ভ্যাম্পায়ার_বর পর্ব ৬+৭

#ভ্যাম্পায়ার_বর (সিজন ২)
#পর্ব_৬
#M_Sonali

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সাথে নিজেই বকবক করে চলেছে চাঁদনী। কালকে সারাদিন শ্রাবণী ওকে নিয়ে পুরো শহর ঘুরে বেড়িয়েছে। আজকে অফিসের প্রথম দিন বলে সবকিছুই মোটামুটি চিনিয়ে দিয়েছে ওকে। সাথে কোন টা ওর অফিস কিভাবে যেতে হবে সবকিছুই বুঝিয়ে দিয়েছে। তারপরেও নিজেকে অসম্ভব নার্ভাস লাগছে চাঁদনীর।

আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেই নিজেকে বলছে,

— কিরে চাঁদনী তুই এত নার্ভাস হয়ে পড়ছিস কেন বলতো? নিজেকে সাহসী করতে শেখ। এই সমাজে বেঁচে থাকতে হলে নিজেকে একা একাই চালাতে শিখতে হবে। এত ভীতু হলে কি করে চলবে? চাকরিটা কিভাবে করবি তুই এত নার্ভাস হলে?কতদিন আর এভাবে একজনের ঘারে বসে থেকে খাওয়া যায় বলতো? নিজেকে সাহসী করতে শেখ।

— আমি জানি আমার চাঁদনী অনেক সাহসী। এবং একটুও ভিতু নয় সে। তাই আয়নার মাঝে নিজেকে নিজে এত বকতে হবেনা বুঝছো! এখন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও তোমার অফিসের সময় কিন্তু হয়ে গিয়েছে। অফিসের প্রথম দিনেই যদি এতো লেট করে যাও তাহলে পুরো মাস কি করবে বলো তো? আমার তো মান সম্মান টা রাখতে হবে তাইনা? আমি যে তোমাকে চাকরিটা নিয়ে দিচ্ছি তুমি যদি ঠিক করে কাজ না করো তাহলে যে আমার মান সম্মান হাওয়া হয়ে যাবে। সেটা খেয়াল আছে তোমার? এই ড্রেসটা পড়ে জলদি রেডি হয়ে নাও। আমি তোমার ব্রেকফাস্ট এর ব্যবস্থা করছি।

উপরের কথাগুলো একনাগাড়ে বলে চাঁদনীর হাতে একটি কালো রংয়ের থ্রিপিস ধরিয়ে দিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে ব্রেকফাস্ট রেডি করতে চলে গেল শ্রাবণী। চাঁদনী চুপচাপ দাঁড়িয়ে ওর কথাগুলো শুনল। তারপর কোন কথার উত্তর না দিয়ে হাতের ড্রেসটা নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল চেঞ্জ করে আসতে। একটুপর ওয়াশরুম থেকে এসে পুরোপুরি রেডি হয়ে নিল সে। তারপর ব্রেকফাস্ট করতে বাইরে এলো। শ্রাবণী আগে থেকেই সবকিছু রেডি করে রেখেছে ওর জন্যে।

চাঁদনী কে সামনে এসে দাঁড়াতে দেখে কাজ ফেলে রেখে ওর দিকে তাকাল শ্রাবণী। ওকে দেখতেই যেন চোখটা জুড়িয়ে গেল তার। সে হা করে কিছুক্ষণ পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে ওর পাশে এসে বলল,

— আরে চাঁদনী তোমাকে এই ড্রেসটাতে এত্ত সুন্দর মানিয়েছে না কি বলবো! আজকেতো অফিসে তোমাকে দেখে তোমার বস,,,,,!

এতোটুকু বলেই চুপ করে গেল। তারপর জিভে কামড় দিয়ে আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। ওর এমন কথায় বেশ অবাক হলো চাঁদনী। ভ্রু কুঁচকে ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,

— আপু তুমি কি বললে আমি ঠিক বুঝলাম না! আমাকে দেখে আমার বস,, কি বলতো?

— না মানে আমি আসলে বলতে চাইছিলাম তোমাকে দেখে তোমার বস অনেক খুশি হবে। এত মিষ্টি একটা মেয়েকে দেখে কে না খুশী হয় বলো? কিন্তু তুমিতো রেডি হয়েছো ঠিক আছে, তোমার মাথায় ওড়না বাধাটা তো ঠিক হয়নি?আমি না তোমাকে কালকে শিখিয়ে দিলাম! ওভাবে বাধতে পারোনি ওড়নাটা?

