মরিচাধরা মনের খাঁচা পর্ব -০৫

#মরিচাধরা_মনের_খাঁচা
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ০৫

নিঝুম কল কেটে দেওয়ার মিনিট দুয়েক পরই অয়নের ফোনটা আবার কেঁপে উঠলো। স্কিনে নয়নার নামটা দেখে এখন কেনো যেনো খুশি হতে পারলো না। তবু কিছু একটা ভেবে রিসিভ করলো।

অয়ন কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে রাগী গলায় ভেসে এলো, কার সাথে কথা বলছিলে তুমি ? আমি সেই কখন থেকে ট্রাই করে যাচ্ছি।

অয়ন বেশ শান্ত আর নির্লিপ্ত গলায় বললো, নিঝুমের সাথে ?

নয়না অবাক হয়ে বললো, নিঝুমের সাথে তোমার আবার কীসের কথা ?

নিঝুমের জ্বর হয়েছে গতরাতে। ওর সহজে জ্বর হয় না কিন্তু যখন হয় তখন অনেক খারাপ অবস্থা হয়ে যায়। সকালে অসুস্থ দেখে এসেছি তাই খোঁজ নিতে কল দিয়েছিলাম।

নয়না বাঁকা স্বরে বললো, বাবাহ্ বউয়ের বেশ খোঁজ খবর রাখো দেখছি।

অয়ন কিছুটা রাগী গলায় বললো, এটা কী ধরণের কথা ? একজন অসুস্থ মানুষের খোঁজ নেওয়া কী অন্যায় ?

নাহ্ অন্যায় হতে যাবে কেনো ? থাক সেসব কথা, অফিস শেষে কফিশপে চলে এসো। তোমার সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।

আজ আসতে পারবো না, একটু তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে। আমি তোমার সাথে আগামীকাল দেখা করছি।

নয়নাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিলো অয়ন। নয়না হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে ফোনের দিকে। চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে।

আনমনে বলে উঠলো, আমি কী তবে ভুল করলাম তোমাদের মাঝে এসে ? কিন্তু আমি তো মাঝে আসিনি, আমাদের মাঝে নিঝুম এসেছিলো আর সে নিজের ভুল শুধরে চলেও যাচ্ছে। তাহলে বারবার অয়নের আচরণে কেনো মনে হচ্ছে নিঝুম নয় আমি তাদের মাঝে এসে পড়েছি। কী করবো এবার আমি ? একবার অয়নকে হারিয়েছি আবার সেই আঘাত সহ্য করতে পারবো না।

১১.
চোখটা বন্ধ করে শুয়ে আছে নিঝুম। চোখের কোণ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে বালিশে। ভেতরটা হারানোর ব্যাথায় চুরমার হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা এই দেড় বছরে অয়নের মনে কী তার জন্য একটুও জায়গা তৈরি হয়নি ? সে চলে গেলে অয়নের একটুও কষ্ট হবে না ? এমন হাজার প্রশ্ন প্রতিনিয়ত তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। ফোনের আওয়াজে চোখ মুছে ফোনটা হাতে নিলো। নাম্বারটা অচেনা মনে হওয়ায় ধরবে না ভেবেও আবার ধরলো।

আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন ?

কিছুটা কাঁপা গলায় উত্তর এলো, ওয়ালাইকুম আসসালাম, আপা আমি সাথী।

সাথী নামটা শুনে নিঝুমের কুঁচকে যাওয়া কপাল আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলো।

আপা আপনে আমারে চিনছেন ?

হ্যাঁ হ্যাঁ চিনেছি, তুমি ফুল বিক্রেতা সাথী তো ? গতকালই আমাদের পরিচয় হলো।

আপা আপনে বলছিলেন কোনো বিপদে পরলে যেনো আপনারে কল দেই। এতো তাড়াতাড়ি আপনারে আমার প্রয়োজন হইবো ভাবি নাই৷ নিজের জীবনের শেষ সম্বল বাঁচানোর জন্যে আপনারে আমার খুব দরকার। আমি জানি অনেক বেশি আবদার কইরা ফালাইছি। কিন্তু এ ছাড়া আমার আর কোন পথ চোখে পরে নাই।

নিঝুম কষ্ট করে উঠে বসে ব্যস্ত গলায় বললো, কী হয়েছে সাথী ? তোমার গলা এমন লাগছে কেনো ?

