মনের উঠোন জুড়ে পর্ব -০১

“মন্ত্রীর বাড়িতে এসে চুরি করতে একটু ও বুক কাঁপলো না তোমার মেয়ে? তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। কিভাবে পারলে বাসা ভর্তি মেহমান,এতো এতো সিকিউরিটি থাকার শর্তে ও চুরির মতো এতো নিচু একটা কাজ করতে? আমাদের কে বলতে পারতে তোমার কতো টাকা প্রয়োজন ‌। এমনিতেই মন্ত্রী মশাই অনেক দয়ালু। সাধারণ জনগণের জন্য তার সর্বত্র বিলিয়ে দিতে ও কুন্ঠিত বোধ করেন না তিনি। তোমার যা প্রয়োজন আমাদের বললেই হতো। তোমার প্রয়োজন অনুযায়ী সবটা পেয়ে যেতে। কিন্তু তুমি সেটা না করে চুরির পথ বেছে নিলে। বাই দ্যা ওয়ে হু আর ইউ? তোমাকে তো আমরা কেউ ইনভাইট করি নি। তাহলে তুমি বিনা ইনভিটেশনে মন্ত্রীর মেয়ের জন্মদিনের পার্টিতে কি করছো?নাকি এইখানে আসার মূল উদ্দেশ্য চুরি করা? চুরি করার জন্যই মাস্টারপ্ল্যান সাজিয়ে মন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকেছো তাই না?আন্সার মি ড্যাম ইট ।”

-“ভদ্রমহিলার ধ’ম’কে কেঁপে উঠলো শিক্ষা। কিন্তু কোন উত্তর দিল না।”

-“শিক্ষার থেকে কোন রেসপন্স না পেয়ে ভদ্রমহিলা আবারো বললো,ড্রেস আপ দেখে তো ভালো ফ্যামিলির মনে হচ্ছে। তোমার পরিবার কি তোমাকে চুরি করার শিক্ষা দিয়ে বড় করেছে? কি হলো কথা বলছো না কেন?নাকি কথা বলতে পারো না।বোবা তুমি?বোবা হয়ে ও চুরি বিদ্যা টা খুব ভালো করেই শিখেছো দেখছি।”

-” বাসা ভর্তি মেহমানদের সামনে চুরির অপবাদে অপমানিত হয়ে শিক্ষার এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে নিজেকে শেষ করে দিতে। শিক্ষা কখনো ভাবে নি এমন একটা বাজে পরিস্থিতির শিকার হতে হবে তাকে। দর্শনেন্দ্রিয় আজ কোন বাঁধ মানছে না তার।আপনা আপনি পানি গড়িয়ে পড়ছে দর্শনেন্দ্রিয় থেকে। চারিদিকে সবাই তার দিকে অধির আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছে। অনেকে আবার বলাবলি করছে, এজন্যই প্রবাদে বলা হয়েছে ” চকচক করলেই সোনা হয় না”।উপরে উপরে কি সুন্দর মায়াবী চেহারার একটা মেয়ে অথচ ভেতরে ঠিকই ভেজাল রয়েছে।ঐ যে বলে না “উপরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট”।অবশ্য মেয়ে টার সাহসের প্রশংসা না করলেই নয়। মন্ত্রীর বাড়িতে এসেছে চুরি করতে বলেই অট্টো হাসিতে ফেটে পড়লো সবাই।”

-“মন্ত্রীর স্ত্রী আলিশা মির্জা শিক্ষার থেকে কোন রেসপন্স না পেয়ে অধৈর্য কণ্ঠে আবারো জিজ্ঞেস করলো,এই মেয়ে শাড়ির আঁচলের নিচে কি লুকিয়েছো দেখি?দেখি কতো দামি জিনিস চুরি করেছো?দেখাও বলছি না হলে এর ফল কিন্তু খুব খারাপ হবে।”

