মন নিয়ে পর্ব -০৬

মন নিয়ে (পর্ব ৬)

রুমে ফিরে জেরিনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ল পারি। ঘুম ভাঙল খুব সকালে। পাশের বিছানায় জেরিন তখনো গভীর ঘুমে অচেতন। গতরাতে কখন ফিরেছে পারি বলতে পারবে না। উঠে হাত মুখ ধুয়ে কাপড় পাল্টে বেরিয়ে পড়ল, জেরিনকে আর জাগালো না। হেঁটে বিচে চলে এলো। এত সকালে তেমন কেউ নেই, খুব সম্ভব গতরাতে পার্টি করে তারাও ঘুমাচ্ছে। অন্যমনস্কভাবে বিচে হেঁটে বেড়ালো খানিক, সমুদ্রের ঢেউ এক একবার করে ওর পা ছুঁয়ে ছুঁয়ে ফিরে গেল। খানিক হেঁটে একসময় দাঁড়িয়ে পড়ল পারি। দুরের দিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবল। মনটা গতরাত থেকে ভার হয়ে আছে। ক্যানকুনে এভাবে আসবার প্ল্যান ছিল না, আসত একসময় না একসময়, এখন হুট করে ঝোঁকের মাথায় চলে এল। আসাটা কি ঠিক হল নাকি হল না এনিয়ে খানিক চিন্তা করল পারি। তারপর কাঁধ ঝাঁকিয়ে ফিরতি পথ ধরল। এসব নিয়ে চিন্তা করা বোকামির লক্ষণ। যা হয়নি, তা হয়নি। যে চলে গেছে, সে চলে গেছে। পিছুটান রাখা বুদ্ধিমানের লক্ষণ না। পারি নিজেকে বাস্তববাদী বলেই ভেবে থাকে। পিছনের কথা ভেবে মন খারাপ করার কোনো প্রয়োজন নাই।

ফিরে দেখে জেরিন ঘুম ভেঙ্গে বিছানায় বসে আছে। ওকে দেখে হাই তুলল
— হোয়ের ওয়ের ইউ?
— হাঁটতে গেছিলাম। সাফাতের সাথে ঝামেলা মিটেছে?
— ওয়েল, আই গেভ হিম এনাদার চান্স। এখানে আমরা দুইদিন আছি আর। হি হ্যাজ টু মেক রোমান্টিক জেসচারস ইন দিস টাইম।
হাসি গোপন করল পারি। পুওর সাফাত। কঠিন পরীক্ষা সামনে বেচারার। জেরিনের মনোমত রোমান্টিকতা দেখাতে পারলে বুঝতে হবে ওর এলেম আছে!
— চল, রেডি হয়ে নাস্তা খেয়ে নেই। তারপরে রিসেপশানে ট্যুরের খোঁজ করা যাবে। কই কই যাব আমি মনে মনে একটা প্ল্যান করে রেখেছি।

ডাইনিং এ ঢুকে প্রথমে একটু থমকে দাঁড়াল দুজনে। এমনকিছু আহামরি না, খাবারও সব গতানুগতিক। টোস্ট, বাটার, জ্যাম, ওটমিল, ওয়াফেল, জুস, চা, কফি, ফ্রুটস। কিন্তু পুরা ডাইনিং হল সাজানো হয়েছে মেক্সিকান ধাঁচে। তারা চড়া রঙের ভক্ত দেখে বোঝা যাচ্ছে। তিন দেয়ালে তিন রকম রঙ। লাল, টিয়ে সবুজ আর কড়া হলুদ। ছোট ছোট চৌকা টেবিলে দেয়ালের সাথে ম্যাচ করে লাল, হলুদ আর সবুজ টেবিল ক্লথ। বসার জন্য টুল। দেয়ালে লোকাল পেইন্টিং। এক দেয়ালে আয়না।
ব্রেকফাস্ট নিয়ে দুজনে বসল। খেতে খেতে জেরিন প্রশ্ন করল
— কই যাব আজ, পারি?