শ্রাবনীর কথায় মুখটা গোমড়া করে নিচের দিকে তাকিয়ে চাঁদনী বলল,

— আপু আমি অনেক ট্রাই করেছি কিন্তু কোনো ভবেই সুন্দর করে বাধতে পারলাম না। তুমি একটু আমাকে হেল্প করবে প্লিজ? প্রমিস করছি কালকে থেকে আমি নিজেই করে নেব!

ওর কথায় মুচকি হাসলো শ্রাবণী। তারপর ওর জন্য খাবার বেড়ে দিয়ে বলল,

— ঠিক আছে তুমি আগে এটা খেয়ে নাও। তারপর আমি তোমাকে হেল্প করছি।

চাঁদনী আর কোন কথা না বাড়িয়ে মুচকি হেসে খেতে বসে গেল। তারপর খেতে খেতে বলল,

–আপু তুমিও আমার সাথে বসো, দুজনে একসাথে খাই!

— না না আমি অনেক সকালে খেয়ে নিয়েছি। তুমি খাও। এখন আর আমি কিছু খাব না।

–আচ্ছা আপু একটা কথা বলো তো! তোমার সাথে আমার পরিচয় হয়েছে আমি এখানে থাকছি আজ প্রায় অনেকদিন হয়ে গেল। কিন্তু এত দিনের মধ্যে একদিনও তুমি আমার সাথে বসে একসাথে খাবার খেলে না, শুধুমাত্র কফি ছাড়া। আমার সাথে বসে কি একদমই খাওয়া যায়না? নাকি আমার সাথে খেতে তোমার লজ্জা লাগে কোনটা বলতো?

ওর কথার উত্তরে কি বলবে খুঁজে পাচ্ছেনা শ্রাবণী। তাই কথা ঘুরাতে ধমকের স্বরে বলে উঠলো,

— চাঁদনী এত কথা আমার একদম ভালো লাগে না। আমি তোমাকে বললাম না আমি সকালে খেয়ে নিয়েছি। এখন তাড়াতাড়ি খাবারটা খাও তো। এমনিতেই কিন্তু অনেক লেট হয়ে গেছে তোমার। অফিসে হয়তো তোমার বস অলরেডি পৌঁছে গেছে। কিন্তু তোমার খবর নেই। প্রথম দিনেই এত লেট করে গেলে কেমন হয় বলতো?

চাঁদনীর সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে আজকে প্রথম ধমক দিল শ্রাবণী ওকে। এতে চাঁদনীর মনে বেশ কষ্ট হলেও সে হাসি মুখে নিচের দিকে তাকিয়ে খেতে শুরু করল। ব্যাপারটা যে বুঝতে পারেনি শ্রাবণী তা নয়, তবে মনে মনে চাঁদনীর কাছে সরি বলল ও। কারণ কোনো এক কারণে ওর সাথে একসাথে বসে খেতে পারবে না ও। যেটা চাঁদনীকে হয়তো বলতেও পারবে না। তাই এভাবে কথা ঘুরাতে এমন টা করতে হলো ওর।

খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ওকে সুন্দর করে রেডি করে দিল শ্রাবণী। তারপর নিজেই সাথে করে নিয়ে গিয়ে অফিসের বাইরে নামিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরে আসলো। আর পুরোটা রাস্তা যাওয়ার সময় চাঁদনীকে অনেক ভাবে বুঝিয়েছে। কিভাবে কী করতে হবে সবকিছুই বুঝিয়ে দিয়েছে সে চাঁদনীকে।

মনে যতটা সম্ভব সাহস সঞ্চয় করে অফিসের মধ্যে প্রবেশ করলো চাঁদনী। অফিসের মধ্যে ঢুকে কিছুটা এগিয়ে যেতেই একটি মেয়ে হাসি মুখে ওর পাশে এগিয়ে এল। তারপর ওকে বলল,

— আপনি কি মিস চাঁদনী?

মেয়েটির কথার উত্তরে মাথা নেড়ে হ্যা জানালো চাঁদনী। ওকে এমন ভয় পেতে দেখে মেয়েটা ভ্রু কুচকালো। তারপর বললো,

— আমার সাথে আসুন!