আপা গতকাল ফুল বেইচা বাড়ি আইসা দেহি রানা মানে আমার স্বামী আইছে। আমারে দেইখাই কইলো সে তার মাইয়া নিতে আইছে আমি যেন কোনো ঝামেলা ছাড়া দিয়া দেই।

নিঝুম অবাক হয়ে বললো, কিন্তু মেয়ের জন্যই তো তোমার স্বামী তোমাকে ডিভোর্স দিয়েছিলো তাই না ?

সেসবই তার মিথ্যা নাটক আছিলো।

সাথী নিঝুমকে সব খুলে বললো। রানার পরকীয়া থেকে শুরু করে তাকে ডিভোর্স দেওয়া এবং পরের বউয়ের বাচ্চা মারা যাওয়া, সে আর মা হতে পারবে না সবই বললো। রানা যে আইনের আশ্রয় নেবে সেটাও জানালো।

আপা আমি অশিক্ষিত আর গরীব ঘরের মাইয়া। রানার টাকা পয়সা ভালোই আছে৷ তার সাথে টক্কর দেওনের মতো শক্তি আমার নাই। কী করুম কোনো দিশা পাইতাছিলাম না। হঠাৎ কইরা আপনার কথা মনে পইরা গেলো। আপা দয়া কইরা আমার মাইয়াডা আমার কাছে রাখার একটা ব্যবস্থা কইরা দেন। আমি সারাজীবন আপনের বাড়ির কাজ কইরা দিমু কোনো টাকা পয়সা নেওয়া ছাড়া।

সাথীর অসহায়ত্ব বুঝতে পেরে নিঝুম দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। আচ্ছা সাথীর তো বেঁচে থাকার একটা সম্বল আছে কিন্তু তার তো সেটাও নেই। বাকি জীবনটা সে কীভাবে কাটাবে ? এই জীবনে আর কাউকে ভালোবাসা বা বিয়ে করা সম্ভব নয় নিঝুমের পক্ষে। নিঝুম সাথীকে তার মতো একেবারে নিঃস্ব হয়ে যেতে দিবে না। তার মেয়েকে তার থেকে আলাদা হতে দিবে না।

সাথীকে আশ্বস্ত করে বললো, চিন্তা করো না সাথী। তোমার মেয়েকে তোমার থেকে কেউ আলাদা করতে পারবে না৷ আমি আছি তোমার পাশে।

সাথী স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, আপনের এই ঋণ আমি হয়তো কোনোদিন শোধ করা পারুম না। কিন্তু সুযোগ পাইলে একটু হইলেও শোধ করার চেষ্টা করুম।

নিঝুম কিছু বললো না উত্তরে। সাথী কল কেটে দিলে ফোনের দিকে কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো নিঝুম। তখনই রুমে প্রবেশ করলো অহনা।

নিঝুমের হাতে ফোন দেখে বললো, কে কল করেছিলো রে নিঝুম ?

নিঝুম অহনার দিকে তাকিয়ে বললো, আমাদের সমাজে আমার মতো নিঝুমের অভাব নেই মা। যারা ভালোবাসার বিনিময়ে কেবল অবহেলায় পেয়ে যায় সারাজীবন। আমার মতোই আরেক নিঝুম কল দিয়েছিলো।

অহনা বুঝতে না পেরে বললো, মানে ?

সাথীর সাথে দেখা হওয়া থেকে শুরু করে সবই বললো নিঝুম। অহনা গোপনে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো শুধু। সেও একজন নারী, ভালোবাসার বিনিময়ে অবহেলা সেও তো কম পাইনি আর কম পাচ্ছে না।

অহনা তাচ্ছিল্যের সুরে বললো, জানিস তো নিঝুম। আমার বিয়ের পর তোর শশুরের আমার প্রতি ভালোবাসার কমতি ছিলো না। বিয়ের তিন বছর পর অয়নের জন্ম আর তার কিছুমাস পরই অফিস থেকে সিডনি পাঠানো হলো তোর শশুরকে। অয়নের পাঁচ বছর পর জন্ম হলো তয়নের। যত সময় যেতে লাগলো ভালোবাসাটা কেমন ফিঁকে হতে লাগলো। সে টাকা কামানোর মেশিনের মতো টাকার পিছনে ছুটতে লাগলো সেখানে গিয়ে আর আমি দুই ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। কিন্তু দিন শেষে একাকীত্ব আমাকে ঘিরে ধরতো। তার দেখা পাওয়ার জন্যও আমাকে মাসের পর মাস চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকতে হতো। অবশেষে যখন আমাদেরও তার সাথে সিডনি নিয়ে গেলো ভাবলাম এবার হয়তো দুরত্বটা একটু ঘুচবে। কিন্তু তা যেনো স্বপ্নই থেকে গেলো তার স্বপ্নগুলোর ভীড়ে। এই সে দেখ আজ এতো টাকার পাহাড় তৈরি করেছে তবু তার টাকার ক্ষুধা মেটেনি। এই বয়সে এসেও সে পরে আছে একদেশে আর আমি আরেক। ইচ্ছে হলে সপ্তাহে একবার ফোন দিয়ে দু’মিনিট কথা বলে। হ্যাঁ এভাবেই আমি কাটিয়েছি আমার ৩৩ বছরের সংসার জীবন।