উত্তর দেবার জন্য মুখ তুলল পারি। সামনে তাকাতেই রাস্তামুখো দেয়ালের জানালা দিয়ে হর্ণের শব্দ আসতে সেদিকে মনোযোগ চলে গেল। সামনের রাস্তায় মাহা গাড়ির পেছন সিট থেকে খুব হাত নেড়ে নেড়ে ওদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে।
মাহা এখানে! টুল ছেড়ে উঠে দাঁড়াল পারি। চটপট ডাইনিং থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়াল। পিছেপিছে জেরিন।
— হোয়াট হ্যাপেন্ড, মাহা? ইজ এভ্রিথিং অলরাইট?
এভ্রিথিং যে অলরাইট সেটা মাহার মুখের বিশাল হাসি দেখেই অনুমান করা যায়। বলল
— সাফাত আর রিক একটা গাড়ি রেন্ট করেছে। এখানকার বিচ নাকি জেরিন পছন্দ করেনি, সাফাত বলছিল। তাই এক চায়ের দোকানে লোকাল বিচের খবর পেয়ে আমরা সবাই যাচ্ছি। তোমাদের তুলে নিতে এলাম।
তাই তো! সামনের দুই সিটে দুই বান্দা রিক আর সাফাত বসে রয়েছে। পারি ওদেরকে খেয়ালই করেনি।
— আমি ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড, মাহা। তুমি ওদের সাথে কেন? জামিল ভাই কই? আর আমাদের তুলে নিতে এলে মানেই বা কী? উই হ্যাভ প্ল্যান্স, ইউ নো।
হাত নেড়ে জামিলের কথা উড়িয়ে দিল মাহা।
— ওর কথা আর বোলো না। আমি রেডি হয়ে ওকে তুলে দিতে গেলাম। বলে
— ফর গডস সেক, মাহা। এত সকালে আমাকে খুনের ভয় দেখালেও উঠছি না। ১২টার পরে গেট ইন টাচ উইথ মি। তখন আমি তোমার সব কথা শুনব।
— তো জামিল ভাই যাবে না দেখে তুমি এদের সাথে ভিড়ে গেলে?
তীর্যকভাবে বলল পারি। যদিও এদের বলতে সে রিককেই মিন করল।
— আরে, ওরা গাড়ি রেন্ট করেছে, সুন্দর বিচের খবর এনেছে। করিতকর্মা ছেলে, বললে না করার কোনো কারণ আছে? চলো তোমরাও চলো আমাদের সাথে।

পারি একবার জেরিনের দিকে তাকিয়ে দেখল। দেখে জেরিন উতসাহী হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তারমানে ও যদি মিউজিয়ামে যেতে চায় তো জেরিন হয়ত রাজি হবে না। মনেমনে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলল পারি। এত সুন্দর একটা দিন। এমন দিনে বিচ উপভোগ করাটাই ঠিক হবে হয়ত। মিউজিয়াম যদি সম্ভব হয় কাল দেখা যাবে।
— হোয়াট ডু ইউ থিঙ্ক, জেরিন?
— ইটস এ গুড প্ল্যান। চলো যাই, পারি। একটা সুন্দর বিচ না দেখে ফেরার মানেই হয় না।

রুমে গিয়ে গতকালকের কেনা স্ট্র হ্যাট, টাওয়েল, জামাকাপড় গুছিয়ে নিয়ে ওরা বেরিয়ে এলো। মাহার কান্ড দেখে দুজনে অবাক। এই না হানিমুন হানিমুন করে কেঁদে কেটে অস্থির হচ্ছিল। এখন দিব্যি জামিল ভাইকে ফেলে সাফাতদের সাথে চলল বিচে। কেন সে এসেছে, সেটা অবশ্য খানিক পরেই বোঝা গেল। ওরা ফিরে এসে দেখে রিক পিছের সিটে বসে আছে, মাহা জেরিনকে সামনের সিটে বসতে বলল। তখনি সন্দেহ মনে এল পারির। মাহা নিশ্চয় এখানে ম্যাচমেকারের রোল প্লে করতে এসেছে।
অসুবিধা কি? সাফাত নিডস অল দা হেল্প হি ক্যান গেট।

