মন দিয়েছি তোমার নামে পর্ব -০৫

#মন_দিয়েছি_তোমার_নামে
#পর্বঃ৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ধীরাজ বিষন্ন মনে বাড়ি ফিরে এলো৷ বাড়িতে এসে দরজায় করা’ঘাত করার কিছু সময় পর মিতু এসে দরজা খুলে দিলো। ধীরাজকে একা ফিরতে দেখে মিতু আশে পাশে তাকিয়ে প্লবতাকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু প্লবতাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ধীরাজকে জিজ্ঞেস করে,
‘তুমি একা ফিরলে কেন ভাইয়া? ভাবি কোথায়? আম্মু যে বলল তুমি ভাবিকে নিয়ে বেরিয়ে গেছ।’

মিতুর প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ধীরাজ বলল,
‘আম্মু কোথায়?’

‘আম্মু তো ঘরে বসে পবিত্র কোরআন পড়ছেন।’

‘আম্মুকে একটু বল ওনার সাথে আমার জরুরি কথা আছে ‘

মিতু তাই করল। আসমানী বেগমের কক্ষে গিয়ে তাকে নিয়ে এলো। আসমানী বেগম ধীরাজকে শুধালেন,
‘বল কি বলার জন্য আমায় ডেকে পাঠালি?’

ধীরাজ মনে সাহস সঞ্চয় করে বলল,
‘আসলে আম্মু আমি প্লবতাকে ওর বাপের বাড়িতে রেখে এসেছি।’

‘ও এই ব্যাপার। ঠিক আছে, কোন ব্যাপার না। বিয়ের পর থেকে তো মেয়েটার সাথে ওর পরিবারের বনিমনা নেই। এই নিয়ে অনেক আক্ষেপও ছিল বেচারির মধ্যে। আমি ওর কষ্টটা বুঝতে পারতাম। তুই একদম ঠিক কাজ করেছিস ধীরাজ। ও কিছুদিন ওখানে থাকুক ওর মন ভালো হয়ে যাবে।’

‘আমি আসলে ওকে কিছুদিনের জন্য নয় বরঞ্চ চির দিনের জন্য ওর ব্বায়ার বাড়িতে রেখে আসছি।’

ধীরাজের কথা শুনে আসমানী বেগম এবং মিতু দুজনেই অনেক অবাক হলো। মিতু তো অবিশ্বাস্য গলায় শুধালো,
‘এটা তুমি কি করে করতে পারলে ভাইয়া?’

ধীরাজ কোন উত্তর দিতে পারল না। আসমানী বেগম বললেন,
‘কেন এমন করলি তুই?’

ধীরাজ বলল,
‘আমি অসহায় ছিলাম আম্মু। এই বিয়েটা ৬ মাসের চুক্তি ছিল। তোমার চিকিৎসার টাকা জোগাড় করার জন্য আমি প্লবতার বাবার সাথে এই বিয়ে নিয়ে ডিল করেছিলাম।’

ধীরাজের কথা শুনে আসমানী বেগম ভীষণ রেগে যান। তিনি স’পাটে চ’ড় বসিয়ে দেন ধীরাজের গালে। চিৎকার করে বললেন,
‘আমাকে বাঁচানোর জন্য তুই এত নিচ কাজ করলি। ছি! তোকে পেটে ধরেছি ভাবতেও আমার লজ্জা করছে। বিয়ের মতো একটা পবিত্র সম্পর্ককে তুই এভাবে অপমান করলি। এর থেকে তো ভালো ছিল আমি চিকিৎসার অভাবে ম’রে যেতাম।’

মিতুও বলে উঠল,
‘তুমি জানো না ভাইয়া চুক্তির বিয়ে এটা শরিয়ত বিরোধী আর ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম একটি বিষয়? সব কিছু জানার পরেও তুমি কিভাবে এমনটা করতে পারলে?’

‘আমি সেই সময় অসহায় ছিলাম।’

মিতু তেজি গলায় বলে,
‘তুমি অসহায় ছিলে না ভাইয়া। তোমার নফস তোমায় ধো’কা দিয়েছে। আল্লাহর প্রকৃত বান্দারা কখনো অসহায় হয় না। তারা সবরকম পরিস্থিতিতে আল্লাহর উপর ভরসা রাখে। কখনো নিজের ভালোর কথা ভেবে আল্লাহর বানানো নিয়মের বিরুদ্ধে যায়না।’

আসমানী বেগম বলেন,
‘তোর আব্বু জীবনে এর থেকে অনেক কঠিন সমস্যা মোকাবিলা করেছে। তোর যখন দুই মাস বয়স তখন তুই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল৷ প্রায় মৃত্যুর মুখে ছিলি। তোকে বাঁচানোর জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন ছিল কিন্তু তখন তোর বাবা চুরি, ডাকাতি বা কোন অন্যায় কাজ করেনি। সে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখেছিল৷ অতঃপর আল্লাহ তাকে হতাশ করেছি। তবে যদি সেদিন তোর কিছু হয়েও যেত তাও তিনি আল্লাহর উপর বিশ্বাস হারাতেন না। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন আল্লাহ যা করেন তার পেছনে কোন না কোন উদ্দ্যেশ্য থাকেই।’

নিজের মা-বোনের কথা শুনে ধীরাজ নিজের ভুল গুলো উপলব্ধি করতে থাকে। সে বুঝতে পারে এরকমটা একটা পন্থা অবলম্বন করা তার উচিত হয়নি।

মিতু এরপর বলে,
‘আচ্ছা ভাবির কি মতামত? উনি কি ওখানে নিজের বাবার বাড়িতে থাকতে চেয়েছেন?’

