মন দিয়েছি তোমার নামে পর্ব -০৩

#মন_দিয়েছি_তোমার_নামে
#পর্বঃ৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি

“বোরখাওয়ালী তোমার বো’রখা খু’লে চাঁদপানা মুখটা তো দেখাও?”

স্কুল থেকে ফেরার পথে কয়েকজন বখাটে ছেলের মুখে এমন কথা শুনে থমকে দাঁড়ালো মিতু। রাগে তার মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে। তার পর্দা নিয়ে এমন কথা বলা একদম পছন্দ হয়নি। কিন্তু মিতু তৎক্ষণাৎ কোন প্রতিবাদ জানালো না। মনে মনে আল্লাহর কাছে ব’খাটে ছেলেগুলোর হেদায়েতের জন্য দোয়া চাইল। অতঃপর সামনের দিকে পা বাড়ালো। ছেলেগুলো পুনরায় তার সামনে এসে তাকে উত্তপ্ত করতে থাকে। মিতু এবার আর থাকতে না পেরে প্রতিবাদ করে বলে,
‘আপনাদের মনে কি আল্লাহর প্রতি একটুও ভয় নেই? এভাবে ভড়া রাস্তায় একটি মেয়েকে তার পর্দা নিয়ে কথা শোনাচ্ছেন। আপনারা কি জানেন না পর্দা একটি ফরজ বিধান?’

মিতুর কথা শুনে ব’খাটেদের দলে একজন ছেলে বলে ওঠে,
‘ওহ হুজুরনী, আমাদের বেশি জ্ঞান দিতে এসো না। আমরা তোমার থেকে জ্ঞান শুনতে আসিনি। ভালোয় ভালোয় তোমার নে’কাব খুলে তোমার মুখটা আমাদের সবাইকে দর্শন করাও। নাহলে কিন্তু এখান থেকে যেতে দেব না।’

মিতু মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করতে লাগল। এই মুহুর্তে আল্লাহ ছাড়া কেউ তাকে সাহায্য করার জন্য নেই। রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। মিতুদের বাড়ি একটি নির্জন গলিতে। সেখানেই এই ছেলেদের আসর বসে।

হঠাৎ করে একটি ছেলে মিতুর নেকাব তোলার জন্য হাত বাড়ায়। তখন হঠাৎ করে মিতুর মধ্যে তেজ চলে আসে। মিতু চিৎকার করে বলে, “আল্লাহু আকবর।” এবং ছেলেটির হাত শক্ত করে ধরে ফেলে। অতঃপর কয়েকজন ছেলে তাকে সম্পূর্ণভাবে ঘিরে ধরে। এতজনের সাথে মিতু একা পেরে উঠবে না৷ মিতুর চোখে জল চলে এলো।

ছেলেগুলো কিছু করবে তার আগেই এক ভারী পুরুষালি কন্ঠস্বর শোনা গেল। কেউ একজন বলে উঠল,
‘কি হচ্ছে টা কি এখানে?’

ছেলেগুলো সব পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখতে পায় এলাকার এক হাফেজকে। সবাই ভয়ে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ায়। কারণ তাকে এলাকার সবাই সম্মান করে। মিতুর কাছে মনে হয় এই লোকটাকে আল্লাহ প্রেরণ করেছেন তাকে সাহায্য করার জন্য। তাই সে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে। ছেলেগুলো এক এক করে সবাই যে যার বাড়ির দিকে চলে যায়। হাফেজ লোকটি এগিয়ে এসে মিতুকে বলে,
‘আপনি এভাবে একা চলাফেরা করবেন না। জানেন তো মেয়েদের জন্য এটা কতটা বিপজ্জনক। এরকম নির্জন রাস্তায় আসার সময় অবশ্যই কারো সাথে আসবেন।’

মিতু মাথা নাড়ায়। লোকটিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে দ্রুত বাড়ির দিকে রওনা দেয়। লোকটি তখন বলে,
‘আপনার কোন অসুবিধা না থাকলে আমি আপনাকে নিরাপদে আপনার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেব। আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন।’

মিতু ভাবে ছেলেগুলো আবার তাকে বিরক্ত করতে পারে তাই সে রাজি হয়ে যায়।

বাড়ির কাছাকাছি এসে লোকটিকে বিদায় জানায় সে। এরপর বাড়ির কাছাকাছি এসে চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পায় মিতু। দৌড়ে তাদের প্রতিবেশী শরীফ হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখতে পায় শরীফ হোসেনের মা রাবেয়া বানু শরীফ হোসেনের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী রুমকির সাথে কি নিয়ে যেন ঝা’মেলা করছে। মিতুকে দেখে রাবেয়া বানু এগিয়ে এসে বলেন,
‘মিতু মা তুই তো ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছু জানিস। তুই একটু রুমকিরে বোঝা না। রুমকি গার্মেন্টসে কাজ করতে চাইছে, এমন হলে তো ও পর্দা করতে পারবে না।’

