মনের উঠোন জুড়ে পর্ব -০২

#মনের_উঠোন_জুড়ে

পর্ব:০২

#নূন_মাহবুব

-” একটা চোরের সাথে এক‌ই টেবিলে বসে আমি খেতে পারবো না পাপা। ঠিক এজন্যই আমি হোস্টেল থেকে বাড়ি আসতে চাই না।এখানে এসে সবসময় একটা বাইরের মেয়ের জন্য তোমাদের আদিক্ষেতা দেখতে আমার জাস্ট বিরক্ত লাগে।”

-” তুমি কাকে বাইরের মেয়ে বলছো আবৃত্তি? তুমি খুব ভালো করে মনি এই বাড়ির কে।আর এটাও জানো এই বাড়িতে এমনকি আমার প্রপার্টি তে তোমাদের যেমন অধিকার রয়েছে ঠিক তেমনি মনির ও অধিকার রয়েছে।তাই মনি কে বাইরের মেয়ে বলার আগে অন্তত একবার ভেবে নিও।”

-” এই না হলে তুমি আমার পাপা? জানো পাপা মাঝে মাঝে আমি নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করি আদৌ কি আমি তোমার মেয়ে নাকি এই বাইরের মেয়ে টা? তুমি আমার জন্মদাতা পিতা হয়েও আমাকে আমার নাম ধরে ডাকো। অথচ ঐ মেয়েটাকে আজ পর্যন্ত তার নাম ধরে ডাকো নি।তাকে ভালোবেসে মনি বলে ডাকো। কিন্তু কেন পাপা কেন?নাকি তুমি মমের সরলতার সুযোগ নিয়ে অন্যত্র সম্পর্কে জড়িয়েছিলে?আর এই মেয়ে তার‌ই পাপের ফসল।যার জন্য তার প্রতি তোমার এতো ভালোবাসা।”

-” আবৃত্তির কথা শুনে সাদ্দাম শিকদার রাগান্বিত হয়ে আবৃত্তির গালে থা’প্প’ড় দিয়ে বললো, ছিঃ আবৃত্তি ছিঃ। আমি ভাবতেও পারি নি তুমি এতো নিচে নেমে গিয়েছো।কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছো সেটা ভুলে গিয়েছো তুমি?একটা কথা কি জানো,
“বিদ্যা আবরণে, শিক্ষা আচরণে
বিদ্যা সহজ , শিক্ষা কঠিন”
আফসোস তুমি বিদ্যা অর্জন করতে পেরেছো তবে শিক্ষা নয় বলে সাদ্দাম শিকদার খাবার ছেড়ে উঠে যেতে চায়লে তার স্ত্রী অন্তরা শিকদার তার হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বললো, বাচ্চা মেয়ে অভিমান থেকে বলেছে তুমি প্লিজ কিছু মনে করো না।”

-” অনার্স ফাইনাল ইয়ারে যে মেয়ে পড়ে সে কিভাবে বাচ্চা মেয়ে হয় অন্তরা?”

-“অবস্থা বেগতিক দেখে শিক্ষা বললো, বলছিলাম কি বড় আব্বু আবৃত্তি আপু তো ঠিক কথায় বলেছে।আপু এতো দিন বাদে হোস্টেল থেকে বাড়ি ফিরেছে। তোমাদের সাথে একসাথে বসে খাবে মজা করবে এইটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু আমি মাঝখান থেকে এসে তোমাদের ডিস্টার্ব করলাম। তুমি আবৃত্তি আপু কে আর কিছু বলো না প্লিজ।”

-” এখন এতো ভালো সাজার নাটক করতে হবে না তোর।আর কিসের আবৃত্তি আপু হ্যাঁ? ডোন্ট কল মি আবৃত্তি আপু।তোকে আমি আগে ও বলেছি আর এখন ও বলছি আমাকে তুই আপু ডাকবি না। তোর মুখ থেকে আমি আপু ডাক শুনতে চাই না।আমাকে আবৃত্তি ম্যাম বলবি ।”

-” ঠিক আছে আবৃত্তি ম্যাম বলে শিক্ষা চেয়ার ছেড়ে উঠতে গেলে,অন্তরা জিজ্ঞেস করলো, হ্যাঁ রে শিক্ষা তুই আবার না খেয়ে উঠছিস কেন?”

-” আসলে বড় আম্মু আমি ভুলে গিয়েছিলাম যে দাদীর ঔষধ খাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া পায়ে তেল গরম করে মালিশ করে দিতে হবে।তোমরা বরং খাও আমি পরে খেয়ে নিবো।”

-” আবৃত্তির কথায় শিক্ষা কষ্ট পেয়ে চলে যেতে চায়ছে ব্যাপার টা বুঝতে পেরে অন্তরা বললো ঠিক আছে যা।”

___________________________________

-“সত্তর বছর বয়সী জাকিয়া জেসমিন সাদ্দাম শিকদারের আম্মা।যার প্রত্যেকটা কথা এই শিকদার ভিলার সবাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। হঠাৎ দুই তিন আগে বাথরুমে পা পিছলে পড়ে গিয়ে তিনি হাঁটুতে বেশ আঘাত পেয়েছেন।যার ফলে হাঁটা চলা করতে পারছেন না। এজন্য তার খাবার, ঔষধ, গোসল যাবতীয় কাজ শিক্ষা কে করতে হচ্ছে। শিক্ষা এসে দেখে তিনি সবে মাত্র খাবার শেষ করেছেন। শিক্ষা কে দেখে তিনি বললেন, কি লো সতীন মুখ ভার ক্যা ? কি হয়ছে?”

-” কিছু হয় নি বুড়ি।হলে তো এতোক্ষণে উংগা উংগা করে কান্না শুরু ‌করতো।”

-” তায়লে মুখে কুলুপ এঁটে রয়ছিস ক্যা?”