মিনিট পনের ড্রাইভ করে ওরা মেইন রাস্তা ছেড়ে কাঁচা রাস্তা ধরে এগিয়ে চলল। পাঁচ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গাড়ি পার্ক করে বের হতেই দেখে বিচ শুরু হবার ঠিক মুখে মাটির সাথে সমান্তরালভাবে বেড়ে ওঠা নারিকেল গাছ। ঠিক যেমনটা একজোটিক বিচের ছবিতে দেখা যায়। জেরিন দৌড়ে গিয়ে গাছে বসে দোল খেতে লাগল। সাফাতকে এক গুঁতা দিল মাহা।
— গো না! টেক পিকচারস অফ হার। জেরিন লাভস টু টেক পিক্স।
মাহার কাছ থেকে নির্দেশনা পেয়ে সাফাত পড়িমড়ি ছুটল জেরিনের ছবি তুলতে। জেরিনের চেহারা গদগদ হয়ে গেল। আগে এসবে সাফাতকে কোনোভাবেই আগ্রহী করতে পারেনি জেরিন। আর এখন না বলতেই…
পারি ওদেরকে ছেড়ে একলাই এগিয়ে যেতে থাকে। পিছে মাহা আর রিক গল্প করতে করতে হাঁটছে। কিছুদুর এগোতে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল ওর।

সামনে সমুদ্র। কিন্তু সেটা এত সুন্দর হতে পারে কখনো কল্পনাও করতে পারেনি ও। বিচে সাদা রঙের বালি, পানিতে নীল আর সবুজের সবকয়টা শেড খেলা করছে, ওপরে উজ্জ্বল নীল আকাশ। সবমিলিয়ে অবিশ্বাস্যরকম সুন্দর। দৌড়ে সমুদ্রে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল পারি। নিজেকে যেন একটা মুক্ত বিহঙ্গের মতো মনে হল ওর। চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টানল।
পিছে থেকে রিকের ভারী গলা পাওয়া গেল।
— প্লিজ বি কেয়ারফুল। সামটাইমস দা কারেন্টস আর টু স্ট্রং। আই হোপ ইউ নো হাউ টু সুইম।
কথাটা পাত্তা দিল না পারি। সে একটা এডাল্ট মেয়ে। রিকের এত সর্দারি না করলেও চলবে। কিছুক্ষণের মধ্যে মাহা রিককে ফেলে ওরসাথে যোগ দিল।

— ইটস বিউটিফুল, পারি। সমুদ্র এত সুন্দর হতে পারে কখনো ভাবিনি।
— তাই না? এতদিন ধরে ছবিতে যা দেখেছিলাম, এখন সামনে দেখছি। কিন্তু এত সুন্দর কিছু হতে পারে, আমিও ভাবিনি।
কিছুক্ষণ বাদে জেরিনও ওদের সাথে যোগ দিল। আসলে জেরিন আর সাফাতের মিল হব হচ্ছে হলেও সে সাফাতকে এক হাত দুরেই রাখছে, বোঝা গেল। দেখতে চায় সাফাত কতটা রোমান্টিসিজম দেখাতে পারে। এদিকে সাফাত এরই মধ্যে ঘামতে শুরু করে দিয়েছে। জেরিনের নানান পোজে ছবি তোলা হল। আর কী করলে নিজেকে রোমান্টিক হিসাবে প্রমাণিত করতে পারা যাবে, ভেবে পেল না। রিক ওকে বুদ্ধি দিল
— গিভ হার সাম ফ্লাওয়ারস, ম্যান। উইমেন লাভ ফ্লাওয়ারস।
— আমি এখানে ফ্লাওয়ার শপ কই পাব? মেক সেন্স, ম্যান!
— উফ, সাফাত। ইউ আর হোপলেস। ঐ তো গাছে কী সুন্দর ফুল ফুটে রয়েছে। গেট সাম ফর জেরিন। শি উইল বি প্লিজড।
সত্যি, বিচ যেখানে শুরু হয়েছে, সেখানে রক্তরাগের গাছ রয়েছে। কমলা লাল রক্তরাগ ফুল আগুনের মতো থোকায় থোকায় ফুটে রয়েছে। সাফাত গিয়ে দুই থোকা ফুল ছিঁড়ে নিল
— আই থিঙ্ক দিস ইজ এনাফ।
— গেট সাম মোর, সাফাত। রিয়েলি, ফ্রি ফুল দেখেও এত চিপ হচ্ছ কেন?
নিজেই গিয়ে গোটাকতক ফুল ছিঁড়ে সাফাতের হাতে দিল রিক।
— নাও গো এন্ড প্রেজেন্ট টু হার ইন স্টাইল।
— স্টাইল কেমন করে করব?
— আই ডোন্ট নো। টেল হার সামথিং। লাইক শি ইজ মোর বিউটিফুল দ্যান দা ফ্লাওয়ারস। ইউজ ইয়োর ব্রেইন, ম্যান! ডোন্ট বাগ মি!

