মন নিয়ে পর্ব -০৭+৮

মন নিয়ে (পর্ব ৭)

পারি সাতার জানেনা, তাই বুক পানিতে দাঁড়িয়ে রইল। জেরিনও জানেনা কিন্তু তার হিরো সাফাত রোমান্টিসিজমের পরীক্ষা দিতে তাকে নিয়ে গেল। মাহা যদিও সাঁতার জানে কিন্তু সে পারির সাথে দাঁড়িয়ে গল্প জুড়ে দিল। রিকও ঝটপট পানিতে নেমে সাঁতরে এপার ওপার করতে থাকে।
— পারি, পানিটা কেমন অদ্ভুত না? প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে একেবারে। আই ফিল লাইক এ নিউ পার্সন।
মৃদু হাসল পারি— ট্রু। খুব সফট পানি। হিলিং প্রোপার্টিজ থাকলেও অবাক হবার কিছু নাই।
ততক্ষণে মাহা কয়েকবার ডুব দিয়ে নিয়েছে
— পারি, ডুব দাও। দেখো আমার চুলগুলি কেমন সফট হয়ে গেল। ইটস লাইক ম্যাজিক।
দেখাদেখি পারিও সাঁকোর কিনার ধরে সাবধানে কয়েকবার ডুব দিল। সত্যি চুল কেমন সফট আর সিল্কি লাগছে।
— ইউ ওয়ের রাইট। মাই হেয়ার রিয়েলি ফিলস সফট এন্ড সিল্কি।
— ডিড ইউ সে সামথিং টু মি?

মাহার গলায় পুরুষালি কন্ঠ শুনে চমকে চোখ থেকে চুল সরালো পারি। কই মাহা? দেখে সে সাঁতরে সিনোটির মাঝখানে চলে গেছে। তার জায়গায় রিক এখন রয়েছে।
— নট ইউ। আই ওয়াজ টকিং টু মাহা। ডিড নট রিয়ালাইজ শি ওয়াজ গন।
— কেমন লাগছে সিনোটি? ডু ইউ লাইক ইট?
রিকের কেমন যেন জেদ চেপে গেছে। মেয়েটা ওকে এভাবে ইগনোর করছে কেন? দলবেধে এসেছে, সবাই হাসিগল্প করছে। এরমাঝে আলাদা করে ওকেই ইগ্নোর করার কী কারণ থাকতে পারে? এমন তো না যে বিয়ের একটা কথা উঠেছিল বলে বিয়ে করতেই হবে। সেদিনের পরে মাও আর কথা এগোবে কিনা কে জানে। তার সোনার চাঁদ ছেলের জন্য গিয়েছিল আর মাথাব্যথার অজুহাত দিয়ে সামনে এলো না, মা তো পারির মুখ আর দেখতে চাইবে বলে মনে হয় না।
— ইটস রিয়েলি বিউটিফুল। সিনোটি দেখার আমারও ইচ্ছা ছিল কিন্তু সময় বের করতে পারব কিনা ভাবছিলাম। কাল তো পিরামিড দেখার প্ল্যান আছে। এখন সিনোটি বিচ একসাথে দেখা হয়ে গেল। ইট ইজ ওয়ান্ডারফুল। থ্যাঙ্ক ইউ।
পারি সামান্য সহজ হল। এত সুন্দর একটা জিনিসের যে সন্ধান দিয়েছে, তাকে কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত।
— গ্ল্যাড দ্যাট ইউ লাইক ইট। সহজভাবেই বলল এবারে রিক।

হঠাত পারি চিৎকার করে উঠল, আশেপাশের লোকেরা ফিরে ফিরে তাকালো।
— হোয়াট হ্যাপেন্ড?
— পানিতে কিছু একটা আছে মনেহয়। আমার পায়ে কিছু একটা মুভ করছে।
পানির মধ্যেই পা ঝাড়া দিতে থাকে পারি।
— ওহ! হাসল রিক।— ও কিছু না। ছোট মাছ। ওরা ডেড স্কিন খায়। তোমার পা থেকে ডেড স্কিন কামড়ে খাচ্ছে।
— রিয়েলি? চোখ বড়ো বড়ো করে ফেলল পারি।— এ ধরণের পেডিকিওরের কথা শুনেছি আমি। সত্যি মাছ নাকি? কই আমি দেখছি না কেন?
— এত নড়াচড়া করলে দেখবে কেমন করে? ছোট সাইজের মাছ। আমার পায়েও খাচ্ছে।
— ইট ফিলস উইয়ার্ড। আই ডোন্ট লাইক দিস ফ্রি পেডিকিওর।
নাক সিটকালো পারি। হেসে ফেলল রিক।
— ওকে দেন। ইফ ইউ ডোন্ট লাইক ইট, দ্যাটস ফাইন। দা ফিশেস ওন্ট বি ইন্সালটেড। হোয়াই ডোন্ট ইউ সুইম?
— আমি সাঁতার জানিনা। এখন ওদের দেখে রিগ্রেট করছি। মাহা কী সুন্দর সাঁতার কাটছে।
— রিয়েলি? ইউ ডোন্ট নো সুইমিং?
— নো। নেভার ওয়াজ ইন্টেরেস্টেড ইন সুইমিং লেসন্স।
একটু ভাবল রিক।
— ওয়েল, ইফ ইউ ট্রাস্ট মি, তুমি আমাকে ধরে থাকতে পারো, আমি তোমাকে সিনোটি এপার ওপার করে দিতে পারি। ইট ইজ সো রিফ্রেশিং।
একটু ভাবল পারি। হোয়াই নট?
— দ্যাট ইজ কাইন্ড অফ ইউ। আই উড লাভ দ্যাট।
— লেটস গো দেন।