‘না। ও আমার কাছে ফিরতে চেয়েছিল।’

আসমানী বেগম এই কথা শুনে বলে ওঠেন,
‘তাহলে এক্ষুনি গিয়ে আমার বাড়ির বউকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আয়। আমি মানি না এসব চুক্তি টুক্তি। তুই কি ওকে তালাক দিয়েছিস?’

‘না। কিন্তু প্লবতার বাবা বলেছেন খুব শীঘ্রই ডিভোর্স পেপারস রেডি করে পাঠিয়ে দেবেন।’

‘এমনটা হবে না। এক্ষুনি গিয়ে প্লবতাকে ফিরিয়ে আনবি। নাহলে তুইও এই বাড়িতে প্রবেশ করবি না।’

বলেই ধীরাজকে ঠেলতে ঠেলতে বাড়ি থেকে বের করে দেন।

★★★
প্লবতা নিজের ঘরে বসে অনবরত কান্না করছিল। তার জীবন নিয়ে যে এরকম ভাবে একটা খেলা রচিত হয়েছে সেটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। ক্ষোভের বহ্নিশিখা জ্বলে উঠেছে তার মনে। সে মনে মনে বলল,
‘আমার জীবন নিয়ে এমন খেলা কেন হলো আল্লাহ? আমি কি কোন পুতুল? আমি নিজের জীবনের এই পরিণতি কোনভাবেই মানতে পারছি না।’

এরমধ্যে মাহিন হোসেন তার কক্ষে প্রবেশ করেন। তাঁকে দেখে প্লবতা রাগী গলায় বলে,
‘কেন এসেছ তুমি এখানে? আমি কত কষ্টে আছি সেটা দেখতে?’

মাহিন হোসেন বলেন,
‘তুমি আমায় ভুল ভাবছ প্লবতা। আমি যা করেছি তোমার ভালোর জন্যই করেছি।’

‘অনেক ভালো করেছ তুমি। তোমাকে আর আমার ভালোর কথা ভাবতে হবে না।’

‘ধীরাজ এসেছে তোমাকে ফিরিয়ে নিতে। আগেরবার জোর করলেও এবার আমি তোমাকে জোর করবো না। তোমার জীবনের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ তোমার উপর ছেড়ে দিলাম। তুমি যদি চাও তাহলে ধীরাজের সাথে ফিরে যেতে পারো, কিংবা নাও যেতে পারো। সবটাই তোমার উপর ডিপেন্ড করে।’

ধীরাজের আসার কথা শুনে প্লবতার মুখে হাসির ঝিলিক ফুঁটে ওঠে। কিন্তু পরমুহূর্তেই ধীরাজ তাকে কিভাবে ঠকিয়েছে সেটা মনে পড়ে যায় তার। ক্ষোভের সাথে দৌড়ে বাইরে চলে আসে সে। মাহিন হোসেন তার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন।

প্লবতা ধীরাজের সামনে এসে বলে,
‘আপনি চলে যান এখান থেকে।’

‘আমি চলে যেতে আসিনি প্লবতা। আমি আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি।’

‘আমার জীবনটাকে কি আপনি পুতুল নাচ পেয়েছেন নাকি? যখন যেভাবে খুশি নাচিয়ে যাচ্ছেন!’

‘তেমনটা নয় প্লবতা!’

‘তাহলে কেমনটা? আমি উত্তর চাই। আপনি একবার আমায় বিয়ে করলেন তারপর আমি হাজার অনুরোধ করার পরও আমাকে এখানে রেখে গেলেন। আর এখন চাইছেন ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। আপনাকে কি আমাকে মানুষ মনে হয়না? আমার কি কোন আত্মসম্মানবোধ নেই?’

‘প্লবতা…’

‘ব্যস আমি আর কিছু শুনব না। আমার স্পষ্ট কথা আমি আর আপনার জীবনে ফিরব না। বিয়েটা চুক্তির ছিল তো এখন সেই চুক্তি শেষ। আপনি তো নিজের স্বার্থ উসুল করে নিয়েছেন৷ এখন আপনার নিশ্চয়ই আর কিছু চাওয়ার নেই।’

‘আমার আপনাকে চাই প্লবতা।’

‘কখনো পাবেন না। আপনি ভালোয় ভালোয় এখান থেকে চলে যান। আমি খুব শীঘ্রই তালাকনামা তৈরি করে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’

‘প্লবতা…’

‘ব্যস,আপনার মুখে আমার নাম আর শুনতে চাই না। আপনি একজন ঠ’ক, একজন প্রতারক। আমি ঘৃণা করি আপনাকে।’

‘আম্মু আপনাকে বলেছে আপনাকে না নিয়ে বাড়িতে না ফিরতে
তাই আমিও আপনাকে না নিয়ে ফিরব না। ‘

‘তাহলে অনন্তকাল অপেক্ষা করুন। কারণ আমি কখনোই ফিরব না। আমার কাছে সবার আগে আমার আত্মসম্মান যেটায় আপনি আঘাত করেছেন।’

বলেই প্লবতা নিজের কক্ষে চলে যায়।

★★★
রাতে নিজের কক্ষ থেকে প্লবতা লক্ষ্য করে খুব ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। জানালার কাছে আসতেই দেখে ধীরাজ এই ঝড়বৃষ্টির মধ্যেও দাঁড়িয়ে আছে। সে দৌড়ে ছাতা নিয়ে গিয়ে ধীরাজে দিয়ে বলে,
‘এসব ছেলেমানুষী সিনেমা কিংবা গল্পের পাতাতে ভালো লাগে, বাস্তবে নয়। আমি সংকল্প করে নিয়েছি আপনার কাছে আর কখনো ফিরব না। আমৃত্যু এই সংকল্প আমি পালন করব। তাই ভালো হবে যদি আপনি আমার আশায় বসে না থাকেন’

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here