ওকে সাথে নিয়ে গিয়ে একটি ডেস্কের সামনে দাঁড়ালো মেয়েটা। তারপর ইশারা করে বললো,

— এটাই আপনার ডেস্ক। আপনি ভিতরে যেতে পারেন। স্যার অনেক আগেই চলে এসেছেন। আর সে এসেই আপনার কথা জানতে চেয়েছিলেন। আপনি ভিতরে যান।

মেয়েটির কথায় কোন কিছু বলল না ও, শুধু মেয়েটিকে ধন্যবাদ দিয়ে দরজা খুলে সোজা ভেতরে ঢুকে পরল। অনেক বেশি নার্ভাস লাগছিলো এতক্ষণ ওর। এখন যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ডেস্ক এর ভিতরে ঢুকতেই ভীষণ অবাক হয়ে গেল চাঁদনী। চারিদিকে অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো গোছানো একদম পরিপাটি। আর খুবই সুন্দর একটি নিরিবিলি পরিবেশ। হঠাৎ খেয়াল করলো সামনে চেয়ারের পাশে একটি পুতুল দাঁড়িয়ে আছে খবরের কাগজ হাতে নিয়ে। ঠিক যেমনটা ও দেখেছিল শপিংমলে। পুতুলটাকে দেখতেই মুখে হাসি ফুটে উঠল চাঁদনীর। ও এক মিনিটও দেরি না করে দ্রুত পুতুলটার কাছে এগিয়ে গেল। তারপর পুতুলটার গাল ধরে টেনে দিয়ে খিলখিল করে হেসে দিয়ে বললো,

— কি ভেবেছো বাবুডল, তোমাকে দেখে শপিংমলে ভয় পেয়েছি বলে এখানেও আমাকে ভয় পাইয়ে দেবে? আরে ধুর আমি ভীষণ সাহসী।’ কিন্তু একটা জিনিস কি জানো শপিংমলের পুতুলদের চাইতে তুমি না অনেক বেশি কিউট। আর তোমার গালদুটোও পুরো মানুষের মতো। এরকম একটা কিউট পুতুলের সাথে বিয়ে করার শখ আমার। এই তুমি আমাকে বিয়ে করবে গো বাবুডল?

কথাগুলো পুতুলের গালটাকে টানতে টানতে বললো। হঠাৎ পুতুলটা নিজের হাতের খবরের কাগজ টা পাশে রেখে ওর দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকালো। প্লাস্টিক পুতুলকে এভাবে তাকাতে দেখে ভয়ে গলা ফাটিয়ে একটা চিৎকার করে উঠলো চাঁদনী। তারপর কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে জোড়ে জোড়ে চেঁচাতে লাগলো।

— ও মাগো ও বাবা গো ও শ্রাবণী আপু গো এই প্লাস্টিক ডলটা নড়াচড়া করছে গো। এটা নিশ্চই ভুত,,,,,।

কিন্তু ওর এই চিৎকারে কোন কাজ হলো না। কেননা ওর চিৎকার শুধু রুমের মাঝেই সীমাবদ্ধ। এই রুম থেকে বাইরে চিৎকারটা পৌঁছাবে না। কারণ এটা সাউন্ড প্রুফ রুম। ও কে এভাবে চিৎকার করতে দেখে সামনে থাকা লোকটা জোরে একটা ধমক দিয়ে উঠলো,

— এই মেয়ে একদম চুপ, আর একটা কথা বলবে তো টেনে গালের উপর একটা থাপ্পর বসিয়ে দেবো। আমাকে দেখে তোমার প্লাস্টিক ডল মনে হয়? এমন জলজ্যান্ত একটা মানুষকে সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে পুতুল পুতুল বলে চিল্লাচ্ছো! আমাকে কোন এ্যাঙ্গেল থেকে ভুত আর পুতুল মনে হচ্ছে তোমার হুহহ?

ওর ধমক খেয়ে একদম চুপ করে গেল চাঁদনী। তারপর মুখে হাত দিয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো। ওকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এবার নিজেকে শান্ত করল লোকটা। তারপর ওর কাছে এগিয়ে এসে শান্ত স্বরে বলল,

— কুল ডাউন চাঁদনী। আমি তোমার বস শ্রাবণ। আর এটা শুধু তোমার একার ডেস্ক নয়, এটা আমারও ডেক্স। তুমি এখানে বসবে আর আমি বসব ওখানে। ভয় পেও না আমি তোমার ব্যপারে সব কিছু শুনেছি তোর আপুর থেকে।

— আ আপনি সত্যি সত্যি ভু ভুত নন তো?