-” কিছু না এমনিতেই। তুমি বুড়ি এতো কথা না বলে তাড়াতাড়ি ঔষধ টা খেয়ে নাও। পায়ের ব্যথা কি কমেছে?আর কি তেল মালিশ দিতে হবে?”

-” দিলে তো একটু আরাম পেতাম। তার আগে আমার চুল টা আঁচড়ে দে তো।”

-” ঠিক আছে বলে শিক্ষা চিরুনি দিয়ে জাকিয়ার মাথা আঁচড়ে দিচ্ছে এমন সময় সাহিত্য এসে বললো, শিক্ষা আমার রুমে একটু আয় তো।তোর সাথে কিছু জরুরী কথা আছে আমার।”

-” আপনি যান আমি হাতের কাজ সেরে আসছি।”

-” এক্ষুনি আয়। আমার হাতে বেশি সময় নেই। আমাকে বেড়োতে হবে বলে সাহিত্য নিজের রুমে চলে গেল।”

-” জাকিয়া জেসমিন পান চিবোতে চিবোতে ফোড়ন কে’টে বললো, “চুলোয় রয়ছে ক্ষীর , আমার পরাণ কি থায়ে থীর।”

-” দাঁড়াও বুড়ি ! বড় আব্বু কে বলে তোমার পরাণ থীর করার ব্যবস্থা করছি। বলবো আজ কালের মধ্যেই যেন ম্যারেজ মিডিয়া তে পাত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন দেয়।কোনো বুড়োর দেখা পেলে পরাণ এমনিতেই থীর হয়ে যাবে।”

-” আমার পরাণ এমনিতেই থীর আছে রে সতীন।ঐ দিকে আবার কারো পরাণ ছটফট করছে।যা গিয়ে পরাণ‌ ডা একটু থীর করে দিয়ে আয়।”

-” ঠিক আছে তুমি তাহলে বিশ্রাম করো । আমি তেল গরম করে নিয়ে আসবো।

-” ঠিক আছে তাড়াতাড়ি যা তুই।”

-” শিক্ষা এসে দেখলো সাহিত্য রেডি হচ্ছে।হয়তো অফিসে বা অন্য কোথাও যাবে। শিক্ষা সাহিত্যের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,কি চায়?”

-” আপাতত তুই হলেই চলবে।”

-” মানে?”

-” সাহিত্য শিক্ষার হাতে খাবারের প্লেট ধরিয়ে দিয়ে বললো,মানে এটাই যে এতো খাবার আমি খেয়ে শেষ করতে পারি নি।আর তুই খুব ভালো করে জানিস খাবার নষ্ট করা আমি একদম পছন্দ করি না।তাই বাকি খাবার টুকু তুই খেয়ে নে।”

-” আপনার এঁটো খাবার খেতে আমার বয়েই গেছে বলে শিক্ষা চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ানোর আগেই সাহিত্য শিক্ষার হাত ধরে বললো ,খাবি না ! ওকে ডান।বাট আই ওয়ান্ট টু আস্ক ইউ সামথিং।”

-” আমি আপনার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য ন‌ই।”

-” দ্যাটস নট ম্যাটার।বাধ্য কিভাবে করতে হয় সেটা সাহিত্য শিকদারের খুব ভালো করে জানা আছে বলে সাহিত্য শিক্ষার কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,যা যা প্রশ্ন করবো একদম ঠিক ঠিক উত্তর দিবি।আর হ্যাঁ একদম মিথ্যা বলার চেষ্টা করবি না।আমি খুব ভালো করে জানি তুই কোনো না কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে মন্ত্রীর বাড়িতে গিয়েছিলি।কি সেই উদ্দেশ্যে? কেন গিয়েছিলি?”

-” সাহিত্যের স্পর্শে কেঁপে উঠে শিক্ষা।সারা শরীরে বিদ্যুৎ বয়ে যায়। কিন্তু শিক্ষা কোনো প্রতিক্রিয়া না করে কথা ঘুরিয়ে বললো, আপনি বুঝি এইভাবেই মেয়ে ক্রি’মি’না’ল’দে’র মুখ খুলতে বাধ্য করেন। হোয়াট অ্যান আইডিয়া স্যার ?দ্যাটস গ্ৰেট।রথ দেখাও হলো আর কলা বেচা ও হলো।”

-” হোয়াট ডু ইউ মিন বাই রথ দেখাও হলো আর কলা বেচা ও হলো?”

-” এই যে মেয়েদের সংস্পর্শ পেলেন আবার উত্তর ও পেলেন।যাকে বলে এক‌‌ ঢিলে দুই পাখি মা’রা।”

-” তুই কিন্তু আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছিস শিক্ষা। তুই হয়তো ভেবেছিস কথা ঘুরিয়ে আমার থেকে ছাড়া পেয়ে যাবি। কিন্তু না তুই যায় বলিস না কেন আমার প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত আমি তোকে ছাড়ছি না।”

-” হা হা হা । আপনি ও হয়তো ভেবেছেন অন্য মেয়েদের যেভাবে জড়িয়ে ধরে কথা আদায় করেন , ঠিক সেইভাবে আমার থেকে ও কথা আদায় করতে পারবেন। কিন্তু আপনার সেই ধারনা ভুল।”

-” লিসেন শিক্ষা ! আমি মোটেও মেয়েদের জড়িয়ে ধরে কথা আদায় করি না। তাদের জন্য মেয়ে অফিসার আছে। বাই দ্যা ওয়ে,আমি মেয়েদের কাছাকাছি গেলে তোর এতে সমস্যা কোথায়? তোর কি জ্বলে?”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here