মন পাড়ায় পর্ব ২৭+২৮

#মন_পাড়ায়
#পর্ব_২৭
#নিলুফার_ইয়াসমিন_ঊষা

ঝিনুকের কথা উঠলে ভাইয়া সব কিছু ভুলে যায়। সব। আমার ভীষণ ভয় হচ্ছে।”

অর্ক প্রভার হাতের উপর হাত রেখে বলল, “ভয় কর না। পরিশ আসলে আমি ওকে বুঝানোর চেষ্টা করব।”

প্রভা অর্কের হাতের দিকে তাকালো। চোখ নিচে নামিয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলল, “আরেকটা কথা ছিলো আপনার সাথে।”

“বলো।”

প্রভা একগাল হাসি দিয়ে তার সে হাতটা ধরেই তাকে রুমে নিয়ে যায়। আলমারির সামনে দাঁড় করিয়ে বলে, “চোখ বন্ধ করুন এখন।”

অর্ক কিছুই বুঝল না, হাসলো কেবলমাত্র। জিজ্ঞেস করল,”কেন?”

“করুন তারপর বলব।”

“আগে বলো কেন তারপর চোখ বন্ধ করব।”

প্রভা তার পায়ের পাতার আঙ্গুলে ভর দিয়ে একটু উঁচু হলো। অর্কের চোখের উপর হাত রেখে বলল, “আপনার জন্য উপহার আছে তাই।” বলেই মিটিমিটি হাসলো। আলমারি খুলতে নিলেই আচমকায় অর্ক তার কোমরে হাত দিয়ে তাকে কাছে টেনে নিলো। প্রভা শিউরে ওঠে মুহূর্তের মধ্যে। অর্ক আর কখনোই তাকে এমন ভাবে হাত লাগায় নি। তার দেহে অর্কের স্পর্শ পেতেই প্রভা স্তব্ধ হয়ে গেল। সাথে সাথে অর্কের চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে পিছাতে নিলো। কিন্তু পারলো না। অর্ক তাকে জড়িয়ে রেখেছিলো। তার নিশ্বাস একমুহূর্তে প্রচুর ভারী হয়ে যাচ্ছিলো অন্য মুহূর্তে যেন আটকে আসছিলো।

অর্ক প্রভার দিকে তাকাতেই দেখে প্রভা কাঁপছে রীতিমতো। কাঁপছে তার চোখের পলক, তার ঠোঁট, সে নিজে সম্পূর্ণ কাঁপছে। সে নিজে যেন লজ্জার আভায় ঢেকে যাচ্ছিল। প্রভা কিছু বলতে চাচ্ছিলো বোধহয় পারছিলো না। এই লজ্জার আভায় যেন আরও বেশি নেশা রয়েছে। আর অর্ক সে নেশায় ডুবে যাচ্ছে। অর্ক প্রভার কোমর আরও শক্ত করে জড়িয়ে তাকে ঘুরিয়ে আলমারিতে পিঠ ঠেকায়। চোখে চোখ রেখে বলে, “ভেবে উপহার দিবে কিন্তু। উপহার অপছন্দ হলে আমি নিজ থেকে আমার পছন্দের উপহার আদায় করব।”

প্রভা চেয়েও চোখ সরাতে পারছিলো না অর্কের নেশাভরা চোখজোড়া থেকে তার মনে হচ্ছিলো তার হৃদয়ের স্পন্দন ঠিক এই মুহূর্তেই আটকে যাবে। সে বহু কষ্টে নিজের চোখ নামিয়ে বলল, “আপনি এত….এতটা কাছে থাকলে আমি কীভাবে আপ…আপনাকে উপহার দেখাব?”

“প্রথমে বলো তোমার উপহার আমার পছন্দের না হলে আমি আমার উপহার আদায় করতে পারব?”

প্রভা নিজের শাড়ির আঁচলটা আঁকড়ে ধরে বলল, “কীসের উপহার?”