ওর এমন প্রশ্নে এবার বেশ হাসি পাচ্ছে শ্রাবনের। কিন্তু হাসিটা কে চেপে রেখে শান্ত গলায় বলল,

— আমাকে কোন এংগেল থেকে তোমার ভূতের মত লাগছে বলতো? আমি ভূত নয় জলজ্যান্ত একজন মানুষ। যে তোমার সামনে এখন দাঁড়িয়ে আছে। আর ভয় পাওয়ার কোনো কিছু নেই তুমি এখন তোমার ডেস্কে বসে কাজে মনোযোগ দাও।

এতক্ষণ পরে যেন নিঃশ্বাস ছাড়তে পারল চাঁদনী। এতক্ষণ তো ভয়ে ওর গলাটা শুকিয়ে গিয়েছিল। ছোটবেলা থেকে রুমের মাঝে মানুষ হয়েছে বলে অনেক রকম গল্পের বই পড়তো ও। যার মাঝে বেশি পড়তো ভূতের গল্পের বই। এর মধ্যে বেশিরভাগই থাকতো পুতুল ভুত নিয়ে লেখা। যে কারণে শ্রাবণকে নড়াচড়া করতে দেখে ভূত ভেবেছিল চাঁদনী। আর তাতেই ওর ভয়ে এমন অবস্থা হয়েছিলো। এখন কিছুটা শান্ত হয়ে চুপচাপ গিয়ে নিজের ডেস্কে বসে পরলো। আর মনে মনে বলল,

— ছেলে মানুষ এত লম্বা আর এত কিউট হয়? কি ফর্সা বাবারে বাবা, যেন চিমটি দিলে রক্ত বের হবে। আর কি লম্বা কি কিউট দেখতে। আমার বস এত সুন্দর ভাবতেই অনেক মজা লাগছে আমার।

মনে মনে কথাগুলো বলে নিজে নিজেই হাঁসতে লাগলো চাঁদনী। ওর মনের কথাগুলো যেন শুনে ফেলেছে শ্রাবণ, তাই সেও মুচকি হাসি দিয়ে নিজের ডেস্কে গিয়ে বসল। কিন্তু ওর হাসিটা চাঁদনীর দৃষ্টিগোচর হলো না।
#ভ্যাম্পায়ার_বর (সিজন ২)
#পার্ট_৭
#M_Sonali

গত 1 ঘন্টা যাবত চুপ করে বসে থেকে দাঁত দিয়ে নিজের নখ কেটে চলেছে চাঁদনী। এমন ভাব করছে যেন ভয়ে গুটিসুটি অবস্থা তার। এদিক-ওদিক কোন দিকে তাকাচ্ছে না। একদম মূর্তির মতো শটাং হয়ে চুপ করে বসে থেকে দাঁত দিয়ে নিজের নখ খাচ্ছে। অনেকক্ষণ হলো এই ব্যাপারটা খেয়াল করছে শ্রাবণ। কিন্তু কোন কিছু বলছে না। তবে নাহ, এবার ধৈর্যের সীমা হারিয়ে গেছে ওর। তাই একটু ধমকের সুরে চাঁদনীকে ডেকে বলল,

— হেই ইউ, ও হ্যালো, আরে এই মেয়ে আমি তোমাকে বলছি। তাকাও এদিকে!

তিনবারের মাথায় ওর ডাক যেন কানে ঢুকলো চাঁদনীর। সে পিছন দিকে ঘুরে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুখ দিয়ে ইশারা করে জানতে চাইলো শ্রাবণ ওকে কেনো ডাকছে। ওকে ইশারা করতে দেখে এবার শ্রাবণ হাতে থাকা কলম দিয়ে ইশারায় ওকে কাছে ডাকল। এতে যেন ভয়ে আরো খারাপ অবস্থা হয়ে যেতে লাগল চাঁদনীর। সে ভয়ে ভয়ে উঠে দাড়িয়ে গুটিগুটি পায়ে শ্রাবনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর নিচের দিকে তাকিয়ে ডান হাতের শাহাদত আঙ্গুলের সাথে ওড়না পেচাতে লাগলো।