রিকের কেমন যেন বিরক্ত ধরছে। পাড়িজাত মেয়েটা তখন থেকে ওকে ইগনোর করছে। তাকে সাবধান করে দিল, কানেই নিল না। গতকাল ওর নাম ভুল উচ্চারণ করেছিল, সেটা ভোলেনি নিশ্চয়। আশ্চর্য ব্যপার। এমনটা তো হতেই পারে। এখানে যারা জন্মেছে, তাদের জিভ খুব তাড়াতাড়ি শক্ত হয়ে যায়। “র” উচ্চারণ করতে পারেনা। মেয়েটা ওর নিক নেম বললেই পারত। তা না, সেনিয়ে কী রাগ! নিজে যে মাথা ধরার অজুহাতে পালিয়েছিল, সেটা কিছু না!
রাগ হলেও রিক জে একটু আকৃষ্ট হল না, সেটা বলা যাবে না। মেয়েরা ওকে সবসময় নোটিস করে এসেছে, হাইস্কুল ইউনিভার্সিটিতে থাকতে ওর গার্লফ্রেন্ডও ছিল। তবে সেগুলি তেমন সিরিয়াস কিছু না, সময়ের সাথেসাথে সম্পর্ক ফিকে হয়ে দুপক্ষই সরে এসেছে। টরোন্টোতে মুভ করার পর নতুন চাকরি নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত ছিল যে এতদিন একলা কেটেছে কিন্তু মেয়েদের আগ্রহ সে বরাবরই লক্ষ করে এসেছে।
পারিজাত কী এমন আহামরি মেয়ে যে ওকে উপেক্ষা করবে? আশ্চর্য তো! স্বাভাবিকভাবে কথা তো বলতে পারে!

সমুদ্রের বড়ো বড়ো ঢেউ ওদের এক একবার করে ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছিল। পারি, মাহা আর জেরিন গল্প করতে করতে ঢেউয়ের ধাক্কা খেয়ে চিৎকার করে হেসে হেসে উঠছিল। পানিতে প্রচুর শেওলা। এমন শেওলা ওরা কখনো দেখেনি। লম্বা চ্যাপ্টা ঝালরের মতো। ঢেউয়ের সাথে তারাও ভেসে এসে ওদের গা ছুঁয়ে যাচ্ছিল। শেওলাগুলি কেমন প্লাস্টিকের মতো, ধারগুলি সামান্য খাঁজকাটা। বারবার চামড়ার সাথে ঘষা লাগতে তিনজনেরই হাত গলা চুলকাতে লাগল। জেরিনের হাতে লাল লাল দাগ হয়েই গেল। দেখে মাহা চিৎকার করে সাফাতকে ডাকল
— সাফাত, দেখো কী অবস্থা।
সাফাত বেচারা রিকের সাথে সাঁতার কাটছিল, মাহার ডাকে এসে জেরিনের হাতের অবস্থা দেখে বোকার মতো বলল
— ডাক্তার দেখাতে হবে?
— আরে নাহ। সামান্য কারণে ডাক্তারের কাছে কেন যাব? জেরিন প্রতিবাদ করল
— মেবি ইউ শুড গেট আউট অফ দা সি। বিচে গিয়ে বসে থাকো।
জেরিনের চেহারা গোমড়া হতে শুরু করল। মাহা দিল এক গুঁতা সাফাতকে
—ও একা বসে থাকবে নাকি বিচে? আর আমরা এঞ্জয় করব?
— তো কী করব তাহলে? সবাই মিলে বিচে বসে থাকব?