অর্ক তার হাতের আঙুলগুলো প্রভার কোমর থেকে পেট পর্যন্ত ছুঁয়ে দিতে দিতে বলল, “আমি যা চাইব।”

প্রভা যেন সেখানেই বরফ হয়ে গেল। তার কাঁপুনিও বন্ধ হয়ে গেল। সাথে ভয়ও লাগতে শুরু করল। অর্ক কী চাইবে তার কাছে? সে কিছু বলতে চাইলো, পারলো না।

অর্ক মৃদু হেসে তার কাছ থেকে সরে আলমারি খুলে বলল, “আমি কফির কথা বলছিলাম। তুমি কী ভেবেছ?”

প্রভা আচমকায় অর্কের দিকে তাকিয়ে মাথা নামিয়ে নিলো। সে চোখ বন্ধ করে গভীর নিশ্বাস ফেলল।

অর্ক আলমারি থেকে একটি বাক্স পেল। বাক্সটা খুলে সে হতবাক। প্রভার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কোথায় পেয়েছ এইটা?”

প্রভা আড়চোখে তাকালো অর্কের দিকে। আবার চোখ নামিয়ে বহুকষ্টে বলল, “দাদির রুমে বাথরুমের উপরের স্টোর রুমে। ভায়োলিনটা দে….দেখে আপনার কথা মনে পড়লো। এইটা আপনার ছোটবেলার ভায়োলিন ছিলো। আপনার মা……”

প্রভা হঠাৎ করে চুপ হয়ে গেল। অর্ক তার হাতটা ধরে তাকে কাছে টেনে নিলো। জড়িয়ে ধরলো তাকে বুকে। সে আবারও হতবাক। সে অর্ককে সরানোর চেষ্টা করতেই অর্ক বলল, “আজ আমি আমার মা’য়ের দেওয়া সবচেয়ে মূল্যবান উপহারটা ফিরে পেয়েছি শুধু তোমার জন্য। আমি এই ভায়োলিন দেখে মন খারাপ করতাম বলে দাদিমা এইটা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে। হয়তো আমি অনেক বড় হয়ে গেছি কিন্তু আজও এইটা আমার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান উপহার।”

প্রভা অর্কের ভেজা কন্ঠ শুনে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর অর্কের যে হাতে তার ভায়োলিন ছিলো সে হাতের উপর আলতো করে হাত ছোঁয়াল। মৃদু কন্ঠে বলল, “এক প্রিয় বসন্তে আপনার ভায়োলিনের সুর শুনার ইচ্ছে আছে।।”

“অনেক বছর হয়ে গেছে বাজিয়েছি। এখন আর পারব কি’না জানি না। আর এইটা এখন আমার জন্য অনেক ছোট। তোমার ইচ্ছে পূরণ করাটা কষ্টসাধ্য।”

“অসম্ভব তো নয়। আমি নিশ্চিত আপনার মা তার আদরের ছেলেকে আবারও তার প্রিয় ধ্বনি বাজাতে দেখে খুশি হবে। আর এখনো বসন্তের দেরি আছে।”

অর্কের হাসার শব্দ অস্পষ্ট শোনা গেল। কান্নামাখা হাসির শব্দ বলতে কিছু আছে কী?

অর্ক প্রভার চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “তোমার প্রিয় বসন্তের অপেক্ষা থাকবে এইবার……”
.
.
ভার্সিটির ছাদ তাদের আড্ডার বিশেষ এক স্থান। এইখানে কারো আসাটা বারণ। কিন্তু তাদের আড্ডাটা বেশিরভাগ এইখানেই বসে। আজও নীরা, ইকবাল ও সৈকত বসেছিলো ছাদের এক কোণে। নীরা পায়চারি করছে তাদের সামনে। রাগান্বিত দেখাচ্ছে তাকে ভীষণ। সে সৈকতকে বলল, “মানে তুই চাচ্ছিস আমি ওকে বলি যে ও ওই জ্যোতির কথায় রিয়াক্ট না করে আর কিছু না বলে জ্যোতির বিরুদ্ধে? তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?”

উওরটা সৈকতের জায়গায় ইকবাল দিলো। সে বলল, “তো আর কী বলবে ও? একটু ভেবে দেখ জ্যোতির মতো ডেস্পারেট মেয়ে ঝিনুকের কোনো ক্ষতি করবে না?”