রিক পারিকে ধরে সাঁতরে সিনোটির মাঝে নিয়ে যেতে থাকে। যেতেযেতে প্রশ্ন করে
— ইউ ওকে?
— আই এম ফাইন। দা ওয়াটার ইজ ইভেন বেটার হিয়ার।
— টোল্ড ইউ! হাসল রিক। দুজনে নীরব রইল কিছুক্ষণ।
— ডু ইউ হ্যাভ এ নিক নেম?
— হোয়াট?
— নিকনেম। কী বলে জানি… ডাকনাম। তোমার ডাকনাম নাই?
— নাহ। আমার একটাই নাম। কেন?
— ওয়েল, সিমস লাইক আমি তোমার নাম ঠিকমতো বলতে পারছি না। ডাকনাম থাকলে সেটাই বলতাম।

পাত্তা দিল না পারি। এত ঘনিষ্ঠতারও দরকার নাই। ওকে সিনোটি এপার ওপার করে দিচ্ছে বলে কি জীবনের বন্ধুত্ব হয়ে গেল নাকি?
পারিকে চুপ করে থাকতে দেখে রিক কথা চালিয়ে গেল
— মেবি আই ক্যান কল ইউ পারিজা।
— পারিজা ইজ নট মাই নেম।
— ইট ইজ বেটার দ্যান পাড়িজাত!
— তুমি পারিজা বলতে পারলে পারিজাত বলতে পারবে না কেন?
আবার চেষ্টা চালালো রিক।
— পাড়িজাত!
— এগেইন? এতটুকু খুশি হল না পারি।
— সরি। ইট সিমস লাইক আই হ্যাভ এ প্রবলেম উইথ দিস নেম।
কাঁধ ঝাঁকাল পারি।
— ফরগেট ইট। একদিন পরেই আমরা চলে যাচ্ছি। তারপরে কিছু বলে ডাকারই আর দরকার পড়বে না।

আহত হল রিক। এত কঠিন কেন মেয়েটা? ও যতদূর পারছে ভদ্র ব্যবহার করছে। এই যে ওকে ধরে ধরে সাঁতরে বেড়াচ্ছে, অন্য কেউ হলে সুযোগ নিতে চাইত। কিন্তু সে যতটা সম্ভব শালীনভাবে ওকে ধরে রেখেছে। তাও ওর মধ্যে নরম হবার কোনো লক্ষণ নাই। ফিরে তো সেই টরোন্টতেই যাবে দুজনে। সেখানে কি আর দেখা হবে না? কমন ফ্রেন্ড আছে দুজনের, দেখা তো হয়ে যাবেই। তখন কি ওকে পাড়িজাত বলে ডাকবে নাকি পারিজা বলে ডাকবে? আজব মেয়ে। কোনোকিছুতে হিলদোল নাই।
রিক আর পারি ফিরে আসতে দেখে মাহা, জেরিন আর সাফাত ততক্ষণে সাঁকোতে উঠে পড়েছে।
— লেটস গো। আমাদের সময় শেষ। পরের দলকে আসতে বলবে এখন।
ওরা অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে আসতে সামনে চেঞ্জিং রুম পড়ল। মাহা, পারি, জেরিন গিয়ে ঢুকল মেয়েদের চেঞ্জিং রুমে। চেঞ্জ করতে করতেই শোনা গেল মাহার এক্সাইটেড গলা। ভাঙা ভাঙা স্প্যানিসে কার সাথে যেন কথা চালিয়ে যাচ্ছে। অল্প হাসল পারি। মাহা এত মিশুক। যেখানেই যায়, বন্ধু একটা জুটিয়ে ফেলবেই। ভাষা বুঝুক আর না বুঝুক। কিন্তু জামিল ভাইকে যে ফেলে এলো, মনে তো হচ্ছে না জামিল ভাইকে ছাড়া ওর এতটুকু দুঃখ হচ্ছে। দিব্যি ওদের সাথে মিশে গেছে। হয়ত এমন প্র্যাকটিকাল ওকেও হতে হবে। রিয়েল লাইফ কি রোমান্সে ভরা হয়? জেরিন যেটা আশা করছে, সেটা কি কখনো পাওয়া যায়? সাফাত খুব চেষ্টা করছে কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে ওর করতে কষ্ট হচ্ছে। এসব ওর স্বাভাবিকভাবে আসে না। সবাই হেল্প করে ওকে কোনোরকমে উৎরে দিচ্ছে। নাহলে সাফাতের মাথা থেকে কিছুই বেরুতো না। সামনে জেরিনকে ওর আশা একটু কমাতে হবে।