নিঝুম অহনার দিকে তাকিয়ে তার চোখে ব্যাথার সমুদ্র দেখতে পেলো। নিঝুম নিজের শশুর আর দেবরকে বিয়ের সময় দেখেছিলো চার পাঁচ দিনের মতো। তারপর তোফায়েল আহমেদ একবার আসলেও দুদিনের বেশী থাকেনি তবে তয়ন আর আসেইনি। তয়ন নিঝুমের থেকে বছর দুয়েকের বড় হবে হয়তো।

নিঝুম ব্যাথিত গলায় বললো, সবসময় আমরাই কেনো ভালোবাসার আগুনে পুড়ে ছারখার হই মা ?

কারণ আমাদের ভালোবাসার পরিমাণ একটু বেশিই হয় তাই। তবে কিছু ভাগ্যবতী আছে যাদের ভালোবাসা হার মানে স্বামীর ভালোবাসার কাছে। তবে তারা সংখ্যায় খুব কমই হয় আর তারাই ভাগ্যবতী । আর একটা কথা জানিস নিঝুম। আমার তয়নটা তার বাবার মতো হয়েছে, যার ভেতরে ভালোবাসার পরিমাণ খুবই কম। তবে অয়নটা আমার মতো হয়েছে, সে ভালোবাসতে জানে। কিন্তু আফসোস সে তার সবটুকু ভালোবাসাই অপাত্রে দান করেছে।

নিরবতায় কেটে গেলো অনেকটা সময়। নিঝুম ভাবছে বাইরে থেকে কারো ভেতরটা বুঝা যায় না। উপরটা দেখে মনে হতেই পারে মানুষটা খুব সুখী, কিন্তু ভেতরের খবর নিলে জানা যায় সবটাই নিক্ষুত অভিনয়।

অহনা হঠাৎ বলে উঠলো, এই দেখ গল্পে গল্পে তোর জন্য আনা সুপের কথা ভুলেই গেছি। একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে দেখ। এটা তো খেতে একদমই ভালো লাগবে না এখন। তুই বস আমি আবার গরম করে আনছি।

নিঝুম অসহায় মুখ করে বললো, মা এটা একদম বাজে খেতে। আমি খাবো না প্লিজ।

অহনা কঠিন গলায় বললো, খাবে কী খাবে না, সেটা আমি বুঝে নিবো।

অহনা চলে গেলে নিঝুম সেদিকে তাকিয়ে রইলো। অহনা না থাকলে নিঝুম এই বাড়িতে এতদিন হয়তো থাকতে পারতো না। অহনার সাথে থাকলে মায়ের কথা যেনো ভুলেই যায় নিঝুম। অয়নটা ঠিক থাকলে নিঝুমের মতো সুখী সংসার হয়তো আর কারোই হতো না। একটু পরই অহনা আবার হাজির হলো সুপের বাটি হাতে। সেটা দেখেই মুখ কুঁচকে ফেললো নিঝুম। খাবো না খাবো না করলেও অহনা কয়েক চামচ খাইয়ে দিলো জোর করে।

মা আর খাবো না প্লিজ।

অহনা চোখ গরম করে বললো, এটা শেষ কর তারপর আবার ফল খেতে হবে। ডক্টর কী বলেছে কানে যায়নি ?

ডক্টর তো কতো কথাই বলে, সব কী শুনতে আছে ?

অয়ন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অহনা আর নিঝুমের কান্ড দেখে মুচকি হাসলো। অয়নের হাতে ব্যাগ ভর্তি নিঝুমের পছন্দের সব খাবার।

জ্বর কমেছে নাকি ? গলায় জোর তো বেশ ভালোই আছে মনে হচ্ছে।

অয়নের কথায় দু’জনেই দরজার দিকে তাকালো। তাদের কোলাহল মুহুর্তেই নিশ্চুপ হয়ে গেলো, যেনো মেঘের আগমন ঘটলো।

অহনা নিঝুমের সামনে আবার এক চামচ তুলে অয়নের উদ্দেশ্যে বললো, তুমি এখানে কী করছো ?