“কিন্তু এমনটা করলে ঝিনুক জ্যোতির কাছে ছোট হয়ে যাবে।”

“ওর জীবন বেশি গুরুত্বপূর্ণ না ইগো? জ্যোতি গতবার সৈকতের জন্য কী করেছিলো তুই ভুলে গেছিস? শী ইজ মেন্টালি সিক ম্যান! আর এমন না করলে যে কারণে সৈকত জ্যোতির সাথে দেড় বছর ধরে আছে তা শেষ হয়ে যাবে।”

“আর ঝিনুকও জেনে যাবে বিনয় ও নূহার কাহিনী। ও সহ্য করতে পারবে না।” সৈকত আকাশের দিকে তাকিয়ে উদাসীন মনে বলল।

“ঝিনুক যথেষ্ট স্ট্রং আছে।” নীরা সৈকতের কথা অমান্য করে বলল। সৈকত বলল, “ও শুধু বাহির থেকে নিজেকে স্ট্রং দেখায় কিন্তু ও মোটেও এতটা স্ট্রং না। কারো কথায় কখনো সে কেমন তা ধরে নিতে নেই। কে আসলে কেমন তা অনেক সময় নিজেও জানে না। তোর কী মনে হয় ওকে কেন জানানো হয় নি যে বিনয় ও নূহা অবৈধ সম্পর্কে ছিল বা প্রভা ভাবি ও বিনয়ের ডিভোর্সের কথা হচ্ছিল। ওর পরিবার নিশ্চয়ই ওর খারাপ চায় নি এইজন্য।”

“কিন্তু এতে জ্যোতির আরও বেশি করতে শুরু করবে।”

“ভুল। ঝিনুক জবাব না দিলে জ্যোতি এক দুইবার চেষ্টা করে থেমে যাবে৷ আমি জ্যোতিকে প্রথমদিন বুঝানোর চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ও আরও বুঝেছে যে আমি এখনো ঝিনুককে ভালোবাসি এই ভেবে ও ঝিনুকের পিছনে আরও পরেছে। তাই আমি কিছু বলতেও পারছি না।”

“করতে পারছিস না নাকি চাচ্ছিস না?”

ইকবাল চোখে মুখ কুঁচকে ক্ষোভ নিয়ে বলল, “আর ইউ সিরিয়াস নীরা? তুই জানিস না ও যা করছে সব ঝিনুক ও প্রভা ভাবির জন্য করছে? আরও তখন থেকে যখন সে জানতো যে ও ঝিনুককে পাবে না। শুধু ভাগ্যের জোরে ও ঝিনুককে নিজের করে পেয়েছে।”

“আমি সবই জানি কিন্তু এইসব আর ভালো লাগে না। কবে শেষ হবে এইসব?”

সৈকত বলল, “যখন মিঃ অর্ককে প্রমাণ দেখাতে পারব যে দুইটা মানুষের জন্য উনি প্রভা ভাবির জীবনটা নষ্ট করে দিচ্ছে সে দুইটা মানুষই তার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করেছে।”

নীরা কিছু বলতে যাবে আর তার ফোনে একটা মেসেজ এলো। সে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে মেসেজটি। সে বলল, “ঝিনুক মেসেজ দিয়েছে।”

“কী লেখা?”

নীরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “ও নবীন বরণের জন্য নাচে নাম দিয়েছে।”

সৈকত বিরক্তি নিয়ে বলল, “এই মেয়ে সবসময় উল্টা কাজ করে কেন?”

নীরা ফোনটা পকেটে রেখে বলল, “ও ঠিক কাজই করছে। তোরা শুধু উল্টা ভাবছিস। আমি ওর কাছে যাচ্ছি।”

ইকবাল কপালে হাত রেখে বলল, “এই মেয়েগুলোকে বুঝা এত কঠিন কেন? ওদের থেকে তো ম্যাথম্যাটিকসের প্রবলেম সলভ করা হাজারোগুণ বেশি সহজ।”
#মন_পাড়ায়
#পর্ব_২৮
#নিলুফার_ইয়াসমিন_ঊষা

অঞ্জলি বলল, “তুইও কম না ঝিনুক। জ্যোতি তোকে উল্টাপাল্টা কিছু বলে আর তুই লাফিয়ে লাফিয়ে বাঘের সামনে নাচতে যাস।”

“নবীন বরণে বাঘ আসবে?”