শ্রাবণ নিজের জায়গায় বসে থেকে ওর প্রতি টা কাজ নিপুণভাবে দেখতে লাগল। তারপর ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল ওর মুখটা ভয়ে একদম চুপসে আছে। ওকে এত ভয় পেতে দেখে মনে মনে মুচকি হাসলো শ্রাবণ। তারপর হালকা গম্ভীর গলায় বলে উঠল,

— এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি হ্যা? অফিসে কি চুপ করে বসে থাকার জন্য এসেছ? নাকি বাসায় নখ কাটার সময় পাও না বলে এখানে এসে দাঁত দিয়ে নখ কাটছো? কাজ ফেলে রেখে শুধু বসে থাকার ধান্দা তাইনা? এভাবে কাজ করলে কিন্তু অফিস থেকে বের করে দেবো তোমায়। কি হয়েছে হ্যাঁ প্রবলেম কি তোমার?

ওর এমন কথা শুনে এবার যেন কান্না করে ফেলার মতো অবস্থা হলো চাঁদনীর। ওকে এমন ভয় পেতে দেখে এবার শ্রাবণ কিছুটা নরম হল। তারপর নরম সুরে বলল,

— দেখো চাঁদ, তুমি আজকে অফিসে নতুন। আর আমি তোমার সম্পর্কে তোমার বোন শ্রাবণীর কাছ থেকে সব কিছু শুনেছি। তাই আমি তোমাকে প্রথম দিনেই এত চাপ দেবোনা কাজের জন্য। তবে যেটা না বুঝবে সেটা আমাকে বলতে পারো। আমি তোমাকে দেখিয়ে দেবো বুঝিয়ে দেবো তোমাকে কাজ করতে সাহায্য করবো। কিন্তু এভাবে বসে থাকলে তো চলবে না তাই না! অফিসেরও তো একটা নিয়ম কানুন আছে!

শ্রাবণের কথা শুনে এবার যেন একটু ভয় কাটলো চাঁদনীর। ও সামনের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে ওকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। তখন প্লাস্টিকের পুতুল ভেবে সেভাবে একটা খেয়াল করা হয়নি ওর দিকে। এখন শ্রাবনকে দেখে ভীষণ অবাক হলো সে। তার কারণ শ্রাবণ একদম ধবধবে ফর্সা, বড় বড় দুটি চোখ আর চোখের মনিগুলো একদম কালো রঙের। মাথায় অনেক ঘন চুল। চুলগুলো গোল্ডেন কালার। আর লম্বায় ছয় ফুট। এক কথায় অসম্ভব সুন্দর ও হ্যানসাম দেখতে ওকে। কোনো ছেলে যে এতো সুন্দর হতে পারে সেটা হয়তো শ্রাবণকে না দেখলে বুঝতেই পারতো না চাঁদনী। ওকে এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে এবার হালকা কাশি দিল শ্রাবন। তারপর নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

— আমি তোমাকে কিছু জিগ্যেস করেছি চাঁদ! এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে কি দেখছ তুমি? যদি কোন সমস্যা হয়ে থাকে সেটা আমায় বলতে পারো আমি তোমাকে হেল্প করব। কিন্তু অযথা অফিসে এসে এভাবে সময় নষ্ট করলে সেটা কিন্তু আমি মেনে নিব না। শুধুমাত্র শ্রাবনীর কথায় তোমাকে এই অফিসে চাকরি দিয়েছি। এখন তুমি যদি ওর কথার মান রাখতে না পারো তাহলে আমাকে কোন একটা পদক্ষেপ নিতে হবে। যেটা তোমার জন্যে হয়তো ভালো হবে না। আর আমিও সেটা চাইনা।

এতটুকুও বলে থেমে গেল শ্রাবন। তারপর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো চাঁদনীর দিকে। চাঁদনী আবার নিজের আঙুলের সাথে ওড়না পেচাতে পেচাতে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,

— আসলে আমি, মানে স্যার, আমি পানি খাবো। খুব পানি পিপাসা লেগেছে আমার।

এমন সময় ওর এমন একটা কথা শুনে যেন ব্যাক্কল হয়ে গেল শ্রাবণ। সে ভ্রু কুঁচকে নিজের কপালে নিজে একটা থাপ্পর মেরে চেয়ারে গিয়ে বসলো। তারপর সামনে থাকা পানির গ্লাসটি ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে ইশারায় খেতে বললো। চাঁদনী আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ধপাৎ করে সামনের চেয়ারটাতে বসে পড়ে ঢকঢক করে গ্লাসের সবটুকু পানি খেয়ে ফেলল। তারপর গ্লাসটা সামনে রেখে কিছুক্ষণ ধরে চুপ করে বসে থেকে একনাগাড়ে বলতে শুরু করল,