রুমকি বলে ওঠে,
‘পর্দা করা ওতো জরুরি না। ইসলামে তো পুরুষদের দৃষ্টি নিচু রাখতে বলা হয়েছে।’

মিতু বলে,
‘এসব কি বলছেন আপনি ভাবি? ইসলামে পর্দা একটি ফরজ বিধান। পর্দা ইসলামের সার্বক্ষণিক পালনীয় অপরিহার্য বিধান। কোরআন-সুন্নাহর অকাট্য দলীল প্রমাণাদির ভিত্তিতে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি বিধানাবলীর মতো সুস্পষ্ট এক ফরয বিধান।

আল্লাহ তায়ালাই এ বিধানের প্রবর্তক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন তোমরা তাদের নিকট কিছু চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এ বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ’। (সূরা আহযাব: ৫৩)

এ বিধানের প্রতি পূর্ণ সমর্পিত থাকাই ঈমানের দাবি। এ বিধানকে হালকা মনে করা কিংবা এ বিধানকে অমান্য করার কোনো অবকাশ নেই। কেননা ইসলামী শরীয়তের সুস্পষ্ট বিধানের বিরোধিতা করার অধিকার কারো নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ এবং তার রাসূল কোনো বিষয়ের নির্দেশ দিলে কোনো মু’মিন পুরুষ কিংবা কোনো মু’মিন নারীর জন্য সে বিষয় অমান্য করার কোনো অধিকার থাকে না। আর যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করে সে অবশ্যই পথভ্রষ্ট।’ (সূরা আহযাব: ৩৬)’

রুমকি এসব কথা শুনে বলে,
‘তার মানে একজন মুসলিম নারীর জন্য পর্দা করা আবশ্যক।’

মিতু বলে,
‘জ্বি, নিঃসন্দেহে।
মূলত পর্দাহীন নারীরা হচ্ছে জগতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট নারী। তাদের ব্যাপারে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সবচে নিকৃষ্ট তারাই যারা পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে। (বায়হাকী: ১৩২৫৬)

তাই আমরা বলতে পারি যে, সুসভ্য ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী নারী কিছুতেই পর্দাহীন হতে পারে না। এমনকী অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে রসূলুল্লাহ (রা.) তাদেরকে লা’নত দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) লা’নত (অভিশাপ) দিয়েছেন সেসব নারীদেরকে যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে। অর্থাৎ পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে। (আবু দাউদ: ৪০৯৭)

এছাড়াও পর্দাহীনতার কারণে আল্লাহর বিধানকে অমান্য করা হয়। আর এ অবাধ্যতার কারণে আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। ‘

সব কথা শেষ করে মিতু বলে,
‘ভাবি আমি আপনাকে বিস্তারিত ভাবে সব বললাম৷ এবার আপনি নিজের বিবেক দিয়ে বিবেচনা করে দেখুন।’

মিতু দ্রুত তাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিজ গৃহে প্রবেশ করল। মিতু বাড়িতেই ঢুকতেই প্লবতাআবলে উঠল,
‘তুমি চলে এসেছ’

প্লবতা খুশি হলো বেশ। মিতু বলল,
‘ভাবি তুমি এত খুশি কেন?’

‘আজ তো তোমার আম্মুকে দেখতে যাব তাই।’

‘আচ্ছা। ভাইয়া আসুক তারপর যাব আমরা সবাই।’

★★★
ধীরাজ এলে প্লবতা ও মিতু তার সাথে হাসপাতালে যায় ধীরাজের মাকে দেখার জন্য। ধীরাজের মা আসমানী বেগম এখন বেজায় অসুস্থ। তার হার্টের অসুখ হয়েছে। ডাক্তার অপারেশনের কথা বলেছিল। এই জন্য মূলত ধীরাজ প্লবতার বাবার প্রস্তাবে রাজি হয়ে ছিল।

প্লবতাকে দেখে খুব খুশি হন আসমানী বেগম। তিনি বলেন,
‘এখন আমি নিশ্চিত হলাম যে আমার মৃত্যুর পর আমার সংসার কেউ খুব ভালো করে সামলাবে।’

প্লবতা বলে,
‘চিন্তা কর বেন না। দেখ বেন আপনি একদম সুস্থ হয়ে যাবেন।’

আসমানী বেগম বলেন,
‘ইনশা আল্লাহ।’

কথাবার্তা শেষে তারা সকলে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here