“মজা করছি আমি তোর সাথে? আমি জানি তুই গতকাল সৈকতকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথায় এমন রাগ করেছিস আর রাগে নিজের নাম দিয়ে আসলি ওর বিরুদ্ধে?”

“এইটা তোর ভুল ধারণা বাছা। এমন কিছু না। আমার মন চাইছে আর আমি নাম দিয়ে আসছি। ওই সৈকতকে নিয়ে জাহান্নামে যাক আমার কি?”

“তোর মন তাহলে আগে চায় নি কেন? তুই জানিস ও আসলে অনেক ভালো নাচ জানে? সাবেক প্রায়ই ওর নাচের প্রশংসা করতো।”

“কারণ আমি প্রশংসনীয় কাজ করি।”

ঝিনুক অঞ্জলির পিছনে তাকিয়ে দেখে জ্যোতি আসছে। সে বিরক্তি নিয়ে বলল, “আচ্ছা একটা কথা বলেন আমার মধ্যে কী চুম্বক লাগানো আছে? বারবার আপনি আমায় খুঁজে বের করেন কীভাবে?”

“তুমি আমার কাছে খুব বিশেষ যে তাই।”

ঝিনুক দীর্ঘশ্বাস ফেলে অঞ্জলির দিকে ঝুঁকে মৃদু কন্ঠে বলল, “বিশেষ দেখে বাঁশ দিতে আসছে।”

অঞ্জলি মিটিমিটি হাসলো ঝিনুকের কথা শুনে।

জ্যোতি আবারও বলল, “শুনলাম তুমি নাকি নাচে নাম দিয়েছ?”

“আপনার অনেক আফসোস হচ্ছিলো কেউ আপনার বিরুদ্ধে নাম দেয় নি বলে। আপনার আফসোস দেখে আমার আফসোস হলো। আফসোসে আফসোসে নাম দিয়ে এলাম।”

জ্যোতিকে প্রচন্ড বিরক্ত দেখালো। সে বলল, “ফাইজলামি করছ আমার সাথে?”

“শুরু কে করেছে?”

জ্যোতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে বলল, “একটা শর্ত রাখলে কেমন হয়? যে জিতবে সে পরাস্তজনকে যা করতে বলবে তার তা করতে হবে।”

“এইটা প্রতিযোগিতা না, কেবলমাত্র নাচ প্রদর্শন।”

“আমাদের জন্য প্রতিযোগিতা ধরতে সমস্যা কী? দর্শকবৃন্দের প্রতিক্রিয়া দেখে কে জিতেছে তা বোঝাই যাবে। চ্যালেঞ্জ কী এক্সেপ্ট করলে নাকি ভয় পাচ্ছো যে হেরে গেলে আমি কী করতে দেই তা ভেবে?”

ঝিনুক তাচ্ছিল্য হেসে বলল, “চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্টেড।”

অঞ্জলি আতঙ্কিত স্বরে বলল, “ঝিনুক না চিন্তা করে কি বলছিস? উনি তো এটাই চাইতো তাই উস্কানিমূলক কথা বলছে। প্লিজ এমন করিস না।”

ঝিনুক অঞ্জলির কথা শুনল না। জ্যোতিকে বলল, “তৈরি থেকেন পরাজিত হওয়ার জন্য।”

“দেখা যাবে।” বলেই জ্যোতি চলে গেল।

রুমটায় রয়ে গেল শুধু অঞ্জলি ও ঝিনুক। অঞ্জলি বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে ছিলো ঝিনুকের দিকে। নীরাও একটুপর ভিতরে ঢুকলো। তাকে একটু আগের কাহিনি বলার পর সে ঝিনুকের কাঁধে হাত রেখে বলল, “সাবাস একদম ঠিক করেছিস, নাহলে সাহস বেড়ে যাবে ওই জ্যোতি ফ্যুতির।”

অঞ্জলি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এদের সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই সে ভালোমতো বুঝেছে। এরা সহজে কথা বুঝার পাবলিক না।

নীরা অঞ্জলির দিকে তাকিয়ে বলল, “অঞ্জলি ওই চিন্টু ফিন্টুকে কল দেও তো।”

অঞ্জলি চোখ মুখ কুঁচকে বিস্মিত সুরে জিজ্ঞেস করল, “চিন্টু ফিন্টু কে?”