— আসলে স্যার আমি এর আগে কখনও কোথাও কাজ করিনি। একচুয়ালি বাইরের জগৎ টা কেমন হয় সে সম্পর্কে আমার তেমন ধারণা ও নেই। আজকে যেহুতু প্রথম অফিসে এসেছি তাই এখানকার কিভাবে কি কাজ করতে হবে কিছু মাথায় ঢুকছেনা। আমার অসম্ভব নার্ভাস লাগছে নিজেকে। আর আপনাকে দেখলে ভীষণ ভয় পাচ্ছি। কারন প্রথম দিনেই আপনার সাথে পুতুল মনে করে আমি যেমন আচরণ করেছি সেটা আমার একদমই উচিত হয়নি। আর আপনার সাথে একই ডেস্কে বসে কাজ করতে হবে এটা ভেবে আরো বেশি নার্ভাস লাগছে। এখন আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। তাই বসে বসে দাঁত দিয়ে নিজের নখ খাচ্ছিলাম। এটা আমার ছোটবেলার অভ্যাস। এটা আমি কোনোভাবেই বাদ দিতে পারছিনা। এখন আপনি বলুন আমার কি করা উচিত?

চোখ বন্ধ করে একনাগাড়ে এতগুলো কথা বলে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগল চাঁদনী। যেন মহাভারত উদ্ধার করে ফেলেছে সে। ওকে এভাবে কথা বলতে দেখে হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে শ্রাবণ। সত্যিই যেনো ধারনার বাইরে ছিল ওর, যে চাঁদনী এভাবে কথা বলতে পারে। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে মুচকি হাসলো। কিন্তু সেই হাসিটা চাঁদনীর দৃষ্টি গোচর হল না। আবারও মুখটা গম্ভীর বানিয়ে বলে উঠলো,

— এই কথাটা কি আমাকে আগে বলা গিয়েছিল না? তাহলে তো আমি তোমাকে অনেক আগেই তোমার কাজ গুলো বুঝিয়ে দিতাম। শুধু শুধু এভাবে বসে থেকে অফিসের সময় নষ্ট করা একদম উচিত হয়নি তোমার। আজ ফার্স্ট টাইম তাই ক্ষমা করে দিলাম। কিন্তু নেক্সটাইম এমন কিছু হলে তোমার জন্য পানিশমেন্ট রেডি থাকবে। এবার চলো তোমার নিজের জায়গায়। আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে দিচ্ছি কিভাবে কী করতে হবে।

শ্রাবণের কথাটা বলতে দেরি কিন্তু চাঁদনীর ওখান থেকে উঠে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসতে এক মিনিটও দেরি হলো না। এক প্রকার দৌড়ে এসে নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে পড়ল। ওর এমন কাণ্ড দেখে এবার জোরে হেসে ফেললো শ্রাবণ। ওর হাসি দেখতে আবার পিছন দিকে ফিরে তাকাল চাঁদনী। কিন্তু তার আগেই শ্রাবণ নিজের মুখটাকে গম্ভীর বানিয়ে ফেলল। যে কারণে ওর আর হাসিটা দেখা হলো না। তারপর শ্রাবণ ওর কাছে গিয়ে ওকে সব কাজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বুঝিয়ে দিল। সেইসাথে এতক্ষণ সময় ধরে ওর দিকে তাকিয়ে থাকল। যেটা চাঁদনী দেখেও খেয়াল করল না। সারাটা দিন বেশ ভালোভাবেই কাজ শেষ হলো ওর। তারপর সন্ধ্যার পর শ্রাবণী নিজে এসে চাঁদনীকে ওর বাসার নিয়ে গেলো।