-“কাম অন মম।ওর‌ মতো থার্ড ক্লাস মেয়ের পেট থেকে কথা বের করতে আমার হাতের একটা থা’প্প’ড় ই যথেষ্ট। কিন্তু ওর মতো ছোট খাটো চোর‌ ধরা পুলিশের কাজ, সিআইডির নয়।আর এই নম্রতা মির্জা কখনো চু’চো মে’রে হাত গন্ধ করে না।আমি এক্ষুনি পুলিশ কে কল করছি । পুলিশ এসে দু চার ঘা দিলে এমনিতেই মুখ খুলবে। মন্ত্রীর বাড়িতে এসে চুরি করার সাধ হাড়ে হাড়ে টের পাবে।জাস্ট ওয়েট এন্ড সি বলে নম্রতা পুলিশ কে কল করতে যাবে তার আগেই কোথা থেকে একজন ‌সুদর্শন পুরুষ ছুটে এসে বললো,স্টপ নম্রতা।আই সে স্টপ। পুলিশ কে কল করার কোন প্রয়োজন নেই।”

-” কিন্তু স্যার ও একটা চোর।চুরির জিনিস সহ হাতেনাতে ধরা পড়েছে এই মেয়ে।না জানি কতো দামি জিনিস চুরি করেছে যে আমাদের দেখানোর ও সাহস পাচ্ছে না। আমাদের এক্ষুনি ওকে পুলিশে দিতে হবে।”

-” ও শিক্ষা। আমার কাজিন।”

-“আর ইউ শিওর স্যার?”

-“তোমার কি মনে হয় আমি তোমার সাথে রসিকতা করছি? তোমার সাথে আমার রসিকতার সম্পর্ক?”

-” না মানে স্যার আপনি তো ওর ব্যাপারে আমাকে কখনো কিছু বলেন নি। আমি ওকে চিনি ও না।তাই জিজ্ঞেস করলাম।”

-” তোমাকে বলার প্রয়োজন মনে করি নি । তাই বলি নি।বুঝেছো তুমি?”

-” কথাটা শুনে বেশ অপমান বোধ করে নম্রতা।সে মনে মনে বললো ,আপনি আমাকে কখনো বুঝলেন না সাহিত্য স্যার।আপনাকে যখন প্রথম দেখেছিলাম তখনই আমার প্রেমের ঘণ্টা বেজে উঠেছিলো। আপনার জ্ঞান, বুদ্ধি, বিচক্ষণতা আমাকে মুগ্ধ করেছিলো। আপনার চোখে আমার স’র্ব’না’শ দেখতে পেয়েছিলাম ।আপনি সবসময় আমার #মনের_উঠোন_জুড়ে বিরাজ করেন। বড্ড ভালোবাসি আপনাকে। আপনার কথা ভেবে আমি সুস্থ্য থাকতে পারি না, আমি খেতে পারি না,ঘুমোতে পারি না।বড্ড আপনিহীনতায় ভুগছি আমি। একজন মন্ত্রীর মেয়ে ও শুধুমাত্র আপনার জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সিআইডি তে জ’য়ে’ন হয়েছি।যাতে আপনার আশেপাশে থাকতে পারি।আপনাকে দুচোখ ভরে দেখে আমার চোখের তৃষ্ণা মেটাতে পারি। কিন্তু আপনি আমার কদর বুঝলেন না সাহিত্য স্যার। ইনফ্যাক্ট কখনো আমাকে বোঝার চেষ্টায় করেন নি।দ্যাটস নট ম্যাটার স্যার। আমি ও হাল ছেড়ে দিবো না।এই নম্রতা মির্জা যা চাই তাই পাই।আর আপনি তো একটা জলজ্যান্ত মানুষ।আপনাকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারবো।অল এভরিথিং। এজন্যই হয়তো বলা হয়েছে এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার।হা হা হা হা।”