অয়ন হাসি মুখে বললো, নিঝুমের পছন্দের সব খাবার নিয়ে এসেছি।

অয়নের কথা শুনে নিঝুম অহনার হাত থেকে সুপের বাটি নিয়ে সবটা নিজেই খেয়ে নিলো। অয়ন আর অহনা দু’জনেই বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। নিঝুমকে এসব খাবার খাওয়ানোর জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় আর আজ সে নিজেই সবটা খেয়ে নিলো।

নিঝুম বাটিটা অহনার হাতে দিয়ে বললো, আমার পেট ভড়ে গেছে মা আর কিছু খেতে পারবো না। আমি মেডিসিন খেয়ে নিবো, তোমরা বরং এসো এখন। আমার মাথাটা খুব ধরেছে।

অহনা কিছু না বলে বাটি নিয়ে উঠে এসে অয়নের সামনে দাঁড়িয়ে একবার তার দিকে তাকিয়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে।

অয়ন নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো, নিঝুম তোমার জন্য বার্গার, পির্জা, চাওমিন, ফুসকা, চকলেট, আচার সব এনেছি। শুধু আইসক্রিম আনিনি তোমার জ্বর বলে। সেটা জ্বর যাওয়ার পর এনে দিবো প্রমিস।

নিঝুম বাড়ির খাবারের থেকে এসব বাইরের খাবার বেশি পছন্দ করে। এজন্য সবারই অনেক বকা শুনতে হয় তাকে, তবু এসব ছাড়তে সে নারাজ।

নিঝুম অয়নের দিকে তাকিয়ে বললো, আপনি বোধহয় দেখতে বা শুনতে কোনটাই পাননি। আপনার সামনেই আমি এক বাটি সুপ খেয়েছি আর এটাও বলেছি আমার পেট ভড়ে গেছে।

অয়ন মলিন মুখে বললো, কিন্তু।

আমি আপনাকে আগেই বলেছিলাম আমাকে নিয়ে আপনার আর না ভাবলেও চলবে। আপনি বরং এবার আসুন আমি একটু রেস্ট নিবো।

অয়ন আর কিছু না বলে প্যাকেটগুলো সাইড টেবিলে রেখে বের হয়ে গেলো রুম থেকে৷ নিঝুম সেগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।

অয়ন রুমে গিয়ে সোজা বেলকনিতে চলে গেলো। রকিং চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে ফেললো । এগুলোর জন্যই তো সে একদিন কত কথা শুনিয়েছিলো নিঝুমকে। তবু নির্লজ্জের মতো খেয়েছিলো নিঝুম। সেদিনের কথা ভেবে অতীতে ডুব দিলো অয়ন।

১২.
জ্বরের ঘোরে সারাদিন বিছানায় পড়ে ছিলো নিঝুম কিন্তু রাত হতেই জ্বর কিছুটা কমলো তার। নিঝুমের জ্বর তাই সে বেডে শুয়ে আছে আর অয়ন সোফায় শুয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

নিঝুম অয়নের দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে বললো, শুনুন না একটা কথা ছিলো।

অয়ন বিরক্তি নিয়ে বললো, কান খোলা আছে বলে ফেলো, শুনতে পাচ্ছি।

আমার না খুব আচার খেতে ইচ্ছে করছে, একদম ঝাল ঝাল আচার।

অয়ন চমকে নিঝুমের দিকে তাকিয়ে আবার ঘড়ির দিকে তাকালো। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত এগারোটা।

তা দেখে অয়ন বললো, এতো রাতে তোমার জন্য আচার কোথায় পাবো আমি ? বাঁদরামি না করে চুপচাপ ঘুমাও।

নিঝুম রেগে বললো, আপনি যদি এখন আমাকে আচার এনে না খাওয়ান, তাহলে আমি সকালে সবাইকে বলবো আপনি আমাকে রাতে মেরেছেন, খাবার খেতে চেয়েছি বলে।

অয়ন চোখ বড় বড় করে বললো, আমি কখন তোমায় মারলাম ?