চেঞ্জ করে ভেজা কাপড় গুছিয়ে নিয়ে সবাই গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, মাহার ফোন বেজে উঠল। জামিল
— মাহা, হোয়ের আর ইউ?
— আমি বিচ আর সিনোটি দেখে ফেলেছি, জামিল। মাহার গলায় খুশি ঝড়ে পড়ল।
— দ্যাট ইজ ওয়ান্ডারফুল। কাদের সাথে গেলে?
— এই তো রিক, সাফাত, জেরিন আর মাহার সাথে। আমরা খুব মজা করেছি। তুমি তো ঘুমালে। পুরা মিস।
— ইটস ওকে। জামিলের গলা শুনে মনে হল না কোনো আফসোস হচ্ছে ওর।— শোনো, আমি আসছি এখন। ঠিকানাটা দাও। তারপর তুমি যেখানে যেতে চাও, চলো যাই।
মাহার চেহারা খুশিতে ঝলমল করে উঠল।
— রিয়েলি?
— অফ কোর্স। ইটস ইয়োর হানিমুন। বলো, কই যেতে চাও।
সবার দিকে খুশিভরা চোখে একবার তাকিয়ে দেখল মাহা। তারপর আবদার ধরল।
— শোনো, এখানে একটা স্প্যানিশ মহিলার সাথে আলাপ হল। ওরা প্রায়ই আসে। আমাকে বলল এখানে নাকি মাঝরাতে এলে কচ্ছপের ডিম পাড়া দেখা যায়। আমি দেখতে চাই, জামিল।

জামিলের দিক থেকে নিশ্ছিদ্র নীরবতা বজায় রইল।
— হ্যালো হ্যালো জামিল। শুনতে পাচ্ছ?
— পরিস্কার শুনতে পাচ্ছি, মাহা। কী বললে তুমি? কচ্ছপের ডিম?
— কচ্ছমের ডিম না। কচ্ছপের ডিম পাড়া দেখব, জামিল। মাঝরাতে কচ্ছপেরা সমুদ্র থেকে বিচে চলে আসে ডিম পাড়ার জন্য। এক একবার নাকি অনেক ডিম পাড়ে!
— মাঝরাতে? জামিলের গলা বরফের চাইতেও ঠান্ডা শোনালো। মাহা উৎসাহের চোটে খেয়াল করল না।
— হ্যাঁ হ্যাঁ, জামিল। কী থ্রিলিং ব্যপার, না?
কিছুক্ষণ চুপ করে রইল জামিল। বোধহয় মনেমনে কথাগুলি গুছিয়ে নিল। তারপর আরম্ভ করল।
— এটা দেখে আমাদের কী লাভ হবে, মাহা? আমরা কি সমুদ্রে বাস করি? নাকি ডিম পাড়ি? মাঝরাতে এ দেখে আমরা কী শিখব, আমাকে বোঝাও তুমি।
— আহা, সবকিছু থেকে শিখতে হবে, এমন ভাবার দরকার আছে? এইটা জাস্ট ফর ফান।
— ফান?
— হ্যাঁ জামিল। কেমন ফান হবে একবার ভেবে দেখো তো!
আসন্ন ফানের কথা ভেবে মাহার মুখ আরেক দফা ঝলমল করে উঠল। বাকিরা নিশ্বাস বন্ধ করে জামিলের উত্তরের অপেক্ষায় রইল।