-“এদিকে কাজিন কথাটা শুনে মূহুর্তের মধ্যে আরেক দফা কানাঘুষা শুরু হয়ে গেল। সাহিত্য শিকদার শহরের সবার কাছে নামকরা একজন সিআইডি অফিসার নামে পরিচিত।আর একজন সিআইডি অফিসারের কাজিন কি না একজন চোর?সবার মধ্যে আগ্ৰহ সৃষ্টি হয় মেয়েটা ঠিক কি চুরি করছে দেখার জন্য।সবার আগ্ৰহ দমাতে সাহিত্য এসে শিক্ষা কে বললো, আমার মানসম্মান কিছুই রাখলি না শিক্ষা। আমি বাবা মা কে বারবার বলেছিলাম তোকে যেন এই পার্টিতে না নিয়ে আসে। কিন্তু তারা আমার কথা শোনে নি। ঠিকই আপদ সাথে নিয়ে এসে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে। বাবা,মা তোকে দেখে রাখার দায়িত্ব আমার উপর দিয়ে গেছিলো। আমার ইমার্জেন্সি একটা কল আসায় কিছু সময়ের জন্য আমি বাইরে গিয়েছিলাম ।আর এই মধ্যে চুরির মতো একটা জঘন্য কাজ করতে পারলি তুই? কিভাবে পারলি এমন টা করতে? এতো গুলো মানুষের সামনে, ছিঃ ছিঃ ছিঃ লজ্জায় আমার মাথা কা’টা যাচ্ছে। একবার ও আমার,তোর বড় আব্বুর মানসম্মানের কথা ভেবে দেখলি না শিক্ষা।দেখি কি চুরি করেছিস?”

-“কিছু না ”

-“আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোর শাড়ির আঁচলের নিচে কিছু লুকিয়ে রাখা।কি লুকিয়ে রেখেছিস দেখা বলছি শিক্ষা।না হলে আমার থেকে খারাপ কিন্তু কেউ হবে না।”

-” অনেক জোরাজুরি করার পর শিক্ষা শাড়ির আঁচলের নিচ থেকে চুরির জিনিস টা বের করলো যা দেখে উপস্থিত সবাই অবাকের চুড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেল।”

-” শিক্ষার হাতে চুরির জিনিস টা দেখে স্বয়ং মন্ত্রী মহোদয় এগিয়ে এসে বললো,আরে এটা তো সিআইডি ডিপার্টমেন্টের নামকরা এসিপি রায়হান মীরের ছবি।যে কিনা আজ থেকে দশ বছর আগে তার স্ত্রী রায়হা মীর ,আর মেয়ে উষ্ণতা মীরের সাথে সপরিবারে নিখোঁজ হয়েছিলো।এতো বড় একজন এসিপি নিখোঁজ হয়েছিলো অথচ আজ পর্যন্ত তার কোন হদিস মেলে নি।জানি ও না আদৌ সে বা তার পরিবারের কেউ জীবিত আছে কি না?”

-” মূহুর্তের মধ্যেই সাহিত্যের কপালে চিন্তার স্পষ্ট ছাপ ফুটে ওঠে। সাহিত্য ভাবতে থাকে,শিক্ষাকে ছোটবেলা থেকে দেখছি।ওর মধ্যে কখনো চোরা স্বভাবের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় নি। আমি ও ভাবতে ও পারি নি ও এমন একটা জঘন্য করতে পারে‌।তাছাড়া মন্ত্রীর বাড়িতে এতো দামি দামি জিনিসপত্র, ধনদৌলত, টাকা পয়সা থাকতে ও কেন একজন এসিপির ছবি চুরি করলো।যে কিনা আজ থেকে দশ বছর আগে নিখোঁজ হয়েছে।বাট আই নো ভেরি ওয়েল ” লাভে লোহা বয়,বিনা লাভে তুলা ও বয় না”।শিক্ষার এই ছবি চুরির পিছনে নিশ্চয় কোনো না কোনো কারণ রয়েছে। কিন্তু কি এমন কারণ থাকতে পারে এই ছবি চুরি করার পিছনে???

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

#মনের_উঠোন_জুড়ে

#সূচনা_পর্ব

#নূন_মাহবুব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here