————————-

রাত 10 টা
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে অফিসের সব ব্যাপার নিয়ে শ্রাবনীর সাথে গল্প করছে চাঁদনী। আর দুজনেই হাসিতে ভেঙে পড়ছে একটু পরপর শ্রাবণের কথা বলে। বেশ অনেকক্ষণ হলো এভাবে গল্প করছে তারা। হঠাৎ গল্প করতে করতে এক পর্যায়ে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদনী খেয়াল করলো মস্ত বড় একটা চাঁদ উঠেছে আজ আকাশে। দেখে মনে হচ্ছে যেন পূর্ণিমার চাঁদ। সাথে সাথে চাঁদনী খুশি হয়ে শ্রাবণীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

–আপু দেখো আজকে আকাশে কত বড় একটা চাঁদ উঠেছে। আজকে হয়তো পূর্ণিমা, চলনা আমরা ছাদে গিয়ে চাঁদটা দেখি। আমার জীবনে আমি কখনো পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে পাইনি। আব্বু কখনো বের হতে দেয়নি আমায়। চলনা আজকে একটু দেখি তোমার সাথে!

ওর কথায় আকাশের দিকে ফিরে তাকাল শ্রাবণী। তারপর ওকে রেখে জানালার কাছে এগিয়ে এলো। চাঁদের দিকে দুই মিনিটের মত এক নজরে তাকিয়ে রইল সে। সেইসাথে শ্রাবণীর চোখের রঙ বদলে গাঢ় নীল হয়ে গেল। তখনই চাঁদনী এগিয়ে এসে ওর ঘাড়ে হাত রাখল। সাথে সাথে আবার আগের মতো কালো চোখে ফিরে আসলো শ্রাবণী। মুচকি হেসে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

–জানালা খোলার দরকার নেই, তুমি ভেতর থেকেই চাঁদ দেখো চাঁদনী। তুমি তো আগেই বলেছো তোমার আব্বু তোমাকে কখনই পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে দিত না। তাই আমিও চাই না তুমি পূর্ণিমার চাঁদের সামনে যাও। কাছ থেকে সেটা দেখো। বাইরে যাওয়ার কি প্রয়োজন আছে বলো? তোমার তো এমনিতেই অনেক বিপদ। তাই তোমার ভালোর জন্যই বলছি তুমি এখান থেকেই দেখো। ছাদে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

ওর কথায় হাসি মুখটা মলিন হয়ে গেল চাঁদনীর। আর কথা না বাড়িয়ে বলল,

— ঠিক আছে আপু থাকগে এখন আর চাঁদ দেখতে ইচ্ছা করছে না। এমনিতেই অনেক রাত হয়ে গেছে। কাল আবার অফিস আছে তোমার এবং আমার দুজনেরই। আমি বরং এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। তুমিও নিজের রুমে যাও।

কথাটা বলে মন খারাপ করে নিজের রুমে চলে গেল চাঁদনী। কিন্তু শ্রাবণী সেখানেই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর আবার আকাশের দিকে ফিরে তাকাল। চাঁদটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতেই আবারো ওর চোখের রঙ বদলে গাঢ় নীল রং ধারণ করল। এভাবে বেশ অনেকটা সময় কেটে গেল সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই। তারপর শ্রাবণী আবারো ফিরে এলো চাঁদনীর রুমের কাছে। এসে দরজা দিয়ে উকি দিয়ে দেখল, চাঁদনী অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। শ্রাবণী আর এক মুহূর্ত দেরি না করে দরজাটা ভাল করে লাগিয়ে দিলো। তারপর পুরো বাসার চার দিকের দরজা জানালা সব লাগিয়ে দিয়ে ছাদের দরজা দিয়ে ছাদে উঠে গেলো। ছাদের দরজাটাও আটকে দিলো। তারপর এদিক ওদিক দেখে নিয়ে পাখির মত উড়াল দিয়ে কোথায় যেনো চলে গেল।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

গল্পটা প্রথম পর্বে সকলের অনেক উৎসাহ এবং সাড়া পেয়েছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারছি না প্রতিটা পর্বে গল্পের রেস্পন্স এত কমে যাচ্ছে কেন? এভাবে চলতে থাকলে আর গল্প দেওয়ার ইচ্ছা থাকে না। গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন সবাই। ধন্যবাদ
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

মনটা অনেক বেশি খারাপ। তাই কি থেকে কি লিখলাম কোন কিছুই মাথায় ঢুকলোনা। আজকের পর্বটা হয়তো একদম জগাখিচুড়ি বানিয়ে ফেলেছি। সেটা নিজেই বুঝতে পারছি। 😢😢😢

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here