কতো রুপ,,কতো ভালো মনের অধিকারী,, ওনার এতো ভালো মানুষী দেখলে যে কেউ তার উপর ফিদা হতে বাধ্য। তাহলে আমি ও কি তাদের খাতায় নাম লেখাচ্ছি? ওনার তো প্রেমিকা আছে যাকে বলে গালফ্রেন্ড । হয়তো সে আমার থেকে অনেক সুন্দর অনেক গুনবতী।এতো কিছু ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম জানিনা।

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি জেরিন খাটের কোনায় বসে আছে,, আমি ওকে দেখে অবাক হইনি ভাইয়ার সাথে দেখা করতে আমার বাহানা দিয়ে মাঝে মধ্যে আসে,, আমি একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে একটু ব্যঙ্গ ভঙ্গিতে :

,, কি ব্যাপার এতো সকালে ??(চোখ উল্টে) ভাইয়ার ভাবীকে জরুরি তলব বুঝি?(মাথা ঝাঁকিয়ে)

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে
,, হ্যাঁ,, তেমনই বলতে পারিস।

,,তো কি ব্যাপার ভাবীজি??

,,হবু ননদের ফরমাস খাটতে এসেছি।(বলেই খিলখিল করে হাসছে)

,, আমার জন্য??মানে??

,,কাল যা যা হয়েছে সবটা শাওনকে (সোনালীর ভাই) জানিয়েছেন রাত ভাইয়া তাই শাওনের এক কথা,, আমি যেন আজ তোকে সাথে নিয়ে ভার্সিটিতে যাই। এজন্য এই অভাগীকে ছুটে আসতে হলো।

আমি এবার পুরোটা বুঝতে পারলাম। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। গেটের বাইরে এসে চোখ বুলাচ্ছি আর রাত ভাইয়াকে খুঁজছি। কিন্তু আজ তার কোন খোঁজ নেই,, এমনি তো জোর করে তার সাথে নিয়ে যায়,, আর আজ আমি তাকে খুজছি কিন্তু সে নেই ,, হয়তো গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ঘুরতে গেছে। আমার যা হবার তাই হবে তাতে তার কি??(অভীমানী গলায় বিরবির করছি)। জেরিন শুনে বলতে লাগলো:

,, কি যে তোকে বোবা ভুতে পেল নাকি ? এমন করছিস কেন??

,, না না ও কিছু না চল,,

আমাদের গেটের উল্টো পাশে একজন রিকশাচালক আমাদের দেখে হন্তদন্ত হয়ে রিকশা থেকে নেমে বলতে লাগল:

,, আফা,, আপনেরা আইছেন?আমারে আপনেগোরে নিতে পাডাইছে রাত ভাই।ওঠেন আফা।

লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছে আমাদের দেখে সে এতটাই খুশি যেন আকাশ কুসুম পেয়েছে। আমাদের কলেজে পৌছানোই তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য যা আজ পুরোন হতে চলেছে। কিন্তু আমার এবার রাগ উঠে গেল ,,একে তো নিজের খোঁজ নেই আবার ঢং দেখাতে রিকশা পাঠাইছে।যাব না এই রিকশায়। জেরিনকে বললাম :

,,যাব না এই রিকশায়।

জেরিন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল :

,, কেন যাবি না?

,, আমাদের কারো ফেবার চাই না। জেরিনের হাত ধরে উল্টো দিকে হাটা দিলাম ।

,,আফা,,দয়া কোইরা রিকশায় ওডেন। আপনেরা রিকশায় ওঠেন নায় এই কতা ভাই হুনলে আমার হাড্ডি একটাও আস্থা থাকবে না।(লোকটার মুখে সেই খুশি বিলিন হয়ে গেছে ।চোখে পানি ছলছল করছে ,, লোকটা যে একবিন্দুও মিথ্যা বলছে না সেটা যথার্থ বোঝা যাচ্ছে।আর রাত ভাইয়ার রাগ সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত।তাই আর দেরি না করে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রিকশায় উঠলাম।

ভার্সিটিতে পৌঁছে গেছি। রিকশা থেকে নামছি। আশেপাশে একটু দুরে দুলে জটলা পাকিয়ে ছেলে মেয়েরা কথা বলছে। আমি ভয়ে ঢোক গিলছি,,সিহাব ভাইয়া আবার কিছু করল নাকি? জেরিনের দিকে করুন দৃষ্টিতে চেয়ে:

দোস্ত আমার কি হবে বলতো,,সিহাব ভাই আবার কিছু করল না তো?

আমার হাত শক্ত করে ধরে
,,দাঁড়া আমি দেখছি। একটা মেয়েকে উদ্দেশ্য করে:
এই শোন,, মেয়েটা একটু এগিয়ে এসে:

হ্যাঁ ,,বল কি??

,,, কি হয়েছে রে? এভাবে সবাই কি নিয়ে গসিপ করছে?

মেয়েটা মুখে অঢেল হাসি টেনে:
আজ ভার্সিটিতে নতুন প্রফেসর জয়েন করেছে সেই হ্যান্ডসাম আর ড্রেসিং,,আই যাস্ট লাভ হিম। এখন তো তোদের তার ই ক্লাস,,ক্লাস এখন ই শুরু হবে।যা,,

আমরা ও একজন আরেকজনের দিকে চোখাচোখি করে দৌড়ে গেলাম ক্লাসে। এখনো ক্লাস শুরু হয়নি বসে আছি ক্লাসে যে কোনো সময় স্যার আসবেন।আসতে আসতে একবার ও সিহাব ভাইয়াকে দেখিনি। হঠাৎ ক্লাসে ঢুকলেন একজন লোক। ভালো করে দেখি উনি তো রাত ভাইয়া ,, এখানে এসময় কি করছে উনি? আমাকে অবাক করে দিয়ে সবাই দাঁড়িয়ে সালাম জানায় তাকে ,, আমি বোকার মতো বসে শুধু দেখছি,, তার মানে রাত ভাইয়া ই সেই নতুন প্রফেসর ?? হঠাৎ উনি আমাদের ভার্সিটিতে জয়েন করতে গেলেন কেন???

চলবে,,,,??
{ভালো সাড়া পেলে নেক্সট পর্ব জলদি দেব}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here