“মানে তোমার সাথে যে দুইটা কার্টুন থাকে না সবসময় ওই দুইজন।”

“আপনি অর্ণব ভাইয়া ও সাবেকের কথা বলছেন?”

“হ্যাঁ, ওদের কল দেও এই রুম খালি করার জন্য।”

অঞ্জলি কিছুই বুঝতে পারলো না। সে বলল, “খালি করার জন্য মানে?”

নীরা এক বেঞ্চে আরামে বসে পায়ের উপর পা তুলে বলল, ” বেঞ্চগুলো সরানোর জন্য। এইসব বেঞ্চ তো আর তুমি সরাতে পারবে না।”

“কিন্তু এগুলো সরানো লাগবে কেন?”

“কারণ তোমার সন্দেহ আছে সে ঝিনুক পারবে না কারণ তুমি ওর নাচ দেখোনি। তোমার আশঙ্কা দূর করব এইজন্য।”

অঞ্জলি একবার না করতে যেয়েও থামলো। অর্ণব ও সাবেককে ডেকে সবটা বলল। সাবেক একটা বেঞ্চ সরিয়ে বসে থাকলেও অর্ণবের না চাওয়া সত্ত্বেও করতে হলো কাজটা। তার ঝিনুককে প্রয়োজন। তাকে বুঝাতে হবে সে তাকে পছন্দ করে। এক না একসময় তাকে সৈকতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে।

রুমের মাঝখানটা খালি করে গান ছাড়া হলো,

যে পাখি ঘর বোঝেনা

উড়ে বেড়ায় বন বাদাড়ে

ভোলা মন মিছে কেন

মনের খাঁচায় রাখিস তারে

ও পাখি ছন্নছাড়া বাঁধন হারা

মানেনা প্রেমের শিকল

ও পাখি দশ দুয়ারে, শত মন করে দখল…..

ঝিনুক নাচ শুরু করতেই সবাই হতবাক। সাবেক, ঝিনুক ও অর্ণব প্রায় তিনমাস ধরে চেনে। ঝিনুকের মুখ থেকে আগে কখনো শুনে নি তার নাচের কথা, না আগে কখনো দেখেছে তার নাচ। কিন্তু আজ তারা দেখে মুগ্ধ। অঞ্জলি নীরার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি জ্যোতির নাচ না দেখেও বলতে পারব ওর জিততে ভারী কষ্ট হবে।”

সাবেক বলল, “দুইজনের ভালো টক্কর হইব। আমি পপকর্ণ নিয়ে যাব না সমুচা চিন্তায় আছি।”

অঞ্জলি বিরক্তি নিয়ে বলল, “এত বছরের সম্পর্ক অথচ এই ছেলের মুখে খাবার ছাড়া কিছুই শুনি নি আজ পর্যন্ত।”

“খাওন ছাড়া জীবন আছে না’কি? কী কস অর্ণব?” সাবেক অর্ণবের দিকে তাকিয়ে দেখল অর্ণব অপলকভাবে তাকিয়ে আছে ঝিনুকের দিকে।

সাবেক একবার ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে আবার অর্ণবের দিকে তাকালো। অর্ণব এক মুহূর্তের জন্যও তার চোখ সরাচ্ছে না ঝিনুকের নাচ থেকে। সাবেক তার দিকে ঝুঁকে জিজ্ঞেস করল, “তুই ঠিকাছিস দোস্ত?”

সে সময় গানে ‘পাখিটা হাসে খেলে অন্তরালে

সুনিপূণ করে কত’ পংক্তি চলছিল। অর্ণব তার বুকের বাঁ দিকে হাত রেখে বলল, “পাখিটা আমার অন্তরালে ক্ষত করে দিচ্ছে এমন সুনিপুণ হাসিতে।”

.

.