কাটাকাটাভাবে মাহাকে নিয়ে পড়ল এবারে জামিল
— শোনো মাহা।
— বলো জামিল।
— তুমি ফানের জন্য পাহাড়ের চূড়ায় যেতে চাও, সমুদ্রের তলায় যেতে চাও। আমার কোনো আপত্তি নাই। আমি এসে তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তাই বলে মাঝরাত্রে আমাদের কচ্ছপের ডিম পাড়া দেখতে হবে জাস্ট বিকজ ইউ থিঙ্ক ইট ইজ ফান ইজ এবসোলিউটলি নট পসিবল। ওরা ডিম পাড়ুক ওদের মতো, তুমি আমি কেন অন্ধকারে সেটা দেখতে যাব?
— কিন্তু জামিল… মাহা আবার চেষ্টা করল।
— মাহা! তুমি যদি আরেকবার কচ্ছপ আর ডিম এ শব্দ দুইটা উচ্চারণ করো তাহলে আমাকে আর দেখতে পাবে না বলে দিলাম। তখন তোমার কচ্ছপের সাথে সংসার পেত নাহয়!
মাহা বুঝল জামিলকে বলে কোনো লাভ নাই। মিনমিন করে বলল
— অলরাইট জামিল।
— দ্যাটস এ গুড গার্ল। এখন বলো কোথায় যেতে চাও।
— শপিং!
— শপিং? কচ্ছপের ডিম থেকে সরাসরি শপিং?
— হু। মা বাবা আর তোমার দুই বোনের জন্য শপিং করতে হবে না?
— ওরা গত বছরই ঘুরে গেল। একগাদা জিনিস কিনল তখন। আবার ওদের জন্য শপিং করার দরকার আছে?
— যাহ! সেটা তো গত বছরের কথা। আর এটা এ বছর। আমি খালি হাতে ফিরলে ওরা মাইন্ড করবে না?
বড়সড় একটা নিশ্বাস ফেলল জামিল।
— ওকে আসছি আমি। করো তোমার শপিং।
ফোন কেটে দিয়ে বিজয় আনন্দে সবার দিকে তাকালো মাহা
— জামিল ইজ টেকিং মি টু শপ। হি হেটস শপিং!

রিক যাকে বলে খানিকটা আতংকিত হয়ে গেল। বিয়ে মানেই দেখি বিরাট একটা ঝক্কি। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এসব করতে হবে নাকি? রোমান্টিক সাজো! শপিং করো! ইচ্ছা না থাকলেও এসব কাজ করতে হবে। এ তো দেখি বিয়ে কম, পানিশমেন্ট বেশি!
কিছুক্ষণের মধ্যে জামিল এসে মাহাকে নিয়ে চলে গেল। সাফাত আর জেরিনকে দেখে বোঝা গেল ওরা একসাথে সময় কাটাতে চাইছে। পারি বলল ওকে হোটেলে নামিয়ে দিতে।

বিকেলের মধ্যে পারিকে ওর হোটেলে নামিয়ে দিয়ে সাফাত আর জেরিন গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে গেল। রিক নিজেও আলাদা হয়ে গেল। একবার ভেবেছিল পারিকে অফার দেবে একসাথে শহরটা পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে। কিন্তু পারি ওকে সে সুযোগটা দিল না। হোটেলে পৌঁছেই এত তাড়াআড়ি গাড়ি থেকে নেমে গেল, বিদায় জানাবারও প্রয়োজনবোধ করল না।
রিক নিজে একাএকা ঘুরে বেড়াতে লাগল। এ শহরে সে আগেও এসেছে বন্ধুদের সাথে। তখন খুব ভালো লেগেছিল। এবারেও লাগছে কিন্তু সাথে কেউ থাকলে ভালো লাগত। একাএকা ঘুরে কি মজা পাওয়া যায়?
কিছুক্ষণের মধ্যে সন্ধ্যা নেমে এল। রাতের শহর জমে উঠল। রেস্তোরায় রেস্তোরায় ভীড় বাড়তে লাগল। রিক ফিরে এল ফিফথ এভিনিউ এ। একটা রেস্তোরায় ঢুকে ডিনারটা সেরে ফেলবে নাকি ভাবছে, দেখে পারি সামনের রেস্তোরায় একটা খালি টেবিল দখল করে বসে রয়েছে, ওকে দেখেনি। কেমন সন্দেহ হল রিকের। পারিজাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন কারও অপেক্ষায় রয়েছে। পরণের পরিপাটি ড্রেস, চুল, সাজগোজ তাই বলে দিচ্ছে। নার্ভাস ভঙ্গীতে টেবিলে আঙুল ঠুকছে, এক একবার করে হাত দিয়ে চুল ঠিক করছে।

কী মনে হতে রিক উল্টাদিকের রেস্তোরায় টেবিল নিয়ে বসল, ডিনার অর্ডার করল। ও দেখতে চায় পারিজা কার সাথে দেখা করতে এসেছে। এমন না যে ওর কিছু এসে যায় তাতে কিন্তু পারিজার চেহারায় অদ্ভুত এক বিষণ্ণতার ছাপ রয়েছে যেটা রিককে আঘাত করল। মেয়েটা এমনিতে হাসে কম কিন্তু ওকে ডিপ্রেসড কখনো মনে হয়নি। রিক ভেবেছিল পারিজা রিজার্ভড, কম কথা বলে। তাহলে বিষণ্ণ কেন?
কিছুক্ষণের মধ্যে লম্বা পাতলা এক মধ্যবয়সী পুরুষ এসে পারিজার টেবিলে দাঁড়াল। অবাঙালি। পারিজা উঠে ওকে জড়িয়ে ধরল। দেখে মনে হল দুজনের ঘনিষ্ঠ পরিচয় রয়েছে। ওরা খাবারের অর্ডার দিয়ে কথায় ডুবে গেল। রিক একটু আড়াল বেছে টেবিল নিয়েছিল। সেখান থেকে দুজনকে লক্ষ্য করতে থাকে। দুজনে গম্ভীর মুখে কথা বলতে বলতে একসময়ে লোকটা হাত বাড়িয়ে পারিজার একটা হাত নিজের মুঠায় নিতে ওর অনামিকায় সোনার ওয়েডিং ব্যান্ড চোখে পড়ে গেল রিকের। চমকে গেল রিক। এর মানে কী?