সেটা আমি জানি বাকি কেউ তো জানে না। আর সবাই কিন্তু আমার কথা বিশ্বাস করবে। কারণ আপনি যে রাগি আর আমাকে দেখতে পারেন না সেটা সবাই জানে।

তুমি কী আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছো ?

যা ইচ্ছে মনে করতে পারেন। তবে এসব কথা লোকে জানলে আপনার মানসম্মান থাকবে ? সবাই কত ভালো জানে আপনাকে তাই না।

অয়ন নিঝুমের দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বের হয়ে গেলো। তা দেখে নিঝুম মুচকি হাসলো। আধ ঘণ্টা পর অয়ন ফিরলো আচার নিয়ে। নিঝুমের সামনে ঠাস করে রেখে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। নিঝুম একটা একটা প্যাকেট খেতে লাগলো। জ্বরের মুখে আচার খেতে ভালোই লাগলো তার। খেয়ে শুয়ে পড়লো কিন্তু ঘুম আসছে না। অনেকটা সময় এপাশ ওপাশ করে আবার উঠে বসলো।

আপনি কী ঘুমিয়ে পড়েছেন ?

বেডের উপর যেভাবে রেসলিং খেলে চলেছো, এভাবে কী ঘুমানো সম্ভব ?

আমার না চাওমিন খেতে ইচ্ছে করছে।

আবারও একই রিয়াকশনে তাকালো অয়ন। যেতে না চাইলে নিঝুম নানা কথা বলে ভয় দেখিয়ে পাঠালো। কিন্তু জ্বরের তেতো মুখে খুব একটা খেতে পারলো না। একটু পর আবার আরেকটা খাবে বললো। অয়নও বাঁধ্য হয়ে এনে দিলো এবারও আগের মতোই খেতে পারলো না। একটু পর আবার আরেকটার নাম বললে অয়ন এবার ভয়ংকর রেগে গেলো।

সব একসাথে বলতে পারো না। তোমার কী মনে হয় ?আমি তোমার মতো সারাদিন পরে পরে ঘুমিয়েছি ? এখন একটু রেস্ট নিবো আর তোমার নাটক শুরু হয়ে গেছে। আমাকে কী তোমার ডেলিভারি বয় মনে হচ্ছে ?

নিঝুম ভয়ে গুটিশুটি মেরে বসে রইলো। সে কী করবে ? অনেক পুরনো অভ্যাস এটা তার। সে সারারাত বাবাকে এভাবেই জ্বালাতো। কিছুই খেতে পারতো না কিন্তু মনে হতো এটা খেতে পারবো ওটা খেতে পারবো। সামনে আসলে আর খেতে পারতো না। এদিকে পেটের ক্ষুধায় ঘুমও আসতো না।

নিঝুম ছোট্ট করে বললো, সরি কিছু লাগবে না।

নিঝুম গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লে অয়ন হাত ধরে টান দিয়ে বসিয়ে দেয়। টেবিল থেকে একটা পেপার আর কলম হাতে দিয়ে বললো, লিখে দাও কী কী খাবে।

নিঝুম লিখতে না চাইলে অয়ন জোরে ধমক দেয়। নিঝুমও ভয় পেয়ে দু একটা নাম লিখলো কিন্তু আর মনে পড়ছে না। সে কী ভেবে চিন্তে বলে নাকি ? যখন যেটার কথা মনে হয় সেটা এনে দিতে বলে। কিন্তু এখন তো কিছুই মনে আসছে না। অয়ন আবারও ধমক দিলে নিঝুম তাড়াতাড়ি আরো কয়েকটার নাম লিখলো কাঁপা হাতে। শেষ হয়েছে কিনা অয়ন জিজ্ঞেস করলে মাথা নাড়িয়ে বুঝায় হয়ে গেছে। পেপারটা হাতে নিয়ে আবার বের হয়ে যায় অয়ন। বেশ অনেকটা সময় পর ফিরে এসে সবগুলো ছুঁড়ে মারে নিঝুমের সামনে।

রেগে বলে, গিলতে থাকো এবার ইচ্ছে মতো আর দয়া করে আমাকে বিরক্ত করবে না।

অপমানে চোখে পানি চলে আসে নিঝুমের। জেদ করে সব খেতে থাকে আর একহাতে চোখ মুছতে থাকে। কিন্তু জোর করে খেয়ে একটু পরই বমি পেয়ে যায়। কোনোমতে দৌঁড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে গরগর করে বমি করে দেয়। দূর্বল শরীরটা যেনো আরো নেতিয়ে যায়।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here