অর্ক দুপুরের খাবার খেতে বাসায় এসেছে। এসে দেখে বিনু তার ভায়োলিন নিয়ে খেলছে। বাজানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কিছু বুঝতে পারছে না। সে অর্ককে দেখে উঠে দাঁড়ালো। মুখটা ম্লান করে বলল, “সরি আংকেল। আমি এমনিতেই দেখছিলাম। আর করব না এমন প্রমিস।”

বলেই মাথা নিচু করে নিলো।

অর্ক হেসে এসে বসলো বিছানায়। বিনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “তুমি শিখবে?”

বিনুর চোখ ঝলমলে উঠলো। সে অর্কের দিকে তাকিয়ে একরাশ হাসি দিয়ে বলল, “আমি শিখতে পারব?”

“অবশ্যই। আসো আংকেল তোমাকে শিখাই।”

অর্ক বিনুর কাঁধে ভায়োলিনটা রেখে ছড়ি হাতে দিয়ে শেখাচ্ছিল।

প্রভা গোসল করে বের হলো বাথরুম থেকে। বের হতেই এমন দৃশ্য দেখে সে মৃদু হাসলো। তাকিয়ে রইলো দৃশ্যটির দিকে।

সে জানে বয়স হিসেবে বিনুর বুদ্ধি বেশি। মাঝেমধ্যে অদিন বিনয়কে নিয়ে কাঁদলেও কখনো বিনু তার সামনে কিছু বলে না। হয়তো জানে যে বললে তার মা’য়ের মন খারাপ হবে এইজন্য। কিন্তু সে তার বাবাকে ভীষণ মনে করে। কেননা বিনু সবসময় তার বাবার পুতুল ছিলো। আর আজও সে বিনয়কে প্রচুর মনে করে অথচ চেয়েও বলে না। হয়তো অর্ক কখনো বিনয়ের জায়গা নিতে পারবে না কিন্তু বিনুর জীবনে বাবার কমতি পূরণ করলেও তার জন্য অনেক।

বিনু ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বলল, “আংকেল আমার মিস আসবে পড়াতে। আমি কী রাতে শিখতে আসতে পারি?”

বিনুর এমন জিজ্ঞাসুক দৃষ্টি দেখে হেসে দিলো অর্ক। মাথা নাড়িয়ে অনুমতি দিলো। বিনু দৌড়ে রুম থেকে বের হতেই অর্ক তার শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ভাঁজ করতে করতে পিছনে তাকালো। তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে গেল অর্ক। প্রভার পড়েছিল সাদা রঙের সুতির শাড়ি। অতি সাধারণ। চুল ভেজা তার। চুলগুলো মুখের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে তাকে। বিমোহিত দেখাচ্ছে। একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে রইলো অর্ক। প্রভা মধুর এক হাসি মেখে বলল, “ধন্যবাদ বিনু ও অদিনের এত যত্ন নেওয়ার জন্য।”

প্রভা চলে গেল বারান্দায়। পিছু গেল অর্কও। প্রভা তার ভেজা শাড়ি ও তোয়ালে মেলে দিল বারান্দায়। পিছনে ফিরে তাকিয়ে অর্ককে দেখেই চমকে এক পা পিছিয়ে গেল। বুকে হাত রেখে বলল, “আপনি হঠাৎ করে এইখানে? ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি।” বলেই গভীর নিশ্বাস ফেলল।

অর্ক এক পা এগিয়ে এসে প্রভার কাছে এলো। প্রভা পিছালো। আমতা-আমতা করে বলল, “খাবার টেবিলে দিব?”

অর্ক উওর দিলো না। প্রভার একদম কাছে এসে পরলো। তার কাঁধের একপাশের গ্রিল ধরে প্রভার দিকে ঝুঁকে নেশা মাখা কন্ঠে বলল, “আমার থেকে ভয় পেয়েছ?”

প্রভা উওর না দিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। অর্ক আরেকটু ঝুঁকে প্রভার গলার কাছে মুখ নিয়ে প্রভার কেশে তার মুখ ডোবাল। সাথে সাথে কেঁপে উঠলো প্রভা। চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো। হাত তার পিছনে নিয়ে বারান্দার গ্রিল চেপে ধরলো। তার মনে হচ্ছে তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।

চলবে……

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here