ওরা ঝটপট খাবার শেষ করে ফেলে উঠে দাঁড়াল। পারিজা আবারও ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে বিদায় জানালো। তারপরে কোনোদিকে না তাকিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেল যেন সেই মুহূর্তে ওকে সেখান থেকে সরে যেতে হবে। ছেলেটা কী যেন ভাবল, তারপরে সেও উল্টাদিকে রওনা দিল।
রিক আশ্চর্য হয়ে বসে রইল।

(চলবে)মন নিয়ে (পর্ব ৮

পরদিন সকালে উঠতে একটু দেরীই হয়ে গেল পারির। ঘড়িতে তখন সাড়ে আটটা বাজে। সর্বনাশ করেছে। একটু পরেই ডাইনিং ক্লোজ করে দিবে। ঝটপট উঠেই বাথরুমের দিকে দৌড় দিল পারি।
হাত মুখ ধুয়ে ডাকাডাকি করতে আরম্ভ করে দিল— জেরিন! জেরিন! গেট আপ।
কোনো উত্তর নাই। জেরিন রুমেই নাই। আশ্চর্য তো। গতরাতে ফিরতে বেশি দেরী করেনি। এসেই শুয়ে পড়েছিল। বলছিল খুব টায়ার্ড লাগছে। এখন গেল কই জেরিন?
অপেক্ষা না করে পারি ডাইনিং এর দিকে রওনা দিল। ততক্ষণে ডাইনিং প্রায় ফাঁকা হয়ে এসেছে। ঝটপট একটা বেগল টোস্ট করে ক্রিম চিজ লাগিয়ে খেয়ে নিল। চা নিয়ে বসল কিন্তু খেয়ে আরাম হল না। গতরাতের পর মন মেজাজ কেমন খাপ্পা হয়ে আছে। যা দেখছে, যা খাচ্ছে তাই বিরক্ত লাগছে।

উঠে পড়ল পারি। রিসেপশানে গিয়ে পিরামিড ট্যুরের খোঁজ নিতে নিতে জেরিনকে ফোন দিল। জেরিনের ফোন সুইচড অফ। এদিকে রিসেপশান থেকে ওকে জানালো প্রথম ট্যুর বাস কেবলি ছেড়ে দিয়েছে। পরেরটা সেই বারোটায়।
সত্যি, একেকটা দিন যেন কুফা দিয়ে শুরু হয়। বিরক্তি নিয়ে হোটেল থেকে বের হতেই সামনে এক গাড়ি ঘ্যাঁচ করে থেমে গেল। দরজা খুলে বেরিয়ে এল রিক। কালো সানগ্লাস নামিয়ে প্রশ্ন করল

— হাই। হ্যাভ ইউ সিন সাফাত?
— নো।
— আই ক্যাননট ফাইন্ড হিম।
— আই ক্যানট ফাইন্ড জেরিন আইদার। ফোনেও পাচ্ছি না।
— আমিও তো না।
এতক্ষণে পরিষ্কার হয়ে গেল সবকিছু। বিরক্ত হল রিক
— তারমানে ওরা দুজনে একসাথে বেরিয়েছে। ফাইন। বলে গেলে কি হয়?
— সেটা তো আমারও কথা।
ওকে ভালোভাবে লক্ষ করল রিক
— ইউ লুক লাইক ইউ আর ইন এ ব্যাড মুড। ইজ এভ্রিথিং ওকে?
— আই নিড টি। দুইদিন ধরে এদের ট্যালটেলে চা খেয়ে মাথা ধরে আছে।

মাথা তো ধরবেই। লুকিয়ে একজন ম্যারিড লোকের সাথে গদগদ হয়ে ডিনার করলে যে অপরাধবোধ হয়, তার ফলাফল হচ্ছে মাথাব্যথা। মুখে বলল
— কাম উইথ মি দেন। টি শপে যাই। ওখানে অনেক ধরণের চা পাওয়া যায়। তোমার পছন্দ হবে।