রিক চুপ করে এতক্ষণ শুনছিল। এবারে বলল
— টি শপের লোকটা বলেছিল এখানে সিনোটি আছে একটা। আমরা সেখানে যেতে পারি।
সিনোটির কথা শুনে সবাই উতসাহিত হয়ে পড়ল। পারি সন্দেহের গলায় বলল
— সিনোটি আছে? কই, কোথাও লেখা বা ছবি দেখলাম না কেন তাহলে? সিনোটি তো বিরাট টুরিস্ট এট্রাকশান।
রিক ঠান্ডা গলায় জবাব দিল
— কারণ এখানে লোকাল লোকেরা আসে। কমার্শিয়াল বিচ না এটা। সেজন্য হয়ত এড দেয়নি। যারা আসে সবাই জানে এর কথা।
কথাটায় যুক্তি আছে। নাহলে এত সুন্দর বিচে লোক এত কম কেন? টুরিস্ট দিয়ে ভরে যাবার কথা, সেই অনুপাতে স্ন্যাক বার, জুস কর্ণার আর দুনিয়ার দোকানপাটে জায়গাটা সয়লাব হবার কথা।
মাহা উতসাহী হয়ে পড়ল
— ইয়েস! ইয়েস! আমি সিনোটি দেখতে চাই। লেটস গো এভ্রিবডি।

সিনোটি পর্যন্ত পৌঁছুতে সামান্য হাঁটা লাগে। কিছুদূর যেতে শুরু হয়ে গেল লম্বা লাইন। এরা সবাই সিনোটিতে যাবার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে, অনেকে বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে সপরিবারে এসেছে, সবাই লোকাল লোকজন। এক একবার করে কিছু লোককে যেতে দিচ্ছে, তাতে লাইনটা ধীরগতিতে এগোচ্ছে।
চারিদিক গাছপালা দিয়ে ঘেরা, কিছুদূর এগোতে কাঠের সাঁকো পড়ল। লাইন আস্তে আস্তে সিনোটির দিকে চলতে থাকল। বেশ একটা ভেজাভেজা স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ। বাইরে প্রচন্ড গরম হলেও এ জায়গায় কেমন ঠান্ডাভাব, প্রাণ জুড়িয়ে যায়। চারিদিকে পাখি ডাকছে।

মেক্সিকোতে সিনোটি বেশ কমন। একধরণের জলাশয় যা লাইমস্টোন ধ্বসে যাবার ফলে পানি জমে গিয়ে তৈরী হয়। প্রাচীন আমলে এখান থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করা হত। বর্তমানে তার প্রয়োজন পড়ে না কিন্তু এর অপরূপ সৌন্দর্য এখনো লোককে আকৃষ্ট করে।
পনের বিশ মিনিট অপেক্ষার পর ওদের পালা এল। দেখে যাকে বলে মুগ্ধ হয়ে গেল সবাই, কিছুক্ষণ কথাই বলতে পারল না। সিনোটি খুব বেশি বড় না, তবে এক মানুষ সমান গভীর। পানির রঙ হাল্কা নীলচে সবুজ, কাকের চোখের মতো স্বচ্ছ পানিতে সিনোটির তলার বড়ো বড়ো পাথর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। চারিদিকে গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা এক মনোরম পরিবেশ। ওদের সাথে আরও যারা এসেছে, তারা ঝটপট পানিতে নেমে পড়ল, যারা সাঁতার জানে না তারা কাঠের সাঁকোর কিনার ধরে বুক পর্যন্ত পানিতে দাঁড়িয়ে রইল, বাকিরা সাঁতরে সিনোটি এপার ওপার করতে লাগল।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here