গাড়িতে গিয়ে উঠল পারি। চা না খেলে ও মাথা ব্যথায় মরে যাবে। দিনটাই মাটি হবে। আজকে তো শেষ দিন। আজকে পিরামিড না দেখলে আর কি দেখা হবে?
লার্জ হানি জিঞ্জার এনার্জাইজিং টি তে চুমুক দিয়ে গভীর তৃপ্তির শ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করল পারি। কীসব শুকনো হার্ব দিয়েছে চায়ে। চুমুক দেয়ামাত্র শরীর মন চনমনে হয়ে যাচ্ছে। খুব দরকার ছিল এটার।
— গুড?
চোখ খুলে মৃদু হাসল পারি।
— আই রিয়েলি নিডেড দিস। থ্যাঙ্ক ইউ।
— নো প্রবলেম।

কিছুক্ষণ দুজনে চুপ। রিকই একসময়ে নীরবতা ভাঙল।
— কী প্ল্যান ছিল তোমাদের আজ?
মুখ বিকৃত করল পারি।
— প্ল্যান পুরা পানিতে পড়ে যাচ্ছে মনেহয়।
— কেন?
— জেরিনের সাথে চিচেন ইতসার পিরামিড দেখার কথা ছিল। এখন জেরিন নাই। ট্যুরের বাস এইমাত্র ছেড়ে দিল। পরের বাস ১২টার সময়। এখন ১২টা পর্যন্ত বসেবসে আমাকে মাছি মারতে হবে।

রিক এক দৃষ্টিতে পারিকে লক্ষ করতে থাকে। তাহলে গতরাতের ম্যারিড লোকটার সাথে কোনো প্ল্যান নাই যা বোঝা যাচ্ছে। কেন জানি পুরা ঘটনাটা রিককে খুব বিচলিত করছে। কেন করছে সেটার জন্যও রিক মনেমনে বিরক্ত হচ্ছে। পারিজা একটা এডাল্ট মেয়ে। ও কী করল না করল সেনিয়ে ভাববার কোনো দরকার আছে?
— কারণ তুমি মেয়েটার প্রতি আকৃষ্ট, বুদ্ধু! রিকের মন ওকে জানালো।
ভীষণ বিরক্ত হল রিক।
— ইম্পসিবল! আই এম জাস্ট কিউরিয়াস, দ্যাটস অল।
— জাস্ট কিউরিয়াস! এজন্য সকালেই দৌড়াতে দৌড়াতে চলে এসেছ, না? আর এখন ওর মাথাব্যথা শুনে চায়ের দোকানে নিয়ে এলে! ওর মাথাব্যথা তো তোমার কি?
— লোকের উপকার করব না? আশ্চর্য কথা বলছ তুমি, মিন মাইন্ডেড একটা!
— উপকার করছ? আচ্ছা, করো গে উপকার!
— শাট আপ!

— আমার সাথে যেতে পার। কেউ যেন রিককে দিয়ে বলিয়ে নিল।
পারির চেহারায় বিস্ময় ফুটে উঠল। তাড়াতাড়ি নিজেকে শুধরে নিল রিক।
— মানে আমি চিচেন ইতজার দিকেই যাচ্ছি। তুমি আসতে পার। সময়ও বাঁচবে তাহলে।
— তোমার সাথে? কেমন আড়ষ্ট হয়ে গেল পারি।
কেন, ওর সাথে গেলে অসুবিধা আছে? নাকি বিবাহিত না বলে ওর কোনো ভ্যালু নাই?
— হ্যাঁ, আমার সাথে। অসুবিধা তো নাই। দুজনে একদিকেই যাচ্ছি যখন। নাকি ভয় পাচ্ছ?
ভ্রূ কুঁচকে গেল পারির।
— ভয় পাব কেন?
— ভাবছ আমি তোমাকে কিডন্যাপ করব!
— কিডন্যাপই বা করবে কেন?
— বলিদান করার জন্য।
— বলিদান? কী আবোল তাবোল বকছ। মাথা ঠিক আছে তোমার?
— মাথা ঠিক থাকবে না কেন? চিচেন ইতজা পিরামিডে একসময়ে নরবলি দেয়া হত, জানো না বুঝি?
— হত নাকি?
— হত তো!
— সে তো অনেক আগের কথা। তুমি হঠাত আমাকে বলি দিতে যাবে কেন?
— আচ্ছা বাদ দাও। আই ওয়াজ জাস্ট জোকিং। এখন ওঠো।
— কই যাব?
— আহ! বললাম না আমার সাথে চলো চিচেন ইতসায়। খামাখাই বারোটা পর্যন্ত বসে থাকবে কেন?

একটু ভাবল পারি। রিক যা বলছে, ঠিকই বলছে। অযথা সময় নষ্ট না করে এখন রওনা দিলে হাতে সময় নিয়ে ঘোরা যাবে।
— আর ইউ শিওর?
— শিওর না তো কি? এমনি এমনি বলছি নাকি? শোনো, তোমার যদি কথা না বলতে ইচ্ছা করে তো বোলো না। কথা বলতেই হবে এমন কোনো কথা নাই।
পারির বিস্ময় উত্তরোত্তর বাড়ছিল।
— কথা বলতেই বা ইচ্ছা করবে না কেন?
— অনেক সময় তো করে না। রিক নিজের ওপরে এত বিরক্ত হচ্ছিল যে বলবার না। এসব কী বলছে ও?
— চল রওনা দেই তাহলে। উঠে দাঁড়াল পারি। এ আজব কথোপকথন আর বাড়িয়ে লাভ নাই। চিচেন ইতজা দেখতে পেলেই হল ওর। গাড়িতে একদম চুপ করে বসে থাকবে নাহয়।

গাড়িতে উঠে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল পারি। খুব গরম পড়েছে আজ। শহর পার হতেই কেমন একটা গ্রাম গ্রাম পরিবেশ হয়ে গেল। ছাড়াছাড়াভাবে দুই একটা বাড়ি। চাকচিক্যহীন। হুট করে কয়েকটা ছিরিছাদহীন দোকান। বেশিরভাগ হাতে তৈরী জিনিস বিক্রি করছে। ব্যাগ, কাঠের কাজ করা ডেকোরেশান, আয়না, ড্রিম ক্যাচার, মায়া ক্যালেন্ডার, বাঁশি। আরও রয়েছে নানান আকৃতির ঝুড়ি মতো দেখতে জিনিস যা মূলত ঝুলিয়ে ঘরের শোভাবর্ধন করা হয়। ঝিনুকের তৈরী জিনিসও রয়েছে।
পাশে বসে গাড়ি চালাতে চালাতে রিক এক একবার করে পারিকে আড়চোখে দেখে নিচ্ছিল। কথা না বলতে চাইলে বলার দরকার নাই— এটাকে পারিজা এত সিরিয়াসলি নিবে ভাবেনি। নাকি সে গতরাতের ঐ বিবাহিত লোকটি না, সেজন্য পারিজার মুখে বোল ফুটছে না।
ঘ্যাঁচ করে গাড়ি থামালো রিক। ড্যাশবোর্ড ধরে নিজেকে সামলালো পারি।
— কী হয়েছে?
— একটা হ্যাট কিনব। যে গরম।
— ওহ, এখানে হ্যাট কই পাবে?
— ঐ তো হ্যাট নিয়ে বসে রয়েছে একটা লোক। তুমি নামবে না?
— না, তুমি কেনো।
— ওকে দেন।

গাড়ি থেকে নেমে পড়ল রিক। ইচ্ছা করে সময় নিয়ে হ্যাট দেখতে থাকে, দোকানের লোকটার সাথে কথা চালিয়ে যায়।
গাড়ির গরমে সিদ্ধ হতে থাকে পারি। একসময়ে না পারতে বেরিয়ে আসে। হ্যাটের দোকানের পাশেই পরপর তিনটা হ্যান্ডিক্র্যাফটস এর দোকান। একটায় গিয়ে ঢুকল পারি। এটাসেটা দেখতে থাকে। অল্পবয়সী একটা মেয়ে কোলে বাচ্চা নিয়ে পাশে এসে দাঁড়ায়।
— ওলা কোমোস্তা।
বুঝল মেয়েটাই দোকান চালাচ্ছে। পারি আসলে কিছু কিনবে বলে ঢোকেনি, স্রেফ সময় কাটাচ্ছিল। কিন্তু এখন কিছু না কিনে বের হয়ে যেতেও খারাপ লাগছে।
হঠাত চোখে পড়ল কাউন্টারের ওপরে জুসের বোতল। আনারসের। তাজা আনারসের জুস কেনা যায়। যে গরম, একটু পরেই পানির পিপাসায় জান বের হয়ে যাবে।
বড়ো সাইজের জুসের বোতল দুইটা তুলে নিল পারি।— হাউ মাচ?
মেয়েটা যা বলল কিছু বুঝতে পারল না পারি।
— নো ইংলিশ?
— সি।

বিপদে পড়ে গেল পারি। আঙুল দিয়ে জুসের বোতল দেখিয়ে আবার প্রশ্ন করল
— হাউ মাচ?
মেয়েটা কী বলল এবারেও বুঝতে পারল না পারি।
— পারিজা।
হাতে হ্যাট নিয়ে রিক দোকানে এসে দাঁড়িয়েছে।
অসহায়ের মতো তাকালো পারি।— আমি এ দুইটা জুসের বোতল কিনতে চাইছি। একটু জিজ্ঞেস করবে কত দাম চায়?
রিকের স্প্যানিশ কাজ চালানোর মতো। সে মেয়েটির সাথে দামদর করে পকেটে হাত ঢুকাতে গেলে পারি বাধা দিয়ে উঠল।
— আই উইল পে।
— অসুবিধা নাই। আমার কাছে চেঞ্জ আছে।
— ওকে। বাট লাঞ্চ ইজ অন মি।
— তুমি লাঞ্চ খাওয়াতে চাও?
— হু। সব জায়গায় তুমি দাম দেবে কেন? লাঞ্চ আমি খাওয়াবো।
— ইফ ইউ উইশ, পারিজা।
— ডোন্ট কল মি পারিজা।
— দেখো, ভুল ডাকার চেয়ে কিছুটা শুদ্ধ ডাকাই ভালো না?

পারি জবাব দিল না। যা খুশি তাই বলুক গে। কেন যেন মনে হচ্ছে আজ না এলেই ভালো হত। কিন্তু এখন টু লেট। ফিরে যেতে চাইলে রিক ওকে বদ্ধ উন্মাদ ভাববে। কিন্তু কেন যেন মন বলছে আজ কিছু একটা গোলমাল হবে।
আধা ঘন্টার মধ্যে ওরা চিচেন ইতজায় পৌঁছে গেল। ঢোকার মুখে টিকিট কাটতে হয়। ভিতরে ঢুকেই রিক প্রশ্ন করল
— আগে কিছু খেয়ে নেবে?
পারি অন্যমনস্ক হয়ে ভাবছিল। কেমন চমকে গেল
— আর ইউ ওকে?
ফ্যাঁকাসে হাসল পারি।
— আই এম পার্ফেক্টলি ফাইন।
— মনে হচ্ছে তুমি কিছু নিয়ে চিন্তিত।
— একেবারেই না। খাবার কথা বলছ? আগে দেখে নিব না?
— অনেক হাঁটতে হবে কিন্তু। এ রোদের মধ্যে অতখানি হাঁটলে আধমরা হয়ে যাবে। বরং খেয়েই নেই আগে, কি বলো?
নিঃস্পৃহস্বরে উত্তর দিল পারি
— তাহলে আগে খাই চল।

একটাই রেস্তোরা। খাবার মেনুও লিমিটেড। পিজ্জা অর্ডার দিল ওরা। অপেক্ষা করতে করতে পারি প্রশ্ন করল
— তুমি কিভাবে জানলে অনেক হাঁটতে হবে?
— আমি গ্র্যাজুয়েশান শেষ করে বন্ধুদের সাথে এখানে এসেছিলাম। তখন দেখেছি।
— তাহলে এটা তোমার সেকেন্ড ভিজিট?
— হু।
— তুমি রিয়েলি সাফাতকে সাপোর্ট করতে এতদূর এসেছ?
— হু।
— ওয়াও। আজকাল কে করে এমন?
অপ্রস্তুত হল রিক
— ইটস নাথিং।
— পিরামিড দেখে কেমন লেগেছিল?

পারির কৌতূহল দেখে রিকের কেন যেন ভালো লাগছে। এতক্ষণ মুখে তালা ঝুলিয়ে ছিল। এখন অন্তত কথা বলছে, ওর সম্বন্ধে জানতে চাইছে।
— সত্যি কথা জানতে চাও?
— মিথ্যা কথা জানতে চাইব কেন? পারি তীর্যকভাবে প্রশ্ন করল।
— নাহ থাক, বলব না।
— আশ্চর্য ব্যপার। বলবে না কেন?
— নিজের চোখে দেখ, তারপর বলব। তোমার সারপ্রাইজ নষ্ট করতে চাই না।
ওদের পিজ্জা চলে এল। এক কামড় দিল পারি।
— পিজ্জা বেশি ভালো না।
— তা না। কিন্তু এটাই এভাইলেবল। কী আর করা যাবে, বলো।
হুট করে একটা কথা মনে এল পারির।
— তুমি অনেক ইজিগোয়িং না?
— খামোখা জীবন জটিল করে লাভ আছে? ইজিগোয়িং হওয়াই কি ভালো না?
একটা ছায়া নেমে এলো পারির মুখে।
— না, লাভ নাই এটা ঠিক।

নিজেকে থাপড়াতে ইচ্ছা করল রিকের। কী সুন্দর কথা বলছিল পারিজা, দিল ওর মুড খারাপ করে। নিশ্চয় ঐ লোকটার কথা মনে পড়ে গেছে ওর। তাড়াতাড়ি অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল
— এখানেও একটা সিনোটি আছে কিন্তু। তবে অনেক পুরানো।
— সত্যি?
— হুম। সিনোটিতে অনেক কিছু পাওয়া গেছে।
— কী?
— যখন দেখবে তখন বলব। আগে বললে সারপ্রাইজ নষ্ট হয়ে যাবে।
— আবার এক কথা? ফিক করে হেসে ফেলল পারি।

মেয়েটার হাসিটা দেখি অসম্ভব সুন্দর, ভাবল রিক। হাসে না কেন ও? যতদূর মনে পড়ছে, এই প্রথম ওকে হাসতে দেখছে। অথচ হাসলে ওর চেহারা ঝলমল করে ওঠে যেন।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here